tag:blogger.com,1999:blog-28977361315406537432024-02-19T13:31:10.015+06:00Best Bangladeshi HAJJ serviceUnknownnoreply@blogger.comBlogger62125tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-46468847033948957132020-03-18T21:15:00.001+06:002020-03-18T21:15:16.605+06:00<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<br />
<br />
<br />
<br />
<br />
হজ্জের গোড়ার কথা <br />
আরবী ভাষায় ‘হজ্জ’ অর্থ যিয়ারতের সংকল্প করা। যেহেতু খানায়ে কা’বা যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে মুসলমানরা পৃথিবীর চারদিক থেকে নির্দিষ্ট কেন্দ্রের দিকে চলে আসে, তাই এর নাম রাখা হয়েছে ‘হজ্জ’। কখন কিভাবে হজ্জের সূচনা হয়েছিল, সেই ইতিহাস অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক এবং শিক্ষাপ্রদ। গভীর মনোযোগের সাথে সেই ইতিহাস অধ্যয়ন করলে হজ্জের কল্যাণকারিতা হৃদয়ঙ্গম করা পাঠকের জন্য সহজ হবে। <br />
কি মুসলমান, কি খৃস্টান- হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের নাম কারো অজানা নয়। দুনিয়ার তিন ভাগের দু’ভাগেরও বেশী লোক তাঁকে ‘নেতা’ বলে স্বীকার করে । হয়রত মূসা আলাইহিস সালাম, হয়রত ঈসা আলাইহিস সালাম এবং হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এ তিনজন শ্রেষ্ঠ নবীই তাঁর বংশজাত, তাঁর প্রজ্জলিত আলোকবর্তিকা থেকে সমগ্র দুনিয়ার সত্যের জ্যোতি বিস্তার করেছে । চার হাজার বছরেরও বেশীকাল পূর্বে তিনি ইরাকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তখন সমগ্র দুনিয়ার মানুষ আল্লাহকে ভুলে বসেছিল । পৃথিবীর একজন মানুষও তার প্রকৃত মালিক ও প্রভুকে জানতো না এবং তাঁর সামনে বন্দেগী ও আনুগত্যের ভাবধারায় মস্তক অবনত করতো না। যে জাতির মধ্যে তাঁর জন্ম হয়েছিল সে জাতির লোকেরা যদিও তদানীন্তন পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা উন্নত জাতি ছিল; কিন্তু পথভ্রষ্ট হওয়ার দিক দিয়েও তারাই ছিল অগ্রনেতা ।সৃষ্ট জীব কখনও মা'বুদ বা উপাস্য হতে পারে না। জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং শিল্প-ভাস্কর্যে চরম উন্নতি লাভ করা সত্ত্বেও এ সহজ কথাটি তারা বুঝতে পারতো না । তাই তারা আকাশের তারকা এবং (মাটি বা পাথর নির্মিত) মূর্তি পূজা করতো । জ্যোতিষ শাস্ত্র, ভালো-মন্দ জানার জন্য 'ফাল' গ্রহণ, অজ্ঞাত কথা বলা, যাদু বিদ্যা প্রয়োগ এবং দোয়া তাবীয ও ঝাড়-ফুঁকের খুবই প্রচলন ছিল। বর্তমানকালের হিন্দু পন্ডিত ও ব্রাহ্মণগণের মতো তখনকার সমাজে ঠাকুর-পুরোহিতেরও একটি শ্রেনী ছিল। তারা মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ করতো, অপর লোকের পক্ষ থেকে পূজা করে দিত, বিপদে- আপদে বা আনন্দে- খুশিতে তারা বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান পালন করতো এবং অজ্ঞাত কথা বলে লোকদেরকে প্রতারিত করতো। সাধারণ লোকেরা এদেরকেই ভাগ্য নির্ধারক বলে মনে করতো। তারা এদেরই অংগুলি নির্দেশে ওঠা-বসা করতো এবং চুপচাপ থেকে নিতান্ত অন্ধের ন্যায় তাদের মনের লালসা পূর্ণ করে যেতো। কারণ তারা মনে করতো যে, দেবতাদের ওপরে এসব পূজারীর কর্তৃত্ব রয়েছে। এরা খুশি হলে আমাদের প্রতি দেবতাদের অনুগ্রহ বর্ষিত হবে। অন্যথায় আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। এ পূজারী দলের সাথে তৎকালীন রাজা-বাদশাহদের গোপন যোগাযোগ ছিল। জনসাধারণকে দাসানুদাস বানিয়ে রাখার ব্যাপারে রাজা-বাদশা ও পূজারীগণ পরস্পর সাহায্য করতো । একদিকে সরকার পূজারীদের পৃষ্ঠপোকতা করতো এবং অন্যদিকে পূজারীগণ জনগণের মনে এ ধারণা বদ্ধমূল করে দিত যে, রাজা-বাদশাহরাও ‘আল্লাহর’ মধ্যে গণ্য; তারা দেশ ও প্রজাদের একচ্ছত্র মালিক, তাদের মুখের কথাই আইন এবং প্রজাদের জান-মালের ওপর তাদের যা ইচ্ছা করার অধিকার আছে। শুধু এতটুকুই নয়, রাজা -বাদশাহের সামনে (সিজদায় মাথা নত করা সহ) তাদের বন্দেগীর যাবতীয় অনুষ্ঠানই পালন করা হতো -যেন প্রজাদের মন-মগযের ওপর তাদের প্রভুত্বের ছাপ স্থায়ীভাবে অংকিত হয়ে যায়। <br />
এহেন পরিবেশের মধ্যে এবং এ জাতির কোনো এক বংশে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের জন্ম। আরও মজার ব্যাপার এই যে, যে বংশে তাঁর জন্ম হয়েছিল, সেই বংশটাই ছিল পেশাদার ও বংশানুক্রমিক পূজারী। তাঁর বাপ-দাদা ছিলেন আপন বংশের পন্ডিত-পুরোহিত ব্রাহ্মণ।কাজেই একজন ব্রাক্ষণ সন্তানের পক্ষে যেরূপ শিক্ষা -দীক্ষা লাভ করা সম্ভব, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামও ঠিক তাই লাভ করলেন। সেই ধরনের কথা-বার্তা শৈশবকাল হতেই তাঁর কানে প্রবেশ করতো। তিনি তার ভাই -ভগ্নীদের মধ্যে পীর ও পীরজাদাদের মতো আড়ম্বর এবং বড়লোকী চাল-চলন দেখতে পেতেন। স্থানীয় মন্দিরের পৌরহিত্যের মহাসম্মানিত গদি তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল। সেই গদিতে বসলে তিনি অনায়াসেই ‘জাতির নেতা’ হয়ে বসতে পারতেন। তাঁর গোটা পরিবারের জন্য চারদিকে থেকে যেসব ভেট-বেগাড় আর নযর -নিয়াজ জড়ো হতো, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের জন্যও তা বর্তমান ছিল। দেশের লোক নিজেদের চিরকালীন অভ্যাস অনুসারে তাঁর সামনে এসে হাত জোড় করে বসার এবং ভক্তি -শ্রদ্ধা ভরে মাথানত করার জন্য প্রস্তুত ছিল। দেবতার সাথে সম্পর্ক পেতে অজ্ঞাত কথা বলার ভান করে তিনি সাধারণ কৃষক থেকে তদানীন্তন বাদশাহ পর্যন্ত সকলকে আজ্ঞানুবর্তী গোলাম বানিয়ে নিতে পারতেন। এ অন্ধকারে যেখানে সত্য জ্ঞানসম্পন্ন সত্যের অনুসারী একজন মানুষ কোথাও ছিল না সেখানে একদিকে তাঁর পক্ষে সত্যের আলো লাভ করা যেমন সম্ভবপর ছিল না তেমনি ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক উভয় দিক দিয়েই এ বিরাট স্বার্থের ওপর পদাঘাত করে নিছক সত্যের জন্য দুনিয়া জোড়া বিপদের গর্ভে ঝাপিয়ে পড়তে প্রস্তুত হওয়াও কোনো সাধারণ লোকের পক্ষে সম্ভব ছিল না। <br />
কিন্তু হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কোনো সাধারণ মানুষ ছিলেন না।তাঁকে ‘স্বতন্ত্র মাটি’ দ্বারাই সৃষ্টি করা হয়েছিল। জ্ঞান হওয়ার সাথে সাথেই তিনি ভাবতে শুরু করলেন চন্দ্র, সূর্য, তারকা নিতান্ত গোলামের মতই উদয়-অস্তের নিয়ম অনুসরণ করছে, মূর্তি তো মানুষের নিজের হাতে পাথর দিয়ে গড়া, দেশের বাদশাহ আমাদের ন্যায় একজন সাধারণ মানুষ, এরা রব হতে পারে কেমন করে ? যেসব জিনিস নিজের ইচ্ছায় এতটুও নড়তে পারে না, নিজের সাহায্য করার ক্ষমতাও যেসবের মধ্যে নেই, জীবন ও মৃত্যুর ওপর যাদের বিন্দুমাত্র হাত নেই, তাদের সমনে মানুষ কেন মাথা নত করবে ? মানুষ কেন তাদের দাসত্ব ও পুজা -উপাসনা করবে ? প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির জন্য তাদের গোলামীই বা কেন করবে ? আকাশ ও পৃথিবীতে যত কিছুই আমরা দেখতে পাই, যেসব জিনিস সম্পর্কে কোন না কোন ভাবে আমরা ওয়াকিফহাল, তার মধ্যে একটি জিনিসও স্বাধীন নয়, নিরপেক্ষ নয়, অক্ষয়- চিরস্থায়ীও নয়। এদের প্রত্যেকটিরই অবস্থা যখন এরুপ তখন এরা মানুষের 'রব বা প্রভু' কিরুপে হতে পারে ?এদের কেউই যখন আমাকে সৃষ্টি করেনি, আমার জীবন-মৃত্যু ও লাভ-ক্ষতির এখতিয়ার যখন এদের কারো হাতে নেই,আমার রিযিক ও জীবিকার চাবিকাঠি যখন এদের কারো হাতে নয়, তখন এদের কাউকেও আমি ‘রব’ বলে স্বীকার করবো কেন ? এবং তার সামনে মাথা নত করে দাসত্ব ও উপসনাই বা কেন করবো ? বস্তুত আমার ‘রব’ কেবল তিনিই হতে পারেন যিনি সবকিছুই সৃষ্টি করেছেন, সকলেই যার মুখাপেক্ষী এবং যার হাতে সকলেরই জীবন -মৃত্যু ও লাভ -ক্ষতির উ ৎস নিহিত রয়েছে। এসব কথা ভেবে হযরত ইরাহীম (আ) জাতির উপাস্য মূর্তিগুলোকে পূজা না করে বরং পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত করলেন এবং এ সিদ্ধান্তে পৌছেই তিনি উদাত্ত কন্ঠে ঘোষণা করলেনঃ <br />
إِنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ <br />
‘‘তোমরা যাদেরকে আল্লাহর শরীক বলে মনে কর তাদের সাথে আমরা কোন সম্পর্ক নেই।” - সূরা আল আন'আমঃ ৭৮ <br />
إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ <br />
‘‘আমি সবদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বিশেষভাবে কেবল সেই মহান সত্ত্বাকেই ইবাদাত - বন্দেগীর জন্য নির্দিষ্ট করলাম যিনি সমস্ত আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই।’’ - সূরা আল আন'আমঃ ৭৯ <br />
এ বিপ্লবাত্মক ঘোষণার পর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ওপর বিপদ - মুসিবতের পাহাড় ভেংগে পড়লো। পিতা বললেন, আমি তোমাকে পরিত্যাগ করবো, বাড়ী হতে তাড়িয়ে দেব। সমগ্র জাতি বলে ওঠলো আমরা কেউ তোমাকে আশ্রয় দেব না। স্থানীয় সরকার ও তার বিরুদ্ধে লেগে গেল, বাদশাহর সামনে মামলা দায়ের করা হলো, কিন্তু হযরত ইবরাহীম আলাহীস সালাম একাকী এবং নিঃসংগ হয়েও সত্যের জন্য সকলের সামনেই মাথা উঁচু করে দাঁড়ালেন। পিতাকে বিশেষ সম্মানের সাথে বললেন: ‘‘আমি যে জ্ঞান লাভ করেছি। আপনি তা আদৌ জানেন না। কাজেই আমি আপনাদের কথা শুনবো না, তার পরিবর্তে আমার কথা আপনাদের সকলের শোনা উচিত।” <br />
জাতির লোকদের হুমকির উত্তরে নিজ হাতে সবগুলো মূর্তি ভেংগে ফেলে তিনি প্রমাণ করলেন যে, তোমরা যাদের পূজা করো, তাদের কোন ক্ষমতা নেই। বাদশাহর প্রকাশ্য দরবারে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বললেনঃ “তুমি আমার ‘রব’ নও, আমার ‘রব’ তিনিই যাঁর মুষ্ঠিতে তোমার আমার সকলেরই জীবন ও মৃত্যু নিহিত রয়েছে এবং যাঁর নিয়মের কঠিন বাঁধনে চন্দ্র, সূর্য সবই বন্দী হয়ে আছে।” রাজ দরবার থেকে শেষ পর্যন্ত ফয়সালা হলো, ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে জীবন্ত জ্বালিয়ে ভষ্ম করা হবে। কিন্তু ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দিল ছিল পর্বত অপেক্ষা অধিকতর শক্ত - একমাত্র আল্লাহর ওপরেই ছিল তাঁর ভরসা। তাই এ ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করতেও তিনি অকুন্ঠ চিত্তে প্রস্তুত হলেন। অতপর আল্লাহ তাআলা যখন তাঁকে কাফেরদের অগ্নিকুন্ড হতে মুক্তি দিয়েছিলেন তখন তিনি জন্মভুমি , জাতি, আত্মীয়-বান্ধব সবকিছু পরিত্যাগ করে শুধু নিজের স্ত্রী ও ভ্রাতুষ্পুত্রকে সাথে নিয়ে পথে পথে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। যার জন্য ঘরে পৌরোহিত্যের গদি অপেক্ষা করছিলো, সেই গদিতে বসে যিনি গোটা জাতির পীর হয়ে যেতে পারতেন এবং সেই গদিকে যিনি বংশানুক্রমিকভাবে নিজের সম্পত্তি বানিয়ে নিতে পারতেন, তিনি নিজের ও নিজের সন্তান সন্তুতির জন্য নির্বাসন, সহায়-সম্বল হীনতার নিদারুণ দুঃখ- মসিবতকেই শ্রেয় মনে করে গ্রহণ করলেন। কারণ দুনিয়াবাসীকে অসংখ্য ‘মিথ্যা রবের’ দাসত্ব নিগড়ে বন্দী করে সুখের জীবন যাপন করা তিনি মাত্রই বরদাশত করতে পারলেন না। বরং তার পরিবর্তে তিনি একমাত্র প্রকৃত রবের দাসত্ব কবুল করে সমগ্র দুনিয়াকে সেই দিকে আহ্বান জানাতে লাগলেন এবং এ ‘অপরাধে’ (?) তিনি কোথাও একটু শান্তিতে বসবাস করতে পারলেন না। <br />
জন্মভূমি থেকে বের হয়ে হযরত ইবরাহীম (আ) সিরিয়া, ফিলিস্তিন, মিসর এবং আরব দেশসমূহে ঘুরতে -ফিরতে লাগলেন। এই ভ্রমণ ব্যাপদেশ তাঁর ওপর অসংখ্য বিপদ এসেছে, ধন-সম্পদ বা টাকা-পয়সা তার সাথে কিছু ছিল না। বিদেশে গিয়েও তিনি রুযি-রোযগার করার জন্য একটু চিন্তা-ভাবনা করেন নি। রাত দিন তিনি কেবল একটি চিন্তা করতেন , দুনিয়ার মানুষকে অসংখ্য রবের গোলামীর নাগপাশ থেকে মুক্ত করে কিরূপে একমাত্র আল্লাহর বান্দায় পরিণত করা যেতে পারে। এ খেয়াল ও চিন্তা -ভারাক্রান্ত মানুষটিকে যখন তাঁর পিতা এবং নিজ জাতি মোটেই সহ্য করলো না, তখন তাঁকে আর কে বরদাশত করতে পারে? কোন্ দেশের লোক তাঁকে আদর -অভ্যর্থনা জানাবে? সকল স্থানে সেই একই ধরনের মন্দিরের পুরুহিত আর খোদায়ীর দাবীদার রাজা- বাদশাহরাই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল এবং সর্বত্র একই ধরনের অজ্ঞ- মূর্খ জনসাধারণ বাস করতো, যারা এ ‘মিথ্যা খোদাদের’ গোলামীর জালে বন্দী হয়ে ছিল। এদের মধ্যে এমন ব্যক্তি কি করে শান্তিতে দিন কাটাতে পারে, যিনি নিজের রব ছাড়া অন্য কারো গোলামী করতে প্রস্তুত ছিলেন না। যিনি অন্য লোকদেরও বলে বেড়াতেন যে, আল্লাহ ছাড়া তোমাদের আর কেউ মালিক, মনিব ও প্রভু নেই, সকলের প্রভুত্ব ও খোদায়ীর আসন চূর্ণ করে কেবলমাত্র আল্লাহর বান্দারূপে জীবনযাপন কর। ঠিক এ কারণেই হযরত ইবরহীম আলাইহিস সালাম কোথাও শান্তিতে বসবাস করতে পারেননি। বছরের পর বছর ধরে তিনি উদভ্রান্ত পথিকের ন্যায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। কখনও কেনানের জনপদে, কখনও মিসরে এবং কখনও আরবের মরুভুমিতে গিয়ে পৌঁছেছেন। এভাবেই তাঁর গোটা যৌবনকাল অতিবাহিত হয়ে গেল, কালো চুল সাদা হয়ে গেল। <br />
জীবনের শেষ ভাগে নব্বই বছর পূর্ণ হতে যখন মাত্র চারটি বছর বাকী ছিল এবং সন্তান লাভের কোনো আশাই যখন ছিল না তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সন্তান দান করলেন। কিন্তু তখনও এ আল্লাহর বান্দা এতটুকু চিন্তিত হয়ে পাড়েননি যে, নিজের জীবনটা তো আশ্রয়হীনভাবে কেটে গেছে, এখন অন্তত ছেলে পেলেদেরকে একটু রুজী- রোযগারের যোগ্য করে তুলি। না, এসব চিন্তা তাঁর মনে উদয় হয়নি। বরং এ বৃদ্ধ পিতার মনে একটি মাত্র চিন্তাই জেগেছিল , তা এই যে, যে কর্তব্য সাধনে তিনি নিজের জীবন অতিবিহিত করেছেন, তাঁর মৃত্যুর পর সেই কর্তব্য পালন করার এবং তাঁর দাওয়াত চারদিকে প্রচার করার মতো লোকের বিশেষ অভাব রয়েছে। ঠিক এ জন্য তিনি আল্লাহর কাছে সন্তান কামনা করেছিলেন এবং আল্লাহ যখন তাঁকে সন্তান দান করলেন, তখন তিনি তাকে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর কাজ চালিয়ে যাবার উপযোগী করে গড়ে তুলতে চেষ্টা করলেন। এ পূর্ণ মানুষটির জীবন একজন সত্যিকার মুসলমানের আদর্শ জীবন ছিল। যৌবনের সূচনাতেই - বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই যখন তিনি তাঁর রবকে চিনতে পারলেন তখন আল্লাহ তাকে বলেছিলেনঃ أَسْلِمْ - ইসলাম গ্রহণ কর - স্বেচ্ছায় আমার কাছে আত্মসমর্পণ কর, আমার দাসত্ব স্বীকার করো। তিনি তখন উত্তরে পরিষ্কার ভাষায় বলেছিলেনঃ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ - আমি ইসলাম কবুল করলাম। আমি সারাজাহানের প্রভুর উদ্দেশ্যে নিজেকে উৎসর্গ করলাম, নিজেকে তার কাছে সোপর্দ করলাম। সমগ্র জীবন ভরে একথা ও এ ওয়াদাকে এই সাচ্চা মানুষটি সবদিক দিয়ে পূর্ণ করে দেখিয়েছেন। তিনি রাব্বুল আলামিনের জন্য শত শত বছরের পৈত্রিক ধর্ম এবং তার যাবতীয় আচার অনুষ্ঠান ও আকীদা - বিশ্বাস পরিত্যাগ করেছেন। পৌরহিত্যের গদিতে বসলে তিনি যেসব সুযোগ - সুবিধা লাভ করতে পারতেন তা সবই তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। নিজের বংশ - পরিবার, নিজের জাতি ও মাতৃভূমি ত্যাগ করেছেন। নিজের জীবনকে উপেক্ষা করে আগুনের বুকে ঝাঁপ দিয়েছেন। দেশত্যাগ ও নির্বাসনের দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছেন, দেশের পর দেশ পরিভ্রমণ করেছেন, নিজের জীবনের এক একটি মূহুর্তকে রাব্বুল আলামীনের দাসত্ব অনুগত্যের কাজে এবং তাঁর দ্বীন ইসলামের প্রচারে কাটিয়েছেন। বৃদ্ধ বয়সে যখন সন্তান লাভ হলো তখন তাঁর জন্যও এ ধর্ম এবং এ কর্তব্যই নির্ধারিত করলেন। কিন্তু এসব কঠিন পরীক্ষার পর আর একটি শেষ ও কঠিন পরীক্ষা অবশিষ্ট রয়ে গিয়েছিল। যে পরীক্ষায় উত্তির্ণ না হওয়া পর্যন্ত হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সব কিছু অপেক্ষা রাব্বুল আলামীনকেই বেশী ভালবাসেন কিনা, তার ফয়সালা হতে পারতো না। সেই কঠিন এবং কঠোর পরীক্ষার সামনে এসে পড়লো। বৃদ্ধ বয়সে একেবারে নিরাশ হয়ে যাওয়ার পর তাঁর যে সন্তান লাভ হয়ে ছিল, সেই একমাত্র সন্তানকেও আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী করতে পারেন কিনা, তারই পরীক্ষা নেয়া হলো। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এ পরীক্ষায়ও উত্তীর্ন হলেন এবং আল্লাহর নির্দেশ লাভ করার সাথে সাথে যখন তিনি নিজের পুত্রকে নিজের হাতে যবেহ করতে প্রস্তুত হলেন, তখন চূড়ান্তরূপে ঘোষণা করা হলো যে, এখন তুমি প্রকৃত মুসলিম হওয়ার দাবীকে সত্য বলে প্রমাণ করেছো। আল্লাহর কাছেও তাঁর এ কুরবানী কবুল হলো এবং তাকে বলে দেয়া হলো যে, এখন তোমাকে সারা দুনিয়ার ইমাম বা নেতা বানিয়ে দেয়া যেতে পারে - এখন তুমি সেই জন্য সম্পূর্ণরূপে যোগ্য হয়েছো। কুরআন শরীফের নিম্নলিখিত আয়াতে একথাই বলা হয়েছেঃ <br />
وَإِذِ ابْتَلَى إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا قَالَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ <br />
“এবং যখন ইবরাহীমকে তার ‘রব’ কয়েকটি ব্যাপারে পরীক্ষা করলেন এবং সে সেই পরীক্ষায় ঠিকভাবে উত্তীর্ণ হলো তখন তাকে জানিয়ে দেয়া হলো যে, আমি তোমাকে সমগ্র মানুষের ইমাম (অগ্রবর্তী নেতা) নিযুক্ত করেছি। তিনি বললেন, আমার বংশধরদের প্রতিও কি এ হুকুম ? আল্লাহ তায়ালা বললেনঃ যালেমদের জন্য আমার ওয়াদা প্রযোজ্য নয়।” - সূরা আল বাকারাঃ ১২৪ <br />
এভাবে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে দুনিয়ার নেতৃত্ব দান করা হলো এবং তাঁকে ইসলামের বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের ‘নেতা’ নিযুক্ত করা হলো। এখন এ আন্দোলনকে অধিকতর সম্প্রসারিত করার জন্য এবং বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব গ্রহণ করে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার জন্য তাঁর কয়েকজন সহকর্মী একান্ত আবশ্যক হয়ে পড়লো। এ ব্যাপারে তিন ব্যক্তি হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ‘দক্ষিণ হাত’ স্বরূপ কাজ করেছেন। একজন তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র হযরত লূত আলাইহিস সালাম, দ্বিতীয় তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম যিনি - আল্লাহ তাঁর জীবন চান জানতে পেরে অত্যন্ত খুশী ও আগ্রহের সাথে - যবেহ হবার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন এবং তৃতীয় হচ্ছেন তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র হযরত ইসহাক আলাইহিস সালাম। <br />
ভ্রাতুষ্পুত্রকে তিনি ‘সাদুম’ (ট্রান্স জর্দান) এলাকায় বসালেন। এখানে সেকালের সর্বাপেক্ষা ইতর - লম্পট জাতি বাস করতো। সেখানে একদিকে সেই জাতির নৈতিকতার সংস্কার সাধন এবং সেই সাথে দূরবর্তী এলাকাসমূহেও ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোই ছিল তাঁর কাজ। ইরান, ইরাক এবং মিসরের ব্যবসায়ী দল এ এলাকা দিয়েই যাতায়াত করতো। কাজেই এখানে বসে উভয় দিকেই ইসলাম প্রচারের কাজ সুষ্ঠু রূপে সম্পন্ন করা তাঁর পক্ষে বিশেষ সুবিধাজনক হয়েছিল। <br />
কনিষ্ঠ পুত্র হযরত ইসহাক আলাইহিস সালামকে তিনি কেনান বা ফিলিস্তিন এলাকায় রাখলেন। এটা সিরিয়া ও মিসরের মধ্যবর্তী স্থান, তদুপরি এটা সমূদ্র - উপকূলবর্তী এলাকা বলে এখান থেকেই অন্যান্য দেশ পর্যন্ত ইসলামের আওয়াজ পৌঁছানো সহজ ছিল। এ স্থান থেকেই হযরত ইসহাক আলাইহিস সালামের পুত্র হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম যার নাম ছিল ইসরাঈল এবং পৌত্র হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের মারফতে ইসলামী আন্দোলন মিসর পর্যন্ত পোঁছেছিল। <br />
জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে হিজাযের মক্কা নগরীতে বসালেন এবং দীর্ঘকাল যাবত নিজেই তাঁর সাথে থেকে আরবের কোণে কোণে ইসলামের শিক্ষা বিস্তার করেছিলেন। তারপর এখানেই পিতা-পুত্র দু’জনে মিলে ইসলামী আন্দোলনের বিশ্ববিখ্যাত কেন্দ্র খানায়ে কা’বা প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহ তায়ালা নিজেই এ কেন্দ্র নির্দিষ্ট করেছিলেন, নিজেই এটা গড়ে তোলার স্থান ঠিক করেছিলেন। খানায়ে কা’বা সাধারণ মসজিদের ন্যায় নিছক ইবাদাতের স্থান নয়, প্রথম দিন থেকেই এটা দীন ইসলামের বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের প্রচার কেন্দ্ররূপে নির্ধারিত হয়েছিল। এ কা’বা ঘর নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল এই যে, পৃথিবীর দূরবর্তী অঞ্চলসমূহ থেকে এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী সকল মানুষ এখানে এসে মিলিত হবে এবং সংঘবদ্ধ ভাবে এক আল্লাহর ইবাদাত করবে, আবার এখান থেকেই ইসলামের বিপ্লবী পয়গাম নিয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবে। বিশ্ব মুসলিমের এ সম্মেলনেরই নাম হলো ‘হজ্জ’। এ ইবাদাত কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা কি করে হলো, কোন সব পূত ভাবধারা এবং দোআ প্রার্থনা সহকারে পিতা-পুত্র মিলে এ ইমারত তৈরী করেছিলেন আর ‘হজ্জ’ কিভাবে শুরু হলো তার বিস্তারিত বিবরণ কুরআন শরীফে বর্ণিত হয়েছেঃ <br />
إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِلْعَالَمِينَ - فِيهِ آَيَاتٌ بَيِّنَاتٌ مَقَامُ إِبْرَاهِيمَ وَمَنْ دَخَلَهُ كَانَ آَمِنًا <br />
“মানুষের জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর নির্দিষ্ট করা হয়েছিল তা মক্কার ঘর তাতে সন্দেহ নেই। এটা অত্যন্ত পবিত্র, বরকতপূর্ণ এবং সারা দুনিয়ার জন্য হেদায়াতের কেন্দ্রস্থল। এতে আল্লাহর প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহ বর্তমান রয়েছে, ‘মাকামে ইবরাহীম’ রয়েছে এবং যে-ই এখানে প্রবেশ করবে সেই নিরাপদে থাকবে।” - সূরা আলে ইমরানঃ ৯৬-৯৭ <br />
أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا جَعَلْنَا حَرَمًا آَمِنًا وَيُتَخَطَّفُ النَّاسُ مِنْ حَوْلِهِمْ <br />
“আমরা মানুষের জন্য কিরূপে বিপদশূন্য ও শান্তিপূর্ণ হেরেম তৈরী করেছি তা কি তারা দেখতে পায়নি? অথচ তার চারপাশে লোক লুন্ঠিত ও ছিনতাই হয়ে যেতো।”- সূরা আল আনকাবুতঃ ৬৭ <br />
অর্থাৎ আরবের চারদিকে যখন লুঠ -তরাজ , মার-পিট এবং যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদি অশান্তির সয়লাব বয়ে যেত তখনও এ হেরেমে সর্বদা শান্তি বিরাজ করতো। এমন কি দুর্ধর্ষ মরু বেদুঈন যদি এর সীমার মধ্যে তার পিতৃহন্তাকে দেখতে পেত, তবুও এর মধ্যে বসে তাকে স্পর্শমাত্র করতে সাহস পেত না। <br />
وَإِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِلنَّاسِ وَأَمْنًا وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى وَعَهِدْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ - وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَذَا بَلَدًا آَمِنًا وَارْزُقْ أَهْلَهُ مِنَ الثَّمَرَاتِ مَنْ آَمَنَ مِنْهُمْ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ <br />
“এবং স্মরণ কর, যখন আমরা এ ঘরকে লোকদের কেন্দ্র ও নিরাপদ আশ্রয় স্থল বানিয়েছিলাম এবং ইবরাহীমের ইবাদাতের স্থানকে ‘মুসাল্লা’ (জায়নামায) বানাবার নির্দেশ দিয়েছিলাম আর তাওয়াফকারী , অবস্থানকারী এবং নামাযীদের জন্য আমার ঘরকে পাক ও পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে নির্দেশ দিয়েছিলাম। পরে যখন ইবরাহীম দোয়া করলো, হে পালনকর্তা আপনি এ শহরকে শান্তিপূর্ণ জনপদে পরিণত করুন এবং এখানকার অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী তাদের জন্য ফল-মূল দ্বারা জীবিকার সংস্থান করে দিন।” - সূরা আল বাকারাঃ ১২৫-১২৬ <br />
وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ - رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُسْلِمَةً لَكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَا إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ - رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آَيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ <br />
“এবং স্মরণ কর, ইবরাহীম ও ইসমাঈল যখন এ ঘরের ভিত্তি স্থাপনকালে দোয়া করছিলঃ পরওয়ারদিগার ! আমাদের এ চেষ্টা কুবল কর, তুমি সবকিছু জান ও শুনতে পাও। পরওয়ারদিগার ! তুমি আমাদের দু’জনকেই মুসলিম- অর্থাৎ তোমার অনুগত কর এবং আমাদের বংশাবলী থেকে এমন একটি জাতি তৈরী কর যারা একান্তভাবে, তোমারই অনুগত হবে। আমাদেরকে তোমার ইবাদাত করার পন্থা বলে দাও, আমাদের প্রতি ক্ষমার দৃষ্টি নিক্ষেপ কর, তুমি বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়াময়। পরওয়ারদিগার! তুমি সে জাতির প্রতি তাদের মধ্য থেকে এমন একজন রাসূল পাঠাও যিনি তাদেরকে তোমার বাণী পড়ে শুনাবে, তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞানের শিক্ষা দেবে এবং তাদের চরিত্র সংশোধন করবে। নিশ্চয় তুমি সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন এবং বিজ্ঞ।” - সূরা আল বাকারাঃ ১২৭-১২৯ <br />
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَذَا الْبَلَدَ آَمِنًا وَاجْنُبْنِي وَبَنِيَّ أَنْ نَعْبُدَ الْأَصْنَامَ - رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضْلَلْنَ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ فَمَنْ تَبِعَنِي فَإِنَّهُ مِنِّي وَمَنْ عَصَانِي فَإِنَّكَ غَفُورٌ رَحِيمٌ - رَبَّنَا إِنِّي أَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُمْ مِنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ <br />
“এবং স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম দোয়া করেছিলঃ হে আল্লাহ ! এ শহরকে শান্তিপূর্ণ বানিয়ে দাও, আমাকে এবং আমার সন্তানকে মূর্তিপূজার শির্ক থেকে বাচাও। হে আল্লাহ ! এ মূর্তিগুলো অসংখ্য লোককে গোমরাহ করেছে। অতএব, যে আমার পন্থা অনুসরণ করবে সে আমার, আর যে আমার পন্থার বিপরীত চলবে -তখন তুমি নিশ্চয়ই বড় ক্ষমাশীল ও দয়াময়। পরাওয়ারদিগার ! আমি আমার বংশধরদের একটি অংশ তোমার এ মহান ঘরের নিকট, এ ধূসর মরূভূমিতে এনে পুনর্বাসিত করেছি- এ উদ্দেশ্যে যে, তারা নামাযের ব্যবস্থা কায়েম করবে। অতএব, হে আল্লাহ ! তুমি লোকদের মনে এতদূর উৎসাহ দাও যেন তারা এদের জীবিকার ব্যবস্থা করে। হয়ত এরা তোমার কৃতজ্ঞ বান্দা হবে।”-সূরা ইবরাহীমঃ ৩৫-৩৭ <br />
وَإِذْ بَوَّأْنَا لِإِبْرَاهِيمَ مَكَانَ الْبَيْتِ أَنْ لَا تُشْرِكْ بِي شَيْئًا وَطَهِّرْ بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْقَائِمِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ - وَأَذِّنْ فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ - لِيَشْهَدُوا مَنَافِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَعْلُومَاتٍ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ <br />
“এবং স্মরণ কর, যখন ইবরাহীমের জন্য এ ঘরের স্থান ঠিক করেছিলাম -একথা বলে যে, এখানে কোনো প্রকার শিরক করো না এবং আমার ঘরকে তাওয়াফকারী ও নামাযীদের জন্য পাক-সাফ করে রাখ। আর লোকদেরকে হজ্জ করার জন্য প্রকাশ্যভাবে আহবান জানাও - তারা যেন তোমার কাছে আসে, পায়ে হেঁটে আসুক কিংবা দূরবর্তী স্থান থেকে কৃশ উটের পিঠে চড়ে আসুক। এখানে এসে তারা যেন দেখতে পায় তাদের জন্য দ্বীন -দুনিয়ার কল্যানের কত সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর দেয়া জন্তুগুলোকে আল্লাহর নামে কুরবানী করবে, তা থেকে নিজেরাও খাবে এবং দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত লোকদেরও খেতে দেবে।” - সূরা আল হজ্জঃ ২৬-২৮ <br />
‘হজ্জ’ শুরু হওয়ার এটাই গোড়ার ইতিহাস। এটাকে ইসলামের পঞ্চম রোকন (স্তম্ভ) হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এ থেকে জানা গেলে যে, দুনিয়ায় যে নবী বিশ্বব্যাপী ইসলামী আন্দোলন পরিচালনার জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন, মক্কা-ই ছিল তাঁর প্রধান কার্যালয়।পবিত্র কা’বাই ছিল এর প্রধান কেন্দ্র - যেখানে থেকে ইসলাম দুনিয়ায় দূরবর্তী অঞ্চলে প্রচারিত হতো।আর দুনিয়ায় যারাই এক আল্লাহর বন্দেগী করতে চাবে এবং বাস্তব কর্মজীবনে তার আনুগত্য করে চলবে, তাঁরা যে জাতি আর যে দেশেরই অধিবাসী হোক না কেন, সকলেই একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রে প্রতি বছর এসে সমবেত হবে, এজন্য ‘হজ্জ’ করার পন্থা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এ দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়া যাবে যে, চাকা যেমন নিজ অক্ষের চতুর্দিকে ঘোরে, মুসলমানদের জীবনও তেমনি আপন কেন্দ্রেরই চতুর্দিকে আবর্তিত হয়- এ গূঢ় রহস্যেরই বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে হজ্জ। <br />
হজ্জের ইতিহাস<br />
কিভাবে এবং কোন উদ্দেশ্যে হজ্জ শুরু হয়েছিল সে কথা পূর্বের প্রবন্ধে আলোচনা করেছি। হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম মক্কায় ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন এবং তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে এখানে বসিয়ে ছিলেন, যেন তার পরে তিনি এ আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারেন, একথাও পূর্বের প্রবন্ধে বলা হয়েছে। হযরত ইসমাইল আলাইহীস সালামের পর তার বংশ ধরগণ কতকাল দীন ইসলামের পথে চলেছে তা আল্লাহ তাআলাই অবগত আছেন। কিন্তু পরবর্তী কয়েক শতাদ্বীর মধ্যেই তারা যে পূর্ববর্তী মহাপুরুষদের শিক্ষা ও প্রদর্শিত পথ ভুলে গিয়েছিল এবং অন্যান্য ‘জাহেল’ জাতির ন্যায় সর্বপ্রকার গোমরাহী ও পাপ- প্রথার প্রচলন করেছিল, তাতে সন্দেহ নেই।যে কা’বা ঘরকে কেন্দ্র করে এককালে এক আল্লাহর ইবাদাতের দাওয়াত ও প্রচার শুরু হয়েছিল, সেই কাবা ঘরে শত শত মূর্তি স্থাপন করা হলো। এমনকি, মূর্তি পূজা বন্ধ করার সাধনা ও আন্দোলনে যে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও ইসমাঈল আলাইহিস সালামের সারাটি জীবন অতিবাহিত হয়েছিল তাদের মূর্তি নির্মাণ করেও কাবা ঘরে স্থাপন করা হয়েছিল। চন্দ্র, বুধ, শুক্র, শনি ইত্যাদি গ্রহ - নক্ষত্রের পুজাও করতো। ভুত- প্রেত, ফেরেশতা এবং মৃত পূর্বপুরুষদের ‘আত্মা’র পূজাও করতো। তাদের মূর্খতা এতদূর প্রচন্ড রূপ ধারনা করেছিল যে, ঘর থেকে বের হবার সময় নিজেদের বংশের মূর্তি না পেলে পথ চলার সময় যে কোনো রঙীন পাথর দেখতে পেতো তারা তারই পূজা শুরু করতো। পাথর না পেলে পানি ও মাটির সংমিশ্রণে একটি প্রতিমূর্তি বানিয়ে তার ওপর ছাগ দুগ্ধ ছিটিয়ে দিলেই তাদের মতে সেই নিস্প্রাণ পিন্ডটি খোদা হয়ে যেত এবং এরই পুজা করতো । যে পৌরোহিত্য ও ঠাকুরবাদের বিরুদ্ধে তাদের ‘পিতা’ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সমগ্র ইরাকের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, তা-ই আবার তাদের ঘরে প্রবেশ করেছিল, কা’বাকে তারা মূর্তিপূজার আড্ডাখানা বানিয়ে নিজেরাই সেখানকার পুরোহিত সেজেছিল। হজ্জকে তারা ‘তীর্থযাত্রা’র অনুরূপ বানিয়ে তাওহীদ প্রচারের কেন্দ্রস্থল কা’বা ঘর থেকে মূর্তিপূজার প্রচার শুরূ করেছিল এবং পূজারীদের সর্বপ্রকার কলা -কৌশল অবলম্বন করে আরবের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকদের কাছ থেকে ‘নযর- নিয়ায ও ভেট - বেগাড়’ আদায় করতো এভাবে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম যে মহান কাজ শুরু করেছিলেন, তা সবই বিনষ্ট হয়ে গেল। <br />
এ ঘোর জাহেলী যুগে হজ্জের যে চরম দুর্গতি হয়েছিল একটি ব্যাপার থেকে তা ষ্পষ্টরূপে অনুমান করা যায়। মক্কায় একটি বার্ষিক মেলা বসতো, আরবের বড় বড় বংশ ও গোত্রের কবি কিংবা ‘কথক’ নিজ নিজ গোত্রের খ্যাতি, বীরত্ব, শক্তি, সম্মান ও বদান্যতার প্রশংসায় আকাশ- বাতাস মুখরিত করে তুলতো এবং পারষ্পরিক গৌরব ও অহংকার প্রকাশের ব্যাপারে রীতিমত প্রতিযোগিতা করতো। এমন কি অপরের নিন্দার পর্যায়ও এসে যেত । সৌজন্য ও বদান্যতার ব্যপারেও পাল্লা দেয়া হতো। প্রত্যেক গোত্র -প্রধান নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করার জন্য ডেগ চড়াতো এবং একে অন্যকে হেয় করার উদ্দেশ্যে উটের পর উট যবেহ করতো। এ অপচয় ও অপব্যয়ের মূলে তাদের একটিমাত্র লক্ষ্য ছিল ; তা এই যে, এ সময় কোনো বদান্যতা করলে মেলায় আগত লোকদের মাধ্যমে আরবের সর্বত্র তাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে এবং কোন গোত্রপতি কতটি উট যবেহ করেছিল এবং কত লোককে খাইয়েছিল ঘরে ঘরে তার চর্চা শুরু হবে । এসব সম্মেলনে নাচ -গান, মদ পান, ব্যভিচার এবং সকল প্রকার নির্লজ্জ কাজ - কর্মের অনুষ্ঠান বিশেষ জাক- জমকের সাথে সম্পন্ন হতো। এ উৎসবের সময় এক আল্লাহর দাসত্ব করার কথা কারো মনে জাগ্রত হতো কিনা সন্দেহ। কা’বা ঘরের চতুর্দিকে তাওয়াফ করা হতো। কিন্তু তার পদ্ধতি বিকৃত হয়ে গিয়েছিল । নারী - পুরুষ সকলেই উলংগ হয়ে একত্রে ঘুরতো আর বলতো আমরা আল্লাহর সামনে এমন অবস্থায় যাব, যেমন অবস্থায় আমাদের মা আমাদেরকে প্রসব করেছে। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের প্রতিষ্ঠিত মসজিদে ‘ইবাদাত’ করা হতো একথা ঠিক; কিন্তু কিভাবে ? খুব জোরে হাততালি দেয়া হতো, বাঁশি বাজান হতো, শিংগায় ফুঁ ৎকার দেয়া হতো। আল্লাহর নামও যে সেখানে নেয়া হতো না, এমন নয়। কিন্তু কিরূপে ? তারা বলতো: <br />
لَبَّيْكَ اللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ إِلاَّ شَرِيْكاً هُوَ لَكَ تَمْلِيْكُهُ وَمَا مَلَكَ <br />
“আমি এসেছি হে আমার আল্লাহ ! আমি এসেছি, তোমার কেউ শরীক নেই ; কিন্তু যে তোমর আপন,সে তোমার অংশীদার। তুমি তারও মালিক এবং তার মালিকানারও মালিক।” <br />
আল্লাহর নামে সেখানে কুরবানীও দেয়া হতো। কিন্তু তার পন্থা ছিল কত নিকৃষ্ট ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ। কুরবানীর রক্ত কা’বা ঘরের দেয়ালে লেপে দিত এবং এর গোশত কা’বার দুয়ারে ফেলে রাখতো। কারণ, তাদের ধারণা মতে আল্লাহ এসব রক্ত ও গোশত তাদের কাছ থেকে কবুল করছেন (নাউযুবিল্লাহ)। হযরত ইবরাহীম আলাহিস সালামের সময়ই হজ্জের চার মাসে রক্তপাত হারাম করে দেয়া হয়েছিল এবং এ সময় সকল প্রকার যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পরবর্তী - কালের লোকেরা এ নিষেধ অনেকটা মেনে চলেছে বটে ; কিন্তু যুদ্ধ করতে যখন ইচ্ছা হতো, তখন তারা এক বছরের নিষিদ্ধ মাসগুলোকে ‘হালাল’ গণ্য করতো এবং পরের বছর তারা ‘কাযা’ আদায় করতো। <br />
এছাড়া অন্যান্য যেসব লোক নিজ ধর্মের প্রতি নিষ্ঠাবান ছিল তারাও নিতান্ত মূর্খতার কারণে আশ্চর্য রকমের বহু রীতিনীতির প্রচলন করেছিল। একদল লোক কোনো সম্বল না নিয়ে হজ্জ যাত্রা করতো এবং পথে ভিক্ষা মেগে দিন অতিবাহিত করতো। তাদের মতে এটা খুবই পুণ্যের কাজ ছিল। মুখে তারা বলতো -“আমরা আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করেছি, আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করার জন্য যাচ্ছি- দুনিয়ার সম্বল নেয়ার প্রয়োজন কি ?” হজ্জে গমনকালে ব্যবসা করা কিংবা কামাই - রোযগারের জন্য শ্রম করাকে সাধারণত নাজায়েয বলেই ধারণা করা হতো। অনেক লোক আবার হজ্জের সময় পানাহার পর্যন্ত বন্ধ করে দিত এবং এরূপ করাকেও তারা ইবাদত বলে মনে করতো। কোনো কোনো লোক হজ্জে যাত্রা করলে কথাবার্তা পর্যন্ত বন্ধ করে দিত। এর নাম ছিল ‘হজ্জে মুছমিত’ বা ‘বোবা হজ্জ’। এভাবে আরও যে কত প্রকার ভ্রান্ত ও কুপ্রথার প্রচলন হয়েছিল তার ইয়ত্তা নেই। সেগুলোর বিস্তারিত বিবরণ লিখে সময় নষ্ট করতে চাই না। <br />
এরূপ ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা কম- বেশী দু’ হাজার বছর পর্যন্ত ছিল। এ দীর্ঘ সময়ে আরব দেশে কোন নবীর আবির্ভাব হয়নি, আর কোনো নবীর প্রকৃত শিক্ষাও সেই দেশে পৌছেনি। অবশেষে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দোয়া পুর্ণ হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসলো। তিনি কা’ বা ঘর প্রতিষ্ঠার সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেনঃ “হে আল্লাহ !এ দেশে একজন নবী এ জাতির মধ্য থেকেই প্রেরণ কর, যে এসে তাদেরকে তোমার বাণী শুনাবে ; জ্ঞান ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দেবে এবং তাদের নৈতিক চরিত্র সংশোধন করবে।” এ দোয়া আল্লাহর কাছে মঞ্জুর হয়েছিল, তাই তাঁরই অধস্তন পুরুষে একজন কামেল ইনসান’ আবির্ভুত হলেন, যাঁর পাক নাম মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম ইবনে আবদুল্লাহ। <br />
হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যেরূপ পূজারী ও পুরোহিতের বংশে জন্মলাভ করেছিলেন, এ ‘কামেল ইনসান’ হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও অনুরূপ এমন এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন- শতাব্দীকাল ধরে যারা কা’বা ঘরের পৌরোহিত্য করে আসছিল। একচ্ছত্রভাবে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যেরূপ আপন বংশের পৌরোহিত্যবাদের ওপর আঘাত হেনেছিলেন, শেষ নবী হযরাত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ঠিক তেমনি প্রচন্ড আঘাত হেনেছিলেন নিজ বংশীয় পৌরোহিত্য ও পন্ডিতগিরির ওপর। শুধু তাই নয়, তাঁর আঘাতে তা একেবারে মূলোৎপাটিত হয়েছিল। হযরত ইবারাহীম আলাইহিস সালাম যেমন বাতিল মতবাদ ও সমগ্র মিথ্যা খোদায়ী ধ্বংস করা এবং এক আল্লাহর প্রভুত্ব কায়েম করার উদ্দেশ্যে চেষ্টা করেছিলেন, শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তাই করেছিলেন। তিনি হযরত ইবারাহীম আলাইহিস সালামের প্রচারিত প্রকৃত ও নির্মল দ্বীন ইসলামকে পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। একুশ বছরের চেষ্টায় তার এসব কাজ যখন পূর্ণতা লাভ করে তখন আল্লাহ তায়ালার হুকুমে কা’বা ঘরকেই তিনি সমগ্র দুনিয়ায় এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীদের কেন্দ্ররূপে স্থাপনের কথা ঘোষণা করলেন এবং দুনিয়ার সকল দিক থেকেই হজ্জ করার জন্য কা’বা ঘরে এসে জমায়েত হওয়ার আহবান জানালেনঃ <br />
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ <br />
“মানুষের ওপর আল্লাহর হক এই যে, এ কা’বা ঘর পর্যন্ত আসার সামর্থ যাদের আছে তারা হজ্জ করার জন্য এখানে আসবে। যারা কুফুরী করবে (অর্থাৎ সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ করতে আসবে না), তারা জেনে রাখুক যে, আল্লাহ সৃষ্টিজগতের মুখাপেক্ষী নন।”- সূরা আলে ইমরানঃ ৯৭ <br />
এভাবে নব পর্যায়ে হজ্জ প্রবর্তন করার সাথে সাথে জাহেলী যুগে দু’ হাজার বছর যাবত প্রচলিত যাবতীয় কুসংস্কার একেবারে বন্ধ করা হলো। কা’বা গৃহের মূর্তিগুলো ভেংগে ফেলা হলো। আল্লাহ ছাড়া মূর্তির যে পূজা সেখানে হতো তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া হলো। মেলা এবং সকল প্রকার তামাশা ও উৎসব নিষিদ্ধ করে দেয়া হলো। আল্লাহর ইবাদাত করার সঠিক এবং স্বাভাবিক পদ্ধতি প্রচলন করা হলো, আল্লাহর আদেশ হলোঃ <br />
وَاذْكُرُوهُ كَمَا هَدَاكُمْ وَإِنْ كُنْتُمْ مِنْ قَبْلِهِ لَمِنَ الضَّالِّينَ <br />
“(আল্লাহর স্মরণ এবং ইবাদাত করার,) যে পন্থা আল্লাহ তোমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, ঠিক তদনুযায়ী আল্লাহর স্মরণ (ও ইবাদাত) কর যদিও এর পূর্বে তোমরা পথভ্রষ্ট ছিলে (অর্থাৎ স্মরণ ও ইবাদাত করার সঠিক পন্থা জানতে না) ” - সূরা আল বাকারাঃ ১৯৮ <br />
সকল অন্যায় ও বাজে কর্মতৎপরতা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হলোঃ <br />
فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ <br />
“হজ্জ উপলক্ষে কোনরূপ ব্যাভিচার, অশ্লীলতা, আল্লাহদ্রোহিতা, ফাসেকী কাজ এবং ঝগড়া -বিবাদ বা যুদ্ধ - বিগ্রহ করা যাবে না।” <br />
কাব্য আর কবিত্বের প্রতিযোগিতা, পূর্বপুরুষদের কাজ -কর্মের কথা নিয়ে গৌরব -অহংকার এবং পরের দোষ -ক্রটি প্রচার করা বা গালাগাল দেয়া বন্ধ করা হলোঃ <br />
فَإِذَا قَضَيْتُمْ مَنَاسِكَكُمْ فَاذْكُرُوا اللَّهَ كَذِكْرِكُمْ آَبَاءَكُمْ أَوْ أَشَدَّ ذِكْرًا <br />
“হজ্জের অনুষ্ঠানগুলো যখন সম্পন্ন হয়ে যাবে তখন তোমাদের পূর্ব-পুরুষগণ যেভাবে বাপ -দাদার স্মরণ করতো ঠিক অনুরূপ কিংবা তদপেক্ষা বেশী করে তোমরা আল্লাহর স্মরণ কর।” সূরা আল বাকারাঃ২০০ <br />
শুধু লোকদের দেখাবার জন্য বা খ্যাতি অর্জন করার যেসব বদান্যতা ও দানশীলতার গৌরব করা হতো তা সবই বন্ধ হলো এবং তদস্থলে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের আমলের পশু যবেহ করার রীতি প্রচলিত হলো। কারণ এর ফলে গরীব হাজীদেরও কুরবানীর গোশত খাওয়ার সুযোগ মিলত। <br />
“খাও, পান কর, কিন্তু অপচয় করো না ; কারণ আল্লাহ তাআলা অপচয়কারীদেরকে ভালবাসেন না।”-সুরা আল আরাফঃ ৩১ <br />
“খালেছ আল্লাহর উদ্দেশ্যেই এবং তারই নামে এ জন্তুগুলোকে যবেহ কর। যবেহ করার পর যখন প্রাণ একেবারে বের হয়ে যাবে, তখন নিজেরাও তা খাও এবং ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্ত প্রার্থীকেও খেতে দাও।”- সুরা আল হাজ্জঃ ৩৬ <br />
কুরবানীর পশুর রক্ত খানায়ে কা’বার দেয়ালে মর্দন করা এবং গোশত নিক্ষেপ করার কুপ্রথা বন্ধ হলো। পরিস্কার বলে দেয়া হলোঃ <br />
“এসব পশুর রক্ত বা গোশত আল্লাহর কাছে পৌছায় না, তোমাদের তাকওয়া এবং পরহেযগারীই আল্লাহর কাছে পৌঁছতে পারে।” সুরা আল হাজ্জঃ৩৭ <br />
উলংগ হয়ে তাওয়াফ করা একেবারে নিষিদ্ধ হয়ে গেল এবং বলা হলোঃ “হে নবী! আপনি তাদেরকে বলে দিন যে, আল্লাহ তার বান্দাহদের জন্য যেসব সৌন্দর্যবর্ধক জিনিস (অর্থ্যাৎ পোশাক পরিচ্ছদ) মনোনীত করেছেন, তা কে হারাম করলো? ”- সূরা আল আরাফঃ ৩২ <br />
“হে নবী ! আপনি বলে দিন যে, আল্লাহ কখনও নির্লজ্জতার হুকুম দেন না।”- সূরা আল আরাফঃ ৬৮ <br />
“হে আদম সন্তান! সকল ইবাদাতের সময় তোমাদের সৌন্দর্য গ্রহণ (পোশাক পরিধান) কর।” সূরা আল আরাফঃ৩১ <br />
হজ্জের নির্দিষ্ট মাসগুলোকে উল্টিয়ে দেয়া এবং নিষিদ্ধ মাসকে যুদ্ধের জন্য ‘হালাল’ মনে করাকে বিশেষ কড়াকড়ির সাথে বন্ধ করা হলোঃ <br />
“নাসী কুফরীকে অধিকতর বাড়িয়ে দেয় (কুফরীর সাথে স্পর্ধাকে যোগ করে)। কাফেরগন এভাবে আরও অধিক গোমরাহীতে নিমজ্জিত হয়। এক বছর এক মাসকে হালাল মনে করে আবার দ্বিতীয় বছর তার বদলে আর একটি মাসকে হারাম বেঁধে নেয় -যেন আল্লাহর নিষিদ্ধ মাসগুলোর সংখ্যা সমান থাকে। কিন্তু এরূপ কাজ করলে আল্লাহর নিষিদ্ধ জিনিসকেই হালাল করা হয়।” সুরা আত তওবাঃ ৩৭ <br />
সম্বল না নিয়ে হজ্জযাত্রা করা নিষিদ্ধ হলো এবং পরিস্কার বলে দেয়া হলোঃ <br />
“হজ্জ গমনকালে সম্বল অবশ্যই নেবে। কারণ, (দুনিয়ার সফরের সম্বল না নেয়া আখেরাতের সম্বল নয়) আখেরাতের উত্তম সম্বল তো হচ্ছে তাকওয়া ।” সুরা আল বাকারাঃ ১৯৭ <br />
হজ্জের সময় ব্যবসা করা বা অন্য কোনো উপায়ে রুজি -রোযগার করা নিতান্ত অপরাধের কাজ, আর এসব না করাকেই বড় পুণ্যের কাজ মনে করা হতো। আল্লাহ তাআলা এ ভুল ধারণার প্রতিবাদ করে নাযিল করলেনঃ <br />
“(হজ্জে গমনকালে) ব্যবসা করে আল্লাহর অনুগ্রহ স্বরূপ কিছু কামাই রোযগার করলে তাতে কোন অপরাধ নেই।” -সুরা আল বাকারা ১৯৮ <br />
'বোবা’ হজ্জ এবং 'ক্ষুধার্ত -পিপাসার্ত’ হজ্জ হতেও মানুষকে বিরত রাখা হলো। শুধু তাই নয়, এছাড়া জাহেলী যুগের আরও অসংখ্য কুসংস্কার নির্মূল করে দিয়ে তাকওয়া, আল্লাহর ভয়, পবিত্রতা এবং অনাড়ম্বরতাকে মানবতার পূর্ণাংগ আদেশ বলে ঘোষনা করা হলো, হজ্জযাত্রীদেরকে নির্দেশ দেয়া হলো যে, তারা যেন ঘর থেকে বের হবার সময় নিজেদেরকে সকল প্রকার পার্থিব সম্পর্ক থেকে মুক্ত করে নেয়, নফসের খাহেশ ও লালসা যেন ত্যাগ করে, হজ্জ গমন পথে স্ত্রী-সহবাসও যেন না করে, গালাগাল, কুৎসা রটানো, অশ্লীল উক্তি প্রভৃতি জঘন্য আচরণ থেকে যেন দূরে সরে থাকে। কা’বায় পৌঁছার যত পথ আছে, প্রত্যেক পথেই একটি স্থান নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। সেই স্থান অতিক্রম করে কা’বার দিকে অগ্রসর হওয়ার পূর্বে এহরাম বেঁধে গরীবানা পোশাক পরিধান করে নেবে। এতে আমীর গরীব সকলেই সমান হবে, পৃথক কওম, গোত্র প্রভৃতির পার্থক্য ঘুচে যাবে এবং সকলেই এক বেশে- নিতান্ত দরিদ্রের বেশে এক আল্লাহর সামনে বিনয় ও নম্রতার সাথে উপস্থিত হবে। এহরাম বাঁধার পর মানুষের রক্তপাত করা তো দুরের কথা, পশু শিকার করাও নিষিদ্ধ। মানুষের মধ্য থেকে যেন কোনো যুদ্ধ -বিগ্রহ না হয়, এজন্য এ চারটি মাসকে ‘হারাম’ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে কা’বা গমনের সমস্ত পথ নিরাপদ হবে ; হজ্জ যাত্রীদের পথে কোনোরূপ বিপদের আশংকা থাকবে না। এরূপ পবিত্র ভাবধারা সহকারে তারা ‘হেরেম শরীফে’ প্রবেশ করবে- কোনো রূপ রং- তামাশা, নাচ - গান এবং মেলা আর খেলা দেখার উদ্দেশ্যে নয়। এখানে প্রতি পদে পদে আল্লাহর স্মরণ - আল্লাহর নামের যিকর, নামায, ইবাদাত ও কুরবানী এবং কাবা ঘর প্রদক্ষিণ (তাওয়াফ) করতে হয়। আর এখানে একটি মাত্র আওয়াযই মুখরিত হয়ে উঠে, ‘হেরেম শরীফের ’ প্রাচীর আর পাহাড়ের চড়াই উৎরাইয়ের প্রতিটি পথে উচ্চারিত হয়ঃ <br />
“তোমার ডাকেই হাজির হয়েছি, হে আল্লাহ !আমি এসেছি, তোমার কোন শরীক নেই, আমি তোমারই কাছে এসেছি। সকল তা’ রীফ প্রশংসা একমাত্র তোমারই জন্য। সব নেয়ামত তোমারই দান, রাজত্ব আর প্রভুত্ব সবই তোমার। তুমি একক- কেউ তোমার শরীক নেই।” <br />
এরূপ পূত -পবিত্র এবং ঐকান্তিক নিষ্ঠাপূর্ণ হজ্জ সম্পর্কে বিশ্বনবী ইরশাদ করেছেনঃ <br />
“যে ব্যক্তি খাঁটিভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করে এবং এ ব্যাপারে সকল প্রকার লালসা এবং ফাসেকী থেকে দূরে থাকে, সে সদ্যজাত শিশুর মতই (নিষ্পাপ হয়ে) ফিরে আসে।” <br />
অতপর হজ্জের কল্যাণ ও কার্যকারিতা বর্ণনা করার পূর্বে হজ্জ কি রকমের ফরয, তা বলা আবশ্যক। আল্লাহ কালামে পাকে বলেনঃ <br />
“আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছার মতো সামর্থ যার আছে, হজ্জ করা তার ওপর আল্লাহর একটি অনিবার্য নির্দিষ্ট ‘হক’। এতদসত্ত্বেও যে তা অমান্য করবে সে কাফের এবং আল্লাহ দুনিয়া জাহানের মুখাপেক্ষী নন।”- সূরা আল ইমরানঃ ৯৭ <br />
এ আয়াতেই হজ্জ করার সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ না করাকে পরিষ্কার কুফরী বলা হয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে যা বলেছেন, তার মধ্যে দু’টি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছেঃ <br />
مَنْ مَلَكَ زَادًا وَرَاحِلَةً تُبَلِّغُهُ إِلَى بَيْتِ اللَّهِ وَلَمْ يَحُجَّ فَلَا عَلَيْهِ أَنْ يَمُوتَ يَهُودِيًّا أَوْ نَصْرَانِيًّا <br />
“আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছার জন্য পথের সম্বল এবং বাহন যার আছে সে যদি হজ্জ না করে, তবে এ অবস্থায় তার মৃত্যু ইহুদী ও নাসারার মৃত্যুর সমান বিবেচিত হবে।” [তিরমিযী] <br />
مَنْ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنَ الْحَجِّ حَاجَةٌ ظَاهِرَةٌ أَوْ سُلْطَانٌ جَائِرٌ أَوْ مَرَضٌ حَابِسٌ فَمَاتَ وَلَمْ يَحُجَّ فَلْيَمُتْ إِنْ شَاءَ يَهُودِيًّا وَإِنْ شَاءَ نَصْرَانِيًّا <br />
“যার কোনো প্রকাশ্য অসুবিধা নেই, কোন যালেম বাদশাও যার পথ রোধ করেনি এবং যাকে কোন রোগ অসমর্থ করে রাখেনি - এতদসত্ত্বেও সে যদি হজ্জ না করেই মরে যায়, তবে সে ইয়াহুদী ব খৃষ্টান হয়ে মরতে পারে।” [দারেমী] <br />
হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বাখ্যা করে বলেছেনঃ <br />
“সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যারা হজ্জ করেনা ,তাদের ওপর জিজিয়া কর আরোপ করতে ইচছা হয়; কারণ তারা মুসলমান নয়,মুসলমান নয়।’’ <br />
আল্লাহ তায়ালার উল্লিখিত ইরশাদ এবং রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তারঁ খলিফার এ ব্যাখ্যা দ্বারা প্রত্যেকেই বুঝতে পারেন যে, হজ্জ করা সামান্য ফরয নয়। তা আদায় করা না করা মুসলমানদের ইচছাধীন করে দেওয়া হয়নি। বস্তুত যে সব মুসলমানদের কা’বা পর্যন্ত যাওয়া আসার আর্থিক সামর্থ আছে ,শারীরিক দিক দিয়েও যারা অক্ষম নয় তাদের পক্ষে জীবনের মধ্যে একবার হজ্জ করা অবশ্য কর্তব্য । তা না করে কিছুতেই মুক্তি নেই । দুনিয়ার যে কোণেই বাস করুক না কেন এবং যার ওপর ছেলে-মেয়ে ও কারবার কিংবা চাকরি-বাকরির যত বড় দায়িত্বই অর্পিত হোকনা কেন, সামর্থ থাকা সত্ত্বেও একজন মুসলমান যদি হজ্জকে এড়াতে চায় এবং অসংখ্য ব্যস্ততার অজুহাতে বছরের পর বছর তাকে ক্রমাগত পিছিয়ে দেয়-সময় থাকতে আদায় না করে ,তবে তার ঈমান আছে কিনা সন্দেহ । আর যাদের সমগ্র জীবনও হজ্জ আদায় করার কর্তব্য পালনের কথা মনে জাগে না , দুনিয়ার দিকে দিকে, দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায়- ইউরোপ-আমেরিকা যাতায়াতকালে হেজাযের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে -কা’বা ঘর যেখান থেকে মাত্র কয়েক ঘন্টার পথ, তবুও হজ্জ আদায় করার খেয়ালও তাদের মনে জাগ্রত হয়না -তারা কিছুতেই মুসলমান নয়; মুসলমান বলে দাবী করার কোনোই অধিকার তাদের নেই, দাবী করলেও সেই দাবী হবে মিথ্যা। আর যারা তাদেরকে মুসলমান মনে করে ,তারা কুরআন শরীফের বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ, জাহেল ।এসব লোকের মনে যদি মুসলিম জাতির জন্যে দরদ থাকে তবে থাকতে পারে ; কিন্তু তার কোনোই সার্থকতা নেই । কারণ তাদের হৃদয়-মনে আল্লাহর আনুগত্য ও তার বিধানের প্রতি ঈমানের কোনো অস্তিত্ব নেই, একথা স্বতঃসিদ্ধ । <br />
হজ্জের বৈশিষ্ট্য<br />
কুরআন শরীফে যেখানে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে হজ্জের জন্যে সাধারণ দাওয়াত দেয়ার হুকুমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে এর প্রথম কারণ হিসেবে বলা হয়েছেঃ <br />
-মানুষ এসে দেখুক যে ,এ হজ্জব্রত উদযাপনে তাদের জন্যে কি কি কল্যাণ নিহিত রয়েছে অর্থাৎ হজ্জের সময় আগমন করে কা’বা শরীফে একত্রিত হয়ে তারা নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করবে যে , তা তাদের জন্যে বস্তুতই কল্যাণ কর । কেননা এতে যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে , তা মানুষ নিজ চোখে দেখেই অনুধাবন করতে পারে।একটি বর্ণনা হতে জানা যায় যে হযরত ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহি হজ্জ করার পূর্ব পর্যন্ত ঠিক বুঝতে পারেননি যে, ইসলামি ইবাদত সমুহের মধ্যে কোনটি সর্বোত্তম; কিন্তু যখনই তিনি হজ্জ করে তার অন্তর নিহিত কল্যাণ প্রত্যক্ষ করলেন, তখন স্পষ্ট কন্ঠে বলে উঠলেন, ‘হজ্জ-ই সর্বোত্তম ইবাদত’। <br />
এখানে হজ্জের বৈশিষ্ট্য ও কল্যাণকারিতা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হচেছ। দুনিয়ার মানুষ সাধারনত দু’প্রকারের ভ্রমণ করে থাকে। এক প্রকারের ভ্রমণ করা হয় রুযি-রোযগারের জন্যে আর এক প্রকারের ভ্রমণ হয় আনন্দ-র্ষ্ফুতি ও অবসর বিনোদনের উদ্দেশ্যে। এ উভয় প্রকারের ভ্রমনেই মানুষের নিজের স্বার্থ ও প্রবৃত্তিই তাকে ভ্রমণে বের হতে উদ্বুদ্ধ করে । নিজের গরজেই ঘর-বাড়ী ত্যাগ করে , নিজের কোনো পার্থিব উদ্দেশ্যেই সন্তান সন্ততি ও আত্মীয় -স্বজন হতে দূরে চলে যায় । আর এ ধরনের সফরে সে টাকা- পয়সা যা কিছুই খরচ করে নিজের উদ্দেশ্য লাভের জন্যেই করে থাকে । কাজেই এসব সফরে মানুষকে আসলে কিছুই কুরবানী বা আত্মত্যাগ করতে হয়নি । কিন্তু হজ্জ উপলক্ষ্যে যে সফর করা হয় তা উল্লেখিত সফর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এটা নিজের কোনো গরযে কিংবা নিজের প্রবৃত্তির লালসা পূরণ করার জন্যে করা হয়না ; বস্তুত এটা করা হয় খালেছভাবে আল্লাহ তায়ালার জন্যে এবং আল্লাহর র্নিদিষ্ট উদ্দেশ্য পূর্ণ করার মানসে । এজন্যেই মানুষের মনে যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর প্রেম ভালোবাসা ও আল্লাহর ভয় জাগ্রত না হবে এবং আল্লাহর নির্ধারিত ফরযকে ফরয বলে মনে না করা হবে , ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ এ সফরে যাওয়ার জন্যে কিছুতেই উদ্যোগী হতে পারে না। কাজেই যে ব্যক্তি একটি দীর্ঘকালের জন্যে নিজের ঘর-বাড়ী, আত্বীয় -স্বজনের সাথে সর্ম্পক ত্যাগ করে এবং নিজের কারবার এর ক্ষতি, অর্থ ব্যয় ও সফরের কষ্ট স্বীকার করে হজ্জের জন্যে বের হবে ,তার এভাবে বের হওয়াই প্রমাণ করে যে তার মনে আল্লাহর ভয় ও ভালবাসা আছে । আল্লাহর ফরযকে সে ফরয বলে মনে করে এবং মানসিকভাবে সে এত দূর প্রস্তুত যে , বাস্তবিকই যদি কখনো আল্লাহর পথে বের হওয়ার প্রয়োজন হয় তখন সে অনায়াসেই গৃহ ত্যাগ করতে পারবে । কষ্ট স্বীকার করতে পারবে , নিজের ধন-সম্পদ এবং আরাম-আয়েশ সবকিছু আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্যে কুরবান করতে পারবে । <br />
এ পবিত্র ইচছা নিয়ে যখন সে হজ্জের সফরে যাবার জন্যে তৈরী হয় তখন স্বভাব -প্রকৃতি সম্পূর্ন আলাদা ধরনের হয়ে যায় । তার অন্তরে বাস্তবিকই আল্লাহর প্রেমের উদ্দিপনা স্বতঃষ্ফূর্ত হয়ে ওঠে। বস্তুত সে সেই দিকের জন্যে পাগল হয়ে ওঠে ,তার মনে তখন নেক ও পবিত্র ভাবধারা ছাড়া অন্য কিছুই জাগ্রত হতে পারেনা । <br />
সে পূর্বকৃত যাবতীয় গুনাহ থেকে তাওবা করে ,সকলের কাছে ভুল -ত্রুটির জন্যে মাপ চায় , পরের হক যা এ যাবত আদায় করেনি তা আদায় করে , কারণ ঋণের বোঝা নিয়ে আল্লাহর সামনে হাজির হওয়া সে মোটেই পছন্দ করেনা । সকল প্রকার পাপ ও অন্যায় চিন্তা থেকে তার মন পবিত্র হয়ে যায় ।স্বভাবতই তার মনের গতি মংগলের দিকেই নিবদ্ধ হয়, সফরে বের হওয়ার পর সে যতই অগ্রসর হতে থাকে ততই তার হৃদয় -মনে পৃণ্য ও পূত ভাবধারার তরংগ খেলে ওঠে । তার কোনো কাজ যেন কারো মনে কোনোরূপ আঘাত না দেয়, আর যারই যতটুকু উপকার করা যায় সেই সমস্ত চিন্তা এবং চেষ্টাই সে করতে থাকে। অশ্লীল ও বাজে কথা-বার্তা, নির্লজ্জতা, প্রতারণা-প্রবঞ্চনা এবং ঝগড়া-ফাসাদ ইত্যাদি কাজ থেকে তার প্রকৃতি স্বভাবতই বিরত থাকে। কারণ সে আল্লাহর ‘হারাম শরীফের’ যাত্রী তাই অন্যায় কাজ করে এ পথে অগ্রসর হতে সে লজ্জিত না হয়ে পারে না । তার সফরটাই যে ইবাদত, এ ইবাদতের কাজে যুলুম, আর পাপ কাজের কি অবকাশ থাকতে পারে? অতএব দেখা যাচ্ছে যে, অন্যান্য সকল প্রকার সফর থেকে এ সফর সম্পূর্ণ আলাদা। মানুষের মনকে এ সফর প্রতিনিয়ত পূত-পবিত্র করতে থাকে । সত্য বলতে গেলে এটা একটি বিরাট সংশোধনকারী কোর্স বিশেষ, প্রত্যেক হজ্জ যাত্রী মুসলমানকেই এ অধ্যায় অতিক্রম করতে হয়। <br />
সফরের একটি অংশ সমাপ্ত করার পর এমন একটি স্থান সামনে আসে যেখানে পৌছে প্রত্যেক মক্কাযাত্রী মুসলমান ‘এহরাম’ বাঁধতে বাধ্য হয় । এটা না করে কেউ সামনে অগ্রসর হতে পারে না। এই ‘এহরাম’ কি ? একটি সিলাই না করা লুংগী, একখানি চাদর এবং সিলাইবিহীন জুতা ছাড়া অন্য কিছুই নয়। এর অর্থ এই যে, এতকাল তুমি যাই থাক না কেন , কিন্তু এখন তোমাকে ফকিরের বেশেই আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে। কেবল বাহ্যিক ফকীরই নয়, প্রকৃতপক্ষে অন্তরেও ফকীর হতে চেষ্টা কর। রঙীন কিংবা জাকজমকপূর্ণ সকল পোশাক খুলে রাখ, সাদাসিধে ও দরবেশ জনোচিত পোশাক পরিধান কর। মোজা পরবে না, পা উন্মুক্ত রাখ, কোনো প্রকার সুগন্ধি ব্যবহার করবে না, চুল কেট না, সকল প্রকার অলংকার ও জাকজমক পরিহার করা। স্বামী -স্ত্রী সংগম হতে দূরে থাক, যৌন উত্তেজক কোন কাজ করো না, শিকার করো না। আর কোনো শিকারীকে শিকারের কাজে সাহায্য করো না। বাহ্যিক জীবনে যখন এরূপ বেশ ধারণ করবে তখন মনের ওপরও তার গভীর ছাপ মুদ্রিত হবে ভিতর হতেও তোমার মন সত্যিকারভাবে ‘ফকির’ হবে। অহংকার ও গৌরব দূরীভুত হবে, গরীবানা ও শান্তি -প্রিয়তার ভাব ফুটে ওঠবে। পার্থিব সুখ- সম্ভোগে লিপ্ত হওয়ার ফলে তোমার আত্মা যতখানি কলংকিত হয়েছিল তা দূর হয়ে যাবে এবং আল্লাহর বন্দেগী করার পবিত্র ভাবধারা তোমরা জীবনের ভিতর ও বাইর উভয় দিককেই মহীয়ান করে তুলবে। <br />
‘এহরাম’ বাঁধার সাথে সাথে হাজীকে একটি বিশেষ দোয়া বার বার পড়তে হয়। প্রত্যেক নামাযের পর, পথের প্রত্যেক চড়াই- উৎরাইয়ের সময়, কাফেলার সাথে মিলিত হবার সময় এবং প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠার সময়। দোআটি এইঃ <br />
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ <br />
বস্তুত হযরত ইবারাহীম আলাইহিস সালাম সাড়ে চার হাজার বছর পূর্বে আল্লাহর আদেশে (হজ্জ করার জন্য) যে সার্বজনীন আহবান জানিয়েছিলেন, তার জবাবেই এ দোয়া পাঠ করার নিয়ম হয়েছে। পঁয়তাল্লিশ শত বছর আগে, আল্লাহর এ আহ্ববানকারী ডেকে বলেছিলেনঃ “আল্লাহর বান্দাগণ! আল্লাহর ঘরের দিকে আস, পৃথিবীর প্রতি কোণ থেকে ছুটে আস। পায়ে হেটে আস, কিংবা যানবাহনে চড়ে আস।” এর জবাব স্বরূপ আজ পর্যন্ত ‘হারাম শরীফের’ প্রতিটি মুসাফির উচ্চৈস্বরে বলে ওঠেছেঃ “আমি এসেছি, হে আল্লাহ, আমি হাজির হয়েছি। কেউ তোমার শরীক নেই, আমি কেবল তোমারই আহবানক্রমে এসেছি, সব তারীফ প্রশংসা তোমারই দান, কোন কিছুতেই তোমার কেউ শরীক নেই।” <br />
এভাবে ‘লাব্বায়েকের’ প্রত্যেকটি ধ্বনির মারফত হযরত ইবারাহীম আলাইহিস সালাম ও ইসমাঈল আলাইহিস সালামের আমল থেকে প্রচলিত ইসলামী আন্দোলনের সাথে ‘হাজী’র নিবিড় সম্পর্ক স্থাপিত হয়। সাড়ে চার হাজার বছরের দূরত্ব মাঝখান হতে সরে গিয়ে একাকার হয়ে যায়। মনে হয় যেন এদিক থেকে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহর তরফ থেকে ডাকছেন, আর ওদিক থেকে প্রত্যেক হাজীই তার জবাব দিচ্ছে- জবাব দিতে দিতে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে । যতই সামনে অগ্রসর হয় ততই তার মনে প্রাণে উৎসাহ উদ্দীপনা এবং আধ্যাত্মিক ভাবের ঝর্ণাধারা অধিকতর বেগে প্রবাহিত হতে থাকে। পথের প্রত্যেক চড়াই - উৎরাইয়ের সময় তার কানে আল্লাহর আহবান ধ্বনিত হয়, আর সে তার জবাব দিতে দিতে অগ্রসর হয়। কাফেলার পর কাফেলা আসে, আর প্রত্যেকেই প্রেমিক পাগলের ন্যায় এই পয়গাম শুনে বলে উঠেঃ “আমি এসেছি, আমি হাজির হয়েছি।” প্রতিটি নূতন প্রভাত তার কাছে বন্ধুর পয়গাম বহন করে আনে,আর উষার ঝলকে চোখ খোলার সাথে সাথেই আমি এসেছি,’হে আল্লাহ! আমি হাজির হয়েছি’, বলে আওয়াজ দিতে থাকে । মোটকথা বারবার দেয়া এ আওয়াজ এহরামের গরীবানা পোশাক, সফরের অবস্থা এবং প্রত্যেকটি মঞ্জিলে কা’বা ঘরের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য নৈকট্যের ভাব উম্মাদনায় এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি হয় যে হাজী আল্লাহর অতল স্পর্শ গভীর প্রেমে আত্মমগ্ন হয়ে যায় এবং সেই এক বন্ধুর স্মরণ ভিন্ন তার জীবনের কোথাও অন্য কিছুর অস্তিত্ব থাকে না। <br />
এ অবস্থার ভিতর দিয়ে হাজী মক্কায় উপনীত হয় এবং সেখানে পৌছেই সোজা আসল লক্ষ্যস্থলের দিকে ছুটে যায়। বন্ধুর আস্তানাকে চুম্বন করে।তারপর নিজের আকীদা-বিশ্বাস, ঈমান, মতবাদ, দ্বীন ও ধর্মের কেন্দ্রস্থলের চারদিকে প্রদক্ষিণ করে ততবারই আস্তানাকে চুম্বন করে।(১)প্রত্যেক বারের তাওয়াফ কা’বা ঘরের কালো পাথর চুমু দিয়ে শুরু ও শেষ করা হয়। এখানে থেকে বের হয়ে ‘সাফা’ পর্বতে আরোহণ এবং এখান থেকে যখন কা’বা ঘরের দিকে তার দৃষ্টি পড়ে, তখন সে উচ্চস্বরে বলে ওঠেঃ <br />
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَلَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ <br />
"আল্লাহ ছাড়া আর কেউ মা’বুদ নেই, আমরা অন্য কারো বন্দেগী করি না ; আমরা কেবল একনিষ্টভাবে আল্লাহরই আনুগত্য স্বীকার করি - কাফেরদের কাছে এটা যতই অসহনীয় হোক না কেন।” <br />
অতপর ‘সাফা’ ও মারাওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যস্থলে দৌঁড়াতে হয়। এর দ্বারা হাজী একথা প্রমান করে যে, সে আল্লাহর নৈকট্য এবং তার সন্তোষ হাসিল করার উদ্দেশ্যে সবসময় এমন করে দৌড়াতে প্রস্তুত থাকবে। এ দৌড়ের সময়ও তার মুখ থেকে উচ্চারিত হতে থাকেঃ <br />
أَللَّهُمَّ اسْتَعْمَلْنِيْ بِسُنَّةِ نَبِيِّكَ وَتَوَفَّنِيْ عَلَى مِلَّتِهِ وَأَعِذْنِيْ مُّضِلاَّتِ الْفِتَنِ <br />
“হে আল্লাহ ! আমাকে তোমার নবীর আদর্শ ও রীতিনীতি অনুসারে কাজ করার তাওফীক দাও। তোমার নবীর পথেই যেন আমার মৃত্যু হয় এবং সত্য পথভ্রষ্টকারী ফেতনা থেকে আমাকে রক্ষা কর।” <br />
কখনো কখনো এই দোয়া পড়া হয়ঃ <br />
اغْفِرْ وَأَرْحَمْ وَتَجَا وَزَعَمَّا تَعْلَمُ إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعَزُّ الْأَكْرَمُ <br />
“হে রব! ক্ষমা কর, দয়া কর, আমার যেসব অপরাধ সম্পর্কে তুমি অবহিত তা মাফ করে দাও। তোমার শক্তি সবচেয়ে বেশী, দয়াও অতুলনীয়।” <br />
এরপর হাজী যেন আল্লাহর সৈনিকে পরিণত হয়। তাই পাচঁ ছয় দিন পর্যন্ত তাকে ক্যাম্পে জীবন কাটাতে হয়। একদিন ‘মিনা’র ছাউনীতে অতিবাহিত করতে হয়, পরের দিন আরাফাতে অবস্থান করতে হয় এবং সেনাপতির ‘খুতবার’ নির্দেশ শুনতে হয়। রাতে মুজাদালিফায় গিয়ে ক্যাম্প স্থাপন করতে হয়। দিন শেষে আবার ‘মিনায়’ ফিরে যেতে হয় এবং এখানে পাথর টুকরা নিক্ষেপ করে ‘চাঁদমারী’ করতে হয়। আবরাহা বাদশার সৈন্য- সামন্ত কা’বা ঘর ধ্বংস করার জন্য এ পর্যন্ত এসে পৌছেছিল । প্রত্যেকটি পাথর নিক্ষেপ করার সাথে সাথে আল্লাহর সিপাহী বলে উঠেঃ <br />
اَللهُ أَكْبَرْ رَغَماً لِلشَّيْطَانِ وَحِزْبِهِ <br />
“আল্লাহ মহান। শয়তান ও তাঁর অনুসারীদের মুখ ধূলায় মলিন হোক।” এবং- أَللَّهُمَّ تَصْدِيْقاً بِكِتَابِكَ وَإِِتِّبَاعاً لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ “হে আল্লাহ ! তোমার গ্রন্থের সত্যতা ঘোষণার ও তোমার নবীর আদেশ অনুসরণের তাওফীক দাও।” <br />
পাথর টুকরা দিয়ে চাঁদমারী করার অর্থ এ কথা প্রকাশ করা যে, হে আল্লাহ ! তোমার দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য কিংবা তোমার আওয়াজকে স্তব্ধ করার জন্য যে -ই চেষ্টা করবে, আমি তোমার বাণীকে উন্নত ও প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তার বিরুদ্ধে এমনি করে লাড়াই করবো। তারপর এ স্থানেই কুরবানী করা হয়। এটা দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জীবন বিসর্জন দেয়ার ইচ্ছা ও বাসনার বাস্তব এবং সক্রিয় প্রমান উপস্থিত করা হয়। এরপর সেখান থেকে কা’বার দিকে যাত্রা করা হয়- যেন ইসলামের মুজাহিদগন কর্তব্য সমাধা করে বিজয়ীর বেশে ‘হেড কোয়ার্টারের’ দিকে ফিরে যাচ্ছে। তাওয়াফ এবং দু’ রাকআত নামায পড়ার পর এহরাম খোলা হয়। এহরাম বাঁধার কারণে যেসব কাজ হারাম হয়েছিল এখন তা হালাল হয়ে যায়, হাজীর জীবন এখন স্বাভাবিক গতিতে চলতে থাকে। এ জীবন শুরু হওয়ার পর আবার তাকে ‘মিনায়’ গিয়ে ক্যাম্প গাড়তে হয় এবং পরের দিন পাথরের সেই তিনটি স্তম্ভের ওপর আবার কংকর দ্বারা চাঁদমারী করতে হয়। এটাকে ইসলামী পরিভাষায় বলা হয় ‘জুমরাত’। এটা আবরাহা বাদশার মক্কা আক্রমণকারী ফৌজের পশ্চাদপসরণ ও তাকে পরাভুত করার প্রতীক মাত্র। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের বছর হজ্জের সময়ই আল্লাহর ঘর ধ্বংস করার উদ্দেশ্য নিয়ে আবরাহা এসেছিল। আল্লাহর তরফ থেকে আসমানী পাখী কংকর নিক্ষেপ করেই তাদেরকে নাস্তানাবুদ করে দেয়। তৃতীয় দিবসে পুনরায় সেই স্তম্ভগুলোর ওপর পাথর নিক্ষেপ করার পর হাজী মক্কা প্রত্যাবর্তন করে এবং সাতবার তার দ্বীনের কেন্দ্র কা’বা ঘরের তাওয়াফ করে। এ তাওয়াফকে বিদায়ী তাওয়াফ বলা হয়। এটা সম্পন্ন হলেই হজ্জের কাজ সমাপ্ত হয়। <br />
হজ্জের নিয়ত এবং সে জন্য প্রস্তুতি ও যোগাড় যন্ত্র থেকে শুরু করে পুনরায় নিজ বাড়িতে ফিরে আসা পর্যন্ত কমবেশী তিন মাস কাল ধরে হাজীর মন- মগযে কত বিরাট ও গভীর খোদায়ী ভাবধারা পুঞ্জীভূত হয়ে থাকে ওপরের এই বিস্তারিত আলোচনা থেকে তা অনুমান করা খুবই সহজ। এ কাজে শুরু থেকেই সময়ের কুরবানী করতে হয়, অর্থের কুরবানী করতে হয, সুখ-শান্তি ত্যাগ করতে হয়, অসংখ্য পার্থিব সম্পর্ক - সম্বন্ধ ছিন্ন করতে হয়। হাজীর নিজের মনের অনেক ইচ্ছা - বাসনা স্বাদ - আস্বাদনকে উৎসর্গ করতে হয়। আর এ সবকিছুই তাকে করতে হয় কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য - নিজস্ব কোনো স্বার্থ তাতে স্থান পেতে পারে না। তারপর এ সফরে তাকওয়া-পরহেযগারীর সাথে সাথে আল্লাহর স্মরণ এবং আল্লাহর দিকে মনের ঔৎসুক্য ও আগ্রহ যত বৃদ্ধি পায়, তাও মানুষের মনের ওপর স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করে, বহুদিন পর্যন্ত সেই প্রভাব স্থায়ী হয়ে থাকে।হারাম শীরফে’ কদম রেখে হাজী প্রত্যেক পদে পদে সেসব মহামানবদের অতীত কর্মধারার স্পষ্ট নিদর্শন দেখতে পায়। যারা আল্লাহর বন্দেগী ও আনুগত্য করে এবং আল্লাহর দীন ইসলামকে কায়েম করতে গিয়ে নিজেদের যথাসর্বস্ব কুরবানী করেছেন, যারা সারা দুনিয়ার বিরুদ্ধে লাড়াই করেছেন, নানা প্রকার দুঃখ - লাঞ্জনা অকাতরে সহ্য করেছেন, নির্বাসন দন্ড ভোগ করেছেন, অসংখ্য যুলম বরদাশত করেছেন, কিন্তু আল্লাহর দীনকে কায়েম না করা পর্যন্ত তারা এতটুকু ক্লান্তিবোধ করেননি। যেসব ‘বাতিল’ শক্তি মানুষকে এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দাসত্ব করতে বাধ্য করছিল, তাঁরা তাদের সকলেরই মস্তক চূর্ণ করে দীন ইসলামের পতাকা উন্নত করে ধরেছেন। <br />
এসব সুস্পষ্ট নিশানা ও বরকত মন্ডিত নিদর্শনসমূহ প্রত্যক্ষ করে একজন আল্লাহ বিশ্বাসী ব্যক্তি প্রবল ইচ্ছা-বাসনা, সাহস ও আল্লাহর পথে জিহাদ করার যে প্রাণস্পর্শী শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে। তা অন্য কোন জিনিস থেকে গ্রহণ করতে পারে না। কা’বা ঘরের তাওয়াফ করায় দ্বীন ইসলামের কেন্দ্র বিন্দুর সাথে হাজীর নিবিড় সম্পর্ক স্থাপিত হয়। হজ্জ সম্পর্কীয় অন্যান্য কার্যাবলী দ্বারা হাজীর জীবনকে সৈনিকের ট্রেনিং দিয়ে গঠন করা হয় । নামাজ, রোজা এবং যাকাতের সাথে এসবকে মিলিয়ে যাচাই করলে পরিস্কার মনে হবে যে, ইসলাম এসব কিছুর সাহায্যে কোন এক বিরাট উদ্দেশ্যে মানুষকে ট্রেনিং দান করে। এর জন্যই মক্কা পর্যন্ত যাতায়াতের সামর্থ্য সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলমানের প্রতি হজ্জ ফরজ করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য এই যে, প্রতি বছরই অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যক মুসলমান ইসলামের এ প্রাণ কেন্দ্রে আসবে এবং ট্রেনিং লাভ করে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রের দিকে ফিরে যাবে। <br />
অতপর আরো একটি দিক লক্ষ্য না করলে হজ্জের কল্যাণ ও স্বার্থকতা পরিপূর্ণরূপে হৃদয়ংগম করা যাবে না। এক একজন মুসলমান কখনো একাকী হজ্জ করে না। দুনিয়ার সমগ্র মুসলমানের জন্যই হজ্জ করার একটি তারিখ নির্দিষ্ট করা হয়েছে। হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মুসলমান একত্রিত হয়ে একই সময়ে হজ্জ করে। ওপরের কথা দ্বারা আপনি শুধু এতটুকু বুঝতে পারেন যে, আলাদাভাবে একজন মুসলমান হজ্জ করলে তার ওপর তার কতখানি প্রভাব পড়া সম্ভব। পরবর্তী প্রবন্ধের মারফতে আপনি বিস্তারিতরূপে জানতে পারেবেন যে, দুনিয়ার মুসলমানদের জন্য হজ্জের একটি সময় নির্দিষ্ট করে দিয়ে হজ্জের কল্যাণ কত লক্ষগুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে একটি কাজে দু’টি ফল নয়, কয়েক হাজার ফল লাভের সুযোগ করে দেয়া একমাত্র ইসলামেরই এক অতুলনীয় কীর্তি। নামায আলাদাভাবে পড়ারও ফায়দা কম নয়। কিন্তু তার সাথে জামায়াতে শামিল হয়ে ইমামের পিছনে নামায পড়ার শর্ত করে দিয়ে এবং জুময়া ও দু’ ঈদের নামায জামায়াতের সাথে পড়ার নিয়ম করে তার ফায়দা অসংখ্য গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে রোযা রাখায় রোযাদারদের মন ও চরিত্র গঠন কাজ কম সাধিত হতো না। কিন্তু সকল মুসলমানের জন্য একটি মাসকে রোযার জন্য নির্দিষ্ট করে তার ফায়দা এত পরিমান বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে, যা গুণে শেষ করা যায় না। এক একজন লোকের ব্যক্তিগতভাবে যাকাত আদায় করার উপকারিতাও কম নয়; কিন্তু বায়তুলমালের মারফত যাকাত দেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে তার উপকারিতা এতদূর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে যে, ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম না হওয়া পর্যন্ত সঠিকভাবে এর ধারণাও করা যায় না। কারণ ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনেই সকল মুসলমানের যাকাত ‘বায়তুলমালে’ জমা করা হয় এবং সুসংবদ্ধভাবে প্রাপকের মধ্যে বন্টন করা হয়। ফলে তাতে সমাজের অভাবগ্রস্ত লোকদের অপূর্ব কল্যাণ সাধিত হয়। হজ্জের ব্যাপারেও তাই। একাকী হজ্জ করলেও হাজার হাজার মানুষের জীবনে বিরাট বিপ্লব সুচিত হতে পারে। কিন্তু দুনিয়ার মুসলমানকে একত্রিত হয়ে হজ্জ করার রীতি করে দিয়ে সীমাহীন কল্যাণ লাভের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। <br />
হজ্জের বিশ্ব সম্মেলন <br />
যেসব মুসলমানের ওপর হজ্জ ফরয হয় অর্থাৎ যারা কা’বা শরীফ পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারে এমন লোক দু’ একজন নয়। প্রত্যেক এলাকায় তাদের সংখ্যা নিতান্ত কম হয় না। বলতে গেলে প্রত্যেক শহরে কয়েক হাজার এবং প্রত্যেক দেশে কয়েক লক্ষ পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রত্যেক বছরই এদের অধিকাংশ লোকই হজ্জ করার ইচ্ছা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়। দুনিয়ার যেসব জায়গায় মুসলমান বসবাস করে, তথায় হজ্জের মৌসুম নিকটবর্তী হওয়ার সাথে সাথে ইসলামী যিন্দেগীর এক নতুন চেতনা কিরূপ জেগে ওঠে, তা সত্যই লক্ষ্য করার মত। প্রায় রমযান থেকে শুরু করে যিলকদ মাস পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গা থেকে শত শত লোক হজ্জ যাত্রায় আয়োজন করে রওয়ানা হয়। আর ওদিকে মহররম মাসের শেষ দিক থেকে সফর, রবিউল আউয়াল তথা রবিউস্সানী পর্যন্ত হাজীদের প্রত্যাবর্তনের ধারা চলতে থাকে। এ ছয় মাসকাল পর্যন্ত সকল মুসলিম লোকালয় এক প্রকার ধর্মীয় ভাবধারায় সরগরম হয়ে থাকে। যারা হজ্জে গমন করে আর হজ্জ করে ফিরে আসে, তারা তো ধর্মীয় ভাবধারায় নিমগ্নই হয়ে থাকে ; কিন্তু যারা হজ্জে গমন করে না, হাজীদের রওনা করাতে, এক একটি ষ্টেশন থেকে তাদের চলে যওয়া আবার ফিরে আসার সময় তাদের অভ্যর্থনা করায় এবং তাদের কাছে হজ্জের বিস্তারিত অবস্থা শুনার ব্যপারে তারাও কিছুটা হজ্জে গমনের আনন্দ লাভ করে থাকে। <br />
এক একজন হাজী যখন হজ্জে গমনের নিয়ত করে, সেই সাথে তাদের মধ্যে আল্লাহর ভয় এবং পরহেযগারী, তাওবা -ইসতেগফার এবং উন্নত ও পবিত্র চরিত্রের ভাবধারা জেগে ওঠে। সে তারা প্রিয় আত্মীয় ও বন্ধু বান্ধব, সহকর্মী এবং সংশ্লিষ্ট সকল লোকের কাছে বিদায় চায়। নিজের সব কাজ - কারবারের চুড়ান্ত রূপ দিতে শুরু করে । এতে মনে হয় যে, সে এখন আর আগের মানুষ নয়, আল্লাহর দিকে তার মনের আকর্ষন হাওয়ায় দিল পবিত্র হয়ে গেছে। এভাবে এক একজন হাজীর এ পরিবর্তনে তার চারপাশে লোকদের ওপর কত গভীর প্রভাব পড়ে তা অনুমান করা যায়। এরূপ প্রত্যেক বছরই যদি দুনিয়ার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে গড়ে এক লক্ষ লোকও এই হজ্জ সম্পন্ন করে, তবে তাদের এ গতিবিধি ও কার্যকলাপের প্রভাব আরো কয়েক লক্ষ লোকের চরিত্রের ওপর না পড়ে পারে না। তারপর হাজীদের কাফেলা যে স্থান অতিক্রম করে, তাদেরকে দেখে তাদের সাথে সাক্ষাত করে ‘লাব্বাইকা’ আওয়ায শুনে সেখানকার কত মানুষের দিল অলৌকিক ভাবধারায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। কত মানুষের লক্ষ্য আল্লাহর ঘরের দিকে ফিরে যায়। আর কত লোকের নিদ্রিত আত্মা হজ্জ করার উৎসাহে জেগে ওঠে । এসব লোক যখন আবার নিজ নিজ দেশের দিকে -দুনিয়ার বিভিন্ন দিকে হজ্জের প্রাণস্পর্শী ভাবধারা বিস্তার করে প্রত্যাবর্তন করে এবং দলে দলে মানুষ তাদের সাথে সাক্ষাত করতে আসে, তাদের কাছ থেকে আল্লাহর ঘরের আলোচনা শুনে কত অসংখ্য মানুষের মনে এবং অসংখ্য পরিমন্ডলে ইসলামী ভাবধারা জেগে ওঠে। <br />
এ জন্যই আমি বলতে চাই যে, রযমান মাস যেরূপ বিশ্ব মুসলিমের জন্য তাকওয়া ও পরহেযগারীর মৌসুম তেমনি হজ্জের মাসও বিশ্ব ইসলামী পুনর্জাগরণের মৌসুম। মহান বিজ্ঞ আল্লাহ এ ব্যবস্থা এ জন্য করেছিলেন যেন বিশ্ব ইসলামী আন্দোলন শ্লথ না হয়ে যায়। পবিত্র কা’বাকে বিশ্বের কেন্দ্র ভুমি হিসেবে এমনভাবে স্থাপন করেছেন যেন মানব দেহের মধ্যে হৃদয়ের অবস্থান। দেহে যতই রোগাক্রান্ত হোক না কেন যত দিন হৃদয়ের স্পন্দন থেমে না যায় এবং সমগ্র দেহ রক্ত সঞ্চালনের পদ্ধতি বন্ধ হয়ে না যায় ততদিন যেমন মানুষের মৃত্যু হয় না সেরূপ হজ্জের এ সম্মেলন ব্যবস্থাও যতদিন থাকবে ততদিন ইসলামী আন্দোলনও চলতে থাকবে। <br />
একটু চোখ বন্ধ করে চিন্তা করলেই আপনাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠবে যে, পৃথিবীর দূর দূরান্তের অঞ্চল থেকে আগত অসংখ্য মানুষ যাদের আকার -আকৃতি, দৈহিক রং ও ভাষা, পোশাক -পরিচ্ছদ বিভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও যখনই কেন্দ্রের নিকটবর্তী হয় সবাই নির্দিষ্ট স্থানে এসে নিজ নিজ পোশাক -পরিচ্ছদ খুলে ফেলে এবং সকলে একই ধরনের অনাড়ম্বর ‘ইউনিফরম’ পরিধান করে। এহরামের এ ‘ইউনিফরম’ ধারণ করার পর পরিষ্কার মনে হয় যে, দুনিয়ার হাজার হাজার জাতির মধ্য থেকে এই যে লক্ষ লক্ষ ফোজ আসছে, এরা বিশ্বের বাদশাহ ও যমীন - আসমানের রাজাধিরাজ এক আল্লাহ তাআলারই ফৌজ। এরা দুনিয়ার হাজার হাজার জাতি ও কওম থেকে ভর্তি হয়েছে। এরা সকলে একই বাদশাহর ফৌজ। এদের সকলের ওপর একই সম্রাটের আনুগত্য ও গোলামীর চিহ্ন লেগে আছে, একই বাদশাহর আনুগত্যের সূত্রে এরা সকলেই পরস্পর বিজড়িত রয়েছে এবং একই রাজধানীর দিকে, মহাসম্রাটের সামনে উপস্থিত হবার জন্য ছুটে চলেছে। একই ‘ইউনিফরম’ পরিহিত এ সিপাহী ‘মীকাত’ অতিক্রম করে যখন সামনে অগ্রসর হয়, তখন সকলের কণ্ঠ থেকে এ একই ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়ে আকাশ -বাতাস মুখরিত করে তোলেঃ <br />
উচ্চারণের কন্ঠ বিভিন্ন -কিন্তু সকলের কণ্ঠে একই ধ্বনি। কেন্দ্র যত নিকটবর্তী হয়, ব্যবধান ততই কমে যায়। বিভিন্ন দেশের কাফেলা পরস্পর মিলিত হয় এবং সকলেই একত্রিত হয়ে একই পদ্ধতিতে নামায পড়ে, সকলের পোশাক এক, সকলেরই ইমাম এক, একই গতিবিধিতে ও একই ভাষায় সকলের নামায পড়া, সকলেই এক ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনির ইঙ্গিতে ওঠা-বসা করে, রুকূ-সিজদা করে, সকলে একই আরবী ভাষায় কুরআন পড়ে এবং শুনে। এভাবে সমবেত লক্ষ লক্ষ জনতার ভাষা, জাতি, দেশ, বংশ ও গোত্রের কৃত্রিম বৈষম্য চূর্ণ হয়ে একাকার হয়ে যায়। সমগ্র মানুষের সমন্বয়ে ‘আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী’ একটি বিরাট জামায়াত রচিত হয় । তার পর এ বিরাট আন্তর্জাতিক জামায়াত একই আওয়ায ‘লাব্বাইকা লাব্বাইকা’ ধ্বনি করতে করতে চলতে থাকে। পথের প্রত্যেক চড়াই উৎরাইয়ে যখন এ আওয়ায উত্থিত হয়, যখন নামাযের সময়ে এবং প্রভাতে এ শব্দ অনুরণিত হয়ে ওঠে, যখন কাফেলাসমূহ পরস্পর মিলিত হবার সময় এ শব্দই ধ্বনিত হয়ে ওঠে তখন চারদিকে এক আশ্চর্য রকম পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সে পরিবেশে মানুষ নিজেকে ভুলে যায়, এক অচিন্তনীয় ভাবধারায় সে মত্ত হয়ে পড়ে, ‘লাব্বাইকা’ ধ্বনির আকর্ষণে সে এক ভাবজগতে ছুটে যায়। অতপর কা’বায় পৌছে দুনিয়ার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে সমাগত জনসমুদ্রের একই পোশাকে নির্দিষ্ট কেন্দ্র বিন্দুর চারদিকে প্রদক্ষিণ করা , সকলের একই সাথে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝখানে দৌড়ানো, সকলের মিনায় উপস্থিত হয়ে তাবু জীবনযাপন করা এবং তথায় এক ইমামের কন্ঠে ভাষণ (খোতবা) শ্রবণ করা, তারপর মুযদালিফায় তাবুর নীচে রাত্রি যাপন করা, আবার মিনার দিকে সকলের প্রত্যাবর্তন করা, সকলে মিলে আকাবায় পাথর দ্বারা চাঁদমারী করা, তারপর সকলের কুরবানী করা , সকলের একই কেন্দ্রে একত্রিত হয়ে নামায পড়া --- এসব কাজে যে পবিত্র পরিবেশ ও আধ্যাত্মিক মনোভাবের সৃষ্টি হয়, দুনিয়ার অন্য কোন ধর্মে বা জীবন ব্যবস্থায় তার তুলনা নেই। <br />
তারপর দুনিয়ার বিভিন্ন জাতির মধ্য থেকে আগত অসংখ্য মানুষের একই কেন্দ্রে সম্মিলিত হওয়া এমন নিষ্ঠা, একাগ্রতা এবং ঐক্যভাবের সাথে একত্রিত হওয়া এমন পবিত্র উদ্দেশ্য ও ভাবধারা এবং নির্মল কাজ-কর্ম সহকারে সমস্ত কাজ সম্পন্ন করা প্রকৃতপক্ষে আদম সন্তানের জন্য এটা এক বড় নিয়ামত। এ নিয়ামত ইসলাম ভিন্ন অন্য কোন ধর্মই দিতে পারে নি। দুনিয়ার বিভিন্ন জাতির পরস্পর মিলিত হওয়া কোন নুতন কথা নয় চিরকালই এরূপ হয়েছে। কিন্তু তাদের এ সম্মেলন হয় যুদ্ধের ময়দানে একে অপরের গলা কাটার জন্যে অথবা সন্ধি সম্মেলনে বিজিত দেশগুলোকে নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেবার জন্যে কিংবা বিশ্বজাতি সম্মেলনে এক একটি জাতির বিরুদ্ধে ধোঁকা ও প্রতারণার ষড়যন্ত্র, যুলুম এবং বেঈমানীর জাল ছড়াবার জন্য; অথবা পরের ক্ষতি সাধন করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করার মতলবে। সমগ্র জাতির জনসাধারণের নির্মল মন, সচ্চরিত্রতা ও পবিত্র মনোভাব নিয়ে এবং প্রেম ভালোবাসা, নিষ্ঠা, মানসিক ও আধ্যাত্মিক ঐক্যভাব সহকারে একত্রিত হওয়া। চিন্তা, কর্ম এবং উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণ একাগ্রতার সাথে মিলিত হওয়া--- তাও আবার একবার মিলিত হয়েই ক্ষান্ত না হওয়া বরং চিরকালের জন্য প্রত্যেক বছর একই কেন্দ্রে একত্রিত হওয়া বিশ্বমানবতার প্রতি এতবড় নিয়ামত দুনিয়ায় ইসলাম ভিন্ন অন্য কোন ধর্ম ব্যবস্থাই দিতে পেরেছে কি? বিশ্ব শান্তি স্থাপনে জাতিসমূহের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-কলহ মিটিয়ে দেয়া এবং লড়াই ঝগড়ার পরিবর্তে ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য এর চেয়ে উত্তম ব্যবস্থা আর কেউ পেশ করতে পেরেছে কি? ইসলাম শুধু এতটুকু করেই ক্ষান্ত হয়নি ; সে আরো অনেক কল্যাণকর ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। <br />
বছরের চারটি মাস হজ্জ ও ওমরার কাজ সম্পাদনের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে । ইসলাম কা’বা যাতায়াতের এ চারটি মাস সমস্ত পথেই শান্তি অক্ষুণ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এটা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং শান্তি রক্ষা করার এক স্থায়ী ব্যবস্থা। দুনিয়ার রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ইসলামের হাতে আসলে হজ্জ ও ওমরার কারণে একটি বছরের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ সময় চিরকালের জন্য যুদ্ধ এবং রক্তারক্তির হাত থেকে দুনিয়া রক্ষা পেতে পারে। <br />
ইসলাম দুনিয়ার মানুষকে একটি হেরেম দান করেছে। এ হেরেম কিয়ামত পর্যন্ত শান্তির কেন্দ্রস্থল । এখানে মানুষ মারা তো দূরের কথা, কোনো জন্তুও শিকার করা যেতে পারে না। এমনকি এখানকার ঘাসও কেটে ফেলার অনুমতি নেই। এখানকার কোনো কাঁটাও চূর্ণ করা যায় না, কারো কোন জিনিস এখানে পড়ে থাকলে তা স্পর্শ করাও নিষিদ্ধ। ইসলাম পৃথিবীর বুকে একটি শহর প্রতিষ্ঠিত করেছে। এ শহরে কারো কোন হাতিয়ার নিয়ে প্রবেশ করার অনুমতি নেই। এখানে খাদ্যশস্য বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী সঞ্চয় করে রাখা এবং তার ফলে মূল্য বৃদ্ধির কারণ সৃষ্টি করা পরিষ্কার আল্লাহদ্রোহীতা । এখানে যারা অন্যের ওপর যুলুম করে তাদেরকে অল্লাহ পাক এই বলে সাবধান করে দিয়েছেনঃ "নুযিকহুমিন আযাবুন আলিম" অর্থ --“আমরা তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেব।” <br />
ইসলাম সমগ্র পৃথিবীর একটি কেন্দ্র নির্ধারিত করেছে। এ কেন্দ্রের পরিচয় প্রসংগে বলা হয়েছেঃ “যারা আল্লাহর প্রভুত্ব ও বাদশাহী এবং হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়াত ও নেতৃত্ব স্বীকার করে ইসলামী ভ্রাতৃসংঘে প্রবেশ করবে, ইসলামের এ কেন্দ্রে তাদের সকলেরই সমান অধিকার থাকবে।” আমেরিকার বাসিন্দা হোক কি আফ্রিকার , চীনের বাসিন্দা হোক কি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের , সে যদি মুসলামান হয় তবেই মক্কা শরীফে তার অধিকার মক্কার আসল বাসিন্দাদের অনুরূপ হবে। সমগ্র হারাম শরীফের এলাকা মসজিদের ন্যায়। মসজিদে গিয়ে যে মুসলমান নিজের জন্য কোনো স্থান করে নেয় , সে স্থান তারই হয়ে যায়; কেউ তাকে সেই স্থান থেকে বিতাড়িত করতে পারে না, কেউ তার কাছে ভাড়া চাইতে পারে না। কিন্তু সে যদি সারা জীবনও সেই স্থানে বসে থাকে, তবুও সেই স্থানকে নিজের মালিকানা স্বত্ব বলে দাবী করতে এবং তা বিক্রি করতে পারে না। এর জন্য সে ভাড়াও চাইতে পারে না । এভাবে সেই ব্যক্তি যখন সেই স্থান থেকে চলে যাবে তখন অন্য কেউ এসে এখানে আসন করে নিতে পারে , যেমন পূর্বের লোকটি পেরেছিল। ‘হারাম শারীফের’ অবস্থাও ঠিক এরূপ। <br />
হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ “ মক্কা নগরের যে স্থানে এসে যে ব্যক্তি প্রথমে অবতরণ করবে সেই স্থান তারই হবে।” এখানকার বাড়ী-ঘরের ভাড়া আদায় করা জায়েজ নয়। হযরত উমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু এখানকার লোকদের ঘরের সম্মুখস্ত প্রাঙ্গণের দুয়ার বন্ধ করতে নিষেধ করেছিলেন, যাতে লোকেরা তাদের প্রাঙ্গনে এসে অবস্থান করতে পারে। কোন কোন ফকীহ এতদূরও বলেছেন যে, মক্কা নগরীর বাড়ীঘরের কেউ মালিক নয়, তা উত্তরাধিকার নীতি অনুসারে বন্টনও হতে পারে না। এসব সুযোগ-সুবিধা এবং আযাদীর মূল্যবান নিয়ামত দুনিয়ার মানুষ ইসলাম ভিন্ন অন্য কোথাও পেতে পারে কি? <br />
এহেন হ্জ্জ সম্পর্কেই বলা হয়েছিলঃ তোমরা এটা করে দেখ এতে তোমাদের জন্য কতবড় কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তার সমস্ত কল্যাণকে গুণে গুণে বলার শক্তি আমার নেই । কিন্তু তবুও এই পর্যন্ত তার যে কিঞ্চিত বিবরণ ওপরে পেশ করেছি তা থেকে এ সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণ লাভ করা যাবে। <br />
কিন্তু এসব কথা শুনার পর আমার নিজের মনের দুঃখের কথাও খানিকটা শুনুন। বংশানুক্রমিক মুসলমান হীরক খনি অভ্যন্তরে ভূমিষ্ঠ শিশুর মত। এ শিশু যখন জন্ম মুহূর্ত থেকেই চারদিকে কেবল হীরক দেখতে পায় এবং হীরক খন্ড নিয়ে খেলা করতে থাকে, তখন তার দৃষ্টিতে হীরকের ন্যায় মহামূল্যবান সম্পদও সাধারণ পাথরের মতই মূল্যহীন হয়ে যায়। বংশীয় মুসলমানদের অবস্থাও ঠিক এরূপ। সমগ্র জগত যে নিয়ামত থেকে বঞ্চিত এবং যা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণেই তারা নানা প্রকার দুঃখ-মুসিবতে নিমজ্জিত রয়েছে, আর বিশ্ব মানব যার সন্ধান করতে ব্যাকুল রয়েছে, সেই মূল্যবান নিয়ামতসমূহ বর্তমান মুসলমানরা বিনামূল্যে লাভ করেছে, এজন্য তালাশ-অনুসন্ধান এবং খোঁজাখুজির জন্য একবিন্দু পরিশ্রমও তাদের করতে হয়নি। এসব ছাড়াই তারা এটা পেয়েছে শুধু এ জন্য যে, সৌভাগ্যবশত তারা মুসলিম পরিবারে জন্মলাভ করেছে। যে কালেমায়ে তাওহীদ মানব জীবনের সমগ্র জটিল সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করে দিতে পারে শিশুকাল থেকেই তা তাদের কানে প্রবেশ করেছে, মানুষকে প্রকৃত মানুষ বানাতে এবং লোকদের পরস্পরের ভাই ও দরদী বন্ধুতে পরিণত করার জন্য নামায-রোযা স্পর্শমণি অপেক্ষাও বেশী মূল্যবান। এরা জন্মলাভ করেই বাপ-দাদার উত্তরাধিকার হিসেবে এটা লাভ করেছে। যাকাত ইসলামী সমাজের এক অতুলনীয় ব্যবস্থা, এ দ্বারা শুধু মনের নাপাকীই দূর হয় না, দুনিয়ার অর্থব্যবস্থাও সুষ্ঠুতা লাভ করে---- যা থেকে বঞ্চিত হয়ে দুনিয়ার মানুষ একে অপরের বুকের রক্ত শুষে নিচ্ছে। এটা মুসলমানগণ প্রত্যক্ষ করছে। কিন্তু মুসলমানরা তা বিনা ব্যয়ে এবং বিনা শ্রমে লাভ করেছে। এটা ঠিক তেমনিভাবে, যেমন খবু বড় চিকিৎসকের সন্তান ঘরে বসেই বড় বড় রোগের তালিকা বিনামূল্যে লাভ করে থাকে। অথচ এর জন্য অন্যান্য মানুষ অত্যন্ত ব্যস্ততার সাথে সন্ধান করে বেড়ায়। হজ্জও একটি বিরাট ব্যবস্থা, সমগ্র দুনিয়ায় এর কোনো তুলনা নেই। পৃথিবীর কোণায় কোণায় ইসলামী আন্দোলনের আওয়াজ পৌঁছাবার জন্য এবং আন্দোলনকে চিরকালের তরে জীবিত রাখার জন্য এটা অপেক্ষা শক্তিশালী উপায় আর কিছুই হতে পারে না। বস্তুত দুনিয়ার সমগ্র মানুষকে পৃথিবীর প্রতিটি কোন থেকে এক আল্লাহর নামে টেনে এনে নির্দিষ্ট একটি কেন্দ্রে একত্রিত করে দেয়া এবং অসংখ্য বংশ গোত্র ও জাতিকে এক আল্লায় বিশ্বাসী, সদুদ্দেশ্য সম্পন্ন ও সৌহার্দপূর্ণ ভ্রাতৃসংঘে সম্মিলিত করে দেবার জন্য এটা আপেক্ষা উন্নততর কোনো পন্থা আজ পর্যন্ত আবিষ্কার করা সম্ভব হয় নি। যুগ-যুগান্তর থেকে জীবন্ত ও প্রচলিত এ ব্যবস্থাও মুসলমানগণ নিজেদের সম্পদ হিসেবে লাভ করেছে বিনা চেষ্টায় এবং বিনা শ্রমে। কিন্তু বড়ই দুঃখের কথা এই যে, মুসলমান বিনাশ্রমে প্রাপ্ত এ মূল্যবান সম্পদের কোন কদর বোঝেনি, বরং তারা এটা নিয়ে ঠিক তেমনি ভাবে খেলা করছে, যেমন হীরক খন্ড নিয়ে খেলা করে হীরক খনিতে প্রসূত শিশু সন্তান। আর তাকে সে মনে করে সাধারণ পাথরের ন্যায় মূল্যহীন। মুসলমান নিজেরদের মূর্খতা এবং অজ্ঞতার কারণে এ বিরাট মূল্যবান সম্পদ ও শক্তির উৎস নিয়ে অত্যন্ত হীনভাবে খেলা করছে। এর অপচয় করছে--- এটাকে নষ্ট করছে--- এসব দেখে আমার প্রাণ জ্বলে যায়। পাথর চূর্ণকারীর হাতে মূল্যবান হীরক খন্ড বরবাদ হতে দেখে সহ্য করা বাস্তবিকই কঠিন ব্যাপার। কোনো এক কবি সাত্যিই বলেছিলেনঃ <br />
“যদিও ঈসার গাধা যায় মক্কা ভূমি<br />
সেথাও থাকবে গাধা জেনে রাখ তুমি।” <br />
অর্থাৎ হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ন্যায় মহান পয়গম্বরের গাধা হলেও পবিত্র মক্কার দর্শন দ্বারা তার কোনো উপকার হতে পারে না। সে যদি সেখানে থেকেও যায় তথাপি সে যেমন গাধা তেমন গাধাই থেকে যাবে। <br />
নামায-রোযা হোক, কিংবা হজ্জ হোক, এগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের প্রশিক্ষণ। কিন্তু যারা এগুলোর অর্থ ও উদ্দেশ্য বুঝতে চায় না এর উপকার ও কল্যাণ লাভ করার কথা এতটুকুও ভাবে না; বরং যারা এ ইবাদাত সমূহের যে কোনো মাকছুদ ও উদ্দেশ্য থাকতে পারে তৎসম্পর্কেও বিন্দুমাত্র কোনো ধারণা রাখে না। তারা যদি পূর্ববর্তী লোকদের দেখাদেখি শুধু ওগুলোর নকলই করতে থাকে, তাহলে এটা দ্বারা সেই সুফল আশা করা যেতে পারে না। কিন্তু দুঃখের বিষয় সাধারণত আজকের মুসলমানগণ এভাবেই ঐ ইবাদাত গুলো করে চলেছে। সকল ইবাদাতের বাহ্যিকরূপ তারা ঠিকই বজায় রাখছে ; কিন্তু (লক্ষ ও উদ্দেশ্যের প্রতি দৃষ্টি না থাকার কারণে) এতে কোন প্রাণ শক্তি সৃষ্টি হচ্ছে না। প্রতি বছর হাজার হাজার লোক ইসলামের কেন্দ্রে গমন করে এবং হজ্জের সৌভাগ্য লাভ করে ফিরে আসে ঠিক কিন্তু হারাম শরীফের যাত্রীর স্বভাব-চরিত্রে যে পরিবর্তন কাম্য ছিল, তা যেমন দেখা যায় না তেমনি হজ্জ থেকে ফিরে আসার পরও তার মানসিক ও নৈতিক ক্ষেত্রে কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় না। অনুরূপভাবে যে সকল এলাকা অতিক্রম করে হজ্জে গমন করা হয়, সেখানকার মুসলমান-অমুসলমান অধিবাসীদের ওপরেও তার কোন উত্তম চরিত্রের প্রভাব পতিত হয় না। বরং অনেকের অসৎ স্বভাব, বদমেজাজী, অশালীন ব্যবহার ও চারিত্রিক দুর্বলতা ইসলামের সম্মানকে বিনষ্ট করে দেয়। বস্তুত এসব কারণেই আমাদের অনেক মুসলিম যুবকও প্রশ্ন করেন যে, ‘হজ্জের উপকার আমাদেরকে বুঝিয়ে দিন।’ অথচ হজ্জ তো ছিল এমন এক জিনিস যে তাকে প্রকৃতরূপে সম্পন্ন করা হলে কাফেররাও এর উপকার প্রকাশ্যে দেখে ইসলাম গ্রহণ করতো। যদি কোনো আন্দোলনের লক্ষ লক্ষ সদস্য প্রতি বছর বিশ্বের সকল অঞ্চল থেকে এক স্থানে সমবেত হয় এবং আবার নিজ নিজ দেশে ফিরে যায় বিভিন্ন দেশে ও নগর হয়ে যাওয়ার সময়ে নিজেরদের পবিত্র জীবন, পবিত্র চিন্তাধারা ও পবিত্র নৈতিকতার বহিঃপ্রকাশ করতে করতে অগ্রসর হয়, যেখানে যেখানে অবস্থান করে কিংবা যে যে স্থান অতিক্রম করে সেখানে নিজেদের আন্দোলনের যাবতীয় মৌলিক আলোচনা নীতির শুধু মৌখিক না করে আপন আচরণ ও কর্মতৎপরতায়ও তাকে বাস্তবায়িত করতে থাকে, আর এটা শুধু দশ-বিশ বছরেই নয় বরং বছরের পর বছর ধরে শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরেই চলতে থাকে তাহলে বলুন তো, এটা কোনো নিষ্ক্রিয় জিনিস থেকে হতে পারে কি? প্রকৃতপক্ষে হজ্জ এরূপ হলে তার উপকার সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন করার প্রয়োজনই হতো না। তখন অন্ধ ব্যক্তিও এর উপকার দেখতে পেত। বধির ব্যক্তিও এর কল্যাণ শুনতে পারতো। প্রতি বছরের হজ্জ কোটি কোটি মুসলমানকে নেক বান্দায় পরিণত করতো, হাজার হাজার অমুসলমানকে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য করতো, লক্ষ লক্ষ অমুসলমানের অন্তরে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা বদ্ধমূল করে দিত। কিন্তু আফসোস! আমাদের মূর্খতার কারণে কত বড় মূল্যবান সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। <br />
হজ্জের অন্তর্নিহিত এ বিরাট সার্থকতা ও উপকারিতা পুরোপুরি লাভ করার জন্য ইসলামের কেন্দ্রস্থলে কোনো বিরাট শক্তিসম্পন্ন কর্তৃত্ব বর্তমান থাকা উচিত। যা এ মহান বিশ্ব শক্তিকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম। এখানে এমন একটি হৃৎপিন্ড (দিল) থাকা উচিত ছিল যা প্রত্যেক বছর সমগ্র বিশ্ব দেহে তাজা রক্তের দ্বারা প্রবাহিত করতে সক্ষম। এমন একটি মস্তিষ্ক থাকারও দরকার ছিল যা এ হাজার হাজার আল্লাহর দূতের মারফতে দুনিয়ার কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইসলামের বিপ্লবী পয়গাম পৌঁছাতে চেষ্টা করতো। আর কিছু না হোক, অন্তত এ কেন্দ্র ভূমিতে খালেস ইসলামী জীবন ধারার বাস্তব রূপ যদি বর্তমান থাকতো, তবুও দুনিয়ার মুসলামান প্রত্যেক বছরই সেখান থেকে খালেস ইসলামী জিন্দেগী এবং দ্বীনদারীর শিক্ষা নিয়ে নিজ নিজ ঘরে প্রত্যাবর্তন করতে পারতো। কিন্তু বড়ই দুঃখের বিষয় যে, এখানে তেমন কিছুই নেই। দীর্ঘকাল পর্যন্ত আরব দেশে মূর্খতার অন্ধকার পুঞ্জিভূত হয়ে আছে, আব্বাসীয় যুগ থেকে শুরু করে ওসমানী যুগ পর্যন্ত সকল অক্ষম ও অনুপযুক্ত শাসক ইসলামের কেন্দ্রেস্থলের অধীবাসীগণকে উন্নতি লাভের সুযোগ দেয়ার পরিবর্তে কয়েক শতাব্দীকাল ধরে তাদেরকে কেবল অধঃপতনের দিকেই ঠেলে দিয়েছে। ফলে আরব দেশ জ্ঞান-বিজ্ঞান, নৈতিক চরিত্র, সভ্যতা ও সংস্কৃতি ---- সকল দিক দিয়েই অধঃপতনের চরম সীমায় উপনীত হয়েছে। এ কারণে যে ভুখন্ড থেকে একদা ইসলামের বিশ্বপ্লাবী আলোক ধারা উৎসারিত হয়ে সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল আজ তাই ইসলামের পূর্ববর্তী জাহেলী যুগের ন্যায় অন্ধ কুপে পরিণত হয়েছে। এখন সেখানে ইসলামের জ্ঞান নেই, ইসলামী জীবনধারা নেই। মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে বুকভরা আশা ও ভক্তি নিয়ে প্রত্যেক বছর পাক ‘হারামে’ আগমন করে ; কিন্তু এ এলাকায় পৌছে তার চারদিকে যখন কেবল মূর্খতা, মলিনতা, লোভ-লালসা , নির্লজ্জতা, আত্মপূজা, চরিত্রহীনতা, উচ্ছৃংখলতা এবং জনগণের নির্মম অধঃপতিত অবস্থা দেখতে পায়, তখন তাদের আশা-আকাঙ্খার স্বপ্ন জাল ছিন্ন হয়ে যায়। এখন অনেক লোক হজ্জ করে নিজের ঈমানকে শক্তিশালী করার পরিবর্তে তাকে অধিকতর দুর্বলই করে আসে। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালম ও ইসমাঈল আলাইহিস সালামের পরে জাহিলিয়াতের যুগে আরব দেশে যে পৌরোহিত্যবাদ ও ঠাকুর পূজার প্রভাব বিস্তৃত হয়েছিল এবং যা শেষ নবী হযরত রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্মূল করেছিলেন, আজ তা-ই প্রবলরূপে পুনঃপ্রবর্তিত হয়েছে। ‘হারামে কা’বার’ ব্যবস্থাপক পূর্বের ন্যায় আবার সেবায়েত হয়ে বসেছে। আল্লাহর ঘর তাদের সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। এ ঘরের প্রতি যারা ভক্তি রাখে তারা এদের শিকার বিশেষ । বিভিন্ন দেশে বড় বড় বেতনভুক্ত এজেন্ট নিযুক্ত রয়েছে, তারা ভক্তদেরকে চারদিক থেকে টেনে টেনে নিয়ে আসে। কুরআনের আয়াত আর হাদীসের নির্দেশ পড়ে শুনিয়ে তাদেরেকে হজ্জ যাত্রায় উদ্বুদ্ধ করে এজন্য নয় যে, আল্লাহ তাদের উপর হজ্জ ফরয করেছেন, তা স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে। বরং তাতে তাদের যথেষ্ট আমদানী হবে। এসব দেখে পরিষ্কার মনে হয় যে, আল্লাহ এবং তার রাসূল এ বিরাট ব্যাবস্থা করেছেন শুধু এ পুরোহিত ‘পান্ডা’ এবং দালালদের প্রতিপালনের জন্য। তারপর হজ্জ যাত্রায় বাধ্য হয়ে মানুষ যখন ঘর থেকে বের হয়, তখন সফরের শুরু থেকে হজ্জ করে বাড়ী ফিরে আসা পর্যন্ত প্রত্যেক জায়গায় ধর্মীয় মজুর এবং ধর্ম ব্যবসায়ীরা জোকের ন্যায় তাদের সামনে উপস্থিত হয়। মুয়াল্লেম, তাওয়াফ শিক্ষাদাতা , কা’বা কুঞ্জিকা বাহক এবং স্বয়ং হেজায সরকার--- সকলেই এ ধর্ম ব্যবসায়ে সমানভাবে অংশিদার। হজ্জের সমস্ত অনুষ্ঠানাদিই পয়সা দিয়ে সম্পন্ন করতে হয়। এমন কি পবিত্র কা’বা গৃহের দরজাও পয়সা ব্যতীরেকে কোনো মুসলমানদের জন্য উম্মুক্ত হতে পারে না। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক) । ইসলামের এ তথাকথিত খাদেমগণ এবং কেন্দ্রীয় উপাসনাগারের সেবায়েতগণও শেষ পর্যন্ত বেনারস ও হরিদ্বারের পন্ডিত পুরোহিতদের পেশা অবলম্বন করে নিয়েছে, অথচ এটাই একদা এ পুরোহিতবাদদের মূলোচ্ছেদ করেছিল । যেখনে ইবদাত করানোর কাজ বিশেষ ব্যবসায় এবং ইবাদাতের স্থান উপার্জনের উপায়ে পরিণত হয়েছে, সেখানে আল্লাহর আয়াত কেবল এ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় যে, লোকে তা শুনে হজ্জ করতে বাধ্য হবে এবং এ সুযোগে তার পকেট মেরে টাকা নিয়ে যাব। যেখানে ইবাদতের কাজ সম্পন্ন করার জন্য মূল্য দিতে হয় এবং দ্বীনি কর্তব্য ব্যবসায়ের পন্য হয়---- এমতস্থানের ইবাদতে ইসলামের প্রাণ শক্তি কি করে বেঁচে থাকতে পারে। হাজীগণ যে এ ইবাদাতের প্রকৃত নৈতিক আধ্যাত্মিক উপকারিতা লাভ করতে পারবে --- সমস্ত কাজ যখন একটি কেনা-বেচার মাল হয়ে রয়েছে--- তখন এমন আশা কিছুতেই করা যায় না। <br />
এ আলোচনা দ্বারা কারো ওপর দোষারোপ করা আমার উদ্দেশ্য নয়, আমি শুধু বলতে চাই হজ্জের ন্যায় একটি বিরাট শক্তিকে কোন্ কোন্ জিনিস প্রায় নিষ্ক্রিয় ও অর্থহীন করে দিয়েছে। <br />
ইসলাম এবং ইসলাম প্রবর্তিত নিয়মসমূহে কোনো ত্রুটি রয়েছে, এরূপ ধারণা কারোই মনে যেন না জাগে। কারণ তাতে আসলে কোনোই ত্রুটি নেই ---ত্রুটি রয়েছে তাদের মধ্যে যারা সঠিকভাবে পূর্ণ ইসলামের অনুসরণ করে চলে না। অতএব, এ অবস্থার জন্য দায়ী বর্তমান মুসলমানরাই। তাই যে ব্যবস্থা তাদেরকে মানবতার পরিপূর্ণ আদর্শে পরিচালিত করতে পারতো এবং যা অনুসরণ করে তারা নেতা হতে পারতো, তা থেকে আজ কোনো ভাল ফল লাভ করা যাচ্ছে না। এমনকি অবস্থা এতদূর খারাপ হয়ে গেছে যে, এ ব্যবস্থাই মানবতার পক্ষে সত্যই কল্যাণকর কিনা আজ সে সম্পর্কেও মানুষের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হতে শুরু করেছে ।একজন সুদক্ষ চিকিৎসক যদি কয়েকটি অব্যর্থ ওষুধের তালিকা রেখে ইহলোক ত্যাগ করেন, তখন তার অকর্মণ্য ও নির্বোধ উত্তরাধিকারীগণের হাতে তা একেবারেই ‘অকেজো’ হয়ে যায়। ফলে সেই তালিকারও যেমন কোনো মূল্য হয় না, অনুরূপভাবে স্বয়ং চিকিৎসকের দুর্নাম হয় --- আসল তালিকা যতই ভাল , সঠিক এবং অব্যর্থ হোক না কেন। এতএব এ নির্ভূল তালিকাকে কার্যকর করে তুলতে হলে চিকিৎসা বিদ্যায় পারদর্শিতা অপরিহার্য। অপটু ও অজ্ঞ লোকরা সেই তালিকা অনুযায়ী ওষুধ তৈরী করলে তা দ্বারা যেমন কোনো উপকার পাওয়া যাবে না শুধু তাই নয়, বরং তাতে ক্ষতি হওয়ার যথেষ্ট আশংকা রয়েছে। ফলে জাহেল লোকেরা যারা তালিকার যথার্থতা যাচাই করতে নিজেরা অক্ষম--- তারাই শেষ পর্যন্ত মনে করতে শুরু করবে যে, মূলত তালিকাটাই ভুল। বর্তমান মুসলমানদের সর্বাত্মক অধঃপতনের ব্যাপারে ইসলামেরও ঠিক এ অবস্থা হয়েছে। <br />
<br /></div>
Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-20954790292912450332020-03-18T21:15:00.000+06:002020-03-18T21:15:06.602+06:00<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<br />
<br />
<br />
<br />
<br />
হজ্জের গোড়ার কথা <br />
আরবী ভাষায় ‘হজ্জ’ অর্থ যিয়ারতের সংকল্প করা। যেহেতু খানায়ে কা’বা যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে মুসলমানরা পৃথিবীর চারদিক থেকে নির্দিষ্ট কেন্দ্রের দিকে চলে আসে, তাই এর নাম রাখা হয়েছে ‘হজ্জ’। কখন কিভাবে হজ্জের সূচনা হয়েছিল, সেই ইতিহাস অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক এবং শিক্ষাপ্রদ। গভীর মনোযোগের সাথে সেই ইতিহাস অধ্যয়ন করলে হজ্জের কল্যাণকারিতা হৃদয়ঙ্গম করা পাঠকের জন্য সহজ হবে। <br />
কি মুসলমান, কি খৃস্টান- হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের নাম কারো অজানা নয়। দুনিয়ার তিন ভাগের দু’ভাগেরও বেশী লোক তাঁকে ‘নেতা’ বলে স্বীকার করে । হয়রত মূসা আলাইহিস সালাম, হয়রত ঈসা আলাইহিস সালাম এবং হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এ তিনজন শ্রেষ্ঠ নবীই তাঁর বংশজাত, তাঁর প্রজ্জলিত আলোকবর্তিকা থেকে সমগ্র দুনিয়ার সত্যের জ্যোতি বিস্তার করেছে । চার হাজার বছরেরও বেশীকাল পূর্বে তিনি ইরাকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তখন সমগ্র দুনিয়ার মানুষ আল্লাহকে ভুলে বসেছিল । পৃথিবীর একজন মানুষও তার প্রকৃত মালিক ও প্রভুকে জানতো না এবং তাঁর সামনে বন্দেগী ও আনুগত্যের ভাবধারায় মস্তক অবনত করতো না। যে জাতির মধ্যে তাঁর জন্ম হয়েছিল সে জাতির লোকেরা যদিও তদানীন্তন পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা উন্নত জাতি ছিল; কিন্তু পথভ্রষ্ট হওয়ার দিক দিয়েও তারাই ছিল অগ্রনেতা ।সৃষ্ট জীব কখনও মা'বুদ বা উপাস্য হতে পারে না। জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং শিল্প-ভাস্কর্যে চরম উন্নতি লাভ করা সত্ত্বেও এ সহজ কথাটি তারা বুঝতে পারতো না । তাই তারা আকাশের তারকা এবং (মাটি বা পাথর নির্মিত) মূর্তি পূজা করতো । জ্যোতিষ শাস্ত্র, ভালো-মন্দ জানার জন্য 'ফাল' গ্রহণ, অজ্ঞাত কথা বলা, যাদু বিদ্যা প্রয়োগ এবং দোয়া তাবীয ও ঝাড়-ফুঁকের খুবই প্রচলন ছিল। বর্তমানকালের হিন্দু পন্ডিত ও ব্রাহ্মণগণের মতো তখনকার সমাজে ঠাকুর-পুরোহিতেরও একটি শ্রেনী ছিল। তারা মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ করতো, অপর লোকের পক্ষ থেকে পূজা করে দিত, বিপদে- আপদে বা আনন্দে- খুশিতে তারা বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান পালন করতো এবং অজ্ঞাত কথা বলে লোকদেরকে প্রতারিত করতো। সাধারণ লোকেরা এদেরকেই ভাগ্য নির্ধারক বলে মনে করতো। তারা এদেরই অংগুলি নির্দেশে ওঠা-বসা করতো এবং চুপচাপ থেকে নিতান্ত অন্ধের ন্যায় তাদের মনের লালসা পূর্ণ করে যেতো। কারণ তারা মনে করতো যে, দেবতাদের ওপরে এসব পূজারীর কর্তৃত্ব রয়েছে। এরা খুশি হলে আমাদের প্রতি দেবতাদের অনুগ্রহ বর্ষিত হবে। অন্যথায় আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। এ পূজারী দলের সাথে তৎকালীন রাজা-বাদশাহদের গোপন যোগাযোগ ছিল। জনসাধারণকে দাসানুদাস বানিয়ে রাখার ব্যাপারে রাজা-বাদশা ও পূজারীগণ পরস্পর সাহায্য করতো । একদিকে সরকার পূজারীদের পৃষ্ঠপোকতা করতো এবং অন্যদিকে পূজারীগণ জনগণের মনে এ ধারণা বদ্ধমূল করে দিত যে, রাজা-বাদশাহরাও ‘আল্লাহর’ মধ্যে গণ্য; তারা দেশ ও প্রজাদের একচ্ছত্র মালিক, তাদের মুখের কথাই আইন এবং প্রজাদের জান-মালের ওপর তাদের যা ইচ্ছা করার অধিকার আছে। শুধু এতটুকুই নয়, রাজা -বাদশাহের সামনে (সিজদায় মাথা নত করা সহ) তাদের বন্দেগীর যাবতীয় অনুষ্ঠানই পালন করা হতো -যেন প্রজাদের মন-মগযের ওপর তাদের প্রভুত্বের ছাপ স্থায়ীভাবে অংকিত হয়ে যায়। <br />
এহেন পরিবেশের মধ্যে এবং এ জাতির কোনো এক বংশে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের জন্ম। আরও মজার ব্যাপার এই যে, যে বংশে তাঁর জন্ম হয়েছিল, সেই বংশটাই ছিল পেশাদার ও বংশানুক্রমিক পূজারী। তাঁর বাপ-দাদা ছিলেন আপন বংশের পন্ডিত-পুরোহিত ব্রাহ্মণ।কাজেই একজন ব্রাক্ষণ সন্তানের পক্ষে যেরূপ শিক্ষা -দীক্ষা লাভ করা সম্ভব, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামও ঠিক তাই লাভ করলেন। সেই ধরনের কথা-বার্তা শৈশবকাল হতেই তাঁর কানে প্রবেশ করতো। তিনি তার ভাই -ভগ্নীদের মধ্যে পীর ও পীরজাদাদের মতো আড়ম্বর এবং বড়লোকী চাল-চলন দেখতে পেতেন। স্থানীয় মন্দিরের পৌরহিত্যের মহাসম্মানিত গদি তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল। সেই গদিতে বসলে তিনি অনায়াসেই ‘জাতির নেতা’ হয়ে বসতে পারতেন। তাঁর গোটা পরিবারের জন্য চারদিকে থেকে যেসব ভেট-বেগাড় আর নযর -নিয়াজ জড়ো হতো, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের জন্যও তা বর্তমান ছিল। দেশের লোক নিজেদের চিরকালীন অভ্যাস অনুসারে তাঁর সামনে এসে হাত জোড় করে বসার এবং ভক্তি -শ্রদ্ধা ভরে মাথানত করার জন্য প্রস্তুত ছিল। দেবতার সাথে সম্পর্ক পেতে অজ্ঞাত কথা বলার ভান করে তিনি সাধারণ কৃষক থেকে তদানীন্তন বাদশাহ পর্যন্ত সকলকে আজ্ঞানুবর্তী গোলাম বানিয়ে নিতে পারতেন। এ অন্ধকারে যেখানে সত্য জ্ঞানসম্পন্ন সত্যের অনুসারী একজন মানুষ কোথাও ছিল না সেখানে একদিকে তাঁর পক্ষে সত্যের আলো লাভ করা যেমন সম্ভবপর ছিল না তেমনি ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক উভয় দিক দিয়েই এ বিরাট স্বার্থের ওপর পদাঘাত করে নিছক সত্যের জন্য দুনিয়া জোড়া বিপদের গর্ভে ঝাপিয়ে পড়তে প্রস্তুত হওয়াও কোনো সাধারণ লোকের পক্ষে সম্ভব ছিল না। <br />
কিন্তু হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কোনো সাধারণ মানুষ ছিলেন না।তাঁকে ‘স্বতন্ত্র মাটি’ দ্বারাই সৃষ্টি করা হয়েছিল। জ্ঞান হওয়ার সাথে সাথেই তিনি ভাবতে শুরু করলেন চন্দ্র, সূর্য, তারকা নিতান্ত গোলামের মতই উদয়-অস্তের নিয়ম অনুসরণ করছে, মূর্তি তো মানুষের নিজের হাতে পাথর দিয়ে গড়া, দেশের বাদশাহ আমাদের ন্যায় একজন সাধারণ মানুষ, এরা রব হতে পারে কেমন করে ? যেসব জিনিস নিজের ইচ্ছায় এতটুও নড়তে পারে না, নিজের সাহায্য করার ক্ষমতাও যেসবের মধ্যে নেই, জীবন ও মৃত্যুর ওপর যাদের বিন্দুমাত্র হাত নেই, তাদের সমনে মানুষ কেন মাথা নত করবে ? মানুষ কেন তাদের দাসত্ব ও পুজা -উপাসনা করবে ? প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির জন্য তাদের গোলামীই বা কেন করবে ? আকাশ ও পৃথিবীতে যত কিছুই আমরা দেখতে পাই, যেসব জিনিস সম্পর্কে কোন না কোন ভাবে আমরা ওয়াকিফহাল, তার মধ্যে একটি জিনিসও স্বাধীন নয়, নিরপেক্ষ নয়, অক্ষয়- চিরস্থায়ীও নয়। এদের প্রত্যেকটিরই অবস্থা যখন এরুপ তখন এরা মানুষের 'রব বা প্রভু' কিরুপে হতে পারে ?এদের কেউই যখন আমাকে সৃষ্টি করেনি, আমার জীবন-মৃত্যু ও লাভ-ক্ষতির এখতিয়ার যখন এদের কারো হাতে নেই,আমার রিযিক ও জীবিকার চাবিকাঠি যখন এদের কারো হাতে নয়, তখন এদের কাউকেও আমি ‘রব’ বলে স্বীকার করবো কেন ? এবং তার সামনে মাথা নত করে দাসত্ব ও উপসনাই বা কেন করবো ? বস্তুত আমার ‘রব’ কেবল তিনিই হতে পারেন যিনি সবকিছুই সৃষ্টি করেছেন, সকলেই যার মুখাপেক্ষী এবং যার হাতে সকলেরই জীবন -মৃত্যু ও লাভ -ক্ষতির উ ৎস নিহিত রয়েছে। এসব কথা ভেবে হযরত ইরাহীম (আ) জাতির উপাস্য মূর্তিগুলোকে পূজা না করে বরং পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত করলেন এবং এ সিদ্ধান্তে পৌছেই তিনি উদাত্ত কন্ঠে ঘোষণা করলেনঃ <br />
إِنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ <br />
‘‘তোমরা যাদেরকে আল্লাহর শরীক বলে মনে কর তাদের সাথে আমরা কোন সম্পর্ক নেই।” - সূরা আল আন'আমঃ ৭৮ <br />
إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ <br />
‘‘আমি সবদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বিশেষভাবে কেবল সেই মহান সত্ত্বাকেই ইবাদাত - বন্দেগীর জন্য নির্দিষ্ট করলাম যিনি সমস্ত আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই।’’ - সূরা আল আন'আমঃ ৭৯ <br />
এ বিপ্লবাত্মক ঘোষণার পর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ওপর বিপদ - মুসিবতের পাহাড় ভেংগে পড়লো। পিতা বললেন, আমি তোমাকে পরিত্যাগ করবো, বাড়ী হতে তাড়িয়ে দেব। সমগ্র জাতি বলে ওঠলো আমরা কেউ তোমাকে আশ্রয় দেব না। স্থানীয় সরকার ও তার বিরুদ্ধে লেগে গেল, বাদশাহর সামনে মামলা দায়ের করা হলো, কিন্তু হযরত ইবরাহীম আলাহীস সালাম একাকী এবং নিঃসংগ হয়েও সত্যের জন্য সকলের সামনেই মাথা উঁচু করে দাঁড়ালেন। পিতাকে বিশেষ সম্মানের সাথে বললেন: ‘‘আমি যে জ্ঞান লাভ করেছি। আপনি তা আদৌ জানেন না। কাজেই আমি আপনাদের কথা শুনবো না, তার পরিবর্তে আমার কথা আপনাদের সকলের শোনা উচিত।” <br />
জাতির লোকদের হুমকির উত্তরে নিজ হাতে সবগুলো মূর্তি ভেংগে ফেলে তিনি প্রমাণ করলেন যে, তোমরা যাদের পূজা করো, তাদের কোন ক্ষমতা নেই। বাদশাহর প্রকাশ্য দরবারে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বললেনঃ “তুমি আমার ‘রব’ নও, আমার ‘রব’ তিনিই যাঁর মুষ্ঠিতে তোমার আমার সকলেরই জীবন ও মৃত্যু নিহিত রয়েছে এবং যাঁর নিয়মের কঠিন বাঁধনে চন্দ্র, সূর্য সবই বন্দী হয়ে আছে।” রাজ দরবার থেকে শেষ পর্যন্ত ফয়সালা হলো, ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে জীবন্ত জ্বালিয়ে ভষ্ম করা হবে। কিন্তু ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দিল ছিল পর্বত অপেক্ষা অধিকতর শক্ত - একমাত্র আল্লাহর ওপরেই ছিল তাঁর ভরসা। তাই এ ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করতেও তিনি অকুন্ঠ চিত্তে প্রস্তুত হলেন। অতপর আল্লাহ তাআলা যখন তাঁকে কাফেরদের অগ্নিকুন্ড হতে মুক্তি দিয়েছিলেন তখন তিনি জন্মভুমি , জাতি, আত্মীয়-বান্ধব সবকিছু পরিত্যাগ করে শুধু নিজের স্ত্রী ও ভ্রাতুষ্পুত্রকে সাথে নিয়ে পথে পথে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। যার জন্য ঘরে পৌরোহিত্যের গদি অপেক্ষা করছিলো, সেই গদিতে বসে যিনি গোটা জাতির পীর হয়ে যেতে পারতেন এবং সেই গদিকে যিনি বংশানুক্রমিকভাবে নিজের সম্পত্তি বানিয়ে নিতে পারতেন, তিনি নিজের ও নিজের সন্তান সন্তুতির জন্য নির্বাসন, সহায়-সম্বল হীনতার নিদারুণ দুঃখ- মসিবতকেই শ্রেয় মনে করে গ্রহণ করলেন। কারণ দুনিয়াবাসীকে অসংখ্য ‘মিথ্যা রবের’ দাসত্ব নিগড়ে বন্দী করে সুখের জীবন যাপন করা তিনি মাত্রই বরদাশত করতে পারলেন না। বরং তার পরিবর্তে তিনি একমাত্র প্রকৃত রবের দাসত্ব কবুল করে সমগ্র দুনিয়াকে সেই দিকে আহ্বান জানাতে লাগলেন এবং এ ‘অপরাধে’ (?) তিনি কোথাও একটু শান্তিতে বসবাস করতে পারলেন না। <br />
জন্মভূমি থেকে বের হয়ে হযরত ইবরাহীম (আ) সিরিয়া, ফিলিস্তিন, মিসর এবং আরব দেশসমূহে ঘুরতে -ফিরতে লাগলেন। এই ভ্রমণ ব্যাপদেশ তাঁর ওপর অসংখ্য বিপদ এসেছে, ধন-সম্পদ বা টাকা-পয়সা তার সাথে কিছু ছিল না। বিদেশে গিয়েও তিনি রুযি-রোযগার করার জন্য একটু চিন্তা-ভাবনা করেন নি। রাত দিন তিনি কেবল একটি চিন্তা করতেন , দুনিয়ার মানুষকে অসংখ্য রবের গোলামীর নাগপাশ থেকে মুক্ত করে কিরূপে একমাত্র আল্লাহর বান্দায় পরিণত করা যেতে পারে। এ খেয়াল ও চিন্তা -ভারাক্রান্ত মানুষটিকে যখন তাঁর পিতা এবং নিজ জাতি মোটেই সহ্য করলো না, তখন তাঁকে আর কে বরদাশত করতে পারে? কোন্ দেশের লোক তাঁকে আদর -অভ্যর্থনা জানাবে? সকল স্থানে সেই একই ধরনের মন্দিরের পুরুহিত আর খোদায়ীর দাবীদার রাজা- বাদশাহরাই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল এবং সর্বত্র একই ধরনের অজ্ঞ- মূর্খ জনসাধারণ বাস করতো, যারা এ ‘মিথ্যা খোদাদের’ গোলামীর জালে বন্দী হয়ে ছিল। এদের মধ্যে এমন ব্যক্তি কি করে শান্তিতে দিন কাটাতে পারে, যিনি নিজের রব ছাড়া অন্য কারো গোলামী করতে প্রস্তুত ছিলেন না। যিনি অন্য লোকদেরও বলে বেড়াতেন যে, আল্লাহ ছাড়া তোমাদের আর কেউ মালিক, মনিব ও প্রভু নেই, সকলের প্রভুত্ব ও খোদায়ীর আসন চূর্ণ করে কেবলমাত্র আল্লাহর বান্দারূপে জীবনযাপন কর। ঠিক এ কারণেই হযরত ইবরহীম আলাইহিস সালাম কোথাও শান্তিতে বসবাস করতে পারেননি। বছরের পর বছর ধরে তিনি উদভ্রান্ত পথিকের ন্যায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। কখনও কেনানের জনপদে, কখনও মিসরে এবং কখনও আরবের মরুভুমিতে গিয়ে পৌঁছেছেন। এভাবেই তাঁর গোটা যৌবনকাল অতিবাহিত হয়ে গেল, কালো চুল সাদা হয়ে গেল। <br />
জীবনের শেষ ভাগে নব্বই বছর পূর্ণ হতে যখন মাত্র চারটি বছর বাকী ছিল এবং সন্তান লাভের কোনো আশাই যখন ছিল না তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সন্তান দান করলেন। কিন্তু তখনও এ আল্লাহর বান্দা এতটুকু চিন্তিত হয়ে পাড়েননি যে, নিজের জীবনটা তো আশ্রয়হীনভাবে কেটে গেছে, এখন অন্তত ছেলে পেলেদেরকে একটু রুজী- রোযগারের যোগ্য করে তুলি। না, এসব চিন্তা তাঁর মনে উদয় হয়নি। বরং এ বৃদ্ধ পিতার মনে একটি মাত্র চিন্তাই জেগেছিল , তা এই যে, যে কর্তব্য সাধনে তিনি নিজের জীবন অতিবিহিত করেছেন, তাঁর মৃত্যুর পর সেই কর্তব্য পালন করার এবং তাঁর দাওয়াত চারদিকে প্রচার করার মতো লোকের বিশেষ অভাব রয়েছে। ঠিক এ জন্য তিনি আল্লাহর কাছে সন্তান কামনা করেছিলেন এবং আল্লাহ যখন তাঁকে সন্তান দান করলেন, তখন তিনি তাকে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর কাজ চালিয়ে যাবার উপযোগী করে গড়ে তুলতে চেষ্টা করলেন। এ পূর্ণ মানুষটির জীবন একজন সত্যিকার মুসলমানের আদর্শ জীবন ছিল। যৌবনের সূচনাতেই - বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই যখন তিনি তাঁর রবকে চিনতে পারলেন তখন আল্লাহ তাকে বলেছিলেনঃ أَسْلِمْ - ইসলাম গ্রহণ কর - স্বেচ্ছায় আমার কাছে আত্মসমর্পণ কর, আমার দাসত্ব স্বীকার করো। তিনি তখন উত্তরে পরিষ্কার ভাষায় বলেছিলেনঃ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ - আমি ইসলাম কবুল করলাম। আমি সারাজাহানের প্রভুর উদ্দেশ্যে নিজেকে উৎসর্গ করলাম, নিজেকে তার কাছে সোপর্দ করলাম। সমগ্র জীবন ভরে একথা ও এ ওয়াদাকে এই সাচ্চা মানুষটি সবদিক দিয়ে পূর্ণ করে দেখিয়েছেন। তিনি রাব্বুল আলামিনের জন্য শত শত বছরের পৈত্রিক ধর্ম এবং তার যাবতীয় আচার অনুষ্ঠান ও আকীদা - বিশ্বাস পরিত্যাগ করেছেন। পৌরহিত্যের গদিতে বসলে তিনি যেসব সুযোগ - সুবিধা লাভ করতে পারতেন তা সবই তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। নিজের বংশ - পরিবার, নিজের জাতি ও মাতৃভূমি ত্যাগ করেছেন। নিজের জীবনকে উপেক্ষা করে আগুনের বুকে ঝাঁপ দিয়েছেন। দেশত্যাগ ও নির্বাসনের দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছেন, দেশের পর দেশ পরিভ্রমণ করেছেন, নিজের জীবনের এক একটি মূহুর্তকে রাব্বুল আলামীনের দাসত্ব অনুগত্যের কাজে এবং তাঁর দ্বীন ইসলামের প্রচারে কাটিয়েছেন। বৃদ্ধ বয়সে যখন সন্তান লাভ হলো তখন তাঁর জন্যও এ ধর্ম এবং এ কর্তব্যই নির্ধারিত করলেন। কিন্তু এসব কঠিন পরীক্ষার পর আর একটি শেষ ও কঠিন পরীক্ষা অবশিষ্ট রয়ে গিয়েছিল। যে পরীক্ষায় উত্তির্ণ না হওয়া পর্যন্ত হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সব কিছু অপেক্ষা রাব্বুল আলামীনকেই বেশী ভালবাসেন কিনা, তার ফয়সালা হতে পারতো না। সেই কঠিন এবং কঠোর পরীক্ষার সামনে এসে পড়লো। বৃদ্ধ বয়সে একেবারে নিরাশ হয়ে যাওয়ার পর তাঁর যে সন্তান লাভ হয়ে ছিল, সেই একমাত্র সন্তানকেও আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী করতে পারেন কিনা, তারই পরীক্ষা নেয়া হলো। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এ পরীক্ষায়ও উত্তীর্ন হলেন এবং আল্লাহর নির্দেশ লাভ করার সাথে সাথে যখন তিনি নিজের পুত্রকে নিজের হাতে যবেহ করতে প্রস্তুত হলেন, তখন চূড়ান্তরূপে ঘোষণা করা হলো যে, এখন তুমি প্রকৃত মুসলিম হওয়ার দাবীকে সত্য বলে প্রমাণ করেছো। আল্লাহর কাছেও তাঁর এ কুরবানী কবুল হলো এবং তাকে বলে দেয়া হলো যে, এখন তোমাকে সারা দুনিয়ার ইমাম বা নেতা বানিয়ে দেয়া যেতে পারে - এখন তুমি সেই জন্য সম্পূর্ণরূপে যোগ্য হয়েছো। কুরআন শরীফের নিম্নলিখিত আয়াতে একথাই বলা হয়েছেঃ <br />
وَإِذِ ابْتَلَى إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا قَالَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ <br />
“এবং যখন ইবরাহীমকে তার ‘রব’ কয়েকটি ব্যাপারে পরীক্ষা করলেন এবং সে সেই পরীক্ষায় ঠিকভাবে উত্তীর্ণ হলো তখন তাকে জানিয়ে দেয়া হলো যে, আমি তোমাকে সমগ্র মানুষের ইমাম (অগ্রবর্তী নেতা) নিযুক্ত করেছি। তিনি বললেন, আমার বংশধরদের প্রতিও কি এ হুকুম ? আল্লাহ তায়ালা বললেনঃ যালেমদের জন্য আমার ওয়াদা প্রযোজ্য নয়।” - সূরা আল বাকারাঃ ১২৪ <br />
এভাবে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে দুনিয়ার নেতৃত্ব দান করা হলো এবং তাঁকে ইসলামের বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের ‘নেতা’ নিযুক্ত করা হলো। এখন এ আন্দোলনকে অধিকতর সম্প্রসারিত করার জন্য এবং বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব গ্রহণ করে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার জন্য তাঁর কয়েকজন সহকর্মী একান্ত আবশ্যক হয়ে পড়লো। এ ব্যাপারে তিন ব্যক্তি হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ‘দক্ষিণ হাত’ স্বরূপ কাজ করেছেন। একজন তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র হযরত লূত আলাইহিস সালাম, দ্বিতীয় তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম যিনি - আল্লাহ তাঁর জীবন চান জানতে পেরে অত্যন্ত খুশী ও আগ্রহের সাথে - যবেহ হবার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন এবং তৃতীয় হচ্ছেন তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র হযরত ইসহাক আলাইহিস সালাম। <br />
ভ্রাতুষ্পুত্রকে তিনি ‘সাদুম’ (ট্রান্স জর্দান) এলাকায় বসালেন। এখানে সেকালের সর্বাপেক্ষা ইতর - লম্পট জাতি বাস করতো। সেখানে একদিকে সেই জাতির নৈতিকতার সংস্কার সাধন এবং সেই সাথে দূরবর্তী এলাকাসমূহেও ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোই ছিল তাঁর কাজ। ইরান, ইরাক এবং মিসরের ব্যবসায়ী দল এ এলাকা দিয়েই যাতায়াত করতো। কাজেই এখানে বসে উভয় দিকেই ইসলাম প্রচারের কাজ সুষ্ঠু রূপে সম্পন্ন করা তাঁর পক্ষে বিশেষ সুবিধাজনক হয়েছিল। <br />
কনিষ্ঠ পুত্র হযরত ইসহাক আলাইহিস সালামকে তিনি কেনান বা ফিলিস্তিন এলাকায় রাখলেন। এটা সিরিয়া ও মিসরের মধ্যবর্তী স্থান, তদুপরি এটা সমূদ্র - উপকূলবর্তী এলাকা বলে এখান থেকেই অন্যান্য দেশ পর্যন্ত ইসলামের আওয়াজ পৌঁছানো সহজ ছিল। এ স্থান থেকেই হযরত ইসহাক আলাইহিস সালামের পুত্র হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম যার নাম ছিল ইসরাঈল এবং পৌত্র হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের মারফতে ইসলামী আন্দোলন মিসর পর্যন্ত পোঁছেছিল। <br />
জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে হিজাযের মক্কা নগরীতে বসালেন এবং দীর্ঘকাল যাবত নিজেই তাঁর সাথে থেকে আরবের কোণে কোণে ইসলামের শিক্ষা বিস্তার করেছিলেন। তারপর এখানেই পিতা-পুত্র দু’জনে মিলে ইসলামী আন্দোলনের বিশ্ববিখ্যাত কেন্দ্র খানায়ে কা’বা প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহ তায়ালা নিজেই এ কেন্দ্র নির্দিষ্ট করেছিলেন, নিজেই এটা গড়ে তোলার স্থান ঠিক করেছিলেন। খানায়ে কা’বা সাধারণ মসজিদের ন্যায় নিছক ইবাদাতের স্থান নয়, প্রথম দিন থেকেই এটা দীন ইসলামের বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের প্রচার কেন্দ্ররূপে নির্ধারিত হয়েছিল। এ কা’বা ঘর নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল এই যে, পৃথিবীর দূরবর্তী অঞ্চলসমূহ থেকে এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী সকল মানুষ এখানে এসে মিলিত হবে এবং সংঘবদ্ধ ভাবে এক আল্লাহর ইবাদাত করবে, আবার এখান থেকেই ইসলামের বিপ্লবী পয়গাম নিয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবে। বিশ্ব মুসলিমের এ সম্মেলনেরই নাম হলো ‘হজ্জ’। এ ইবাদাত কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা কি করে হলো, কোন সব পূত ভাবধারা এবং দোআ প্রার্থনা সহকারে পিতা-পুত্র মিলে এ ইমারত তৈরী করেছিলেন আর ‘হজ্জ’ কিভাবে শুরু হলো তার বিস্তারিত বিবরণ কুরআন শরীফে বর্ণিত হয়েছেঃ <br />
إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِلْعَالَمِينَ - فِيهِ آَيَاتٌ بَيِّنَاتٌ مَقَامُ إِبْرَاهِيمَ وَمَنْ دَخَلَهُ كَانَ آَمِنًا <br />
“মানুষের জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর নির্দিষ্ট করা হয়েছিল তা মক্কার ঘর তাতে সন্দেহ নেই। এটা অত্যন্ত পবিত্র, বরকতপূর্ণ এবং সারা দুনিয়ার জন্য হেদায়াতের কেন্দ্রস্থল। এতে আল্লাহর প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহ বর্তমান রয়েছে, ‘মাকামে ইবরাহীম’ রয়েছে এবং যে-ই এখানে প্রবেশ করবে সেই নিরাপদে থাকবে।” - সূরা আলে ইমরানঃ ৯৬-৯৭ <br />
أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا جَعَلْنَا حَرَمًا آَمِنًا وَيُتَخَطَّفُ النَّاسُ مِنْ حَوْلِهِمْ <br />
“আমরা মানুষের জন্য কিরূপে বিপদশূন্য ও শান্তিপূর্ণ হেরেম তৈরী করেছি তা কি তারা দেখতে পায়নি? অথচ তার চারপাশে লোক লুন্ঠিত ও ছিনতাই হয়ে যেতো।”- সূরা আল আনকাবুতঃ ৬৭ <br />
অর্থাৎ আরবের চারদিকে যখন লুঠ -তরাজ , মার-পিট এবং যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদি অশান্তির সয়লাব বয়ে যেত তখনও এ হেরেমে সর্বদা শান্তি বিরাজ করতো। এমন কি দুর্ধর্ষ মরু বেদুঈন যদি এর সীমার মধ্যে তার পিতৃহন্তাকে দেখতে পেত, তবুও এর মধ্যে বসে তাকে স্পর্শমাত্র করতে সাহস পেত না। <br />
وَإِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِلنَّاسِ وَأَمْنًا وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى وَعَهِدْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ - وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَذَا بَلَدًا آَمِنًا وَارْزُقْ أَهْلَهُ مِنَ الثَّمَرَاتِ مَنْ آَمَنَ مِنْهُمْ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ <br />
“এবং স্মরণ কর, যখন আমরা এ ঘরকে লোকদের কেন্দ্র ও নিরাপদ আশ্রয় স্থল বানিয়েছিলাম এবং ইবরাহীমের ইবাদাতের স্থানকে ‘মুসাল্লা’ (জায়নামায) বানাবার নির্দেশ দিয়েছিলাম আর তাওয়াফকারী , অবস্থানকারী এবং নামাযীদের জন্য আমার ঘরকে পাক ও পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে নির্দেশ দিয়েছিলাম। পরে যখন ইবরাহীম দোয়া করলো, হে পালনকর্তা আপনি এ শহরকে শান্তিপূর্ণ জনপদে পরিণত করুন এবং এখানকার অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী তাদের জন্য ফল-মূল দ্বারা জীবিকার সংস্থান করে দিন।” - সূরা আল বাকারাঃ ১২৫-১২৬ <br />
وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ - رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُسْلِمَةً لَكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَا إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ - رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آَيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ <br />
“এবং স্মরণ কর, ইবরাহীম ও ইসমাঈল যখন এ ঘরের ভিত্তি স্থাপনকালে দোয়া করছিলঃ পরওয়ারদিগার ! আমাদের এ চেষ্টা কুবল কর, তুমি সবকিছু জান ও শুনতে পাও। পরওয়ারদিগার ! তুমি আমাদের দু’জনকেই মুসলিম- অর্থাৎ তোমার অনুগত কর এবং আমাদের বংশাবলী থেকে এমন একটি জাতি তৈরী কর যারা একান্তভাবে, তোমারই অনুগত হবে। আমাদেরকে তোমার ইবাদাত করার পন্থা বলে দাও, আমাদের প্রতি ক্ষমার দৃষ্টি নিক্ষেপ কর, তুমি বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়াময়। পরওয়ারদিগার! তুমি সে জাতির প্রতি তাদের মধ্য থেকে এমন একজন রাসূল পাঠাও যিনি তাদেরকে তোমার বাণী পড়ে শুনাবে, তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞানের শিক্ষা দেবে এবং তাদের চরিত্র সংশোধন করবে। নিশ্চয় তুমি সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন এবং বিজ্ঞ।” - সূরা আল বাকারাঃ ১২৭-১২৯ <br />
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَذَا الْبَلَدَ آَمِنًا وَاجْنُبْنِي وَبَنِيَّ أَنْ نَعْبُدَ الْأَصْنَامَ - رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضْلَلْنَ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ فَمَنْ تَبِعَنِي فَإِنَّهُ مِنِّي وَمَنْ عَصَانِي فَإِنَّكَ غَفُورٌ رَحِيمٌ - رَبَّنَا إِنِّي أَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُمْ مِنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ <br />
“এবং স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম দোয়া করেছিলঃ হে আল্লাহ ! এ শহরকে শান্তিপূর্ণ বানিয়ে দাও, আমাকে এবং আমার সন্তানকে মূর্তিপূজার শির্ক থেকে বাচাও। হে আল্লাহ ! এ মূর্তিগুলো অসংখ্য লোককে গোমরাহ করেছে। অতএব, যে আমার পন্থা অনুসরণ করবে সে আমার, আর যে আমার পন্থার বিপরীত চলবে -তখন তুমি নিশ্চয়ই বড় ক্ষমাশীল ও দয়াময়। পরাওয়ারদিগার ! আমি আমার বংশধরদের একটি অংশ তোমার এ মহান ঘরের নিকট, এ ধূসর মরূভূমিতে এনে পুনর্বাসিত করেছি- এ উদ্দেশ্যে যে, তারা নামাযের ব্যবস্থা কায়েম করবে। অতএব, হে আল্লাহ ! তুমি লোকদের মনে এতদূর উৎসাহ দাও যেন তারা এদের জীবিকার ব্যবস্থা করে। হয়ত এরা তোমার কৃতজ্ঞ বান্দা হবে।”-সূরা ইবরাহীমঃ ৩৫-৩৭ <br />
وَإِذْ بَوَّأْنَا لِإِبْرَاهِيمَ مَكَانَ الْبَيْتِ أَنْ لَا تُشْرِكْ بِي شَيْئًا وَطَهِّرْ بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْقَائِمِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ - وَأَذِّنْ فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ - لِيَشْهَدُوا مَنَافِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَعْلُومَاتٍ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ <br />
“এবং স্মরণ কর, যখন ইবরাহীমের জন্য এ ঘরের স্থান ঠিক করেছিলাম -একথা বলে যে, এখানে কোনো প্রকার শিরক করো না এবং আমার ঘরকে তাওয়াফকারী ও নামাযীদের জন্য পাক-সাফ করে রাখ। আর লোকদেরকে হজ্জ করার জন্য প্রকাশ্যভাবে আহবান জানাও - তারা যেন তোমার কাছে আসে, পায়ে হেঁটে আসুক কিংবা দূরবর্তী স্থান থেকে কৃশ উটের পিঠে চড়ে আসুক। এখানে এসে তারা যেন দেখতে পায় তাদের জন্য দ্বীন -দুনিয়ার কল্যানের কত সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর দেয়া জন্তুগুলোকে আল্লাহর নামে কুরবানী করবে, তা থেকে নিজেরাও খাবে এবং দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত লোকদেরও খেতে দেবে।” - সূরা আল হজ্জঃ ২৬-২৮ <br />
‘হজ্জ’ শুরু হওয়ার এটাই গোড়ার ইতিহাস। এটাকে ইসলামের পঞ্চম রোকন (স্তম্ভ) হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এ থেকে জানা গেলে যে, দুনিয়ায় যে নবী বিশ্বব্যাপী ইসলামী আন্দোলন পরিচালনার জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন, মক্কা-ই ছিল তাঁর প্রধান কার্যালয়।পবিত্র কা’বাই ছিল এর প্রধান কেন্দ্র - যেখানে থেকে ইসলাম দুনিয়ায় দূরবর্তী অঞ্চলে প্রচারিত হতো।আর দুনিয়ায় যারাই এক আল্লাহর বন্দেগী করতে চাবে এবং বাস্তব কর্মজীবনে তার আনুগত্য করে চলবে, তাঁরা যে জাতি আর যে দেশেরই অধিবাসী হোক না কেন, সকলেই একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রে প্রতি বছর এসে সমবেত হবে, এজন্য ‘হজ্জ’ করার পন্থা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এ দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়া যাবে যে, চাকা যেমন নিজ অক্ষের চতুর্দিকে ঘোরে, মুসলমানদের জীবনও তেমনি আপন কেন্দ্রেরই চতুর্দিকে আবর্তিত হয়- এ গূঢ় রহস্যেরই বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে হজ্জ। <br />
হজ্জের ইতিহাস<br />
কিভাবে এবং কোন উদ্দেশ্যে হজ্জ শুরু হয়েছিল সে কথা পূর্বের প্রবন্ধে আলোচনা করেছি। হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম মক্কায় ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন এবং তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে এখানে বসিয়ে ছিলেন, যেন তার পরে তিনি এ আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারেন, একথাও পূর্বের প্রবন্ধে বলা হয়েছে। হযরত ইসমাইল আলাইহীস সালামের পর তার বংশ ধরগণ কতকাল দীন ইসলামের পথে চলেছে তা আল্লাহ তাআলাই অবগত আছেন। কিন্তু পরবর্তী কয়েক শতাদ্বীর মধ্যেই তারা যে পূর্ববর্তী মহাপুরুষদের শিক্ষা ও প্রদর্শিত পথ ভুলে গিয়েছিল এবং অন্যান্য ‘জাহেল’ জাতির ন্যায় সর্বপ্রকার গোমরাহী ও পাপ- প্রথার প্রচলন করেছিল, তাতে সন্দেহ নেই।যে কা’বা ঘরকে কেন্দ্র করে এককালে এক আল্লাহর ইবাদাতের দাওয়াত ও প্রচার শুরু হয়েছিল, সেই কাবা ঘরে শত শত মূর্তি স্থাপন করা হলো। এমনকি, মূর্তি পূজা বন্ধ করার সাধনা ও আন্দোলনে যে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও ইসমাঈল আলাইহিস সালামের সারাটি জীবন অতিবাহিত হয়েছিল তাদের মূর্তি নির্মাণ করেও কাবা ঘরে স্থাপন করা হয়েছিল। চন্দ্র, বুধ, শুক্র, শনি ইত্যাদি গ্রহ - নক্ষত্রের পুজাও করতো। ভুত- প্রেত, ফেরেশতা এবং মৃত পূর্বপুরুষদের ‘আত্মা’র পূজাও করতো। তাদের মূর্খতা এতদূর প্রচন্ড রূপ ধারনা করেছিল যে, ঘর থেকে বের হবার সময় নিজেদের বংশের মূর্তি না পেলে পথ চলার সময় যে কোনো রঙীন পাথর দেখতে পেতো তারা তারই পূজা শুরু করতো। পাথর না পেলে পানি ও মাটির সংমিশ্রণে একটি প্রতিমূর্তি বানিয়ে তার ওপর ছাগ দুগ্ধ ছিটিয়ে দিলেই তাদের মতে সেই নিস্প্রাণ পিন্ডটি খোদা হয়ে যেত এবং এরই পুজা করতো । যে পৌরোহিত্য ও ঠাকুরবাদের বিরুদ্ধে তাদের ‘পিতা’ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সমগ্র ইরাকের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, তা-ই আবার তাদের ঘরে প্রবেশ করেছিল, কা’বাকে তারা মূর্তিপূজার আড্ডাখানা বানিয়ে নিজেরাই সেখানকার পুরোহিত সেজেছিল। হজ্জকে তারা ‘তীর্থযাত্রা’র অনুরূপ বানিয়ে তাওহীদ প্রচারের কেন্দ্রস্থল কা’বা ঘর থেকে মূর্তিপূজার প্রচার শুরূ করেছিল এবং পূজারীদের সর্বপ্রকার কলা -কৌশল অবলম্বন করে আরবের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকদের কাছ থেকে ‘নযর- নিয়ায ও ভেট - বেগাড়’ আদায় করতো এভাবে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম যে মহান কাজ শুরু করেছিলেন, তা সবই বিনষ্ট হয়ে গেল। <br />
এ ঘোর জাহেলী যুগে হজ্জের যে চরম দুর্গতি হয়েছিল একটি ব্যাপার থেকে তা ষ্পষ্টরূপে অনুমান করা যায়। মক্কায় একটি বার্ষিক মেলা বসতো, আরবের বড় বড় বংশ ও গোত্রের কবি কিংবা ‘কথক’ নিজ নিজ গোত্রের খ্যাতি, বীরত্ব, শক্তি, সম্মান ও বদান্যতার প্রশংসায় আকাশ- বাতাস মুখরিত করে তুলতো এবং পারষ্পরিক গৌরব ও অহংকার প্রকাশের ব্যাপারে রীতিমত প্রতিযোগিতা করতো। এমন কি অপরের নিন্দার পর্যায়ও এসে যেত । সৌজন্য ও বদান্যতার ব্যপারেও পাল্লা দেয়া হতো। প্রত্যেক গোত্র -প্রধান নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করার জন্য ডেগ চড়াতো এবং একে অন্যকে হেয় করার উদ্দেশ্যে উটের পর উট যবেহ করতো। এ অপচয় ও অপব্যয়ের মূলে তাদের একটিমাত্র লক্ষ্য ছিল ; তা এই যে, এ সময় কোনো বদান্যতা করলে মেলায় আগত লোকদের মাধ্যমে আরবের সর্বত্র তাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে এবং কোন গোত্রপতি কতটি উট যবেহ করেছিল এবং কত লোককে খাইয়েছিল ঘরে ঘরে তার চর্চা শুরু হবে । এসব সম্মেলনে নাচ -গান, মদ পান, ব্যভিচার এবং সকল প্রকার নির্লজ্জ কাজ - কর্মের অনুষ্ঠান বিশেষ জাক- জমকের সাথে সম্পন্ন হতো। এ উৎসবের সময় এক আল্লাহর দাসত্ব করার কথা কারো মনে জাগ্রত হতো কিনা সন্দেহ। কা’বা ঘরের চতুর্দিকে তাওয়াফ করা হতো। কিন্তু তার পদ্ধতি বিকৃত হয়ে গিয়েছিল । নারী - পুরুষ সকলেই উলংগ হয়ে একত্রে ঘুরতো আর বলতো আমরা আল্লাহর সামনে এমন অবস্থায় যাব, যেমন অবস্থায় আমাদের মা আমাদেরকে প্রসব করেছে। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের প্রতিষ্ঠিত মসজিদে ‘ইবাদাত’ করা হতো একথা ঠিক; কিন্তু কিভাবে ? খুব জোরে হাততালি দেয়া হতো, বাঁশি বাজান হতো, শিংগায় ফুঁ ৎকার দেয়া হতো। আল্লাহর নামও যে সেখানে নেয়া হতো না, এমন নয়। কিন্তু কিরূপে ? তারা বলতো: <br />
لَبَّيْكَ اللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ إِلاَّ شَرِيْكاً هُوَ لَكَ تَمْلِيْكُهُ وَمَا مَلَكَ <br />
“আমি এসেছি হে আমার আল্লাহ ! আমি এসেছি, তোমার কেউ শরীক নেই ; কিন্তু যে তোমর আপন,সে তোমার অংশীদার। তুমি তারও মালিক এবং তার মালিকানারও মালিক।” <br />
আল্লাহর নামে সেখানে কুরবানীও দেয়া হতো। কিন্তু তার পন্থা ছিল কত নিকৃষ্ট ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ। কুরবানীর রক্ত কা’বা ঘরের দেয়ালে লেপে দিত এবং এর গোশত কা’বার দুয়ারে ফেলে রাখতো। কারণ, তাদের ধারণা মতে আল্লাহ এসব রক্ত ও গোশত তাদের কাছ থেকে কবুল করছেন (নাউযুবিল্লাহ)। হযরত ইবরাহীম আলাহিস সালামের সময়ই হজ্জের চার মাসে রক্তপাত হারাম করে দেয়া হয়েছিল এবং এ সময় সকল প্রকার যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পরবর্তী - কালের লোকেরা এ নিষেধ অনেকটা মেনে চলেছে বটে ; কিন্তু যুদ্ধ করতে যখন ইচ্ছা হতো, তখন তারা এক বছরের নিষিদ্ধ মাসগুলোকে ‘হালাল’ গণ্য করতো এবং পরের বছর তারা ‘কাযা’ আদায় করতো। <br />
এছাড়া অন্যান্য যেসব লোক নিজ ধর্মের প্রতি নিষ্ঠাবান ছিল তারাও নিতান্ত মূর্খতার কারণে আশ্চর্য রকমের বহু রীতিনীতির প্রচলন করেছিল। একদল লোক কোনো সম্বল না নিয়ে হজ্জ যাত্রা করতো এবং পথে ভিক্ষা মেগে দিন অতিবাহিত করতো। তাদের মতে এটা খুবই পুণ্যের কাজ ছিল। মুখে তারা বলতো -“আমরা আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করেছি, আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করার জন্য যাচ্ছি- দুনিয়ার সম্বল নেয়ার প্রয়োজন কি ?” হজ্জে গমনকালে ব্যবসা করা কিংবা কামাই - রোযগারের জন্য শ্রম করাকে সাধারণত নাজায়েয বলেই ধারণা করা হতো। অনেক লোক আবার হজ্জের সময় পানাহার পর্যন্ত বন্ধ করে দিত এবং এরূপ করাকেও তারা ইবাদত বলে মনে করতো। কোনো কোনো লোক হজ্জে যাত্রা করলে কথাবার্তা পর্যন্ত বন্ধ করে দিত। এর নাম ছিল ‘হজ্জে মুছমিত’ বা ‘বোবা হজ্জ’। এভাবে আরও যে কত প্রকার ভ্রান্ত ও কুপ্রথার প্রচলন হয়েছিল তার ইয়ত্তা নেই। সেগুলোর বিস্তারিত বিবরণ লিখে সময় নষ্ট করতে চাই না। <br />
এরূপ ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা কম- বেশী দু’ হাজার বছর পর্যন্ত ছিল। এ দীর্ঘ সময়ে আরব দেশে কোন নবীর আবির্ভাব হয়নি, আর কোনো নবীর প্রকৃত শিক্ষাও সেই দেশে পৌছেনি। অবশেষে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দোয়া পুর্ণ হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসলো। তিনি কা’ বা ঘর প্রতিষ্ঠার সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেনঃ “হে আল্লাহ !এ দেশে একজন নবী এ জাতির মধ্য থেকেই প্রেরণ কর, যে এসে তাদেরকে তোমার বাণী শুনাবে ; জ্ঞান ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দেবে এবং তাদের নৈতিক চরিত্র সংশোধন করবে।” এ দোয়া আল্লাহর কাছে মঞ্জুর হয়েছিল, তাই তাঁরই অধস্তন পুরুষে একজন কামেল ইনসান’ আবির্ভুত হলেন, যাঁর পাক নাম মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম ইবনে আবদুল্লাহ। <br />
হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যেরূপ পূজারী ও পুরোহিতের বংশে জন্মলাভ করেছিলেন, এ ‘কামেল ইনসান’ হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও অনুরূপ এমন এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন- শতাব্দীকাল ধরে যারা কা’বা ঘরের পৌরোহিত্য করে আসছিল। একচ্ছত্রভাবে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যেরূপ আপন বংশের পৌরোহিত্যবাদের ওপর আঘাত হেনেছিলেন, শেষ নবী হযরাত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ঠিক তেমনি প্রচন্ড আঘাত হেনেছিলেন নিজ বংশীয় পৌরোহিত্য ও পন্ডিতগিরির ওপর। শুধু তাই নয়, তাঁর আঘাতে তা একেবারে মূলোৎপাটিত হয়েছিল। হযরত ইবারাহীম আলাইহিস সালাম যেমন বাতিল মতবাদ ও সমগ্র মিথ্যা খোদায়ী ধ্বংস করা এবং এক আল্লাহর প্রভুত্ব কায়েম করার উদ্দেশ্যে চেষ্টা করেছিলেন, শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তাই করেছিলেন। তিনি হযরত ইবারাহীম আলাইহিস সালামের প্রচারিত প্রকৃত ও নির্মল দ্বীন ইসলামকে পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। একুশ বছরের চেষ্টায় তার এসব কাজ যখন পূর্ণতা লাভ করে তখন আল্লাহ তায়ালার হুকুমে কা’বা ঘরকেই তিনি সমগ্র দুনিয়ায় এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীদের কেন্দ্ররূপে স্থাপনের কথা ঘোষণা করলেন এবং দুনিয়ার সকল দিক থেকেই হজ্জ করার জন্য কা’বা ঘরে এসে জমায়েত হওয়ার আহবান জানালেনঃ <br />
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ <br />
“মানুষের ওপর আল্লাহর হক এই যে, এ কা’বা ঘর পর্যন্ত আসার সামর্থ যাদের আছে তারা হজ্জ করার জন্য এখানে আসবে। যারা কুফুরী করবে (অর্থাৎ সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ করতে আসবে না), তারা জেনে রাখুক যে, আল্লাহ সৃষ্টিজগতের মুখাপেক্ষী নন।”- সূরা আলে ইমরানঃ ৯৭ <br />
এভাবে নব পর্যায়ে হজ্জ প্রবর্তন করার সাথে সাথে জাহেলী যুগে দু’ হাজার বছর যাবত প্রচলিত যাবতীয় কুসংস্কার একেবারে বন্ধ করা হলো। কা’বা গৃহের মূর্তিগুলো ভেংগে ফেলা হলো। আল্লাহ ছাড়া মূর্তির যে পূজা সেখানে হতো তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া হলো। মেলা এবং সকল প্রকার তামাশা ও উৎসব নিষিদ্ধ করে দেয়া হলো। আল্লাহর ইবাদাত করার সঠিক এবং স্বাভাবিক পদ্ধতি প্রচলন করা হলো, আল্লাহর আদেশ হলোঃ <br />
وَاذْكُرُوهُ كَمَا هَدَاكُمْ وَإِنْ كُنْتُمْ مِنْ قَبْلِهِ لَمِنَ الضَّالِّينَ <br />
“(আল্লাহর স্মরণ এবং ইবাদাত করার,) যে পন্থা আল্লাহ তোমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, ঠিক তদনুযায়ী আল্লাহর স্মরণ (ও ইবাদাত) কর যদিও এর পূর্বে তোমরা পথভ্রষ্ট ছিলে (অর্থাৎ স্মরণ ও ইবাদাত করার সঠিক পন্থা জানতে না) ” - সূরা আল বাকারাঃ ১৯৮ <br />
সকল অন্যায় ও বাজে কর্মতৎপরতা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হলোঃ <br />
فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ <br />
“হজ্জ উপলক্ষে কোনরূপ ব্যাভিচার, অশ্লীলতা, আল্লাহদ্রোহিতা, ফাসেকী কাজ এবং ঝগড়া -বিবাদ বা যুদ্ধ - বিগ্রহ করা যাবে না।” <br />
কাব্য আর কবিত্বের প্রতিযোগিতা, পূর্বপুরুষদের কাজ -কর্মের কথা নিয়ে গৌরব -অহংকার এবং পরের দোষ -ক্রটি প্রচার করা বা গালাগাল দেয়া বন্ধ করা হলোঃ <br />
فَإِذَا قَضَيْتُمْ مَنَاسِكَكُمْ فَاذْكُرُوا اللَّهَ كَذِكْرِكُمْ آَبَاءَكُمْ أَوْ أَشَدَّ ذِكْرًا <br />
“হজ্জের অনুষ্ঠানগুলো যখন সম্পন্ন হয়ে যাবে তখন তোমাদের পূর্ব-পুরুষগণ যেভাবে বাপ -দাদার স্মরণ করতো ঠিক অনুরূপ কিংবা তদপেক্ষা বেশী করে তোমরা আল্লাহর স্মরণ কর।” সূরা আল বাকারাঃ২০০ <br />
শুধু লোকদের দেখাবার জন্য বা খ্যাতি অর্জন করার যেসব বদান্যতা ও দানশীলতার গৌরব করা হতো তা সবই বন্ধ হলো এবং তদস্থলে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের আমলের পশু যবেহ করার রীতি প্রচলিত হলো। কারণ এর ফলে গরীব হাজীদেরও কুরবানীর গোশত খাওয়ার সুযোগ মিলত। <br />
“খাও, পান কর, কিন্তু অপচয় করো না ; কারণ আল্লাহ তাআলা অপচয়কারীদেরকে ভালবাসেন না।”-সুরা আল আরাফঃ ৩১ <br />
“খালেছ আল্লাহর উদ্দেশ্যেই এবং তারই নামে এ জন্তুগুলোকে যবেহ কর। যবেহ করার পর যখন প্রাণ একেবারে বের হয়ে যাবে, তখন নিজেরাও তা খাও এবং ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্ত প্রার্থীকেও খেতে দাও।”- সুরা আল হাজ্জঃ ৩৬ <br />
কুরবানীর পশুর রক্ত খানায়ে কা’বার দেয়ালে মর্দন করা এবং গোশত নিক্ষেপ করার কুপ্রথা বন্ধ হলো। পরিস্কার বলে দেয়া হলোঃ <br />
“এসব পশুর রক্ত বা গোশত আল্লাহর কাছে পৌছায় না, তোমাদের তাকওয়া এবং পরহেযগারীই আল্লাহর কাছে পৌঁছতে পারে।” সুরা আল হাজ্জঃ৩৭ <br />
উলংগ হয়ে তাওয়াফ করা একেবারে নিষিদ্ধ হয়ে গেল এবং বলা হলোঃ “হে নবী! আপনি তাদেরকে বলে দিন যে, আল্লাহ তার বান্দাহদের জন্য যেসব সৌন্দর্যবর্ধক জিনিস (অর্থ্যাৎ পোশাক পরিচ্ছদ) মনোনীত করেছেন, তা কে হারাম করলো? ”- সূরা আল আরাফঃ ৩২ <br />
“হে নবী ! আপনি বলে দিন যে, আল্লাহ কখনও নির্লজ্জতার হুকুম দেন না।”- সূরা আল আরাফঃ ৬৮ <br />
“হে আদম সন্তান! সকল ইবাদাতের সময় তোমাদের সৌন্দর্য গ্রহণ (পোশাক পরিধান) কর।” সূরা আল আরাফঃ৩১ <br />
হজ্জের নির্দিষ্ট মাসগুলোকে উল্টিয়ে দেয়া এবং নিষিদ্ধ মাসকে যুদ্ধের জন্য ‘হালাল’ মনে করাকে বিশেষ কড়াকড়ির সাথে বন্ধ করা হলোঃ <br />
“নাসী কুফরীকে অধিকতর বাড়িয়ে দেয় (কুফরীর সাথে স্পর্ধাকে যোগ করে)। কাফেরগন এভাবে আরও অধিক গোমরাহীতে নিমজ্জিত হয়। এক বছর এক মাসকে হালাল মনে করে আবার দ্বিতীয় বছর তার বদলে আর একটি মাসকে হারাম বেঁধে নেয় -যেন আল্লাহর নিষিদ্ধ মাসগুলোর সংখ্যা সমান থাকে। কিন্তু এরূপ কাজ করলে আল্লাহর নিষিদ্ধ জিনিসকেই হালাল করা হয়।” সুরা আত তওবাঃ ৩৭ <br />
সম্বল না নিয়ে হজ্জযাত্রা করা নিষিদ্ধ হলো এবং পরিস্কার বলে দেয়া হলোঃ <br />
“হজ্জ গমনকালে সম্বল অবশ্যই নেবে। কারণ, (দুনিয়ার সফরের সম্বল না নেয়া আখেরাতের সম্বল নয়) আখেরাতের উত্তম সম্বল তো হচ্ছে তাকওয়া ।” সুরা আল বাকারাঃ ১৯৭ <br />
হজ্জের সময় ব্যবসা করা বা অন্য কোনো উপায়ে রুজি -রোযগার করা নিতান্ত অপরাধের কাজ, আর এসব না করাকেই বড় পুণ্যের কাজ মনে করা হতো। আল্লাহ তাআলা এ ভুল ধারণার প্রতিবাদ করে নাযিল করলেনঃ <br />
“(হজ্জে গমনকালে) ব্যবসা করে আল্লাহর অনুগ্রহ স্বরূপ কিছু কামাই রোযগার করলে তাতে কোন অপরাধ নেই।” -সুরা আল বাকারা ১৯৮ <br />
'বোবা’ হজ্জ এবং 'ক্ষুধার্ত -পিপাসার্ত’ হজ্জ হতেও মানুষকে বিরত রাখা হলো। শুধু তাই নয়, এছাড়া জাহেলী যুগের আরও অসংখ্য কুসংস্কার নির্মূল করে দিয়ে তাকওয়া, আল্লাহর ভয়, পবিত্রতা এবং অনাড়ম্বরতাকে মানবতার পূর্ণাংগ আদেশ বলে ঘোষনা করা হলো, হজ্জযাত্রীদেরকে নির্দেশ দেয়া হলো যে, তারা যেন ঘর থেকে বের হবার সময় নিজেদেরকে সকল প্রকার পার্থিব সম্পর্ক থেকে মুক্ত করে নেয়, নফসের খাহেশ ও লালসা যেন ত্যাগ করে, হজ্জ গমন পথে স্ত্রী-সহবাসও যেন না করে, গালাগাল, কুৎসা রটানো, অশ্লীল উক্তি প্রভৃতি জঘন্য আচরণ থেকে যেন দূরে সরে থাকে। কা’বায় পৌঁছার যত পথ আছে, প্রত্যেক পথেই একটি স্থান নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। সেই স্থান অতিক্রম করে কা’বার দিকে অগ্রসর হওয়ার পূর্বে এহরাম বেঁধে গরীবানা পোশাক পরিধান করে নেবে। এতে আমীর গরীব সকলেই সমান হবে, পৃথক কওম, গোত্র প্রভৃতির পার্থক্য ঘুচে যাবে এবং সকলেই এক বেশে- নিতান্ত দরিদ্রের বেশে এক আল্লাহর সামনে বিনয় ও নম্রতার সাথে উপস্থিত হবে। এহরাম বাঁধার পর মানুষের রক্তপাত করা তো দুরের কথা, পশু শিকার করাও নিষিদ্ধ। মানুষের মধ্য থেকে যেন কোনো যুদ্ধ -বিগ্রহ না হয়, এজন্য এ চারটি মাসকে ‘হারাম’ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে কা’বা গমনের সমস্ত পথ নিরাপদ হবে ; হজ্জ যাত্রীদের পথে কোনোরূপ বিপদের আশংকা থাকবে না। এরূপ পবিত্র ভাবধারা সহকারে তারা ‘হেরেম শরীফে’ প্রবেশ করবে- কোনো রূপ রং- তামাশা, নাচ - গান এবং মেলা আর খেলা দেখার উদ্দেশ্যে নয়। এখানে প্রতি পদে পদে আল্লাহর স্মরণ - আল্লাহর নামের যিকর, নামায, ইবাদাত ও কুরবানী এবং কাবা ঘর প্রদক্ষিণ (তাওয়াফ) করতে হয়। আর এখানে একটি মাত্র আওয়াযই মুখরিত হয়ে উঠে, ‘হেরেম শরীফের ’ প্রাচীর আর পাহাড়ের চড়াই উৎরাইয়ের প্রতিটি পথে উচ্চারিত হয়ঃ <br />
“তোমার ডাকেই হাজির হয়েছি, হে আল্লাহ !আমি এসেছি, তোমার কোন শরীক নেই, আমি তোমারই কাছে এসেছি। সকল তা’ রীফ প্রশংসা একমাত্র তোমারই জন্য। সব নেয়ামত তোমারই দান, রাজত্ব আর প্রভুত্ব সবই তোমার। তুমি একক- কেউ তোমার শরীক নেই।” <br />
এরূপ পূত -পবিত্র এবং ঐকান্তিক নিষ্ঠাপূর্ণ হজ্জ সম্পর্কে বিশ্বনবী ইরশাদ করেছেনঃ <br />
“যে ব্যক্তি খাঁটিভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করে এবং এ ব্যাপারে সকল প্রকার লালসা এবং ফাসেকী থেকে দূরে থাকে, সে সদ্যজাত শিশুর মতই (নিষ্পাপ হয়ে) ফিরে আসে।” <br />
অতপর হজ্জের কল্যাণ ও কার্যকারিতা বর্ণনা করার পূর্বে হজ্জ কি রকমের ফরয, তা বলা আবশ্যক। আল্লাহ কালামে পাকে বলেনঃ <br />
“আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছার মতো সামর্থ যার আছে, হজ্জ করা তার ওপর আল্লাহর একটি অনিবার্য নির্দিষ্ট ‘হক’। এতদসত্ত্বেও যে তা অমান্য করবে সে কাফের এবং আল্লাহ দুনিয়া জাহানের মুখাপেক্ষী নন।”- সূরা আল ইমরানঃ ৯৭ <br />
এ আয়াতেই হজ্জ করার সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ না করাকে পরিষ্কার কুফরী বলা হয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে যা বলেছেন, তার মধ্যে দু’টি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছেঃ <br />
مَنْ مَلَكَ زَادًا وَرَاحِلَةً تُبَلِّغُهُ إِلَى بَيْتِ اللَّهِ وَلَمْ يَحُجَّ فَلَا عَلَيْهِ أَنْ يَمُوتَ يَهُودِيًّا أَوْ نَصْرَانِيًّا <br />
“আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছার জন্য পথের সম্বল এবং বাহন যার আছে সে যদি হজ্জ না করে, তবে এ অবস্থায় তার মৃত্যু ইহুদী ও নাসারার মৃত্যুর সমান বিবেচিত হবে।” [তিরমিযী] <br />
مَنْ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنَ الْحَجِّ حَاجَةٌ ظَاهِرَةٌ أَوْ سُلْطَانٌ جَائِرٌ أَوْ مَرَضٌ حَابِسٌ فَمَاتَ وَلَمْ يَحُجَّ فَلْيَمُتْ إِنْ شَاءَ يَهُودِيًّا وَإِنْ شَاءَ نَصْرَانِيًّا <br />
“যার কোনো প্রকাশ্য অসুবিধা নেই, কোন যালেম বাদশাও যার পথ রোধ করেনি এবং যাকে কোন রোগ অসমর্থ করে রাখেনি - এতদসত্ত্বেও সে যদি হজ্জ না করেই মরে যায়, তবে সে ইয়াহুদী ব খৃষ্টান হয়ে মরতে পারে।” [দারেমী] <br />
হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বাখ্যা করে বলেছেনঃ <br />
“সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যারা হজ্জ করেনা ,তাদের ওপর জিজিয়া কর আরোপ করতে ইচছা হয়; কারণ তারা মুসলমান নয়,মুসলমান নয়।’’ <br />
আল্লাহ তায়ালার উল্লিখিত ইরশাদ এবং রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তারঁ খলিফার এ ব্যাখ্যা দ্বারা প্রত্যেকেই বুঝতে পারেন যে, হজ্জ করা সামান্য ফরয নয়। তা আদায় করা না করা মুসলমানদের ইচছাধীন করে দেওয়া হয়নি। বস্তুত যে সব মুসলমানদের কা’বা পর্যন্ত যাওয়া আসার আর্থিক সামর্থ আছে ,শারীরিক দিক দিয়েও যারা অক্ষম নয় তাদের পক্ষে জীবনের মধ্যে একবার হজ্জ করা অবশ্য কর্তব্য । তা না করে কিছুতেই মুক্তি নেই । দুনিয়ার যে কোণেই বাস করুক না কেন এবং যার ওপর ছেলে-মেয়ে ও কারবার কিংবা চাকরি-বাকরির যত বড় দায়িত্বই অর্পিত হোকনা কেন, সামর্থ থাকা সত্ত্বেও একজন মুসলমান যদি হজ্জকে এড়াতে চায় এবং অসংখ্য ব্যস্ততার অজুহাতে বছরের পর বছর তাকে ক্রমাগত পিছিয়ে দেয়-সময় থাকতে আদায় না করে ,তবে তার ঈমান আছে কিনা সন্দেহ । আর যাদের সমগ্র জীবনও হজ্জ আদায় করার কর্তব্য পালনের কথা মনে জাগে না , দুনিয়ার দিকে দিকে, দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায়- ইউরোপ-আমেরিকা যাতায়াতকালে হেজাযের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে -কা’বা ঘর যেখান থেকে মাত্র কয়েক ঘন্টার পথ, তবুও হজ্জ আদায় করার খেয়ালও তাদের মনে জাগ্রত হয়না -তারা কিছুতেই মুসলমান নয়; মুসলমান বলে দাবী করার কোনোই অধিকার তাদের নেই, দাবী করলেও সেই দাবী হবে মিথ্যা। আর যারা তাদেরকে মুসলমান মনে করে ,তারা কুরআন শরীফের বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ, জাহেল ।এসব লোকের মনে যদি মুসলিম জাতির জন্যে দরদ থাকে তবে থাকতে পারে ; কিন্তু তার কোনোই সার্থকতা নেই । কারণ তাদের হৃদয়-মনে আল্লাহর আনুগত্য ও তার বিধানের প্রতি ঈমানের কোনো অস্তিত্ব নেই, একথা স্বতঃসিদ্ধ । <br />
হজ্জের বৈশিষ্ট্য<br />
কুরআন শরীফে যেখানে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে হজ্জের জন্যে সাধারণ দাওয়াত দেয়ার হুকুমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে এর প্রথম কারণ হিসেবে বলা হয়েছেঃ <br />
-মানুষ এসে দেখুক যে ,এ হজ্জব্রত উদযাপনে তাদের জন্যে কি কি কল্যাণ নিহিত রয়েছে অর্থাৎ হজ্জের সময় আগমন করে কা’বা শরীফে একত্রিত হয়ে তারা নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করবে যে , তা তাদের জন্যে বস্তুতই কল্যাণ কর । কেননা এতে যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে , তা মানুষ নিজ চোখে দেখেই অনুধাবন করতে পারে।একটি বর্ণনা হতে জানা যায় যে হযরত ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহি হজ্জ করার পূর্ব পর্যন্ত ঠিক বুঝতে পারেননি যে, ইসলামি ইবাদত সমুহের মধ্যে কোনটি সর্বোত্তম; কিন্তু যখনই তিনি হজ্জ করে তার অন্তর নিহিত কল্যাণ প্রত্যক্ষ করলেন, তখন স্পষ্ট কন্ঠে বলে উঠলেন, ‘হজ্জ-ই সর্বোত্তম ইবাদত’। <br />
এখানে হজ্জের বৈশিষ্ট্য ও কল্যাণকারিতা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হচেছ। দুনিয়ার মানুষ সাধারনত দু’প্রকারের ভ্রমণ করে থাকে। এক প্রকারের ভ্রমণ করা হয় রুযি-রোযগারের জন্যে আর এক প্রকারের ভ্রমণ হয় আনন্দ-র্ষ্ফুতি ও অবসর বিনোদনের উদ্দেশ্যে। এ উভয় প্রকারের ভ্রমনেই মানুষের নিজের স্বার্থ ও প্রবৃত্তিই তাকে ভ্রমণে বের হতে উদ্বুদ্ধ করে । নিজের গরজেই ঘর-বাড়ী ত্যাগ করে , নিজের কোনো পার্থিব উদ্দেশ্যেই সন্তান সন্ততি ও আত্মীয় -স্বজন হতে দূরে চলে যায় । আর এ ধরনের সফরে সে টাকা- পয়সা যা কিছুই খরচ করে নিজের উদ্দেশ্য লাভের জন্যেই করে থাকে । কাজেই এসব সফরে মানুষকে আসলে কিছুই কুরবানী বা আত্মত্যাগ করতে হয়নি । কিন্তু হজ্জ উপলক্ষ্যে যে সফর করা হয় তা উল্লেখিত সফর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এটা নিজের কোনো গরযে কিংবা নিজের প্রবৃত্তির লালসা পূরণ করার জন্যে করা হয়না ; বস্তুত এটা করা হয় খালেছভাবে আল্লাহ তায়ালার জন্যে এবং আল্লাহর র্নিদিষ্ট উদ্দেশ্য পূর্ণ করার মানসে । এজন্যেই মানুষের মনে যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর প্রেম ভালোবাসা ও আল্লাহর ভয় জাগ্রত না হবে এবং আল্লাহর নির্ধারিত ফরযকে ফরয বলে মনে না করা হবে , ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ এ সফরে যাওয়ার জন্যে কিছুতেই উদ্যোগী হতে পারে না। কাজেই যে ব্যক্তি একটি দীর্ঘকালের জন্যে নিজের ঘর-বাড়ী, আত্বীয় -স্বজনের সাথে সর্ম্পক ত্যাগ করে এবং নিজের কারবার এর ক্ষতি, অর্থ ব্যয় ও সফরের কষ্ট স্বীকার করে হজ্জের জন্যে বের হবে ,তার এভাবে বের হওয়াই প্রমাণ করে যে তার মনে আল্লাহর ভয় ও ভালবাসা আছে । আল্লাহর ফরযকে সে ফরয বলে মনে করে এবং মানসিকভাবে সে এত দূর প্রস্তুত যে , বাস্তবিকই যদি কখনো আল্লাহর পথে বের হওয়ার প্রয়োজন হয় তখন সে অনায়াসেই গৃহ ত্যাগ করতে পারবে । কষ্ট স্বীকার করতে পারবে , নিজের ধন-সম্পদ এবং আরাম-আয়েশ সবকিছু আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্যে কুরবান করতে পারবে । <br />
এ পবিত্র ইচছা নিয়ে যখন সে হজ্জের সফরে যাবার জন্যে তৈরী হয় তখন স্বভাব -প্রকৃতি সম্পূর্ন আলাদা ধরনের হয়ে যায় । তার অন্তরে বাস্তবিকই আল্লাহর প্রেমের উদ্দিপনা স্বতঃষ্ফূর্ত হয়ে ওঠে। বস্তুত সে সেই দিকের জন্যে পাগল হয়ে ওঠে ,তার মনে তখন নেক ও পবিত্র ভাবধারা ছাড়া অন্য কিছুই জাগ্রত হতে পারেনা । <br />
সে পূর্বকৃত যাবতীয় গুনাহ থেকে তাওবা করে ,সকলের কাছে ভুল -ত্রুটির জন্যে মাপ চায় , পরের হক যা এ যাবত আদায় করেনি তা আদায় করে , কারণ ঋণের বোঝা নিয়ে আল্লাহর সামনে হাজির হওয়া সে মোটেই পছন্দ করেনা । সকল প্রকার পাপ ও অন্যায় চিন্তা থেকে তার মন পবিত্র হয়ে যায় ।স্বভাবতই তার মনের গতি মংগলের দিকেই নিবদ্ধ হয়, সফরে বের হওয়ার পর সে যতই অগ্রসর হতে থাকে ততই তার হৃদয় -মনে পৃণ্য ও পূত ভাবধারার তরংগ খেলে ওঠে । তার কোনো কাজ যেন কারো মনে কোনোরূপ আঘাত না দেয়, আর যারই যতটুকু উপকার করা যায় সেই সমস্ত চিন্তা এবং চেষ্টাই সে করতে থাকে। অশ্লীল ও বাজে কথা-বার্তা, নির্লজ্জতা, প্রতারণা-প্রবঞ্চনা এবং ঝগড়া-ফাসাদ ইত্যাদি কাজ থেকে তার প্রকৃতি স্বভাবতই বিরত থাকে। কারণ সে আল্লাহর ‘হারাম শরীফের’ যাত্রী তাই অন্যায় কাজ করে এ পথে অগ্রসর হতে সে লজ্জিত না হয়ে পারে না । তার সফরটাই যে ইবাদত, এ ইবাদতের কাজে যুলুম, আর পাপ কাজের কি অবকাশ থাকতে পারে? অতএব দেখা যাচ্ছে যে, অন্যান্য সকল প্রকার সফর থেকে এ সফর সম্পূর্ণ আলাদা। মানুষের মনকে এ সফর প্রতিনিয়ত পূত-পবিত্র করতে থাকে । সত্য বলতে গেলে এটা একটি বিরাট সংশোধনকারী কোর্স বিশেষ, প্রত্যেক হজ্জ যাত্রী মুসলমানকেই এ অধ্যায় অতিক্রম করতে হয়। <br />
সফরের একটি অংশ সমাপ্ত করার পর এমন একটি স্থান সামনে আসে যেখানে পৌছে প্রত্যেক মক্কাযাত্রী মুসলমান ‘এহরাম’ বাঁধতে বাধ্য হয় । এটা না করে কেউ সামনে অগ্রসর হতে পারে না। এই ‘এহরাম’ কি ? একটি সিলাই না করা লুংগী, একখানি চাদর এবং সিলাইবিহীন জুতা ছাড়া অন্য কিছুই নয়। এর অর্থ এই যে, এতকাল তুমি যাই থাক না কেন , কিন্তু এখন তোমাকে ফকিরের বেশেই আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে। কেবল বাহ্যিক ফকীরই নয়, প্রকৃতপক্ষে অন্তরেও ফকীর হতে চেষ্টা কর। রঙীন কিংবা জাকজমকপূর্ণ সকল পোশাক খুলে রাখ, সাদাসিধে ও দরবেশ জনোচিত পোশাক পরিধান কর। মোজা পরবে না, পা উন্মুক্ত রাখ, কোনো প্রকার সুগন্ধি ব্যবহার করবে না, চুল কেট না, সকল প্রকার অলংকার ও জাকজমক পরিহার করা। স্বামী -স্ত্রী সংগম হতে দূরে থাক, যৌন উত্তেজক কোন কাজ করো না, শিকার করো না। আর কোনো শিকারীকে শিকারের কাজে সাহায্য করো না। বাহ্যিক জীবনে যখন এরূপ বেশ ধারণ করবে তখন মনের ওপরও তার গভীর ছাপ মুদ্রিত হবে ভিতর হতেও তোমার মন সত্যিকারভাবে ‘ফকির’ হবে। অহংকার ও গৌরব দূরীভুত হবে, গরীবানা ও শান্তি -প্রিয়তার ভাব ফুটে ওঠবে। পার্থিব সুখ- সম্ভোগে লিপ্ত হওয়ার ফলে তোমার আত্মা যতখানি কলংকিত হয়েছিল তা দূর হয়ে যাবে এবং আল্লাহর বন্দেগী করার পবিত্র ভাবধারা তোমরা জীবনের ভিতর ও বাইর উভয় দিককেই মহীয়ান করে তুলবে। <br />
‘এহরাম’ বাঁধার সাথে সাথে হাজীকে একটি বিশেষ দোয়া বার বার পড়তে হয়। প্রত্যেক নামাযের পর, পথের প্রত্যেক চড়াই- উৎরাইয়ের সময়, কাফেলার সাথে মিলিত হবার সময় এবং প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠার সময়। দোআটি এইঃ <br />
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ <br />
বস্তুত হযরত ইবারাহীম আলাইহিস সালাম সাড়ে চার হাজার বছর পূর্বে আল্লাহর আদেশে (হজ্জ করার জন্য) যে সার্বজনীন আহবান জানিয়েছিলেন, তার জবাবেই এ দোয়া পাঠ করার নিয়ম হয়েছে। পঁয়তাল্লিশ শত বছর আগে, আল্লাহর এ আহ্ববানকারী ডেকে বলেছিলেনঃ “আল্লাহর বান্দাগণ! আল্লাহর ঘরের দিকে আস, পৃথিবীর প্রতি কোণ থেকে ছুটে আস। পায়ে হেটে আস, কিংবা যানবাহনে চড়ে আস।” এর জবাব স্বরূপ আজ পর্যন্ত ‘হারাম শরীফের’ প্রতিটি মুসাফির উচ্চৈস্বরে বলে ওঠেছেঃ “আমি এসেছি, হে আল্লাহ, আমি হাজির হয়েছি। কেউ তোমার শরীক নেই, আমি কেবল তোমারই আহবানক্রমে এসেছি, সব তারীফ প্রশংসা তোমারই দান, কোন কিছুতেই তোমার কেউ শরীক নেই।” <br />
এভাবে ‘লাব্বায়েকের’ প্রত্যেকটি ধ্বনির মারফত হযরত ইবারাহীম আলাইহিস সালাম ও ইসমাঈল আলাইহিস সালামের আমল থেকে প্রচলিত ইসলামী আন্দোলনের সাথে ‘হাজী’র নিবিড় সম্পর্ক স্থাপিত হয়। সাড়ে চার হাজার বছরের দূরত্ব মাঝখান হতে সরে গিয়ে একাকার হয়ে যায়। মনে হয় যেন এদিক থেকে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহর তরফ থেকে ডাকছেন, আর ওদিক থেকে প্রত্যেক হাজীই তার জবাব দিচ্ছে- জবাব দিতে দিতে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে । যতই সামনে অগ্রসর হয় ততই তার মনে প্রাণে উৎসাহ উদ্দীপনা এবং আধ্যাত্মিক ভাবের ঝর্ণাধারা অধিকতর বেগে প্রবাহিত হতে থাকে। পথের প্রত্যেক চড়াই - উৎরাইয়ের সময় তার কানে আল্লাহর আহবান ধ্বনিত হয়, আর সে তার জবাব দিতে দিতে অগ্রসর হয়। কাফেলার পর কাফেলা আসে, আর প্রত্যেকেই প্রেমিক পাগলের ন্যায় এই পয়গাম শুনে বলে উঠেঃ “আমি এসেছি, আমি হাজির হয়েছি।” প্রতিটি নূতন প্রভাত তার কাছে বন্ধুর পয়গাম বহন করে আনে,আর উষার ঝলকে চোখ খোলার সাথে সাথেই আমি এসেছি,’হে আল্লাহ! আমি হাজির হয়েছি’, বলে আওয়াজ দিতে থাকে । মোটকথা বারবার দেয়া এ আওয়াজ এহরামের গরীবানা পোশাক, সফরের অবস্থা এবং প্রত্যেকটি মঞ্জিলে কা’বা ঘরের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য নৈকট্যের ভাব উম্মাদনায় এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি হয় যে হাজী আল্লাহর অতল স্পর্শ গভীর প্রেমে আত্মমগ্ন হয়ে যায় এবং সেই এক বন্ধুর স্মরণ ভিন্ন তার জীবনের কোথাও অন্য কিছুর অস্তিত্ব থাকে না। <br />
এ অবস্থার ভিতর দিয়ে হাজী মক্কায় উপনীত হয় এবং সেখানে পৌছেই সোজা আসল লক্ষ্যস্থলের দিকে ছুটে যায়। বন্ধুর আস্তানাকে চুম্বন করে।তারপর নিজের আকীদা-বিশ্বাস, ঈমান, মতবাদ, দ্বীন ও ধর্মের কেন্দ্রস্থলের চারদিকে প্রদক্ষিণ করে ততবারই আস্তানাকে চুম্বন করে।(১)প্রত্যেক বারের তাওয়াফ কা’বা ঘরের কালো পাথর চুমু দিয়ে শুরু ও শেষ করা হয়। এখানে থেকে বের হয়ে ‘সাফা’ পর্বতে আরোহণ এবং এখান থেকে যখন কা’বা ঘরের দিকে তার দৃষ্টি পড়ে, তখন সে উচ্চস্বরে বলে ওঠেঃ <br />
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَلَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ <br />
"আল্লাহ ছাড়া আর কেউ মা’বুদ নেই, আমরা অন্য কারো বন্দেগী করি না ; আমরা কেবল একনিষ্টভাবে আল্লাহরই আনুগত্য স্বীকার করি - কাফেরদের কাছে এটা যতই অসহনীয় হোক না কেন।” <br />
অতপর ‘সাফা’ ও মারাওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যস্থলে দৌঁড়াতে হয়। এর দ্বারা হাজী একথা প্রমান করে যে, সে আল্লাহর নৈকট্য এবং তার সন্তোষ হাসিল করার উদ্দেশ্যে সবসময় এমন করে দৌড়াতে প্রস্তুত থাকবে। এ দৌড়ের সময়ও তার মুখ থেকে উচ্চারিত হতে থাকেঃ <br />
أَللَّهُمَّ اسْتَعْمَلْنِيْ بِسُنَّةِ نَبِيِّكَ وَتَوَفَّنِيْ عَلَى مِلَّتِهِ وَأَعِذْنِيْ مُّضِلاَّتِ الْفِتَنِ <br />
“হে আল্লাহ ! আমাকে তোমার নবীর আদর্শ ও রীতিনীতি অনুসারে কাজ করার তাওফীক দাও। তোমার নবীর পথেই যেন আমার মৃত্যু হয় এবং সত্য পথভ্রষ্টকারী ফেতনা থেকে আমাকে রক্ষা কর।” <br />
কখনো কখনো এই দোয়া পড়া হয়ঃ <br />
اغْفِرْ وَأَرْحَمْ وَتَجَا وَزَعَمَّا تَعْلَمُ إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعَزُّ الْأَكْرَمُ <br />
“হে রব! ক্ষমা কর, দয়া কর, আমার যেসব অপরাধ সম্পর্কে তুমি অবহিত তা মাফ করে দাও। তোমার শক্তি সবচেয়ে বেশী, দয়াও অতুলনীয়।” <br />
এরপর হাজী যেন আল্লাহর সৈনিকে পরিণত হয়। তাই পাচঁ ছয় দিন পর্যন্ত তাকে ক্যাম্পে জীবন কাটাতে হয়। একদিন ‘মিনা’র ছাউনীতে অতিবাহিত করতে হয়, পরের দিন আরাফাতে অবস্থান করতে হয় এবং সেনাপতির ‘খুতবার’ নির্দেশ শুনতে হয়। রাতে মুজাদালিফায় গিয়ে ক্যাম্প স্থাপন করতে হয়। দিন শেষে আবার ‘মিনায়’ ফিরে যেতে হয় এবং এখানে পাথর টুকরা নিক্ষেপ করে ‘চাঁদমারী’ করতে হয়। আবরাহা বাদশার সৈন্য- সামন্ত কা’বা ঘর ধ্বংস করার জন্য এ পর্যন্ত এসে পৌছেছিল । প্রত্যেকটি পাথর নিক্ষেপ করার সাথে সাথে আল্লাহর সিপাহী বলে উঠেঃ <br />
اَللهُ أَكْبَرْ رَغَماً لِلشَّيْطَانِ وَحِزْبِهِ <br />
“আল্লাহ মহান। শয়তান ও তাঁর অনুসারীদের মুখ ধূলায় মলিন হোক।” এবং- أَللَّهُمَّ تَصْدِيْقاً بِكِتَابِكَ وَإِِتِّبَاعاً لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ “হে আল্লাহ ! তোমার গ্রন্থের সত্যতা ঘোষণার ও তোমার নবীর আদেশ অনুসরণের তাওফীক দাও।” <br />
পাথর টুকরা দিয়ে চাঁদমারী করার অর্থ এ কথা প্রকাশ করা যে, হে আল্লাহ ! তোমার দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য কিংবা তোমার আওয়াজকে স্তব্ধ করার জন্য যে -ই চেষ্টা করবে, আমি তোমার বাণীকে উন্নত ও প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তার বিরুদ্ধে এমনি করে লাড়াই করবো। তারপর এ স্থানেই কুরবানী করা হয়। এটা দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জীবন বিসর্জন দেয়ার ইচ্ছা ও বাসনার বাস্তব এবং সক্রিয় প্রমান উপস্থিত করা হয়। এরপর সেখান থেকে কা’বার দিকে যাত্রা করা হয়- যেন ইসলামের মুজাহিদগন কর্তব্য সমাধা করে বিজয়ীর বেশে ‘হেড কোয়ার্টারের’ দিকে ফিরে যাচ্ছে। তাওয়াফ এবং দু’ রাকআত নামায পড়ার পর এহরাম খোলা হয়। এহরাম বাঁধার কারণে যেসব কাজ হারাম হয়েছিল এখন তা হালাল হয়ে যায়, হাজীর জীবন এখন স্বাভাবিক গতিতে চলতে থাকে। এ জীবন শুরু হওয়ার পর আবার তাকে ‘মিনায়’ গিয়ে ক্যাম্প গাড়তে হয় এবং পরের দিন পাথরের সেই তিনটি স্তম্ভের ওপর আবার কংকর দ্বারা চাঁদমারী করতে হয়। এটাকে ইসলামী পরিভাষায় বলা হয় ‘জুমরাত’। এটা আবরাহা বাদশার মক্কা আক্রমণকারী ফৌজের পশ্চাদপসরণ ও তাকে পরাভুত করার প্রতীক মাত্র। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের বছর হজ্জের সময়ই আল্লাহর ঘর ধ্বংস করার উদ্দেশ্য নিয়ে আবরাহা এসেছিল। আল্লাহর তরফ থেকে আসমানী পাখী কংকর নিক্ষেপ করেই তাদেরকে নাস্তানাবুদ করে দেয়। তৃতীয় দিবসে পুনরায় সেই স্তম্ভগুলোর ওপর পাথর নিক্ষেপ করার পর হাজী মক্কা প্রত্যাবর্তন করে এবং সাতবার তার দ্বীনের কেন্দ্র কা’বা ঘরের তাওয়াফ করে। এ তাওয়াফকে বিদায়ী তাওয়াফ বলা হয়। এটা সম্পন্ন হলেই হজ্জের কাজ সমাপ্ত হয়। <br />
হজ্জের নিয়ত এবং সে জন্য প্রস্তুতি ও যোগাড় যন্ত্র থেকে শুরু করে পুনরায় নিজ বাড়িতে ফিরে আসা পর্যন্ত কমবেশী তিন মাস কাল ধরে হাজীর মন- মগযে কত বিরাট ও গভীর খোদায়ী ভাবধারা পুঞ্জীভূত হয়ে থাকে ওপরের এই বিস্তারিত আলোচনা থেকে তা অনুমান করা খুবই সহজ। এ কাজে শুরু থেকেই সময়ের কুরবানী করতে হয়, অর্থের কুরবানী করতে হয, সুখ-শান্তি ত্যাগ করতে হয়, অসংখ্য পার্থিব সম্পর্ক - সম্বন্ধ ছিন্ন করতে হয়। হাজীর নিজের মনের অনেক ইচ্ছা - বাসনা স্বাদ - আস্বাদনকে উৎসর্গ করতে হয়। আর এ সবকিছুই তাকে করতে হয় কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য - নিজস্ব কোনো স্বার্থ তাতে স্থান পেতে পারে না। তারপর এ সফরে তাকওয়া-পরহেযগারীর সাথে সাথে আল্লাহর স্মরণ এবং আল্লাহর দিকে মনের ঔৎসুক্য ও আগ্রহ যত বৃদ্ধি পায়, তাও মানুষের মনের ওপর স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করে, বহুদিন পর্যন্ত সেই প্রভাব স্থায়ী হয়ে থাকে।হারাম শীরফে’ কদম রেখে হাজী প্রত্যেক পদে পদে সেসব মহামানবদের অতীত কর্মধারার স্পষ্ট নিদর্শন দেখতে পায়। যারা আল্লাহর বন্দেগী ও আনুগত্য করে এবং আল্লাহর দীন ইসলামকে কায়েম করতে গিয়ে নিজেদের যথাসর্বস্ব কুরবানী করেছেন, যারা সারা দুনিয়ার বিরুদ্ধে লাড়াই করেছেন, নানা প্রকার দুঃখ - লাঞ্জনা অকাতরে সহ্য করেছেন, নির্বাসন দন্ড ভোগ করেছেন, অসংখ্য যুলম বরদাশত করেছেন, কিন্তু আল্লাহর দীনকে কায়েম না করা পর্যন্ত তারা এতটুকু ক্লান্তিবোধ করেননি। যেসব ‘বাতিল’ শক্তি মানুষকে এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দাসত্ব করতে বাধ্য করছিল, তাঁরা তাদের সকলেরই মস্তক চূর্ণ করে দীন ইসলামের পতাকা উন্নত করে ধরেছেন। <br />
এসব সুস্পষ্ট নিশানা ও বরকত মন্ডিত নিদর্শনসমূহ প্রত্যক্ষ করে একজন আল্লাহ বিশ্বাসী ব্যক্তি প্রবল ইচ্ছা-বাসনা, সাহস ও আল্লাহর পথে জিহাদ করার যে প্রাণস্পর্শী শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে। তা অন্য কোন জিনিস থেকে গ্রহণ করতে পারে না। কা’বা ঘরের তাওয়াফ করায় দ্বীন ইসলামের কেন্দ্র বিন্দুর সাথে হাজীর নিবিড় সম্পর্ক স্থাপিত হয়। হজ্জ সম্পর্কীয় অন্যান্য কার্যাবলী দ্বারা হাজীর জীবনকে সৈনিকের ট্রেনিং দিয়ে গঠন করা হয় । নামাজ, রোজা এবং যাকাতের সাথে এসবকে মিলিয়ে যাচাই করলে পরিস্কার মনে হবে যে, ইসলাম এসব কিছুর সাহায্যে কোন এক বিরাট উদ্দেশ্যে মানুষকে ট্রেনিং দান করে। এর জন্যই মক্কা পর্যন্ত যাতায়াতের সামর্থ্য সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলমানের প্রতি হজ্জ ফরজ করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য এই যে, প্রতি বছরই অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যক মুসলমান ইসলামের এ প্রাণ কেন্দ্রে আসবে এবং ট্রেনিং লাভ করে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রের দিকে ফিরে যাবে। <br />
অতপর আরো একটি দিক লক্ষ্য না করলে হজ্জের কল্যাণ ও স্বার্থকতা পরিপূর্ণরূপে হৃদয়ংগম করা যাবে না। এক একজন মুসলমান কখনো একাকী হজ্জ করে না। দুনিয়ার সমগ্র মুসলমানের জন্যই হজ্জ করার একটি তারিখ নির্দিষ্ট করা হয়েছে। হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মুসলমান একত্রিত হয়ে একই সময়ে হজ্জ করে। ওপরের কথা দ্বারা আপনি শুধু এতটুকু বুঝতে পারেন যে, আলাদাভাবে একজন মুসলমান হজ্জ করলে তার ওপর তার কতখানি প্রভাব পড়া সম্ভব। পরবর্তী প্রবন্ধের মারফতে আপনি বিস্তারিতরূপে জানতে পারেবেন যে, দুনিয়ার মুসলমানদের জন্য হজ্জের একটি সময় নির্দিষ্ট করে দিয়ে হজ্জের কল্যাণ কত লক্ষগুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে একটি কাজে দু’টি ফল নয়, কয়েক হাজার ফল লাভের সুযোগ করে দেয়া একমাত্র ইসলামেরই এক অতুলনীয় কীর্তি। নামায আলাদাভাবে পড়ারও ফায়দা কম নয়। কিন্তু তার সাথে জামায়াতে শামিল হয়ে ইমামের পিছনে নামায পড়ার শর্ত করে দিয়ে এবং জুময়া ও দু’ ঈদের নামায জামায়াতের সাথে পড়ার নিয়ম করে তার ফায়দা অসংখ্য গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে রোযা রাখায় রোযাদারদের মন ও চরিত্র গঠন কাজ কম সাধিত হতো না। কিন্তু সকল মুসলমানের জন্য একটি মাসকে রোযার জন্য নির্দিষ্ট করে তার ফায়দা এত পরিমান বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে, যা গুণে শেষ করা যায় না। এক একজন লোকের ব্যক্তিগতভাবে যাকাত আদায় করার উপকারিতাও কম নয়; কিন্তু বায়তুলমালের মারফত যাকাত দেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে তার উপকারিতা এতদূর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে যে, ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম না হওয়া পর্যন্ত সঠিকভাবে এর ধারণাও করা যায় না। কারণ ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনেই সকল মুসলমানের যাকাত ‘বায়তুলমালে’ জমা করা হয় এবং সুসংবদ্ধভাবে প্রাপকের মধ্যে বন্টন করা হয়। ফলে তাতে সমাজের অভাবগ্রস্ত লোকদের অপূর্ব কল্যাণ সাধিত হয়। হজ্জের ব্যাপারেও তাই। একাকী হজ্জ করলেও হাজার হাজার মানুষের জীবনে বিরাট বিপ্লব সুচিত হতে পারে। কিন্তু দুনিয়ার মুসলমানকে একত্রিত হয়ে হজ্জ করার রীতি করে দিয়ে সীমাহীন কল্যাণ লাভের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। <br />
<span style="font-weight: bold;">হজ্জের বিশ্ব সম্মেলন </span><br />
যেসব মুসলমানের ওপর হজ্জ ফরয হয় অর্থাৎ যারা কা’বা শরীফ পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারে এমন লোক দু’ একজন নয়। প্রত্যেক এলাকায় তাদের সংখ্যা নিতান্ত কম হয় না। বলতে গেলে প্রত্যেক শহরে কয়েক হাজার এবং প্রত্যেক দেশে কয়েক লক্ষ পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রত্যেক বছরই এদের অধিকাংশ লোকই হজ্জ করার ইচ্ছা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়। দুনিয়ার যেসব জায়গায় মুসলমান বসবাস করে, তথায় হজ্জের মৌসুম নিকটবর্তী হওয়ার সাথে সাথে ইসলামী যিন্দেগীর এক নতুন চেতনা কিরূপ জেগে ওঠে, তা সত্যই লক্ষ্য করার মত। প্রায় রমযান থেকে শুরু করে যিলকদ মাস পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গা থেকে শত শত লোক হজ্জ যাত্রায় আয়োজন করে রওয়ানা হয়। আর ওদিকে মহররম মাসের শেষ দিক থেকে সফর, রবিউল আউয়াল তথা রবিউস্সানী পর্যন্ত হাজীদের প্রত্যাবর্তনের ধারা চলতে থাকে। এ ছয় মাসকাল পর্যন্ত সকল মুসলিম লোকালয় এক প্রকার ধর্মীয় ভাবধারায় সরগরম হয়ে থাকে। যারা হজ্জে গমন করে আর হজ্জ করে ফিরে আসে, তারা তো ধর্মীয় ভাবধারায় নিমগ্নই হয়ে থাকে ; কিন্তু যারা হজ্জে গমন করে না, হাজীদের রওনা করাতে, এক একটি ষ্টেশন থেকে তাদের চলে যওয়া আবার ফিরে আসার সময় তাদের অভ্যর্থনা করায় এবং তাদের কাছে হজ্জের বিস্তারিত অবস্থা শুনার ব্যপারে তারাও কিছুটা হজ্জে গমনের আনন্দ লাভ করে থাকে। <br />
এক একজন হাজী যখন হজ্জে গমনের নিয়ত করে, সেই সাথে তাদের মধ্যে আল্লাহর ভয় এবং পরহেযগারী, তাওবা -ইসতেগফার এবং উন্নত ও পবিত্র চরিত্রের ভাবধারা জেগে ওঠে। সে তারা প্রিয় আত্মীয় ও বন্ধু বান্ধব, সহকর্মী এবং সংশ্লিষ্ট সকল লোকের কাছে বিদায় চায়। নিজের সব কাজ - কারবারের চুড়ান্ত রূপ দিতে শুরু করে । এতে মনে হয় যে, সে এখন আর আগের মানুষ নয়, আল্লাহর দিকে তার মনের আকর্ষন হাওয়ায় দিল পবিত্র হয়ে গেছে। এভাবে এক একজন হাজীর এ পরিবর্তনে তার চারপাশে লোকদের ওপর কত গভীর প্রভাব পড়ে তা অনুমান করা যায়। এরূপ প্রত্যেক বছরই যদি দুনিয়ার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে গড়ে এক লক্ষ লোকও এই হজ্জ সম্পন্ন করে, তবে তাদের এ গতিবিধি ও কার্যকলাপের প্রভাব আরো কয়েক লক্ষ লোকের চরিত্রের ওপর না পড়ে পারে না। তারপর হাজীদের কাফেলা যে স্থান অতিক্রম করে, তাদেরকে দেখে তাদের সাথে সাক্ষাত করে ‘লাব্বাইকা’ আওয়ায শুনে সেখানকার কত মানুষের দিল অলৌকিক ভাবধারায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। কত মানুষের লক্ষ্য আল্লাহর ঘরের দিকে ফিরে যায়। আর কত লোকের নিদ্রিত আত্মা হজ্জ করার উৎসাহে জেগে ওঠে । এসব লোক যখন আবার নিজ নিজ দেশের দিকে -দুনিয়ার বিভিন্ন দিকে হজ্জের প্রাণস্পর্শী ভাবধারা বিস্তার করে প্রত্যাবর্তন করে এবং দলে দলে মানুষ তাদের সাথে সাক্ষাত করতে আসে, তাদের কাছ থেকে আল্লাহর ঘরের আলোচনা শুনে কত অসংখ্য মানুষের মনে এবং অসংখ্য পরিমন্ডলে ইসলামী ভাবধারা জেগে ওঠে। <br />
এ জন্যই আমি বলতে চাই যে, রযমান মাস যেরূপ বিশ্ব মুসলিমের জন্য তাকওয়া ও পরহেযগারীর মৌসুম তেমনি হজ্জের মাসও বিশ্ব ইসলামী পুনর্জাগরণের মৌসুম। মহান বিজ্ঞ আল্লাহ এ ব্যবস্থা এ জন্য করেছিলেন যেন বিশ্ব ইসলামী আন্দোলন শ্লথ না হয়ে যায়। পবিত্র কা’বাকে বিশ্বের কেন্দ্র ভুমি হিসেবে এমনভাবে স্থাপন করেছেন যেন মানব দেহের মধ্যে হৃদয়ের অবস্থান। দেহে যতই রোগাক্রান্ত হোক না কেন যত দিন হৃদয়ের স্পন্দন থেমে না যায় এবং সমগ্র দেহ রক্ত সঞ্চালনের পদ্ধতি বন্ধ হয়ে না যায় ততদিন যেমন মানুষের মৃত্যু হয় না সেরূপ হজ্জের এ সম্মেলন ব্যবস্থাও যতদিন থাকবে ততদিন ইসলামী আন্দোলনও চলতে থাকবে। <br />
একটু চোখ বন্ধ করে চিন্তা করলেই আপনাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠবে যে, পৃথিবীর দূর দূরান্তের অঞ্চল থেকে আগত অসংখ্য মানুষ যাদের আকার -আকৃতি, দৈহিক রং ও ভাষা, পোশাক -পরিচ্ছদ বিভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও যখনই কেন্দ্রের নিকটবর্তী হয় সবাই নির্দিষ্ট স্থানে এসে নিজ নিজ পোশাক -পরিচ্ছদ খুলে ফেলে এবং সকলে একই ধরনের অনাড়ম্বর ‘ইউনিফরম’ পরিধান করে। এহরামের এ ‘ইউনিফরম’ ধারণ করার পর পরিষ্কার মনে হয় যে, দুনিয়ার হাজার হাজার জাতির মধ্য থেকে এই যে লক্ষ লক্ষ ফোজ আসছে, এরা বিশ্বের বাদশাহ ও যমীন - আসমানের রাজাধিরাজ এক আল্লাহ তাআলারই ফৌজ। এরা দুনিয়ার হাজার হাজার জাতি ও কওম থেকে ভর্তি হয়েছে। এরা সকলে একই বাদশাহর ফৌজ। এদের সকলের ওপর একই সম্রাটের আনুগত্য ও গোলামীর চিহ্ন লেগে আছে, একই বাদশাহর আনুগত্যের সূত্রে এরা সকলেই পরস্পর বিজড়িত রয়েছে এবং একই রাজধানীর দিকে, মহাসম্রাটের সামনে উপস্থিত হবার জন্য ছুটে চলেছে। একই ‘ইউনিফরম’ পরিহিত এ সিপাহী ‘মীকাত’ অতিক্রম করে যখন সামনে অগ্রসর হয়, তখন সকলের কণ্ঠ থেকে এ একই ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়ে আকাশ -বাতাস মুখরিত করে তোলেঃ <br />
উচ্চারণের কন্ঠ বিভিন্ন -কিন্তু সকলের কণ্ঠে একই ধ্বনি। কেন্দ্র যত নিকটবর্তী হয়, ব্যবধান ততই কমে যায়। বিভিন্ন দেশের কাফেলা পরস্পর মিলিত হয় এবং সকলেই একত্রিত হয়ে একই পদ্ধতিতে নামায পড়ে, সকলের পোশাক এক, সকলেরই ইমাম এক, একই গতিবিধিতে ও একই ভাষায় সকলের নামায পড়া, সকলেই এক ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনির ইঙ্গিতে ওঠা-বসা করে, রুকূ-সিজদা করে, সকলে একই আরবী ভাষায় কুরআন পড়ে এবং শুনে। এভাবে সমবেত লক্ষ লক্ষ জনতার ভাষা, জাতি, দেশ, বংশ ও গোত্রের কৃত্রিম বৈষম্য চূর্ণ হয়ে একাকার হয়ে যায়। সমগ্র মানুষের সমন্বয়ে ‘আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী’ একটি বিরাট জামায়াত রচিত হয় । তার পর এ বিরাট আন্তর্জাতিক জামায়াত একই আওয়ায ‘লাব্বাইকা লাব্বাইকা’ ধ্বনি করতে করতে চলতে থাকে। পথের প্রত্যেক চড়াই উৎরাইয়ে যখন এ আওয়ায উত্থিত হয়, যখন নামাযের সময়ে এবং প্রভাতে এ শব্দ অনুরণিত হয়ে ওঠে, যখন কাফেলাসমূহ পরস্পর মিলিত হবার সময় এ শব্দই ধ্বনিত হয়ে ওঠে তখন চারদিকে এক আশ্চর্য রকম পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সে পরিবেশে মানুষ নিজেকে ভুলে যায়, এক অচিন্তনীয় ভাবধারায় সে মত্ত হয়ে পড়ে, ‘লাব্বাইকা’ ধ্বনির আকর্ষণে সে এক ভাবজগতে ছুটে যায়। অতপর কা’বায় পৌছে দুনিয়ার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে সমাগত জনসমুদ্রের একই পোশাকে নির্দিষ্ট কেন্দ্র বিন্দুর চারদিকে প্রদক্ষিণ করা , সকলের একই সাথে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝখানে দৌড়ানো, সকলের মিনায় উপস্থিত হয়ে তাবু জীবনযাপন করা এবং তথায় এক ইমামের কন্ঠে ভাষণ (খোতবা) শ্রবণ করা, তারপর মুযদালিফায় তাবুর নীচে রাত্রি যাপন করা, আবার মিনার দিকে সকলের প্রত্যাবর্তন করা, সকলে মিলে আকাবায় পাথর দ্বারা চাঁদমারী করা, তারপর সকলের কুরবানী করা , সকলের একই কেন্দ্রে একত্রিত হয়ে নামায পড়া --- এসব কাজে যে পবিত্র পরিবেশ ও আধ্যাত্মিক মনোভাবের সৃষ্টি হয়, দুনিয়ার অন্য কোন ধর্মে বা জীবন ব্যবস্থায় তার তুলনা নেই। <br />
তারপর দুনিয়ার বিভিন্ন জাতির মধ্য থেকে আগত অসংখ্য মানুষের একই কেন্দ্রে সম্মিলিত হওয়া এমন নিষ্ঠা, একাগ্রতা এবং ঐক্যভাবের সাথে একত্রিত হওয়া এমন পবিত্র উদ্দেশ্য ও ভাবধারা এবং নির্মল কাজ-কর্ম সহকারে সমস্ত কাজ সম্পন্ন করা প্রকৃতপক্ষে আদম সন্তানের জন্য এটা এক বড় নিয়ামত। এ নিয়ামত ইসলাম ভিন্ন অন্য কোন ধর্মই দিতে পারে নি। দুনিয়ার বিভিন্ন জাতির পরস্পর মিলিত হওয়া কোন নুতন কথা নয় চিরকালই এরূপ হয়েছে। কিন্তু তাদের এ সম্মেলন হয় যুদ্ধের ময়দানে একে অপরের গলা কাটার জন্যে অথবা সন্ধি সম্মেলনে বিজিত দেশগুলোকে নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেবার জন্যে কিংবা বিশ্বজাতি সম্মেলনে এক একটি জাতির বিরুদ্ধে ধোঁকা ও প্রতারণার ষড়যন্ত্র, যুলুম এবং বেঈমানীর জাল ছড়াবার জন্য; অথবা পরের ক্ষতি সাধন করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করার মতলবে। সমগ্র জাতির জনসাধারণের নির্মল মন, সচ্চরিত্রতা ও পবিত্র মনোভাব নিয়ে এবং প্রেম ভালোবাসা, নিষ্ঠা, মানসিক ও আধ্যাত্মিক ঐক্যভাব সহকারে একত্রিত হওয়া। চিন্তা, কর্ম এবং উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণ একাগ্রতার সাথে মিলিত হওয়া--- তাও আবার একবার মিলিত হয়েই ক্ষান্ত না হওয়া বরং চিরকালের জন্য প্রত্যেক বছর একই কেন্দ্রে একত্রিত হওয়া বিশ্বমানবতার প্রতি এতবড় নিয়ামত দুনিয়ায় ইসলাম ভিন্ন অন্য কোন ধর্ম ব্যবস্থাই দিতে পেরেছে কি? বিশ্ব শান্তি স্থাপনে জাতিসমূহের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-কলহ মিটিয়ে দেয়া এবং লড়াই ঝগড়ার পরিবর্তে ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য এর চেয়ে উত্তম ব্যবস্থা আর কেউ পেশ করতে পেরেছে কি? ইসলাম শুধু এতটুকু করেই ক্ষান্ত হয়নি ; সে আরো অনেক কল্যাণকর ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। <br />
বছরের চারটি মাস হজ্জ ও ওমরার কাজ সম্পাদনের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে । ইসলাম কা’বা যাতায়াতের এ চারটি মাস সমস্ত পথেই শান্তি অক্ষুণ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এটা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং শান্তি রক্ষা করার এক স্থায়ী ব্যবস্থা। দুনিয়ার রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ইসলামের হাতে আসলে হজ্জ ও ওমরার কারণে একটি বছরের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ সময় চিরকালের জন্য যুদ্ধ এবং রক্তারক্তির হাত থেকে দুনিয়া রক্ষা পেতে পারে। <br />
ইসলাম দুনিয়ার মানুষকে একটি হেরেম দান করেছে। এ হেরেম কিয়ামত পর্যন্ত শান্তির কেন্দ্রস্থল । এখানে মানুষ মারা তো দূরের কথা, কোনো জন্তুও শিকার করা যেতে পারে না। এমনকি এখানকার ঘাসও কেটে ফেলার অনুমতি নেই। এখানকার কোনো কাঁটাও চূর্ণ করা যায় না, কারো কোন জিনিস এখানে পড়ে থাকলে তা স্পর্শ করাও নিষিদ্ধ। ইসলাম পৃথিবীর বুকে একটি শহর প্রতিষ্ঠিত করেছে। এ শহরে কারো কোন হাতিয়ার নিয়ে প্রবেশ করার অনুমতি নেই। এখানে খাদ্যশস্য বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী সঞ্চয় করে রাখা এবং তার ফলে মূল্য বৃদ্ধির কারণ সৃষ্টি করা পরিষ্কার আল্লাহদ্রোহীতা । এখানে যারা অন্যের ওপর যুলুম করে তাদেরকে অল্লাহ পাক এই বলে সাবধান করে দিয়েছেনঃ "নুযিকহুমিন আযাবুন আলিম" অর্থ --“আমরা তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেব।” <br />
ইসলাম সমগ্র পৃথিবীর একটি কেন্দ্র নির্ধারিত করেছে। এ কেন্দ্রের পরিচয় প্রসংগে বলা হয়েছেঃ “যারা আল্লাহর প্রভুত্ব ও বাদশাহী এবং হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়াত ও নেতৃত্ব স্বীকার করে ইসলামী ভ্রাতৃসংঘে প্রবেশ করবে, ইসলামের এ কেন্দ্রে তাদের সকলেরই সমান অধিকার থাকবে।” আমেরিকার বাসিন্দা হোক কি আফ্রিকার , চীনের বাসিন্দা হোক কি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের , সে যদি মুসলামান হয় তবেই মক্কা শরীফে তার অধিকার মক্কার আসল বাসিন্দাদের অনুরূপ হবে। সমগ্র হারাম শরীফের এলাকা মসজিদের ন্যায়। মসজিদে গিয়ে যে মুসলমান নিজের জন্য কোনো স্থান করে নেয় , সে স্থান তারই হয়ে যায়; কেউ তাকে সেই স্থান থেকে বিতাড়িত করতে পারে না, কেউ তার কাছে ভাড়া চাইতে পারে না। কিন্তু সে যদি সারা জীবনও সেই স্থানে বসে থাকে, তবুও সেই স্থানকে নিজের মালিকানা স্বত্ব বলে দাবী করতে এবং তা বিক্রি করতে পারে না। এর জন্য সে ভাড়াও চাইতে পারে না । এভাবে সেই ব্যক্তি যখন সেই স্থান থেকে চলে যাবে তখন অন্য কেউ এসে এখানে আসন করে নিতে পারে , যেমন পূর্বের লোকটি পেরেছিল। ‘হারাম শারীফের’ অবস্থাও ঠিক এরূপ। <br />
হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ “ মক্কা নগরের যে স্থানে এসে যে ব্যক্তি প্রথমে অবতরণ করবে সেই স্থান তারই হবে।” এখানকার বাড়ী-ঘরের ভাড়া আদায় করা জায়েজ নয়। হযরত উমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু এখানকার লোকদের ঘরের সম্মুখস্ত প্রাঙ্গণের দুয়ার বন্ধ করতে নিষেধ করেছিলেন, যাতে লোকেরা তাদের প্রাঙ্গনে এসে অবস্থান করতে পারে। কোন কোন ফকীহ এতদূরও বলেছেন যে, মক্কা নগরীর বাড়ীঘরের কেউ মালিক নয়, তা উত্তরাধিকার নীতি অনুসারে বন্টনও হতে পারে না। এসব সুযোগ-সুবিধা এবং আযাদীর মূল্যবান নিয়ামত দুনিয়ার মানুষ ইসলাম ভিন্ন অন্য কোথাও পেতে পারে কি? <br />
এহেন হ্জ্জ সম্পর্কেই বলা হয়েছিলঃ তোমরা এটা করে দেখ এতে তোমাদের জন্য কতবড় কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তার সমস্ত কল্যাণকে গুণে গুণে বলার শক্তি আমার নেই । কিন্তু তবুও এই পর্যন্ত তার যে কিঞ্চিত বিবরণ ওপরে পেশ করেছি তা থেকে এ সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণ লাভ করা যাবে। <br />
কিন্তু এসব কথা শুনার পর আমার নিজের মনের দুঃখের কথাও খানিকটা শুনুন। বংশানুক্রমিক মুসলমান হীরক খনি অভ্যন্তরে ভূমিষ্ঠ শিশুর মত। এ শিশু যখন জন্ম মুহূর্ত থেকেই চারদিকে কেবল হীরক দেখতে পায় এবং হীরক খন্ড নিয়ে খেলা করতে থাকে, তখন তার দৃষ্টিতে হীরকের ন্যায় মহামূল্যবান সম্পদও সাধারণ পাথরের মতই মূল্যহীন হয়ে যায়। বংশীয় মুসলমানদের অবস্থাও ঠিক এরূপ। সমগ্র জগত যে নিয়ামত থেকে বঞ্চিত এবং যা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণেই তারা নানা প্রকার দুঃখ-মুসিবতে নিমজ্জিত রয়েছে, আর বিশ্ব মানব যার সন্ধান করতে ব্যাকুল রয়েছে, সেই মূল্যবান নিয়ামতসমূহ বর্তমান মুসলমানরা বিনামূল্যে লাভ করেছে, এজন্য তালাশ-অনুসন্ধান এবং খোঁজাখুজির জন্য একবিন্দু পরিশ্রমও তাদের করতে হয়নি। এসব ছাড়াই তারা এটা পেয়েছে শুধু এ জন্য যে, সৌভাগ্যবশত তারা মুসলিম পরিবারে জন্মলাভ করেছে। যে কালেমায়ে তাওহীদ মানব জীবনের সমগ্র জটিল সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করে দিতে পারে শিশুকাল থেকেই তা তাদের কানে প্রবেশ করেছে, মানুষকে প্রকৃত মানুষ বানাতে এবং লোকদের পরস্পরের ভাই ও দরদী বন্ধুতে পরিণত করার জন্য নামায-রোযা স্পর্শমণি অপেক্ষাও বেশী মূল্যবান। এরা জন্মলাভ করেই বাপ-দাদার উত্তরাধিকার হিসেবে এটা লাভ করেছে। যাকাত ইসলামী সমাজের এক অতুলনীয় ব্যবস্থা, এ দ্বারা শুধু মনের নাপাকীই দূর হয় না, দুনিয়ার অর্থব্যবস্থাও সুষ্ঠুতা লাভ করে---- যা থেকে বঞ্চিত হয়ে দুনিয়ার মানুষ একে অপরের বুকের রক্ত শুষে নিচ্ছে। এটা মুসলমানগণ প্রত্যক্ষ করছে। কিন্তু মুসলমানরা তা বিনা ব্যয়ে এবং বিনা শ্রমে লাভ করেছে। এটা ঠিক তেমনিভাবে, যেমন খবু বড় চিকিৎসকের সন্তান ঘরে বসেই বড় বড় রোগের তালিকা বিনামূল্যে লাভ করে থাকে। অথচ এর জন্য অন্যান্য মানুষ অত্যন্ত ব্যস্ততার সাথে সন্ধান করে বেড়ায়। হজ্জও একটি বিরাট ব্যবস্থা, সমগ্র দুনিয়ায় এর কোনো তুলনা নেই। পৃথিবীর কোণায় কোণায় ইসলামী আন্দোলনের আওয়াজ পৌঁছাবার জন্য এবং আন্দোলনকে চিরকালের তরে জীবিত রাখার জন্য এটা অপেক্ষা শক্তিশালী উপায় আর কিছুই হতে পারে না। বস্তুত দুনিয়ার সমগ্র মানুষকে পৃথিবীর প্রতিটি কোন থেকে এক আল্লাহর নামে টেনে এনে নির্দিষ্ট একটি কেন্দ্রে একত্রিত করে দেয়া এবং অসংখ্য বংশ গোত্র ও জাতিকে এক আল্লায় বিশ্বাসী, সদুদ্দেশ্য সম্পন্ন ও সৌহার্দপূর্ণ ভ্রাতৃসংঘে সম্মিলিত করে দেবার জন্য এটা আপেক্ষা উন্নততর কোনো পন্থা আজ পর্যন্ত আবিষ্কার করা সম্ভব হয় নি। যুগ-যুগান্তর থেকে জীবন্ত ও প্রচলিত এ ব্যবস্থাও মুসলমানগণ নিজেদের সম্পদ হিসেবে লাভ করেছে বিনা চেষ্টায় এবং বিনা শ্রমে। কিন্তু বড়ই দুঃখের কথা এই যে, মুসলমান বিনাশ্রমে প্রাপ্ত এ মূল্যবান সম্পদের কোন কদর বোঝেনি, বরং তারা এটা নিয়ে ঠিক তেমনি ভাবে খেলা করছে, যেমন হীরক খন্ড নিয়ে খেলা করে হীরক খনিতে প্রসূত শিশু সন্তান। আর তাকে সে মনে করে সাধারণ পাথরের ন্যায় মূল্যহীন। মুসলমান নিজেরদের মূর্খতা এবং অজ্ঞতার কারণে এ বিরাট মূল্যবান সম্পদ ও শক্তির উৎস নিয়ে অত্যন্ত হীনভাবে খেলা করছে। এর অপচয় করছে--- এটাকে নষ্ট করছে--- এসব দেখে আমার প্রাণ জ্বলে যায়। পাথর চূর্ণকারীর হাতে মূল্যবান হীরক খন্ড বরবাদ হতে দেখে সহ্য করা বাস্তবিকই কঠিন ব্যাপার। কোনো এক কবি সাত্যিই বলেছিলেনঃ <br />
“যদিও ঈসার গাধা যায় মক্কা ভূমি<br />
সেথাও থাকবে গাধা জেনে রাখ তুমি।” <br />
অর্থাৎ হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ন্যায় মহান পয়গম্বরের গাধা হলেও পবিত্র মক্কার দর্শন দ্বারা তার কোনো উপকার হতে পারে না। সে যদি সেখানে থেকেও যায় তথাপি সে যেমন গাধা তেমন গাধাই থেকে যাবে। <br />
নামায-রোযা হোক, কিংবা হজ্জ হোক, এগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের প্রশিক্ষণ। কিন্তু যারা এগুলোর অর্থ ও উদ্দেশ্য বুঝতে চায় না এর উপকার ও কল্যাণ লাভ করার কথা এতটুকুও ভাবে না; বরং যারা এ ইবাদাত সমূহের যে কোনো মাকছুদ ও উদ্দেশ্য থাকতে পারে তৎসম্পর্কেও বিন্দুমাত্র কোনো ধারণা রাখে না। তারা যদি পূর্ববর্তী লোকদের দেখাদেখি শুধু ওগুলোর নকলই করতে থাকে, তাহলে এটা দ্বারা সেই সুফল আশা করা যেতে পারে না। কিন্তু দুঃখের বিষয় সাধারণত আজকের মুসলমানগণ এভাবেই ঐ ইবাদাত গুলো করে চলেছে। সকল ইবাদাতের বাহ্যিকরূপ তারা ঠিকই বজায় রাখছে ; কিন্তু (লক্ষ ও উদ্দেশ্যের প্রতি দৃষ্টি না থাকার কারণে) এতে কোন প্রাণ শক্তি সৃষ্টি হচ্ছে না। প্রতি বছর হাজার হাজার লোক ইসলামের কেন্দ্রে গমন করে এবং হজ্জের সৌভাগ্য লাভ করে ফিরে আসে ঠিক কিন্তু হারাম শরীফের যাত্রীর স্বভাব-চরিত্রে যে পরিবর্তন কাম্য ছিল, তা যেমন দেখা যায় না তেমনি হজ্জ থেকে ফিরে আসার পরও তার মানসিক ও নৈতিক ক্ষেত্রে কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় না। অনুরূপভাবে যে সকল এলাকা অতিক্রম করে হজ্জে গমন করা হয়, সেখানকার মুসলমান-অমুসলমান অধিবাসীদের ওপরেও তার কোন উত্তম চরিত্রের প্রভাব পতিত হয় না। বরং অনেকের অসৎ স্বভাব, বদমেজাজী, অশালীন ব্যবহার ও চারিত্রিক দুর্বলতা ইসলামের সম্মানকে বিনষ্ট করে দেয়। বস্তুত এসব কারণেই আমাদের অনেক মুসলিম যুবকও প্রশ্ন করেন যে, ‘হজ্জের উপকার আমাদেরকে বুঝিয়ে দিন।’ অথচ হজ্জ তো ছিল এমন এক জিনিস যে তাকে প্রকৃতরূপে সম্পন্ন করা হলে কাফেররাও এর উপকার প্রকাশ্যে দেখে ইসলাম গ্রহণ করতো। যদি কোনো আন্দোলনের লক্ষ লক্ষ সদস্য প্রতি বছর বিশ্বের সকল অঞ্চল থেকে এক স্থানে সমবেত হয় এবং আবার নিজ নিজ দেশে ফিরে যায় বিভিন্ন দেশে ও নগর হয়ে যাওয়ার সময়ে নিজেরদের পবিত্র জীবন, পবিত্র চিন্তাধারা ও পবিত্র নৈতিকতার বহিঃপ্রকাশ করতে করতে অগ্রসর হয়, যেখানে যেখানে অবস্থান করে কিংবা যে যে স্থান অতিক্রম করে সেখানে নিজেদের আন্দোলনের যাবতীয় মৌলিক আলোচনা নীতির শুধু মৌখিক না করে আপন আচরণ ও কর্মতৎপরতায়ও তাকে বাস্তবায়িত করতে থাকে, আর এটা শুধু দশ-বিশ বছরেই নয় বরং বছরের পর বছর ধরে শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরেই চলতে থাকে তাহলে বলুন তো, এটা কোনো নিষ্ক্রিয় জিনিস থেকে হতে পারে কি? প্রকৃতপক্ষে হজ্জ এরূপ হলে তার উপকার সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন করার প্রয়োজনই হতো না। তখন অন্ধ ব্যক্তিও এর উপকার দেখতে পেত। বধির ব্যক্তিও এর কল্যাণ শুনতে পারতো। প্রতি বছরের হজ্জ কোটি কোটি মুসলমানকে নেক বান্দায় পরিণত করতো, হাজার হাজার অমুসলমানকে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য করতো, লক্ষ লক্ষ অমুসলমানের অন্তরে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা বদ্ধমূল করে দিত। কিন্তু আফসোস! আমাদের মূর্খতার কারণে কত বড় মূল্যবান সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। <br />
হজ্জের অন্তর্নিহিত এ বিরাট সার্থকতা ও উপকারিতা পুরোপুরি লাভ করার জন্য ইসলামের কেন্দ্রস্থলে কোনো বিরাট শক্তিসম্পন্ন কর্তৃত্ব বর্তমান থাকা উচিত। যা এ মহান বিশ্ব শক্তিকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম। এখানে এমন একটি হৃৎপিন্ড (দিল) থাকা উচিত ছিল যা প্রত্যেক বছর সমগ্র বিশ্ব দেহে তাজা রক্তের দ্বারা প্রবাহিত করতে সক্ষম। এমন একটি মস্তিষ্ক থাকারও দরকার ছিল যা এ হাজার হাজার আল্লাহর দূতের মারফতে দুনিয়ার কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইসলামের বিপ্লবী পয়গাম পৌঁছাতে চেষ্টা করতো। আর কিছু না হোক, অন্তত এ কেন্দ্র ভূমিতে খালেস ইসলামী জীবন ধারার বাস্তব রূপ যদি বর্তমান থাকতো, তবুও দুনিয়ার মুসলামান প্রত্যেক বছরই সেখান থেকে খালেস ইসলামী জিন্দেগী এবং দ্বীনদারীর শিক্ষা নিয়ে নিজ নিজ ঘরে প্রত্যাবর্তন করতে পারতো। কিন্তু বড়ই দুঃখের বিষয় যে, এখানে তেমন কিছুই নেই। দীর্ঘকাল পর্যন্ত আরব দেশে মূর্খতার অন্ধকার পুঞ্জিভূত হয়ে আছে, আব্বাসীয় যুগ থেকে শুরু করে ওসমানী যুগ পর্যন্ত সকল অক্ষম ও অনুপযুক্ত শাসক ইসলামের কেন্দ্রেস্থলের অধীবাসীগণকে উন্নতি লাভের সুযোগ দেয়ার পরিবর্তে কয়েক শতাব্দীকাল ধরে তাদেরকে কেবল অধঃপতনের দিকেই ঠেলে দিয়েছে। ফলে আরব দেশ জ্ঞান-বিজ্ঞান, নৈতিক চরিত্র, সভ্যতা ও সংস্কৃতি ---- সকল দিক দিয়েই অধঃপতনের চরম সীমায় উপনীত হয়েছে। এ কারণে যে ভুখন্ড থেকে একদা ইসলামের বিশ্বপ্লাবী আলোক ধারা উৎসারিত হয়ে সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল আজ তাই ইসলামের পূর্ববর্তী জাহেলী যুগের ন্যায় অন্ধ কুপে পরিণত হয়েছে। এখন সেখানে ইসলামের জ্ঞান নেই, ইসলামী জীবনধারা নেই। মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে বুকভরা আশা ও ভক্তি নিয়ে প্রত্যেক বছর পাক ‘হারামে’ আগমন করে ; কিন্তু এ এলাকায় পৌছে তার চারদিকে যখন কেবল মূর্খতা, মলিনতা, লোভ-লালসা , নির্লজ্জতা, আত্মপূজা, চরিত্রহীনতা, উচ্ছৃংখলতা এবং জনগণের নির্মম অধঃপতিত অবস্থা দেখতে পায়, তখন তাদের আশা-আকাঙ্খার স্বপ্ন জাল ছিন্ন হয়ে যায়। এখন অনেক লোক হজ্জ করে নিজের ঈমানকে শক্তিশালী করার পরিবর্তে তাকে অধিকতর দুর্বলই করে আসে। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালম ও ইসমাঈল আলাইহিস সালামের পরে জাহিলিয়াতের যুগে আরব দেশে যে পৌরোহিত্যবাদ ও ঠাকুর পূজার প্রভাব বিস্তৃত হয়েছিল এবং যা শেষ নবী হযরত রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্মূল করেছিলেন, আজ তা-ই প্রবলরূপে পুনঃপ্রবর্তিত হয়েছে। ‘হারামে কা’বার’ ব্যবস্থাপক পূর্বের ন্যায় আবার সেবায়েত হয়ে বসেছে। আল্লাহর ঘর তাদের সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। এ ঘরের প্রতি যারা ভক্তি রাখে তারা এদের শিকার বিশেষ । বিভিন্ন দেশে বড় বড় বেতনভুক্ত এজেন্ট নিযুক্ত রয়েছে, তারা ভক্তদেরকে চারদিক থেকে টেনে টেনে নিয়ে আসে। কুরআনের আয়াত আর হাদীসের নির্দেশ পড়ে শুনিয়ে তাদেরেকে হজ্জ যাত্রায় উদ্বুদ্ধ করে এজন্য নয় যে, আল্লাহ তাদের উপর হজ্জ ফরয করেছেন, তা স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে। বরং তাতে তাদের যথেষ্ট আমদানী হবে। এসব দেখে পরিষ্কার মনে হয় যে, আল্লাহ এবং তার রাসূল এ বিরাট ব্যাবস্থা করেছেন শুধু এ পুরোহিত ‘পান্ডা’ এবং দালালদের প্রতিপালনের জন্য। তারপর হজ্জ যাত্রায় বাধ্য হয়ে মানুষ যখন ঘর থেকে বের হয়, তখন সফরের শুরু থেকে হজ্জ করে বাড়ী ফিরে আসা পর্যন্ত প্রত্যেক জায়গায় ধর্মীয় মজুর এবং ধর্ম ব্যবসায়ীরা জোকের ন্যায় তাদের সামনে উপস্থিত হয়। মুয়াল্লেম, তাওয়াফ শিক্ষাদাতা , কা’বা কুঞ্জিকা বাহক এবং স্বয়ং হেজায সরকার--- সকলেই এ ধর্ম ব্যবসায়ে সমানভাবে অংশিদার। হজ্জের সমস্ত অনুষ্ঠানাদিই পয়সা দিয়ে সম্পন্ন করতে হয়। এমন কি পবিত্র কা’বা গৃহের দরজাও পয়সা ব্যতীরেকে কোনো মুসলমানদের জন্য উম্মুক্ত হতে পারে না। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক) । ইসলামের এ তথাকথিত খাদেমগণ এবং কেন্দ্রীয় উপাসনাগারের সেবায়েতগণও শেষ পর্যন্ত বেনারস ও হরিদ্বারের পন্ডিত পুরোহিতদের পেশা অবলম্বন করে নিয়েছে, অথচ এটাই একদা এ পুরোহিতবাদদের মূলোচ্ছেদ করেছিল । যেখনে ইবদাত করানোর কাজ বিশেষ ব্যবসায় এবং ইবাদাতের স্থান উপার্জনের উপায়ে পরিণত হয়েছে, সেখানে আল্লাহর আয়াত কেবল এ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় যে, লোকে তা শুনে হজ্জ করতে বাধ্য হবে এবং এ সুযোগে তার পকেট মেরে টাকা নিয়ে যাব। যেখানে ইবাদতের কাজ সম্পন্ন করার জন্য মূল্য দিতে হয় এবং দ্বীনি কর্তব্য ব্যবসায়ের পন্য হয়---- এমতস্থানের ইবাদতে ইসলামের প্রাণ শক্তি কি করে বেঁচে থাকতে পারে। হাজীগণ যে এ ইবাদাতের প্রকৃত নৈতিক আধ্যাত্মিক উপকারিতা লাভ করতে পারবে --- সমস্ত কাজ যখন একটি কেনা-বেচার মাল হয়ে রয়েছে--- তখন এমন আশা কিছুতেই করা যায় না। <br />
এ আলোচনা দ্বারা কারো ওপর দোষারোপ করা আমার উদ্দেশ্য নয়, আমি শুধু বলতে চাই হজ্জের ন্যায় একটি বিরাট শক্তিকে কোন্ কোন্ জিনিস প্রায় নিষ্ক্রিয় ও অর্থহীন করে দিয়েছে। <br />
ইসলাম এবং ইসলাম প্রবর্তিত নিয়মসমূহে কোনো ত্রুটি রয়েছে, এরূপ ধারণা কারোই মনে যেন না জাগে। কারণ তাতে আসলে কোনোই ত্রুটি নেই ---ত্রুটি রয়েছে তাদের মধ্যে যারা সঠিকভাবে পূর্ণ ইসলামের অনুসরণ করে চলে না। অতএব, এ অবস্থার জন্য দায়ী বর্তমান মুসলমানরাই। তাই যে ব্যবস্থা তাদেরকে মানবতার পরিপূর্ণ আদর্শে পরিচালিত করতে পারতো এবং যা অনুসরণ করে তারা নেতা হতে পারতো, তা থেকে আজ কোনো ভাল ফল লাভ করা যাচ্ছে না। এমনকি অবস্থা এতদূর খারাপ হয়ে গেছে যে, এ ব্যবস্থাই মানবতার পক্ষে সত্যই কল্যাণকর কিনা আজ সে সম্পর্কেও মানুষের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হতে শুরু করেছে ।একজন সুদক্ষ চিকিৎসক যদি কয়েকটি অব্যর্থ ওষুধের তালিকা রেখে ইহলোক ত্যাগ করেন, তখন তার অকর্মণ্য ও নির্বোধ উত্তরাধিকারীগণের হাতে তা একেবারেই ‘অকেজো’ হয়ে যায়। ফলে সেই তালিকারও যেমন কোনো মূল্য হয় না, অনুরূপভাবে স্বয়ং চিকিৎসকের দুর্নাম হয় --- আসল তালিকা যতই ভাল , সঠিক এবং অব্যর্থ হোক না কেন। এতএব এ নির্ভূল তালিকাকে কার্যকর করে তুলতে হলে চিকিৎসা বিদ্যায় পারদর্শিতা অপরিহার্য। অপটু ও অজ্ঞ লোকরা সেই তালিকা অনুযায়ী ওষুধ তৈরী করলে তা দ্বারা যেমন কোনো উপকার পাওয়া যাবে না শুধু তাই নয়, বরং তাতে ক্ষতি হওয়ার যথেষ্ট আশংকা রয়েছে। ফলে জাহেল লোকেরা যারা তালিকার যথার্থতা যাচাই করতে নিজেরা অক্ষম--- তারাই শেষ পর্যন্ত মনে করতে শুরু করবে যে, মূলত তালিকাটাই ভুল। বর্তমান মুসলমানদের সর্বাত্মক অধঃপতনের ব্যাপারে ইসলামেরও ঠিক এ অবস্থা হয়েছে। <br />
<br /></div>
Unknownnoreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-8075437115401190852020-03-18T21:14:00.003+06:002020-03-18T21:14:55.857+06:00<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<br />
<br />
<br />
<br />
<br />
হজ্জের গোড়ার কথা <br />
আরবী ভাষায় ‘হজ্জ’ অর্থ যিয়ারতের সংকল্প করা। যেহেতু খানায়ে কা’বা যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে মুসলমানরা পৃথিবীর চারদিক থেকে নির্দিষ্ট কেন্দ্রের দিকে চলে আসে, তাই এর নাম রাখা হয়েছে ‘হজ্জ’। কখন কিভাবে হজ্জের সূচনা হয়েছিল, সেই ইতিহাস অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক এবং শিক্ষাপ্রদ। গভীর মনোযোগের সাথে সেই ইতিহাস অধ্যয়ন করলে হজ্জের কল্যাণকারিতা হৃদয়ঙ্গম করা পাঠকের জন্য সহজ হবে। <br />
কি মুসলমান, কি খৃস্টান- হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের নাম কারো অজানা নয়। দুনিয়ার তিন ভাগের দু’ভাগেরও বেশী লোক তাঁকে ‘নেতা’ বলে স্বীকার করে । হয়রত মূসা আলাইহিস সালাম, হয়রত ঈসা আলাইহিস সালাম এবং হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এ তিনজন শ্রেষ্ঠ নবীই তাঁর বংশজাত, তাঁর প্রজ্জলিত আলোকবর্তিকা থেকে সমগ্র দুনিয়ার সত্যের জ্যোতি বিস্তার করেছে । চার হাজার বছরেরও বেশীকাল পূর্বে তিনি ইরাকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তখন সমগ্র দুনিয়ার মানুষ আল্লাহকে ভুলে বসেছিল । পৃথিবীর একজন মানুষও তার প্রকৃত মালিক ও প্রভুকে জানতো না এবং তাঁর সামনে বন্দেগী ও আনুগত্যের ভাবধারায় মস্তক অবনত করতো না। যে জাতির মধ্যে তাঁর জন্ম হয়েছিল সে জাতির লোকেরা যদিও তদানীন্তন পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা উন্নত জাতি ছিল; কিন্তু পথভ্রষ্ট হওয়ার দিক দিয়েও তারাই ছিল অগ্রনেতা ।সৃষ্ট জীব কখনও মা'বুদ বা উপাস্য হতে পারে না। জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং শিল্প-ভাস্কর্যে চরম উন্নতি লাভ করা সত্ত্বেও এ সহজ কথাটি তারা বুঝতে পারতো না । তাই তারা আকাশের তারকা এবং (মাটি বা পাথর নির্মিত) মূর্তি পূজা করতো । জ্যোতিষ শাস্ত্র, ভালো-মন্দ জানার জন্য 'ফাল' গ্রহণ, অজ্ঞাত কথা বলা, যাদু বিদ্যা প্রয়োগ এবং দোয়া তাবীয ও ঝাড়-ফুঁকের খুবই প্রচলন ছিল। বর্তমানকালের হিন্দু পন্ডিত ও ব্রাহ্মণগণের মতো তখনকার সমাজে ঠাকুর-পুরোহিতেরও একটি শ্রেনী ছিল। তারা মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ করতো, অপর লোকের পক্ষ থেকে পূজা করে দিত, বিপদে- আপদে বা আনন্দে- খুশিতে তারা বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান পালন করতো এবং অজ্ঞাত কথা বলে লোকদেরকে প্রতারিত করতো। সাধারণ লোকেরা এদেরকেই ভাগ্য নির্ধারক বলে মনে করতো। তারা এদেরই অংগুলি নির্দেশে ওঠা-বসা করতো এবং চুপচাপ থেকে নিতান্ত অন্ধের ন্যায় তাদের মনের লালসা পূর্ণ করে যেতো। কারণ তারা মনে করতো যে, দেবতাদের ওপরে এসব পূজারীর কর্তৃত্ব রয়েছে। এরা খুশি হলে আমাদের প্রতি দেবতাদের অনুগ্রহ বর্ষিত হবে। অন্যথায় আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। এ পূজারী দলের সাথে তৎকালীন রাজা-বাদশাহদের গোপন যোগাযোগ ছিল। জনসাধারণকে দাসানুদাস বানিয়ে রাখার ব্যাপারে রাজা-বাদশা ও পূজারীগণ পরস্পর সাহায্য করতো । একদিকে সরকার পূজারীদের পৃষ্ঠপোকতা করতো এবং অন্যদিকে পূজারীগণ জনগণের মনে এ ধারণা বদ্ধমূল করে দিত যে, রাজা-বাদশাহরাও ‘আল্লাহর’ মধ্যে গণ্য; তারা দেশ ও প্রজাদের একচ্ছত্র মালিক, তাদের মুখের কথাই আইন এবং প্রজাদের জান-মালের ওপর তাদের যা ইচ্ছা করার অধিকার আছে। শুধু এতটুকুই নয়, রাজা -বাদশাহের সামনে (সিজদায় মাথা নত করা সহ) তাদের বন্দেগীর যাবতীয় অনুষ্ঠানই পালন করা হতো -যেন প্রজাদের মন-মগযের ওপর তাদের প্রভুত্বের ছাপ স্থায়ীভাবে অংকিত হয়ে যায়। <br />
এহেন পরিবেশের মধ্যে এবং এ জাতির কোনো এক বংশে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের জন্ম। আরও মজার ব্যাপার এই যে, যে বংশে তাঁর জন্ম হয়েছিল, সেই বংশটাই ছিল পেশাদার ও বংশানুক্রমিক পূজারী। তাঁর বাপ-দাদা ছিলেন আপন বংশের পন্ডিত-পুরোহিত ব্রাহ্মণ।কাজেই একজন ব্রাক্ষণ সন্তানের পক্ষে যেরূপ শিক্ষা -দীক্ষা লাভ করা সম্ভব, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামও ঠিক তাই লাভ করলেন। সেই ধরনের কথা-বার্তা শৈশবকাল হতেই তাঁর কানে প্রবেশ করতো। তিনি তার ভাই -ভগ্নীদের মধ্যে পীর ও পীরজাদাদের মতো আড়ম্বর এবং বড়লোকী চাল-চলন দেখতে পেতেন। স্থানীয় মন্দিরের পৌরহিত্যের মহাসম্মানিত গদি তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল। সেই গদিতে বসলে তিনি অনায়াসেই ‘জাতির নেতা’ হয়ে বসতে পারতেন। তাঁর গোটা পরিবারের জন্য চারদিকে থেকে যেসব ভেট-বেগাড় আর নযর -নিয়াজ জড়ো হতো, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের জন্যও তা বর্তমান ছিল। দেশের লোক নিজেদের চিরকালীন অভ্যাস অনুসারে তাঁর সামনে এসে হাত জোড় করে বসার এবং ভক্তি -শ্রদ্ধা ভরে মাথানত করার জন্য প্রস্তুত ছিল। দেবতার সাথে সম্পর্ক পেতে অজ্ঞাত কথা বলার ভান করে তিনি সাধারণ কৃষক থেকে তদানীন্তন বাদশাহ পর্যন্ত সকলকে আজ্ঞানুবর্তী গোলাম বানিয়ে নিতে পারতেন। এ অন্ধকারে যেখানে সত্য জ্ঞানসম্পন্ন সত্যের অনুসারী একজন মানুষ কোথাও ছিল না সেখানে একদিকে তাঁর পক্ষে সত্যের আলো লাভ করা যেমন সম্ভবপর ছিল না তেমনি ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক উভয় দিক দিয়েই এ বিরাট স্বার্থের ওপর পদাঘাত করে নিছক সত্যের জন্য দুনিয়া জোড়া বিপদের গর্ভে ঝাপিয়ে পড়তে প্রস্তুত হওয়াও কোনো সাধারণ লোকের পক্ষে সম্ভব ছিল না। <br />
কিন্তু হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কোনো সাধারণ মানুষ ছিলেন না।তাঁকে ‘স্বতন্ত্র মাটি’ দ্বারাই সৃষ্টি করা হয়েছিল। জ্ঞান হওয়ার সাথে সাথেই তিনি ভাবতে শুরু করলেন চন্দ্র, সূর্য, তারকা নিতান্ত গোলামের মতই উদয়-অস্তের নিয়ম অনুসরণ করছে, মূর্তি তো মানুষের নিজের হাতে পাথর দিয়ে গড়া, দেশের বাদশাহ আমাদের ন্যায় একজন সাধারণ মানুষ, এরা রব হতে পারে কেমন করে ? যেসব জিনিস নিজের ইচ্ছায় এতটুও নড়তে পারে না, নিজের সাহায্য করার ক্ষমতাও যেসবের মধ্যে নেই, জীবন ও মৃত্যুর ওপর যাদের বিন্দুমাত্র হাত নেই, তাদের সমনে মানুষ কেন মাথা নত করবে ? মানুষ কেন তাদের দাসত্ব ও পুজা -উপাসনা করবে ? প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির জন্য তাদের গোলামীই বা কেন করবে ? আকাশ ও পৃথিবীতে যত কিছুই আমরা দেখতে পাই, যেসব জিনিস সম্পর্কে কোন না কোন ভাবে আমরা ওয়াকিফহাল, তার মধ্যে একটি জিনিসও স্বাধীন নয়, নিরপেক্ষ নয়, অক্ষয়- চিরস্থায়ীও নয়। এদের প্রত্যেকটিরই অবস্থা যখন এরুপ তখন এরা মানুষের 'রব বা প্রভু' কিরুপে হতে পারে ?এদের কেউই যখন আমাকে সৃষ্টি করেনি, আমার জীবন-মৃত্যু ও লাভ-ক্ষতির এখতিয়ার যখন এদের কারো হাতে নেই,আমার রিযিক ও জীবিকার চাবিকাঠি যখন এদের কারো হাতে নয়, তখন এদের কাউকেও আমি ‘রব’ বলে স্বীকার করবো কেন ? এবং তার সামনে মাথা নত করে দাসত্ব ও উপসনাই বা কেন করবো ? বস্তুত আমার ‘রব’ কেবল তিনিই হতে পারেন যিনি সবকিছুই সৃষ্টি করেছেন, সকলেই যার মুখাপেক্ষী এবং যার হাতে সকলেরই জীবন -মৃত্যু ও লাভ -ক্ষতির উ ৎস নিহিত রয়েছে। এসব কথা ভেবে হযরত ইরাহীম (আ) জাতির উপাস্য মূর্তিগুলোকে পূজা না করে বরং পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত করলেন এবং এ সিদ্ধান্তে পৌছেই তিনি উদাত্ত কন্ঠে ঘোষণা করলেনঃ <br />
إِنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ <br />
‘‘তোমরা যাদেরকে আল্লাহর শরীক বলে মনে কর তাদের সাথে আমরা কোন সম্পর্ক নেই।” - সূরা আল আন'আমঃ ৭৮ <br />
إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ <br />
‘‘আমি সবদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বিশেষভাবে কেবল সেই মহান সত্ত্বাকেই ইবাদাত - বন্দেগীর জন্য নির্দিষ্ট করলাম যিনি সমস্ত আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই।’’ - সূরা আল আন'আমঃ ৭৯ <br />
এ বিপ্লবাত্মক ঘোষণার পর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ওপর বিপদ - মুসিবতের পাহাড় ভেংগে পড়লো। পিতা বললেন, আমি তোমাকে পরিত্যাগ করবো, বাড়ী হতে তাড়িয়ে দেব। সমগ্র জাতি বলে ওঠলো আমরা কেউ তোমাকে আশ্রয় দেব না। স্থানীয় সরকার ও তার বিরুদ্ধে লেগে গেল, বাদশাহর সামনে মামলা দায়ের করা হলো, কিন্তু হযরত ইবরাহীম আলাহীস সালাম একাকী এবং নিঃসংগ হয়েও সত্যের জন্য সকলের সামনেই মাথা উঁচু করে দাঁড়ালেন। পিতাকে বিশেষ সম্মানের সাথে বললেন: ‘‘আমি যে জ্ঞান লাভ করেছি। আপনি তা আদৌ জানেন না। কাজেই আমি আপনাদের কথা শুনবো না, তার পরিবর্তে আমার কথা আপনাদের সকলের শোনা উচিত।” <br />
জাতির লোকদের হুমকির উত্তরে নিজ হাতে সবগুলো মূর্তি ভেংগে ফেলে তিনি প্রমাণ করলেন যে, তোমরা যাদের পূজা করো, তাদের কোন ক্ষমতা নেই। বাদশাহর প্রকাশ্য দরবারে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বললেনঃ “তুমি আমার ‘রব’ নও, আমার ‘রব’ তিনিই যাঁর মুষ্ঠিতে তোমার আমার সকলেরই জীবন ও মৃত্যু নিহিত রয়েছে এবং যাঁর নিয়মের কঠিন বাঁধনে চন্দ্র, সূর্য সবই বন্দী হয়ে আছে।” রাজ দরবার থেকে শেষ পর্যন্ত ফয়সালা হলো, ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে জীবন্ত জ্বালিয়ে ভষ্ম করা হবে। কিন্তু ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দিল ছিল পর্বত অপেক্ষা অধিকতর শক্ত - একমাত্র আল্লাহর ওপরেই ছিল তাঁর ভরসা। তাই এ ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করতেও তিনি অকুন্ঠ চিত্তে প্রস্তুত হলেন। অতপর আল্লাহ তাআলা যখন তাঁকে কাফেরদের অগ্নিকুন্ড হতে মুক্তি দিয়েছিলেন তখন তিনি জন্মভুমি , জাতি, আত্মীয়-বান্ধব সবকিছু পরিত্যাগ করে শুধু নিজের স্ত্রী ও ভ্রাতুষ্পুত্রকে সাথে নিয়ে পথে পথে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। যার জন্য ঘরে পৌরোহিত্যের গদি অপেক্ষা করছিলো, সেই গদিতে বসে যিনি গোটা জাতির পীর হয়ে যেতে পারতেন এবং সেই গদিকে যিনি বংশানুক্রমিকভাবে নিজের সম্পত্তি বানিয়ে নিতে পারতেন, তিনি নিজের ও নিজের সন্তান সন্তুতির জন্য নির্বাসন, সহায়-সম্বল হীনতার নিদারুণ দুঃখ- মসিবতকেই শ্রেয় মনে করে গ্রহণ করলেন। কারণ দুনিয়াবাসীকে অসংখ্য ‘মিথ্যা রবের’ দাসত্ব নিগড়ে বন্দী করে সুখের জীবন যাপন করা তিনি মাত্রই বরদাশত করতে পারলেন না। বরং তার পরিবর্তে তিনি একমাত্র প্রকৃত রবের দাসত্ব কবুল করে সমগ্র দুনিয়াকে সেই দিকে আহ্বান জানাতে লাগলেন এবং এ ‘অপরাধে’ (?) তিনি কোথাও একটু শান্তিতে বসবাস করতে পারলেন না। <br />
জন্মভূমি থেকে বের হয়ে হযরত ইবরাহীম (আ) সিরিয়া, ফিলিস্তিন, মিসর এবং আরব দেশসমূহে ঘুরতে -ফিরতে লাগলেন। এই ভ্রমণ ব্যাপদেশ তাঁর ওপর অসংখ্য বিপদ এসেছে, ধন-সম্পদ বা টাকা-পয়সা তার সাথে কিছু ছিল না। বিদেশে গিয়েও তিনি রুযি-রোযগার করার জন্য একটু চিন্তা-ভাবনা করেন নি। রাত দিন তিনি কেবল একটি চিন্তা করতেন , দুনিয়ার মানুষকে অসংখ্য রবের গোলামীর নাগপাশ থেকে মুক্ত করে কিরূপে একমাত্র আল্লাহর বান্দায় পরিণত করা যেতে পারে। এ খেয়াল ও চিন্তা -ভারাক্রান্ত মানুষটিকে যখন তাঁর পিতা এবং নিজ জাতি মোটেই সহ্য করলো না, তখন তাঁকে আর কে বরদাশত করতে পারে? কোন্ দেশের লোক তাঁকে আদর -অভ্যর্থনা জানাবে? সকল স্থানে সেই একই ধরনের মন্দিরের পুরুহিত আর খোদায়ীর দাবীদার রাজা- বাদশাহরাই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল এবং সর্বত্র একই ধরনের অজ্ঞ- মূর্খ জনসাধারণ বাস করতো, যারা এ ‘মিথ্যা খোদাদের’ গোলামীর জালে বন্দী হয়ে ছিল। এদের মধ্যে এমন ব্যক্তি কি করে শান্তিতে দিন কাটাতে পারে, যিনি নিজের রব ছাড়া অন্য কারো গোলামী করতে প্রস্তুত ছিলেন না। যিনি অন্য লোকদেরও বলে বেড়াতেন যে, আল্লাহ ছাড়া তোমাদের আর কেউ মালিক, মনিব ও প্রভু নেই, সকলের প্রভুত্ব ও খোদায়ীর আসন চূর্ণ করে কেবলমাত্র আল্লাহর বান্দারূপে জীবনযাপন কর। ঠিক এ কারণেই হযরত ইবরহীম আলাইহিস সালাম কোথাও শান্তিতে বসবাস করতে পারেননি। বছরের পর বছর ধরে তিনি উদভ্রান্ত পথিকের ন্যায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। কখনও কেনানের জনপদে, কখনও মিসরে এবং কখনও আরবের মরুভুমিতে গিয়ে পৌঁছেছেন। এভাবেই তাঁর গোটা যৌবনকাল অতিবাহিত হয়ে গেল, কালো চুল সাদা হয়ে গেল। <br />
জীবনের শেষ ভাগে নব্বই বছর পূর্ণ হতে যখন মাত্র চারটি বছর বাকী ছিল এবং সন্তান লাভের কোনো আশাই যখন ছিল না তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সন্তান দান করলেন। কিন্তু তখনও এ আল্লাহর বান্দা এতটুকু চিন্তিত হয়ে পাড়েননি যে, নিজের জীবনটা তো আশ্রয়হীনভাবে কেটে গেছে, এখন অন্তত ছেলে পেলেদেরকে একটু রুজী- রোযগারের যোগ্য করে তুলি। না, এসব চিন্তা তাঁর মনে উদয় হয়নি। বরং এ বৃদ্ধ পিতার মনে একটি মাত্র চিন্তাই জেগেছিল , তা এই যে, যে কর্তব্য সাধনে তিনি নিজের জীবন অতিবিহিত করেছেন, তাঁর মৃত্যুর পর সেই কর্তব্য পালন করার এবং তাঁর দাওয়াত চারদিকে প্রচার করার মতো লোকের বিশেষ অভাব রয়েছে। ঠিক এ জন্য তিনি আল্লাহর কাছে সন্তান কামনা করেছিলেন এবং আল্লাহ যখন তাঁকে সন্তান দান করলেন, তখন তিনি তাকে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর কাজ চালিয়ে যাবার উপযোগী করে গড়ে তুলতে চেষ্টা করলেন। এ পূর্ণ মানুষটির জীবন একজন সত্যিকার মুসলমানের আদর্শ জীবন ছিল। যৌবনের সূচনাতেই - বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই যখন তিনি তাঁর রবকে চিনতে পারলেন তখন আল্লাহ তাকে বলেছিলেনঃ أَسْلِمْ - ইসলাম গ্রহণ কর - স্বেচ্ছায় আমার কাছে আত্মসমর্পণ কর, আমার দাসত্ব স্বীকার করো। তিনি তখন উত্তরে পরিষ্কার ভাষায় বলেছিলেনঃ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ - আমি ইসলাম কবুল করলাম। আমি সারাজাহানের প্রভুর উদ্দেশ্যে নিজেকে উৎসর্গ করলাম, নিজেকে তার কাছে সোপর্দ করলাম। সমগ্র জীবন ভরে একথা ও এ ওয়াদাকে এই সাচ্চা মানুষটি সবদিক দিয়ে পূর্ণ করে দেখিয়েছেন। তিনি রাব্বুল আলামিনের জন্য শত শত বছরের পৈত্রিক ধর্ম এবং তার যাবতীয় আচার অনুষ্ঠান ও আকীদা - বিশ্বাস পরিত্যাগ করেছেন। পৌরহিত্যের গদিতে বসলে তিনি যেসব সুযোগ - সুবিধা লাভ করতে পারতেন তা সবই তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। নিজের বংশ - পরিবার, নিজের জাতি ও মাতৃভূমি ত্যাগ করেছেন। নিজের জীবনকে উপেক্ষা করে আগুনের বুকে ঝাঁপ দিয়েছেন। দেশত্যাগ ও নির্বাসনের দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছেন, দেশের পর দেশ পরিভ্রমণ করেছেন, নিজের জীবনের এক একটি মূহুর্তকে রাব্বুল আলামীনের দাসত্ব অনুগত্যের কাজে এবং তাঁর দ্বীন ইসলামের প্রচারে কাটিয়েছেন। বৃদ্ধ বয়সে যখন সন্তান লাভ হলো তখন তাঁর জন্যও এ ধর্ম এবং এ কর্তব্যই নির্ধারিত করলেন। কিন্তু এসব কঠিন পরীক্ষার পর আর একটি শেষ ও কঠিন পরীক্ষা অবশিষ্ট রয়ে গিয়েছিল। যে পরীক্ষায় উত্তির্ণ না হওয়া পর্যন্ত হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সব কিছু অপেক্ষা রাব্বুল আলামীনকেই বেশী ভালবাসেন কিনা, তার ফয়সালা হতে পারতো না। সেই কঠিন এবং কঠোর পরীক্ষার সামনে এসে পড়লো। বৃদ্ধ বয়সে একেবারে নিরাশ হয়ে যাওয়ার পর তাঁর যে সন্তান লাভ হয়ে ছিল, সেই একমাত্র সন্তানকেও আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী করতে পারেন কিনা, তারই পরীক্ষা নেয়া হলো। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এ পরীক্ষায়ও উত্তীর্ন হলেন এবং আল্লাহর নির্দেশ লাভ করার সাথে সাথে যখন তিনি নিজের পুত্রকে নিজের হাতে যবেহ করতে প্রস্তুত হলেন, তখন চূড়ান্তরূপে ঘোষণা করা হলো যে, এখন তুমি প্রকৃত মুসলিম হওয়ার দাবীকে সত্য বলে প্রমাণ করেছো। আল্লাহর কাছেও তাঁর এ কুরবানী কবুল হলো এবং তাকে বলে দেয়া হলো যে, এখন তোমাকে সারা দুনিয়ার ইমাম বা নেতা বানিয়ে দেয়া যেতে পারে - এখন তুমি সেই জন্য সম্পূর্ণরূপে যোগ্য হয়েছো। কুরআন শরীফের নিম্নলিখিত আয়াতে একথাই বলা হয়েছেঃ <br />
وَإِذِ ابْتَلَى إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا قَالَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ <br />
“এবং যখন ইবরাহীমকে তার ‘রব’ কয়েকটি ব্যাপারে পরীক্ষা করলেন এবং সে সেই পরীক্ষায় ঠিকভাবে উত্তীর্ণ হলো তখন তাকে জানিয়ে দেয়া হলো যে, আমি তোমাকে সমগ্র মানুষের ইমাম (অগ্রবর্তী নেতা) নিযুক্ত করেছি। তিনি বললেন, আমার বংশধরদের প্রতিও কি এ হুকুম ? আল্লাহ তায়ালা বললেনঃ যালেমদের জন্য আমার ওয়াদা প্রযোজ্য নয়।” - সূরা আল বাকারাঃ ১২৪ <br />
এভাবে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে দুনিয়ার নেতৃত্ব দান করা হলো এবং তাঁকে ইসলামের বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের ‘নেতা’ নিযুক্ত করা হলো। এখন এ আন্দোলনকে অধিকতর সম্প্রসারিত করার জন্য এবং বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব গ্রহণ করে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার জন্য তাঁর কয়েকজন সহকর্মী একান্ত আবশ্যক হয়ে পড়লো। এ ব্যাপারে তিন ব্যক্তি হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ‘দক্ষিণ হাত’ স্বরূপ কাজ করেছেন। একজন তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র হযরত লূত আলাইহিস সালাম, দ্বিতীয় তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম যিনি - আল্লাহ তাঁর জীবন চান জানতে পেরে অত্যন্ত খুশী ও আগ্রহের সাথে - যবেহ হবার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন এবং তৃতীয় হচ্ছেন তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র হযরত ইসহাক আলাইহিস সালাম। <br />
ভ্রাতুষ্পুত্রকে তিনি ‘সাদুম’ (ট্রান্স জর্দান) এলাকায় বসালেন। এখানে সেকালের সর্বাপেক্ষা ইতর - লম্পট জাতি বাস করতো। সেখানে একদিকে সেই জাতির নৈতিকতার সংস্কার সাধন এবং সেই সাথে দূরবর্তী এলাকাসমূহেও ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোই ছিল তাঁর কাজ। ইরান, ইরাক এবং মিসরের ব্যবসায়ী দল এ এলাকা দিয়েই যাতায়াত করতো। কাজেই এখানে বসে উভয় দিকেই ইসলাম প্রচারের কাজ সুষ্ঠু রূপে সম্পন্ন করা তাঁর পক্ষে বিশেষ সুবিধাজনক হয়েছিল। <br />
কনিষ্ঠ পুত্র হযরত ইসহাক আলাইহিস সালামকে তিনি কেনান বা ফিলিস্তিন এলাকায় রাখলেন। এটা সিরিয়া ও মিসরের মধ্যবর্তী স্থান, তদুপরি এটা সমূদ্র - উপকূলবর্তী এলাকা বলে এখান থেকেই অন্যান্য দেশ পর্যন্ত ইসলামের আওয়াজ পৌঁছানো সহজ ছিল। এ স্থান থেকেই হযরত ইসহাক আলাইহিস সালামের পুত্র হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম যার নাম ছিল ইসরাঈল এবং পৌত্র হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের মারফতে ইসলামী আন্দোলন মিসর পর্যন্ত পোঁছেছিল। <br />
জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে হিজাযের মক্কা নগরীতে বসালেন এবং দীর্ঘকাল যাবত নিজেই তাঁর সাথে থেকে আরবের কোণে কোণে ইসলামের শিক্ষা বিস্তার করেছিলেন। তারপর এখানেই পিতা-পুত্র দু’জনে মিলে ইসলামী আন্দোলনের বিশ্ববিখ্যাত কেন্দ্র খানায়ে কা’বা প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহ তায়ালা নিজেই এ কেন্দ্র নির্দিষ্ট করেছিলেন, নিজেই এটা গড়ে তোলার স্থান ঠিক করেছিলেন। খানায়ে কা’বা সাধারণ মসজিদের ন্যায় নিছক ইবাদাতের স্থান নয়, প্রথম দিন থেকেই এটা দীন ইসলামের বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের প্রচার কেন্দ্ররূপে নির্ধারিত হয়েছিল। এ কা’বা ঘর নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল এই যে, পৃথিবীর দূরবর্তী অঞ্চলসমূহ থেকে এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী সকল মানুষ এখানে এসে মিলিত হবে এবং সংঘবদ্ধ ভাবে এক আল্লাহর ইবাদাত করবে, আবার এখান থেকেই ইসলামের বিপ্লবী পয়গাম নিয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবে। বিশ্ব মুসলিমের এ সম্মেলনেরই নাম হলো ‘হজ্জ’। এ ইবাদাত কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা কি করে হলো, কোন সব পূত ভাবধারা এবং দোআ প্রার্থনা সহকারে পিতা-পুত্র মিলে এ ইমারত তৈরী করেছিলেন আর ‘হজ্জ’ কিভাবে শুরু হলো তার বিস্তারিত বিবরণ কুরআন শরীফে বর্ণিত হয়েছেঃ <br />
إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِلْعَالَمِينَ - فِيهِ آَيَاتٌ بَيِّنَاتٌ مَقَامُ إِبْرَاهِيمَ وَمَنْ دَخَلَهُ كَانَ آَمِنًا <br />
“মানুষের জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর নির্দিষ্ট করা হয়েছিল তা মক্কার ঘর তাতে সন্দেহ নেই। এটা অত্যন্ত পবিত্র, বরকতপূর্ণ এবং সারা দুনিয়ার জন্য হেদায়াতের কেন্দ্রস্থল। এতে আল্লাহর প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহ বর্তমান রয়েছে, ‘মাকামে ইবরাহীম’ রয়েছে এবং যে-ই এখানে প্রবেশ করবে সেই নিরাপদে থাকবে।” - সূরা আলে ইমরানঃ ৯৬-৯৭ <br />
أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا جَعَلْنَا حَرَمًا آَمِنًا وَيُتَخَطَّفُ النَّاسُ مِنْ حَوْلِهِمْ <br />
“আমরা মানুষের জন্য কিরূপে বিপদশূন্য ও শান্তিপূর্ণ হেরেম তৈরী করেছি তা কি তারা দেখতে পায়নি? অথচ তার চারপাশে লোক লুন্ঠিত ও ছিনতাই হয়ে যেতো।”- সূরা আল আনকাবুতঃ ৬৭ <br />
অর্থাৎ আরবের চারদিকে যখন লুঠ -তরাজ , মার-পিট এবং যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদি অশান্তির সয়লাব বয়ে যেত তখনও এ হেরেমে সর্বদা শান্তি বিরাজ করতো। এমন কি দুর্ধর্ষ মরু বেদুঈন যদি এর সীমার মধ্যে তার পিতৃহন্তাকে দেখতে পেত, তবুও এর মধ্যে বসে তাকে স্পর্শমাত্র করতে সাহস পেত না। <br />
وَإِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِلنَّاسِ وَأَمْنًا وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى وَعَهِدْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ - وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَذَا بَلَدًا آَمِنًا وَارْزُقْ أَهْلَهُ مِنَ الثَّمَرَاتِ مَنْ آَمَنَ مِنْهُمْ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ <br />
“এবং স্মরণ কর, যখন আমরা এ ঘরকে লোকদের কেন্দ্র ও নিরাপদ আশ্রয় স্থল বানিয়েছিলাম এবং ইবরাহীমের ইবাদাতের স্থানকে ‘মুসাল্লা’ (জায়নামায) বানাবার নির্দেশ দিয়েছিলাম আর তাওয়াফকারী , অবস্থানকারী এবং নামাযীদের জন্য আমার ঘরকে পাক ও পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে নির্দেশ দিয়েছিলাম। পরে যখন ইবরাহীম দোয়া করলো, হে পালনকর্তা আপনি এ শহরকে শান্তিপূর্ণ জনপদে পরিণত করুন এবং এখানকার অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী তাদের জন্য ফল-মূল দ্বারা জীবিকার সংস্থান করে দিন।” - সূরা আল বাকারাঃ ১২৫-১২৬ <br />
وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ - رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُسْلِمَةً لَكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَا إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ - رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آَيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ <br />
“এবং স্মরণ কর, ইবরাহীম ও ইসমাঈল যখন এ ঘরের ভিত্তি স্থাপনকালে দোয়া করছিলঃ পরওয়ারদিগার ! আমাদের এ চেষ্টা কুবল কর, তুমি সবকিছু জান ও শুনতে পাও। পরওয়ারদিগার ! তুমি আমাদের দু’জনকেই মুসলিম- অর্থাৎ তোমার অনুগত কর এবং আমাদের বংশাবলী থেকে এমন একটি জাতি তৈরী কর যারা একান্তভাবে, তোমারই অনুগত হবে। আমাদেরকে তোমার ইবাদাত করার পন্থা বলে দাও, আমাদের প্রতি ক্ষমার দৃষ্টি নিক্ষেপ কর, তুমি বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়াময়। পরওয়ারদিগার! তুমি সে জাতির প্রতি তাদের মধ্য থেকে এমন একজন রাসূল পাঠাও যিনি তাদেরকে তোমার বাণী পড়ে শুনাবে, তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞানের শিক্ষা দেবে এবং তাদের চরিত্র সংশোধন করবে। নিশ্চয় তুমি সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন এবং বিজ্ঞ।” - সূরা আল বাকারাঃ ১২৭-১২৯ <br />
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَذَا الْبَلَدَ آَمِنًا وَاجْنُبْنِي وَبَنِيَّ أَنْ نَعْبُدَ الْأَصْنَامَ - رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضْلَلْنَ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ فَمَنْ تَبِعَنِي فَإِنَّهُ مِنِّي وَمَنْ عَصَانِي فَإِنَّكَ غَفُورٌ رَحِيمٌ - رَبَّنَا إِنِّي أَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُمْ مِنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ <br />
“এবং স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম দোয়া করেছিলঃ হে আল্লাহ ! এ শহরকে শান্তিপূর্ণ বানিয়ে দাও, আমাকে এবং আমার সন্তানকে মূর্তিপূজার শির্ক থেকে বাচাও। হে আল্লাহ ! এ মূর্তিগুলো অসংখ্য লোককে গোমরাহ করেছে। অতএব, যে আমার পন্থা অনুসরণ করবে সে আমার, আর যে আমার পন্থার বিপরীত চলবে -তখন তুমি নিশ্চয়ই বড় ক্ষমাশীল ও দয়াময়। পরাওয়ারদিগার ! আমি আমার বংশধরদের একটি অংশ তোমার এ মহান ঘরের নিকট, এ ধূসর মরূভূমিতে এনে পুনর্বাসিত করেছি- এ উদ্দেশ্যে যে, তারা নামাযের ব্যবস্থা কায়েম করবে। অতএব, হে আল্লাহ ! তুমি লোকদের মনে এতদূর উৎসাহ দাও যেন তারা এদের জীবিকার ব্যবস্থা করে। হয়ত এরা তোমার কৃতজ্ঞ বান্দা হবে।”-সূরা ইবরাহীমঃ ৩৫-৩৭ <br />
وَإِذْ بَوَّأْنَا لِإِبْرَاهِيمَ مَكَانَ الْبَيْتِ أَنْ لَا تُشْرِكْ بِي شَيْئًا وَطَهِّرْ بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْقَائِمِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ - وَأَذِّنْ فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ - لِيَشْهَدُوا مَنَافِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَعْلُومَاتٍ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ <br />
“এবং স্মরণ কর, যখন ইবরাহীমের জন্য এ ঘরের স্থান ঠিক করেছিলাম -একথা বলে যে, এখানে কোনো প্রকার শিরক করো না এবং আমার ঘরকে তাওয়াফকারী ও নামাযীদের জন্য পাক-সাফ করে রাখ। আর লোকদেরকে হজ্জ করার জন্য প্রকাশ্যভাবে আহবান জানাও - তারা যেন তোমার কাছে আসে, পায়ে হেঁটে আসুক কিংবা দূরবর্তী স্থান থেকে কৃশ উটের পিঠে চড়ে আসুক। এখানে এসে তারা যেন দেখতে পায় তাদের জন্য দ্বীন -দুনিয়ার কল্যানের কত সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর দেয়া জন্তুগুলোকে আল্লাহর নামে কুরবানী করবে, তা থেকে নিজেরাও খাবে এবং দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত লোকদেরও খেতে দেবে।” - সূরা আল হজ্জঃ ২৬-২৮ <br />
‘হজ্জ’ শুরু হওয়ার এটাই গোড়ার ইতিহাস। এটাকে ইসলামের পঞ্চম রোকন (স্তম্ভ) হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এ থেকে জানা গেলে যে, দুনিয়ায় যে নবী বিশ্বব্যাপী ইসলামী আন্দোলন পরিচালনার জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন, মক্কা-ই ছিল তাঁর প্রধান কার্যালয়।পবিত্র কা’বাই ছিল এর প্রধান কেন্দ্র - যেখানে থেকে ইসলাম দুনিয়ায় দূরবর্তী অঞ্চলে প্রচারিত হতো।আর দুনিয়ায় যারাই এক আল্লাহর বন্দেগী করতে চাবে এবং বাস্তব কর্মজীবনে তার আনুগত্য করে চলবে, তাঁরা যে জাতি আর যে দেশেরই অধিবাসী হোক না কেন, সকলেই একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রে প্রতি বছর এসে সমবেত হবে, এজন্য ‘হজ্জ’ করার পন্থা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এ দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়া যাবে যে, চাকা যেমন নিজ অক্ষের চতুর্দিকে ঘোরে, মুসলমানদের জীবনও তেমনি আপন কেন্দ্রেরই চতুর্দিকে আবর্তিত হয়- এ গূঢ় রহস্যেরই বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে হজ্জ। <br />
হজ্জের ইতিহাস<br />
কিভাবে এবং কোন উদ্দেশ্যে হজ্জ শুরু হয়েছিল সে কথা পূর্বের প্রবন্ধে আলোচনা করেছি। হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম মক্কায় ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন এবং তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে এখানে বসিয়ে ছিলেন, যেন তার পরে তিনি এ আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারেন, একথাও পূর্বের প্রবন্ধে বলা হয়েছে। হযরত ইসমাইল আলাইহীস সালামের পর তার বংশ ধরগণ কতকাল দীন ইসলামের পথে চলেছে তা আল্লাহ তাআলাই অবগত আছেন। কিন্তু পরবর্তী কয়েক শতাদ্বীর মধ্যেই তারা যে পূর্ববর্তী মহাপুরুষদের শিক্ষা ও প্রদর্শিত পথ ভুলে গিয়েছিল এবং অন্যান্য ‘জাহেল’ জাতির ন্যায় সর্বপ্রকার গোমরাহী ও পাপ- প্রথার প্রচলন করেছিল, তাতে সন্দেহ নেই।যে কা’বা ঘরকে কেন্দ্র করে এককালে এক আল্লাহর ইবাদাতের দাওয়াত ও প্রচার শুরু হয়েছিল, সেই কাবা ঘরে শত শত মূর্তি স্থাপন করা হলো। এমনকি, মূর্তি পূজা বন্ধ করার সাধনা ও আন্দোলনে যে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও ইসমাঈল আলাইহিস সালামের সারাটি জীবন অতিবাহিত হয়েছিল তাদের মূর্তি নির্মাণ করেও কাবা ঘরে স্থাপন করা হয়েছিল। চন্দ্র, বুধ, শুক্র, শনি ইত্যাদি গ্রহ - নক্ষত্রের পুজাও করতো। ভুত- প্রেত, ফেরেশতা এবং মৃত পূর্বপুরুষদের ‘আত্মা’র পূজাও করতো। তাদের মূর্খতা এতদূর প্রচন্ড রূপ ধারনা করেছিল যে, ঘর থেকে বের হবার সময় নিজেদের বংশের মূর্তি না পেলে পথ চলার সময় যে কোনো রঙীন পাথর দেখতে পেতো তারা তারই পূজা শুরু করতো। পাথর না পেলে পানি ও মাটির সংমিশ্রণে একটি প্রতিমূর্তি বানিয়ে তার ওপর ছাগ দুগ্ধ ছিটিয়ে দিলেই তাদের মতে সেই নিস্প্রাণ পিন্ডটি খোদা হয়ে যেত এবং এরই পুজা করতো । যে পৌরোহিত্য ও ঠাকুরবাদের বিরুদ্ধে তাদের ‘পিতা’ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সমগ্র ইরাকের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, তা-ই আবার তাদের ঘরে প্রবেশ করেছিল, কা’বাকে তারা মূর্তিপূজার আড্ডাখানা বানিয়ে নিজেরাই সেখানকার পুরোহিত সেজেছিল। হজ্জকে তারা ‘তীর্থযাত্রা’র অনুরূপ বানিয়ে তাওহীদ প্রচারের কেন্দ্রস্থল কা’বা ঘর থেকে মূর্তিপূজার প্রচার শুরূ করেছিল এবং পূজারীদের সর্বপ্রকার কলা -কৌশল অবলম্বন করে আরবের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকদের কাছ থেকে ‘নযর- নিয়ায ও ভেট - বেগাড়’ আদায় করতো এভাবে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম যে মহান কাজ শুরু করেছিলেন, তা সবই বিনষ্ট হয়ে গেল। <br />
এ ঘোর জাহেলী যুগে হজ্জের যে চরম দুর্গতি হয়েছিল একটি ব্যাপার থেকে তা ষ্পষ্টরূপে অনুমান করা যায়। মক্কায় একটি বার্ষিক মেলা বসতো, আরবের বড় বড় বংশ ও গোত্রের কবি কিংবা ‘কথক’ নিজ নিজ গোত্রের খ্যাতি, বীরত্ব, শক্তি, সম্মান ও বদান্যতার প্রশংসায় আকাশ- বাতাস মুখরিত করে তুলতো এবং পারষ্পরিক গৌরব ও অহংকার প্রকাশের ব্যাপারে রীতিমত প্রতিযোগিতা করতো। এমন কি অপরের নিন্দার পর্যায়ও এসে যেত । সৌজন্য ও বদান্যতার ব্যপারেও পাল্লা দেয়া হতো। প্রত্যেক গোত্র -প্রধান নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করার জন্য ডেগ চড়াতো এবং একে অন্যকে হেয় করার উদ্দেশ্যে উটের পর উট যবেহ করতো। এ অপচয় ও অপব্যয়ের মূলে তাদের একটিমাত্র লক্ষ্য ছিল ; তা এই যে, এ সময় কোনো বদান্যতা করলে মেলায় আগত লোকদের মাধ্যমে আরবের সর্বত্র তাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে এবং কোন গোত্রপতি কতটি উট যবেহ করেছিল এবং কত লোককে খাইয়েছিল ঘরে ঘরে তার চর্চা শুরু হবে । এসব সম্মেলনে নাচ -গান, মদ পান, ব্যভিচার এবং সকল প্রকার নির্লজ্জ কাজ - কর্মের অনুষ্ঠান বিশেষ জাক- জমকের সাথে সম্পন্ন হতো। এ উৎসবের সময় এক আল্লাহর দাসত্ব করার কথা কারো মনে জাগ্রত হতো কিনা সন্দেহ। কা’বা ঘরের চতুর্দিকে তাওয়াফ করা হতো। কিন্তু তার পদ্ধতি বিকৃত হয়ে গিয়েছিল । নারী - পুরুষ সকলেই উলংগ হয়ে একত্রে ঘুরতো আর বলতো আমরা আল্লাহর সামনে এমন অবস্থায় যাব, যেমন অবস্থায় আমাদের মা আমাদেরকে প্রসব করেছে। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের প্রতিষ্ঠিত মসজিদে ‘ইবাদাত’ করা হতো একথা ঠিক; কিন্তু কিভাবে ? খুব জোরে হাততালি দেয়া হতো, বাঁশি বাজান হতো, শিংগায় ফুঁ ৎকার দেয়া হতো। আল্লাহর নামও যে সেখানে নেয়া হতো না, এমন নয়। কিন্তু কিরূপে ? তারা বলতো: <br />
لَبَّيْكَ اللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ إِلاَّ شَرِيْكاً هُوَ لَكَ تَمْلِيْكُهُ وَمَا مَلَكَ <br />
“আমি এসেছি হে আমার আল্লাহ ! আমি এসেছি, তোমার কেউ শরীক নেই ; কিন্তু যে তোমর আপন,সে তোমার অংশীদার। তুমি তারও মালিক এবং তার মালিকানারও মালিক।” <br />
আল্লাহর নামে সেখানে কুরবানীও দেয়া হতো। কিন্তু তার পন্থা ছিল কত নিকৃষ্ট ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ। কুরবানীর রক্ত কা’বা ঘরের দেয়ালে লেপে দিত এবং এর গোশত কা’বার দুয়ারে ফেলে রাখতো। কারণ, তাদের ধারণা মতে আল্লাহ এসব রক্ত ও গোশত তাদের কাছ থেকে কবুল করছেন (নাউযুবিল্লাহ)। হযরত ইবরাহীম আলাহিস সালামের সময়ই হজ্জের চার মাসে রক্তপাত হারাম করে দেয়া হয়েছিল এবং এ সময় সকল প্রকার যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পরবর্তী - কালের লোকেরা এ নিষেধ অনেকটা মেনে চলেছে বটে ; কিন্তু যুদ্ধ করতে যখন ইচ্ছা হতো, তখন তারা এক বছরের নিষিদ্ধ মাসগুলোকে ‘হালাল’ গণ্য করতো এবং পরের বছর তারা ‘কাযা’ আদায় করতো। <br />
এছাড়া অন্যান্য যেসব লোক নিজ ধর্মের প্রতি নিষ্ঠাবান ছিল তারাও নিতান্ত মূর্খতার কারণে আশ্চর্য রকমের বহু রীতিনীতির প্রচলন করেছিল। একদল লোক কোনো সম্বল না নিয়ে হজ্জ যাত্রা করতো এবং পথে ভিক্ষা মেগে দিন অতিবাহিত করতো। তাদের মতে এটা খুবই পুণ্যের কাজ ছিল। মুখে তারা বলতো -“আমরা আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করেছি, আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করার জন্য যাচ্ছি- দুনিয়ার সম্বল নেয়ার প্রয়োজন কি ?” হজ্জে গমনকালে ব্যবসা করা কিংবা কামাই - রোযগারের জন্য শ্রম করাকে সাধারণত নাজায়েয বলেই ধারণা করা হতো। অনেক লোক আবার হজ্জের সময় পানাহার পর্যন্ত বন্ধ করে দিত এবং এরূপ করাকেও তারা ইবাদত বলে মনে করতো। কোনো কোনো লোক হজ্জে যাত্রা করলে কথাবার্তা পর্যন্ত বন্ধ করে দিত। এর নাম ছিল ‘হজ্জে মুছমিত’ বা ‘বোবা হজ্জ’। এভাবে আরও যে কত প্রকার ভ্রান্ত ও কুপ্রথার প্রচলন হয়েছিল তার ইয়ত্তা নেই। সেগুলোর বিস্তারিত বিবরণ লিখে সময় নষ্ট করতে চাই না। <br />
এরূপ ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা কম- বেশী দু’ হাজার বছর পর্যন্ত ছিল। এ দীর্ঘ সময়ে আরব দেশে কোন নবীর আবির্ভাব হয়নি, আর কোনো নবীর প্রকৃত শিক্ষাও সেই দেশে পৌছেনি। অবশেষে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দোয়া পুর্ণ হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসলো। তিনি কা’ বা ঘর প্রতিষ্ঠার সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেনঃ “হে আল্লাহ !এ দেশে একজন নবী এ জাতির মধ্য থেকেই প্রেরণ কর, যে এসে তাদেরকে তোমার বাণী শুনাবে ; জ্ঞান ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দেবে এবং তাদের নৈতিক চরিত্র সংশোধন করবে।” এ দোয়া আল্লাহর কাছে মঞ্জুর হয়েছিল, তাই তাঁরই অধস্তন পুরুষে একজন কামেল ইনসান’ আবির্ভুত হলেন, যাঁর পাক নাম মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম ইবনে আবদুল্লাহ। <br />
হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যেরূপ পূজারী ও পুরোহিতের বংশে জন্মলাভ করেছিলেন, এ ‘কামেল ইনসান’ হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও অনুরূপ এমন এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন- শতাব্দীকাল ধরে যারা কা’বা ঘরের পৌরোহিত্য করে আসছিল। একচ্ছত্রভাবে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যেরূপ আপন বংশের পৌরোহিত্যবাদের ওপর আঘাত হেনেছিলেন, শেষ নবী হযরাত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ঠিক তেমনি প্রচন্ড আঘাত হেনেছিলেন নিজ বংশীয় পৌরোহিত্য ও পন্ডিতগিরির ওপর। শুধু তাই নয়, তাঁর আঘাতে তা একেবারে মূলোৎপাটিত হয়েছিল। হযরত ইবারাহীম আলাইহিস সালাম যেমন বাতিল মতবাদ ও সমগ্র মিথ্যা খোদায়ী ধ্বংস করা এবং এক আল্লাহর প্রভুত্ব কায়েম করার উদ্দেশ্যে চেষ্টা করেছিলেন, শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তাই করেছিলেন। তিনি হযরত ইবারাহীম আলাইহিস সালামের প্রচারিত প্রকৃত ও নির্মল দ্বীন ইসলামকে পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। একুশ বছরের চেষ্টায় তার এসব কাজ যখন পূর্ণতা লাভ করে তখন আল্লাহ তায়ালার হুকুমে কা’বা ঘরকেই তিনি সমগ্র দুনিয়ায় এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীদের কেন্দ্ররূপে স্থাপনের কথা ঘোষণা করলেন এবং দুনিয়ার সকল দিক থেকেই হজ্জ করার জন্য কা’বা ঘরে এসে জমায়েত হওয়ার আহবান জানালেনঃ <br />
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ <br />
“মানুষের ওপর আল্লাহর হক এই যে, এ কা’বা ঘর পর্যন্ত আসার সামর্থ যাদের আছে তারা হজ্জ করার জন্য এখানে আসবে। যারা কুফুরী করবে (অর্থাৎ সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ করতে আসবে না), তারা জেনে রাখুক যে, আল্লাহ সৃষ্টিজগতের মুখাপেক্ষী নন।”- সূরা আলে ইমরানঃ ৯৭ <br />
এভাবে নব পর্যায়ে হজ্জ প্রবর্তন করার সাথে সাথে জাহেলী যুগে দু’ হাজার বছর যাবত প্রচলিত যাবতীয় কুসংস্কার একেবারে বন্ধ করা হলো। কা’বা গৃহের মূর্তিগুলো ভেংগে ফেলা হলো। আল্লাহ ছাড়া মূর্তির যে পূজা সেখানে হতো তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া হলো। মেলা এবং সকল প্রকার তামাশা ও উৎসব নিষিদ্ধ করে দেয়া হলো। আল্লাহর ইবাদাত করার সঠিক এবং স্বাভাবিক পদ্ধতি প্রচলন করা হলো, আল্লাহর আদেশ হলোঃ <br />
وَاذْكُرُوهُ كَمَا هَدَاكُمْ وَإِنْ كُنْتُمْ مِنْ قَبْلِهِ لَمِنَ الضَّالِّينَ <br />
“(আল্লাহর স্মরণ এবং ইবাদাত করার,) যে পন্থা আল্লাহ তোমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, ঠিক তদনুযায়ী আল্লাহর স্মরণ (ও ইবাদাত) কর যদিও এর পূর্বে তোমরা পথভ্রষ্ট ছিলে (অর্থাৎ স্মরণ ও ইবাদাত করার সঠিক পন্থা জানতে না) ” - সূরা আল বাকারাঃ ১৯৮ <br />
সকল অন্যায় ও বাজে কর্মতৎপরতা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হলোঃ <br />
فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ <br />
“হজ্জ উপলক্ষে কোনরূপ ব্যাভিচার, অশ্লীলতা, আল্লাহদ্রোহিতা, ফাসেকী কাজ এবং ঝগড়া -বিবাদ বা যুদ্ধ - বিগ্রহ করা যাবে না।” <br />
কাব্য আর কবিত্বের প্রতিযোগিতা, পূর্বপুরুষদের কাজ -কর্মের কথা নিয়ে গৌরব -অহংকার এবং পরের দোষ -ক্রটি প্রচার করা বা গালাগাল দেয়া বন্ধ করা হলোঃ <br />
فَإِذَا قَضَيْتُمْ مَنَاسِكَكُمْ فَاذْكُرُوا اللَّهَ كَذِكْرِكُمْ آَبَاءَكُمْ أَوْ أَشَدَّ ذِكْرًا <br />
“হজ্জের অনুষ্ঠানগুলো যখন সম্পন্ন হয়ে যাবে তখন তোমাদের পূর্ব-পুরুষগণ যেভাবে বাপ -দাদার স্মরণ করতো ঠিক অনুরূপ কিংবা তদপেক্ষা বেশী করে তোমরা আল্লাহর স্মরণ কর।” সূরা আল বাকারাঃ২০০ <br />
শুধু লোকদের দেখাবার জন্য বা খ্যাতি অর্জন করার যেসব বদান্যতা ও দানশীলতার গৌরব করা হতো তা সবই বন্ধ হলো এবং তদস্থলে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের আমলের পশু যবেহ করার রীতি প্রচলিত হলো। কারণ এর ফলে গরীব হাজীদেরও কুরবানীর গোশত খাওয়ার সুযোগ মিলত। <br />
“খাও, পান কর, কিন্তু অপচয় করো না ; কারণ আল্লাহ তাআলা অপচয়কারীদেরকে ভালবাসেন না।”-সুরা আল আরাফঃ ৩১ <br />
“খালেছ আল্লাহর উদ্দেশ্যেই এবং তারই নামে এ জন্তুগুলোকে যবেহ কর। যবেহ করার পর যখন প্রাণ একেবারে বের হয়ে যাবে, তখন নিজেরাও তা খাও এবং ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্ত প্রার্থীকেও খেতে দাও।”- সুরা আল হাজ্জঃ ৩৬ <br />
কুরবানীর পশুর রক্ত খানায়ে কা’বার দেয়ালে মর্দন করা এবং গোশত নিক্ষেপ করার কুপ্রথা বন্ধ হলো। পরিস্কার বলে দেয়া হলোঃ <br />
“এসব পশুর রক্ত বা গোশত আল্লাহর কাছে পৌছায় না, তোমাদের তাকওয়া এবং পরহেযগারীই আল্লাহর কাছে পৌঁছতে পারে।” সুরা আল হাজ্জঃ৩৭ <br />
উলংগ হয়ে তাওয়াফ করা একেবারে নিষিদ্ধ হয়ে গেল এবং বলা হলোঃ “হে নবী! আপনি তাদেরকে বলে দিন যে, আল্লাহ তার বান্দাহদের জন্য যেসব সৌন্দর্যবর্ধক জিনিস (অর্থ্যাৎ পোশাক পরিচ্ছদ) মনোনীত করেছেন, তা কে হারাম করলো? ”- সূরা আল আরাফঃ ৩২ <br />
“হে নবী ! আপনি বলে দিন যে, আল্লাহ কখনও নির্লজ্জতার হুকুম দেন না।”- সূরা আল আরাফঃ ৬৮ <br />
“হে আদম সন্তান! সকল ইবাদাতের সময় তোমাদের সৌন্দর্য গ্রহণ (পোশাক পরিধান) কর।” সূরা আল আরাফঃ৩১ <br />
হজ্জের নির্দিষ্ট মাসগুলোকে উল্টিয়ে দেয়া এবং নিষিদ্ধ মাসকে যুদ্ধের জন্য ‘হালাল’ মনে করাকে বিশেষ কড়াকড়ির সাথে বন্ধ করা হলোঃ <br />
“নাসী কুফরীকে অধিকতর বাড়িয়ে দেয় (কুফরীর সাথে স্পর্ধাকে যোগ করে)। কাফেরগন এভাবে আরও অধিক গোমরাহীতে নিমজ্জিত হয়। এক বছর এক মাসকে হালাল মনে করে আবার দ্বিতীয় বছর তার বদলে আর একটি মাসকে হারাম বেঁধে নেয় -যেন আল্লাহর নিষিদ্ধ মাসগুলোর সংখ্যা সমান থাকে। কিন্তু এরূপ কাজ করলে আল্লাহর নিষিদ্ধ জিনিসকেই হালাল করা হয়।” সুরা আত তওবাঃ ৩৭ <br />
সম্বল না নিয়ে হজ্জযাত্রা করা নিষিদ্ধ হলো এবং পরিস্কার বলে দেয়া হলোঃ <br />
“হজ্জ গমনকালে সম্বল অবশ্যই নেবে। কারণ, (দুনিয়ার সফরের সম্বল না নেয়া আখেরাতের সম্বল নয়) আখেরাতের উত্তম সম্বল তো হচ্ছে তাকওয়া ।” সুরা আল বাকারাঃ ১৯৭ <br />
হজ্জের সময় ব্যবসা করা বা অন্য কোনো উপায়ে রুজি -রোযগার করা নিতান্ত অপরাধের কাজ, আর এসব না করাকেই বড় পুণ্যের কাজ মনে করা হতো। আল্লাহ তাআলা এ ভুল ধারণার প্রতিবাদ করে নাযিল করলেনঃ <br />
“(হজ্জে গমনকালে) ব্যবসা করে আল্লাহর অনুগ্রহ স্বরূপ কিছু কামাই রোযগার করলে তাতে কোন অপরাধ নেই।” -সুরা আল বাকারা ১৯৮ <br />
'বোবা’ হজ্জ এবং 'ক্ষুধার্ত -পিপাসার্ত’ হজ্জ হতেও মানুষকে বিরত রাখা হলো। শুধু তাই নয়, এছাড়া জাহেলী যুগের আরও অসংখ্য কুসংস্কার নির্মূল করে দিয়ে তাকওয়া, আল্লাহর ভয়, পবিত্রতা এবং অনাড়ম্বরতাকে মানবতার পূর্ণাংগ আদেশ বলে ঘোষনা করা হলো, হজ্জযাত্রীদেরকে নির্দেশ দেয়া হলো যে, তারা যেন ঘর থেকে বের হবার সময় নিজেদেরকে সকল প্রকার পার্থিব সম্পর্ক থেকে মুক্ত করে নেয়, নফসের খাহেশ ও লালসা যেন ত্যাগ করে, হজ্জ গমন পথে স্ত্রী-সহবাসও যেন না করে, গালাগাল, কুৎসা রটানো, অশ্লীল উক্তি প্রভৃতি জঘন্য আচরণ থেকে যেন দূরে সরে থাকে। কা’বায় পৌঁছার যত পথ আছে, প্রত্যেক পথেই একটি স্থান নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। সেই স্থান অতিক্রম করে কা’বার দিকে অগ্রসর হওয়ার পূর্বে এহরাম বেঁধে গরীবানা পোশাক পরিধান করে নেবে। এতে আমীর গরীব সকলেই সমান হবে, পৃথক কওম, গোত্র প্রভৃতির পার্থক্য ঘুচে যাবে এবং সকলেই এক বেশে- নিতান্ত দরিদ্রের বেশে এক আল্লাহর সামনে বিনয় ও নম্রতার সাথে উপস্থিত হবে। এহরাম বাঁধার পর মানুষের রক্তপাত করা তো দুরের কথা, পশু শিকার করাও নিষিদ্ধ। মানুষের মধ্য থেকে যেন কোনো যুদ্ধ -বিগ্রহ না হয়, এজন্য এ চারটি মাসকে ‘হারাম’ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে কা’বা গমনের সমস্ত পথ নিরাপদ হবে ; হজ্জ যাত্রীদের পথে কোনোরূপ বিপদের আশংকা থাকবে না। এরূপ পবিত্র ভাবধারা সহকারে তারা ‘হেরেম শরীফে’ প্রবেশ করবে- কোনো রূপ রং- তামাশা, নাচ - গান এবং মেলা আর খেলা দেখার উদ্দেশ্যে নয়। এখানে প্রতি পদে পদে আল্লাহর স্মরণ - আল্লাহর নামের যিকর, নামায, ইবাদাত ও কুরবানী এবং কাবা ঘর প্রদক্ষিণ (তাওয়াফ) করতে হয়। আর এখানে একটি মাত্র আওয়াযই মুখরিত হয়ে উঠে, ‘হেরেম শরীফের ’ প্রাচীর আর পাহাড়ের চড়াই উৎরাইয়ের প্রতিটি পথে উচ্চারিত হয়ঃ <br />
“তোমার ডাকেই হাজির হয়েছি, হে আল্লাহ !আমি এসেছি, তোমার কোন শরীক নেই, আমি তোমারই কাছে এসেছি। সকল তা’ রীফ প্রশংসা একমাত্র তোমারই জন্য। সব নেয়ামত তোমারই দান, রাজত্ব আর প্রভুত্ব সবই তোমার। তুমি একক- কেউ তোমার শরীক নেই।” <br />
এরূপ পূত -পবিত্র এবং ঐকান্তিক নিষ্ঠাপূর্ণ হজ্জ সম্পর্কে বিশ্বনবী ইরশাদ করেছেনঃ <br />
“যে ব্যক্তি খাঁটিভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করে এবং এ ব্যাপারে সকল প্রকার লালসা এবং ফাসেকী থেকে দূরে থাকে, সে সদ্যজাত শিশুর মতই (নিষ্পাপ হয়ে) ফিরে আসে।” <br />
অতপর হজ্জের কল্যাণ ও কার্যকারিতা বর্ণনা করার পূর্বে হজ্জ কি রকমের ফরয, তা বলা আবশ্যক। আল্লাহ কালামে পাকে বলেনঃ <br />
“আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছার মতো সামর্থ যার আছে, হজ্জ করা তার ওপর আল্লাহর একটি অনিবার্য নির্দিষ্ট ‘হক’। এতদসত্ত্বেও যে তা অমান্য করবে সে কাফের এবং আল্লাহ দুনিয়া জাহানের মুখাপেক্ষী নন।”- সূরা আল ইমরানঃ ৯৭ <br />
এ আয়াতেই হজ্জ করার সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ না করাকে পরিষ্কার কুফরী বলা হয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে যা বলেছেন, তার মধ্যে দু’টি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছেঃ <br />
مَنْ مَلَكَ زَادًا وَرَاحِلَةً تُبَلِّغُهُ إِلَى بَيْتِ اللَّهِ وَلَمْ يَحُجَّ فَلَا عَلَيْهِ أَنْ يَمُوتَ يَهُودِيًّا أَوْ نَصْرَانِيًّا <br />
“আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছার জন্য পথের সম্বল এবং বাহন যার আছে সে যদি হজ্জ না করে, তবে এ অবস্থায় তার মৃত্যু ইহুদী ও নাসারার মৃত্যুর সমান বিবেচিত হবে।” [তিরমিযী] <br />
مَنْ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنَ الْحَجِّ حَاجَةٌ ظَاهِرَةٌ أَوْ سُلْطَانٌ جَائِرٌ أَوْ مَرَضٌ حَابِسٌ فَمَاتَ وَلَمْ يَحُجَّ فَلْيَمُتْ إِنْ شَاءَ يَهُودِيًّا وَإِنْ شَاءَ نَصْرَانِيًّا <br />
“যার কোনো প্রকাশ্য অসুবিধা নেই, কোন যালেম বাদশাও যার পথ রোধ করেনি এবং যাকে কোন রোগ অসমর্থ করে রাখেনি - এতদসত্ত্বেও সে যদি হজ্জ না করেই মরে যায়, তবে সে ইয়াহুদী ব খৃষ্টান হয়ে মরতে পারে।” [দারেমী] <br />
হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বাখ্যা করে বলেছেনঃ <br />
“সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যারা হজ্জ করেনা ,তাদের ওপর জিজিয়া কর আরোপ করতে ইচছা হয়; কারণ তারা মুসলমান নয়,মুসলমান নয়।’’ <br />
আল্লাহ তায়ালার উল্লিখিত ইরশাদ এবং রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তারঁ খলিফার এ ব্যাখ্যা দ্বারা প্রত্যেকেই বুঝতে পারেন যে, হজ্জ করা সামান্য ফরয নয়। তা আদায় করা না করা মুসলমানদের ইচছাধীন করে দেওয়া হয়নি। বস্তুত যে সব মুসলমানদের কা’বা পর্যন্ত যাওয়া আসার আর্থিক সামর্থ আছে ,শারীরিক দিক দিয়েও যারা অক্ষম নয় তাদের পক্ষে জীবনের মধ্যে একবার হজ্জ করা অবশ্য কর্তব্য । তা না করে কিছুতেই মুক্তি নেই । দুনিয়ার যে কোণেই বাস করুক না কেন এবং যার ওপর ছেলে-মেয়ে ও কারবার কিংবা চাকরি-বাকরির যত বড় দায়িত্বই অর্পিত হোকনা কেন, সামর্থ থাকা সত্ত্বেও একজন মুসলমান যদি হজ্জকে এড়াতে চায় এবং অসংখ্য ব্যস্ততার অজুহাতে বছরের পর বছর তাকে ক্রমাগত পিছিয়ে দেয়-সময় থাকতে আদায় না করে ,তবে তার ঈমান আছে কিনা সন্দেহ । আর যাদের সমগ্র জীবনও হজ্জ আদায় করার কর্তব্য পালনের কথা মনে জাগে না , দুনিয়ার দিকে দিকে, দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায়- ইউরোপ-আমেরিকা যাতায়াতকালে হেজাযের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে -কা’বা ঘর যেখান থেকে মাত্র কয়েক ঘন্টার পথ, তবুও হজ্জ আদায় করার খেয়ালও তাদের মনে জাগ্রত হয়না -তারা কিছুতেই মুসলমান নয়; মুসলমান বলে দাবী করার কোনোই অধিকার তাদের নেই, দাবী করলেও সেই দাবী হবে মিথ্যা। আর যারা তাদেরকে মুসলমান মনে করে ,তারা কুরআন শরীফের বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ, জাহেল ।এসব লোকের মনে যদি মুসলিম জাতির জন্যে দরদ থাকে তবে থাকতে পারে ; কিন্তু তার কোনোই সার্থকতা নেই । কারণ তাদের হৃদয়-মনে আল্লাহর আনুগত্য ও তার বিধানের প্রতি ঈমানের কোনো অস্তিত্ব নেই, একথা স্বতঃসিদ্ধ । <br />
হজ্জের বৈশিষ্ট্য<br />
কুরআন শরীফে যেখানে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে হজ্জের জন্যে সাধারণ দাওয়াত দেয়ার হুকুমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে এর প্রথম কারণ হিসেবে বলা হয়েছেঃ <br />
-মানুষ এসে দেখুক যে ,এ হজ্জব্রত উদযাপনে তাদের জন্যে কি কি কল্যাণ নিহিত রয়েছে অর্থাৎ হজ্জের সময় আগমন করে কা’বা শরীফে একত্রিত হয়ে তারা নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করবে যে , তা তাদের জন্যে বস্তুতই কল্যাণ কর । কেননা এতে যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে , তা মানুষ নিজ চোখে দেখেই অনুধাবন করতে পারে।একটি বর্ণনা হতে জানা যায় যে হযরত ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহি হজ্জ করার পূর্ব পর্যন্ত ঠিক বুঝতে পারেননি যে, ইসলামি ইবাদত সমুহের মধ্যে কোনটি সর্বোত্তম; কিন্তু যখনই তিনি হজ্জ করে তার অন্তর নিহিত কল্যাণ প্রত্যক্ষ করলেন, তখন স্পষ্ট কন্ঠে বলে উঠলেন, ‘হজ্জ-ই সর্বোত্তম ইবাদত’। <br />
এখানে হজ্জের বৈশিষ্ট্য ও কল্যাণকারিতা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হচেছ। দুনিয়ার মানুষ সাধারনত দু’প্রকারের ভ্রমণ করে থাকে। এক প্রকারের ভ্রমণ করা হয় রুযি-রোযগারের জন্যে আর এক প্রকারের ভ্রমণ হয় আনন্দ-র্ষ্ফুতি ও অবসর বিনোদনের উদ্দেশ্যে। এ উভয় প্রকারের ভ্রমনেই মানুষের নিজের স্বার্থ ও প্রবৃত্তিই তাকে ভ্রমণে বের হতে উদ্বুদ্ধ করে । নিজের গরজেই ঘর-বাড়ী ত্যাগ করে , নিজের কোনো পার্থিব উদ্দেশ্যেই সন্তান সন্ততি ও আত্মীয় -স্বজন হতে দূরে চলে যায় । আর এ ধরনের সফরে সে টাকা- পয়সা যা কিছুই খরচ করে নিজের উদ্দেশ্য লাভের জন্যেই করে থাকে । কাজেই এসব সফরে মানুষকে আসলে কিছুই কুরবানী বা আত্মত্যাগ করতে হয়নি । কিন্তু হজ্জ উপলক্ষ্যে যে সফর করা হয় তা উল্লেখিত সফর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এটা নিজের কোনো গরযে কিংবা নিজের প্রবৃত্তির লালসা পূরণ করার জন্যে করা হয়না ; বস্তুত এটা করা হয় খালেছভাবে আল্লাহ তায়ালার জন্যে এবং আল্লাহর র্নিদিষ্ট উদ্দেশ্য পূর্ণ করার মানসে । এজন্যেই মানুষের মনে যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর প্রেম ভালোবাসা ও আল্লাহর ভয় জাগ্রত না হবে এবং আল্লাহর নির্ধারিত ফরযকে ফরয বলে মনে না করা হবে , ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ এ সফরে যাওয়ার জন্যে কিছুতেই উদ্যোগী হতে পারে না। কাজেই যে ব্যক্তি একটি দীর্ঘকালের জন্যে নিজের ঘর-বাড়ী, আত্বীয় -স্বজনের সাথে সর্ম্পক ত্যাগ করে এবং নিজের কারবার এর ক্ষতি, অর্থ ব্যয় ও সফরের কষ্ট স্বীকার করে হজ্জের জন্যে বের হবে ,তার এভাবে বের হওয়াই প্রমাণ করে যে তার মনে আল্লাহর ভয় ও ভালবাসা আছে । আল্লাহর ফরযকে সে ফরয বলে মনে করে এবং মানসিকভাবে সে এত দূর প্রস্তুত যে , বাস্তবিকই যদি কখনো আল্লাহর পথে বের হওয়ার প্রয়োজন হয় তখন সে অনায়াসেই গৃহ ত্যাগ করতে পারবে । কষ্ট স্বীকার করতে পারবে , নিজের ধন-সম্পদ এবং আরাম-আয়েশ সবকিছু আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্যে কুরবান করতে পারবে । <br />
এ পবিত্র ইচছা নিয়ে যখন সে হজ্জের সফরে যাবার জন্যে তৈরী হয় তখন স্বভাব -প্রকৃতি সম্পূর্ন আলাদা ধরনের হয়ে যায় । তার অন্তরে বাস্তবিকই আল্লাহর প্রেমের উদ্দিপনা স্বতঃষ্ফূর্ত হয়ে ওঠে। বস্তুত সে সেই দিকের জন্যে পাগল হয়ে ওঠে ,তার মনে তখন নেক ও পবিত্র ভাবধারা ছাড়া অন্য কিছুই জাগ্রত হতে পারেনা । <br />
সে পূর্বকৃত যাবতীয় গুনাহ থেকে তাওবা করে ,সকলের কাছে ভুল -ত্রুটির জন্যে মাপ চায় , পরের হক যা এ যাবত আদায় করেনি তা আদায় করে , কারণ ঋণের বোঝা নিয়ে আল্লাহর সামনে হাজির হওয়া সে মোটেই পছন্দ করেনা । সকল প্রকার পাপ ও অন্যায় চিন্তা থেকে তার মন পবিত্র হয়ে যায় ।স্বভাবতই তার মনের গতি মংগলের দিকেই নিবদ্ধ হয়, সফরে বের হওয়ার পর সে যতই অগ্রসর হতে থাকে ততই তার হৃদয় -মনে পৃণ্য ও পূত ভাবধারার তরংগ খেলে ওঠে । তার কোনো কাজ যেন কারো মনে কোনোরূপ আঘাত না দেয়, আর যারই যতটুকু উপকার করা যায় সেই সমস্ত চিন্তা এবং চেষ্টাই সে করতে থাকে। অশ্লীল ও বাজে কথা-বার্তা, নির্লজ্জতা, প্রতারণা-প্রবঞ্চনা এবং ঝগড়া-ফাসাদ ইত্যাদি কাজ থেকে তার প্রকৃতি স্বভাবতই বিরত থাকে। কারণ সে আল্লাহর ‘হারাম শরীফের’ যাত্রী তাই অন্যায় কাজ করে এ পথে অগ্রসর হতে সে লজ্জিত না হয়ে পারে না । তার সফরটাই যে ইবাদত, এ ইবাদতের কাজে যুলুম, আর পাপ কাজের কি অবকাশ থাকতে পারে? অতএব দেখা যাচ্ছে যে, অন্যান্য সকল প্রকার সফর থেকে এ সফর সম্পূর্ণ আলাদা। মানুষের মনকে এ সফর প্রতিনিয়ত পূত-পবিত্র করতে থাকে । সত্য বলতে গেলে এটা একটি বিরাট সংশোধনকারী কোর্স বিশেষ, প্রত্যেক হজ্জ যাত্রী মুসলমানকেই এ অধ্যায় অতিক্রম করতে হয়। <br />
সফরের একটি অংশ সমাপ্ত করার পর এমন একটি স্থান সামনে আসে যেখানে পৌছে প্রত্যেক মক্কাযাত্রী মুসলমান ‘এহরাম’ বাঁধতে বাধ্য হয় । এটা না করে কেউ সামনে অগ্রসর হতে পারে না। এই ‘এহরাম’ কি ? একটি সিলাই না করা লুংগী, একখানি চাদর এবং সিলাইবিহীন জুতা ছাড়া অন্য কিছুই নয়। এর অর্থ এই যে, এতকাল তুমি যাই থাক না কেন , কিন্তু এখন তোমাকে ফকিরের বেশেই আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে। কেবল বাহ্যিক ফকীরই নয়, প্রকৃতপক্ষে অন্তরেও ফকীর হতে চেষ্টা কর। রঙীন কিংবা জাকজমকপূর্ণ সকল পোশাক খুলে রাখ, সাদাসিধে ও দরবেশ জনোচিত পোশাক পরিধান কর। মোজা পরবে না, পা উন্মুক্ত রাখ, কোনো প্রকার সুগন্ধি ব্যবহার করবে না, চুল কেট না, সকল প্রকার অলংকার ও জাকজমক পরিহার করা। স্বামী -স্ত্রী সংগম হতে দূরে থাক, যৌন উত্তেজক কোন কাজ করো না, শিকার করো না। আর কোনো শিকারীকে শিকারের কাজে সাহায্য করো না। বাহ্যিক জীবনে যখন এরূপ বেশ ধারণ করবে তখন মনের ওপরও তার গভীর ছাপ মুদ্রিত হবে ভিতর হতেও তোমার মন সত্যিকারভাবে ‘ফকির’ হবে। অহংকার ও গৌরব দূরীভুত হবে, গরীবানা ও শান্তি -প্রিয়তার ভাব ফুটে ওঠবে। পার্থিব সুখ- সম্ভোগে লিপ্ত হওয়ার ফলে তোমার আত্মা যতখানি কলংকিত হয়েছিল তা দূর হয়ে যাবে এবং আল্লাহর বন্দেগী করার পবিত্র ভাবধারা তোমরা জীবনের ভিতর ও বাইর উভয় দিককেই মহীয়ান করে তুলবে। <br />
‘এহরাম’ বাঁধার সাথে সাথে হাজীকে একটি বিশেষ দোয়া বার বার পড়তে হয়। প্রত্যেক নামাযের পর, পথের প্রত্যেক চড়াই- উৎরাইয়ের সময়, কাফেলার সাথে মিলিত হবার সময় এবং প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠার সময়। দোআটি এইঃ <br />
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ <br />
বস্তুত হযরত ইবারাহীম আলাইহিস সালাম সাড়ে চার হাজার বছর পূর্বে আল্লাহর আদেশে (হজ্জ করার জন্য) যে সার্বজনীন আহবান জানিয়েছিলেন, তার জবাবেই এ দোয়া পাঠ করার নিয়ম হয়েছে। পঁয়তাল্লিশ শত বছর আগে, আল্লাহর এ আহ্ববানকারী ডেকে বলেছিলেনঃ “আল্লাহর বান্দাগণ! আল্লাহর ঘরের দিকে আস, পৃথিবীর প্রতি কোণ থেকে ছুটে আস। পায়ে হেটে আস, কিংবা যানবাহনে চড়ে আস।” এর জবাব স্বরূপ আজ পর্যন্ত ‘হারাম শরীফের’ প্রতিটি মুসাফির উচ্চৈস্বরে বলে ওঠেছেঃ “আমি এসেছি, হে আল্লাহ, আমি হাজির হয়েছি। কেউ তোমার শরীক নেই, আমি কেবল তোমারই আহবানক্রমে এসেছি, সব তারীফ প্রশংসা তোমারই দান, কোন কিছুতেই তোমার কেউ শরীক নেই।” <br />
এভাবে ‘লাব্বায়েকের’ প্রত্যেকটি ধ্বনির মারফত হযরত ইবারাহীম আলাইহিস সালাম ও ইসমাঈল আলাইহিস সালামের আমল থেকে প্রচলিত ইসলামী আন্দোলনের সাথে ‘হাজী’র নিবিড় সম্পর্ক স্থাপিত হয়। সাড়ে চার হাজার বছরের দূরত্ব মাঝখান হতে সরে গিয়ে একাকার হয়ে যায়। মনে হয় যেন এদিক থেকে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহর তরফ থেকে ডাকছেন, আর ওদিক থেকে প্রত্যেক হাজীই তার জবাব দিচ্ছে- জবাব দিতে দিতে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে । যতই সামনে অগ্রসর হয় ততই তার মনে প্রাণে উৎসাহ উদ্দীপনা এবং আধ্যাত্মিক ভাবের ঝর্ণাধারা অধিকতর বেগে প্রবাহিত হতে থাকে। পথের প্রত্যেক চড়াই - উৎরাইয়ের সময় তার কানে আল্লাহর আহবান ধ্বনিত হয়, আর সে তার জবাব দিতে দিতে অগ্রসর হয়। কাফেলার পর কাফেলা আসে, আর প্রত্যেকেই প্রেমিক পাগলের ন্যায় এই পয়গাম শুনে বলে উঠেঃ “আমি এসেছি, আমি হাজির হয়েছি।” প্রতিটি নূতন প্রভাত তার কাছে বন্ধুর পয়গাম বহন করে আনে,আর উষার ঝলকে চোখ খোলার সাথে সাথেই আমি এসেছি,’হে আল্লাহ! আমি হাজির হয়েছি’, বলে আওয়াজ দিতে থাকে । মোটকথা বারবার দেয়া এ আওয়াজ এহরামের গরীবানা পোশাক, সফরের অবস্থা এবং প্রত্যেকটি মঞ্জিলে কা’বা ঘরের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য নৈকট্যের ভাব উম্মাদনায় এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি হয় যে হাজী আল্লাহর অতল স্পর্শ গভীর প্রেমে আত্মমগ্ন হয়ে যায় এবং সেই এক বন্ধুর স্মরণ ভিন্ন তার জীবনের কোথাও অন্য কিছুর অস্তিত্ব থাকে না। <br />
এ অবস্থার ভিতর দিয়ে হাজী মক্কায় উপনীত হয় এবং সেখানে পৌছেই সোজা আসল লক্ষ্যস্থলের দিকে ছুটে যায়। বন্ধুর আস্তানাকে চুম্বন করে।তারপর নিজের আকীদা-বিশ্বাস, ঈমান, মতবাদ, দ্বীন ও ধর্মের কেন্দ্রস্থলের চারদিকে প্রদক্ষিণ করে ততবারই আস্তানাকে চুম্বন করে।(১)প্রত্যেক বারের তাওয়াফ কা’বা ঘরের কালো পাথর চুমু দিয়ে শুরু ও শেষ করা হয়। এখানে থেকে বের হয়ে ‘সাফা’ পর্বতে আরোহণ এবং এখান থেকে যখন কা’বা ঘরের দিকে তার দৃষ্টি পড়ে, তখন সে উচ্চস্বরে বলে ওঠেঃ <br />
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَلَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ <br />
"আল্লাহ ছাড়া আর কেউ মা’বুদ নেই, আমরা অন্য কারো বন্দেগী করি না ; আমরা কেবল একনিষ্টভাবে আল্লাহরই আনুগত্য স্বীকার করি - কাফেরদের কাছে এটা যতই অসহনীয় হোক না কেন।” <br />
অতপর ‘সাফা’ ও মারাওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যস্থলে দৌঁড়াতে হয়। এর দ্বারা হাজী একথা প্রমান করে যে, সে আল্লাহর নৈকট্য এবং তার সন্তোষ হাসিল করার উদ্দেশ্যে সবসময় এমন করে দৌড়াতে প্রস্তুত থাকবে। এ দৌড়ের সময়ও তার মুখ থেকে উচ্চারিত হতে থাকেঃ <br />
أَللَّهُمَّ اسْتَعْمَلْنِيْ بِسُنَّةِ نَبِيِّكَ وَتَوَفَّنِيْ عَلَى مِلَّتِهِ وَأَعِذْنِيْ مُّضِلاَّتِ الْفِتَنِ <br />
“হে আল্লাহ ! আমাকে তোমার নবীর আদর্শ ও রীতিনীতি অনুসারে কাজ করার তাওফীক দাও। তোমার নবীর পথেই যেন আমার মৃত্যু হয় এবং সত্য পথভ্রষ্টকারী ফেতনা থেকে আমাকে রক্ষা কর।” <br />
কখনো কখনো এই দোয়া পড়া হয়ঃ <br />
اغْفِرْ وَأَرْحَمْ وَتَجَا وَزَعَمَّا تَعْلَمُ إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعَزُّ الْأَكْرَمُ <br />
“হে রব! ক্ষমা কর, দয়া কর, আমার যেসব অপরাধ সম্পর্কে তুমি অবহিত তা মাফ করে দাও। তোমার শক্তি সবচেয়ে বেশী, দয়াও অতুলনীয়।” <br />
এরপর হাজী যেন আল্লাহর সৈনিকে পরিণত হয়। তাই পাচঁ ছয় দিন পর্যন্ত তাকে ক্যাম্পে জীবন কাটাতে হয়। একদিন ‘মিনা’র ছাউনীতে অতিবাহিত করতে হয়, পরের দিন আরাফাতে অবস্থান করতে হয় এবং সেনাপতির ‘খুতবার’ নির্দেশ শুনতে হয়। রাতে মুজাদালিফায় গিয়ে ক্যাম্প স্থাপন করতে হয়। দিন শেষে আবার ‘মিনায়’ ফিরে যেতে হয় এবং এখানে পাথর টুকরা নিক্ষেপ করে ‘চাঁদমারী’ করতে হয়। আবরাহা বাদশার সৈন্য- সামন্ত কা’বা ঘর ধ্বংস করার জন্য এ পর্যন্ত এসে পৌছেছিল । প্রত্যেকটি পাথর নিক্ষেপ করার সাথে সাথে আল্লাহর সিপাহী বলে উঠেঃ <br />
اَللهُ أَكْبَرْ رَغَماً لِلشَّيْطَانِ وَحِزْبِهِ <br />
“আল্লাহ মহান। শয়তান ও তাঁর অনুসারীদের মুখ ধূলায় মলিন হোক।” এবং- أَللَّهُمَّ تَصْدِيْقاً بِكِتَابِكَ وَإِِتِّبَاعاً لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ “হে আল্লাহ ! তোমার গ্রন্থের সত্যতা ঘোষণার ও তোমার নবীর আদেশ অনুসরণের তাওফীক দাও।” <br />
পাথর টুকরা দিয়ে চাঁদমারী করার অর্থ এ কথা প্রকাশ করা যে, হে আল্লাহ ! তোমার দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য কিংবা তোমার আওয়াজকে স্তব্ধ করার জন্য যে -ই চেষ্টা করবে, আমি তোমার বাণীকে উন্নত ও প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তার বিরুদ্ধে এমনি করে লাড়াই করবো। তারপর এ স্থানেই কুরবানী করা হয়। এটা দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জীবন বিসর্জন দেয়ার ইচ্ছা ও বাসনার বাস্তব এবং সক্রিয় প্রমান উপস্থিত করা হয়। এরপর সেখান থেকে কা’বার দিকে যাত্রা করা হয়- যেন ইসলামের মুজাহিদগন কর্তব্য সমাধা করে বিজয়ীর বেশে ‘হেড কোয়ার্টারের’ দিকে ফিরে যাচ্ছে। তাওয়াফ এবং দু’ রাকআত নামায পড়ার পর এহরাম খোলা হয়। এহরাম বাঁধার কারণে যেসব কাজ হারাম হয়েছিল এখন তা হালাল হয়ে যায়, হাজীর জীবন এখন স্বাভাবিক গতিতে চলতে থাকে। এ জীবন শুরু হওয়ার পর আবার তাকে ‘মিনায়’ গিয়ে ক্যাম্প গাড়তে হয় এবং পরের দিন পাথরের সেই তিনটি স্তম্ভের ওপর আবার কংকর দ্বারা চাঁদমারী করতে হয়। এটাকে ইসলামী পরিভাষায় বলা হয় ‘জুমরাত’। এটা আবরাহা বাদশার মক্কা আক্রমণকারী ফৌজের পশ্চাদপসরণ ও তাকে পরাভুত করার প্রতীক মাত্র। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের বছর হজ্জের সময়ই আল্লাহর ঘর ধ্বংস করার উদ্দেশ্য নিয়ে আবরাহা এসেছিল। আল্লাহর তরফ থেকে আসমানী পাখী কংকর নিক্ষেপ করেই তাদেরকে নাস্তানাবুদ করে দেয়। তৃতীয় দিবসে পুনরায় সেই স্তম্ভগুলোর ওপর পাথর নিক্ষেপ করার পর হাজী মক্কা প্রত্যাবর্তন করে এবং সাতবার তার দ্বীনের কেন্দ্র কা’বা ঘরের তাওয়াফ করে। এ তাওয়াফকে বিদায়ী তাওয়াফ বলা হয়। এটা সম্পন্ন হলেই হজ্জের কাজ সমাপ্ত হয়। <br />
হজ্জের নিয়ত এবং সে জন্য প্রস্তুতি ও যোগাড় যন্ত্র থেকে শুরু করে পুনরায় নিজ বাড়িতে ফিরে আসা পর্যন্ত কমবেশী তিন মাস কাল ধরে হাজীর মন- মগযে কত বিরাট ও গভীর খোদায়ী ভাবধারা পুঞ্জীভূত হয়ে থাকে ওপরের এই বিস্তারিত আলোচনা থেকে তা অনুমান করা খুবই সহজ। এ কাজে শুরু থেকেই সময়ের কুরবানী করতে হয়, অর্থের কুরবানী করতে হয, সুখ-শান্তি ত্যাগ করতে হয়, অসংখ্য পার্থিব সম্পর্ক - সম্বন্ধ ছিন্ন করতে হয়। হাজীর নিজের মনের অনেক ইচ্ছা - বাসনা স্বাদ - আস্বাদনকে উৎসর্গ করতে হয়। আর এ সবকিছুই তাকে করতে হয় কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য - নিজস্ব কোনো স্বার্থ তাতে স্থান পেতে পারে না। তারপর এ সফরে তাকওয়া-পরহেযগারীর সাথে সাথে আল্লাহর স্মরণ এবং আল্লাহর দিকে মনের ঔৎসুক্য ও আগ্রহ যত বৃদ্ধি পায়, তাও মানুষের মনের ওপর স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করে, বহুদিন পর্যন্ত সেই প্রভাব স্থায়ী হয়ে থাকে।হারাম শীরফে’ কদম রেখে হাজী প্রত্যেক পদে পদে সেসব মহামানবদের অতীত কর্মধারার স্পষ্ট নিদর্শন দেখতে পায়। যারা আল্লাহর বন্দেগী ও আনুগত্য করে এবং আল্লাহর দীন ইসলামকে কায়েম করতে গিয়ে নিজেদের যথাসর্বস্ব কুরবানী করেছেন, যারা সারা দুনিয়ার বিরুদ্ধে লাড়াই করেছেন, নানা প্রকার দুঃখ - লাঞ্জনা অকাতরে সহ্য করেছেন, নির্বাসন দন্ড ভোগ করেছেন, অসংখ্য যুলম বরদাশত করেছেন, কিন্তু আল্লাহর দীনকে কায়েম না করা পর্যন্ত তারা এতটুকু ক্লান্তিবোধ করেননি। যেসব ‘বাতিল’ শক্তি মানুষকে এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দাসত্ব করতে বাধ্য করছিল, তাঁরা তাদের সকলেরই মস্তক চূর্ণ করে দীন ইসলামের পতাকা উন্নত করে ধরেছেন। <br />
এসব সুস্পষ্ট নিশানা ও বরকত মন্ডিত নিদর্শনসমূহ প্রত্যক্ষ করে একজন আল্লাহ বিশ্বাসী ব্যক্তি প্রবল ইচ্ছা-বাসনা, সাহস ও আল্লাহর পথে জিহাদ করার যে প্রাণস্পর্শী শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে। তা অন্য কোন জিনিস থেকে গ্রহণ করতে পারে না। কা’বা ঘরের তাওয়াফ করায় দ্বীন ইসলামের কেন্দ্র বিন্দুর সাথে হাজীর নিবিড় সম্পর্ক স্থাপিত হয়। হজ্জ সম্পর্কীয় অন্যান্য কার্যাবলী দ্বারা হাজীর জীবনকে সৈনিকের ট্রেনিং দিয়ে গঠন করা হয় । নামাজ, রোজা এবং যাকাতের সাথে এসবকে মিলিয়ে যাচাই করলে পরিস্কার মনে হবে যে, ইসলাম এসব কিছুর সাহায্যে কোন এক বিরাট উদ্দেশ্যে মানুষকে ট্রেনিং দান করে। এর জন্যই মক্কা পর্যন্ত যাতায়াতের সামর্থ্য সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলমানের প্রতি হজ্জ ফরজ করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য এই যে, প্রতি বছরই অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যক মুসলমান ইসলামের এ প্রাণ কেন্দ্রে আসবে এবং ট্রেনিং লাভ করে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রের দিকে ফিরে যাবে। <br />
অতপর আরো একটি দিক লক্ষ্য না করলে হজ্জের কল্যাণ ও স্বার্থকতা পরিপূর্ণরূপে হৃদয়ংগম করা যাবে না। এক একজন মুসলমান কখনো একাকী হজ্জ করে না। দুনিয়ার সমগ্র মুসলমানের জন্যই হজ্জ করার একটি তারিখ নির্দিষ্ট করা হয়েছে। হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মুসলমান একত্রিত হয়ে একই সময়ে হজ্জ করে। ওপরের কথা দ্বারা আপনি শুধু এতটুকু বুঝতে পারেন যে, আলাদাভাবে একজন মুসলমান হজ্জ করলে তার ওপর তার কতখানি প্রভাব পড়া সম্ভব। পরবর্তী প্রবন্ধের মারফতে আপনি বিস্তারিতরূপে জানতে পারেবেন যে, দুনিয়ার মুসলমানদের জন্য হজ্জের একটি সময় নির্দিষ্ট করে দিয়ে হজ্জের কল্যাণ কত লক্ষগুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে একটি কাজে দু’টি ফল নয়, কয়েক হাজার ফল লাভের সুযোগ করে দেয়া একমাত্র ইসলামেরই এক অতুলনীয় কীর্তি। নামায আলাদাভাবে পড়ারও ফায়দা কম নয়। কিন্তু তার সাথে জামায়াতে শামিল হয়ে ইমামের পিছনে নামায পড়ার শর্ত করে দিয়ে এবং জুময়া ও দু’ ঈদের নামায জামায়াতের সাথে পড়ার নিয়ম করে তার ফায়দা অসংখ্য গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে রোযা রাখায় রোযাদারদের মন ও চরিত্র গঠন কাজ কম সাধিত হতো না। কিন্তু সকল মুসলমানের জন্য একটি মাসকে রোযার জন্য নির্দিষ্ট করে তার ফায়দা এত পরিমান বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে, যা গুণে শেষ করা যায় না। এক একজন লোকের ব্যক্তিগতভাবে যাকাত আদায় করার উপকারিতাও কম নয়; কিন্তু বায়তুলমালের মারফত যাকাত দেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে তার উপকারিতা এতদূর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে যে, ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম না হওয়া পর্যন্ত সঠিকভাবে এর ধারণাও করা যায় না। কারণ ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনেই সকল মুসলমানের যাকাত ‘বায়তুলমালে’ জমা করা হয় এবং সুসংবদ্ধভাবে প্রাপকের মধ্যে বন্টন করা হয়। ফলে তাতে সমাজের অভাবগ্রস্ত লোকদের অপূর্ব কল্যাণ সাধিত হয়। হজ্জের ব্যাপারেও তাই। একাকী হজ্জ করলেও হাজার হাজার মানুষের জীবনে বিরাট বিপ্লব সুচিত হতে পারে। কিন্তু দুনিয়ার মুসলমানকে একত্রিত হয়ে হজ্জ করার রীতি করে দিয়ে সীমাহীন কল্যাণ লাভের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। <br />
<span style="font-weight: bold;">হজ্জের বিশ্ব সম্মেলন </span><br />
যেসব মুসলমানের ওপর হজ্জ ফরয হয় অর্থাৎ যারা কা’বা শরীফ পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারে এমন লোক দু’ একজন নয়। প্রত্যেক এলাকায় তাদের সংখ্যা নিতান্ত কম হয় না। বলতে গেলে প্রত্যেক শহরে কয়েক হাজার এবং প্রত্যেক দেশে কয়েক লক্ষ পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রত্যেক বছরই এদের অধিকাংশ লোকই হজ্জ করার ইচ্ছা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়। দুনিয়ার যেসব জায়গায় মুসলমান বসবাস করে, তথায় হজ্জের মৌসুম নিকটবর্তী হওয়ার সাথে সাথে ইসলামী যিন্দেগীর এক নতুন চেতনা কিরূপ জেগে ওঠে, তা সত্যই লক্ষ্য করার মত। প্রায় রমযান থেকে শুরু করে যিলকদ মাস পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গা থেকে শত শত লোক হজ্জ যাত্রায় আয়োজন করে রওয়ানা হয়। আর ওদিকে মহররম মাসের শেষ দিক থেকে সফর, রবিউল আউয়াল তথা রবিউস্সানী পর্যন্ত হাজীদের প্রত্যাবর্তনের ধারা চলতে থাকে। এ ছয় মাসকাল পর্যন্ত সকল মুসলিম লোকালয় এক প্রকার ধর্মীয় ভাবধারায় সরগরম হয়ে থাকে। যারা হজ্জে গমন করে আর হজ্জ করে ফিরে আসে, তারা তো ধর্মীয় ভাবধারায় নিমগ্নই হয়ে থাকে ; কিন্তু যারা হজ্জে গমন করে না, হাজীদের রওনা করাতে, এক একটি ষ্টেশন থেকে তাদের চলে যওয়া আবার ফিরে আসার সময় তাদের অভ্যর্থনা করায় এবং তাদের কাছে হজ্জের বিস্তারিত অবস্থা শুনার ব্যপারে তারাও কিছুটা হজ্জে গমনের আনন্দ লাভ করে থাকে। <br />
এক একজন হাজী যখন হজ্জে গমনের নিয়ত করে, সেই সাথে তাদের মধ্যে আল্লাহর ভয় এবং পরহেযগারী, তাওবা -ইসতেগফার এবং উন্নত ও পবিত্র চরিত্রের ভাবধারা জেগে ওঠে। সে তারা প্রিয় আত্মীয় ও বন্ধু বান্ধব, সহকর্মী এবং সংশ্লিষ্ট সকল লোকের কাছে বিদায় চায়। নিজের সব কাজ - কারবারের চুড়ান্ত রূপ দিতে শুরু করে । এতে মনে হয় যে, সে এখন আর আগের মানুষ নয়, আল্লাহর দিকে তার মনের আকর্ষন হাওয়ায় দিল পবিত্র হয়ে গেছে। এভাবে এক একজন হাজীর এ পরিবর্তনে তার চারপাশে লোকদের ওপর কত গভীর প্রভাব পড়ে তা অনুমান করা যায়। এরূপ প্রত্যেক বছরই যদি দুনিয়ার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে গড়ে এক লক্ষ লোকও এই হজ্জ সম্পন্ন করে, তবে তাদের এ গতিবিধি ও কার্যকলাপের প্রভাব আরো কয়েক লক্ষ লোকের চরিত্রের ওপর না পড়ে পারে না। তারপর হাজীদের কাফেলা যে স্থান অতিক্রম করে, তাদেরকে দেখে তাদের সাথে সাক্ষাত করে ‘লাব্বাইকা’ আওয়ায শুনে সেখানকার কত মানুষের দিল অলৌকিক ভাবধারায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। কত মানুষের লক্ষ্য আল্লাহর ঘরের দিকে ফিরে যায়। আর কত লোকের নিদ্রিত আত্মা হজ্জ করার উৎসাহে জেগে ওঠে । এসব লোক যখন আবার নিজ নিজ দেশের দিকে -দুনিয়ার বিভিন্ন দিকে হজ্জের প্রাণস্পর্শী ভাবধারা বিস্তার করে প্রত্যাবর্তন করে এবং দলে দলে মানুষ তাদের সাথে সাক্ষাত করতে আসে, তাদের কাছ থেকে আল্লাহর ঘরের আলোচনা শুনে কত অসংখ্য মানুষের মনে এবং অসংখ্য পরিমন্ডলে ইসলামী ভাবধারা জেগে ওঠে। <br />
এ জন্যই আমি বলতে চাই যে, রযমান মাস যেরূপ বিশ্ব মুসলিমের জন্য তাকওয়া ও পরহেযগারীর মৌসুম তেমনি হজ্জের মাসও বিশ্ব ইসলামী পুনর্জাগরণের মৌসুম। মহান বিজ্ঞ আল্লাহ এ ব্যবস্থা এ জন্য করেছিলেন যেন বিশ্ব ইসলামী আন্দোলন শ্লথ না হয়ে যায়। পবিত্র কা’বাকে বিশ্বের কেন্দ্র ভুমি হিসেবে এমনভাবে স্থাপন করেছেন যেন মানব দেহের মধ্যে হৃদয়ের অবস্থান। দেহে যতই রোগাক্রান্ত হোক না কেন যত দিন হৃদয়ের স্পন্দন থেমে না যায় এবং সমগ্র দেহ রক্ত সঞ্চালনের পদ্ধতি বন্ধ হয়ে না যায় ততদিন যেমন মানুষের মৃত্যু হয় না সেরূপ হজ্জের এ সম্মেলন ব্যবস্থাও যতদিন থাকবে ততদিন ইসলামী আন্দোলনও চলতে থাকবে। <br />
একটু চোখ বন্ধ করে চিন্তা করলেই আপনাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠবে যে, পৃথিবীর দূর দূরান্তের অঞ্চল থেকে আগত অসংখ্য মানুষ যাদের আকার -আকৃতি, দৈহিক রং ও ভাষা, পোশাক -পরিচ্ছদ বিভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও যখনই কেন্দ্রের নিকটবর্তী হয় সবাই নির্দিষ্ট স্থানে এসে নিজ নিজ পোশাক -পরিচ্ছদ খুলে ফেলে এবং সকলে একই ধরনের অনাড়ম্বর ‘ইউনিফরম’ পরিধান করে। এহরামের এ ‘ইউনিফরম’ ধারণ করার পর পরিষ্কার মনে হয় যে, দুনিয়ার হাজার হাজার জাতির মধ্য থেকে এই যে লক্ষ লক্ষ ফোজ আসছে, এরা বিশ্বের বাদশাহ ও যমীন - আসমানের রাজাধিরাজ এক আল্লাহ তাআলারই ফৌজ। এরা দুনিয়ার হাজার হাজার জাতি ও কওম থেকে ভর্তি হয়েছে। এরা সকলে একই বাদশাহর ফৌজ। এদের সকলের ওপর একই সম্রাটের আনুগত্য ও গোলামীর চিহ্ন লেগে আছে, একই বাদশাহর আনুগত্যের সূত্রে এরা সকলেই পরস্পর বিজড়িত রয়েছে এবং একই রাজধানীর দিকে, মহাসম্রাটের সামনে উপস্থিত হবার জন্য ছুটে চলেছে। একই ‘ইউনিফরম’ পরিহিত এ সিপাহী ‘মীকাত’ অতিক্রম করে যখন সামনে অগ্রসর হয়, তখন সকলের কণ্ঠ থেকে এ একই ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়ে আকাশ -বাতাস মুখরিত করে তোলেঃ <br />
উচ্চারণের কন্ঠ বিভিন্ন -কিন্তু সকলের কণ্ঠে একই ধ্বনি। কেন্দ্র যত নিকটবর্তী হয়, ব্যবধান ততই কমে যায়। বিভিন্ন দেশের কাফেলা পরস্পর মিলিত হয় এবং সকলেই একত্রিত হয়ে একই পদ্ধতিতে নামায পড়ে, সকলের পোশাক এক, সকলেরই ইমাম এক, একই গতিবিধিতে ও একই ভাষায় সকলের নামায পড়া, সকলেই এক ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনির ইঙ্গিতে ওঠা-বসা করে, রুকূ-সিজদা করে, সকলে একই আরবী ভাষায় কুরআন পড়ে এবং শুনে। এভাবে সমবেত লক্ষ লক্ষ জনতার ভাষা, জাতি, দেশ, বংশ ও গোত্রের কৃত্রিম বৈষম্য চূর্ণ হয়ে একাকার হয়ে যায়। সমগ্র মানুষের সমন্বয়ে ‘আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী’ একটি বিরাট জামায়াত রচিত হয় । তার পর এ বিরাট আন্তর্জাতিক জামায়াত একই আওয়ায ‘লাব্বাইকা লাব্বাইকা’ ধ্বনি করতে করতে চলতে থাকে। পথের প্রত্যেক চড়াই উৎরাইয়ে যখন এ আওয়ায উত্থিত হয়, যখন নামাযের সময়ে এবং প্রভাতে এ শব্দ অনুরণিত হয়ে ওঠে, যখন কাফেলাসমূহ পরস্পর মিলিত হবার সময় এ শব্দই ধ্বনিত হয়ে ওঠে তখন চারদিকে এক আশ্চর্য রকম পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সে পরিবেশে মানুষ নিজেকে ভুলে যায়, এক অচিন্তনীয় ভাবধারায় সে মত্ত হয়ে পড়ে, ‘লাব্বাইকা’ ধ্বনির আকর্ষণে সে এক ভাবজগতে ছুটে যায়। অতপর কা’বায় পৌছে দুনিয়ার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে সমাগত জনসমুদ্রের একই পোশাকে নির্দিষ্ট কেন্দ্র বিন্দুর চারদিকে প্রদক্ষিণ করা , সকলের একই সাথে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝখানে দৌড়ানো, সকলের মিনায় উপস্থিত হয়ে তাবু জীবনযাপন করা এবং তথায় এক ইমামের কন্ঠে ভাষণ (খোতবা) শ্রবণ করা, তারপর মুযদালিফায় তাবুর নীচে রাত্রি যাপন করা, আবার মিনার দিকে সকলের প্রত্যাবর্তন করা, সকলে মিলে আকাবায় পাথর দ্বারা চাঁদমারী করা, তারপর সকলের কুরবানী করা , সকলের একই কেন্দ্রে একত্রিত হয়ে নামায পড়া --- এসব কাজে যে পবিত্র পরিবেশ ও আধ্যাত্মিক মনোভাবের সৃষ্টি হয়, দুনিয়ার অন্য কোন ধর্মে বা জীবন ব্যবস্থায় তার তুলনা নেই। <br />
তারপর দুনিয়ার বিভিন্ন জাতির মধ্য থেকে আগত অসংখ্য মানুষের একই কেন্দ্রে সম্মিলিত হওয়া এমন নিষ্ঠা, একাগ্রতা এবং ঐক্যভাবের সাথে একত্রিত হওয়া এমন পবিত্র উদ্দেশ্য ও ভাবধারা এবং নির্মল কাজ-কর্ম সহকারে সমস্ত কাজ সম্পন্ন করা প্রকৃতপক্ষে আদম সন্তানের জন্য এটা এক বড় নিয়ামত। এ নিয়ামত ইসলাম ভিন্ন অন্য কোন ধর্মই দিতে পারে নি। দুনিয়ার বিভিন্ন জাতির পরস্পর মিলিত হওয়া কোন নুতন কথা নয় চিরকালই এরূপ হয়েছে। কিন্তু তাদের এ সম্মেলন হয় যুদ্ধের ময়দানে একে অপরের গলা কাটার জন্যে অথবা সন্ধি সম্মেলনে বিজিত দেশগুলোকে নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেবার জন্যে কিংবা বিশ্বজাতি সম্মেলনে এক একটি জাতির বিরুদ্ধে ধোঁকা ও প্রতারণার ষড়যন্ত্র, যুলুম এবং বেঈমানীর জাল ছড়াবার জন্য; অথবা পরের ক্ষতি সাধন করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করার মতলবে। সমগ্র জাতির জনসাধারণের নির্মল মন, সচ্চরিত্রতা ও পবিত্র মনোভাব নিয়ে এবং প্রেম ভালোবাসা, নিষ্ঠা, মানসিক ও আধ্যাত্মিক ঐক্যভাব সহকারে একত্রিত হওয়া। চিন্তা, কর্ম এবং উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণ একাগ্রতার সাথে মিলিত হওয়া--- তাও আবার একবার মিলিত হয়েই ক্ষান্ত না হওয়া বরং চিরকালের জন্য প্রত্যেক বছর একই কেন্দ্রে একত্রিত হওয়া বিশ্বমানবতার প্রতি এতবড় নিয়ামত দুনিয়ায় ইসলাম ভিন্ন অন্য কোন ধর্ম ব্যবস্থাই দিতে পেরেছে কি? বিশ্ব শান্তি স্থাপনে জাতিসমূহের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-কলহ মিটিয়ে দেয়া এবং লড়াই ঝগড়ার পরিবর্তে ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য এর চেয়ে উত্তম ব্যবস্থা আর কেউ পেশ করতে পেরেছে কি? ইসলাম শুধু এতটুকু করেই ক্ষান্ত হয়নি ; সে আরো অনেক কল্যাণকর ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। <br />
বছরের চারটি মাস হজ্জ ও ওমরার কাজ সম্পাদনের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে । ইসলাম কা’বা যাতায়াতের এ চারটি মাস সমস্ত পথেই শান্তি অক্ষুণ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এটা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং শান্তি রক্ষা করার এক স্থায়ী ব্যবস্থা। দুনিয়ার রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ইসলামের হাতে আসলে হজ্জ ও ওমরার কারণে একটি বছরের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ সময় চিরকালের জন্য যুদ্ধ এবং রক্তারক্তির হাত থেকে দুনিয়া রক্ষা পেতে পারে। <br />
ইসলাম দুনিয়ার মানুষকে একটি হেরেম দান করেছে। এ হেরেম কিয়ামত পর্যন্ত শান্তির কেন্দ্রস্থল । এখানে মানুষ মারা তো দূরের কথা, কোনো জন্তুও শিকার করা যেতে পারে না। এমনকি এখানকার ঘাসও কেটে ফেলার অনুমতি নেই। এখানকার কোনো কাঁটাও চূর্ণ করা যায় না, কারো কোন জিনিস এখানে পড়ে থাকলে তা স্পর্শ করাও নিষিদ্ধ। ইসলাম পৃথিবীর বুকে একটি শহর প্রতিষ্ঠিত করেছে। এ শহরে কারো কোন হাতিয়ার নিয়ে প্রবেশ করার অনুমতি নেই। এখানে খাদ্যশস্য বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী সঞ্চয় করে রাখা এবং তার ফলে মূল্য বৃদ্ধির কারণ সৃষ্টি করা পরিষ্কার আল্লাহদ্রোহীতা । এখানে যারা অন্যের ওপর যুলুম করে তাদেরকে অল্লাহ পাক এই বলে সাবধান করে দিয়েছেনঃ "নুযিকহুমিন আযাবুন আলিম" অর্থ --“আমরা তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেব।” <br />
ইসলাম সমগ্র পৃথিবীর একটি কেন্দ্র নির্ধারিত করেছে। এ কেন্দ্রের পরিচয় প্রসংগে বলা হয়েছেঃ “যারা আল্লাহর প্রভুত্ব ও বাদশাহী এবং হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়াত ও নেতৃত্ব স্বীকার করে ইসলামী ভ্রাতৃসংঘে প্রবেশ করবে, ইসলামের এ কেন্দ্রে তাদের সকলেরই সমান অধিকার থাকবে।” আমেরিকার বাসিন্দা হোক কি আফ্রিকার , চীনের বাসিন্দা হোক কি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের , সে যদি মুসলামান হয় তবেই মক্কা শরীফে তার অধিকার মক্কার আসল বাসিন্দাদের অনুরূপ হবে। সমগ্র হারাম শরীফের এলাকা মসজিদের ন্যায়। মসজিদে গিয়ে যে মুসলমান নিজের জন্য কোনো স্থান করে নেয় , সে স্থান তারই হয়ে যায়; কেউ তাকে সেই স্থান থেকে বিতাড়িত করতে পারে না, কেউ তার কাছে ভাড়া চাইতে পারে না। কিন্তু সে যদি সারা জীবনও সেই স্থানে বসে থাকে, তবুও সেই স্থানকে নিজের মালিকানা স্বত্ব বলে দাবী করতে এবং তা বিক্রি করতে পারে না। এর জন্য সে ভাড়াও চাইতে পারে না । এভাবে সেই ব্যক্তি যখন সেই স্থান থেকে চলে যাবে তখন অন্য কেউ এসে এখানে আসন করে নিতে পারে , যেমন পূর্বের লোকটি পেরেছিল। ‘হারাম শারীফের’ অবস্থাও ঠিক এরূপ। <br />
হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ “ মক্কা নগরের যে স্থানে এসে যে ব্যক্তি প্রথমে অবতরণ করবে সেই স্থান তারই হবে।” এখানকার বাড়ী-ঘরের ভাড়া আদায় করা জায়েজ নয়। হযরত উমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু এখানকার লোকদের ঘরের সম্মুখস্ত প্রাঙ্গণের দুয়ার বন্ধ করতে নিষেধ করেছিলেন, যাতে লোকেরা তাদের প্রাঙ্গনে এসে অবস্থান করতে পারে। কোন কোন ফকীহ এতদূরও বলেছেন যে, মক্কা নগরীর বাড়ীঘরের কেউ মালিক নয়, তা উত্তরাধিকার নীতি অনুসারে বন্টনও হতে পারে না। এসব সুযোগ-সুবিধা এবং আযাদীর মূল্যবান নিয়ামত দুনিয়ার মানুষ ইসলাম ভিন্ন অন্য কোথাও পেতে পারে কি? <br />
এহেন হ্জ্জ সম্পর্কেই বলা হয়েছিলঃ তোমরা এটা করে দেখ এতে তোমাদের জন্য কতবড় কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তার সমস্ত কল্যাণকে গুণে গুণে বলার শক্তি আমার নেই । কিন্তু তবুও এই পর্যন্ত তার যে কিঞ্চিত বিবরণ ওপরে পেশ করেছি তা থেকে এ সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণ লাভ করা যাবে। <br />
কিন্তু এসব কথা শুনার পর আমার নিজের মনের দুঃখের কথাও খানিকটা শুনুন। বংশানুক্রমিক মুসলমান হীরক খনি অভ্যন্তরে ভূমিষ্ঠ শিশুর মত। এ শিশু যখন জন্ম মুহূর্ত থেকেই চারদিকে কেবল হীরক দেখতে পায় এবং হীরক খন্ড নিয়ে খেলা করতে থাকে, তখন তার দৃষ্টিতে হীরকের ন্যায় মহামূল্যবান সম্পদও সাধারণ পাথরের মতই মূল্যহীন হয়ে যায়। বংশীয় মুসলমানদের অবস্থাও ঠিক এরূপ। সমগ্র জগত যে নিয়ামত থেকে বঞ্চিত এবং যা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণেই তারা নানা প্রকার দুঃখ-মুসিবতে নিমজ্জিত রয়েছে, আর বিশ্ব মানব যার সন্ধান করতে ব্যাকুল রয়েছে, সেই মূল্যবান নিয়ামতসমূহ বর্তমান মুসলমানরা বিনামূল্যে লাভ করেছে, এজন্য তালাশ-অনুসন্ধান এবং খোঁজাখুজির জন্য একবিন্দু পরিশ্রমও তাদের করতে হয়নি। এসব ছাড়াই তারা এটা পেয়েছে শুধু এ জন্য যে, সৌভাগ্যবশত তারা মুসলিম পরিবারে জন্মলাভ করেছে। যে কালেমায়ে তাওহীদ মানব জীবনের সমগ্র জটিল সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করে দিতে পারে শিশুকাল থেকেই তা তাদের কানে প্রবেশ করেছে, মানুষকে প্রকৃত মানুষ বানাতে এবং লোকদের পরস্পরের ভাই ও দরদী বন্ধুতে পরিণত করার জন্য নামায-রোযা স্পর্শমণি অপেক্ষাও বেশী মূল্যবান। এরা জন্মলাভ করেই বাপ-দাদার উত্তরাধিকার হিসেবে এটা লাভ করেছে। যাকাত ইসলামী সমাজের এক অতুলনীয় ব্যবস্থা, এ দ্বারা শুধু মনের নাপাকীই দূর হয় না, দুনিয়ার অর্থব্যবস্থাও সুষ্ঠুতা লাভ করে---- যা থেকে বঞ্চিত হয়ে দুনিয়ার মানুষ একে অপরের বুকের রক্ত শুষে নিচ্ছে। এটা মুসলমানগণ প্রত্যক্ষ করছে। কিন্তু মুসলমানরা তা বিনা ব্যয়ে এবং বিনা শ্রমে লাভ করেছে। এটা ঠিক তেমনিভাবে, যেমন খবু বড় চিকিৎসকের সন্তান ঘরে বসেই বড় বড় রোগের তালিকা বিনামূল্যে লাভ করে থাকে। অথচ এর জন্য অন্যান্য মানুষ অত্যন্ত ব্যস্ততার সাথে সন্ধান করে বেড়ায়। হজ্জও একটি বিরাট ব্যবস্থা, সমগ্র দুনিয়ায় এর কোনো তুলনা নেই। পৃথিবীর কোণায় কোণায় ইসলামী আন্দোলনের আওয়াজ পৌঁছাবার জন্য এবং আন্দোলনকে চিরকালের তরে জীবিত রাখার জন্য এটা অপেক্ষা শক্তিশালী উপায় আর কিছুই হতে পারে না। বস্তুত দুনিয়ার সমগ্র মানুষকে পৃথিবীর প্রতিটি কোন থেকে এক আল্লাহর নামে টেনে এনে নির্দিষ্ট একটি কেন্দ্রে একত্রিত করে দেয়া এবং অসংখ্য বংশ গোত্র ও জাতিকে এক আল্লায় বিশ্বাসী, সদুদ্দেশ্য সম্পন্ন ও সৌহার্দপূর্ণ ভ্রাতৃসংঘে সম্মিলিত করে দেবার জন্য এটা আপেক্ষা উন্নততর কোনো পন্থা আজ পর্যন্ত আবিষ্কার করা সম্ভব হয় নি। যুগ-যুগান্তর থেকে জীবন্ত ও প্রচলিত এ ব্যবস্থাও মুসলমানগণ নিজেদের সম্পদ হিসেবে লাভ করেছে বিনা চেষ্টায় এবং বিনা শ্রমে। কিন্তু বড়ই দুঃখের কথা এই যে, মুসলমান বিনাশ্রমে প্রাপ্ত এ মূল্যবান সম্পদের কোন কদর বোঝেনি, বরং তারা এটা নিয়ে ঠিক তেমনি ভাবে খেলা করছে, যেমন হীরক খন্ড নিয়ে খেলা করে হীরক খনিতে প্রসূত শিশু সন্তান। আর তাকে সে মনে করে সাধারণ পাথরের ন্যায় মূল্যহীন। মুসলমান নিজেরদের মূর্খতা এবং অজ্ঞতার কারণে এ বিরাট মূল্যবান সম্পদ ও শক্তির উৎস নিয়ে অত্যন্ত হীনভাবে খেলা করছে। এর অপচয় করছে--- এটাকে নষ্ট করছে--- এসব দেখে আমার প্রাণ জ্বলে যায়। পাথর চূর্ণকারীর হাতে মূল্যবান হীরক খন্ড বরবাদ হতে দেখে সহ্য করা বাস্তবিকই কঠিন ব্যাপার। কোনো এক কবি সাত্যিই বলেছিলেনঃ <br />
“যদিও ঈসার গাধা যায় মক্কা ভূমি<br />
সেথাও থাকবে গাধা জেনে রাখ তুমি।” <br />
অর্থাৎ হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ন্যায় মহান পয়গম্বরের গাধা হলেও পবিত্র মক্কার দর্শন দ্বারা তার কোনো উপকার হতে পারে না। সে যদি সেখানে থেকেও যায় তথাপি সে যেমন গাধা তেমন গাধাই থেকে যাবে। <br />
নামায-রোযা হোক, কিংবা হজ্জ হোক, এগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের প্রশিক্ষণ। কিন্তু যারা এগুলোর অর্থ ও উদ্দেশ্য বুঝতে চায় না এর উপকার ও কল্যাণ লাভ করার কথা এতটুকুও ভাবে না; বরং যারা এ ইবাদাত সমূহের যে কোনো মাকছুদ ও উদ্দেশ্য থাকতে পারে তৎসম্পর্কেও বিন্দুমাত্র কোনো ধারণা রাখে না। তারা যদি পূর্ববর্তী লোকদের দেখাদেখি শুধু ওগুলোর নকলই করতে থাকে, তাহলে এটা দ্বারা সেই সুফল আশা করা যেতে পারে না। কিন্তু দুঃখের বিষয় সাধারণত আজকের মুসলমানগণ এভাবেই ঐ ইবাদাত গুলো করে চলেছে। সকল ইবাদাতের বাহ্যিকরূপ তারা ঠিকই বজায় রাখছে ; কিন্তু (লক্ষ ও উদ্দেশ্যের প্রতি দৃষ্টি না থাকার কারণে) এতে কোন প্রাণ শক্তি সৃষ্টি হচ্ছে না। প্রতি বছর হাজার হাজার লোক ইসলামের কেন্দ্রে গমন করে এবং হজ্জের সৌভাগ্য লাভ করে ফিরে আসে ঠিক কিন্তু হারাম শরীফের যাত্রীর স্বভাব-চরিত্রে যে পরিবর্তন কাম্য ছিল, তা যেমন দেখা যায় না তেমনি হজ্জ থেকে ফিরে আসার পরও তার মানসিক ও নৈতিক ক্ষেত্রে কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় না। অনুরূপভাবে যে সকল এলাকা অতিক্রম করে হজ্জে গমন করা হয়, সেখানকার মুসলমান-অমুসলমান অধিবাসীদের ওপরেও তার কোন উত্তম চরিত্রের প্রভাব পতিত হয় না। বরং অনেকের অসৎ স্বভাব, বদমেজাজী, অশালীন ব্যবহার ও চারিত্রিক দুর্বলতা ইসলামের সম্মানকে বিনষ্ট করে দেয়। বস্তুত এসব কারণেই আমাদের অনেক মুসলিম যুবকও প্রশ্ন করেন যে, ‘হজ্জের উপকার আমাদেরকে বুঝিয়ে দিন।’ অথচ হজ্জ তো ছিল এমন এক জিনিস যে তাকে প্রকৃতরূপে সম্পন্ন করা হলে কাফেররাও এর উপকার প্রকাশ্যে দেখে ইসলাম গ্রহণ করতো। যদি কোনো আন্দোলনের লক্ষ লক্ষ সদস্য প্রতি বছর বিশ্বের সকল অঞ্চল থেকে এক স্থানে সমবেত হয় এবং আবার নিজ নিজ দেশে ফিরে যায় বিভিন্ন দেশে ও নগর হয়ে যাওয়ার সময়ে নিজেরদের পবিত্র জীবন, পবিত্র চিন্তাধারা ও পবিত্র নৈতিকতার বহিঃপ্রকাশ করতে করতে অগ্রসর হয়, যেখানে যেখানে অবস্থান করে কিংবা যে যে স্থান অতিক্রম করে সেখানে নিজেদের আন্দোলনের যাবতীয় মৌলিক আলোচনা নীতির শুধু মৌখিক না করে আপন আচরণ ও কর্মতৎপরতায়ও তাকে বাস্তবায়িত করতে থাকে, আর এটা শুধু দশ-বিশ বছরেই নয় বরং বছরের পর বছর ধরে শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরেই চলতে থাকে তাহলে বলুন তো, এটা কোনো নিষ্ক্রিয় জিনিস থেকে হতে পারে কি? প্রকৃতপক্ষে হজ্জ এরূপ হলে তার উপকার সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন করার প্রয়োজনই হতো না। তখন অন্ধ ব্যক্তিও এর উপকার দেখতে পেত। বধির ব্যক্তিও এর কল্যাণ শুনতে পারতো। প্রতি বছরের হজ্জ কোটি কোটি মুসলমানকে নেক বান্দায় পরিণত করতো, হাজার হাজার অমুসলমানকে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য করতো, লক্ষ লক্ষ অমুসলমানের অন্তরে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা বদ্ধমূল করে দিত। কিন্তু আফসোস! আমাদের মূর্খতার কারণে কত বড় মূল্যবান সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। <br />
হজ্জের অন্তর্নিহিত এ বিরাট সার্থকতা ও উপকারিতা পুরোপুরি লাভ করার জন্য ইসলামের কেন্দ্রস্থলে কোনো বিরাট শক্তিসম্পন্ন কর্তৃত্ব বর্তমান থাকা উচিত। যা এ মহান বিশ্ব শক্তিকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম। এখানে এমন একটি হৃৎপিন্ড (দিল) থাকা উচিত ছিল যা প্রত্যেক বছর সমগ্র বিশ্ব দেহে তাজা রক্তের দ্বারা প্রবাহিত করতে সক্ষম। এমন একটি মস্তিষ্ক থাকারও দরকার ছিল যা এ হাজার হাজার আল্লাহর দূতের মারফতে দুনিয়ার কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইসলামের বিপ্লবী পয়গাম পৌঁছাতে চেষ্টা করতো। আর কিছু না হোক, অন্তত এ কেন্দ্র ভূমিতে খালেস ইসলামী জীবন ধারার বাস্তব রূপ যদি বর্তমান থাকতো, তবুও দুনিয়ার মুসলামান প্রত্যেক বছরই সেখান থেকে খালেস ইসলামী জিন্দেগী এবং দ্বীনদারীর শিক্ষা নিয়ে নিজ নিজ ঘরে প্রত্যাবর্তন করতে পারতো। কিন্তু বড়ই দুঃখের বিষয় যে, এখানে তেমন কিছুই নেই। দীর্ঘকাল পর্যন্ত আরব দেশে মূর্খতার অন্ধকার পুঞ্জিভূত হয়ে আছে, আব্বাসীয় যুগ থেকে শুরু করে ওসমানী যুগ পর্যন্ত সকল অক্ষম ও অনুপযুক্ত শাসক ইসলামের কেন্দ্রেস্থলের অধীবাসীগণকে উন্নতি লাভের সুযোগ দেয়ার পরিবর্তে কয়েক শতাব্দীকাল ধরে তাদেরকে কেবল অধঃপতনের দিকেই ঠেলে দিয়েছে। ফলে আরব দেশ জ্ঞান-বিজ্ঞান, নৈতিক চরিত্র, সভ্যতা ও সংস্কৃতি ---- সকল দিক দিয়েই অধঃপতনের চরম সীমায় উপনীত হয়েছে। এ কারণে যে ভুখন্ড থেকে একদা ইসলামের বিশ্বপ্লাবী আলোক ধারা উৎসারিত হয়ে সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল আজ তাই ইসলামের পূর্ববর্তী জাহেলী যুগের ন্যায় অন্ধ কুপে পরিণত হয়েছে। এখন সেখানে ইসলামের জ্ঞান নেই, ইসলামী জীবনধারা নেই। মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে বুকভরা আশা ও ভক্তি নিয়ে প্রত্যেক বছর পাক ‘হারামে’ আগমন করে ; কিন্তু এ এলাকায় পৌছে তার চারদিকে যখন কেবল মূর্খতা, মলিনতা, লোভ-লালসা , নির্লজ্জতা, আত্মপূজা, চরিত্রহীনতা, উচ্ছৃংখলতা এবং জনগণের নির্মম অধঃপতিত অবস্থা দেখতে পায়, তখন তাদের আশা-আকাঙ্খার স্বপ্ন জাল ছিন্ন হয়ে যায়। এখন অনেক লোক হজ্জ করে নিজের ঈমানকে শক্তিশালী করার পরিবর্তে তাকে অধিকতর দুর্বলই করে আসে। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালম ও ইসমাঈল আলাইহিস সালামের পরে জাহিলিয়াতের যুগে আরব দেশে যে পৌরোহিত্যবাদ ও ঠাকুর পূজার প্রভাব বিস্তৃত হয়েছিল এবং যা শেষ নবী হযরত রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্মূল করেছিলেন, আজ তা-ই প্রবলরূপে পুনঃপ্রবর্তিত হয়েছে। ‘হারামে কা’বার’ ব্যবস্থাপক পূর্বের ন্যায় আবার সেবায়েত হয়ে বসেছে। আল্লাহর ঘর তাদের সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। এ ঘরের প্রতি যারা ভক্তি রাখে তারা এদের শিকার বিশেষ । বিভিন্ন দেশে বড় বড় বেতনভুক্ত এজেন্ট নিযুক্ত রয়েছে, তারা ভক্তদেরকে চারদিক থেকে টেনে টেনে নিয়ে আসে। কুরআনের আয়াত আর হাদীসের নির্দেশ পড়ে শুনিয়ে তাদেরেকে হজ্জ যাত্রায় উদ্বুদ্ধ করে এজন্য নয় যে, আল্লাহ তাদের উপর হজ্জ ফরয করেছেন, তা স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে। বরং তাতে তাদের যথেষ্ট আমদানী হবে। এসব দেখে পরিষ্কার মনে হয় যে, আল্লাহ এবং তার রাসূল এ বিরাট ব্যাবস্থা করেছেন শুধু এ পুরোহিত ‘পান্ডা’ এবং দালালদের প্রতিপালনের জন্য। তারপর হজ্জ যাত্রায় বাধ্য হয়ে মানুষ যখন ঘর থেকে বের হয়, তখন সফরের শুরু থেকে হজ্জ করে বাড়ী ফিরে আসা পর্যন্ত প্রত্যেক জায়গায় ধর্মীয় মজুর এবং ধর্ম ব্যবসায়ীরা জোকের ন্যায় তাদের সামনে উপস্থিত হয়। মুয়াল্লেম, তাওয়াফ শিক্ষাদাতা , কা’বা কুঞ্জিকা বাহক এবং স্বয়ং হেজায সরকার--- সকলেই এ ধর্ম ব্যবসায়ে সমানভাবে অংশিদার। হজ্জের সমস্ত অনুষ্ঠানাদিই পয়সা দিয়ে সম্পন্ন করতে হয়। এমন কি পবিত্র কা’বা গৃহের দরজাও পয়সা ব্যতীরেকে কোনো মুসলমানদের জন্য উম্মুক্ত হতে পারে না। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক) । ইসলামের এ তথাকথিত খাদেমগণ এবং কেন্দ্রীয় উপাসনাগারের সেবায়েতগণও শেষ পর্যন্ত বেনারস ও হরিদ্বারের পন্ডিত পুরোহিতদের পেশা অবলম্বন করে নিয়েছে, অথচ এটাই একদা এ পুরোহিতবাদদের মূলোচ্ছেদ করেছিল । যেখনে ইবদাত করানোর কাজ বিশেষ ব্যবসায় এবং ইবাদাতের স্থান উপার্জনের উপায়ে পরিণত হয়েছে, সেখানে আল্লাহর আয়াত কেবল এ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় যে, লোকে তা শুনে হজ্জ করতে বাধ্য হবে এবং এ সুযোগে তার পকেট মেরে টাকা নিয়ে যাব। যেখানে ইবাদতের কাজ সম্পন্ন করার জন্য মূল্য দিতে হয় এবং দ্বীনি কর্তব্য ব্যবসায়ের পন্য হয়---- এমতস্থানের ইবাদতে ইসলামের প্রাণ শক্তি কি করে বেঁচে থাকতে পারে। হাজীগণ যে এ ইবাদাতের প্রকৃত নৈতিক আধ্যাত্মিক উপকারিতা লাভ করতে পারবে --- সমস্ত কাজ যখন একটি কেনা-বেচার মাল হয়ে রয়েছে--- তখন এমন আশা কিছুতেই করা যায় না। <br />
এ আলোচনা দ্বারা কারো ওপর দোষারোপ করা আমার উদ্দেশ্য নয়, আমি শুধু বলতে চাই হজ্জের ন্যায় একটি বিরাট শক্তিকে কোন্ কোন্ জিনিস প্রায় নিষ্ক্রিয় ও অর্থহীন করে দিয়েছে। <br />
ইসলাম এবং ইসলাম প্রবর্তিত নিয়মসমূহে কোনো ত্রুটি রয়েছে, এরূপ ধারণা কারোই মনে যেন না জাগে। কারণ তাতে আসলে কোনোই ত্রুটি নেই ---ত্রুটি রয়েছে তাদের মধ্যে যারা সঠিকভাবে পূর্ণ ইসলামের অনুসরণ করে চলে না। অতএব, এ অবস্থার জন্য দায়ী বর্তমান মুসলমানরাই। তাই যে ব্যবস্থা তাদেরকে মানবতার পরিপূর্ণ আদর্শে পরিচালিত করতে পারতো এবং যা অনুসরণ করে তারা নেতা হতে পারতো, তা থেকে আজ কোনো ভাল ফল লাভ করা যাচ্ছে না। এমনকি অবস্থা এতদূর খারাপ হয়ে গেছে যে, এ ব্যবস্থাই মানবতার পক্ষে সত্যই কল্যাণকর কিনা আজ সে সম্পর্কেও মানুষের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হতে শুরু করেছে ।একজন সুদক্ষ চিকিৎসক যদি কয়েকটি অব্যর্থ ওষুধের তালিকা রেখে ইহলোক ত্যাগ করেন, তখন তার অকর্মণ্য ও নির্বোধ উত্তরাধিকারীগণের হাতে তা একেবারেই ‘অকেজো’ হয়ে যায়। ফলে সেই তালিকারও যেমন কোনো মূল্য হয় না, অনুরূপভাবে স্বয়ং চিকিৎসকের দুর্নাম হয় --- আসল তালিকা যতই ভাল , সঠিক এবং অব্যর্থ হোক না কেন। এতএব এ নির্ভূল তালিকাকে কার্যকর করে তুলতে হলে চিকিৎসা বিদ্যায় পারদর্শিতা অপরিহার্য। অপটু ও অজ্ঞ লোকরা সেই তালিকা অনুযায়ী ওষুধ তৈরী করলে তা দ্বারা যেমন কোনো উপকার পাওয়া যাবে না শুধু তাই নয়, বরং তাতে ক্ষতি হওয়ার যথেষ্ট আশংকা রয়েছে। ফলে জাহেল লোকেরা যারা তালিকার যথার্থতা যাচাই করতে নিজেরা অক্ষম--- তারাই শেষ পর্যন্ত মনে করতে শুরু করবে যে, মূলত তালিকাটাই ভুল। বর্তমান মুসলমানদের সর্বাত্মক অধঃপতনের ব্যাপারে ইসলামেরও ঠিক এ অবস্থা হয়েছে। <br />
<br /></div>
Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-7269932137734633762020-03-18T21:14:00.002+06:002020-03-18T21:14:35.335+06:00<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<br />
হজ্জের গোড়ার কথা <br />
আরবী ভাষায় ‘হজ্জ’ অর্থ যিয়ারতের সংকল্প করা। যেহেতু খানায়ে কা’বা যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে মুসলমানরা পৃথিবীর চারদিক থেকে নির্দিষ্ট কেন্দ্রের দিকে চলে আসে, তাই এর নাম রাখা হয়েছে ‘হজ্জ’। কখন কিভাবে হজ্জের সূচনা হয়েছিল, সেই ইতিহাস অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক এবং শিক্ষাপ্রদ। গভীর মনোযোগের সাথে সেই ইতিহাস অধ্যয়ন করলে হজ্জের কল্যাণকারিতা হৃদয়ঙ্গম করা পাঠকের জন্য সহজ হবে। <br />
কি মুসলমান, কি খৃস্টান- হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের নাম কারো অজানা নয়। দুনিয়ার তিন ভাগের দু’ভাগেরও বেশী লোক তাঁকে ‘নেতা’ বলে স্বীকার করে । হয়রত মূসা আলাইহিস সালাম, হয়রত ঈসা আলাইহিস সালাম এবং হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এ তিনজন শ্রেষ্ঠ নবীই তাঁর বংশজাত, তাঁর প্রজ্জলিত আলোকবর্তিকা থেকে সমগ্র দুনিয়ার সত্যের জ্যোতি বিস্তার করেছে । চার হাজার বছরেরও বেশীকাল পূর্বে তিনি ইরাকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তখন সমগ্র দুনিয়ার মানুষ আল্লাহকে ভুলে বসেছিল । পৃথিবীর একজন মানুষও তার প্রকৃত মালিক ও প্রভুকে জানতো না এবং তাঁর সামনে বন্দেগী ও আনুগত্যের ভাবধারায় মস্তক অবনত করতো না। যে জাতির মধ্যে তাঁর জন্ম হয়েছিল সে জাতির লোকেরা যদিও তদানীন্তন পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা উন্নত জাতি ছিল; কিন্তু পথভ্রষ্ট হওয়ার দিক দিয়েও তারাই ছিল অগ্রনেতা ।সৃষ্ট জীব কখনও মা'বুদ বা উপাস্য হতে পারে না। জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং শিল্প-ভাস্কর্যে চরম উন্নতি লাভ করা সত্ত্বেও এ সহজ কথাটি তারা বুঝতে পারতো না । তাই তারা আকাশের তারকা এবং (মাটি বা পাথর নির্মিত) মূর্তি পূজা করতো । জ্যোতিষ শাস্ত্র, ভালো-মন্দ জানার জন্য 'ফাল' গ্রহণ, অজ্ঞাত কথা বলা, যাদু বিদ্যা প্রয়োগ এবং দোয়া তাবীয ও ঝাড়-ফুঁকের খুবই প্রচলন ছিল। বর্তমানকালের হিন্দু পন্ডিত ও ব্রাহ্মণগণের মতো তখনকার সমাজে ঠাকুর-পুরোহিতেরও একটি শ্রেনী ছিল। তারা মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ করতো, অপর লোকের পক্ষ থেকে পূজা করে দিত, বিপদে- আপদে বা আনন্দে- খুশিতে তারা বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান পালন করতো এবং অজ্ঞাত কথা বলে লোকদেরকে প্রতারিত করতো। সাধারণ লোকেরা এদেরকেই ভাগ্য নির্ধারক বলে মনে করতো। তারা এদেরই অংগুলি নির্দেশে ওঠা-বসা করতো এবং চুপচাপ থেকে নিতান্ত অন্ধের ন্যায় তাদের মনের লালসা পূর্ণ করে যেতো। কারণ তারা মনে করতো যে, দেবতাদের ওপরে এসব পূজারীর কর্তৃত্ব রয়েছে। এরা খুশি হলে আমাদের প্রতি দেবতাদের অনুগ্রহ বর্ষিত হবে। অন্যথায় আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। এ পূজারী দলের সাথে তৎকালীন রাজা-বাদশাহদের গোপন যোগাযোগ ছিল। জনসাধারণকে দাসানুদাস বানিয়ে রাখার ব্যাপারে রাজা-বাদশা ও পূজারীগণ পরস্পর সাহায্য করতো । একদিকে সরকার পূজারীদের পৃষ্ঠপোকতা করতো এবং অন্যদিকে পূজারীগণ জনগণের মনে এ ধারণা বদ্ধমূল করে দিত যে, রাজা-বাদশাহরাও ‘আল্লাহর’ মধ্যে গণ্য; তারা দেশ ও প্রজাদের একচ্ছত্র মালিক, তাদের মুখের কথাই আইন এবং প্রজাদের জান-মালের ওপর তাদের যা ইচ্ছা করার অধিকার আছে। শুধু এতটুকুই নয়, রাজা -বাদশাহের সামনে (সিজদায় মাথা নত করা সহ) তাদের বন্দেগীর যাবতীয় অনুষ্ঠানই পালন করা হতো -যেন প্রজাদের মন-মগযের ওপর তাদের প্রভুত্বের ছাপ স্থায়ীভাবে অংকিত হয়ে যায়। <br />
এহেন পরিবেশের মধ্যে এবং এ জাতির কোনো এক বংশে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের জন্ম। আরও মজার ব্যাপার এই যে, যে বংশে তাঁর জন্ম হয়েছিল, সেই বংশটাই ছিল পেশাদার ও বংশানুক্রমিক পূজারী। তাঁর বাপ-দাদা ছিলেন আপন বংশের পন্ডিত-পুরোহিত ব্রাহ্মণ।কাজেই একজন ব্রাক্ষণ সন্তানের পক্ষে যেরূপ শিক্ষা -দীক্ষা লাভ করা সম্ভব, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামও ঠিক তাই লাভ করলেন। সেই ধরনের কথা-বার্তা শৈশবকাল হতেই তাঁর কানে প্রবেশ করতো। তিনি তার ভাই -ভগ্নীদের মধ্যে পীর ও পীরজাদাদের মতো আড়ম্বর এবং বড়লোকী চাল-চলন দেখতে পেতেন। স্থানীয় মন্দিরের পৌরহিত্যের মহাসম্মানিত গদি তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল। সেই গদিতে বসলে তিনি অনায়াসেই ‘জাতির নেতা’ হয়ে বসতে পারতেন। তাঁর গোটা পরিবারের জন্য চারদিকে থেকে যেসব ভেট-বেগাড় আর নযর -নিয়াজ জড়ো হতো, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের জন্যও তা বর্তমান ছিল। দেশের লোক নিজেদের চিরকালীন অভ্যাস অনুসারে তাঁর সামনে এসে হাত জোড় করে বসার এবং ভক্তি -শ্রদ্ধা ভরে মাথানত করার জন্য প্রস্তুত ছিল। দেবতার সাথে সম্পর্ক পেতে অজ্ঞাত কথা বলার ভান করে তিনি সাধারণ কৃষক থেকে তদানীন্তন বাদশাহ পর্যন্ত সকলকে আজ্ঞানুবর্তী গোলাম বানিয়ে নিতে পারতেন। এ অন্ধকারে যেখানে সত্য জ্ঞানসম্পন্ন সত্যের অনুসারী একজন মানুষ কোথাও ছিল না সেখানে একদিকে তাঁর পক্ষে সত্যের আলো লাভ করা যেমন সম্ভবপর ছিল না তেমনি ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক উভয় দিক দিয়েই এ বিরাট স্বার্থের ওপর পদাঘাত করে নিছক সত্যের জন্য দুনিয়া জোড়া বিপদের গর্ভে ঝাপিয়ে পড়তে প্রস্তুত হওয়াও কোনো সাধারণ লোকের পক্ষে সম্ভব ছিল না। <br />
কিন্তু হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কোনো সাধারণ মানুষ ছিলেন না।তাঁকে ‘স্বতন্ত্র মাটি’ দ্বারাই সৃষ্টি করা হয়েছিল। জ্ঞান হওয়ার সাথে সাথেই তিনি ভাবতে শুরু করলেন চন্দ্র, সূর্য, তারকা নিতান্ত গোলামের মতই উদয়-অস্তের নিয়ম অনুসরণ করছে, মূর্তি তো মানুষের নিজের হাতে পাথর দিয়ে গড়া, দেশের বাদশাহ আমাদের ন্যায় একজন সাধারণ মানুষ, এরা রব হতে পারে কেমন করে ? যেসব জিনিস নিজের ইচ্ছায় এতটুও নড়তে পারে না, নিজের সাহায্য করার ক্ষমতাও যেসবের মধ্যে নেই, জীবন ও মৃত্যুর ওপর যাদের বিন্দুমাত্র হাত নেই, তাদের সমনে মানুষ কেন মাথা নত করবে ? মানুষ কেন তাদের দাসত্ব ও পুজা -উপাসনা করবে ? প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির জন্য তাদের গোলামীই বা কেন করবে ? আকাশ ও পৃথিবীতে যত কিছুই আমরা দেখতে পাই, যেসব জিনিস সম্পর্কে কোন না কোন ভাবে আমরা ওয়াকিফহাল, তার মধ্যে একটি জিনিসও স্বাধীন নয়, নিরপেক্ষ নয়, অক্ষয়- চিরস্থায়ীও নয়। এদের প্রত্যেকটিরই অবস্থা যখন এরুপ তখন এরা মানুষের 'রব বা প্রভু' কিরুপে হতে পারে ?এদের কেউই যখন আমাকে সৃষ্টি করেনি, আমার জীবন-মৃত্যু ও লাভ-ক্ষতির এখতিয়ার যখন এদের কারো হাতে নেই,আমার রিযিক ও জীবিকার চাবিকাঠি যখন এদের কারো হাতে নয়, তখন এদের কাউকেও আমি ‘রব’ বলে স্বীকার করবো কেন ? এবং তার সামনে মাথা নত করে দাসত্ব ও উপসনাই বা কেন করবো ? বস্তুত আমার ‘রব’ কেবল তিনিই হতে পারেন যিনি সবকিছুই সৃষ্টি করেছেন, সকলেই যার মুখাপেক্ষী এবং যার হাতে সকলেরই জীবন -মৃত্যু ও লাভ -ক্ষতির উ ৎস নিহিত রয়েছে। এসব কথা ভেবে হযরত ইরাহীম (আ) জাতির উপাস্য মূর্তিগুলোকে পূজা না করে বরং পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত করলেন এবং এ সিদ্ধান্তে পৌছেই তিনি উদাত্ত কন্ঠে ঘোষণা করলেনঃ <br />
إِنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ <br />
‘‘তোমরা যাদেরকে আল্লাহর শরীক বলে মনে কর তাদের সাথে আমরা কোন সম্পর্ক নেই।” - সূরা আল আন'আমঃ ৭৮ <br />
إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ <br />
‘‘আমি সবদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বিশেষভাবে কেবল সেই মহান সত্ত্বাকেই ইবাদাত - বন্দেগীর জন্য নির্দিষ্ট করলাম যিনি সমস্ত আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই।’’ - সূরা আল আন'আমঃ ৭৯ <br />
এ বিপ্লবাত্মক ঘোষণার পর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ওপর বিপদ - মুসিবতের পাহাড় ভেংগে পড়লো। পিতা বললেন, আমি তোমাকে পরিত্যাগ করবো, বাড়ী হতে তাড়িয়ে দেব। সমগ্র জাতি বলে ওঠলো আমরা কেউ তোমাকে আশ্রয় দেব না। স্থানীয় সরকার ও তার বিরুদ্ধে লেগে গেল, বাদশাহর সামনে মামলা দায়ের করা হলো, কিন্তু হযরত ইবরাহীম আলাহীস সালাম একাকী এবং নিঃসংগ হয়েও সত্যের জন্য সকলের সামনেই মাথা উঁচু করে দাঁড়ালেন। পিতাকে বিশেষ সম্মানের সাথে বললেন: ‘‘আমি যে জ্ঞান লাভ করেছি। আপনি তা আদৌ জানেন না। কাজেই আমি আপনাদের কথা শুনবো না, তার পরিবর্তে আমার কথা আপনাদের সকলের শোনা উচিত।” <br />
জাতির লোকদের হুমকির উত্তরে নিজ হাতে সবগুলো মূর্তি ভেংগে ফেলে তিনি প্রমাণ করলেন যে, তোমরা যাদের পূজা করো, তাদের কোন ক্ষমতা নেই। বাদশাহর প্রকাশ্য দরবারে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বললেনঃ “তুমি আমার ‘রব’ নও, আমার ‘রব’ তিনিই যাঁর মুষ্ঠিতে তোমার আমার সকলেরই জীবন ও মৃত্যু নিহিত রয়েছে এবং যাঁর নিয়মের কঠিন বাঁধনে চন্দ্র, সূর্য সবই বন্দী হয়ে আছে।” রাজ দরবার থেকে শেষ পর্যন্ত ফয়সালা হলো, ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে জীবন্ত জ্বালিয়ে ভষ্ম করা হবে। কিন্তু ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দিল ছিল পর্বত অপেক্ষা অধিকতর শক্ত - একমাত্র আল্লাহর ওপরেই ছিল তাঁর ভরসা। তাই এ ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করতেও তিনি অকুন্ঠ চিত্তে প্রস্তুত হলেন। অতপর আল্লাহ তাআলা যখন তাঁকে কাফেরদের অগ্নিকুন্ড হতে মুক্তি দিয়েছিলেন তখন তিনি জন্মভুমি , জাতি, আত্মীয়-বান্ধব সবকিছু পরিত্যাগ করে শুধু নিজের স্ত্রী ও ভ্রাতুষ্পুত্রকে সাথে নিয়ে পথে পথে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। যার জন্য ঘরে পৌরোহিত্যের গদি অপেক্ষা করছিলো, সেই গদিতে বসে যিনি গোটা জাতির পীর হয়ে যেতে পারতেন এবং সেই গদিকে যিনি বংশানুক্রমিকভাবে নিজের সম্পত্তি বানিয়ে নিতে পারতেন, তিনি নিজের ও নিজের সন্তান সন্তুতির জন্য নির্বাসন, সহায়-সম্বল হীনতার নিদারুণ দুঃখ- মসিবতকেই শ্রেয় মনে করে গ্রহণ করলেন। কারণ দুনিয়াবাসীকে অসংখ্য ‘মিথ্যা রবের’ দাসত্ব নিগড়ে বন্দী করে সুখের জীবন যাপন করা তিনি মাত্রই বরদাশত করতে পারলেন না। বরং তার পরিবর্তে তিনি একমাত্র প্রকৃত রবের দাসত্ব কবুল করে সমগ্র দুনিয়াকে সেই দিকে আহ্বান জানাতে লাগলেন এবং এ ‘অপরাধে’ (?) তিনি কোথাও একটু শান্তিতে বসবাস করতে পারলেন না। <br />
জন্মভূমি থেকে বের হয়ে হযরত ইবরাহীম (আ) সিরিয়া, ফিলিস্তিন, মিসর এবং আরব দেশসমূহে ঘুরতে -ফিরতে লাগলেন। এই ভ্রমণ ব্যাপদেশ তাঁর ওপর অসংখ্য বিপদ এসেছে, ধন-সম্পদ বা টাকা-পয়সা তার সাথে কিছু ছিল না। বিদেশে গিয়েও তিনি রুযি-রোযগার করার জন্য একটু চিন্তা-ভাবনা করেন নি। রাত দিন তিনি কেবল একটি চিন্তা করতেন , দুনিয়ার মানুষকে অসংখ্য রবের গোলামীর নাগপাশ থেকে মুক্ত করে কিরূপে একমাত্র আল্লাহর বান্দায় পরিণত করা যেতে পারে। এ খেয়াল ও চিন্তা -ভারাক্রান্ত মানুষটিকে যখন তাঁর পিতা এবং নিজ জাতি মোটেই সহ্য করলো না, তখন তাঁকে আর কে বরদাশত করতে পারে? কোন্ দেশের লোক তাঁকে আদর -অভ্যর্থনা জানাবে? সকল স্থানে সেই একই ধরনের মন্দিরের পুরুহিত আর খোদায়ীর দাবীদার রাজা- বাদশাহরাই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল এবং সর্বত্র একই ধরনের অজ্ঞ- মূর্খ জনসাধারণ বাস করতো, যারা এ ‘মিথ্যা খোদাদের’ গোলামীর জালে বন্দী হয়ে ছিল। এদের মধ্যে এমন ব্যক্তি কি করে শান্তিতে দিন কাটাতে পারে, যিনি নিজের রব ছাড়া অন্য কারো গোলামী করতে প্রস্তুত ছিলেন না। যিনি অন্য লোকদেরও বলে বেড়াতেন যে, আল্লাহ ছাড়া তোমাদের আর কেউ মালিক, মনিব ও প্রভু নেই, সকলের প্রভুত্ব ও খোদায়ীর আসন চূর্ণ করে কেবলমাত্র আল্লাহর বান্দারূপে জীবনযাপন কর। ঠিক এ কারণেই হযরত ইবরহীম আলাইহিস সালাম কোথাও শান্তিতে বসবাস করতে পারেননি। বছরের পর বছর ধরে তিনি উদভ্রান্ত পথিকের ন্যায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। কখনও কেনানের জনপদে, কখনও মিসরে এবং কখনও আরবের মরুভুমিতে গিয়ে পৌঁছেছেন। এভাবেই তাঁর গোটা যৌবনকাল অতিবাহিত হয়ে গেল, কালো চুল সাদা হয়ে গেল। <br />
জীবনের শেষ ভাগে নব্বই বছর পূর্ণ হতে যখন মাত্র চারটি বছর বাকী ছিল এবং সন্তান লাভের কোনো আশাই যখন ছিল না তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সন্তান দান করলেন। কিন্তু তখনও এ আল্লাহর বান্দা এতটুকু চিন্তিত হয়ে পাড়েননি যে, নিজের জীবনটা তো আশ্রয়হীনভাবে কেটে গেছে, এখন অন্তত ছেলে পেলেদেরকে একটু রুজী- রোযগারের যোগ্য করে তুলি। না, এসব চিন্তা তাঁর মনে উদয় হয়নি। বরং এ বৃদ্ধ পিতার মনে একটি মাত্র চিন্তাই জেগেছিল , তা এই যে, যে কর্তব্য সাধনে তিনি নিজের জীবন অতিবিহিত করেছেন, তাঁর মৃত্যুর পর সেই কর্তব্য পালন করার এবং তাঁর দাওয়াত চারদিকে প্রচার করার মতো লোকের বিশেষ অভাব রয়েছে। ঠিক এ জন্য তিনি আল্লাহর কাছে সন্তান কামনা করেছিলেন এবং আল্লাহ যখন তাঁকে সন্তান দান করলেন, তখন তিনি তাকে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর কাজ চালিয়ে যাবার উপযোগী করে গড়ে তুলতে চেষ্টা করলেন। এ পূর্ণ মানুষটির জীবন একজন সত্যিকার মুসলমানের আদর্শ জীবন ছিল। যৌবনের সূচনাতেই - বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই যখন তিনি তাঁর রবকে চিনতে পারলেন তখন আল্লাহ তাকে বলেছিলেনঃ أَسْلِمْ - ইসলাম গ্রহণ কর - স্বেচ্ছায় আমার কাছে আত্মসমর্পণ কর, আমার দাসত্ব স্বীকার করো। তিনি তখন উত্তরে পরিষ্কার ভাষায় বলেছিলেনঃ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ - আমি ইসলাম কবুল করলাম। আমি সারাজাহানের প্রভুর উদ্দেশ্যে নিজেকে উৎসর্গ করলাম, নিজেকে তার কাছে সোপর্দ করলাম। সমগ্র জীবন ভরে একথা ও এ ওয়াদাকে এই সাচ্চা মানুষটি সবদিক দিয়ে পূর্ণ করে দেখিয়েছেন। তিনি রাব্বুল আলামিনের জন্য শত শত বছরের পৈত্রিক ধর্ম এবং তার যাবতীয় আচার অনুষ্ঠান ও আকীদা - বিশ্বাস পরিত্যাগ করেছেন। পৌরহিত্যের গদিতে বসলে তিনি যেসব সুযোগ - সুবিধা লাভ করতে পারতেন তা সবই তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। নিজের বংশ - পরিবার, নিজের জাতি ও মাতৃভূমি ত্যাগ করেছেন। নিজের জীবনকে উপেক্ষা করে আগুনের বুকে ঝাঁপ দিয়েছেন। দেশত্যাগ ও নির্বাসনের দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছেন, দেশের পর দেশ পরিভ্রমণ করেছেন, নিজের জীবনের এক একটি মূহুর্তকে রাব্বুল আলামীনের দাসত্ব অনুগত্যের কাজে এবং তাঁর দ্বীন ইসলামের প্রচারে কাটিয়েছেন। বৃদ্ধ বয়সে যখন সন্তান লাভ হলো তখন তাঁর জন্যও এ ধর্ম এবং এ কর্তব্যই নির্ধারিত করলেন। কিন্তু এসব কঠিন পরীক্ষার পর আর একটি শেষ ও কঠিন পরীক্ষা অবশিষ্ট রয়ে গিয়েছিল। যে পরীক্ষায় উত্তির্ণ না হওয়া পর্যন্ত হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সব কিছু অপেক্ষা রাব্বুল আলামীনকেই বেশী ভালবাসেন কিনা, তার ফয়সালা হতে পারতো না। সেই কঠিন এবং কঠোর পরীক্ষার সামনে এসে পড়লো। বৃদ্ধ বয়সে একেবারে নিরাশ হয়ে যাওয়ার পর তাঁর যে সন্তান লাভ হয়ে ছিল, সেই একমাত্র সন্তানকেও আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী করতে পারেন কিনা, তারই পরীক্ষা নেয়া হলো। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এ পরীক্ষায়ও উত্তীর্ন হলেন এবং আল্লাহর নির্দেশ লাভ করার সাথে সাথে যখন তিনি নিজের পুত্রকে নিজের হাতে যবেহ করতে প্রস্তুত হলেন, তখন চূড়ান্তরূপে ঘোষণা করা হলো যে, এখন তুমি প্রকৃত মুসলিম হওয়ার দাবীকে সত্য বলে প্রমাণ করেছো। আল্লাহর কাছেও তাঁর এ কুরবানী কবুল হলো এবং তাকে বলে দেয়া হলো যে, এখন তোমাকে সারা দুনিয়ার ইমাম বা নেতা বানিয়ে দেয়া যেতে পারে - এখন তুমি সেই জন্য সম্পূর্ণরূপে যোগ্য হয়েছো। কুরআন শরীফের নিম্নলিখিত আয়াতে একথাই বলা হয়েছেঃ <br />
وَإِذِ ابْتَلَى إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا قَالَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ <br />
“এবং যখন ইবরাহীমকে তার ‘রব’ কয়েকটি ব্যাপারে পরীক্ষা করলেন এবং সে সেই পরীক্ষায় ঠিকভাবে উত্তীর্ণ হলো তখন তাকে জানিয়ে দেয়া হলো যে, আমি তোমাকে সমগ্র মানুষের ইমাম (অগ্রবর্তী নেতা) নিযুক্ত করেছি। তিনি বললেন, আমার বংশধরদের প্রতিও কি এ হুকুম ? আল্লাহ তায়ালা বললেনঃ যালেমদের জন্য আমার ওয়াদা প্রযোজ্য নয়।” - সূরা আল বাকারাঃ ১২৪ <br />
এভাবে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে দুনিয়ার নেতৃত্ব দান করা হলো এবং তাঁকে ইসলামের বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের ‘নেতা’ নিযুক্ত করা হলো। এখন এ আন্দোলনকে অধিকতর সম্প্রসারিত করার জন্য এবং বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব গ্রহণ করে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার জন্য তাঁর কয়েকজন সহকর্মী একান্ত আবশ্যক হয়ে পড়লো। এ ব্যাপারে তিন ব্যক্তি হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ‘দক্ষিণ হাত’ স্বরূপ কাজ করেছেন। একজন তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র হযরত লূত আলাইহিস সালাম, দ্বিতীয় তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম যিনি - আল্লাহ তাঁর জীবন চান জানতে পেরে অত্যন্ত খুশী ও আগ্রহের সাথে - যবেহ হবার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন এবং তৃতীয় হচ্ছেন তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র হযরত ইসহাক আলাইহিস সালাম। <br />
ভ্রাতুষ্পুত্রকে তিনি ‘সাদুম’ (ট্রান্স জর্দান) এলাকায় বসালেন। এখানে সেকালের সর্বাপেক্ষা ইতর - লম্পট জাতি বাস করতো। সেখানে একদিকে সেই জাতির নৈতিকতার সংস্কার সাধন এবং সেই সাথে দূরবর্তী এলাকাসমূহেও ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোই ছিল তাঁর কাজ। ইরান, ইরাক এবং মিসরের ব্যবসায়ী দল এ এলাকা দিয়েই যাতায়াত করতো। কাজেই এখানে বসে উভয় দিকেই ইসলাম প্রচারের কাজ সুষ্ঠু রূপে সম্পন্ন করা তাঁর পক্ষে বিশেষ সুবিধাজনক হয়েছিল। <br />
কনিষ্ঠ পুত্র হযরত ইসহাক আলাইহিস সালামকে তিনি কেনান বা ফিলিস্তিন এলাকায় রাখলেন। এটা সিরিয়া ও মিসরের মধ্যবর্তী স্থান, তদুপরি এটা সমূদ্র - উপকূলবর্তী এলাকা বলে এখান থেকেই অন্যান্য দেশ পর্যন্ত ইসলামের আওয়াজ পৌঁছানো সহজ ছিল। এ স্থান থেকেই হযরত ইসহাক আলাইহিস সালামের পুত্র হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম যার নাম ছিল ইসরাঈল এবং পৌত্র হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের মারফতে ইসলামী আন্দোলন মিসর পর্যন্ত পোঁছেছিল। <br />
জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে হিজাযের মক্কা নগরীতে বসালেন এবং দীর্ঘকাল যাবত নিজেই তাঁর সাথে থেকে আরবের কোণে কোণে ইসলামের শিক্ষা বিস্তার করেছিলেন। তারপর এখানেই পিতা-পুত্র দু’জনে মিলে ইসলামী আন্দোলনের বিশ্ববিখ্যাত কেন্দ্র খানায়ে কা’বা প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহ তায়ালা নিজেই এ কেন্দ্র নির্দিষ্ট করেছিলেন, নিজেই এটা গড়ে তোলার স্থান ঠিক করেছিলেন। খানায়ে কা’বা সাধারণ মসজিদের ন্যায় নিছক ইবাদাতের স্থান নয়, প্রথম দিন থেকেই এটা দীন ইসলামের বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের প্রচার কেন্দ্ররূপে নির্ধারিত হয়েছিল। এ কা’বা ঘর নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল এই যে, পৃথিবীর দূরবর্তী অঞ্চলসমূহ থেকে এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী সকল মানুষ এখানে এসে মিলিত হবে এবং সংঘবদ্ধ ভাবে এক আল্লাহর ইবাদাত করবে, আবার এখান থেকেই ইসলামের বিপ্লবী পয়গাম নিয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবে। বিশ্ব মুসলিমের এ সম্মেলনেরই নাম হলো ‘হজ্জ’। এ ইবাদাত কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা কি করে হলো, কোন সব পূত ভাবধারা এবং দোআ প্রার্থনা সহকারে পিতা-পুত্র মিলে এ ইমারত তৈরী করেছিলেন আর ‘হজ্জ’ কিভাবে শুরু হলো তার বিস্তারিত বিবরণ কুরআন শরীফে বর্ণিত হয়েছেঃ <br />
إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِلْعَالَمِينَ - فِيهِ آَيَاتٌ بَيِّنَاتٌ مَقَامُ إِبْرَاهِيمَ وَمَنْ دَخَلَهُ كَانَ آَمِنًا <br />
“মানুষের জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর নির্দিষ্ট করা হয়েছিল তা মক্কার ঘর তাতে সন্দেহ নেই। এটা অত্যন্ত পবিত্র, বরকতপূর্ণ এবং সারা দুনিয়ার জন্য হেদায়াতের কেন্দ্রস্থল। এতে আল্লাহর প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহ বর্তমান রয়েছে, ‘মাকামে ইবরাহীম’ রয়েছে এবং যে-ই এখানে প্রবেশ করবে সেই নিরাপদে থাকবে।” - সূরা আলে ইমরানঃ ৯৬-৯৭ <br />
أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا جَعَلْنَا حَرَمًا آَمِنًا وَيُتَخَطَّفُ النَّاسُ مِنْ حَوْلِهِمْ <br />
“আমরা মানুষের জন্য কিরূপে বিপদশূন্য ও শান্তিপূর্ণ হেরেম তৈরী করেছি তা কি তারা দেখতে পায়নি? অথচ তার চারপাশে লোক লুন্ঠিত ও ছিনতাই হয়ে যেতো।”- সূরা আল আনকাবুতঃ ৬৭ <br />
অর্থাৎ আরবের চারদিকে যখন লুঠ -তরাজ , মার-পিট এবং যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদি অশান্তির সয়লাব বয়ে যেত তখনও এ হেরেমে সর্বদা শান্তি বিরাজ করতো। এমন কি দুর্ধর্ষ মরু বেদুঈন যদি এর সীমার মধ্যে তার পিতৃহন্তাকে দেখতে পেত, তবুও এর মধ্যে বসে তাকে স্পর্শমাত্র করতে সাহস পেত না। <br />
وَإِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِلنَّاسِ وَأَمْنًا وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى وَعَهِدْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ - وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَذَا بَلَدًا آَمِنًا وَارْزُقْ أَهْلَهُ مِنَ الثَّمَرَاتِ مَنْ آَمَنَ مِنْهُمْ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ <br />
“এবং স্মরণ কর, যখন আমরা এ ঘরকে লোকদের কেন্দ্র ও নিরাপদ আশ্রয় স্থল বানিয়েছিলাম এবং ইবরাহীমের ইবাদাতের স্থানকে ‘মুসাল্লা’ (জায়নামায) বানাবার নির্দেশ দিয়েছিলাম আর তাওয়াফকারী , অবস্থানকারী এবং নামাযীদের জন্য আমার ঘরকে পাক ও পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে নির্দেশ দিয়েছিলাম। পরে যখন ইবরাহীম দোয়া করলো, হে পালনকর্তা আপনি এ শহরকে শান্তিপূর্ণ জনপদে পরিণত করুন এবং এখানকার অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী তাদের জন্য ফল-মূল দ্বারা জীবিকার সংস্থান করে দিন।” - সূরা আল বাকারাঃ ১২৫-১২৬ <br />
وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ - رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُسْلِمَةً لَكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَا إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ - رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آَيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ <br />
“এবং স্মরণ কর, ইবরাহীম ও ইসমাঈল যখন এ ঘরের ভিত্তি স্থাপনকালে দোয়া করছিলঃ পরওয়ারদিগার ! আমাদের এ চেষ্টা কুবল কর, তুমি সবকিছু জান ও শুনতে পাও। পরওয়ারদিগার ! তুমি আমাদের দু’জনকেই মুসলিম- অর্থাৎ তোমার অনুগত কর এবং আমাদের বংশাবলী থেকে এমন একটি জাতি তৈরী কর যারা একান্তভাবে, তোমারই অনুগত হবে। আমাদেরকে তোমার ইবাদাত করার পন্থা বলে দাও, আমাদের প্রতি ক্ষমার দৃষ্টি নিক্ষেপ কর, তুমি বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়াময়। পরওয়ারদিগার! তুমি সে জাতির প্রতি তাদের মধ্য থেকে এমন একজন রাসূল পাঠাও যিনি তাদেরকে তোমার বাণী পড়ে শুনাবে, তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞানের শিক্ষা দেবে এবং তাদের চরিত্র সংশোধন করবে। নিশ্চয় তুমি সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন এবং বিজ্ঞ।” - সূরা আল বাকারাঃ ১২৭-১২৯ <br />
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَذَا الْبَلَدَ آَمِنًا وَاجْنُبْنِي وَبَنِيَّ أَنْ نَعْبُدَ الْأَصْنَامَ - رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضْلَلْنَ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ فَمَنْ تَبِعَنِي فَإِنَّهُ مِنِّي وَمَنْ عَصَانِي فَإِنَّكَ غَفُورٌ رَحِيمٌ - رَبَّنَا إِنِّي أَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُمْ مِنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ <br />
“এবং স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম দোয়া করেছিলঃ হে আল্লাহ ! এ শহরকে শান্তিপূর্ণ বানিয়ে দাও, আমাকে এবং আমার সন্তানকে মূর্তিপূজার শির্ক থেকে বাচাও। হে আল্লাহ ! এ মূর্তিগুলো অসংখ্য লোককে গোমরাহ করেছে। অতএব, যে আমার পন্থা অনুসরণ করবে সে আমার, আর যে আমার পন্থার বিপরীত চলবে -তখন তুমি নিশ্চয়ই বড় ক্ষমাশীল ও দয়াময়। পরাওয়ারদিগার ! আমি আমার বংশধরদের একটি অংশ তোমার এ মহান ঘরের নিকট, এ ধূসর মরূভূমিতে এনে পুনর্বাসিত করেছি- এ উদ্দেশ্যে যে, তারা নামাযের ব্যবস্থা কায়েম করবে। অতএব, হে আল্লাহ ! তুমি লোকদের মনে এতদূর উৎসাহ দাও যেন তারা এদের জীবিকার ব্যবস্থা করে। হয়ত এরা তোমার কৃতজ্ঞ বান্দা হবে।”-সূরা ইবরাহীমঃ ৩৫-৩৭ <br />
وَإِذْ بَوَّأْنَا لِإِبْرَاهِيمَ مَكَانَ الْبَيْتِ أَنْ لَا تُشْرِكْ بِي شَيْئًا وَطَهِّرْ بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْقَائِمِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ - وَأَذِّنْ فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ - لِيَشْهَدُوا مَنَافِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَعْلُومَاتٍ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ <br />
“এবং স্মরণ কর, যখন ইবরাহীমের জন্য এ ঘরের স্থান ঠিক করেছিলাম -একথা বলে যে, এখানে কোনো প্রকার শিরক করো না এবং আমার ঘরকে তাওয়াফকারী ও নামাযীদের জন্য পাক-সাফ করে রাখ। আর লোকদেরকে হজ্জ করার জন্য প্রকাশ্যভাবে আহবান জানাও - তারা যেন তোমার কাছে আসে, পায়ে হেঁটে আসুক কিংবা দূরবর্তী স্থান থেকে কৃশ উটের পিঠে চড়ে আসুক। এখানে এসে তারা যেন দেখতে পায় তাদের জন্য দ্বীন -দুনিয়ার কল্যানের কত সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর দেয়া জন্তুগুলোকে আল্লাহর নামে কুরবানী করবে, তা থেকে নিজেরাও খাবে এবং দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত লোকদেরও খেতে দেবে।” - সূরা আল হজ্জঃ ২৬-২৮ <br />
‘হজ্জ’ শুরু হওয়ার এটাই গোড়ার ইতিহাস। এটাকে ইসলামের পঞ্চম রোকন (স্তম্ভ) হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এ থেকে জানা গেলে যে, দুনিয়ায় যে নবী বিশ্বব্যাপী ইসলামী আন্দোলন পরিচালনার জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন, মক্কা-ই ছিল তাঁর প্রধান কার্যালয়।পবিত্র কা’বাই ছিল এর প্রধান কেন্দ্র - যেখানে থেকে ইসলাম দুনিয়ায় দূরবর্তী অঞ্চলে প্রচারিত হতো।আর দুনিয়ায় যারাই এক আল্লাহর বন্দেগী করতে চাবে এবং বাস্তব কর্মজীবনে তার আনুগত্য করে চলবে, তাঁরা যে জাতি আর যে দেশেরই অধিবাসী হোক না কেন, সকলেই একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রে প্রতি বছর এসে সমবেত হবে, এজন্য ‘হজ্জ’ করার পন্থা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এ দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়া যাবে যে, চাকা যেমন নিজ অক্ষের চতুর্দিকে ঘোরে, মুসলমানদের জীবনও তেমনি আপন কেন্দ্রেরই চতুর্দিকে আবর্তিত হয়- এ গূঢ় রহস্যেরই বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে হজ্জ। <br />
হজ্জের ইতিহাস<br />
কিভাবে এবং কোন উদ্দেশ্যে হজ্জ শুরু হয়েছিল সে কথা পূর্বের প্রবন্ধে আলোচনা করেছি। হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম মক্কায় ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন এবং তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে এখানে বসিয়ে ছিলেন, যেন তার পরে তিনি এ আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারেন, একথাও পূর্বের প্রবন্ধে বলা হয়েছে। হযরত ইসমাইল আলাইহীস সালামের পর তার বংশ ধরগণ কতকাল দীন ইসলামের পথে চলেছে তা আল্লাহ তাআলাই অবগত আছেন। কিন্তু পরবর্তী কয়েক শতাদ্বীর মধ্যেই তারা যে পূর্ববর্তী মহাপুরুষদের শিক্ষা ও প্রদর্শিত পথ ভুলে গিয়েছিল এবং অন্যান্য ‘জাহেল’ জাতির ন্যায় সর্বপ্রকার গোমরাহী ও পাপ- প্রথার প্রচলন করেছিল, তাতে সন্দেহ নেই।যে কা’বা ঘরকে কেন্দ্র করে এককালে এক আল্লাহর ইবাদাতের দাওয়াত ও প্রচার শুরু হয়েছিল, সেই কাবা ঘরে শত শত মূর্তি স্থাপন করা হলো। এমনকি, মূর্তি পূজা বন্ধ করার সাধনা ও আন্দোলনে যে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও ইসমাঈল আলাইহিস সালামের সারাটি জীবন অতিবাহিত হয়েছিল তাদের মূর্তি নির্মাণ করেও কাবা ঘরে স্থাপন করা হয়েছিল। চন্দ্র, বুধ, শুক্র, শনি ইত্যাদি গ্রহ - নক্ষত্রের পুজাও করতো। ভুত- প্রেত, ফেরেশতা এবং মৃত পূর্বপুরুষদের ‘আত্মা’র পূজাও করতো। তাদের মূর্খতা এতদূর প্রচন্ড রূপ ধারনা করেছিল যে, ঘর থেকে বের হবার সময় নিজেদের বংশের মূর্তি না পেলে পথ চলার সময় যে কোনো রঙীন পাথর দেখতে পেতো তারা তারই পূজা শুরু করতো। পাথর না পেলে পানি ও মাটির সংমিশ্রণে একটি প্রতিমূর্তি বানিয়ে তার ওপর ছাগ দুগ্ধ ছিটিয়ে দিলেই তাদের মতে সেই নিস্প্রাণ পিন্ডটি খোদা হয়ে যেত এবং এরই পুজা করতো । যে পৌরোহিত্য ও ঠাকুরবাদের বিরুদ্ধে তাদের ‘পিতা’ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সমগ্র ইরাকের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, তা-ই আবার তাদের ঘরে প্রবেশ করেছিল, কা’বাকে তারা মূর্তিপূজার আড্ডাখানা বানিয়ে নিজেরাই সেখানকার পুরোহিত সেজেছিল। হজ্জকে তারা ‘তীর্থযাত্রা’র অনুরূপ বানিয়ে তাওহীদ প্রচারের কেন্দ্রস্থল কা’বা ঘর থেকে মূর্তিপূজার প্রচার শুরূ করেছিল এবং পূজারীদের সর্বপ্রকার কলা -কৌশল অবলম্বন করে আরবের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকদের কাছ থেকে ‘নযর- নিয়ায ও ভেট - বেগাড়’ আদায় করতো এভাবে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম যে মহান কাজ শুরু করেছিলেন, তা সবই বিনষ্ট হয়ে গেল। <br />
এ ঘোর জাহেলী যুগে হজ্জের যে চরম দুর্গতি হয়েছিল একটি ব্যাপার থেকে তা ষ্পষ্টরূপে অনুমান করা যায়। মক্কায় একটি বার্ষিক মেলা বসতো, আরবের বড় বড় বংশ ও গোত্রের কবি কিংবা ‘কথক’ নিজ নিজ গোত্রের খ্যাতি, বীরত্ব, শক্তি, সম্মান ও বদান্যতার প্রশংসায় আকাশ- বাতাস মুখরিত করে তুলতো এবং পারষ্পরিক গৌরব ও অহংকার প্রকাশের ব্যাপারে রীতিমত প্রতিযোগিতা করতো। এমন কি অপরের নিন্দার পর্যায়ও এসে যেত । সৌজন্য ও বদান্যতার ব্যপারেও পাল্লা দেয়া হতো। প্রত্যেক গোত্র -প্রধান নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করার জন্য ডেগ চড়াতো এবং একে অন্যকে হেয় করার উদ্দেশ্যে উটের পর উট যবেহ করতো। এ অপচয় ও অপব্যয়ের মূলে তাদের একটিমাত্র লক্ষ্য ছিল ; তা এই যে, এ সময় কোনো বদান্যতা করলে মেলায় আগত লোকদের মাধ্যমে আরবের সর্বত্র তাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে এবং কোন গোত্রপতি কতটি উট যবেহ করেছিল এবং কত লোককে খাইয়েছিল ঘরে ঘরে তার চর্চা শুরু হবে । এসব সম্মেলনে নাচ -গান, মদ পান, ব্যভিচার এবং সকল প্রকার নির্লজ্জ কাজ - কর্মের অনুষ্ঠান বিশেষ জাক- জমকের সাথে সম্পন্ন হতো। এ উৎসবের সময় এক আল্লাহর দাসত্ব করার কথা কারো মনে জাগ্রত হতো কিনা সন্দেহ। কা’বা ঘরের চতুর্দিকে তাওয়াফ করা হতো। কিন্তু তার পদ্ধতি বিকৃত হয়ে গিয়েছিল । নারী - পুরুষ সকলেই উলংগ হয়ে একত্রে ঘুরতো আর বলতো আমরা আল্লাহর সামনে এমন অবস্থায় যাব, যেমন অবস্থায় আমাদের মা আমাদেরকে প্রসব করেছে। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের প্রতিষ্ঠিত মসজিদে ‘ইবাদাত’ করা হতো একথা ঠিক; কিন্তু কিভাবে ? খুব জোরে হাততালি দেয়া হতো, বাঁশি বাজান হতো, শিংগায় ফুঁ ৎকার দেয়া হতো। আল্লাহর নামও যে সেখানে নেয়া হতো না, এমন নয়। কিন্তু কিরূপে ? তারা বলতো: <br />
لَبَّيْكَ اللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ إِلاَّ شَرِيْكاً هُوَ لَكَ تَمْلِيْكُهُ وَمَا مَلَكَ <br />
“আমি এসেছি হে আমার আল্লাহ ! আমি এসেছি, তোমার কেউ শরীক নেই ; কিন্তু যে তোমর আপন,সে তোমার অংশীদার। তুমি তারও মালিক এবং তার মালিকানারও মালিক।” <br />
আল্লাহর নামে সেখানে কুরবানীও দেয়া হতো। কিন্তু তার পন্থা ছিল কত নিকৃষ্ট ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ। কুরবানীর রক্ত কা’বা ঘরের দেয়ালে লেপে দিত এবং এর গোশত কা’বার দুয়ারে ফেলে রাখতো। কারণ, তাদের ধারণা মতে আল্লাহ এসব রক্ত ও গোশত তাদের কাছ থেকে কবুল করছেন (নাউযুবিল্লাহ)। হযরত ইবরাহীম আলাহিস সালামের সময়ই হজ্জের চার মাসে রক্তপাত হারাম করে দেয়া হয়েছিল এবং এ সময় সকল প্রকার যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পরবর্তী - কালের লোকেরা এ নিষেধ অনেকটা মেনে চলেছে বটে ; কিন্তু যুদ্ধ করতে যখন ইচ্ছা হতো, তখন তারা এক বছরের নিষিদ্ধ মাসগুলোকে ‘হালাল’ গণ্য করতো এবং পরের বছর তারা ‘কাযা’ আদায় করতো। <br />
এছাড়া অন্যান্য যেসব লোক নিজ ধর্মের প্রতি নিষ্ঠাবান ছিল তারাও নিতান্ত মূর্খতার কারণে আশ্চর্য রকমের বহু রীতিনীতির প্রচলন করেছিল। একদল লোক কোনো সম্বল না নিয়ে হজ্জ যাত্রা করতো এবং পথে ভিক্ষা মেগে দিন অতিবাহিত করতো। তাদের মতে এটা খুবই পুণ্যের কাজ ছিল। মুখে তারা বলতো -“আমরা আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করেছি, আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করার জন্য যাচ্ছি- দুনিয়ার সম্বল নেয়ার প্রয়োজন কি ?” হজ্জে গমনকালে ব্যবসা করা কিংবা কামাই - রোযগারের জন্য শ্রম করাকে সাধারণত নাজায়েয বলেই ধারণা করা হতো। অনেক লোক আবার হজ্জের সময় পানাহার পর্যন্ত বন্ধ করে দিত এবং এরূপ করাকেও তারা ইবাদত বলে মনে করতো। কোনো কোনো লোক হজ্জে যাত্রা করলে কথাবার্তা পর্যন্ত বন্ধ করে দিত। এর নাম ছিল ‘হজ্জে মুছমিত’ বা ‘বোবা হজ্জ’। এভাবে আরও যে কত প্রকার ভ্রান্ত ও কুপ্রথার প্রচলন হয়েছিল তার ইয়ত্তা নেই। সেগুলোর বিস্তারিত বিবরণ লিখে সময় নষ্ট করতে চাই না। <br />
এরূপ ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা কম- বেশী দু’ হাজার বছর পর্যন্ত ছিল। এ দীর্ঘ সময়ে আরব দেশে কোন নবীর আবির্ভাব হয়নি, আর কোনো নবীর প্রকৃত শিক্ষাও সেই দেশে পৌছেনি। অবশেষে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দোয়া পুর্ণ হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসলো। তিনি কা’ বা ঘর প্রতিষ্ঠার সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেনঃ “হে আল্লাহ !এ দেশে একজন নবী এ জাতির মধ্য থেকেই প্রেরণ কর, যে এসে তাদেরকে তোমার বাণী শুনাবে ; জ্ঞান ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দেবে এবং তাদের নৈতিক চরিত্র সংশোধন করবে।” এ দোয়া আল্লাহর কাছে মঞ্জুর হয়েছিল, তাই তাঁরই অধস্তন পুরুষে একজন কামেল ইনসান’ আবির্ভুত হলেন, যাঁর পাক নাম মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম ইবনে আবদুল্লাহ। <br />
হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যেরূপ পূজারী ও পুরোহিতের বংশে জন্মলাভ করেছিলেন, এ ‘কামেল ইনসান’ হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও অনুরূপ এমন এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন- শতাব্দীকাল ধরে যারা কা’বা ঘরের পৌরোহিত্য করে আসছিল। একচ্ছত্রভাবে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যেরূপ আপন বংশের পৌরোহিত্যবাদের ওপর আঘাত হেনেছিলেন, শেষ নবী হযরাত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ঠিক তেমনি প্রচন্ড আঘাত হেনেছিলেন নিজ বংশীয় পৌরোহিত্য ও পন্ডিতগিরির ওপর। শুধু তাই নয়, তাঁর আঘাতে তা একেবারে মূলোৎপাটিত হয়েছিল। হযরত ইবারাহীম আলাইহিস সালাম যেমন বাতিল মতবাদ ও সমগ্র মিথ্যা খোদায়ী ধ্বংস করা এবং এক আল্লাহর প্রভুত্ব কায়েম করার উদ্দেশ্যে চেষ্টা করেছিলেন, শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তাই করেছিলেন। তিনি হযরত ইবারাহীম আলাইহিস সালামের প্রচারিত প্রকৃত ও নির্মল দ্বীন ইসলামকে পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। একুশ বছরের চেষ্টায় তার এসব কাজ যখন পূর্ণতা লাভ করে তখন আল্লাহ তায়ালার হুকুমে কা’বা ঘরকেই তিনি সমগ্র দুনিয়ায় এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীদের কেন্দ্ররূপে স্থাপনের কথা ঘোষণা করলেন এবং দুনিয়ার সকল দিক থেকেই হজ্জ করার জন্য কা’বা ঘরে এসে জমায়েত হওয়ার আহবান জানালেনঃ <br />
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ <br />
“মানুষের ওপর আল্লাহর হক এই যে, এ কা’বা ঘর পর্যন্ত আসার সামর্থ যাদের আছে তারা হজ্জ করার জন্য এখানে আসবে। যারা কুফুরী করবে (অর্থাৎ সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ করতে আসবে না), তারা জেনে রাখুক যে, আল্লাহ সৃষ্টিজগতের মুখাপেক্ষী নন।”- সূরা আলে ইমরানঃ ৯৭ <br />
এভাবে নব পর্যায়ে হজ্জ প্রবর্তন করার সাথে সাথে জাহেলী যুগে দু’ হাজার বছর যাবত প্রচলিত যাবতীয় কুসংস্কার একেবারে বন্ধ করা হলো। কা’বা গৃহের মূর্তিগুলো ভেংগে ফেলা হলো। আল্লাহ ছাড়া মূর্তির যে পূজা সেখানে হতো তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া হলো। মেলা এবং সকল প্রকার তামাশা ও উৎসব নিষিদ্ধ করে দেয়া হলো। আল্লাহর ইবাদাত করার সঠিক এবং স্বাভাবিক পদ্ধতি প্রচলন করা হলো, আল্লাহর আদেশ হলোঃ <br />
وَاذْكُرُوهُ كَمَا هَدَاكُمْ وَإِنْ كُنْتُمْ مِنْ قَبْلِهِ لَمِنَ الضَّالِّينَ <br />
“(আল্লাহর স্মরণ এবং ইবাদাত করার,) যে পন্থা আল্লাহ তোমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, ঠিক তদনুযায়ী আল্লাহর স্মরণ (ও ইবাদাত) কর যদিও এর পূর্বে তোমরা পথভ্রষ্ট ছিলে (অর্থাৎ স্মরণ ও ইবাদাত করার সঠিক পন্থা জানতে না) ” - সূরা আল বাকারাঃ ১৯৮ <br />
সকল অন্যায় ও বাজে কর্মতৎপরতা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হলোঃ <br />
فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ <br />
“হজ্জ উপলক্ষে কোনরূপ ব্যাভিচার, অশ্লীলতা, আল্লাহদ্রোহিতা, ফাসেকী কাজ এবং ঝগড়া -বিবাদ বা যুদ্ধ - বিগ্রহ করা যাবে না।” <br />
কাব্য আর কবিত্বের প্রতিযোগিতা, পূর্বপুরুষদের কাজ -কর্মের কথা নিয়ে গৌরব -অহংকার এবং পরের দোষ -ক্রটি প্রচার করা বা গালাগাল দেয়া বন্ধ করা হলোঃ <br />
فَإِذَا قَضَيْتُمْ مَنَاسِكَكُمْ فَاذْكُرُوا اللَّهَ كَذِكْرِكُمْ آَبَاءَكُمْ أَوْ أَشَدَّ ذِكْرًا <br />
“হজ্জের অনুষ্ঠানগুলো যখন সম্পন্ন হয়ে যাবে তখন তোমাদের পূর্ব-পুরুষগণ যেভাবে বাপ -দাদার স্মরণ করতো ঠিক অনুরূপ কিংবা তদপেক্ষা বেশী করে তোমরা আল্লাহর স্মরণ কর।” সূরা আল বাকারাঃ২০০ <br />
শুধু লোকদের দেখাবার জন্য বা খ্যাতি অর্জন করার যেসব বদান্যতা ও দানশীলতার গৌরব করা হতো তা সবই বন্ধ হলো এবং তদস্থলে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের আমলের পশু যবেহ করার রীতি প্রচলিত হলো। কারণ এর ফলে গরীব হাজীদেরও কুরবানীর গোশত খাওয়ার সুযোগ মিলত। <br />
“খাও, পান কর, কিন্তু অপচয় করো না ; কারণ আল্লাহ তাআলা অপচয়কারীদেরকে ভালবাসেন না।”-সুরা আল আরাফঃ ৩১ <br />
“খালেছ আল্লাহর উদ্দেশ্যেই এবং তারই নামে এ জন্তুগুলোকে যবেহ কর। যবেহ করার পর যখন প্রাণ একেবারে বের হয়ে যাবে, তখন নিজেরাও তা খাও এবং ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্ত প্রার্থীকেও খেতে দাও।”- সুরা আল হাজ্জঃ ৩৬ <br />
কুরবানীর পশুর রক্ত খানায়ে কা’বার দেয়ালে মর্দন করা এবং গোশত নিক্ষেপ করার কুপ্রথা বন্ধ হলো। পরিস্কার বলে দেয়া হলোঃ <br />
“এসব পশুর রক্ত বা গোশত আল্লাহর কাছে পৌছায় না, তোমাদের তাকওয়া এবং পরহেযগারীই আল্লাহর কাছে পৌঁছতে পারে।” সুরা আল হাজ্জঃ৩৭ <br />
উলংগ হয়ে তাওয়াফ করা একেবারে নিষিদ্ধ হয়ে গেল এবং বলা হলোঃ “হে নবী! আপনি তাদেরকে বলে দিন যে, আল্লাহ তার বান্দাহদের জন্য যেসব সৌন্দর্যবর্ধক জিনিস (অর্থ্যাৎ পোশাক পরিচ্ছদ) মনোনীত করেছেন, তা কে হারাম করলো? ”- সূরা আল আরাফঃ ৩২ <br />
“হে নবী ! আপনি বলে দিন যে, আল্লাহ কখনও নির্লজ্জতার হুকুম দেন না।”- সূরা আল আরাফঃ ৬৮ <br />
“হে আদম সন্তান! সকল ইবাদাতের সময় তোমাদের সৌন্দর্য গ্রহণ (পোশাক পরিধান) কর।” সূরা আল আরাফঃ৩১ <br />
হজ্জের নির্দিষ্ট মাসগুলোকে উল্টিয়ে দেয়া এবং নিষিদ্ধ মাসকে যুদ্ধের জন্য ‘হালাল’ মনে করাকে বিশেষ কড়াকড়ির সাথে বন্ধ করা হলোঃ <br />
“নাসী কুফরীকে অধিকতর বাড়িয়ে দেয় (কুফরীর সাথে স্পর্ধাকে যোগ করে)। কাফেরগন এভাবে আরও অধিক গোমরাহীতে নিমজ্জিত হয়। এক বছর এক মাসকে হালাল মনে করে আবার দ্বিতীয় বছর তার বদলে আর একটি মাসকে হারাম বেঁধে নেয় -যেন আল্লাহর নিষিদ্ধ মাসগুলোর সংখ্যা সমান থাকে। কিন্তু এরূপ কাজ করলে আল্লাহর নিষিদ্ধ জিনিসকেই হালাল করা হয়।” সুরা আত তওবাঃ ৩৭ <br />
সম্বল না নিয়ে হজ্জযাত্রা করা নিষিদ্ধ হলো এবং পরিস্কার বলে দেয়া হলোঃ <br />
“হজ্জ গমনকালে সম্বল অবশ্যই নেবে। কারণ, (দুনিয়ার সফরের সম্বল না নেয়া আখেরাতের সম্বল নয়) আখেরাতের উত্তম সম্বল তো হচ্ছে তাকওয়া ।” সুরা আল বাকারাঃ ১৯৭ <br />
হজ্জের সময় ব্যবসা করা বা অন্য কোনো উপায়ে রুজি -রোযগার করা নিতান্ত অপরাধের কাজ, আর এসব না করাকেই বড় পুণ্যের কাজ মনে করা হতো। আল্লাহ তাআলা এ ভুল ধারণার প্রতিবাদ করে নাযিল করলেনঃ <br />
“(হজ্জে গমনকালে) ব্যবসা করে আল্লাহর অনুগ্রহ স্বরূপ কিছু কামাই রোযগার করলে তাতে কোন অপরাধ নেই।” -সুরা আল বাকারা ১৯৮ <br />
'বোবা’ হজ্জ এবং 'ক্ষুধার্ত -পিপাসার্ত’ হজ্জ হতেও মানুষকে বিরত রাখা হলো। শুধু তাই নয়, এছাড়া জাহেলী যুগের আরও অসংখ্য কুসংস্কার নির্মূল করে দিয়ে তাকওয়া, আল্লাহর ভয়, পবিত্রতা এবং অনাড়ম্বরতাকে মানবতার পূর্ণাংগ আদেশ বলে ঘোষনা করা হলো, হজ্জযাত্রীদেরকে নির্দেশ দেয়া হলো যে, তারা যেন ঘর থেকে বের হবার সময় নিজেদেরকে সকল প্রকার পার্থিব সম্পর্ক থেকে মুক্ত করে নেয়, নফসের খাহেশ ও লালসা যেন ত্যাগ করে, হজ্জ গমন পথে স্ত্রী-সহবাসও যেন না করে, গালাগাল, কুৎসা রটানো, অশ্লীল উক্তি প্রভৃতি জঘন্য আচরণ থেকে যেন দূরে সরে থাকে। কা’বায় পৌঁছার যত পথ আছে, প্রত্যেক পথেই একটি স্থান নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। সেই স্থান অতিক্রম করে কা’বার দিকে অগ্রসর হওয়ার পূর্বে এহরাম বেঁধে গরীবানা পোশাক পরিধান করে নেবে। এতে আমীর গরীব সকলেই সমান হবে, পৃথক কওম, গোত্র প্রভৃতির পার্থক্য ঘুচে যাবে এবং সকলেই এক বেশে- নিতান্ত দরিদ্রের বেশে এক আল্লাহর সামনে বিনয় ও নম্রতার সাথে উপস্থিত হবে। এহরাম বাঁধার পর মানুষের রক্তপাত করা তো দুরের কথা, পশু শিকার করাও নিষিদ্ধ। মানুষের মধ্য থেকে যেন কোনো যুদ্ধ -বিগ্রহ না হয়, এজন্য এ চারটি মাসকে ‘হারাম’ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে কা’বা গমনের সমস্ত পথ নিরাপদ হবে ; হজ্জ যাত্রীদের পথে কোনোরূপ বিপদের আশংকা থাকবে না। এরূপ পবিত্র ভাবধারা সহকারে তারা ‘হেরেম শরীফে’ প্রবেশ করবে- কোনো রূপ রং- তামাশা, নাচ - গান এবং মেলা আর খেলা দেখার উদ্দেশ্যে নয়। এখানে প্রতি পদে পদে আল্লাহর স্মরণ - আল্লাহর নামের যিকর, নামায, ইবাদাত ও কুরবানী এবং কাবা ঘর প্রদক্ষিণ (তাওয়াফ) করতে হয়। আর এখানে একটি মাত্র আওয়াযই মুখরিত হয়ে উঠে, ‘হেরেম শরীফের ’ প্রাচীর আর পাহাড়ের চড়াই উৎরাইয়ের প্রতিটি পথে উচ্চারিত হয়ঃ <br />
“তোমার ডাকেই হাজির হয়েছি, হে আল্লাহ !আমি এসেছি, তোমার কোন শরীক নেই, আমি তোমারই কাছে এসেছি। সকল তা’ রীফ প্রশংসা একমাত্র তোমারই জন্য। সব নেয়ামত তোমারই দান, রাজত্ব আর প্রভুত্ব সবই তোমার। তুমি একক- কেউ তোমার শরীক নেই।” <br />
এরূপ পূত -পবিত্র এবং ঐকান্তিক নিষ্ঠাপূর্ণ হজ্জ সম্পর্কে বিশ্বনবী ইরশাদ করেছেনঃ <br />
“যে ব্যক্তি খাঁটিভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করে এবং এ ব্যাপারে সকল প্রকার লালসা এবং ফাসেকী থেকে দূরে থাকে, সে সদ্যজাত শিশুর মতই (নিষ্পাপ হয়ে) ফিরে আসে।” <br />
অতপর হজ্জের কল্যাণ ও কার্যকারিতা বর্ণনা করার পূর্বে হজ্জ কি রকমের ফরয, তা বলা আবশ্যক। আল্লাহ কালামে পাকে বলেনঃ <br />
“আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছার মতো সামর্থ যার আছে, হজ্জ করা তার ওপর আল্লাহর একটি অনিবার্য নির্দিষ্ট ‘হক’। এতদসত্ত্বেও যে তা অমান্য করবে সে কাফের এবং আল্লাহ দুনিয়া জাহানের মুখাপেক্ষী নন।”- সূরা আল ইমরানঃ ৯৭ <br />
এ আয়াতেই হজ্জ করার সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ না করাকে পরিষ্কার কুফরী বলা হয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে যা বলেছেন, তার মধ্যে দু’টি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছেঃ <br />
مَنْ مَلَكَ زَادًا وَرَاحِلَةً تُبَلِّغُهُ إِلَى بَيْتِ اللَّهِ وَلَمْ يَحُجَّ فَلَا عَلَيْهِ أَنْ يَمُوتَ يَهُودِيًّا أَوْ نَصْرَانِيًّا <br />
“আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছার জন্য পথের সম্বল এবং বাহন যার আছে সে যদি হজ্জ না করে, তবে এ অবস্থায় তার মৃত্যু ইহুদী ও নাসারার মৃত্যুর সমান বিবেচিত হবে।” [তিরমিযী] <br />
مَنْ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنَ الْحَجِّ حَاجَةٌ ظَاهِرَةٌ أَوْ سُلْطَانٌ جَائِرٌ أَوْ مَرَضٌ حَابِسٌ فَمَاتَ وَلَمْ يَحُجَّ فَلْيَمُتْ إِنْ شَاءَ يَهُودِيًّا وَإِنْ شَاءَ نَصْرَانِيًّا <br />
“যার কোনো প্রকাশ্য অসুবিধা নেই, কোন যালেম বাদশাও যার পথ রোধ করেনি এবং যাকে কোন রোগ অসমর্থ করে রাখেনি - এতদসত্ত্বেও সে যদি হজ্জ না করেই মরে যায়, তবে সে ইয়াহুদী ব খৃষ্টান হয়ে মরতে পারে।” [দারেমী] <br />
হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বাখ্যা করে বলেছেনঃ <br />
“সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যারা হজ্জ করেনা ,তাদের ওপর জিজিয়া কর আরোপ করতে ইচছা হয়; কারণ তারা মুসলমান নয়,মুসলমান নয়।’’ <br />
আল্লাহ তায়ালার উল্লিখিত ইরশাদ এবং রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তারঁ খলিফার এ ব্যাখ্যা দ্বারা প্রত্যেকেই বুঝতে পারেন যে, হজ্জ করা সামান্য ফরয নয়। তা আদায় করা না করা মুসলমানদের ইচছাধীন করে দেওয়া হয়নি। বস্তুত যে সব মুসলমানদের কা’বা পর্যন্ত যাওয়া আসার আর্থিক সামর্থ আছে ,শারীরিক দিক দিয়েও যারা অক্ষম নয় তাদের পক্ষে জীবনের মধ্যে একবার হজ্জ করা অবশ্য কর্তব্য । তা না করে কিছুতেই মুক্তি নেই । দুনিয়ার যে কোণেই বাস করুক না কেন এবং যার ওপর ছেলে-মেয়ে ও কারবার কিংবা চাকরি-বাকরির যত বড় দায়িত্বই অর্পিত হোকনা কেন, সামর্থ থাকা সত্ত্বেও একজন মুসলমান যদি হজ্জকে এড়াতে চায় এবং অসংখ্য ব্যস্ততার অজুহাতে বছরের পর বছর তাকে ক্রমাগত পিছিয়ে দেয়-সময় থাকতে আদায় না করে ,তবে তার ঈমান আছে কিনা সন্দেহ । আর যাদের সমগ্র জীবনও হজ্জ আদায় করার কর্তব্য পালনের কথা মনে জাগে না , দুনিয়ার দিকে দিকে, দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায়- ইউরোপ-আমেরিকা যাতায়াতকালে হেজাযের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে -কা’বা ঘর যেখান থেকে মাত্র কয়েক ঘন্টার পথ, তবুও হজ্জ আদায় করার খেয়ালও তাদের মনে জাগ্রত হয়না -তারা কিছুতেই মুসলমান নয়; মুসলমান বলে দাবী করার কোনোই অধিকার তাদের নেই, দাবী করলেও সেই দাবী হবে মিথ্যা। আর যারা তাদেরকে মুসলমান মনে করে ,তারা কুরআন শরীফের বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ, জাহেল ।এসব লোকের মনে যদি মুসলিম জাতির জন্যে দরদ থাকে তবে থাকতে পারে ; কিন্তু তার কোনোই সার্থকতা নেই । কারণ তাদের হৃদয়-মনে আল্লাহর আনুগত্য ও তার বিধানের প্রতি ঈমানের কোনো অস্তিত্ব নেই, একথা স্বতঃসিদ্ধ । <br />
হজ্জের বৈশিষ্ট্য<br />
কুরআন শরীফে যেখানে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে হজ্জের জন্যে সাধারণ দাওয়াত দেয়ার হুকুমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে এর প্রথম কারণ হিসেবে বলা হয়েছেঃ <br />
-মানুষ এসে দেখুক যে ,এ হজ্জব্রত উদযাপনে তাদের জন্যে কি কি কল্যাণ নিহিত রয়েছে অর্থাৎ হজ্জের সময় আগমন করে কা’বা শরীফে একত্রিত হয়ে তারা নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করবে যে , তা তাদের জন্যে বস্তুতই কল্যাণ কর । কেননা এতে যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে , তা মানুষ নিজ চোখে দেখেই অনুধাবন করতে পারে।একটি বর্ণনা হতে জানা যায় যে হযরত ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহি হজ্জ করার পূর্ব পর্যন্ত ঠিক বুঝতে পারেননি যে, ইসলামি ইবাদত সমুহের মধ্যে কোনটি সর্বোত্তম; কিন্তু যখনই তিনি হজ্জ করে তার অন্তর নিহিত কল্যাণ প্রত্যক্ষ করলেন, তখন স্পষ্ট কন্ঠে বলে উঠলেন, ‘হজ্জ-ই সর্বোত্তম ইবাদত’। <br />
এখানে হজ্জের বৈশিষ্ট্য ও কল্যাণকারিতা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হচেছ। দুনিয়ার মানুষ সাধারনত দু’প্রকারের ভ্রমণ করে থাকে। এক প্রকারের ভ্রমণ করা হয় রুযি-রোযগারের জন্যে আর এক প্রকারের ভ্রমণ হয় আনন্দ-র্ষ্ফুতি ও অবসর বিনোদনের উদ্দেশ্যে। এ উভয় প্রকারের ভ্রমনেই মানুষের নিজের স্বার্থ ও প্রবৃত্তিই তাকে ভ্রমণে বের হতে উদ্বুদ্ধ করে । নিজের গরজেই ঘর-বাড়ী ত্যাগ করে , নিজের কোনো পার্থিব উদ্দেশ্যেই সন্তান সন্ততি ও আত্মীয় -স্বজন হতে দূরে চলে যায় । আর এ ধরনের সফরে সে টাকা- পয়সা যা কিছুই খরচ করে নিজের উদ্দেশ্য লাভের জন্যেই করে থাকে । কাজেই এসব সফরে মানুষকে আসলে কিছুই কুরবানী বা আত্মত্যাগ করতে হয়নি । কিন্তু হজ্জ উপলক্ষ্যে যে সফর করা হয় তা উল্লেখিত সফর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এটা নিজের কোনো গরযে কিংবা নিজের প্রবৃত্তির লালসা পূরণ করার জন্যে করা হয়না ; বস্তুত এটা করা হয় খালেছভাবে আল্লাহ তায়ালার জন্যে এবং আল্লাহর র্নিদিষ্ট উদ্দেশ্য পূর্ণ করার মানসে । এজন্যেই মানুষের মনে যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর প্রেম ভালোবাসা ও আল্লাহর ভয় জাগ্রত না হবে এবং আল্লাহর নির্ধারিত ফরযকে ফরয বলে মনে না করা হবে , ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ এ সফরে যাওয়ার জন্যে কিছুতেই উদ্যোগী হতে পারে না। কাজেই যে ব্যক্তি একটি দীর্ঘকালের জন্যে নিজের ঘর-বাড়ী, আত্বীয় -স্বজনের সাথে সর্ম্পক ত্যাগ করে এবং নিজের কারবার এর ক্ষতি, অর্থ ব্যয় ও সফরের কষ্ট স্বীকার করে হজ্জের জন্যে বের হবে ,তার এভাবে বের হওয়াই প্রমাণ করে যে তার মনে আল্লাহর ভয় ও ভালবাসা আছে । আল্লাহর ফরযকে সে ফরয বলে মনে করে এবং মানসিকভাবে সে এত দূর প্রস্তুত যে , বাস্তবিকই যদি কখনো আল্লাহর পথে বের হওয়ার প্রয়োজন হয় তখন সে অনায়াসেই গৃহ ত্যাগ করতে পারবে । কষ্ট স্বীকার করতে পারবে , নিজের ধন-সম্পদ এবং আরাম-আয়েশ সবকিছু আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্যে কুরবান করতে পারবে । <br />
এ পবিত্র ইচছা নিয়ে যখন সে হজ্জের সফরে যাবার জন্যে তৈরী হয় তখন স্বভাব -প্রকৃতি সম্পূর্ন আলাদা ধরনের হয়ে যায় । তার অন্তরে বাস্তবিকই আল্লাহর প্রেমের উদ্দিপনা স্বতঃষ্ফূর্ত হয়ে ওঠে। বস্তুত সে সেই দিকের জন্যে পাগল হয়ে ওঠে ,তার মনে তখন নেক ও পবিত্র ভাবধারা ছাড়া অন্য কিছুই জাগ্রত হতে পারেনা । <br />
সে পূর্বকৃত যাবতীয় গুনাহ থেকে তাওবা করে ,সকলের কাছে ভুল -ত্রুটির জন্যে মাপ চায় , পরের হক যা এ যাবত আদায় করেনি তা আদায় করে , কারণ ঋণের বোঝা নিয়ে আল্লাহর সামনে হাজির হওয়া সে মোটেই পছন্দ করেনা । সকল প্রকার পাপ ও অন্যায় চিন্তা থেকে তার মন পবিত্র হয়ে যায় ।স্বভাবতই তার মনের গতি মংগলের দিকেই নিবদ্ধ হয়, সফরে বের হওয়ার পর সে যতই অগ্রসর হতে থাকে ততই তার হৃদয় -মনে পৃণ্য ও পূত ভাবধারার তরংগ খেলে ওঠে । তার কোনো কাজ যেন কারো মনে কোনোরূপ আঘাত না দেয়, আর যারই যতটুকু উপকার করা যায় সেই সমস্ত চিন্তা এবং চেষ্টাই সে করতে থাকে। অশ্লীল ও বাজে কথা-বার্তা, নির্লজ্জতা, প্রতারণা-প্রবঞ্চনা এবং ঝগড়া-ফাসাদ ইত্যাদি কাজ থেকে তার প্রকৃতি স্বভাবতই বিরত থাকে। কারণ সে আল্লাহর ‘হারাম শরীফের’ যাত্রী তাই অন্যায় কাজ করে এ পথে অগ্রসর হতে সে লজ্জিত না হয়ে পারে না । তার সফরটাই যে ইবাদত, এ ইবাদতের কাজে যুলুম, আর পাপ কাজের কি অবকাশ থাকতে পারে? অতএব দেখা যাচ্ছে যে, অন্যান্য সকল প্রকার সফর থেকে এ সফর সম্পূর্ণ আলাদা। মানুষের মনকে এ সফর প্রতিনিয়ত পূত-পবিত্র করতে থাকে । সত্য বলতে গেলে এটা একটি বিরাট সংশোধনকারী কোর্স বিশেষ, প্রত্যেক হজ্জ যাত্রী মুসলমানকেই এ অধ্যায় অতিক্রম করতে হয়। <br />
সফরের একটি অংশ সমাপ্ত করার পর এমন একটি স্থান সামনে আসে যেখানে পৌছে প্রত্যেক মক্কাযাত্রী মুসলমান ‘এহরাম’ বাঁধতে বাধ্য হয় । এটা না করে কেউ সামনে অগ্রসর হতে পারে না। এই ‘এহরাম’ কি ? একটি সিলাই না করা লুংগী, একখানি চাদর এবং সিলাইবিহীন জুতা ছাড়া অন্য কিছুই নয়। এর অর্থ এই যে, এতকাল তুমি যাই থাক না কেন , কিন্তু এখন তোমাকে ফকিরের বেশেই আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে। কেবল বাহ্যিক ফকীরই নয়, প্রকৃতপক্ষে অন্তরেও ফকীর হতে চেষ্টা কর। রঙীন কিংবা জাকজমকপূর্ণ সকল পোশাক খুলে রাখ, সাদাসিধে ও দরবেশ জনোচিত পোশাক পরিধান কর। মোজা পরবে না, পা উন্মুক্ত রাখ, কোনো প্রকার সুগন্ধি ব্যবহার করবে না, চুল কেট না, সকল প্রকার অলংকার ও জাকজমক পরিহার করা। স্বামী -স্ত্রী সংগম হতে দূরে থাক, যৌন উত্তেজক কোন কাজ করো না, শিকার করো না। আর কোনো শিকারীকে শিকারের কাজে সাহায্য করো না। বাহ্যিক জীবনে যখন এরূপ বেশ ধারণ করবে তখন মনের ওপরও তার গভীর ছাপ মুদ্রিত হবে ভিতর হতেও তোমার মন সত্যিকারভাবে ‘ফকির’ হবে। অহংকার ও গৌরব দূরীভুত হবে, গরীবানা ও শান্তি -প্রিয়তার ভাব ফুটে ওঠবে। পার্থিব সুখ- সম্ভোগে লিপ্ত হওয়ার ফলে তোমার আত্মা যতখানি কলংকিত হয়েছিল তা দূর হয়ে যাবে এবং আল্লাহর বন্দেগী করার পবিত্র ভাবধারা তোমরা জীবনের ভিতর ও বাইর উভয় দিককেই মহীয়ান করে তুলবে। <br />
‘এহরাম’ বাঁধার সাথে সাথে হাজীকে একটি বিশেষ দোয়া বার বার পড়তে হয়। প্রত্যেক নামাযের পর, পথের প্রত্যেক চড়াই- উৎরাইয়ের সময়, কাফেলার সাথে মিলিত হবার সময় এবং প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠার সময়। দোআটি এইঃ <br />
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ <br />
বস্তুত হযরত ইবারাহীম আলাইহিস সালাম সাড়ে চার হাজার বছর পূর্বে আল্লাহর আদেশে (হজ্জ করার জন্য) যে সার্বজনীন আহবান জানিয়েছিলেন, তার জবাবেই এ দোয়া পাঠ করার নিয়ম হয়েছে। পঁয়তাল্লিশ শত বছর আগে, আল্লাহর এ আহ্ববানকারী ডেকে বলেছিলেনঃ “আল্লাহর বান্দাগণ! আল্লাহর ঘরের দিকে আস, পৃথিবীর প্রতি কোণ থেকে ছুটে আস। পায়ে হেটে আস, কিংবা যানবাহনে চড়ে আস।” এর জবাব স্বরূপ আজ পর্যন্ত ‘হারাম শরীফের’ প্রতিটি মুসাফির উচ্চৈস্বরে বলে ওঠেছেঃ “আমি এসেছি, হে আল্লাহ, আমি হাজির হয়েছি। কেউ তোমার শরীক নেই, আমি কেবল তোমারই আহবানক্রমে এসেছি, সব তারীফ প্রশংসা তোমারই দান, কোন কিছুতেই তোমার কেউ শরীক নেই।” <br />
এভাবে ‘লাব্বায়েকের’ প্রত্যেকটি ধ্বনির মারফত হযরত ইবারাহীম আলাইহিস সালাম ও ইসমাঈল আলাইহিস সালামের আমল থেকে প্রচলিত ইসলামী আন্দোলনের সাথে ‘হাজী’র নিবিড় সম্পর্ক স্থাপিত হয়। সাড়ে চার হাজার বছরের দূরত্ব মাঝখান হতে সরে গিয়ে একাকার হয়ে যায়। মনে হয় যেন এদিক থেকে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহর তরফ থেকে ডাকছেন, আর ওদিক থেকে প্রত্যেক হাজীই তার জবাব দিচ্ছে- জবাব দিতে দিতে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে । যতই সামনে অগ্রসর হয় ততই তার মনে প্রাণে উৎসাহ উদ্দীপনা এবং আধ্যাত্মিক ভাবের ঝর্ণাধারা অধিকতর বেগে প্রবাহিত হতে থাকে। পথের প্রত্যেক চড়াই - উৎরাইয়ের সময় তার কানে আল্লাহর আহবান ধ্বনিত হয়, আর সে তার জবাব দিতে দিতে অগ্রসর হয়। কাফেলার পর কাফেলা আসে, আর প্রত্যেকেই প্রেমিক পাগলের ন্যায় এই পয়গাম শুনে বলে উঠেঃ “আমি এসেছি, আমি হাজির হয়েছি।” প্রতিটি নূতন প্রভাত তার কাছে বন্ধুর পয়গাম বহন করে আনে,আর উষার ঝলকে চোখ খোলার সাথে সাথেই আমি এসেছি,’হে আল্লাহ! আমি হাজির হয়েছি’, বলে আওয়াজ দিতে থাকে । মোটকথা বারবার দেয়া এ আওয়াজ এহরামের গরীবানা পোশাক, সফরের অবস্থা এবং প্রত্যেকটি মঞ্জিলে কা’বা ঘরের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য নৈকট্যের ভাব উম্মাদনায় এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি হয় যে হাজী আল্লাহর অতল স্পর্শ গভীর প্রেমে আত্মমগ্ন হয়ে যায় এবং সেই এক বন্ধুর স্মরণ ভিন্ন তার জীবনের কোথাও অন্য কিছুর অস্তিত্ব থাকে না। <br />
এ অবস্থার ভিতর দিয়ে হাজী মক্কায় উপনীত হয় এবং সেখানে পৌছেই সোজা আসল লক্ষ্যস্থলের দিকে ছুটে যায়। বন্ধুর আস্তানাকে চুম্বন করে।তারপর নিজের আকীদা-বিশ্বাস, ঈমান, মতবাদ, দ্বীন ও ধর্মের কেন্দ্রস্থলের চারদিকে প্রদক্ষিণ করে ততবারই আস্তানাকে চুম্বন করে।(১)প্রত্যেক বারের তাওয়াফ কা’বা ঘরের কালো পাথর চুমু দিয়ে শুরু ও শেষ করা হয়। এখানে থেকে বের হয়ে ‘সাফা’ পর্বতে আরোহণ এবং এখান থেকে যখন কা’বা ঘরের দিকে তার দৃষ্টি পড়ে, তখন সে উচ্চস্বরে বলে ওঠেঃ <br />
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَلَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ <br />
"আল্লাহ ছাড়া আর কেউ মা’বুদ নেই, আমরা অন্য কারো বন্দেগী করি না ; আমরা কেবল একনিষ্টভাবে আল্লাহরই আনুগত্য স্বীকার করি - কাফেরদের কাছে এটা যতই অসহনীয় হোক না কেন।” <br />
অতপর ‘সাফা’ ও মারাওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যস্থলে দৌঁড়াতে হয়। এর দ্বারা হাজী একথা প্রমান করে যে, সে আল্লাহর নৈকট্য এবং তার সন্তোষ হাসিল করার উদ্দেশ্যে সবসময় এমন করে দৌড়াতে প্রস্তুত থাকবে। এ দৌড়ের সময়ও তার মুখ থেকে উচ্চারিত হতে থাকেঃ <br />
أَللَّهُمَّ اسْتَعْمَلْنِيْ بِسُنَّةِ نَبِيِّكَ وَتَوَفَّنِيْ عَلَى مِلَّتِهِ وَأَعِذْنِيْ مُّضِلاَّتِ الْفِتَنِ <br />
“হে আল্লাহ ! আমাকে তোমার নবীর আদর্শ ও রীতিনীতি অনুসারে কাজ করার তাওফীক দাও। তোমার নবীর পথেই যেন আমার মৃত্যু হয় এবং সত্য পথভ্রষ্টকারী ফেতনা থেকে আমাকে রক্ষা কর।” <br />
কখনো কখনো এই দোয়া পড়া হয়ঃ <br />
اغْفِرْ وَأَرْحَمْ وَتَجَا وَزَعَمَّا تَعْلَمُ إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعَزُّ الْأَكْرَمُ <br />
“হে রব! ক্ষমা কর, দয়া কর, আমার যেসব অপরাধ সম্পর্কে তুমি অবহিত তা মাফ করে দাও। তোমার শক্তি সবচেয়ে বেশী, দয়াও অতুলনীয়।” <br />
এরপর হাজী যেন আল্লাহর সৈনিকে পরিণত হয়। তাই পাচঁ ছয় দিন পর্যন্ত তাকে ক্যাম্পে জীবন কাটাতে হয়। একদিন ‘মিনা’র ছাউনীতে অতিবাহিত করতে হয়, পরের দিন আরাফাতে অবস্থান করতে হয় এবং সেনাপতির ‘খুতবার’ নির্দেশ শুনতে হয়। রাতে মুজাদালিফায় গিয়ে ক্যাম্প স্থাপন করতে হয়। দিন শেষে আবার ‘মিনায়’ ফিরে যেতে হয় এবং এখানে পাথর টুকরা নিক্ষেপ করে ‘চাঁদমারী’ করতে হয়। আবরাহা বাদশার সৈন্য- সামন্ত কা’বা ঘর ধ্বংস করার জন্য এ পর্যন্ত এসে পৌছেছিল । প্রত্যেকটি পাথর নিক্ষেপ করার সাথে সাথে আল্লাহর সিপাহী বলে উঠেঃ <br />
اَللهُ أَكْبَرْ رَغَماً لِلشَّيْطَانِ وَحِزْبِهِ <br />
“আল্লাহ মহান। শয়তান ও তাঁর অনুসারীদের মুখ ধূলায় মলিন হোক।” এবং- أَللَّهُمَّ تَصْدِيْقاً بِكِتَابِكَ وَإِِتِّبَاعاً لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ “হে আল্লাহ ! তোমার গ্রন্থের সত্যতা ঘোষণার ও তোমার নবীর আদেশ অনুসরণের তাওফীক দাও।” <br />
পাথর টুকরা দিয়ে চাঁদমারী করার অর্থ এ কথা প্রকাশ করা যে, হে আল্লাহ ! তোমার দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য কিংবা তোমার আওয়াজকে স্তব্ধ করার জন্য যে -ই চেষ্টা করবে, আমি তোমার বাণীকে উন্নত ও প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তার বিরুদ্ধে এমনি করে লাড়াই করবো। তারপর এ স্থানেই কুরবানী করা হয়। এটা দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জীবন বিসর্জন দেয়ার ইচ্ছা ও বাসনার বাস্তব এবং সক্রিয় প্রমান উপস্থিত করা হয়। এরপর সেখান থেকে কা’বার দিকে যাত্রা করা হয়- যেন ইসলামের মুজাহিদগন কর্তব্য সমাধা করে বিজয়ীর বেশে ‘হেড কোয়ার্টারের’ দিকে ফিরে যাচ্ছে। তাওয়াফ এবং দু’ রাকআত নামায পড়ার পর এহরাম খোলা হয়। এহরাম বাঁধার কারণে যেসব কাজ হারাম হয়েছিল এখন তা হালাল হয়ে যায়, হাজীর জীবন এখন স্বাভাবিক গতিতে চলতে থাকে। এ জীবন শুরু হওয়ার পর আবার তাকে ‘মিনায়’ গিয়ে ক্যাম্প গাড়তে হয় এবং পরের দিন পাথরের সেই তিনটি স্তম্ভের ওপর আবার কংকর দ্বারা চাঁদমারী করতে হয়। এটাকে ইসলামী পরিভাষায় বলা হয় ‘জুমরাত’। এটা আবরাহা বাদশার মক্কা আক্রমণকারী ফৌজের পশ্চাদপসরণ ও তাকে পরাভুত করার প্রতীক মাত্র। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের বছর হজ্জের সময়ই আল্লাহর ঘর ধ্বংস করার উদ্দেশ্য নিয়ে আবরাহা এসেছিল। আল্লাহর তরফ থেকে আসমানী পাখী কংকর নিক্ষেপ করেই তাদেরকে নাস্তানাবুদ করে দেয়। তৃতীয় দিবসে পুনরায় সেই স্তম্ভগুলোর ওপর পাথর নিক্ষেপ করার পর হাজী মক্কা প্রত্যাবর্তন করে এবং সাতবার তার দ্বীনের কেন্দ্র কা’বা ঘরের তাওয়াফ করে। এ তাওয়াফকে বিদায়ী তাওয়াফ বলা হয়। এটা সম্পন্ন হলেই হজ্জের কাজ সমাপ্ত হয়। <br />
হজ্জের নিয়ত এবং সে জন্য প্রস্তুতি ও যোগাড় যন্ত্র থেকে শুরু করে পুনরায় নিজ বাড়িতে ফিরে আসা পর্যন্ত কমবেশী তিন মাস কাল ধরে হাজীর মন- মগযে কত বিরাট ও গভীর খোদায়ী ভাবধারা পুঞ্জীভূত হয়ে থাকে ওপরের এই বিস্তারিত আলোচনা থেকে তা অনুমান করা খুবই সহজ। এ কাজে শুরু থেকেই সময়ের কুরবানী করতে হয়, অর্থের কুরবানী করতে হয, সুখ-শান্তি ত্যাগ করতে হয়, অসংখ্য পার্থিব সম্পর্ক - সম্বন্ধ ছিন্ন করতে হয়। হাজীর নিজের মনের অনেক ইচ্ছা - বাসনা স্বাদ - আস্বাদনকে উৎসর্গ করতে হয়। আর এ সবকিছুই তাকে করতে হয় কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য - নিজস্ব কোনো স্বার্থ তাতে স্থান পেতে পারে না। তারপর এ সফরে তাকওয়া-পরহেযগারীর সাথে সাথে আল্লাহর স্মরণ এবং আল্লাহর দিকে মনের ঔৎসুক্য ও আগ্রহ যত বৃদ্ধি পায়, তাও মানুষের মনের ওপর স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করে, বহুদিন পর্যন্ত সেই প্রভাব স্থায়ী হয়ে থাকে।হারাম শীরফে’ কদম রেখে হাজী প্রত্যেক পদে পদে সেসব মহামানবদের অতীত কর্মধারার স্পষ্ট নিদর্শন দেখতে পায়। যারা আল্লাহর বন্দেগী ও আনুগত্য করে এবং আল্লাহর দীন ইসলামকে কায়েম করতে গিয়ে নিজেদের যথাসর্বস্ব কুরবানী করেছেন, যারা সারা দুনিয়ার বিরুদ্ধে লাড়াই করেছেন, নানা প্রকার দুঃখ - লাঞ্জনা অকাতরে সহ্য করেছেন, নির্বাসন দন্ড ভোগ করেছেন, অসংখ্য যুলম বরদাশত করেছেন, কিন্তু আল্লাহর দীনকে কায়েম না করা পর্যন্ত তারা এতটুকু ক্লান্তিবোধ করেননি। যেসব ‘বাতিল’ শক্তি মানুষকে এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দাসত্ব করতে বাধ্য করছিল, তাঁরা তাদের সকলেরই মস্তক চূর্ণ করে দীন ইসলামের পতাকা উন্নত করে ধরেছেন। <br />
এসব সুস্পষ্ট নিশানা ও বরকত মন্ডিত নিদর্শনসমূহ প্রত্যক্ষ করে একজন আল্লাহ বিশ্বাসী ব্যক্তি প্রবল ইচ্ছা-বাসনা, সাহস ও আল্লাহর পথে জিহাদ করার যে প্রাণস্পর্শী শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে। তা অন্য কোন জিনিস থেকে গ্রহণ করতে পারে না। কা’বা ঘরের তাওয়াফ করায় দ্বীন ইসলামের কেন্দ্র বিন্দুর সাথে হাজীর নিবিড় সম্পর্ক স্থাপিত হয়। হজ্জ সম্পর্কীয় অন্যান্য কার্যাবলী দ্বারা হাজীর জীবনকে সৈনিকের ট্রেনিং দিয়ে গঠন করা হয় । নামাজ, রোজা এবং যাকাতের সাথে এসবকে মিলিয়ে যাচাই করলে পরিস্কার মনে হবে যে, ইসলাম এসব কিছুর সাহায্যে কোন এক বিরাট উদ্দেশ্যে মানুষকে ট্রেনিং দান করে। এর জন্যই মক্কা পর্যন্ত যাতায়াতের সামর্থ্য সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলমানের প্রতি হজ্জ ফরজ করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য এই যে, প্রতি বছরই অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যক মুসলমান ইসলামের এ প্রাণ কেন্দ্রে আসবে এবং ট্রেনিং লাভ করে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রের দিকে ফিরে যাবে। <br />
অতপর আরো একটি দিক লক্ষ্য না করলে হজ্জের কল্যাণ ও স্বার্থকতা পরিপূর্ণরূপে হৃদয়ংগম করা যাবে না। এক একজন মুসলমান কখনো একাকী হজ্জ করে না। দুনিয়ার সমগ্র মুসলমানের জন্যই হজ্জ করার একটি তারিখ নির্দিষ্ট করা হয়েছে। হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মুসলমান একত্রিত হয়ে একই সময়ে হজ্জ করে। ওপরের কথা দ্বারা আপনি শুধু এতটুকু বুঝতে পারেন যে, আলাদাভাবে একজন মুসলমান হজ্জ করলে তার ওপর তার কতখানি প্রভাব পড়া সম্ভব। পরবর্তী প্রবন্ধের মারফতে আপনি বিস্তারিতরূপে জানতে পারেবেন যে, দুনিয়ার মুসলমানদের জন্য হজ্জের একটি সময় নির্দিষ্ট করে দিয়ে হজ্জের কল্যাণ কত লক্ষগুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে একটি কাজে দু’টি ফল নয়, কয়েক হাজার ফল লাভের সুযোগ করে দেয়া একমাত্র ইসলামেরই এক অতুলনীয় কীর্তি। নামায আলাদাভাবে পড়ারও ফায়দা কম নয়। কিন্তু তার সাথে জামায়াতে শামিল হয়ে ইমামের পিছনে নামায পড়ার শর্ত করে দিয়ে এবং জুময়া ও দু’ ঈদের নামায জামায়াতের সাথে পড়ার নিয়ম করে তার ফায়দা অসংখ্য গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে রোযা রাখায় রোযাদারদের মন ও চরিত্র গঠন কাজ কম সাধিত হতো না। কিন্তু সকল মুসলমানের জন্য একটি মাসকে রোযার জন্য নির্দিষ্ট করে তার ফায়দা এত পরিমান বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে, যা গুণে শেষ করা যায় না। এক একজন লোকের ব্যক্তিগতভাবে যাকাত আদায় করার উপকারিতাও কম নয়; কিন্তু বায়তুলমালের মারফত যাকাত দেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে তার উপকারিতা এতদূর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে যে, ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম না হওয়া পর্যন্ত সঠিকভাবে এর ধারণাও করা যায় না। কারণ ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনেই সকল মুসলমানের যাকাত ‘বায়তুলমালে’ জমা করা হয় এবং সুসংবদ্ধভাবে প্রাপকের মধ্যে বন্টন করা হয়। ফলে তাতে সমাজের অভাবগ্রস্ত লোকদের অপূর্ব কল্যাণ সাধিত হয়। হজ্জের ব্যাপারেও তাই। একাকী হজ্জ করলেও হাজার হাজার মানুষের জীবনে বিরাট বিপ্লব সুচিত হতে পারে। কিন্তু দুনিয়ার মুসলমানকে একত্রিত হয়ে হজ্জ করার রীতি করে দিয়ে সীমাহীন কল্যাণ লাভের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। <br />
<span style="font-weight: bold;">হজ্জের বিশ্ব সম্মেলন </span><br />
যেসব মুসলমানের ওপর হজ্জ ফরয হয় অর্থাৎ যারা কা’বা শরীফ পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারে এমন লোক দু’ একজন নয়। প্রত্যেক এলাকায় তাদের সংখ্যা নিতান্ত কম হয় না। বলতে গেলে প্রত্যেক শহরে কয়েক হাজার এবং প্রত্যেক দেশে কয়েক লক্ষ পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রত্যেক বছরই এদের অধিকাংশ লোকই হজ্জ করার ইচ্ছা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়। দুনিয়ার যেসব জায়গায় মুসলমান বসবাস করে, তথায় হজ্জের মৌসুম নিকটবর্তী হওয়ার সাথে সাথে ইসলামী যিন্দেগীর এক নতুন চেতনা কিরূপ জেগে ওঠে, তা সত্যই লক্ষ্য করার মত। প্রায় রমযান থেকে শুরু করে যিলকদ মাস পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গা থেকে শত শত লোক হজ্জ যাত্রায় আয়োজন করে রওয়ানা হয়। আর ওদিকে মহররম মাসের শেষ দিক থেকে সফর, রবিউল আউয়াল তথা রবিউস্সানী পর্যন্ত হাজীদের প্রত্যাবর্তনের ধারা চলতে থাকে। এ ছয় মাসকাল পর্যন্ত সকল মুসলিম লোকালয় এক প্রকার ধর্মীয় ভাবধারায় সরগরম হয়ে থাকে। যারা হজ্জে গমন করে আর হজ্জ করে ফিরে আসে, তারা তো ধর্মীয় ভাবধারায় নিমগ্নই হয়ে থাকে ; কিন্তু যারা হজ্জে গমন করে না, হাজীদের রওনা করাতে, এক একটি ষ্টেশন থেকে তাদের চলে যওয়া আবার ফিরে আসার সময় তাদের অভ্যর্থনা করায় এবং তাদের কাছে হজ্জের বিস্তারিত অবস্থা শুনার ব্যপারে তারাও কিছুটা হজ্জে গমনের আনন্দ লাভ করে থাকে। <br />
এক একজন হাজী যখন হজ্জে গমনের নিয়ত করে, সেই সাথে তাদের মধ্যে আল্লাহর ভয় এবং পরহেযগারী, তাওবা -ইসতেগফার এবং উন্নত ও পবিত্র চরিত্রের ভাবধারা জেগে ওঠে। সে তারা প্রিয় আত্মীয় ও বন্ধু বান্ধব, সহকর্মী এবং সংশ্লিষ্ট সকল লোকের কাছে বিদায় চায়। নিজের সব কাজ - কারবারের চুড়ান্ত রূপ দিতে শুরু করে । এতে মনে হয় যে, সে এখন আর আগের মানুষ নয়, আল্লাহর দিকে তার মনের আকর্ষন হাওয়ায় দিল পবিত্র হয়ে গেছে। এভাবে এক একজন হাজীর এ পরিবর্তনে তার চারপাশে লোকদের ওপর কত গভীর প্রভাব পড়ে তা অনুমান করা যায়। এরূপ প্রত্যেক বছরই যদি দুনিয়ার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে গড়ে এক লক্ষ লোকও এই হজ্জ সম্পন্ন করে, তবে তাদের এ গতিবিধি ও কার্যকলাপের প্রভাব আরো কয়েক লক্ষ লোকের চরিত্রের ওপর না পড়ে পারে না। তারপর হাজীদের কাফেলা যে স্থান অতিক্রম করে, তাদেরকে দেখে তাদের সাথে সাক্ষাত করে ‘লাব্বাইকা’ আওয়ায শুনে সেখানকার কত মানুষের দিল অলৌকিক ভাবধারায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। কত মানুষের লক্ষ্য আল্লাহর ঘরের দিকে ফিরে যায়। আর কত লোকের নিদ্রিত আত্মা হজ্জ করার উৎসাহে জেগে ওঠে । এসব লোক যখন আবার নিজ নিজ দেশের দিকে -দুনিয়ার বিভিন্ন দিকে হজ্জের প্রাণস্পর্শী ভাবধারা বিস্তার করে প্রত্যাবর্তন করে এবং দলে দলে মানুষ তাদের সাথে সাক্ষাত করতে আসে, তাদের কাছ থেকে আল্লাহর ঘরের আলোচনা শুনে কত অসংখ্য মানুষের মনে এবং অসংখ্য পরিমন্ডলে ইসলামী ভাবধারা জেগে ওঠে। <br />
এ জন্যই আমি বলতে চাই যে, রযমান মাস যেরূপ বিশ্ব মুসলিমের জন্য তাকওয়া ও পরহেযগারীর মৌসুম তেমনি হজ্জের মাসও বিশ্ব ইসলামী পুনর্জাগরণের মৌসুম। মহান বিজ্ঞ আল্লাহ এ ব্যবস্থা এ জন্য করেছিলেন যেন বিশ্ব ইসলামী আন্দোলন শ্লথ না হয়ে যায়। পবিত্র কা’বাকে বিশ্বের কেন্দ্র ভুমি হিসেবে এমনভাবে স্থাপন করেছেন যেন মানব দেহের মধ্যে হৃদয়ের অবস্থান। দেহে যতই রোগাক্রান্ত হোক না কেন যত দিন হৃদয়ের স্পন্দন থেমে না যায় এবং সমগ্র দেহ রক্ত সঞ্চালনের পদ্ধতি বন্ধ হয়ে না যায় ততদিন যেমন মানুষের মৃত্যু হয় না সেরূপ হজ্জের এ সম্মেলন ব্যবস্থাও যতদিন থাকবে ততদিন ইসলামী আন্দোলনও চলতে থাকবে। <br />
একটু চোখ বন্ধ করে চিন্তা করলেই আপনাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠবে যে, পৃথিবীর দূর দূরান্তের অঞ্চল থেকে আগত অসংখ্য মানুষ যাদের আকার -আকৃতি, দৈহিক রং ও ভাষা, পোশাক -পরিচ্ছদ বিভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও যখনই কেন্দ্রের নিকটবর্তী হয় সবাই নির্দিষ্ট স্থানে এসে নিজ নিজ পোশাক -পরিচ্ছদ খুলে ফেলে এবং সকলে একই ধরনের অনাড়ম্বর ‘ইউনিফরম’ পরিধান করে। এহরামের এ ‘ইউনিফরম’ ধারণ করার পর পরিষ্কার মনে হয় যে, দুনিয়ার হাজার হাজার জাতির মধ্য থেকে এই যে লক্ষ লক্ষ ফোজ আসছে, এরা বিশ্বের বাদশাহ ও যমীন - আসমানের রাজাধিরাজ এক আল্লাহ তাআলারই ফৌজ। এরা দুনিয়ার হাজার হাজার জাতি ও কওম থেকে ভর্তি হয়েছে। এরা সকলে একই বাদশাহর ফৌজ। এদের সকলের ওপর একই সম্রাটের আনুগত্য ও গোলামীর চিহ্ন লেগে আছে, একই বাদশাহর আনুগত্যের সূত্রে এরা সকলেই পরস্পর বিজড়িত রয়েছে এবং একই রাজধানীর দিকে, মহাসম্রাটের সামনে উপস্থিত হবার জন্য ছুটে চলেছে। একই ‘ইউনিফরম’ পরিহিত এ সিপাহী ‘মীকাত’ অতিক্রম করে যখন সামনে অগ্রসর হয়, তখন সকলের কণ্ঠ থেকে এ একই ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়ে আকাশ -বাতাস মুখরিত করে তোলেঃ <br />
উচ্চারণের কন্ঠ বিভিন্ন -কিন্তু সকলের কণ্ঠে একই ধ্বনি। কেন্দ্র যত নিকটবর্তী হয়, ব্যবধান ততই কমে যায়। বিভিন্ন দেশের কাফেলা পরস্পর মিলিত হয় এবং সকলেই একত্রিত হয়ে একই পদ্ধতিতে নামায পড়ে, সকলের পোশাক এক, সকলেরই ইমাম এক, একই গতিবিধিতে ও একই ভাষায় সকলের নামায পড়া, সকলেই এক ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনির ইঙ্গিতে ওঠা-বসা করে, রুকূ-সিজদা করে, সকলে একই আরবী ভাষায় কুরআন পড়ে এবং শুনে। এভাবে সমবেত লক্ষ লক্ষ জনতার ভাষা, জাতি, দেশ, বংশ ও গোত্রের কৃত্রিম বৈষম্য চূর্ণ হয়ে একাকার হয়ে যায়। সমগ্র মানুষের সমন্বয়ে ‘আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী’ একটি বিরাট জামায়াত রচিত হয় । তার পর এ বিরাট আন্তর্জাতিক জামায়াত একই আওয়ায ‘লাব্বাইকা লাব্বাইকা’ ধ্বনি করতে করতে চলতে থাকে। পথের প্রত্যেক চড়াই উৎরাইয়ে যখন এ আওয়ায উত্থিত হয়, যখন নামাযের সময়ে এবং প্রভাতে এ শব্দ অনুরণিত হয়ে ওঠে, যখন কাফেলাসমূহ পরস্পর মিলিত হবার সময় এ শব্দই ধ্বনিত হয়ে ওঠে তখন চারদিকে এক আশ্চর্য রকম পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সে পরিবেশে মানুষ নিজেকে ভুলে যায়, এক অচিন্তনীয় ভাবধারায় সে মত্ত হয়ে পড়ে, ‘লাব্বাইকা’ ধ্বনির আকর্ষণে সে এক ভাবজগতে ছুটে যায়। অতপর কা’বায় পৌছে দুনিয়ার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে সমাগত জনসমুদ্রের একই পোশাকে নির্দিষ্ট কেন্দ্র বিন্দুর চারদিকে প্রদক্ষিণ করা , সকলের একই সাথে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝখানে দৌড়ানো, সকলের মিনায় উপস্থিত হয়ে তাবু জীবনযাপন করা এবং তথায় এক ইমামের কন্ঠে ভাষণ (খোতবা) শ্রবণ করা, তারপর মুযদালিফায় তাবুর নীচে রাত্রি যাপন করা, আবার মিনার দিকে সকলের প্রত্যাবর্তন করা, সকলে মিলে আকাবায় পাথর দ্বারা চাঁদমারী করা, তারপর সকলের কুরবানী করা , সকলের একই কেন্দ্রে একত্রিত হয়ে নামায পড়া --- এসব কাজে যে পবিত্র পরিবেশ ও আধ্যাত্মিক মনোভাবের সৃষ্টি হয়, দুনিয়ার অন্য কোন ধর্মে বা জীবন ব্যবস্থায় তার তুলনা নেই। <br />
তারপর দুনিয়ার বিভিন্ন জাতির মধ্য থেকে আগত অসংখ্য মানুষের একই কেন্দ্রে সম্মিলিত হওয়া এমন নিষ্ঠা, একাগ্রতা এবং ঐক্যভাবের সাথে একত্রিত হওয়া এমন পবিত্র উদ্দেশ্য ও ভাবধারা এবং নির্মল কাজ-কর্ম সহকারে সমস্ত কাজ সম্পন্ন করা প্রকৃতপক্ষে আদম সন্তানের জন্য এটা এক বড় নিয়ামত। এ নিয়ামত ইসলাম ভিন্ন অন্য কোন ধর্মই দিতে পারে নি। দুনিয়ার বিভিন্ন জাতির পরস্পর মিলিত হওয়া কোন নুতন কথা নয় চিরকালই এরূপ হয়েছে। কিন্তু তাদের এ সম্মেলন হয় যুদ্ধের ময়দানে একে অপরের গলা কাটার জন্যে অথবা সন্ধি সম্মেলনে বিজিত দেশগুলোকে নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেবার জন্যে কিংবা বিশ্বজাতি সম্মেলনে এক একটি জাতির বিরুদ্ধে ধোঁকা ও প্রতারণার ষড়যন্ত্র, যুলুম এবং বেঈমানীর জাল ছড়াবার জন্য; অথবা পরের ক্ষতি সাধন করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করার মতলবে। সমগ্র জাতির জনসাধারণের নির্মল মন, সচ্চরিত্রতা ও পবিত্র মনোভাব নিয়ে এবং প্রেম ভালোবাসা, নিষ্ঠা, মানসিক ও আধ্যাত্মিক ঐক্যভাব সহকারে একত্রিত হওয়া। চিন্তা, কর্ম এবং উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণ একাগ্রতার সাথে মিলিত হওয়া--- তাও আবার একবার মিলিত হয়েই ক্ষান্ত না হওয়া বরং চিরকালের জন্য প্রত্যেক বছর একই কেন্দ্রে একত্রিত হওয়া বিশ্বমানবতার প্রতি এতবড় নিয়ামত দুনিয়ায় ইসলাম ভিন্ন অন্য কোন ধর্ম ব্যবস্থাই দিতে পেরেছে কি? বিশ্ব শান্তি স্থাপনে জাতিসমূহের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-কলহ মিটিয়ে দেয়া এবং লড়াই ঝগড়ার পরিবর্তে ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য এর চেয়ে উত্তম ব্যবস্থা আর কেউ পেশ করতে পেরেছে কি? ইসলাম শুধু এতটুকু করেই ক্ষান্ত হয়নি ; সে আরো অনেক কল্যাণকর ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। <br />
বছরের চারটি মাস হজ্জ ও ওমরার কাজ সম্পাদনের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে । ইসলাম কা’বা যাতায়াতের এ চারটি মাস সমস্ত পথেই শান্তি অক্ষুণ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এটা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং শান্তি রক্ষা করার এক স্থায়ী ব্যবস্থা। দুনিয়ার রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ইসলামের হাতে আসলে হজ্জ ও ওমরার কারণে একটি বছরের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ সময় চিরকালের জন্য যুদ্ধ এবং রক্তারক্তির হাত থেকে দুনিয়া রক্ষা পেতে পারে। <br />
ইসলাম দুনিয়ার মানুষকে একটি হেরেম দান করেছে। এ হেরেম কিয়ামত পর্যন্ত শান্তির কেন্দ্রস্থল । এখানে মানুষ মারা তো দূরের কথা, কোনো জন্তুও শিকার করা যেতে পারে না। এমনকি এখানকার ঘাসও কেটে ফেলার অনুমতি নেই। এখানকার কোনো কাঁটাও চূর্ণ করা যায় না, কারো কোন জিনিস এখানে পড়ে থাকলে তা স্পর্শ করাও নিষিদ্ধ। ইসলাম পৃথিবীর বুকে একটি শহর প্রতিষ্ঠিত করেছে। এ শহরে কারো কোন হাতিয়ার নিয়ে প্রবেশ করার অনুমতি নেই। এখানে খাদ্যশস্য বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী সঞ্চয় করে রাখা এবং তার ফলে মূল্য বৃদ্ধির কারণ সৃষ্টি করা পরিষ্কার আল্লাহদ্রোহীতা । এখানে যারা অন্যের ওপর যুলুম করে তাদেরকে অল্লাহ পাক এই বলে সাবধান করে দিয়েছেনঃ "নুযিকহুমিন আযাবুন আলিম" অর্থ --“আমরা তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেব।” <br />
ইসলাম সমগ্র পৃথিবীর একটি কেন্দ্র নির্ধারিত করেছে। এ কেন্দ্রের পরিচয় প্রসংগে বলা হয়েছেঃ “যারা আল্লাহর প্রভুত্ব ও বাদশাহী এবং হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়াত ও নেতৃত্ব স্বীকার করে ইসলামী ভ্রাতৃসংঘে প্রবেশ করবে, ইসলামের এ কেন্দ্রে তাদের সকলেরই সমান অধিকার থাকবে।” আমেরিকার বাসিন্দা হোক কি আফ্রিকার , চীনের বাসিন্দা হোক কি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের , সে যদি মুসলামান হয় তবেই মক্কা শরীফে তার অধিকার মক্কার আসল বাসিন্দাদের অনুরূপ হবে। সমগ্র হারাম শরীফের এলাকা মসজিদের ন্যায়। মসজিদে গিয়ে যে মুসলমান নিজের জন্য কোনো স্থান করে নেয় , সে স্থান তারই হয়ে যায়; কেউ তাকে সেই স্থান থেকে বিতাড়িত করতে পারে না, কেউ তার কাছে ভাড়া চাইতে পারে না। কিন্তু সে যদি সারা জীবনও সেই স্থানে বসে থাকে, তবুও সেই স্থানকে নিজের মালিকানা স্বত্ব বলে দাবী করতে এবং তা বিক্রি করতে পারে না। এর জন্য সে ভাড়াও চাইতে পারে না । এভাবে সেই ব্যক্তি যখন সেই স্থান থেকে চলে যাবে তখন অন্য কেউ এসে এখানে আসন করে নিতে পারে , যেমন পূর্বের লোকটি পেরেছিল। ‘হারাম শারীফের’ অবস্থাও ঠিক এরূপ। <br />
হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ “ মক্কা নগরের যে স্থানে এসে যে ব্যক্তি প্রথমে অবতরণ করবে সেই স্থান তারই হবে।” এখানকার বাড়ী-ঘরের ভাড়া আদায় করা জায়েজ নয়। হযরত উমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু এখানকার লোকদের ঘরের সম্মুখস্ত প্রাঙ্গণের দুয়ার বন্ধ করতে নিষেধ করেছিলেন, যাতে লোকেরা তাদের প্রাঙ্গনে এসে অবস্থান করতে পারে। কোন কোন ফকীহ এতদূরও বলেছেন যে, মক্কা নগরীর বাড়ীঘরের কেউ মালিক নয়, তা উত্তরাধিকার নীতি অনুসারে বন্টনও হতে পারে না। এসব সুযোগ-সুবিধা এবং আযাদীর মূল্যবান নিয়ামত দুনিয়ার মানুষ ইসলাম ভিন্ন অন্য কোথাও পেতে পারে কি? <br />
এহেন হ্জ্জ সম্পর্কেই বলা হয়েছিলঃ তোমরা এটা করে দেখ এতে তোমাদের জন্য কতবড় কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তার সমস্ত কল্যাণকে গুণে গুণে বলার শক্তি আমার নেই । কিন্তু তবুও এই পর্যন্ত তার যে কিঞ্চিত বিবরণ ওপরে পেশ করেছি তা থেকে এ সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণ লাভ করা যাবে। <br />
কিন্তু এসব কথা শুনার পর আমার নিজের মনের দুঃখের কথাও খানিকটা শুনুন। বংশানুক্রমিক মুসলমান হীরক খনি অভ্যন্তরে ভূমিষ্ঠ শিশুর মত। এ শিশু যখন জন্ম মুহূর্ত থেকেই চারদিকে কেবল হীরক দেখতে পায় এবং হীরক খন্ড নিয়ে খেলা করতে থাকে, তখন তার দৃষ্টিতে হীরকের ন্যায় মহামূল্যবান সম্পদও সাধারণ পাথরের মতই মূল্যহীন হয়ে যায়। বংশীয় মুসলমানদের অবস্থাও ঠিক এরূপ। সমগ্র জগত যে নিয়ামত থেকে বঞ্চিত এবং যা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণেই তারা নানা প্রকার দুঃখ-মুসিবতে নিমজ্জিত রয়েছে, আর বিশ্ব মানব যার সন্ধান করতে ব্যাকুল রয়েছে, সেই মূল্যবান নিয়ামতসমূহ বর্তমান মুসলমানরা বিনামূল্যে লাভ করেছে, এজন্য তালাশ-অনুসন্ধান এবং খোঁজাখুজির জন্য একবিন্দু পরিশ্রমও তাদের করতে হয়নি। এসব ছাড়াই তারা এটা পেয়েছে শুধু এ জন্য যে, সৌভাগ্যবশত তারা মুসলিম পরিবারে জন্মলাভ করেছে। যে কালেমায়ে তাওহীদ মানব জীবনের সমগ্র জটিল সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করে দিতে পারে শিশুকাল থেকেই তা তাদের কানে প্রবেশ করেছে, মানুষকে প্রকৃত মানুষ বানাতে এবং লোকদের পরস্পরের ভাই ও দরদী বন্ধুতে পরিণত করার জন্য নামায-রোযা স্পর্শমণি অপেক্ষাও বেশী মূল্যবান। এরা জন্মলাভ করেই বাপ-দাদার উত্তরাধিকার হিসেবে এটা লাভ করেছে। যাকাত ইসলামী সমাজের এক অতুলনীয় ব্যবস্থা, এ দ্বারা শুধু মনের নাপাকীই দূর হয় না, দুনিয়ার অর্থব্যবস্থাও সুষ্ঠুতা লাভ করে---- যা থেকে বঞ্চিত হয়ে দুনিয়ার মানুষ একে অপরের বুকের রক্ত শুষে নিচ্ছে। এটা মুসলমানগণ প্রত্যক্ষ করছে। কিন্তু মুসলমানরা তা বিনা ব্যয়ে এবং বিনা শ্রমে লাভ করেছে। এটা ঠিক তেমনিভাবে, যেমন খবু বড় চিকিৎসকের সন্তান ঘরে বসেই বড় বড় রোগের তালিকা বিনামূল্যে লাভ করে থাকে। অথচ এর জন্য অন্যান্য মানুষ অত্যন্ত ব্যস্ততার সাথে সন্ধান করে বেড়ায়। হজ্জও একটি বিরাট ব্যবস্থা, সমগ্র দুনিয়ায় এর কোনো তুলনা নেই। পৃথিবীর কোণায় কোণায় ইসলামী আন্দোলনের আওয়াজ পৌঁছাবার জন্য এবং আন্দোলনকে চিরকালের তরে জীবিত রাখার জন্য এটা অপেক্ষা শক্তিশালী উপায় আর কিছুই হতে পারে না। বস্তুত দুনিয়ার সমগ্র মানুষকে পৃথিবীর প্রতিটি কোন থেকে এক আল্লাহর নামে টেনে এনে নির্দিষ্ট একটি কেন্দ্রে একত্রিত করে দেয়া এবং অসংখ্য বংশ গোত্র ও জাতিকে এক আল্লায় বিশ্বাসী, সদুদ্দেশ্য সম্পন্ন ও সৌহার্দপূর্ণ ভ্রাতৃসংঘে সম্মিলিত করে দেবার জন্য এটা আপেক্ষা উন্নততর কোনো পন্থা আজ পর্যন্ত আবিষ্কার করা সম্ভব হয় নি। যুগ-যুগান্তর থেকে জীবন্ত ও প্রচলিত এ ব্যবস্থাও মুসলমানগণ নিজেদের সম্পদ হিসেবে লাভ করেছে বিনা চেষ্টায় এবং বিনা শ্রমে। কিন্তু বড়ই দুঃখের কথা এই যে, মুসলমান বিনাশ্রমে প্রাপ্ত এ মূল্যবান সম্পদের কোন কদর বোঝেনি, বরং তারা এটা নিয়ে ঠিক তেমনি ভাবে খেলা করছে, যেমন হীরক খন্ড নিয়ে খেলা করে হীরক খনিতে প্রসূত শিশু সন্তান। আর তাকে সে মনে করে সাধারণ পাথরের ন্যায় মূল্যহীন। মুসলমান নিজেরদের মূর্খতা এবং অজ্ঞতার কারণে এ বিরাট মূল্যবান সম্পদ ও শক্তির উৎস নিয়ে অত্যন্ত হীনভাবে খেলা করছে। এর অপচয় করছে--- এটাকে নষ্ট করছে--- এসব দেখে আমার প্রাণ জ্বলে যায়। পাথর চূর্ণকারীর হাতে মূল্যবান হীরক খন্ড বরবাদ হতে দেখে সহ্য করা বাস্তবিকই কঠিন ব্যাপার। কোনো এক কবি সাত্যিই বলেছিলেনঃ <br />
“যদিও ঈসার গাধা যায় মক্কা ভূমি<br />
সেথাও থাকবে গাধা জেনে রাখ তুমি।” <br />
অর্থাৎ হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ন্যায় মহান পয়গম্বরের গাধা হলেও পবিত্র মক্কার দর্শন দ্বারা তার কোনো উপকার হতে পারে না। সে যদি সেখানে থেকেও যায় তথাপি সে যেমন গাধা তেমন গাধাই থেকে যাবে। <br />
নামায-রোযা হোক, কিংবা হজ্জ হোক, এগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের প্রশিক্ষণ। কিন্তু যারা এগুলোর অর্থ ও উদ্দেশ্য বুঝতে চায় না এর উপকার ও কল্যাণ লাভ করার কথা এতটুকুও ভাবে না; বরং যারা এ ইবাদাত সমূহের যে কোনো মাকছুদ ও উদ্দেশ্য থাকতে পারে তৎসম্পর্কেও বিন্দুমাত্র কোনো ধারণা রাখে না। তারা যদি পূর্ববর্তী লোকদের দেখাদেখি শুধু ওগুলোর নকলই করতে থাকে, তাহলে এটা দ্বারা সেই সুফল আশা করা যেতে পারে না। কিন্তু দুঃখের বিষয় সাধারণত আজকের মুসলমানগণ এভাবেই ঐ ইবাদাত গুলো করে চলেছে। সকল ইবাদাতের বাহ্যিকরূপ তারা ঠিকই বজায় রাখছে ; কিন্তু (লক্ষ ও উদ্দেশ্যের প্রতি দৃষ্টি না থাকার কারণে) এতে কোন প্রাণ শক্তি সৃষ্টি হচ্ছে না। প্রতি বছর হাজার হাজার লোক ইসলামের কেন্দ্রে গমন করে এবং হজ্জের সৌভাগ্য লাভ করে ফিরে আসে ঠিক কিন্তু হারাম শরীফের যাত্রীর স্বভাব-চরিত্রে যে পরিবর্তন কাম্য ছিল, তা যেমন দেখা যায় না তেমনি হজ্জ থেকে ফিরে আসার পরও তার মানসিক ও নৈতিক ক্ষেত্রে কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় না। অনুরূপভাবে যে সকল এলাকা অতিক্রম করে হজ্জে গমন করা হয়, সেখানকার মুসলমান-অমুসলমান অধিবাসীদের ওপরেও তার কোন উত্তম চরিত্রের প্রভাব পতিত হয় না। বরং অনেকের অসৎ স্বভাব, বদমেজাজী, অশালীন ব্যবহার ও চারিত্রিক দুর্বলতা ইসলামের সম্মানকে বিনষ্ট করে দেয়। বস্তুত এসব কারণেই আমাদের অনেক মুসলিম যুবকও প্রশ্ন করেন যে, ‘হজ্জের উপকার আমাদেরকে বুঝিয়ে দিন।’ অথচ হজ্জ তো ছিল এমন এক জিনিস যে তাকে প্রকৃতরূপে সম্পন্ন করা হলে কাফেররাও এর উপকার প্রকাশ্যে দেখে ইসলাম গ্রহণ করতো। যদি কোনো আন্দোলনের লক্ষ লক্ষ সদস্য প্রতি বছর বিশ্বের সকল অঞ্চল থেকে এক স্থানে সমবেত হয় এবং আবার নিজ নিজ দেশে ফিরে যায় বিভিন্ন দেশে ও নগর হয়ে যাওয়ার সময়ে নিজেরদের পবিত্র জীবন, পবিত্র চিন্তাধারা ও পবিত্র নৈতিকতার বহিঃপ্রকাশ করতে করতে অগ্রসর হয়, যেখানে যেখানে অবস্থান করে কিংবা যে যে স্থান অতিক্রম করে সেখানে নিজেদের আন্দোলনের যাবতীয় মৌলিক আলোচনা নীতির শুধু মৌখিক না করে আপন আচরণ ও কর্মতৎপরতায়ও তাকে বাস্তবায়িত করতে থাকে, আর এটা শুধু দশ-বিশ বছরেই নয় বরং বছরের পর বছর ধরে শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরেই চলতে থাকে তাহলে বলুন তো, এটা কোনো নিষ্ক্রিয় জিনিস থেকে হতে পারে কি? প্রকৃতপক্ষে হজ্জ এরূপ হলে তার উপকার সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন করার প্রয়োজনই হতো না। তখন অন্ধ ব্যক্তিও এর উপকার দেখতে পেত। বধির ব্যক্তিও এর কল্যাণ শুনতে পারতো। প্রতি বছরের হজ্জ কোটি কোটি মুসলমানকে নেক বান্দায় পরিণত করতো, হাজার হাজার অমুসলমানকে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য করতো, লক্ষ লক্ষ অমুসলমানের অন্তরে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা বদ্ধমূল করে দিত। কিন্তু আফসোস! আমাদের মূর্খতার কারণে কত বড় মূল্যবান সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। <br />
হজ্জের অন্তর্নিহিত এ বিরাট সার্থকতা ও উপকারিতা পুরোপুরি লাভ করার জন্য ইসলামের কেন্দ্রস্থলে কোনো বিরাট শক্তিসম্পন্ন কর্তৃত্ব বর্তমান থাকা উচিত। যা এ মহান বিশ্ব শক্তিকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম। এখানে এমন একটি হৃৎপিন্ড (দিল) থাকা উচিত ছিল যা প্রত্যেক বছর সমগ্র বিশ্ব দেহে তাজা রক্তের দ্বারা প্রবাহিত করতে সক্ষম। এমন একটি মস্তিষ্ক থাকারও দরকার ছিল যা এ হাজার হাজার আল্লাহর দূতের মারফতে দুনিয়ার কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইসলামের বিপ্লবী পয়গাম পৌঁছাতে চেষ্টা করতো। আর কিছু না হোক, অন্তত এ কেন্দ্র ভূমিতে খালেস ইসলামী জীবন ধারার বাস্তব রূপ যদি বর্তমান থাকতো, তবুও দুনিয়ার মুসলামান প্রত্যেক বছরই সেখান থেকে খালেস ইসলামী জিন্দেগী এবং দ্বীনদারীর শিক্ষা নিয়ে নিজ নিজ ঘরে প্রত্যাবর্তন করতে পারতো। কিন্তু বড়ই দুঃখের বিষয় যে, এখানে তেমন কিছুই নেই। দীর্ঘকাল পর্যন্ত আরব দেশে মূর্খতার অন্ধকার পুঞ্জিভূত হয়ে আছে, আব্বাসীয় যুগ থেকে শুরু করে ওসমানী যুগ পর্যন্ত সকল অক্ষম ও অনুপযুক্ত শাসক ইসলামের কেন্দ্রেস্থলের অধীবাসীগণকে উন্নতি লাভের সুযোগ দেয়ার পরিবর্তে কয়েক শতাব্দীকাল ধরে তাদেরকে কেবল অধঃপতনের দিকেই ঠেলে দিয়েছে। ফলে আরব দেশ জ্ঞান-বিজ্ঞান, নৈতিক চরিত্র, সভ্যতা ও সংস্কৃতি ---- সকল দিক দিয়েই অধঃপতনের চরম সীমায় উপনীত হয়েছে। এ কারণে যে ভুখন্ড থেকে একদা ইসলামের বিশ্বপ্লাবী আলোক ধারা উৎসারিত হয়ে সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল আজ তাই ইসলামের পূর্ববর্তী জাহেলী যুগের ন্যায় অন্ধ কুপে পরিণত হয়েছে। এখন সেখানে ইসলামের জ্ঞান নেই, ইসলামী জীবনধারা নেই। মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে বুকভরা আশা ও ভক্তি নিয়ে প্রত্যেক বছর পাক ‘হারামে’ আগমন করে ; কিন্তু এ এলাকায় পৌছে তার চারদিকে যখন কেবল মূর্খতা, মলিনতা, লোভ-লালসা , নির্লজ্জতা, আত্মপূজা, চরিত্রহীনতা, উচ্ছৃংখলতা এবং জনগণের নির্মম অধঃপতিত অবস্থা দেখতে পায়, তখন তাদের আশা-আকাঙ্খার স্বপ্ন জাল ছিন্ন হয়ে যায়। এখন অনেক লোক হজ্জ করে নিজের ঈমানকে শক্তিশালী করার পরিবর্তে তাকে অধিকতর দুর্বলই করে আসে। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালম ও ইসমাঈল আলাইহিস সালামের পরে জাহিলিয়াতের যুগে আরব দেশে যে পৌরোহিত্যবাদ ও ঠাকুর পূজার প্রভাব বিস্তৃত হয়েছিল এবং যা শেষ নবী হযরত রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্মূল করেছিলেন, আজ তা-ই প্রবলরূপে পুনঃপ্রবর্তিত হয়েছে। ‘হারামে কা’বার’ ব্যবস্থাপক পূর্বের ন্যায় আবার সেবায়েত হয়ে বসেছে। আল্লাহর ঘর তাদের সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। এ ঘরের প্রতি যারা ভক্তি রাখে তারা এদের শিকার বিশেষ । বিভিন্ন দেশে বড় বড় বেতনভুক্ত এজেন্ট নিযুক্ত রয়েছে, তারা ভক্তদেরকে চারদিক থেকে টেনে টেনে নিয়ে আসে। কুরআনের আয়াত আর হাদীসের নির্দেশ পড়ে শুনিয়ে তাদেরেকে হজ্জ যাত্রায় উদ্বুদ্ধ করে এজন্য নয় যে, আল্লাহ তাদের উপর হজ্জ ফরয করেছেন, তা স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে। বরং তাতে তাদের যথেষ্ট আমদানী হবে। এসব দেখে পরিষ্কার মনে হয় যে, আল্লাহ এবং তার রাসূল এ বিরাট ব্যাবস্থা করেছেন শুধু এ পুরোহিত ‘পান্ডা’ এবং দালালদের প্রতিপালনের জন্য। তারপর হজ্জ যাত্রায় বাধ্য হয়ে মানুষ যখন ঘর থেকে বের হয়, তখন সফরের শুরু থেকে হজ্জ করে বাড়ী ফিরে আসা পর্যন্ত প্রত্যেক জায়গায় ধর্মীয় মজুর এবং ধর্ম ব্যবসায়ীরা জোকের ন্যায় তাদের সামনে উপস্থিত হয়। মুয়াল্লেম, তাওয়াফ শিক্ষাদাতা , কা’বা কুঞ্জিকা বাহক এবং স্বয়ং হেজায সরকার--- সকলেই এ ধর্ম ব্যবসায়ে সমানভাবে অংশিদার। হজ্জের সমস্ত অনুষ্ঠানাদিই পয়সা দিয়ে সম্পন্ন করতে হয়। এমন কি পবিত্র কা’বা গৃহের দরজাও পয়সা ব্যতীরেকে কোনো মুসলমানদের জন্য উম্মুক্ত হতে পারে না। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক) । ইসলামের এ তথাকথিত খাদেমগণ এবং কেন্দ্রীয় উপাসনাগারের সেবায়েতগণও শেষ পর্যন্ত বেনারস ও হরিদ্বারের পন্ডিত পুরোহিতদের পেশা অবলম্বন করে নিয়েছে, অথচ এটাই একদা এ পুরোহিতবাদদের মূলোচ্ছেদ করেছিল । যেখনে ইবদাত করানোর কাজ বিশেষ ব্যবসায় এবং ইবাদাতের স্থান উপার্জনের উপায়ে পরিণত হয়েছে, সেখানে আল্লাহর আয়াত কেবল এ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় যে, লোকে তা শুনে হজ্জ করতে বাধ্য হবে এবং এ সুযোগে তার পকেট মেরে টাকা নিয়ে যাব। যেখানে ইবাদতের কাজ সম্পন্ন করার জন্য মূল্য দিতে হয় এবং দ্বীনি কর্তব্য ব্যবসায়ের পন্য হয়---- এমতস্থানের ইবাদতে ইসলামের প্রাণ শক্তি কি করে বেঁচে থাকতে পারে। হাজীগণ যে এ ইবাদাতের প্রকৃত নৈতিক আধ্যাত্মিক উপকারিতা লাভ করতে পারবে --- সমস্ত কাজ যখন একটি কেনা-বেচার মাল হয়ে রয়েছে--- তখন এমন আশা কিছুতেই করা যায় না। <br />
এ আলোচনা দ্বারা কারো ওপর দোষারোপ করা আমার উদ্দেশ্য নয়, আমি শুধু বলতে চাই হজ্জের ন্যায় একটি বিরাট শক্তিকে কোন্ কোন্ জিনিস প্রায় নিষ্ক্রিয় ও অর্থহীন করে দিয়েছে। <br />
ইসলাম এবং ইসলাম প্রবর্তিত নিয়মসমূহে কোনো ত্রুটি রয়েছে, এরূপ ধারণা কারোই মনে যেন না জাগে। কারণ তাতে আসলে কোনোই ত্রুটি নেই ---ত্রুটি রয়েছে তাদের মধ্যে যারা সঠিকভাবে পূর্ণ ইসলামের অনুসরণ করে চলে না। অতএব, এ অবস্থার জন্য দায়ী বর্তমান মুসলমানরাই। তাই যে ব্যবস্থা তাদেরকে মানবতার পরিপূর্ণ আদর্শে পরিচালিত করতে পারতো এবং যা অনুসরণ করে তারা নেতা হতে পারতো, তা থেকে আজ কোনো ভাল ফল লাভ করা যাচ্ছে না। এমনকি অবস্থা এতদূর খারাপ হয়ে গেছে যে, এ ব্যবস্থাই মানবতার পক্ষে সত্যই কল্যাণকর কিনা আজ সে সম্পর্কেও মানুষের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হতে শুরু করেছে ।একজন সুদক্ষ চিকিৎসক যদি কয়েকটি অব্যর্থ ওষুধের তালিকা রেখে ইহলোক ত্যাগ করেন, তখন তার অকর্মণ্য ও নির্বোধ উত্তরাধিকারীগণের হাতে তা একেবারেই ‘অকেজো’ হয়ে যায়। ফলে সেই তালিকারও যেমন কোনো মূল্য হয় না, অনুরূপভাবে স্বয়ং চিকিৎসকের দুর্নাম হয় --- আসল তালিকা যতই ভাল , সঠিক এবং অব্যর্থ হোক না কেন। এতএব এ নির্ভূল তালিকাকে কার্যকর করে তুলতে হলে চিকিৎসা বিদ্যায় পারদর্শিতা অপরিহার্য। অপটু ও অজ্ঞ লোকরা সেই তালিকা অনুযায়ী ওষুধ তৈরী করলে তা দ্বারা যেমন কোনো উপকার পাওয়া যাবে না শুধু তাই নয়, বরং তাতে ক্ষতি হওয়ার যথেষ্ট আশংকা রয়েছে। ফলে জাহেল লোকেরা যারা তালিকার যথার্থতা যাচাই করতে নিজেরা অক্ষম--- তারাই শেষ পর্যন্ত মনে করতে শুরু করবে যে, মূলত তালিকাটাই ভুল। বর্তমান মুসলমানদের সর্বাত্মক অধঃপতনের ব্যাপারে ইসলামেরও ঠিক এ অবস্থা হয়েছে। <br />
<br /></div>
Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-43669088873467716522020-03-18T21:14:00.001+06:002020-03-18T21:14:16.516+06:00মীক্বাত থেকে হজ্জের ইহরাম বেঁধেছে। কিন্তু মক্কা পৌঁছে সে প্রশাসন (ডিউটি পুলিশ) কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হয়। কেননা সে হজ্জের অনুমতি পত্র নেয়নি। এখন তার করণীয় কি?<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<br />
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhkp-ewqg6OzFBhyphenhyphenqkR60vtswcawsK9GS2-QTqNg7TtnMnHVykrSdXlTxPZxzNxKVju0I4j5QpS8emvxUVv4lG3M5nDaaOmkGCwEA0BJPkkgDchyphenhyphenUJTSFyd77UUmJT09t9qvMxoEhk5j4I/s1600/hajj-gudi-bg20180306204632.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="353" data-original-width="640" height="176" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhkp-ewqg6OzFBhyphenhyphenqkR60vtswcawsK9GS2-QTqNg7TtnMnHVykrSdXlTxPZxzNxKVju0I4j5QpS8emvxUVv4lG3M5nDaaOmkGCwEA0BJPkkgDchyphenhyphenUJTSFyd77UUmJT09t9qvMxoEhk5j4I/s320/hajj-gudi-bg20180306204632.jpg" width="320" /></a></div>
<br />
এ অবস্থায় মক্কা প্রবেশ করতে না পারলে সে ‘মুহছার’ বা বাধাগ্রস্ত বলে
বিবেচিত হবে। তখন বাধাপ্রাপ্ত স্থানে কুরবানী যবেহ করে সে ইহরাম খুলে
ফেলবে। যদি ইহা তার প্রথম ফরয হজ্জ হয়ে থাকে তবে পরবর্তী বছর তা আদায়
করবে। আর ফরয না হয়ে থাকলে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী পরবর্তী বছর তা আদায় করার
কোন বাধ্যবাধকতা নেই। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
হুদায়বিয়ার বছরে বাধাপ্রাপ্ত হলে পরবর্তী বছর তা কাযা আদায় করার নির্দেশ
প্রদান করেননি। অতএব আল্লাহর কিতাবে ও রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)এর সুন্নাতে বাধাপ্রাপ্ত হজ্জ বা ওমরা কাযা আদায় করার বাধ্যবাধকতা
নেই। আল্লাহ্ বলেন,<br />
] فَإِنْ أُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنْ الْهَدْيِ [<br />
“যদি বাধাগ্রস্ত হও, তবে সহজসাধ্য কুরবানী করবে।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৯৬)
এখানে কুরবানী করা ছাড়া অন্য কিছু উল্লেখ করা হয়নি। আর পরবর্তী বছর নবী
(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর উমরা আদায়কে কাযা উমরা এজন্যই বলা
হয়েছে যে, তিনি কুরায়শদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন যে পরবর্তী বছর ওমরা
আদায় করবেন। এই কারণে নয় যে, ছুটে যাওয়া কাজের পূর্ণতার জন্য কাযা
আদায় করেছিলেন। (আল্লাহ্ই অধিক জ্ঞান রাখেন)<br />
<br />
<br />
বিষয়/প্রশ্নঃ (৫৩৬)<br />গ্রন্থের নামঃ ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম<br />বিভাগের নামঃ কিতাবুল হজ্জ<br />লেখকের নামঃ শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)<br />অনুবাদ করেছেনঃ আবদুল্লাহ শাহেদ আল মাদানি – আবদুল্লাহ আল কাফী </div>
Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-39349857601616778352020-03-17T21:16:00.000+06:002020-03-18T21:17:07.430+06:00সউদী থেকে ফিরেছে ৪০৯ ওমরাযাত্রী<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<br />
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjOyEt1_GuQ0UQLncT4yIysjbzub3DWNBl5N-1bIjYTf9hZPZrBxK-nTC0VVmVtOuzPTsOP0sDVcopsRUhwsspuVrBr2tXOLqvYZrRDxDoUu_iCKDQ9edSoXPzy6KpdOMRafc_yZDAdqVI/s1600/Biman+COVID+Announce.jpeg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="1024" data-original-width="966" height="320" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjOyEt1_GuQ0UQLncT4yIysjbzub3DWNBl5N-1bIjYTf9hZPZrBxK-nTC0VVmVtOuzPTsOP0sDVcopsRUhwsspuVrBr2tXOLqvYZrRDxDoUu_iCKDQ9edSoXPzy6KpdOMRafc_yZDAdqVI/s320/Biman+COVID+Announce.jpeg" width="301" /></a></div>
<br />
করোনাভাইরাসের কারণে সউদী আরবে আটকে পড়া ৪০৯ ওমরাযাত্রীকে গতকাল মঙ্গলবার
দেশে ফিরিয়ে এনেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট। বিকাল
৪টায় তাদের বহনকারী ফ্লাইটটি হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক
বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানের নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানিয়েছে।
বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য ডেক্স সূত্রে জানা গেছে, ওমরাযাত্রীরা নামার পর
প্রত্যেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। তাদের মধ্যে কোনো স্বাস্থ্যগত
সমস্যা না থাকায় সবাইকে নিজ নিজ বাড়িতে কোয়ারান্টাইনে থাকার পরামর্শ
দেয়া হয়েছে। </div>
Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-21117874185753335272020-03-01T17:51:00.000+06:002020-03-30T17:53:53.689+06:00<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<header class="entry-header">
<h1 class="entry-title">
How Hajj Packages can Save You Time, Stress, and Money.</h1>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjyImvPuC1F_sOBmr5v29OQVRZjw7Iszq_PHF16pwgA4WLgm8Ft_XO_wRW09f7FVKYBhkWPs9X0Xi01g0-y_JGeISbCvhiEkJ54TpZDZuX1pT49eyocKQx_15JtihNqtDlhzyn3CAmXbFo/s1600/2.000000000.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="498" data-original-width="498" height="320" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjyImvPuC1F_sOBmr5v29OQVRZjw7Iszq_PHF16pwgA4WLgm8Ft_XO_wRW09f7FVKYBhkWPs9X0Xi01g0-y_JGeISbCvhiEkJ54TpZDZuX1pT49eyocKQx_15JtihNqtDlhzyn3CAmXbFo/s320/2.000000000.jpg" width="320" /></a></div>
<h1 class="entry-title">
</h1>
</header>
<div class="entry-content">
You can be needed to show up at a seminar
in either Dhaka Bangladesh. These Hajj tour seminars are held to
inform, teach and respond to any problem maybe you have with regards to
your approaching Hajj tour.<br />
<br />
It is not an obligation but individuals want to make it a memorable
journey in their lifestyle. Muslims Holy Vacation is below to fulfil all
your dreams and expectations for this pious journey. Just about every
tour preparing is essential<br />
<br />
Guide<a href="http://zilhajjtravelsbd.com/" target="_blank"> Umrah package</a> on the internet and let us make your journey
memorable for that life span. You'll find numerous great things about
reserving your most ideal journey with us.<br />
<br />
Noticing down the desires and desires of our Muslim pilgrims in Bangladeshi, We now have cater Shifting Hajj packages with low priced costs.
Your monetary constraints are not a hurdle amongst a need to Dwell near
Haram and benefit from the privilege.<br />
<br />
You don’t have to worry about the methods of performing Hajj, as we have
trained “alims” who'll guideline you in the total course of action and
give you substance to check, so you never miss out nearly anything.<br />
<br />
If they'll be any additional update or alterations, We'll get from Ministry of Saudi Arabia, we will update appropriately.<br />
<br />
After you have stepped to the journey of forgiveness and kindness, don’t
Allow your earlier sins held you back again. Place your concentration
lights over the blessings and rewards that your Lord would like to
shower on you in return of in search of his really like and affection.
This journey is presenting some blissful rewards to individuals who look
for for it:<br />
<br />
You simply have to pick a package and go away The remainder to your crew
of <a href="http://zilhajjtravelsbd.com/" target="_blank">Muslims Holy Travel.</a> Get in touch with now or e mail us to acquire
more details and guide you magnificent package with us.<br />
<br />
E-book Umrah package on the web and let's make your journey memorable to
the life time. You will find various benefits of scheduling your most
wanted journey with us.<br />
<br />
2 Modern passport measurement colour photograph with white history and
experiencing the camera frontally are to get hooked up Using the
application.<br />
<br />
Whenever we say that we are presenting you solutions about Umrah this
means that we're chargeable for the arrangements of your visa, ticket,
lodges reservation, transportation facility plus much <a href="http://zilhajjtravelsbd.com/" target="_blank">umrah visa application form Bangladesh</a> more.<br />
<br />
Like a Muslim, we're not ignorant on the subject of our spiritual
necessities. When you choose the journey, you acknowledge the invitation
from your creator, the Almighty Allah. He is familiar with all the
techniques of the coronary heart plus the sins you need to repent. So,
Umrah is the prospect to open up oneself before the one particular who
hears with comprehensive interest, Though HE (SWT) appreciates in excess
of you.<br />
<br />
Any package with no these payment might be on maintain until finally the
payment is acquired. It is the obligation with the applicant to
incorporate the EXACT sum in accordance with the body weight in the
package.<br />
<br />
By using a quantity of different dates available to cater to the high
numbers of pilgrims, we advise to ebook early in order to avoid any
disappointment.<br />
<b><a href="http://zilhajjtravelsbd.com/" target="_blank">Zilhajj Group Bangladesh</a></b> Is Best and Cheap Rated good Hajj Umrah Operator From Bangladesh.<br />
</div>
<br /></div>
Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-8087562861808130062019-10-01T18:22:00.000+06:002020-03-30T18:23:31.273+06:00The Fact About umra package That No One Is Suggesting <div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<!--[if gte mso 9]><xml>
<w:WordDocument>
<w:View>Normal</w:View>
<w:Zoom>0</w:Zoom>
<w:TrackMoves/>
<w:TrackFormatting/>
<w:PunctuationKerning/>
<w:ValidateAgainstSchemas/>
<w:SaveIfXMLInvalid>false</w:SaveIfXMLInvalid>
<w:IgnoreMixedContent>false</w:IgnoreMixedContent>
<w:AlwaysShowPlaceholderText>false</w:AlwaysShowPlaceholderText>
<w:DoNotPromoteQF/>
<w:LidThemeOther>EN-US</w:LidThemeOther>
<w:LidThemeAsian>X-NONE</w:LidThemeAsian>
<w:LidThemeComplexScript>X-NONE</w:LidThemeComplexScript>
<w:Compatibility>
<w:BreakWrappedTables/>
<w:SnapToGridInCell/>
<w:WrapTextWithPunct/>
<w:UseAsianBreakRules/>
<w:DontGrowAutofit/>
<w:SplitPgBreakAndParaMark/>
<w:DontVertAlignCellWithSp/>
<w:DontBreakConstrainedForcedTables/>
<w:DontVertAlignInTxbx/>
<w:Word11KerningPairs/>
<w:CachedColBalance/>
</w:Compatibility>
<w:BrowserLevel>MicrosoftInternetExplorer4</w:BrowserLevel>
<m:mathPr>
<m:mathFont m:val="Cambria Math"/>
<m:brkBin m:val="before"/>
<m:brkBinSub m:val="--"/>
<m:smallFrac m:val="off"/>
<m:dispDef/>
<m:lMargin m:val="0"/>
<m:rMargin m:val="0"/>
<m:defJc m:val="centerGroup"/>
<m:wrapIndent m:val="1440"/>
<m:intLim m:val="subSup"/>
<m:naryLim m:val="undOvr"/>
</m:mathPr></w:WordDocument>
</xml><![endif]--><!--[if gte mso 9]><xml>
<w:LatentStyles DefLockedState="false" DefUnhideWhenUsed="true"
DefSemiHidden="true" DefQFormat="false" DefPriority="99"
LatentStyleCount="267">
<w:LsdException Locked="false" Priority="0" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Normal"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="9" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="heading 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="9" QFormat="true" Name="heading 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="9" QFormat="true" Name="heading 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="9" QFormat="true" Name="heading 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="9" QFormat="true" Name="heading 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="9" QFormat="true" Name="heading 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="9" QFormat="true" Name="heading 7"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="9" QFormat="true" Name="heading 8"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="9" QFormat="true" Name="heading 9"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="39" Name="toc 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="39" Name="toc 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="39" Name="toc 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="39" Name="toc 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="39" Name="toc 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="39" Name="toc 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="39" Name="toc 7"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="39" Name="toc 8"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="39" Name="toc 9"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="35" QFormat="true" Name="caption"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="10" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Title"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="1" Name="Default Paragraph Font"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="11" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Subtitle"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="22" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Strong"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="20" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Emphasis"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="59" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Table Grid"/>
<w:LsdException Locked="false" UnhideWhenUsed="false" Name="Placeholder Text"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="1" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="No Spacing"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="60" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Shading"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="61" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light List"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="62" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Grid"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="63" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="64" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="65" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="66" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="67" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="68" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="69" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="70" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Dark List"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="71" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Shading"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="72" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful List"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="73" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Grid"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="60" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Shading Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="61" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light List Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="62" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Grid Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="63" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 1 Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="64" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 2 Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="65" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 1 Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" UnhideWhenUsed="false" Name="Revision"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="34" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="List Paragraph"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="29" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Quote"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="30" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Intense Quote"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="66" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 2 Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="67" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 1 Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="68" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 2 Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="69" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 3 Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="70" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Dark List Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="71" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Shading Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="72" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful List Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="73" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Grid Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="60" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Shading Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="61" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light List Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="62" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Grid Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="63" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 1 Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="64" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 2 Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="65" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 1 Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="66" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 2 Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="67" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 1 Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="68" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 2 Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="69" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 3 Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="70" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Dark List Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="71" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Shading Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="72" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful List Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="73" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Grid Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="60" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Shading Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="61" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light List Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="62" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Grid Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="63" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 1 Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="64" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 2 Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="65" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 1 Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="66" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 2 Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="67" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 1 Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="68" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 2 Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="69" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 3 Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="70" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Dark List Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="71" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Shading Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="72" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful List Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="73" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Grid Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="60" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Shading Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="61" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light List Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="62" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Grid Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="63" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 1 Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="64" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 2 Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="65" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 1 Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="66" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 2 Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="67" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 1 Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="68" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 2 Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="69" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 3 Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="70" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Dark List Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="71" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Shading Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="72" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful List Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="73" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Grid Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="60" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Shading Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="61" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light List Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="62" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Grid Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="63" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 1 Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="64" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 2 Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="65" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 1 Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="66" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 2 Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="67" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 1 Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="68" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 2 Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="69" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 3 Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="70" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Dark List Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="71" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Shading Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="72" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful List Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="73" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Grid Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="60" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Shading Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="61" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light List Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="62" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Grid Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="63" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 1 Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="64" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 2 Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="65" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 1 Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="66" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 2 Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="67" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 1 Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="68" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 2 Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="69" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 3 Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="70" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Dark List Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="71" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Shading Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="72" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful List Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="73" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Grid Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="19" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Subtle Emphasis"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="21" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Intense Emphasis"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="31" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Subtle Reference"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="32" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Intense Reference"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="33" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Book Title"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="37" Name="Bibliography"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="39" QFormat="true" Name="TOC Heading"/>
</w:LatentStyles>
</xml><![endif]--><!--[if gte mso 10]>
<style>
/* Style Definitions */
table.MsoNormalTable
{mso-style-name:"Table Normal";
mso-tstyle-rowband-size:0;
mso-tstyle-colband-size:0;
mso-style-noshow:yes;
mso-style-priority:99;
mso-style-qformat:yes;
mso-style-parent:"";
mso-padding-alt:0in 5.4pt 0in 5.4pt;
mso-para-margin-top:0in;
mso-para-margin-right:0in;
mso-para-margin-bottom:8.0pt;
mso-para-margin-left:0in;
line-height:107%;
mso-pagination:widow-orphan;
font-size:11.0pt;
font-family:"Calibri","sans-serif";
mso-ascii-font-family:Calibri;
mso-ascii-theme-font:minor-latin;
mso-fareast-font-family:"Times New Roman";
mso-fareast-theme-font:minor-fareast;
mso-hansi-font-family:Calibri;
mso-hansi-theme-font:minor-latin;
mso-bidi-font-family:"Times New Roman";
mso-bidi-theme-font:minor-bidi;}
</style>
<![endif]-->
<br />
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;">
<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj4xtTVd1nSMqwORswMLZTaX04dZ-q9VMh0SgaOr9_FhgaGuPimjcDNes9h4mYnkRhq4QrwDCqI3oOTRnnPeKpJnD-5xfkdYAYwORtax6bKBJhf_6xfNQuMVtiC62tawivuhTF4HR5vQB0/s1600/55776326_1247926355360243_5.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="464" data-original-width="650" height="228" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj4xtTVd1nSMqwORswMLZTaX04dZ-q9VMh0SgaOr9_FhgaGuPimjcDNes9h4mYnkRhq4QrwDCqI3oOTRnnPeKpJnD-5xfkdYAYwORtax6bKBJhf_6xfNQuMVtiC62tawivuhTF4HR5vQB0/s320/55776326_1247926355360243_5.jpg" width="320" /></a></div>
<div class="MsoNormal" style="line-height: normal; mso-margin-bottom-alt: auto; mso-margin-top-alt: auto; mso-outline-level: 1;">
<b><span style="font-family: "Times New Roman","serif"; font-size: 24.0pt; mso-fareast-font-family: "Times New Roman"; mso-font-kerning: 18.0pt;"><br /></span></b></div>
<div class="MsoNormal" style="line-height: normal; margin-bottom: .0001pt; margin-bottom: 0in;">
<span style="font-family: "Times New Roman","serif"; font-size: 12.0pt; mso-fareast-font-family: "Times New Roman";"><span style="color: blue;"><br /></span><a href="http://pokerbonusdepositterbesar93578.blog2learn.com/29325124/the-fact-about-umra-package-that-no-one-is-suggesting"><span style="color: blue;"></span></a> </span></div>
<div class="MsoNormal" style="line-height: normal; margin-bottom: .0001pt; margin-bottom: 0in;">
<span style="font-family: "Times New Roman","serif"; font-size: 12.0pt; mso-fareast-font-family: "Times New Roman";">Hold refugee standing in a very
non-Chevening qualified place. Applicants that are citizens of a
Chevening-eligible region and who maintain refugee standing in a very
Chevening-eligible region are qualified for your scholarship.<br />
<br />
We are listed here to guidebook you from Each individual and every move. We
actually truly feel very pleased if you share your feeling from others any time
you experienced our luxury Hajj package. We've intended all packages According
to your required, which means you never facial area any sort of concerns. We've
got a effectively organized or skillful staff which can address all spiritual
features. We've got a unique number of <a href="http://zilhajjtravelsbd.com/" target="_blank">Hajj packages </a>from VIP to economical as
well as give all form of traveling class. You're going to get the next things
from us:<br />
<br />
Might Allah accept Hajj of all our Muslim brothers and sisters and grant them
the greatest reward. Also, May Allah give us the chance to provide this good
ritual no less than as soon as inside our lifetime.<br />
<br />
In case you have a matter concerning the Coronavirus (COVID-19), you should pay
a visit to our FAQs or to understand more about our adaptable booking solutions
you should stop by our e-book with confidence part.<br />
<br />
Under a Non- Shifting Hajj package, the location of the keep continues to be
unchanged. A hotel or apartment close to Haram is booked for your personal
complete tour.<br />
<br />
If accommodation isn't accessible in close proximity to Haram through the peak
Hajj days, it's booked away from the Haram and most probably in Aziziyah.<br />
<br />
Evidence of prospect’s English reading, crafting and speaking proficiency. A
letter from previous University stating that the past diploma was taught within
the English language is suitable.<br />
<br />
Get pleasure from much more than simply sightseeing. These tours will allow you
to try to eat in tiny neighborhood dining places, pay a visit to concealed
gems, keep at hotels with limited occupancy, acquire element in actions
available only to small groups, and luxuriate in much more interaction with the
tour guides.<br />
<br />
The best <a href="http://zilhajjtravelsbd.com/"><span style="color: blue;">hajjpackage</span></a> along with the distinctive matter is you can have to
personalize your Umrah package Based on your requirements. Simply enter the
name of the resort where you like to stay, quantity of times, full amount of
rooms, Make contact with number, Check out-in, check-out day, identify from the
car that you choose to used for transportation after which guide your Umrah
package.<br />
<br />
Research proposal for Doctoral degree system applicants and analyze program for
learn degree class applicants is additionally necessary<br />
<br />
Learn the exclusive society and amazing character of Tohoku, over a tour
showcasing the rice paddy artwork of Inakadate along with a Yamabushi mountain
monk encounter at Mount Haguro!<br />
<br />
This schedule is matter to vary any time with or all of sudden & this
program is probably not the final a single.<br />
<br />
Begin here: The applicants need to directly utilize to your College situated in
Canada or U.S. so as to acquire the conditional admission letter & then
present all the above-shown files to ISW by means of [email shielded]<br />
<br />
We've booked our Umarh tickets with<a href="http://zilhajjtravelsbd.com/" target="_blank"> Zilhajj Travels</a> for future Thanksgiving, my
mother and father, my 2 young children and my wife and we ended up very happy
with the extent of caring <a href="http://zilhajjtravelsbd.com/" target="_blank"><b>Zilhajj Group Bangladesh. </b></a></span></div>
</div>
Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-7528565465950215632019-03-30T18:18:00.000+06:002020-03-30T18:19:52.074+06:00The smart Trick of umrah visa BD That Nobody is Discussing<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div class="MsoNormal" style="line-height: normal; margin-bottom: .0001pt; margin-bottom: 0in;">
<span style="font-family: "Times New Roman","serif"; font-size: 12.0pt; mso-fareast-font-family: "Times New Roman";"><a href="http://andresbcyrj.tinyblogging.com/The-smart-Trick-of-umrah-visa-agents-uk-That-Nobody-is-Discussing-27566183"><span style="color: blue;"></span></a></span></div>
<div class="MsoNormal" style="line-height: normal; margin-bottom: .0001pt; margin-bottom: 0in;">
<br /></div>
<div class="MsoNormal" style="line-height: normal; mso-margin-bottom-alt: auto; mso-margin-top-alt: auto;">
<span style="font-family: "Times New Roman","serif"; font-size: 12.0pt; mso-fareast-font-family: "Times New Roman";">Try to be capable of apply for your
transit visa by way of your airline, journey agency or via an established agent
through the visa area in the Royal Embassy of Saudi Arabia.<br />
<br />
Nevertheless The federal government temporarily scrapped the designs, the
former Crown Prince Muhammad bin Nayef resurrected the program in 2016 as A
part of the place's eyesight to diversify the Saudi financial state.<br />
<br />
On September twenty five, 2018, the General Sports Authority introduced the
"Sharek Worldwide Activities Visa" (SIEV), an electronic visa issued
concurrently with the purchase of a ticket for qualifying Unique sporting events,
concert events or cultural festivals by sharek.sa.[17][18] The
"Sharek" visa allows site visitors to enter Saudi Arabia as a way to
show up at the party and its validity ranges from a couple of days in advance
of and following the celebration by itself.<br />
<br />
or almost every other identical five star lodge located near Haram Shareef .
This resort’s locale is perfect for quick access on the Ka’ba and is not hard
transportation in the hotel to other holy web sites during Hajj.<br />
<br />
Obtaining a visa may take from just one to six weeks. It is possible to abide
by your application on the net utilizing the e-visa Web-site:<br />
<br />
We at I Website link Excursions certainly are a certified journey agency
wherever vacationers may perhaps apply for a visa. All visas will be granted
from Mid of Shawwal to 29th of Dhul Qudh of on a yearly basis. Entire visa
processing will likely be granted with assurance to all tourists.<br />
<br />
All people must hold a passport valid for six months.[1] In 2019 and inside the
framework of Saudi Seasons tourism pursuits, Saudi Arabia introduced a web
based visa platform where applicants can get a visa to show up at Jeddah Time
in three minutes, offered that they should purchase a ticket for one of the
actions.[two]<br />
<br />
Hence, throughout the journey we exert our greatest work in revitalizing the
pilgrim’s religion in Allah via Islamic lectures and gatherings to be able to
aid them in returning house as transformed and better human beings and
believers.<br />
<br />
It doesn't choose prolonged – due to the fact not all applicants hold the same
requirements and budgets, usually, iVisa gives 3 processing periods. On the
other hand, even the slowest wi get you your visa right away.<br />
<br />
Thus, our hajj teams are led by alims, who definitely have graduated from
Madinah university, whose direction ensures that the hajj of all our pilgrims
is executed properly based upon the teachings with the Quran and Sunnah.<a href="http://zilhajjtravelsbd.com/" target="_blank"><b>Zilhajj Group Bangladesh</b></a> is One Of the Leading hajj Umrah Operator in Bangladesh.<br />
<br />
Suchi travels and excursions present you cheap Umrah packages with free Umrah
Tour and Vacation guidebook. Moreover, we offer the most beneficial Umrah
packages with an incredibly reduced total cost. Consequently, every single
Muslim from all around the environment can certainly manage every one of the
costs of our Umrah bargains.<br />
<br />
2.Organization Go to Visa is granted to those that need to do enterprise from
the country and enter into contracts and agreements with Saudi entities. That
is a multiple-entry <a href="http://zilhajjtravelsbd.com/" target="_blank"><span style="color: blue;">read more</span></a> visa legitimate for 12 months<br />
<br />
من المطار الذهاب الى مطار الرجوع في الاول ساعدني السيد خالد البيكو في اختيار
اَي فريق اريد ان أكون معه بكل المعلومات من ثمنها وكل مايخصها وكان اختيارا
موفقا. ثم تكلف لي بالفيزا وكل الوثائق المرفوقة ثم بعثني للاجتماع الخاص وخطبة
الحج في احدى مساجد مدينة شيكاغو التي أقيم بها ثم اعلمني ان المرافق المسؤول
الملازم لنا في الفريق سوف يتصل بي وقد حصل اتصل بي السيد فيروز خان ونعم المسؤول.<br />
<br />
Every single prayer is a method to find the dedication of ALLAH in this way
umrah is likewise worship from that Muslim arrives identical spitting length to
ALMIGHTY ALLAH. By safekeeping all these gratification in your mind our
organization turn up with thrilling, average and nominal typical premiums
related to vacation to umrah for our worthwhile customers.</span></div>
<!--[if gte mso 9]><xml>
<w:WordDocument>
<w:View>Normal</w:View>
<w:Zoom>0</w:Zoom>
<w:TrackMoves/>
<w:TrackFormatting/>
<w:PunctuationKerning/>
<w:ValidateAgainstSchemas/>
<w:SaveIfXMLInvalid>false</w:SaveIfXMLInvalid>
<w:IgnoreMixedContent>false</w:IgnoreMixedContent>
<w:AlwaysShowPlaceholderText>false</w:AlwaysShowPlaceholderText>
<w:DoNotPromoteQF/>
<w:LidThemeOther>EN-US</w:LidThemeOther>
<w:LidThemeAsian>X-NONE</w:LidThemeAsian>
<w:LidThemeComplexScript>X-NONE</w:LidThemeComplexScript>
<w:Compatibility>
<w:BreakWrappedTables/>
<w:SnapToGridInCell/>
<w:WrapTextWithPunct/>
<w:UseAsianBreakRules/>
<w:DontGrowAutofit/>
<w:SplitPgBreakAndParaMark/>
<w:DontVertAlignCellWithSp/>
<w:DontBreakConstrainedForcedTables/>
<w:DontVertAlignInTxbx/>
<w:Word11KerningPairs/>
<w:CachedColBalance/>
</w:Compatibility>
<w:BrowserLevel>MicrosoftInternetExplorer4</w:BrowserLevel>
<m:mathPr>
<m:mathFont m:val="Cambria Math"/>
<m:brkBin m:val="before"/>
<m:brkBinSub m:val="--"/>
<m:smallFrac m:val="off"/>
<m:dispDef/>
<m:lMargin m:val="0"/>
<m:rMargin m:val="0"/>
<m:defJc m:val="centerGroup"/>
<m:wrapIndent m:val="1440"/>
<m:intLim m:val="subSup"/>
<m:naryLim m:val="undOvr"/>
</m:mathPr></w:WordDocument>
</xml><![endif]--><!--[if gte mso 9]><xml>
<w:LatentStyles DefLockedState="false" DefUnhideWhenUsed="true"
DefSemiHidden="true" DefQFormat="false" DefPriority="99"
LatentStyleCount="267">
<w:LsdException Locked="false" Priority="0" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Normal"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="9" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="heading 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="9" QFormat="true" Name="heading 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="9" QFormat="true" Name="heading 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="9" QFormat="true" Name="heading 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="9" QFormat="true" Name="heading 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="9" QFormat="true" Name="heading 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="9" QFormat="true" Name="heading 7"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="9" QFormat="true" Name="heading 8"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="9" QFormat="true" Name="heading 9"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="39" Name="toc 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="39" Name="toc 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="39" Name="toc 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="39" Name="toc 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="39" Name="toc 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="39" Name="toc 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="39" Name="toc 7"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="39" Name="toc 8"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="39" Name="toc 9"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="35" QFormat="true" Name="caption"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="10" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Title"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="1" Name="Default Paragraph Font"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="11" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Subtitle"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="22" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Strong"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="20" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Emphasis"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="59" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Table Grid"/>
<w:LsdException Locked="false" UnhideWhenUsed="false" Name="Placeholder Text"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="1" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="No Spacing"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="60" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Shading"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="61" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light List"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="62" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Grid"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="63" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="64" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="65" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="66" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="67" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="68" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="69" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="70" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Dark List"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="71" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Shading"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="72" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful List"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="73" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Grid"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="60" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Shading Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="61" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light List Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="62" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Grid Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="63" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 1 Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="64" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 2 Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="65" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 1 Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" UnhideWhenUsed="false" Name="Revision"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="34" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="List Paragraph"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="29" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Quote"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="30" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Intense Quote"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="66" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 2 Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="67" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 1 Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="68" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 2 Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="69" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 3 Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="70" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Dark List Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="71" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Shading Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="72" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful List Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="73" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Grid Accent 1"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="60" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Shading Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="61" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light List Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="62" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Grid Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="63" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 1 Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="64" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 2 Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="65" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 1 Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="66" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 2 Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="67" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 1 Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="68" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 2 Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="69" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 3 Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="70" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Dark List Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="71" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Shading Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="72" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful List Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="73" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Grid Accent 2"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="60" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Shading Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="61" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light List Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="62" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Grid Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="63" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 1 Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="64" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 2 Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="65" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 1 Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="66" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 2 Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="67" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 1 Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="68" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 2 Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="69" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 3 Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="70" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Dark List Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="71" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Shading Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="72" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful List Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="73" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Grid Accent 3"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="60" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Shading Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="61" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light List Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="62" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Grid Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="63" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 1 Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="64" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 2 Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="65" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 1 Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="66" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 2 Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="67" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 1 Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="68" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 2 Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="69" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 3 Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="70" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Dark List Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="71" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Shading Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="72" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful List Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="73" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Grid Accent 4"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="60" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Shading Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="61" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light List Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="62" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Grid Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="63" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 1 Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="64" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 2 Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="65" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 1 Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="66" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 2 Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="67" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 1 Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="68" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 2 Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="69" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 3 Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="70" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Dark List Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="71" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Shading Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="72" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful List Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="73" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Grid Accent 5"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="60" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Shading Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="61" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light List Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="62" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Light Grid Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="63" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 1 Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="64" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Shading 2 Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="65" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 1 Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="66" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium List 2 Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="67" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 1 Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="68" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 2 Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="69" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Medium Grid 3 Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="70" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Dark List Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="71" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Shading Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="72" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful List Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="73" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" Name="Colorful Grid Accent 6"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="19" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Subtle Emphasis"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="21" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Intense Emphasis"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="31" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Subtle Reference"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="32" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Intense Reference"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="33" SemiHidden="false"
UnhideWhenUsed="false" QFormat="true" Name="Book Title"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="37" Name="Bibliography"/>
<w:LsdException Locked="false" Priority="39" QFormat="true" Name="TOC Heading"/>
</w:LatentStyles>
</xml><![endif]--><!--[if gte mso 10]>
<style>
/* Style Definitions */
table.MsoNormalTable
{mso-style-name:"Table Normal";
mso-tstyle-rowband-size:0;
mso-tstyle-colband-size:0;
mso-style-noshow:yes;
mso-style-priority:99;
mso-style-qformat:yes;
mso-style-parent:"";
mso-padding-alt:0in 5.4pt 0in 5.4pt;
mso-para-margin-top:0in;
mso-para-margin-right:0in;
mso-para-margin-bottom:8.0pt;
mso-para-margin-left:0in;
line-height:107%;
mso-pagination:widow-orphan;
font-size:11.0pt;
font-family:"Calibri","sans-serif";
mso-ascii-font-family:Calibri;
mso-ascii-theme-font:minor-latin;
mso-fareast-font-family:"Times New Roman";
mso-fareast-theme-font:minor-fareast;
mso-hansi-font-family:Calibri;
mso-hansi-theme-font:minor-latin;
mso-bidi-font-family:"Times New Roman";
mso-bidi-theme-font:minor-bidi;}
</style>
<![endif]--><div align="center">
</div>
</div>
Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-69706185136052990092010-06-01T20:09:00.003+06:002010-06-01T22:08:26.697+06:00UMRAH DOING PICTURE<a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjHjMxkS-u_ka_vN_gYQxtHG49dc9cwcxTF5WQBNn9sXH36RTi2aCcaHHFWZIEti7IuKjgHq3E3a0Q5hFikFNNX-eowif1gCOGCRti8blyIrP-fpbNiuQmKtdSnuXcDZokRUQuFVopj5y0/s1600/HAJJ-10.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 316px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjHjMxkS-u_ka_vN_gYQxtHG49dc9cwcxTF5WQBNn9sXH36RTi2aCcaHHFWZIEti7IuKjgHq3E3a0Q5hFikFNNX-eowif1gCOGCRti8blyIrP-fpbNiuQmKtdSnuXcDZokRUQuFVopj5y0/s320/HAJJ-10.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5477810896641932546" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg9WoYx4CnPn7Jr92F2KMinAXUS7mAOSJ2TFWjR-XqMoCDBFYbOFQIfkAvB6PrrNgAY5boI0qhR7lc-TI4BfMsMYdgwT-wcvjyX8Ej0NPXvFpHQnAlUe2P4bNFU9SlR1Nwx_4ysltBPuWQ/s1600/HAJJ-09.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 320px; height: 263px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg9WoYx4CnPn7Jr92F2KMinAXUS7mAOSJ2TFWjR-XqMoCDBFYbOFQIfkAvB6PrrNgAY5boI0qhR7lc-TI4BfMsMYdgwT-wcvjyX8Ej0NPXvFpHQnAlUe2P4bNFU9SlR1Nwx_4ysltBPuWQ/s320/HAJJ-09.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5477810892088231410" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgzkZJ-0Bmg0Zn74lQujkzA7V1vXCoXvpU5gvO0dLL9H0IeGdcNzpoozvSfYWerKyFcwSXi3T8ZP9OnPkVBxO_w01Vfrh_T589o97vMPaO4_GwoHlhyRZLewoWh0AUkz2_yHrF4mAjMlco/s1600/HAJJ-08.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 320px; height: 313px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgzkZJ-0Bmg0Zn74lQujkzA7V1vXCoXvpU5gvO0dLL9H0IeGdcNzpoozvSfYWerKyFcwSXi3T8ZP9OnPkVBxO_w01Vfrh_T589o97vMPaO4_GwoHlhyRZLewoWh0AUkz2_yHrF4mAjMlco/s320/HAJJ-08.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5477810881925649186" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj19DQfWrAgbWn8AHvbEOEoWqNz9_W68ktrCW0kN0ARBdMSVmD1iKdd03b3z6L1t6wTSEI33vvoPM4Oeh4IWQ-POhRHvreZ_1otMFDGofGkWGa9i3SbWXz3Q7btxSoAxUESSohuTOZ2sJw/s1600/HAJJ-07.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 246px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj19DQfWrAgbWn8AHvbEOEoWqNz9_W68ktrCW0kN0ARBdMSVmD1iKdd03b3z6L1t6wTSEI33vvoPM4Oeh4IWQ-POhRHvreZ_1otMFDGofGkWGa9i3SbWXz3Q7btxSoAxUESSohuTOZ2sJw/s320/HAJJ-07.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5477810879161445330" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjZhNyhX0UFbRWVp5A9Y1HdHkI4__SZfDQL68YvYimN2O5yGwb3t9DmMNoSL-e01SCBoOGHmJ0hNnUtci9-w2s7-3auVQK9itwZaaNyk-E6-qKiyEH_fA9ZO5-B2Jd2tZ40HAlrC9rhwsk/s1600/HAJJ-06.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 258px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjZhNyhX0UFbRWVp5A9Y1HdHkI4__SZfDQL68YvYimN2O5yGwb3t9DmMNoSL-e01SCBoOGHmJ0hNnUtci9-w2s7-3auVQK9itwZaaNyk-E6-qKiyEH_fA9ZO5-B2Jd2tZ40HAlrC9rhwsk/s320/HAJJ-06.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5477810873960686002" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhE4Hp6XI_DUM7CdeFRl87gbk29YeDZPMhOoJ5jS9x1OwgeZumsLiYNvEf1BF7ZOwDl1nbyPIfndPLyZA0YA4bkYiU_Pe5c72vCGsVlLABHn1AbmTcvbuZgGav3bvbmI1Gli4sIRJvSmQk/s1600/HAJJ-05.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 240px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhE4Hp6XI_DUM7CdeFRl87gbk29YeDZPMhOoJ5jS9x1OwgeZumsLiYNvEf1BF7ZOwDl1nbyPIfndPLyZA0YA4bkYiU_Pe5c72vCGsVlLABHn1AbmTcvbuZgGav3bvbmI1Gli4sIRJvSmQk/s320/HAJJ-05.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5477810405135527074" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhsdRaTJSmYhnGYk-oYmXPTTG-0XIih3rW-9u4jzou_UpXMwdRnNsoa1vdhrGymGwSh_JmApihcZYkywth-R5TQXcTkgqJdR4GAXxhMH9vWdbFLalinZoHe42tTGfRSUiODGSnF509uTI4/s1600/HAJJ-04.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 320px; height: 272px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhsdRaTJSmYhnGYk-oYmXPTTG-0XIih3rW-9u4jzou_UpXMwdRnNsoa1vdhrGymGwSh_JmApihcZYkywth-R5TQXcTkgqJdR4GAXxhMH9vWdbFLalinZoHe42tTGfRSUiODGSnF509uTI4/s320/HAJJ-04.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5477810401623827426" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgHZQ2jOmq6rkBvNrGs-nMtuBmBvjr38TA7jW8PXTvmkPkYYb989ETW1t94IewdsaPXnZWtrQ-fJVa_3BS4-e7_YMafr1nPppfXkGz35x52plLkIH4TgT53ifDK8B1Ynnf3hJelETOZmys/s1600/HAJJ-03.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 320px; height: 274px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgHZQ2jOmq6rkBvNrGs-nMtuBmBvjr38TA7jW8PXTvmkPkYYb989ETW1t94IewdsaPXnZWtrQ-fJVa_3BS4-e7_YMafr1nPppfXkGz35x52plLkIH4TgT53ifDK8B1Ynnf3hJelETOZmys/s320/HAJJ-03.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5477810394979092882" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhohZGjvJs7-XzGqTgirFMKb3LxGCifefKbu0hl7qqu5GbFUZgy1oLyeGeCj7YAJoKJeK02FtrHgmGqE1OMijTL_aHxH1_58TMJ186pC29G-fjNDSD1215-wE35gXLRpriX_4j0uO6f5R8/s1600/HAJJ-02.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 320px; height: 240px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhohZGjvJs7-XzGqTgirFMKb3LxGCifefKbu0hl7qqu5GbFUZgy1oLyeGeCj7YAJoKJeK02FtrHgmGqE1OMijTL_aHxH1_58TMJ186pC29G-fjNDSD1215-wE35gXLRpriX_4j0uO6f5R8/s320/HAJJ-02.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5477810393843924738" /></a><br /><a href='http://www.ziddu.com/register.php?referralid=(y]}f)[2I8;' target="_blank"><img border=0 src="http://www.ziddu.com/banners/images/250x250new.gif"/></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjsN3_-BbmeAQ6hIXtVTC8POo3TM7kaXfuMqayiVkcGBLr2xzBhdXJtJKKKWJLMKP7LpCG7ZS1UpA7jwQ2UP64kGZWrz5rQSb_sZ46wFGwbvOcpnO6e9-lXvrWCdbk1ShyphenhyphenwN8RpEe7H290/s1600/HAJJ-01.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 310px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjsN3_-BbmeAQ6hIXtVTC8POo3TM7kaXfuMqayiVkcGBLr2xzBhdXJtJKKKWJLMKP7LpCG7ZS1UpA7jwQ2UP64kGZWrz5rQSb_sZ46wFGwbvOcpnO6e9-lXvrWCdbk1ShyphenhyphenwN8RpEe7H290/s320/HAJJ-01.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5477810386960231186" /></a>Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-51615974596321569222010-05-18T01:49:00.004+06:002010-05-18T03:04:45.386+06:00RARE HAJJ AND SAUDI and Dubai PHOTO HERE<a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhfoPfbMJwFxUlgPO7CcCyh1d-CKcneyfftZM10fIHapyRoEnDsfeOm8H9iOgJ3mEnzsJ2HKOZolroPH_AN9SRZavp9zylPHBg2BNhBjUfOkoavIR29xpABCLWhlAsYIjIqaYGt5VabMUc/s1600/DUBAI-PALM-CITY--13.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 320px; height: 195px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhfoPfbMJwFxUlgPO7CcCyh1d-CKcneyfftZM10fIHapyRoEnDsfeOm8H9iOgJ3mEnzsJ2HKOZolroPH_AN9SRZavp9zylPHBg2BNhBjUfOkoavIR29xpABCLWhlAsYIjIqaYGt5VabMUc/s320/DUBAI-PALM-CITY--13.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5472346609617496418" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhQ2xoVXhmZuHY2rtJD6tqSdpMuCmin1d2k8e5CC5XSanr1GXlGfFvAP30Ea8B60_3wgzJYCr-yYnOa_0J_W2ywGJs60-tygv9Y27Qk5q5KFB9lTZCCcA4IHb7Ccy_ltb9qQbn11w9uv0w/s1600/DUBAI-PALM-CITY--12.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 320px; height: 204px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhQ2xoVXhmZuHY2rtJD6tqSdpMuCmin1d2k8e5CC5XSanr1GXlGfFvAP30Ea8B60_3wgzJYCr-yYnOa_0J_W2ywGJs60-tygv9Y27Qk5q5KFB9lTZCCcA4IHb7Ccy_ltb9qQbn11w9uv0w/s320/DUBAI-PALM-CITY--12.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5472345423411108834" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgx4ib7vISxjL_OkE4kUcSZ4LNC-jl2qMPkPLneEPXHHtfCTzmAeUCOpujTv8dJdzZBXf-aXuEaupti1OAsh2ME1YW3i7i2a9Sy3EhrOxY47uf_zhqgQELCZsplkTvNFaN2zK8d6ykayOo/s1600/DUBAI-PALM-CITY--11.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 320px; height: 184px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgx4ib7vISxjL_OkE4kUcSZ4LNC-jl2qMPkPLneEPXHHtfCTzmAeUCOpujTv8dJdzZBXf-aXuEaupti1OAsh2ME1YW3i7i2a9Sy3EhrOxY47uf_zhqgQELCZsplkTvNFaN2zK8d6ykayOo/s320/DUBAI-PALM-CITY--11.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5472345418208442498" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjmv68ZGBiAw7o3vwHquVh1rQSQDa6lzxva5YIEFMOlwKR5gWpNZCvUXBzcZuHm58ii2N-d3sjZufsth2oLKwuZYpZKfdOobYzR-InUd60neTh00zdpMByMJkWdeOx3Z7_uiBV-HtpncTc/s1600/DUBAI-PALM-CITY--10.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 320px; height: 211px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjmv68ZGBiAw7o3vwHquVh1rQSQDa6lzxva5YIEFMOlwKR5gWpNZCvUXBzcZuHm58ii2N-d3sjZufsth2oLKwuZYpZKfdOobYzR-InUd60neTh00zdpMByMJkWdeOx3Z7_uiBV-HtpncTc/s320/DUBAI-PALM-CITY--10.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5472343968953836434" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg0jcTc_-qChcOyc8tytIiH9JBkkoAV55SLiBWAjrujUmWLLHxch2enpbNust7XrxSMwIyY5uNYix8H709hCM01ed0UQuyMuX5SARWngcJrnFoQ7JEPvIuBkHgsThzzz4xcJ7ZTzh6Fr-0/s1600/DUBAI-PALM-CITY--09.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 289px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg0jcTc_-qChcOyc8tytIiH9JBkkoAV55SLiBWAjrujUmWLLHxch2enpbNust7XrxSMwIyY5uNYix8H709hCM01ed0UQuyMuX5SARWngcJrnFoQ7JEPvIuBkHgsThzzz4xcJ7ZTzh6Fr-0/s320/DUBAI-PALM-CITY--09.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5472343960216997186" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjNNnqsOvhgjt4MXlciD2b9WavlK9hnT1kbSoEUuNPa8Xo8mMkO-daZUw7qh0hyphenhyphengagMUf6v6AA6IzfmcWBVTDi-6J3UOz6xVFEG5an-jVRuPjv7z1EOkjQNz6m-XvLZP7r2YwVljUM4i0o/s1600/DUBAI-PALM-CITY--08.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 320px; height: 209px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjNNnqsOvhgjt4MXlciD2b9WavlK9hnT1kbSoEUuNPa8Xo8mMkO-daZUw7qh0hyphenhyphengagMUf6v6AA6IzfmcWBVTDi-6J3UOz6xVFEG5an-jVRuPjv7z1EOkjQNz6m-XvLZP7r2YwVljUM4i0o/s320/DUBAI-PALM-CITY--08.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5472342159921631202" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgsl3YUpHEKFOIUB7K9RTCDF89rDSk6oJZHDWUs2nMkz22hH3N9wUsKydDT9ELIjoyGKXn5CZrIzVnJGGTNN33F8zzcDiQG9_4eJvtHIN4nf4X_GYfMw9fa2oRlFFo3eycuf82jt9chdBg/s1600/DUBAI-PALM-CITY--07.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 320px; height: 202px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgsl3YUpHEKFOIUB7K9RTCDF89rDSk6oJZHDWUs2nMkz22hH3N9wUsKydDT9ELIjoyGKXn5CZrIzVnJGGTNN33F8zzcDiQG9_4eJvtHIN4nf4X_GYfMw9fa2oRlFFo3eycuf82jt9chdBg/s320/DUBAI-PALM-CITY--07.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5472342150512021490" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhrLJBoEIvBgFCFVawhwKj23jISvjHpIxZzmUjMoOiTMiiNNWB1ImAbHMoPtb4ShRN71PI-A1NkHLRA2Eeq_iN5YvaTsqftH6PbpMRTcs9Ma5DxhfbWE0t50f0ergXBKSla42El-eKbWDw/s1600/DUBAI-PALM-CITY--06.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 235px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhrLJBoEIvBgFCFVawhwKj23jISvjHpIxZzmUjMoOiTMiiNNWB1ImAbHMoPtb4ShRN71PI-A1NkHLRA2Eeq_iN5YvaTsqftH6PbpMRTcs9Ma5DxhfbWE0t50f0ergXBKSla42El-eKbWDw/s320/DUBAI-PALM-CITY--06.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5472342148177200098" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgYSHKRmTlxdoEa3waRBpe-x6g_M2wOm4nwtqDhMe0e5dmgNYLV0AbrHnzrf1WSBA27q0wMNrIqtPDpPxn26SABvfIqTHk-IClAXdHJH2xn_HCtKzNjK49_7s31JeFsu7jzUsfuqSWTDHo/s1600/DUBAI-PALM-CITY--05.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 320px; height: 178px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgYSHKRmTlxdoEa3waRBpe-x6g_M2wOm4nwtqDhMe0e5dmgNYLV0AbrHnzrf1WSBA27q0wMNrIqtPDpPxn26SABvfIqTHk-IClAXdHJH2xn_HCtKzNjK49_7s31JeFsu7jzUsfuqSWTDHo/s320/DUBAI-PALM-CITY--05.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5472342138946236914" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhcK7YfFfy7sjCdLL8uXx65wp5sIu-FB3fb8qtuah-2soqfc2EAokjXVvBZ4fuWopR4uQt2pvTjmYPv2QrCZhg3qQ0gWGHa7pE2TXuKZ1Xb1AI5BggliVhmepobkaxfyXeweCOQrtXXBVI/s1600/DUBAI-PALM-CITY--04.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 320px; height: 218px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhcK7YfFfy7sjCdLL8uXx65wp5sIu-FB3fb8qtuah-2soqfc2EAokjXVvBZ4fuWopR4uQt2pvTjmYPv2QrCZhg3qQ0gWGHa7pE2TXuKZ1Xb1AI5BggliVhmepobkaxfyXeweCOQrtXXBVI/s320/DUBAI-PALM-CITY--04.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5472340837285385138" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjS3LF8JII8Ewq-gD9Hvd3jNxVACgE2_0eoWLYJlOK0zJ8SygYA6Nlc6ysSWyhxUc1hY1lI7vQDdv5O25c1dvc3MiBEoFurgbjVMU7lvyu3JD9EmuyHg562si_kZ10wmh_rJePzuoxbQ7Y/s1600/DUBAI-PALM-CITY--03.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 320px; height: 262px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjS3LF8JII8Ewq-gD9Hvd3jNxVACgE2_0eoWLYJlOK0zJ8SygYA6Nlc6ysSWyhxUc1hY1lI7vQDdv5O25c1dvc3MiBEoFurgbjVMU7lvyu3JD9EmuyHg562si_kZ10wmh_rJePzuoxbQ7Y/s320/DUBAI-PALM-CITY--03.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5472340834428601170" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg8eR265Gm3pEBlbudIzHgvBA-1wFIz59VkfzAssTij4L7EbsgOmcCy6OqhfkZE1agXttwEfi5GR0jlRxMoUSuwRprJL7Br5OHqMpO7axfs0xnGuEzP76gBBbfNGznF3yu78TblQV3guYk/s1600/DUBAI-PALM-CITY--02.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 320px; height: 196px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg8eR265Gm3pEBlbudIzHgvBA-1wFIz59VkfzAssTij4L7EbsgOmcCy6OqhfkZE1agXttwEfi5GR0jlRxMoUSuwRprJL7Br5OHqMpO7axfs0xnGuEzP76gBBbfNGznF3yu78TblQV3guYk/s320/DUBAI-PALM-CITY--02.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5472340824516042162" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgITkj50mTZjcT_Yip0MoOuU-dRD9F3ZNrAyV4XCT-IvnB7A-l2fcoh0iEN3Eq9-N2Db9g8KmBk3ZgIbh9KmxfOW6Ai1Q4lXjKtFG77uuH99fqCeFaEMDNAXKfetdtEySs_06lSnQ7Slms/s1600/DUBAI-PALM-CITY--01.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 320px; height: 202px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgITkj50mTZjcT_Yip0MoOuU-dRD9F3ZNrAyV4XCT-IvnB7A-l2fcoh0iEN3Eq9-N2Db9g8KmBk3ZgIbh9KmxfOW6Ai1Q4lXjKtFG77uuH99fqCeFaEMDNAXKfetdtEySs_06lSnQ7Slms/s320/DUBAI-PALM-CITY--01.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5472340818648563298" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjnx0rlHKfoMKFnlMzyOzzYAIw6TGjymw-VIt_Kzn3gGAkLJb2Hq6DIuwV8gDrD9gH9SWi8he8DfAEZJ_ls1nKmsEnw-2H3YWVbp1rxFhaAUmbzz8rppvqVP-NFtYVRVVFZl2oSkXyFHjk/s1600/DUBAI-PALM-CITY.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 320px; height: 218px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjnx0rlHKfoMKFnlMzyOzzYAIw6TGjymw-VIt_Kzn3gGAkLJb2Hq6DIuwV8gDrD9gH9SWi8he8DfAEZJ_ls1nKmsEnw-2H3YWVbp1rxFhaAUmbzz8rppvqVP-NFtYVRVVFZl2oSkXyFHjk/s320/DUBAI-PALM-CITY.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5472340811367009842" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjL7iRwUnXgDwkN43ilD08d7nr1qK_FseiDqIFIPaLnWcjbaDRTvYVZdvzsf7zGhwmGDWxttWL2k49whCYX9jDzPUDvpas8yCEyxahtOYxMyXAJdWRFZ6QteoUzWwgwVFoNPP_Ubwy8mDA/s1600/Jilhaz-Poster-WEB.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 247px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjL7iRwUnXgDwkN43ilD08d7nr1qK_FseiDqIFIPaLnWcjbaDRTvYVZdvzsf7zGhwmGDWxttWL2k49whCYX9jDzPUDvpas8yCEyxahtOYxMyXAJdWRFZ6QteoUzWwgwVFoNPP_Ubwy8mDA/s320/Jilhaz-Poster-WEB.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5472329640308624226" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhLNh0g-62-iJPjFw9Mm5yoK00ST_SFQeGpk4__2pLEJpjueMf9iGhybsAAzu7r9P1wdldpUa4bhSK2YYUCF0AedYgi6fVhEy-VJ9uYFnlqRHxE-Bw_Y_B3DtskUMeWujtT7UQaczeVzbI/s1600/KABA+SORIF+VITORA001.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 300px; height: 224px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhLNh0g-62-iJPjFw9Mm5yoK00ST_SFQeGpk4__2pLEJpjueMf9iGhybsAAzu7r9P1wdldpUa4bhSK2YYUCF0AedYgi6fVhEy-VJ9uYFnlqRHxE-Bw_Y_B3DtskUMeWujtT7UQaczeVzbI/s320/KABA+SORIF+VITORA001.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5472329300098808594" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEikY2CngHe9sQidrIm77eMowSq0tVzrmFUSNEsir8BIgChG8b8SKD9_GuLsxOv703hRcuZvwURMzTsjoa9RYxnud9W92c-mayeDjJkwkLsfj8IyGKl3D6mwoWDkOHPqIU82Xyej8lX9N-g/s1600/KABA+SORIF+VITORA002.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 278px; height: 300px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEikY2CngHe9sQidrIm77eMowSq0tVzrmFUSNEsir8BIgChG8b8SKD9_GuLsxOv703hRcuZvwURMzTsjoa9RYxnud9W92c-mayeDjJkwkLsfj8IyGKl3D6mwoWDkOHPqIU82Xyej8lX9N-g/s320/KABA+SORIF+VITORA002.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5472329295012861330" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/polol_1263056569_5-PPP.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 400px; height: 590px;" src="http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/polol_1263056569_5-PPP.jpg" border="0" alt="" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/polol_1263056583_6-t846xh.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 400px; height: 462px;" src="http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/polol_1263056583_6-t846xh.jpg" border="0" alt="" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/polol_1263056569_5-PPP.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 400px; height: 590px;" src="http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/polol_1263056569_5-PPP.jpg" border="0" alt="" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/polol_1263056533_3-a0c6qv.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 400px; height: 232px;" src="http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/polol_1263056533_3-a0c6qv.jpg" border="0" alt="" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/polol_1263056517_2-33z2xig.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 400px; height: 256px;" src="http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/polol_1263056517_2-33z2xig.jpg" border="0" alt="" /></a>Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-33105567214705653922010-05-02T22:10:00.006+06:002010-05-02T22:18:10.519+06:00HAJJ BANGALE DETAILS HERE<span style="font-weight:bold;">হজ্জের গোড়ার কথা </span><br /><br />আরবী ভাষায় ‘হজ্জ’ অর্থ যিয়ারতের সংকল্প করা। যেহেতু খানায়ে কা’বা যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে মুসলমানরা পৃথিবীর চারদিক থেকে নির্দিষ্ট কেন্দ্রের দিকে চলে আসে, তাই এর নাম রাখা হয়েছে ‘হজ্জ’। কখন কিভাবে হজ্জের সূচনা হয়েছিল, সেই ইতিহাস অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক এবং শিক্ষাপ্রদ। গভীর মনোযোগের সাথে সেই ইতিহাস অধ্যয়ন করলে হজ্জের কল্যাণকারিতা হৃদয়ঙ্গম করা পাঠকের জন্য সহজ হবে। <br />কি মুসলমান, কি খৃস্টান- হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের নাম কারো অজানা নয়। দুনিয়ার তিন ভাগের দু’ভাগেরও বেশী লোক তাঁকে ‘নেতা’ বলে স্বীকার করে । হয়রত মূসা আলাইহিস সালাম, হয়রত ঈসা আলাইহিস সালাম এবং হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এ তিনজন শ্রেষ্ঠ নবীই তাঁর বংশজাত, তাঁর প্রজ্জলিত আলোকবর্তিকা থেকে সমগ্র দুনিয়ার সত্যের জ্যোতি বিস্তার করেছে । চার হাজার বছরেরও বেশীকাল পূর্বে তিনি ইরাকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তখন সমগ্র দুনিয়ার মানুষ আল্লাহকে ভুলে বসেছিল । পৃথিবীর একজন মানুষও তার প্রকৃত মালিক ও প্রভুকে জানতো না এবং তাঁর সামনে বন্দেগী ও আনুগত্যের ভাবধারায় মস্তক অবনত করতো না। যে জাতির মধ্যে তাঁর জন্ম হয়েছিল সে জাতির লোকেরা যদিও তদানীন্তন পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা উন্নত জাতি ছিল; কিন্তু পথভ্রষ্ট হওয়ার দিক দিয়েও তারাই ছিল অগ্রনেতা ।সৃষ্ট জীব কখনও মা'বুদ বা উপাস্য হতে পারে না। জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং শিল্প-ভাস্কর্যে চরম উন্নতি লাভ করা সত্ত্বেও এ সহজ কথাটি তারা বুঝতে পারতো না । তাই তারা আকাশের তারকা এবং (মাটি বা পাথর নির্মিত) মূর্তি পূজা করতো । জ্যোতিষ শাস্ত্র, ভালো-মন্দ জানার জন্য 'ফাল' গ্রহণ, অজ্ঞাত কথা বলা, যাদু বিদ্যা প্রয়োগ এবং দোয়া তাবীয ও ঝাড়-ফুঁকের খুবই প্রচলন ছিল। বর্তমানকালের হিন্দু পন্ডিত ও ব্রাহ্মণগণের মতো তখনকার সমাজে ঠাকুর-পুরোহিতেরও একটি শ্রেনী ছিল। তারা মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ করতো, অপর লোকের পক্ষ থেকে পূজা করে দিত, বিপদে- আপদে বা আনন্দে- খুশিতে তারা বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান পালন করতো এবং অজ্ঞাত কথা বলে লোকদেরকে প্রতারিত করতো। সাধারণ লোকেরা এদেরকেই ভাগ্য নির্ধারক বলে মনে করতো। তারা এদেরই অংগুলি নির্দেশে ওঠা-বসা করতো এবং চুপচাপ থেকে নিতান্ত অন্ধের ন্যায় তাদের মনের লালসা পূর্ণ করে যেতো। কারণ তারা মনে করতো যে, দেবতাদের ওপরে এসব পূজারীর কর্তৃত্ব রয়েছে। এরা খুশি হলে আমাদের প্রতি দেবতাদের অনুগ্রহ বর্ষিত হবে। অন্যথায় আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। এ পূজারী দলের সাথে তৎকালীন রাজা-বাদশাহদের গোপন যোগাযোগ ছিল। জনসাধারণকে দাসানুদাস বানিয়ে রাখার ব্যাপারে রাজা-বাদশা ও পূজারীগণ পরস্পর সাহায্য করতো । একদিকে সরকার পূজারীদের পৃষ্ঠপোকতা করতো এবং অন্যদিকে পূজারীগণ জনগণের মনে এ ধারণা বদ্ধমূল করে দিত যে, রাজা-বাদশাহরাও ‘আল্লাহর’ মধ্যে গণ্য; তারা দেশ ও প্রজাদের একচ্ছত্র মালিক, তাদের মুখের কথাই আইন এবং প্রজাদের জান-মালের ওপর তাদের যা ইচ্ছা করার অধিকার আছে। শুধু এতটুকুই নয়, রাজা -বাদশাহের সামনে (সিজদায় মাথা নত করা সহ) তাদের বন্দেগীর যাবতীয় অনুষ্ঠানই পালন করা হতো -যেন প্রজাদের মন-মগযের ওপর তাদের প্রভুত্বের ছাপ স্থায়ীভাবে অংকিত হয়ে যায়। <br />এহেন পরিবেশের মধ্যে এবং এ জাতির কোনো এক বংশে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের জন্ম। আরও মজার ব্যাপার এই যে, যে বংশে তাঁর জন্ম হয়েছিল, সেই বংশটাই ছিল পেশাদার ও বংশানুক্রমিক পূজারী। তাঁর বাপ-দাদা ছিলেন আপন বংশের পন্ডিত-পুরোহিত ব্রাহ্মণ।কাজেই একজন ব্রাক্ষণ সন্তানের পক্ষে যেরূপ শিক্ষা -দীক্ষা লাভ করা সম্ভব, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামও ঠিক তাই লাভ করলেন। সেই ধরনের কথা-বার্তা শৈশবকাল হতেই তাঁর কানে প্রবেশ করতো। তিনি তার ভাই -ভগ্নীদের মধ্যে পীর ও পীরজাদাদের মতো আড়ম্বর এবং বড়লোকী চাল-চলন দেখতে পেতেন। স্থানীয় মন্দিরের পৌরহিত্যের মহাসম্মানিত গদি তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল। সেই গদিতে বসলে তিনি অনায়াসেই ‘জাতির নেতা’ হয়ে বসতে পারতেন। তাঁর গোটা পরিবারের জন্য চারদিকে থেকে যেসব ভেট-বেগাড় আর নযর -নিয়াজ জড়ো হতো, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের জন্যও তা বর্তমান ছিল। দেশের লোক নিজেদের চিরকালীন অভ্যাস অনুসারে তাঁর সামনে এসে হাত জোড় করে বসার এবং ভক্তি -শ্রদ্ধা ভরে মাথানত করার জন্য প্রস্তুত ছিল। দেবতার সাথে সম্পর্ক পেতে অজ্ঞাত কথা বলার ভান করে তিনি সাধারণ কৃষক থেকে তদানীন্তন বাদশাহ পর্যন্ত সকলকে আজ্ঞানুবর্তী গোলাম বানিয়ে নিতে পারতেন। এ অন্ধকারে যেখানে সত্য জ্ঞানসম্পন্ন সত্যের অনুসারী একজন মানুষ কোথাও ছিল না সেখানে একদিকে তাঁর পক্ষে সত্যের আলো লাভ করা যেমন সম্ভবপর ছিল না তেমনি ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক উভয় দিক দিয়েই এ বিরাট স্বার্থের ওপর পদাঘাত করে নিছক সত্যের জন্য দুনিয়া জোড়া বিপদের গর্ভে ঝাপিয়ে পড়তে প্রস্তুত হওয়াও কোনো সাধারণ লোকের পক্ষে সম্ভব ছিল না। <br />কিন্তু হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কোনো সাধারণ মানুষ ছিলেন না।তাঁকে ‘স্বতন্ত্র মাটি’ দ্বারাই সৃষ্টি করা হয়েছিল। জ্ঞান হওয়ার সাথে সাথেই তিনি ভাবতে শুরু করলেন চন্দ্র, সূর্য, তারকা নিতান্ত গোলামের মতই উদয়-অস্তের নিয়ম অনুসরণ করছে, মূর্তি তো মানুষের নিজের হাতে পাথর দিয়ে গড়া, দেশের বাদশাহ আমাদের ন্যায় একজন সাধারণ মানুষ, এরা রব হতে পারে কেমন করে ? যেসব জিনিস নিজের ইচ্ছায় এতটুও নড়তে পারে না, নিজের সাহায্য করার ক্ষমতাও যেসবের মধ্যে নেই, জীবন ও মৃত্যুর ওপর যাদের বিন্দুমাত্র হাত নেই, তাদের সমনে মানুষ কেন মাথা নত করবে ? মানুষ কেন তাদের দাসত্ব ও পুজা -উপাসনা করবে ? প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির জন্য তাদের গোলামীই বা কেন করবে ? আকাশ ও পৃথিবীতে যত কিছুই আমরা দেখতে পাই, যেসব জিনিস সম্পর্কে কোন না কোন ভাবে আমরা ওয়াকিফহাল, তার মধ্যে একটি জিনিসও স্বাধীন নয়, নিরপেক্ষ নয়, অক্ষয়- চিরস্থায়ীও নয়। এদের প্রত্যেকটিরই অবস্থা যখন এরুপ তখন এরা মানুষের 'রব বা প্রভু' কিরুপে হতে পারে ?এদের কেউই যখন আমাকে সৃষ্টি করেনি, আমার জীবন-মৃত্যু ও লাভ-ক্ষতির এখতিয়ার যখন এদের কারো হাতে নেই,আমার রিযিক ও জীবিকার চাবিকাঠি যখন এদের কারো হাতে নয়, তখন এদের কাউকেও আমি ‘রব’ বলে স্বীকার করবো কেন ? এবং তার সামনে মাথা নত করে দাসত্ব ও উপসনাই বা কেন করবো ? বস্তুত আমার ‘রব’ কেবল তিনিই হতে পারেন যিনি সবকিছুই সৃষ্টি করেছেন, সকলেই যার মুখাপেক্ষী এবং যার হাতে সকলেরই জীবন -মৃত্যু ও লাভ -ক্ষতির উ ৎস নিহিত রয়েছে। এসব কথা ভেবে হযরত ইরাহীম (আ) জাতির উপাস্য মূর্তিগুলোকে পূজা না করে বরং পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত করলেন এবং এ সিদ্ধান্তে পৌছেই তিনি উদাত্ত কন্ঠে ঘোষণা করলেনঃ <br />إِنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ <br />‘‘তোমরা যাদেরকে আল্লাহর শরীক বলে মনে কর তাদের সাথে আমরা কোন সম্পর্ক নেই।” - সূরা আল আন'আমঃ ৭৮ <br />إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ <br />‘‘আমি সবদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বিশেষভাবে কেবল সেই মহান সত্ত্বাকেই ইবাদাত - বন্দেগীর জন্য নির্দিষ্ট করলাম যিনি সমস্ত আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই।’’ - সূরা আল আন'আমঃ ৭৯ <br />এ বিপ্লবাত্মক ঘোষণার পর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ওপর বিপদ - মুসিবতের পাহাড় ভেংগে পড়লো। পিতা বললেন, আমি তোমাকে পরিত্যাগ করবো, বাড়ী হতে তাড়িয়ে দেব। সমগ্র জাতি বলে ওঠলো আমরা কেউ তোমাকে আশ্রয় দেব না। স্থানীয় সরকার ও তার বিরুদ্ধে লেগে গেল, বাদশাহর সামনে মামলা দায়ের করা হলো, কিন্তু হযরত ইবরাহীম আলাহীস সালাম একাকী এবং নিঃসংগ হয়েও সত্যের জন্য সকলের সামনেই মাথা উঁচু করে দাঁড়ালেন। পিতাকে বিশেষ সম্মানের সাথে বললেন: ‘‘আমি যে জ্ঞান লাভ করেছি। আপনি তা আদৌ জানেন না। কাজেই আমি আপনাদের কথা শুনবো না, তার পরিবর্তে আমার কথা আপনাদের সকলের শোনা উচিত।” <br />জাতির লোকদের হুমকির উত্তরে নিজ হাতে সবগুলো মূর্তি ভেংগে ফেলে তিনি প্রমাণ করলেন যে, তোমরা যাদের পূজা করো, তাদের কোন ক্ষমতা নেই। বাদশাহর প্রকাশ্য দরবারে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বললেনঃ “তুমি আমার ‘রব’ নও, আমার ‘রব’ তিনিই যাঁর মুষ্ঠিতে তোমার আমার সকলেরই জীবন ও মৃত্যু নিহিত রয়েছে এবং যাঁর নিয়মের কঠিন বাঁধনে চন্দ্র, সূর্য সবই বন্দী হয়ে আছে।” রাজ দরবার থেকে শেষ পর্যন্ত ফয়সালা হলো, ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে জীবন্ত জ্বালিয়ে ভষ্ম করা হবে। কিন্তু ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দিল ছিল পর্বত অপেক্ষা অধিকতর শক্ত - একমাত্র আল্লাহর ওপরেই ছিল তাঁর ভরসা। তাই এ ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করতেও তিনি অকুন্ঠ চিত্তে প্রস্তুত হলেন। অতপর আল্লাহ তাআলা যখন তাঁকে কাফেরদের অগ্নিকুন্ড হতে মুক্তি দিয়েছিলেন তখন তিনি জন্মভুমি , জাতি, আত্মীয়-বান্ধব সবকিছু পরিত্যাগ করে শুধু নিজের স্ত্রী ও ভ্রাতুষ্পুত্রকে সাথে নিয়ে পথে পথে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। যার জন্য ঘরে পৌরোহিত্যের গদি অপেক্ষা করছিলো, সেই গদিতে বসে যিনি গোটা জাতির পীর হয়ে যেতে পারতেন এবং সেই গদিকে যিনি বংশানুক্রমিকভাবে নিজের সম্পত্তি বানিয়ে নিতে পারতেন, তিনি নিজের ও নিজের সন্তান সন্তুতির জন্য নির্বাসন, সহায়-সম্বল হীনতার নিদারুণ দুঃখ- মসিবতকেই শ্রেয় মনে করে গ্রহণ করলেন। কারণ দুনিয়াবাসীকে অসংখ্য ‘মিথ্যা রবের’ দাসত্ব নিগড়ে বন্দী করে সুখের জীবন যাপন করা তিনি মাত্রই বরদাশত করতে পারলেন না। বরং তার পরিবর্তে তিনি একমাত্র প্রকৃত রবের দাসত্ব কবুল করে সমগ্র দুনিয়াকে সেই দিকে আহ্বান জানাতে লাগলেন এবং এ ‘অপরাধে’ (?) তিনি কোথাও একটু শান্তিতে বসবাস করতে পারলেন না। <br />জন্মভূমি থেকে বের হয়ে হযরত ইবরাহীম (আ) সিরিয়া, ফিলিস্তিন, মিসর এবং আরব দেশসমূহে ঘুরতে -ফিরতে লাগলেন। এই ভ্রমণ ব্যাপদেশ তাঁর ওপর অসংখ্য বিপদ এসেছে, ধন-সম্পদ বা টাকা-পয়সা তার সাথে কিছু ছিল না। বিদেশে গিয়েও তিনি রুযি-রোযগার করার জন্য একটু চিন্তা-ভাবনা করেন নি। রাত দিন তিনি কেবল একটি চিন্তা করতেন , দুনিয়ার মানুষকে অসংখ্য রবের গোলামীর নাগপাশ থেকে মুক্ত করে কিরূপে একমাত্র আল্লাহর বান্দায় পরিণত করা যেতে পারে। এ খেয়াল ও চিন্তা -ভারাক্রান্ত মানুষটিকে যখন তাঁর পিতা এবং নিজ জাতি মোটেই সহ্য করলো না, তখন তাঁকে আর কে বরদাশত করতে পারে? কোন্ দেশের লোক তাঁকে আদর -অভ্যর্থনা জানাবে? সকল স্থানে সেই একই ধরনের মন্দিরের পুরুহিত আর খোদায়ীর দাবীদার রাজা- বাদশাহরাই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল এবং সর্বত্র একই ধরনের অজ্ঞ- মূর্খ জনসাধারণ বাস করতো, যারা এ ‘মিথ্যা খোদাদের’ গোলামীর জালে বন্দী হয়ে ছিল। এদের মধ্যে এমন ব্যক্তি কি করে শান্তিতে দিন কাটাতে পারে, যিনি নিজের রব ছাড়া অন্য কারো গোলামী করতে প্রস্তুত ছিলেন না। যিনি অন্য লোকদেরও বলে বেড়াতেন যে, আল্লাহ ছাড়া তোমাদের আর কেউ মালিক, মনিব ও প্রভু নেই, সকলের প্রভুত্ব ও খোদায়ীর আসন চূর্ণ করে কেবলমাত্র আল্লাহর বান্দারূপে জীবনযাপন কর। ঠিক এ কারণেই হযরত ইবরহীম আলাইহিস সালাম কোথাও শান্তিতে বসবাস করতে পারেননি। বছরের পর বছর ধরে তিনি উদভ্রান্ত পথিকের ন্যায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। কখনও কেনানের জনপদে, কখনও মিসরে এবং কখনও আরবের মরুভুমিতে গিয়ে পৌঁছেছেন। এভাবেই তাঁর গোটা যৌবনকাল অতিবাহিত হয়ে গেল, কালো চুল সাদা হয়ে গেল। <br />জীবনের শেষ ভাগে নব্বই বছর পূর্ণ হতে যখন মাত্র চারটি বছর বাকী ছিল এবং সন্তান লাভের কোনো আশাই যখন ছিল না তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সন্তান দান করলেন। কিন্তু তখনও এ আল্লাহর বান্দা এতটুকু চিন্তিত হয়ে পাড়েননি যে, নিজের জীবনটা তো আশ্রয়হীনভাবে কেটে গেছে, এখন অন্তত ছেলে পেলেদেরকে একটু রুজী- রোযগারের যোগ্য করে তুলি। না, এসব চিন্তা তাঁর মনে উদয় হয়নি। বরং এ বৃদ্ধ পিতার মনে একটি মাত্র চিন্তাই জেগেছিল , তা এই যে, যে কর্তব্য সাধনে তিনি নিজের জীবন অতিবিহিত করেছেন, তাঁর মৃত্যুর পর সেই কর্তব্য পালন করার এবং তাঁর দাওয়াত চারদিকে প্রচার করার মতো লোকের বিশেষ অভাব রয়েছে। ঠিক এ জন্য তিনি আল্লাহর কাছে সন্তান কামনা করেছিলেন এবং আল্লাহ যখন তাঁকে সন্তান দান করলেন, তখন তিনি তাকে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর কাজ চালিয়ে যাবার উপযোগী করে গড়ে তুলতে চেষ্টা করলেন। এ পূর্ণ মানুষটির জীবন একজন সত্যিকার মুসলমানের আদর্শ জীবন ছিল। যৌবনের সূচনাতেই - বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই যখন তিনি তাঁর রবকে চিনতে পারলেন তখন আল্লাহ তাকে বলেছিলেনঃ أَسْلِمْ - ইসলাম গ্রহণ কর - স্বেচ্ছায় আমার কাছে আত্মসমর্পণ কর, আমার দাসত্ব স্বীকার করো। তিনি তখন উত্তরে পরিষ্কার ভাষায় বলেছিলেনঃ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ - আমি ইসলাম কবুল করলাম। আমি সারাজাহানের প্রভুর উদ্দেশ্যে নিজেকে উৎসর্গ করলাম, নিজেকে তার কাছে সোপর্দ করলাম। সমগ্র জীবন ভরে একথা ও এ ওয়াদাকে এই সাচ্চা মানুষটি সবদিক দিয়ে পূর্ণ করে দেখিয়েছেন। তিনি রাব্বুল আলামিনের জন্য শত শত বছরের পৈত্রিক ধর্ম এবং তার যাবতীয় আচার অনুষ্ঠান ও আকীদা - বিশ্বাস পরিত্যাগ করেছেন। পৌরহিত্যের গদিতে বসলে তিনি যেসব সুযোগ - সুবিধা লাভ করতে পারতেন তা সবই তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। নিজের বংশ - পরিবার, নিজের জাতি ও মাতৃভূমি ত্যাগ করেছেন। নিজের জীবনকে উপেক্ষা করে আগুনের বুকে ঝাঁপ দিয়েছেন। দেশত্যাগ ও নির্বাসনের দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছেন, দেশের পর দেশ পরিভ্রমণ করেছেন, নিজের জীবনের এক একটি মূহুর্তকে রাব্বুল আলামীনের দাসত্ব অনুগত্যের কাজে এবং তাঁর দ্বীন ইসলামের প্রচারে কাটিয়েছেন। বৃদ্ধ বয়সে যখন সন্তান লাভ হলো তখন তাঁর জন্যও এ ধর্ম এবং এ কর্তব্যই নির্ধারিত করলেন। কিন্তু এসব কঠিন পরীক্ষার পর আর একটি শেষ ও কঠিন পরীক্ষা অবশিষ্ট রয়ে গিয়েছিল। যে পরীক্ষায় উত্তির্ণ না হওয়া পর্যন্ত হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সব কিছু অপেক্ষা রাব্বুল আলামীনকেই বেশী ভালবাসেন কিনা, তার ফয়সালা হতে পারতো না। সেই কঠিন এবং কঠোর পরীক্ষার সামনে এসে পড়লো। বৃদ্ধ বয়সে একেবারে নিরাশ হয়ে যাওয়ার পর তাঁর যে সন্তান লাভ হয়ে ছিল, সেই একমাত্র সন্তানকেও আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী করতে পারেন কিনা, তারই পরীক্ষা নেয়া হলো। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এ পরীক্ষায়ও উত্তীর্ন হলেন এবং আল্লাহর নির্দেশ লাভ করার সাথে সাথে যখন তিনি নিজের পুত্রকে নিজের হাতে যবেহ করতে প্রস্তুত হলেন, তখন চূড়ান্তরূপে ঘোষণা করা হলো যে, এখন তুমি প্রকৃত মুসলিম হওয়ার দাবীকে সত্য বলে প্রমাণ করেছো। আল্লাহর কাছেও তাঁর এ কুরবানী কবুল হলো এবং তাকে বলে দেয়া হলো যে, এখন তোমাকে সারা দুনিয়ার ইমাম বা নেতা বানিয়ে দেয়া যেতে পারে - এখন তুমি সেই জন্য সম্পূর্ণরূপে যোগ্য হয়েছো। কুরআন শরীফের নিম্নলিখিত আয়াতে একথাই বলা হয়েছেঃ <br />وَإِذِ ابْتَلَى إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا قَالَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ <br />“এবং যখন ইবরাহীমকে তার ‘রব’ কয়েকটি ব্যাপারে পরীক্ষা করলেন এবং সে সেই পরীক্ষায় ঠিকভাবে উত্তীর্ণ হলো তখন তাকে জানিয়ে দেয়া হলো যে, আমি তোমাকে সমগ্র মানুষের ইমাম (অগ্রবর্তী নেতা) নিযুক্ত করেছি। তিনি বললেন, আমার বংশধরদের প্রতিও কি এ হুকুম ? আল্লাহ তায়ালা বললেনঃ যালেমদের জন্য আমার ওয়াদা প্রযোজ্য নয়।” - সূরা আল বাকারাঃ ১২৪ <br />এভাবে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে দুনিয়ার নেতৃত্ব দান করা হলো এবং তাঁকে ইসলামের বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের ‘নেতা’ নিযুক্ত করা হলো। এখন এ আন্দোলনকে অধিকতর সম্প্রসারিত করার জন্য এবং বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব গ্রহণ করে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার জন্য তাঁর কয়েকজন সহকর্মী একান্ত আবশ্যক হয়ে পড়লো। এ ব্যাপারে তিন ব্যক্তি হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ‘দক্ষিণ হাত’ স্বরূপ কাজ করেছেন। একজন তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র হযরত লূত আলাইহিস সালাম, দ্বিতীয় তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম যিনি - আল্লাহ তাঁর জীবন চান জানতে পেরে অত্যন্ত খুশী ও আগ্রহের সাথে - যবেহ হবার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন এবং তৃতীয় হচ্ছেন তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র হযরত ইসহাক আলাইহিস সালাম। <br />ভ্রাতুষ্পুত্রকে তিনি ‘সাদুম’ (ট্রান্স জর্দান) এলাকায় বসালেন। এখানে সেকালের সর্বাপেক্ষা ইতর - লম্পট জাতি বাস করতো। সেখানে একদিকে সেই জাতির নৈতিকতার সংস্কার সাধন এবং সেই সাথে দূরবর্তী এলাকাসমূহেও ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোই ছিল তাঁর কাজ। ইরান, ইরাক এবং মিসরের ব্যবসায়ী দল এ এলাকা দিয়েই যাতায়াত করতো। কাজেই এখানে বসে উভয় দিকেই ইসলাম প্রচারের কাজ সুষ্ঠু রূপে সম্পন্ন করা তাঁর পক্ষে বিশেষ সুবিধাজনক হয়েছিল। <br />কনিষ্ঠ পুত্র হযরত ইসহাক আলাইহিস সালামকে তিনি কেনান বা ফিলিস্তিন এলাকায় রাখলেন। এটা সিরিয়া ও মিসরের মধ্যবর্তী স্থান, তদুপরি এটা সমূদ্র - উপকূলবর্তী এলাকা বলে এখান থেকেই অন্যান্য দেশ পর্যন্ত ইসলামের আওয়াজ পৌঁছানো সহজ ছিল। এ স্থান থেকেই হযরত ইসহাক আলাইহিস সালামের পুত্র হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম যার নাম ছিল ইসরাঈল এবং পৌত্র হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের মারফতে ইসলামী আন্দোলন মিসর পর্যন্ত পোঁছেছিল। <br />জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে হিজাযের মক্কা নগরীতে বসালেন এবং দীর্ঘকাল যাবত নিজেই তাঁর সাথে থেকে আরবের কোণে কোণে ইসলামের শিক্ষা বিস্তার করেছিলেন। তারপর এখানেই পিতা-পুত্র দু’জনে মিলে ইসলামী আন্দোলনের বিশ্ববিখ্যাত কেন্দ্র খানায়ে কা’বা প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহ তায়ালা নিজেই এ কেন্দ্র নির্দিষ্ট করেছিলেন, নিজেই এটা গড়ে তোলার স্থান ঠিক করেছিলেন। খানায়ে কা’বা সাধারণ মসজিদের ন্যায় নিছক ইবাদাতের স্থান নয়, প্রথম দিন থেকেই এটা দীন ইসলামের বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের প্রচার কেন্দ্ররূপে নির্ধারিত হয়েছিল। এ কা’বা ঘর নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল এই যে, পৃথিবীর দূরবর্তী অঞ্চলসমূহ থেকে এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী সকল মানুষ এখানে এসে মিলিত হবে এবং সংঘবদ্ধ ভাবে এক আল্লাহর ইবাদাত করবে, আবার এখান থেকেই ইসলামের বিপ্লবী পয়গাম নিয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবে। বিশ্ব মুসলিমের এ সম্মেলনেরই নাম হলো ‘হজ্জ’। এ ইবাদাত কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা কি করে হলো, কোন সব পূত ভাবধারা এবং দোআ প্রার্থনা সহকারে পিতা-পুত্র মিলে এ ইমারত তৈরী করেছিলেন আর ‘হজ্জ’ কিভাবে শুরু হলো তার বিস্তারিত বিবরণ কুরআন শরীফে বর্ণিত হয়েছেঃ <br />إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِلْعَالَمِينَ - فِيهِ آَيَاتٌ بَيِّنَاتٌ مَقَامُ إِبْرَاهِيمَ وَمَنْ دَخَلَهُ كَانَ آَمِنًا <br />“মানুষের জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর নির্দিষ্ট করা হয়েছিল তা মক্কার ঘর তাতে সন্দেহ নেই। এটা অত্যন্ত পবিত্র, বরকতপূর্ণ এবং সারা দুনিয়ার জন্য হেদায়াতের কেন্দ্রস্থল। এতে আল্লাহর প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহ বর্তমান রয়েছে, ‘মাকামে ইবরাহীম’ রয়েছে এবং যে-ই এখানে প্রবেশ করবে সেই নিরাপদে থাকবে।” - সূরা আলে ইমরানঃ ৯৬-৯৭ <br />أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا جَعَلْنَا حَرَمًا آَمِنًا وَيُتَخَطَّفُ النَّاسُ مِنْ حَوْلِهِمْ <br />“আমরা মানুষের জন্য কিরূপে বিপদশূন্য ও শান্তিপূর্ণ হেরেম তৈরী করেছি তা কি তারা দেখতে পায়নি? অথচ তার চারপাশে লোক লুন্ঠিত ও ছিনতাই হয়ে যেতো।”- সূরা আল আনকাবুতঃ ৬৭ <br />অর্থাৎ আরবের চারদিকে যখন লুঠ -তরাজ , মার-পিট এবং যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদি অশান্তির সয়লাব বয়ে যেত তখনও এ হেরেমে সর্বদা শান্তি বিরাজ করতো। এমন কি দুর্ধর্ষ মরু বেদুঈন যদি এর সীমার মধ্যে তার পিতৃহন্তাকে দেখতে পেত, তবুও এর মধ্যে বসে তাকে স্পর্শমাত্র করতে সাহস পেত না। <br />وَإِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِلنَّاسِ وَأَمْنًا وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى وَعَهِدْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ - وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَذَا بَلَدًا آَمِنًا وَارْزُقْ أَهْلَهُ مِنَ الثَّمَرَاتِ مَنْ آَمَنَ مِنْهُمْ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ <br />“এবং স্মরণ কর, যখন আমরা এ ঘরকে লোকদের কেন্দ্র ও নিরাপদ আশ্রয় স্থল বানিয়েছিলাম এবং ইবরাহীমের ইবাদাতের স্থানকে ‘মুসাল্লা’ (জায়নামায) বানাবার নির্দেশ দিয়েছিলাম আর তাওয়াফকারী , অবস্থানকারী এবং নামাযীদের জন্য আমার ঘরকে পাক ও পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে নির্দেশ দিয়েছিলাম। পরে যখন ইবরাহীম দোয়া করলো, হে পালনকর্তা আপনি এ শহরকে শান্তিপূর্ণ জনপদে পরিণত করুন এবং এখানকার অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী তাদের জন্য ফল-মূল দ্বারা জীবিকার সংস্থান করে দিন।” - সূরা আল বাকারাঃ ১২৫-১২৬ <br />وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ - رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُسْلِمَةً لَكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَا إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ - رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آَيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ <br />“এবং স্মরণ কর, ইবরাহীম ও ইসমাঈল যখন এ ঘরের ভিত্তি স্থাপনকালে দোয়া করছিলঃ পরওয়ারদিগার ! আমাদের এ চেষ্টা কুবল কর, তুমি সবকিছু জান ও শুনতে পাও। পরওয়ারদিগার ! তুমি আমাদের দু’জনকেই মুসলিম- অর্থাৎ তোমার অনুগত কর এবং আমাদের বংশাবলী থেকে এমন একটি জাতি তৈরী কর যারা একান্তভাবে, তোমারই অনুগত হবে। আমাদেরকে তোমার ইবাদাত করার পন্থা বলে দাও, আমাদের প্রতি ক্ষমার দৃষ্টি নিক্ষেপ কর, তুমি বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়াময়। পরওয়ারদিগার! তুমি সে জাতির প্রতি তাদের মধ্য থেকে এমন একজন রাসূল পাঠাও যিনি তাদেরকে তোমার বাণী পড়ে শুনাবে, তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞানের শিক্ষা দেবে এবং তাদের চরিত্র সংশোধন করবে। নিশ্চয় তুমি সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন এবং বিজ্ঞ।” - সূরা আল বাকারাঃ ১২৭-১২৯ <br />وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَذَا الْبَلَدَ آَمِنًا وَاجْنُبْنِي وَبَنِيَّ أَنْ نَعْبُدَ الْأَصْنَامَ - رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضْلَلْنَ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ فَمَنْ تَبِعَنِي فَإِنَّهُ مِنِّي وَمَنْ عَصَانِي فَإِنَّكَ غَفُورٌ رَحِيمٌ - رَبَّنَا إِنِّي أَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُمْ مِنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ <br />“এবং স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম দোয়া করেছিলঃ হে আল্লাহ ! এ শহরকে শান্তিপূর্ণ বানিয়ে দাও, আমাকে এবং আমার সন্তানকে মূর্তিপূজার শির্ক থেকে বাচাও। হে আল্লাহ ! এ মূর্তিগুলো অসংখ্য লোককে গোমরাহ করেছে। অতএব, যে আমার পন্থা অনুসরণ করবে সে আমার, আর যে আমার পন্থার বিপরীত চলবে -তখন তুমি নিশ্চয়ই বড় ক্ষমাশীল ও দয়াময়। পরাওয়ারদিগার ! আমি আমার বংশধরদের একটি অংশ তোমার এ মহান ঘরের নিকট, এ ধূসর মরূভূমিতে এনে পুনর্বাসিত করেছি- এ উদ্দেশ্যে যে, তারা নামাযের ব্যবস্থা কায়েম করবে। অতএব, হে আল্লাহ ! তুমি লোকদের মনে এতদূর উৎসাহ দাও যেন তারা এদের জীবিকার ব্যবস্থা করে। হয়ত এরা তোমার কৃতজ্ঞ বান্দা হবে।”-সূরা ইবরাহীমঃ ৩৫-৩৭ <br />وَإِذْ بَوَّأْنَا لِإِبْرَاهِيمَ مَكَانَ الْبَيْتِ أَنْ لَا تُشْرِكْ بِي شَيْئًا وَطَهِّرْ بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْقَائِمِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ - وَأَذِّنْ فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ - لِيَشْهَدُوا مَنَافِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَعْلُومَاتٍ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ <br />“এবং স্মরণ কর, যখন ইবরাহীমের জন্য এ ঘরের স্থান ঠিক করেছিলাম -একথা বলে যে, এখানে কোনো প্রকার শিরক করো না এবং আমার ঘরকে তাওয়াফকারী ও নামাযীদের জন্য পাক-সাফ করে রাখ। আর লোকদেরকে হজ্জ করার জন্য প্রকাশ্যভাবে আহবান জানাও - তারা যেন তোমার কাছে আসে, পায়ে হেঁটে আসুক কিংবা দূরবর্তী স্থান থেকে কৃশ উটের পিঠে চড়ে আসুক। এখানে এসে তারা যেন দেখতে পায় তাদের জন্য দ্বীন -দুনিয়ার কল্যানের কত সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর দেয়া জন্তুগুলোকে আল্লাহর নামে কুরবানী করবে, তা থেকে নিজেরাও খাবে এবং দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত লোকদেরও খেতে দেবে।” - সূরা আল হজ্জঃ ২৬-২৮ <br />‘হজ্জ’ শুরু হওয়ার এটাই গোড়ার ইতিহাস। এটাকে ইসলামের পঞ্চম রোকন (স্তম্ভ) হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এ থেকে জানা গেলে যে, দুনিয়ায় যে নবী বিশ্বব্যাপী ইসলামী আন্দোলন পরিচালনার জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন, মক্কা-ই ছিল তাঁর প্রধান কার্যালয়।পবিত্র কা’বাই ছিল এর প্রধান কেন্দ্র - যেখানে থেকে ইসলাম দুনিয়ায় দূরবর্তী অঞ্চলে প্রচারিত হতো।আর দুনিয়ায় যারাই এক আল্লাহর বন্দেগী করতে চাবে এবং বাস্তব কর্মজীবনে তার আনুগত্য করে চলবে, তাঁরা যে জাতি আর যে দেশেরই অধিবাসী হোক না কেন, সকলেই একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রে প্রতি বছর এসে সমবেত হবে, এজন্য ‘হজ্জ’ করার পন্থা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এ দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়া যাবে যে, চাকা যেমন নিজ অক্ষের চতুর্দিকে ঘোরে, মুসলমানদের জীবনও তেমনি আপন কেন্দ্রেরই চতুর্দিকে আবর্তিত হয়- এ গূঢ় রহস্যেরই বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে হজ্জ। <br />হজ্জের ইতিহাস<br />কিভাবে এবং কোন উদ্দেশ্যে হজ্জ শুরু হয়েছিল সে কথা পূর্বের প্রবন্ধে আলোচনা করেছি। হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম মক্কায় ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন এবং তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে এখানে বসিয়ে ছিলেন, যেন তার পরে তিনি এ আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারেন, একথাও পূর্বের প্রবন্ধে বলা হয়েছে। হযরত ইসমাইল আলাইহীস সালামের পর তার বংশ ধরগণ কতকাল দীন ইসলামের পথে চলেছে তা আল্লাহ তাআলাই অবগত আছেন। কিন্তু পরবর্তী কয়েক শতাদ্বীর মধ্যেই তারা যে পূর্ববর্তী মহাপুরুষদের শিক্ষা ও প্রদর্শিত পথ ভুলে গিয়েছিল এবং অন্যান্য ‘জাহেল’ জাতির ন্যায় সর্বপ্রকার গোমরাহী ও পাপ- প্রথার প্রচলন করেছিল, তাতে সন্দেহ নেই।যে কা’বা ঘরকে কেন্দ্র করে এককালে এক আল্লাহর ইবাদাতের দাওয়াত ও প্রচার শুরু হয়েছিল, সেই কাবা ঘরে শত শত মূর্তি স্থাপন করা হলো। এমনকি, মূর্তি পূজা বন্ধ করার সাধনা ও আন্দোলনে যে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও ইসমাঈল আলাইহিস সালামের সারাটি জীবন অতিবাহিত হয়েছিল তাদের মূর্তি নির্মাণ করেও কাবা ঘরে স্থাপন করা হয়েছিল। চন্দ্র, বুধ, শুক্র, শনি ইত্যাদি গ্রহ - নক্ষত্রের পুজাও করতো। ভুত- প্রেত, ফেরেশতা এবং মৃত পূর্বপুরুষদের ‘আত্মা’র পূজাও করতো। তাদের মূর্খতা এতদূর প্রচন্ড রূপ ধারনা করেছিল যে, ঘর থেকে বের হবার সময় নিজেদের বংশের মূর্তি না পেলে পথ চলার সময় যে কোনো রঙীন পাথর দেখতে পেতো তারা তারই পূজা শুরু করতো। পাথর না পেলে পানি ও মাটির সংমিশ্রণে একটি প্রতিমূর্তি বানিয়ে তার ওপর ছাগ দুগ্ধ ছিটিয়ে দিলেই তাদের মতে সেই নিস্প্রাণ পিন্ডটি খোদা হয়ে যেত এবং এরই পুজা করতো । যে পৌরোহিত্য ও ঠাকুরবাদের বিরুদ্ধে তাদের ‘পিতা’ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সমগ্র ইরাকের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, তা-ই আবার তাদের ঘরে প্রবেশ করেছিল, কা’বাকে তারা মূর্তিপূজার আড্ডাখানা বানিয়ে নিজেরাই সেখানকার পুরোহিত সেজেছিল। হজ্জকে তারা ‘তীর্থযাত্রা’র অনুরূপ বানিয়ে তাওহীদ প্রচারের কেন্দ্রস্থল কা’বা ঘর থেকে মূর্তিপূজার প্রচার শুরূ করেছিল এবং পূজারীদের সর্বপ্রকার কলা -কৌশল অবলম্বন করে আরবের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকদের কাছ থেকে ‘নযর- নিয়ায ও ভেট - বেগাড়’ আদায় করতো এভাবে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম যে মহান কাজ শুরু করেছিলেন, তা সবই বিনষ্ট হয়ে গেল। <br />এ ঘোর জাহেলী যুগে হজ্জের যে চরম দুর্গতি হয়েছিল একটি ব্যাপার থেকে তা ষ্পষ্টরূপে অনুমান করা যায়। মক্কায় একটি বার্ষিক মেলা বসতো, আরবের বড় বড় বংশ ও গোত্রের কবি কিংবা ‘কথক’ নিজ নিজ গোত্রের খ্যাতি, বীরত্ব, শক্তি, সম্মান ও বদান্যতার প্রশংসায় আকাশ- বাতাস মুখরিত করে তুলতো এবং পারষ্পরিক গৌরব ও অহংকার প্রকাশের ব্যাপারে রীতিমত প্রতিযোগিতা করতো। এমন কি অপরের নিন্দার পর্যায়ও এসে যেত । সৌজন্য ও বদান্যতার ব্যপারেও পাল্লা দেয়া হতো। প্রত্যেক গোত্র -প্রধান নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করার জন্য ডেগ চড়াতো এবং একে অন্যকে হেয় করার উদ্দেশ্যে উটের পর উট যবেহ করতো। এ অপচয় ও অপব্যয়ের মূলে তাদের একটিমাত্র লক্ষ্য ছিল ; তা এই যে, এ সময় কোনো বদান্যতা করলে মেলায় আগত লোকদের মাধ্যমে আরবের সর্বত্র তাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে এবং কোন গোত্রপতি কতটি উট যবেহ করেছিল এবং কত লোককে খাইয়েছিল ঘরে ঘরে তার চর্চা শুরু হবে । এসব সম্মেলনে নাচ -গান, মদ পান, ব্যভিচার এবং সকল প্রকার নির্লজ্জ কাজ - কর্মের অনুষ্ঠান বিশেষ জাক- জমকের সাথে সম্পন্ন হতো। এ উৎসবের সময় এক আল্লাহর দাসত্ব করার কথা কারো মনে জাগ্রত হতো কিনা সন্দেহ। কা’বা ঘরের চতুর্দিকে তাওয়াফ করা হতো। কিন্তু তার পদ্ধতি বিকৃত হয়ে গিয়েছিল । নারী - পুরুষ সকলেই উলংগ হয়ে একত্রে ঘুরতো আর বলতো আমরা আল্লাহর সামনে এমন অবস্থায় যাব, যেমন অবস্থায় আমাদের মা আমাদেরকে প্রসব করেছে। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের প্রতিষ্ঠিত মসজিদে ‘ইবাদাত’ করা হতো একথা ঠিক; কিন্তু কিভাবে ? খুব জোরে হাততালি দেয়া হতো, বাঁশি বাজান হতো, শিংগায় ফুঁ ৎকার দেয়া হতো। আল্লাহর নামও যে সেখানে নেয়া হতো না, এমন নয়। কিন্তু কিরূপে ? তারা বলতো: <br />لَبَّيْكَ اللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ إِلاَّ شَرِيْكاً هُوَ لَكَ تَمْلِيْكُهُ وَمَا مَلَكَ <br />“আমি এসেছি হে আমার আল্লাহ ! আমি এসেছি, তোমার কেউ শরীক নেই ; কিন্তু যে তোমর আপন,সে তোমার অংশীদার। তুমি তারও মালিক এবং তার মালিকানারও মালিক।” <br />আল্লাহর নামে সেখানে কুরবানীও দেয়া হতো। কিন্তু তার পন্থা ছিল কত নিকৃষ্ট ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ। কুরবানীর রক্ত কা’বা ঘরের দেয়ালে লেপে দিত এবং এর গোশত কা’বার দুয়ারে ফেলে রাখতো। কারণ, তাদের ধারণা মতে আল্লাহ এসব রক্ত ও গোশত তাদের কাছ থেকে কবুল করছেন (নাউযুবিল্লাহ)। হযরত ইবরাহীম আলাহিস সালামের সময়ই হজ্জের চার মাসে রক্তপাত হারাম করে দেয়া হয়েছিল এবং এ সময় সকল প্রকার যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পরবর্তী - কালের লোকেরা এ নিষেধ অনেকটা মেনে চলেছে বটে ; কিন্তু যুদ্ধ করতে যখন ইচ্ছা হতো, তখন তারা এক বছরের নিষিদ্ধ মাসগুলোকে ‘হালাল’ গণ্য করতো এবং পরের বছর তারা ‘কাযা’ আদায় করতো। <br />এছাড়া অন্যান্য যেসব লোক নিজ ধর্মের প্রতি নিষ্ঠাবান ছিল তারাও নিতান্ত মূর্খতার কারণে আশ্চর্য রকমের বহু রীতিনীতির প্রচলন করেছিল। একদল লোক কোনো সম্বল না নিয়ে হজ্জ যাত্রা করতো এবং পথে ভিক্ষা মেগে দিন অতিবাহিত করতো। তাদের মতে এটা খুবই পুণ্যের কাজ ছিল। মুখে তারা বলতো -“আমরা আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করেছি, আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করার জন্য যাচ্ছি- দুনিয়ার সম্বল নেয়ার প্রয়োজন কি ?” হজ্জে গমনকালে ব্যবসা করা কিংবা কামাই - রোযগারের জন্য শ্রম করাকে সাধারণত নাজায়েয বলেই ধারণা করা হতো। অনেক লোক আবার হজ্জের সময় পানাহার পর্যন্ত বন্ধ করে দিত এবং এরূপ করাকেও তারা ইবাদত বলে মনে করতো। কোনো কোনো লোক হজ্জে যাত্রা করলে কথাবার্তা পর্যন্ত বন্ধ করে দিত। এর নাম ছিল ‘হজ্জে মুছমিত’ বা ‘বোবা হজ্জ’। এভাবে আরও যে কত প্রকার ভ্রান্ত ও কুপ্রথার প্রচলন হয়েছিল তার ইয়ত্তা নেই। সেগুলোর বিস্তারিত বিবরণ লিখে সময় নষ্ট করতে চাই না। <br />এরূপ ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা কম- বেশী দু’ হাজার বছর পর্যন্ত ছিল। এ দীর্ঘ সময়ে আরব দেশে কোন নবীর আবির্ভাব হয়নি, আর কোনো নবীর প্রকৃত শিক্ষাও সেই দেশে পৌছেনি। অবশেষে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দোয়া পুর্ণ হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসলো। তিনি কা’ বা ঘর প্রতিষ্ঠার সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেনঃ “হে আল্লাহ !এ দেশে একজন নবী এ জাতির মধ্য থেকেই প্রেরণ কর, যে এসে তাদেরকে তোমার বাণী শুনাবে ; জ্ঞান ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দেবে এবং তাদের নৈতিক চরিত্র সংশোধন করবে।” এ দোয়া আল্লাহর কাছে মঞ্জুর হয়েছিল, তাই তাঁরই অধস্তন পুরুষে একজন কামেল ইনসান’ আবির্ভুত হলেন, যাঁর পাক নাম মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম ইবনে আবদুল্লাহ। <br />হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যেরূপ পূজারী ও পুরোহিতের বংশে জন্মলাভ করেছিলেন, এ ‘কামেল ইনসান’ হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও অনুরূপ এমন এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন- শতাব্দীকাল ধরে যারা কা’বা ঘরের পৌরোহিত্য করে আসছিল। একচ্ছত্রভাবে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যেরূপ আপন বংশের পৌরোহিত্যবাদের ওপর আঘাত হেনেছিলেন, শেষ নবী হযরাত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ঠিক তেমনি প্রচন্ড আঘাত হেনেছিলেন নিজ বংশীয় পৌরোহিত্য ও পন্ডিতগিরির ওপর। শুধু তাই নয়, তাঁর আঘাতে তা একেবারে মূলোৎপাটিত হয়েছিল। হযরত ইবারাহীম আলাইহিস সালাম যেমন বাতিল মতবাদ ও সমগ্র মিথ্যা খোদায়ী ধ্বংস করা এবং এক আল্লাহর প্রভুত্ব কায়েম করার উদ্দেশ্যে চেষ্টা করেছিলেন, শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তাই করেছিলেন। তিনি হযরত ইবারাহীম আলাইহিস সালামের প্রচারিত প্রকৃত ও নির্মল দ্বীন ইসলামকে পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। একুশ বছরের চেষ্টায় তার এসব কাজ যখন পূর্ণতা লাভ করে তখন আল্লাহ তায়ালার হুকুমে কা’বা ঘরকেই তিনি সমগ্র দুনিয়ায় এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীদের কেন্দ্ররূপে স্থাপনের কথা ঘোষণা করলেন এবং দুনিয়ার সকল দিক থেকেই হজ্জ করার জন্য কা’বা ঘরে এসে জমায়েত হওয়ার আহবান জানালেনঃ <br />وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ <br />“মানুষের ওপর আল্লাহর হক এই যে, এ কা’বা ঘর পর্যন্ত আসার সামর্থ যাদের আছে তারা হজ্জ করার জন্য এখানে আসবে। যারা কুফুরী করবে (অর্থাৎ সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ করতে আসবে না), তারা জেনে রাখুক যে, আল্লাহ সৃষ্টিজগতের মুখাপেক্ষী নন।”- সূরা আলে ইমরানঃ ৯৭ <br />এভাবে নব পর্যায়ে হজ্জ প্রবর্তন করার সাথে সাথে জাহেলী যুগে দু’ হাজার বছর যাবত প্রচলিত যাবতীয় কুসংস্কার একেবারে বন্ধ করা হলো। কা’বা গৃহের মূর্তিগুলো ভেংগে ফেলা হলো। আল্লাহ ছাড়া মূর্তির যে পূজা সেখানে হতো তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া হলো। মেলা এবং সকল প্রকার তামাশা ও উৎসব নিষিদ্ধ করে দেয়া হলো। আল্লাহর ইবাদাত করার সঠিক এবং স্বাভাবিক পদ্ধতি প্রচলন করা হলো, আল্লাহর আদেশ হলোঃ <br />وَاذْكُرُوهُ كَمَا هَدَاكُمْ وَإِنْ كُنْتُمْ مِنْ قَبْلِهِ لَمِنَ الضَّالِّينَ <br />“(আল্লাহর স্মরণ এবং ইবাদাত করার,) যে পন্থা আল্লাহ তোমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, ঠিক তদনুযায়ী আল্লাহর স্মরণ (ও ইবাদাত) কর যদিও এর পূর্বে তোমরা পথভ্রষ্ট ছিলে (অর্থাৎ স্মরণ ও ইবাদাত করার সঠিক পন্থা জানতে না) ” - সূরা আল বাকারাঃ ১৯৮ <br />সকল অন্যায় ও বাজে কর্মতৎপরতা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হলোঃ <br />فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ <br />“হজ্জ উপলক্ষে কোনরূপ ব্যাভিচার, অশ্লীলতা, আল্লাহদ্রোহিতা, ফাসেকী কাজ এবং ঝগড়া -বিবাদ বা যুদ্ধ - বিগ্রহ করা যাবে না।” <br />কাব্য আর কবিত্বের প্রতিযোগিতা, পূর্বপুরুষদের কাজ -কর্মের কথা নিয়ে গৌরব -অহংকার এবং পরের দোষ -ক্রটি প্রচার করা বা গালাগাল দেয়া বন্ধ করা হলোঃ <br />فَإِذَا قَضَيْتُمْ مَنَاسِكَكُمْ فَاذْكُرُوا اللَّهَ كَذِكْرِكُمْ آَبَاءَكُمْ أَوْ أَشَدَّ ذِكْرًا <br />“হজ্জের অনুষ্ঠানগুলো যখন সম্পন্ন হয়ে যাবে তখন তোমাদের পূর্ব-পুরুষগণ যেভাবে বাপ -দাদার স্মরণ করতো ঠিক অনুরূপ কিংবা তদপেক্ষা বেশী করে তোমরা আল্লাহর স্মরণ কর।” সূরা আল বাকারাঃ২০০ <br />শুধু লোকদের দেখাবার জন্য বা খ্যাতি অর্জন করার যেসব বদান্যতা ও দানশীলতার গৌরব করা হতো তা সবই বন্ধ হলো এবং তদস্থলে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের আমলের পশু যবেহ করার রীতি প্রচলিত হলো। কারণ এর ফলে গরীব হাজীদেরও কুরবানীর গোশত খাওয়ার সুযোগ মিলত। <br />“খাও, পান কর, কিন্তু অপচয় করো না ; কারণ আল্লাহ তাআলা অপচয়কারীদেরকে ভালবাসেন না।”-সুরা আল আরাফঃ ৩১ <br />“খালেছ আল্লাহর উদ্দেশ্যেই এবং তারই নামে এ জন্তুগুলোকে যবেহ কর। যবেহ করার পর যখন প্রাণ একেবারে বের হয়ে যাবে, তখন নিজেরাও তা খাও এবং ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্ত প্রার্থীকেও খেতে দাও।”- সুরা আল হাজ্জঃ ৩৬ <br />কুরবানীর পশুর রক্ত খানায়ে কা’বার দেয়ালে মর্দন করা এবং গোশত নিক্ষেপ করার কুপ্রথা বন্ধ হলো। পরিস্কার বলে দেয়া হলোঃ <br />“এসব পশুর রক্ত বা গোশত আল্লাহর কাছে পৌছায় না, তোমাদের তাকওয়া এবং পরহেযগারীই আল্লাহর কাছে পৌঁছতে পারে।” সুরা আল হাজ্জঃ৩৭ <br />উলংগ হয়ে তাওয়াফ করা একেবারে নিষিদ্ধ হয়ে গেল এবং বলা হলোঃ “হে নবী! আপনি তাদেরকে বলে দিন যে, আল্লাহ তার বান্দাহদের জন্য যেসব সৌন্দর্যবর্ধক জিনিস (অর্থ্যাৎ পোশাক পরিচ্ছদ) মনোনীত করেছেন, তা কে হারাম করলো? ”- সূরা আল আরাফঃ ৩২ <br />“হে নবী ! আপনি বলে দিন যে, আল্লাহ কখনও নির্লজ্জতার হুকুম দেন না।”- সূরা আল আরাফঃ ৬৮ <br />“হে আদম সন্তান! সকল ইবাদাতের সময় তোমাদের সৌন্দর্য গ্রহণ (পোশাক পরিধান) কর।” সূরা আল আরাফঃ৩১ <br />হজ্জের নির্দিষ্ট মাসগুলোকে উল্টিয়ে দেয়া এবং নিষিদ্ধ মাসকে যুদ্ধের জন্য ‘হালাল’ মনে করাকে বিশেষ কড়াকড়ির সাথে বন্ধ করা হলোঃ <br />“নাসী কুফরীকে অধিকতর বাড়িয়ে দেয় (কুফরীর সাথে স্পর্ধাকে যোগ করে)। কাফেরগন এভাবে আরও অধিক গোমরাহীতে নিমজ্জিত হয়। এক বছর এক মাসকে হালাল মনে করে আবার দ্বিতীয় বছর তার বদলে আর একটি মাসকে হারাম বেঁধে নেয় -যেন আল্লাহর নিষিদ্ধ মাসগুলোর সংখ্যা সমান থাকে। কিন্তু এরূপ কাজ করলে আল্লাহর নিষিদ্ধ জিনিসকেই হালাল করা হয়।” সুরা আত তওবাঃ ৩৭ <br />সম্বল না নিয়ে হজ্জযাত্রা করা নিষিদ্ধ হলো এবং পরিস্কার বলে দেয়া হলোঃ <br />“হজ্জ গমনকালে সম্বল অবশ্যই নেবে। কারণ, (দুনিয়ার সফরের সম্বল না নেয়া আখেরাতের সম্বল নয়) আখেরাতের উত্তম সম্বল তো হচ্ছে তাকওয়া ।” সুরা আল বাকারাঃ ১৯৭ <br />হজ্জের সময় ব্যবসা করা বা অন্য কোনো উপায়ে রুজি -রোযগার করা নিতান্ত অপরাধের কাজ, আর এসব না করাকেই বড় পুণ্যের কাজ মনে করা হতো। আল্লাহ তাআলা এ ভুল ধারণার প্রতিবাদ করে নাযিল করলেনঃ <br />“(হজ্জে গমনকালে) ব্যবসা করে আল্লাহর অনুগ্রহ স্বরূপ কিছু কামাই রোযগার করলে তাতে কোন অপরাধ নেই।” -সুরা আল বাকারা ১৯৮ <br />'বোবা’ হজ্জ এবং 'ক্ষুধার্ত -পিপাসার্ত’ হজ্জ হতেও মানুষকে বিরত রাখা হলো। শুধু তাই নয়, এছাড়া জাহেলী যুগের আরও অসংখ্য কুসংস্কার নির্মূল করে দিয়ে তাকওয়া, আল্লাহর ভয়, পবিত্রতা এবং অনাড়ম্বরতাকে মানবতার পূর্ণাংগ আদেশ বলে ঘোষনা করা হলো, হজ্জযাত্রীদেরকে নির্দেশ দেয়া হলো যে, তারা যেন ঘর থেকে বের হবার সময় নিজেদেরকে সকল প্রকার পার্থিব সম্পর্ক থেকে মুক্ত করে নেয়, নফসের খাহেশ ও লালসা যেন ত্যাগ করে, হজ্জ গমন পথে স্ত্রী-সহবাসও যেন না করে, গালাগাল, কুৎসা রটানো, অশ্লীল উক্তি প্রভৃতি জঘন্য আচরণ থেকে যেন দূরে সরে থাকে। কা’বায় পৌঁছার যত পথ আছে, প্রত্যেক পথেই একটি স্থান নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। সেই স্থান অতিক্রম করে কা’বার দিকে অগ্রসর হওয়ার পূর্বে এহরাম বেঁধে গরীবানা পোশাক পরিধান করে নেবে। এতে আমীর গরীব সকলেই সমান হবে, পৃথক কওম, গোত্র প্রভৃতির পার্থক্য ঘুচে যাবে এবং সকলেই এক বেশে- নিতান্ত দরিদ্রের বেশে এক আল্লাহর সামনে বিনয় ও নম্রতার সাথে উপস্থিত হবে। এহরাম বাঁধার পর মানুষের রক্তপাত করা তো দুরের কথা, পশু শিকার করাও নিষিদ্ধ। মানুষের মধ্য থেকে যেন কোনো যুদ্ধ -বিগ্রহ না হয়, এজন্য এ চারটি মাসকে ‘হারাম’ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে কা’বা গমনের সমস্ত পথ নিরাপদ হবে ; হজ্জ যাত্রীদের পথে কোনোরূপ বিপদের আশংকা থাকবে না। এরূপ পবিত্র ভাবধারা সহকারে তারা ‘হেরেম শরীফে’ প্রবেশ করবে- কোনো রূপ রং- তামাশা, নাচ - গান এবং মেলা আর খেলা দেখার উদ্দেশ্যে নয়। এখানে প্রতি পদে পদে আল্লাহর স্মরণ - আল্লাহর নামের যিকর, নামায, ইবাদাত ও কুরবানী এবং কাবা ঘর প্রদক্ষিণ (তাওয়াফ) করতে হয়। আর এখানে একটি মাত্র আওয়াযই মুখরিত হয়ে উঠে, ‘হেরেম শরীফের ’ প্রাচীর আর পাহাড়ের চড়াই উৎরাইয়ের প্রতিটি পথে উচ্চারিত হয়ঃ <br />“তোমার ডাকেই হাজির হয়েছি, হে আল্লাহ !আমি এসেছি, তোমার কোন শরীক নেই, আমি তোমারই কাছে এসেছি। সকল তা’ রীফ প্রশংসা একমাত্র তোমারই জন্য। সব নেয়ামত তোমারই দান, রাজত্ব আর প্রভুত্ব সবই তোমার। তুমি একক- কেউ তোমার শরীক নেই।” <br />এরূপ পূত -পবিত্র এবং ঐকান্তিক নিষ্ঠাপূর্ণ হজ্জ সম্পর্কে বিশ্বনবী ইরশাদ করেছেনঃ <br />“যে ব্যক্তি খাঁটিভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করে এবং এ ব্যাপারে সকল প্রকার লালসা এবং ফাসেকী থেকে দূরে থাকে, সে সদ্যজাত শিশুর মতই (নিষ্পাপ হয়ে) ফিরে আসে।” <br />অতপর হজ্জের কল্যাণ ও কার্যকারিতা বর্ণনা করার পূর্বে হজ্জ কি রকমের ফরয, তা বলা আবশ্যক। আল্লাহ কালামে পাকে বলেনঃ <br />“আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছার মতো সামর্থ যার আছে, হজ্জ করা তার ওপর আল্লাহর একটি অনিবার্য নির্দিষ্ট ‘হক’। এতদসত্ত্বেও যে তা অমান্য করবে সে কাফের এবং আল্লাহ দুনিয়া জাহানের মুখাপেক্ষী নন।”- সূরা আল ইমরানঃ ৯৭ <br />এ আয়াতেই হজ্জ করার সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ না করাকে পরিষ্কার কুফরী বলা হয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে যা বলেছেন, তার মধ্যে দু’টি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছেঃ <br />مَنْ مَلَكَ زَادًا وَرَاحِلَةً تُبَلِّغُهُ إِلَى بَيْتِ اللَّهِ وَلَمْ يَحُجَّ فَلَا عَلَيْهِ أَنْ يَمُوتَ يَهُودِيًّا أَوْ نَصْرَانِيًّا <br />“আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছার জন্য পথের সম্বল এবং বাহন যার আছে সে যদি হজ্জ না করে, তবে এ অবস্থায় তার মৃত্যু ইহুদী ও নাসারার মৃত্যুর সমান বিবেচিত হবে।” [তিরমিযী] <br />مَنْ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنَ الْحَجِّ حَاجَةٌ ظَاهِرَةٌ أَوْ سُلْطَانٌ جَائِرٌ أَوْ مَرَضٌ حَابِسٌ فَمَاتَ وَلَمْ يَحُجَّ فَلْيَمُتْ إِنْ شَاءَ يَهُودِيًّا وَإِنْ شَاءَ نَصْرَانِيًّا <br />“যার কোনো প্রকাশ্য অসুবিধা নেই, কোন যালেম বাদশাও যার পথ রোধ করেনি এবং যাকে কোন রোগ অসমর্থ করে রাখেনি - এতদসত্ত্বেও সে যদি হজ্জ না করেই মরে যায়, তবে সে ইয়াহুদী ব খৃষ্টান হয়ে মরতে পারে।” [দারেমী] <br />হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বাখ্যা করে বলেছেনঃ <br />“সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যারা হজ্জ করেনা ,তাদের ওপর জিজিয়া কর আরোপ করতে ইচছা হয়; কারণ তারা মুসলমান নয়,মুসলমান নয়।’’ <br />আল্লাহ তায়ালার উল্লিখিত ইরশাদ এবং রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তারঁ খলিফার এ ব্যাখ্যা দ্বারা প্রত্যেকেই বুঝতে পারেন যে, হজ্জ করা সামান্য ফরয নয়। তা আদায় করা না করা মুসলমানদের ইচছাধীন করে দেওয়া হয়নি। বস্তুত যে সব মুসলমানদের কা’বা পর্যন্ত যাওয়া আসার আর্থিক সামর্থ আছে ,শারীরিক দিক দিয়েও যারা অক্ষম নয় তাদের পক্ষে জীবনের মধ্যে একবার হজ্জ করা অবশ্য কর্তব্য । তা না করে কিছুতেই মুক্তি নেই । দুনিয়ার যে কোণেই বাস করুক না কেন এবং যার ওপর ছেলে-মেয়ে ও কারবার কিংবা চাকরি-বাকরির যত বড় দায়িত্বই অর্পিত হোকনা কেন, সামর্থ থাকা সত্ত্বেও একজন মুসলমান যদি হজ্জকে এড়াতে চায় এবং অসংখ্য ব্যস্ততার অজুহাতে বছরের পর বছর তাকে ক্রমাগত পিছিয়ে দেয়-সময় থাকতে আদায় না করে ,তবে তার ঈমান আছে কিনা সন্দেহ । আর যাদের সমগ্র জীবনও হজ্জ আদায় করার কর্তব্য পালনের কথা মনে জাগে না , দুনিয়ার দিকে দিকে, দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায়- ইউরোপ-আমেরিকা যাতায়াতকালে হেজাযের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে -কা’বা ঘর যেখান থেকে মাত্র কয়েক ঘন্টার পথ, তবুও হজ্জ আদায় করার খেয়ালও তাদের মনে জাগ্রত হয়না -তারা কিছুতেই মুসলমান নয়; মুসলমান বলে দাবী করার কোনোই অধিকার তাদের নেই, দাবী করলেও সেই দাবী হবে মিথ্যা। আর যারা তাদেরকে মুসলমান মনে করে ,তারা কুরআন শরীফের বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ, জাহেল ।এসব লোকের মনে যদি মুসলিম জাতির জন্যে দরদ থাকে তবে থাকতে পারে ; কিন্তু তার কোনোই সার্থকতা নেই । কারণ তাদের হৃদয়-মনে আল্লাহর আনুগত্য ও তার বিধানের প্রতি ঈমানের কোনো অস্তিত্ব নেই, একথা স্বতঃসিদ্ধ । <br /><br /><span style="font-weight:bold;">হজ্জের বৈশিষ্ট্য<br /></span><br /><br />কুরআন শরীফে যেখানে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে হজ্জের জন্যে সাধারণ দাওয়াত দেয়ার হুকুমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে এর প্রথম কারণ হিসেবে বলা হয়েছেঃ <br />-মানুষ এসে দেখুক যে ,এ হজ্জব্রত উদযাপনে তাদের জন্যে কি কি কল্যাণ নিহিত রয়েছে অর্থাৎ হজ্জের সময় আগমন করে কা’বা শরীফে একত্রিত হয়ে তারা নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করবে যে , তা তাদের জন্যে বস্তুতই কল্যাণ কর । কেননা এতে যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে , তা মানুষ নিজ চোখে দেখেই অনুধাবন করতে পারে।একটি বর্ণনা হতে জানা যায় যে হযরত ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহি হজ্জ করার পূর্ব পর্যন্ত ঠিক বুঝতে পারেননি যে, ইসলামি ইবাদত সমুহের মধ্যে কোনটি সর্বোত্তম; কিন্তু যখনই তিনি হজ্জ করে তার অন্তর নিহিত কল্যাণ প্রত্যক্ষ করলেন, তখন স্পষ্ট কন্ঠে বলে উঠলেন, ‘হজ্জ-ই সর্বোত্তম ইবাদত’। <br />এখানে হজ্জের বৈশিষ্ট্য ও কল্যাণকারিতা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হচেছ। দুনিয়ার মানুষ সাধারনত দু’প্রকারের ভ্রমণ করে থাকে। এক প্রকারের ভ্রমণ করা হয় রুযি-রোযগারের জন্যে আর এক প্রকারের ভ্রমণ হয় আনন্দ-র্ষ্ফুতি ও অবসর বিনোদনের উদ্দেশ্যে। এ উভয় প্রকারের ভ্রমনেই মানুষের নিজের স্বার্থ ও প্রবৃত্তিই তাকে ভ্রমণে বের হতে উদ্বুদ্ধ করে । নিজের গরজেই ঘর-বাড়ী ত্যাগ করে , নিজের কোনো পার্থিব উদ্দেশ্যেই সন্তান সন্ততি ও আত্মীয় -স্বজন হতে দূরে চলে যায় । আর এ ধরনের সফরে সে টাকা- পয়সা যা কিছুই খরচ করে নিজের উদ্দেশ্য লাভের জন্যেই করে থাকে । কাজেই এসব সফরে মানুষকে আসলে কিছুই কুরবানী বা আত্মত্যাগ করতে হয়নি । কিন্তু হজ্জ উপলক্ষ্যে যে সফর করা হয় তা উল্লেখিত সফর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এটা নিজের কোনো গরযে কিংবা নিজের প্রবৃত্তির লালসা পূরণ করার জন্যে করা হয়না ; বস্তুত এটা করা হয় খালেছভাবে আল্লাহ তায়ালার জন্যে এবং আল্লাহর র্নিদিষ্ট উদ্দেশ্য পূর্ণ করার মানসে । এজন্যেই মানুষের মনে যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর প্রেম ভালোবাসা ও আল্লাহর ভয় জাগ্রত না হবে এবং আল্লাহর নির্ধারিত ফরযকে ফরয বলে মনে না করা হবে , ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ এ সফরে যাওয়ার জন্যে কিছুতেই উদ্যোগী হতে পারে না। কাজেই যে ব্যক্তি একটি দীর্ঘকালের জন্যে নিজের ঘর-বাড়ী, আত্বীয় -স্বজনের সাথে সর্ম্পক ত্যাগ করে এবং নিজের কারবার এর ক্ষতি, অর্থ ব্যয় ও সফরের কষ্ট স্বীকার করে হজ্জের জন্যে বের হবে ,তার এভাবে বের হওয়াই প্রমাণ করে যে তার মনে আল্লাহর ভয় ও ভালবাসা আছে । আল্লাহর ফরযকে সে ফরয বলে মনে করে এবং মানসিকভাবে সে এত দূর প্রস্তুত যে , বাস্তবিকই যদি কখনো আল্লাহর পথে বের হওয়ার প্রয়োজন হয় তখন সে অনায়াসেই গৃহ ত্যাগ করতে পারবে । কষ্ট স্বীকার করতে পারবে , নিজের ধন-সম্পদ এবং আরাম-আয়েশ সবকিছু আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্যে কুরবান করতে পারবে । <br />এ পবিত্র ইচছা নিয়ে যখন সে হজ্জের সফরে যাবার জন্যে তৈরী হয় তখন স্বভাব -প্রকৃতি সম্পূর্ন আলাদা ধরনের হয়ে যায় । তার অন্তরে বাস্তবিকই আল্লাহর প্রেমের উদ্দিপনা স্বতঃষ্ফূর্ত হয়ে ওঠে। বস্তুত সে সেই দিকের জন্যে পাগল হয়ে ওঠে ,তার মনে তখন নেক ও পবিত্র ভাবধারা ছাড়া অন্য কিছুই জাগ্রত হতে পারেনা । <br />সে পূর্বকৃত যাবতীয় গুনাহ থেকে তাওবা করে ,সকলের কাছে ভুল -ত্রুটির জন্যে মাপ চায় , পরের হক যা এ যাবত আদায় করেনি তা আদায় করে , কারণ ঋণের বোঝা নিয়ে আল্লাহর সামনে হাজির হওয়া সে মোটেই পছন্দ করেনা । সকল প্রকার পাপ ও অন্যায় চিন্তা থেকে তার মন পবিত্র হয়ে যায় ।স্বভাবতই তার মনের গতি মংগলের দিকেই নিবদ্ধ হয়, সফরে বের হওয়ার পর সে যতই অগ্রসর হতে থাকে ততই তার হৃদয় -মনে পৃণ্য ও পূত ভাবধারার তরংগ খেলে ওঠে । তার কোনো কাজ যেন কারো মনে কোনোরূপ আঘাত না দেয়, আর যারই যতটুকু উপকার করা যায় সেই সমস্ত চিন্তা এবং চেষ্টাই সে করতে থাকে। অশ্লীল ও বাজে কথা-বার্তা, নির্লজ্জতা, প্রতারণা-প্রবঞ্চনা এবং ঝগড়া-ফাসাদ ইত্যাদি কাজ থেকে তার প্রকৃতি স্বভাবতই বিরত থাকে। কারণ সে আল্লাহর ‘হারাম শরীফের’ যাত্রী তাই অন্যায় কাজ করে এ পথে অগ্রসর হতে সে লজ্জিত না হয়ে পারে না । তার সফরটাই যে ইবাদত, এ ইবাদতের কাজে যুলুম, আর পাপ কাজের কি অবকাশ থাকতে পারে? অতএব দেখা যাচ্ছে যে, অন্যান্য সকল প্রকার সফর থেকে এ সফর সম্পূর্ণ আলাদা। মানুষের মনকে এ সফর প্রতিনিয়ত পূত-পবিত্র করতে থাকে । সত্য বলতে গেলে এটা একটি বিরাট সংশোধনকারী কোর্স বিশেষ, প্রত্যেক হজ্জ যাত্রী মুসলমানকেই এ অধ্যায় অতিক্রম করতে হয়। <br />সফরের একটি অংশ সমাপ্ত করার পর এমন একটি স্থান সামনে আসে যেখানে পৌছে প্রত্যেক মক্কাযাত্রী মুসলমান ‘এহরাম’ বাঁধতে বাধ্য হয় । এটা না করে কেউ সামনে অগ্রসর হতে পারে না। এই ‘এহরাম’ কি ? একটি সিলাই না করা লুংগী, একখানি চাদর এবং সিলাইবিহীন জুতা ছাড়া অন্য কিছুই নয়। এর অর্থ এই যে, এতকাল তুমি যাই থাক না কেন , কিন্তু এখন তোমাকে ফকিরের বেশেই আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে। কেবল বাহ্যিক ফকীরই নয়, প্রকৃতপক্ষে অন্তরেও ফকীর হতে চেষ্টা কর। রঙীন কিংবা জাকজমকপূর্ণ সকল পোশাক খুলে রাখ, সাদাসিধে ও দরবেশ জনোচিত পোশাক পরিধান কর। মোজা পরবে না, পা উন্মুক্ত রাখ, কোনো প্রকার সুগন্ধি ব্যবহার করবে না, চুল কেট না, সকল প্রকার অলংকার ও জাকজমক পরিহার করা। স্বামী -স্ত্রী সংগম হতে দূরে থাক, যৌন উত্তেজক কোন কাজ করো না, শিকার করো না। আর কোনো শিকারীকে শিকারের কাজে সাহায্য করো না। বাহ্যিক জীবনে যখন এরূপ বেশ ধারণ করবে তখন মনের ওপরও তার গভীর ছাপ মুদ্রিত হবে ভিতর হতেও তোমার মন সত্যিকারভাবে ‘ফকির’ হবে। অহংকার ও গৌরব দূরীভুত হবে, গরীবানা ও শান্তি -প্রিয়তার ভাব ফুটে ওঠবে। পার্থিব সুখ- সম্ভোগে লিপ্ত হওয়ার ফলে তোমার আত্মা যতখানি কলংকিত হয়েছিল তা দূর হয়ে যাবে এবং আল্লাহর বন্দেগী করার পবিত্র ভাবধারা তোমরা জীবনের ভিতর ও বাইর উভয় দিককেই মহীয়ান করে তুলবে। <br />‘এহরাম’ বাঁধার সাথে সাথে হাজীকে একটি বিশেষ দোয়া বার বার পড়তে হয়। প্রত্যেক নামাযের পর, পথের প্রত্যেক চড়াই- উৎরাইয়ের সময়, কাফেলার সাথে মিলিত হবার সময় এবং প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠার সময়। দোআটি এইঃ <br />لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ <br />বস্তুত হযরত ইবারাহীম আলাইহিস সালাম সাড়ে চার হাজার বছর পূর্বে আল্লাহর আদেশে (হজ্জ করার জন্য) যে সার্বজনীন আহবান জানিয়েছিলেন, তার জবাবেই এ দোয়া পাঠ করার নিয়ম হয়েছে। পঁয়তাল্লিশ শত বছর আগে, আল্লাহর এ আহ্ববানকারী ডেকে বলেছিলেনঃ “আল্লাহর বান্দাগণ! আল্লাহর ঘরের দিকে আস, পৃথিবীর প্রতি কোণ থেকে ছুটে আস। পায়ে হেটে আস, কিংবা যানবাহনে চড়ে আস।” এর জবাব স্বরূপ আজ পর্যন্ত ‘হারাম শরীফের’ প্রতিটি মুসাফির উচ্চৈস্বরে বলে ওঠেছেঃ “আমি এসেছি, হে আল্লাহ, আমি হাজির হয়েছি। কেউ তোমার শরীক নেই, আমি কেবল তোমারই আহবানক্রমে এসেছি, সব তারীফ প্রশংসা তোমারই দান, কোন কিছুতেই তোমার কেউ শরীক নেই।” <br />এভাবে ‘লাব্বায়েকের’ প্রত্যেকটি ধ্বনির মারফত হযরত ইবারাহীম আলাইহিস সালাম ও ইসমাঈল আলাইহিস সালামের আমল থেকে প্রচলিত ইসলামী আন্দোলনের সাথে ‘হাজী’র নিবিড় সম্পর্ক স্থাপিত হয়। সাড়ে চার হাজার বছরের দূরত্ব মাঝখান হতে সরে গিয়ে একাকার হয়ে যায়। মনে হয় যেন এদিক থেকে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহর তরফ থেকে ডাকছেন, আর ওদিক থেকে প্রত্যেক হাজীই তার জবাব দিচ্ছে- জবাব দিতে দিতে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে । যতই সামনে অগ্রসর হয় ততই তার মনে প্রাণে উৎসাহ উদ্দীপনা এবং আধ্যাত্মিক ভাবের ঝর্ণাধারা অধিকতর বেগে প্রবাহিত হতে থাকে। পথের প্রত্যেক চড়াই - উৎরাইয়ের সময় তার কানে আল্লাহর আহবান ধ্বনিত হয়, আর সে তার জবাব দিতে দিতে অগ্রসর হয়। কাফেলার পর কাফেলা আসে, আর প্রত্যেকেই প্রেমিক পাগলের ন্যায় এই পয়গাম শুনে বলে উঠেঃ “আমি এসেছি, আমি হাজির হয়েছি।” প্রতিটি নূতন প্রভাত তার কাছে বন্ধুর পয়গাম বহন করে আনে,আর উষার ঝলকে চোখ খোলার সাথে সাথেই আমি এসেছি,’হে আল্লাহ! আমি হাজির হয়েছি’, বলে আওয়াজ দিতে থাকে । মোটকথা বারবার দেয়া এ আওয়াজ এহরামের গরীবানা পোশাক, সফরের অবস্থা এবং প্রত্যেকটি মঞ্জিলে কা’বা ঘরের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য নৈকট্যের ভাব উম্মাদনায় এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি হয় যে হাজী আল্লাহর অতল স্পর্শ গভীর প্রেমে আত্মমগ্ন হয়ে যায় এবং সেই এক বন্ধুর স্মরণ ভিন্ন তার জীবনের কোথাও অন্য কিছুর অস্তিত্ব থাকে না। <br />এ অবস্থার ভিতর দিয়ে হাজী মক্কায় উপনীত হয় এবং সেখানে পৌছেই সোজা আসল লক্ষ্যস্থলের দিকে ছুটে যায়। বন্ধুর আস্তানাকে চুম্বন করে।তারপর নিজের আকীদা-বিশ্বাস, ঈমান, মতবাদ, দ্বীন ও ধর্মের কেন্দ্রস্থলের চারদিকে প্রদক্ষিণ করে ততবারই আস্তানাকে চুম্বন করে।(১)প্রত্যেক বারের তাওয়াফ কা’বা ঘরের কালো পাথর চুমু দিয়ে শুরু ও শেষ করা হয়। এখানে থেকে বের হয়ে ‘সাফা’ পর্বতে আরোহণ এবং এখান থেকে যখন কা’বা ঘরের দিকে তার দৃষ্টি পড়ে, তখন সে উচ্চস্বরে বলে ওঠেঃ <br />لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَلَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ <br />"আল্লাহ ছাড়া আর কেউ মা’বুদ নেই, আমরা অন্য কারো বন্দেগী করি না ; আমরা কেবল একনিষ্টভাবে আল্লাহরই আনুগত্য স্বীকার করি - কাফেরদের কাছে এটা যতই অসহনীয় হোক না কেন।” <br />অতপর ‘সাফা’ ও মারাওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যস্থলে দৌঁড়াতে হয়। এর দ্বারা হাজী একথা প্রমান করে যে, সে আল্লাহর নৈকট্য এবং তার সন্তোষ হাসিল করার উদ্দেশ্যে সবসময় এমন করে দৌড়াতে প্রস্তুত থাকবে। এ দৌড়ের সময়ও তার মুখ থেকে উচ্চারিত হতে থাকেঃ <br />أَللَّهُمَّ اسْتَعْمَلْنِيْ بِسُنَّةِ نَبِيِّكَ وَتَوَفَّنِيْ عَلَى مِلَّتِهِ وَأَعِذْنِيْ مُّضِلاَّتِ الْفِتَنِ <br />“হে আল্লাহ ! আমাকে তোমার নবীর আদর্শ ও রীতিনীতি অনুসারে কাজ করার তাওফীক দাও। তোমার নবীর পথেই যেন আমার মৃত্যু হয় এবং সত্য পথভ্রষ্টকারী ফেতনা থেকে আমাকে রক্ষা কর।” <br />কখনো কখনো এই দোয়া পড়া হয়ঃ <br />اغْفِرْ وَأَرْحَمْ وَتَجَا وَزَعَمَّا تَعْلَمُ إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعَزُّ الْأَكْرَمُ <br />“হে রব! ক্ষমা কর, দয়া কর, আমার যেসব অপরাধ সম্পর্কে তুমি অবহিত তা মাফ করে দাও। তোমার শক্তি সবচেয়ে বেশী, দয়াও অতুলনীয়।” <br />এরপর হাজী যেন আল্লাহর সৈনিকে পরিণত হয়। তাই পাচঁ ছয় দিন পর্যন্ত তাকে ক্যাম্পে জীবন কাটাতে হয়। একদিন ‘মিনা’র ছাউনীতে অতিবাহিত করতে হয়, পরের দিন আরাফাতে অবস্থান করতে হয় এবং সেনাপতির ‘খুতবার’ নির্দেশ শুনতে হয়। রাতে মুজাদালিফায় গিয়ে ক্যাম্প স্থাপন করতে হয়। দিন শেষে আবার ‘মিনায়’ ফিরে যেতে হয় এবং এখানে পাথর টুকরা নিক্ষেপ করে ‘চাঁদমারী’ করতে হয়। আবরাহা বাদশার সৈন্য- সামন্ত কা’বা ঘর ধ্বংস করার জন্য এ পর্যন্ত এসে পৌছেছিল । প্রত্যেকটি পাথর নিক্ষেপ করার সাথে সাথে আল্লাহর সিপাহী বলে উঠেঃ <br />اَللهُ أَكْبَرْ رَغَماً لِلشَّيْطَانِ وَحِزْبِهِ <br />“আল্লাহ মহান। শয়তান ও তাঁর অনুসারীদের মুখ ধূলায় মলিন হোক।” এবং- أَللَّهُمَّ تَصْدِيْقاً بِكِتَابِكَ وَإِِتِّبَاعاً لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ “হে আল্লাহ ! তোমার গ্রন্থের সত্যতা ঘোষণার ও তোমার নবীর আদেশ অনুসরণের তাওফীক দাও।” <br />পাথর টুকরা দিয়ে চাঁদমারী করার অর্থ এ কথা প্রকাশ করা যে, হে আল্লাহ ! তোমার দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য কিংবা তোমার আওয়াজকে স্তব্ধ করার জন্য যে -ই চেষ্টা করবে, আমি তোমার বাণীকে উন্নত ও প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তার বিরুদ্ধে এমনি করে লাড়াই করবো। তারপর এ স্থানেই কুরবানী করা হয়। এটা দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জীবন বিসর্জন দেয়ার ইচ্ছা ও বাসনার বাস্তব এবং সক্রিয় প্রমান উপস্থিত করা হয়। এরপর সেখান থেকে কা’বার দিকে যাত্রা করা হয়- যেন ইসলামের মুজাহিদগন কর্তব্য সমাধা করে বিজয়ীর বেশে ‘হেড কোয়ার্টারের’ দিকে ফিরে যাচ্ছে। তাওয়াফ এবং দু’ রাকআত নামায পড়ার পর এহরাম খোলা হয়। এহরাম বাঁধার কারণে যেসব কাজ হারাম হয়েছিল এখন তা হালাল হয়ে যায়, হাজীর জীবন এখন স্বাভাবিক গতিতে চলতে থাকে। এ জীবন শুরু হওয়ার পর আবার তাকে ‘মিনায়’ গিয়ে ক্যাম্প গাড়তে হয় এবং পরের দিন পাথরের সেই তিনটি স্তম্ভের ওপর আবার কংকর দ্বারা চাঁদমারী করতে হয়। এটাকে ইসলামী পরিভাষায় বলা হয় ‘জুমরাত’। এটা আবরাহা বাদশার মক্কা আক্রমণকারী ফৌজের পশ্চাদপসরণ ও তাকে পরাভুত করার প্রতীক মাত্র। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের বছর হজ্জের সময়ই আল্লাহর ঘর ধ্বংস করার উদ্দেশ্য নিয়ে আবরাহা এসেছিল। আল্লাহর তরফ থেকে আসমানী পাখী কংকর নিক্ষেপ করেই তাদেরকে নাস্তানাবুদ করে দেয়। তৃতীয় দিবসে পুনরায় সেই স্তম্ভগুলোর ওপর পাথর নিক্ষেপ করার পর হাজী মক্কা প্রত্যাবর্তন করে এবং সাতবার তার দ্বীনের কেন্দ্র কা’বা ঘরের তাওয়াফ করে। এ তাওয়াফকে বিদায়ী তাওয়াফ বলা হয়। এটা সম্পন্ন হলেই হজ্জের কাজ সমাপ্ত হয়। <br />হজ্জের নিয়ত এবং সে জন্য প্রস্তুতি ও যোগাড় যন্ত্র থেকে শুরু করে পুনরায় নিজ বাড়িতে ফিরে আসা পর্যন্ত কমবেশী তিন মাস কাল ধরে হাজীর মন- মগযে কত বিরাট ও গভীর খোদায়ী ভাবধারা পুঞ্জীভূত হয়ে থাকে ওপরের এই বিস্তারিত আলোচনা থেকে তা অনুমান করা খুবই সহজ। এ কাজে শুরু থেকেই সময়ের কুরবানী করতে হয়, অর্থের কুরবানী করতে হয, সুখ-শান্তি ত্যাগ করতে হয়, অসংখ্য পার্থিব সম্পর্ক - সম্বন্ধ ছিন্ন করতে হয়। হাজীর নিজের মনের অনেক ইচ্ছা - বাসনা স্বাদ - আস্বাদনকে উৎসর্গ করতে হয়। আর এ সবকিছুই তাকে করতে হয় কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য - নিজস্ব কোনো স্বার্থ তাতে স্থান পেতে পারে না। তারপর এ সফরে তাকওয়া-পরহেযগারীর সাথে সাথে আল্লাহর স্মরণ এবং আল্লাহর দিকে মনের ঔৎসুক্য ও আগ্রহ যত বৃদ্ধি পায়, তাও মানুষের মনের ওপর স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করে, বহুদিন পর্যন্ত সেই প্রভাব স্থায়ী হয়ে থাকে।হারাম শীরফে’ কদম রেখে হাজী প্রত্যেক পদে পদে সেসব মহামানবদের অতীত কর্মধারার স্পষ্ট নিদর্শন দেখতে পায়। যারা আল্লাহর বন্দেগী ও আনুগত্য করে এবং আল্লাহর দীন ইসলামকে কায়েম করতে গিয়ে নিজেদের যথাসর্বস্ব কুরবানী করেছেন, যারা সারা দুনিয়ার বিরুদ্ধে লাড়াই করেছেন, নানা প্রকার দুঃখ - লাঞ্জনা অকাতরে সহ্য করেছেন, নির্বাসন দন্ড ভোগ করেছেন, অসংখ্য যুলম বরদাশত করেছেন, কিন্তু আল্লাহর দীনকে কায়েম না করা পর্যন্ত তারা এতটুকু ক্লান্তিবোধ করেননি। যেসব ‘বাতিল’ শক্তি মানুষকে এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দাসত্ব করতে বাধ্য করছিল, তাঁরা তাদের সকলেরই মস্তক চূর্ণ করে দীন ইসলামের পতাকা উন্নত করে ধরেছেন। <br />এসব সুস্পষ্ট নিশানা ও বরকত মন্ডিত নিদর্শনসমূহ প্রত্যক্ষ করে একজন আল্লাহ বিশ্বাসী ব্যক্তি প্রবল ইচ্ছা-বাসনা, সাহস ও আল্লাহর পথে জিহাদ করার যে প্রাণস্পর্শী শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে। তা অন্য কোন জিনিস থেকে গ্রহণ করতে পারে না। কা’বা ঘরের তাওয়াফ করায় দ্বীন ইসলামের কেন্দ্র বিন্দুর সাথে হাজীর নিবিড় সম্পর্ক স্থাপিত হয়। হজ্জ সম্পর্কীয় অন্যান্য কার্যাবলী দ্বারা হাজীর জীবনকে সৈনিকের ট্রেনিং দিয়ে গঠন করা হয় । নামাজ, রোজা এবং যাকাতের সাথে এসবকে মিলিয়ে যাচাই করলে পরিস্কার মনে হবে যে, ইসলাম এসব কিছুর সাহায্যে কোন এক বিরাট উদ্দেশ্যে মানুষকে ট্রেনিং দান করে। এর জন্যই মক্কা পর্যন্ত যাতায়াতের সামর্থ্য সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলমানের প্রতি হজ্জ ফরজ করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য এই যে, প্রতি বছরই অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যক মুসলমান ইসলামের এ প্রাণ কেন্দ্রে আসবে এবং ট্রেনিং লাভ করে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রের দিকে ফিরে যাবে। <br />অতপর আরো একটি দিক লক্ষ্য না করলে হজ্জের কল্যাণ ও স্বার্থকতা পরিপূর্ণরূপে হৃদয়ংগম করা যাবে না। এক একজন মুসলমান কখনো একাকী হজ্জ করে না। দুনিয়ার সমগ্র মুসলমানের জন্যই হজ্জ করার একটি তারিখ নির্দিষ্ট করা হয়েছে। হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মুসলমান একত্রিত হয়ে একই সময়ে হজ্জ করে। ওপরের কথা দ্বারা আপনি শুধু এতটুকু বুঝতে পারেন যে, আলাদাভাবে একজন মুসলমান হজ্জ করলে তার ওপর তার কতখানি প্রভাব পড়া সম্ভব। পরবর্তী প্রবন্ধের মারফতে আপনি বিস্তারিতরূপে জানতে পারেবেন যে, দুনিয়ার মুসলমানদের জন্য হজ্জের একটি সময় নির্দিষ্ট করে দিয়ে হজ্জের কল্যাণ কত লক্ষগুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে একটি কাজে দু’টি ফল নয়, কয়েক হাজার ফল লাভের সুযোগ করে দেয়া একমাত্র ইসলামেরই এক অতুলনীয় কীর্তি। নামায আলাদাভাবে পড়ারও ফায়দা কম নয়। কিন্তু তার সাথে জামায়াতে শামিল হয়ে ইমামের পিছনে নামায পড়ার শর্ত করে দিয়ে এবং জুময়া ও দু’ ঈদের নামায জামায়াতের সাথে পড়ার নিয়ম করে তার ফায়দা অসংখ্য গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে রোযা রাখায় রোযাদারদের মন ও চরিত্র গঠন কাজ কম সাধিত হতো না। কিন্তু সকল মুসলমানের জন্য একটি মাসকে রোযার জন্য নির্দিষ্ট করে তার ফায়দা এত পরিমান বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে, যা গুণে শেষ করা যায় না। এক একজন লোকের ব্যক্তিগতভাবে যাকাত আদায় করার উপকারিতাও কম নয়; কিন্তু বায়তুলমালের মারফত যাকাত দেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে তার উপকারিতা এতদূর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে যে, ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম না হওয়া পর্যন্ত সঠিকভাবে এর ধারণাও করা যায় না। কারণ ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনেই সকল মুসলমানের যাকাত ‘বায়তুলমালে’ জমা করা হয় এবং সুসংবদ্ধভাবে প্রাপকের মধ্যে বন্টন করা হয়। ফলে তাতে সমাজের অভাবগ্রস্ত লোকদের অপূর্ব কল্যাণ সাধিত হয়। হজ্জের ব্যাপারেও তাই। একাকী হজ্জ করলেও হাজার হাজার মানুষের জীবনে বিরাট বিপ্লব সুচিত হতে পারে। কিন্তু দুনিয়ার মুসলমানকে একত্রিত হয়ে হজ্জ করার রীতি করে দিয়ে সীমাহীন কল্যাণ লাভের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। <br /><span style="font-weight:bold;">হজ্জের বিশ্ব সম্মেলন </span><br />যেসব মুসলমানের ওপর হজ্জ ফরয হয় অর্থাৎ যারা কা’বা শরীফ পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারে এমন লোক দু’ একজন নয়। প্রত্যেক এলাকায় তাদের সংখ্যা নিতান্ত কম হয় না। বলতে গেলে প্রত্যেক শহরে কয়েক হাজার এবং প্রত্যেক দেশে কয়েক লক্ষ পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রত্যেক বছরই এদের অধিকাংশ লোকই হজ্জ করার ইচ্ছা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়। দুনিয়ার যেসব জায়গায় মুসলমান বসবাস করে, তথায় হজ্জের মৌসুম নিকটবর্তী হওয়ার সাথে সাথে ইসলামী যিন্দেগীর এক নতুন চেতনা কিরূপ জেগে ওঠে, তা সত্যই লক্ষ্য করার মত। প্রায় রমযান থেকে শুরু করে যিলকদ মাস পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গা থেকে শত শত লোক হজ্জ যাত্রায় আয়োজন করে রওয়ানা হয়। আর ওদিকে মহররম মাসের শেষ দিক থেকে সফর, রবিউল আউয়াল তথা রবিউস্সানী পর্যন্ত হাজীদের প্রত্যাবর্তনের ধারা চলতে থাকে। এ ছয় মাসকাল পর্যন্ত সকল মুসলিম লোকালয় এক প্রকার ধর্মীয় ভাবধারায় সরগরম হয়ে থাকে। যারা হজ্জে গমন করে আর হজ্জ করে ফিরে আসে, তারা তো ধর্মীয় ভাবধারায় নিমগ্নই হয়ে থাকে ; কিন্তু যারা হজ্জে গমন করে না, হাজীদের রওনা করাতে, এক একটি ষ্টেশন থেকে তাদের চলে যওয়া আবার ফিরে আসার সময় তাদের অভ্যর্থনা করায় এবং তাদের কাছে হজ্জের বিস্তারিত অবস্থা শুনার ব্যপারে তারাও কিছুটা হজ্জে গমনের আনন্দ লাভ করে থাকে। <br />এক একজন হাজী যখন হজ্জে গমনের নিয়ত করে, সেই সাথে তাদের মধ্যে আল্লাহর ভয় এবং পরহেযগারী, তাওবা -ইসতেগফার এবং উন্নত ও পবিত্র চরিত্রের ভাবধারা জেগে ওঠে। সে তারা প্রিয় আত্মীয় ও বন্ধু বান্ধব, সহকর্মী এবং সংশ্লিষ্ট সকল লোকের কাছে বিদায় চায়। নিজের সব কাজ - কারবারের চুড়ান্ত রূপ দিতে শুরু করে । এতে মনে হয় যে, সে এখন আর আগের মানুষ নয়, আল্লাহর দিকে তার মনের আকর্ষন হাওয়ায় দিল পবিত্র হয়ে গেছে। এভাবে এক একজন হাজীর এ পরিবর্তনে তার চারপাশে লোকদের ওপর কত গভীর প্রভাব পড়ে তা অনুমান করা যায়। এরূপ প্রত্যেক বছরই যদি দুনিয়ার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে গড়ে এক লক্ষ লোকও এই হজ্জ সম্পন্ন করে, তবে তাদের এ গতিবিধি ও কার্যকলাপের প্রভাব আরো কয়েক লক্ষ লোকের চরিত্রের ওপর না পড়ে পারে না। তারপর হাজীদের কাফেলা যে স্থান অতিক্রম করে, তাদেরকে দেখে তাদের সাথে সাক্ষাত করে ‘লাব্বাইকা’ আওয়ায শুনে সেখানকার কত মানুষের দিল অলৌকিক ভাবধারায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। কত মানুষের লক্ষ্য আল্লাহর ঘরের দিকে ফিরে যায়। আর কত লোকের নিদ্রিত আত্মা হজ্জ করার উৎসাহে জেগে ওঠে । এসব লোক যখন আবার নিজ নিজ দেশের দিকে -দুনিয়ার বিভিন্ন দিকে হজ্জের প্রাণস্পর্শী ভাবধারা বিস্তার করে প্রত্যাবর্তন করে এবং দলে দলে মানুষ তাদের সাথে সাক্ষাত করতে আসে, তাদের কাছ থেকে আল্লাহর ঘরের আলোচনা শুনে কত অসংখ্য মানুষের মনে এবং অসংখ্য পরিমন্ডলে ইসলামী ভাবধারা জেগে ওঠে। <br />এ জন্যই আমি বলতে চাই যে, রযমান মাস যেরূপ বিশ্ব মুসলিমের জন্য তাকওয়া ও পরহেযগারীর মৌসুম তেমনি হজ্জের মাসও বিশ্ব ইসলামী পুনর্জাগরণের মৌসুম। মহান বিজ্ঞ আল্লাহ এ ব্যবস্থা এ জন্য করেছিলেন যেন বিশ্ব ইসলামী আন্দোলন শ্লথ না হয়ে যায়। পবিত্র কা’বাকে বিশ্বের কেন্দ্র ভুমি হিসেবে এমনভাবে স্থাপন করেছেন যেন মানব দেহের মধ্যে হৃদয়ের অবস্থান। দেহে যতই রোগাক্রান্ত হোক না কেন যত দিন হৃদয়ের স্পন্দন থেমে না যায় এবং সমগ্র দেহ রক্ত সঞ্চালনের পদ্ধতি বন্ধ হয়ে না যায় ততদিন যেমন মানুষের মৃত্যু হয় না সেরূপ হজ্জের এ সম্মেলন ব্যবস্থাও যতদিন থাকবে ততদিন ইসলামী আন্দোলনও চলতে থাকবে। <br />একটু চোখ বন্ধ করে চিন্তা করলেই আপনাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠবে যে, পৃথিবীর দূর দূরান্তের অঞ্চল থেকে আগত অসংখ্য মানুষ যাদের আকার -আকৃতি, দৈহিক রং ও ভাষা, পোশাক -পরিচ্ছদ বিভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও যখনই কেন্দ্রের নিকটবর্তী হয় সবাই নির্দিষ্ট স্থানে এসে নিজ নিজ পোশাক -পরিচ্ছদ খুলে ফেলে এবং সকলে একই ধরনের অনাড়ম্বর ‘ইউনিফরম’ পরিধান করে। এহরামের এ ‘ইউনিফরম’ ধারণ করার পর পরিষ্কার মনে হয় যে, দুনিয়ার হাজার হাজার জাতির মধ্য থেকে এই যে লক্ষ লক্ষ ফোজ আসছে, এরা বিশ্বের বাদশাহ ও যমীন - আসমানের রাজাধিরাজ এক আল্লাহ তাআলারই ফৌজ। এরা দুনিয়ার হাজার হাজার জাতি ও কওম থেকে ভর্তি হয়েছে। এরা সকলে একই বাদশাহর ফৌজ। এদের সকলের ওপর একই সম্রাটের আনুগত্য ও গোলামীর চিহ্ন লেগে আছে, একই বাদশাহর আনুগত্যের সূত্রে এরা সকলেই পরস্পর বিজড়িত রয়েছে এবং একই রাজধানীর দিকে, মহাসম্রাটের সামনে উপস্থিত হবার জন্য ছুটে চলেছে। একই ‘ইউনিফরম’ পরিহিত এ সিপাহী ‘মীকাত’ অতিক্রম করে যখন সামনে অগ্রসর হয়, তখন সকলের কণ্ঠ থেকে এ একই ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়ে আকাশ -বাতাস মুখরিত করে তোলেঃ <br />উচ্চারণের কন্ঠ বিভিন্ন -কিন্তু সকলের কণ্ঠে একই ধ্বনি। কেন্দ্র যত নিকটবর্তী হয়, ব্যবধান ততই কমে যায়। বিভিন্ন দেশের কাফেলা পরস্পর মিলিত হয় এবং সকলেই একত্রিত হয়ে একই পদ্ধতিতে নামায পড়ে, সকলের পোশাক এক, সকলেরই ইমাম এক, একই গতিবিধিতে ও একই ভাষায় সকলের নামায পড়া, সকলেই এক ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনির ইঙ্গিতে ওঠা-বসা করে, রুকূ-সিজদা করে, সকলে একই আরবী ভাষায় কুরআন পড়ে এবং শুনে। এভাবে সমবেত লক্ষ লক্ষ জনতার ভাষা, জাতি, দেশ, বংশ ও গোত্রের কৃত্রিম বৈষম্য চূর্ণ হয়ে একাকার হয়ে যায়। সমগ্র মানুষের সমন্বয়ে ‘আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী’ একটি বিরাট জামায়াত রচিত হয় । তার পর এ বিরাট আন্তর্জাতিক জামায়াত একই আওয়ায ‘লাব্বাইকা লাব্বাইকা’ ধ্বনি করতে করতে চলতে থাকে। পথের প্রত্যেক চড়াই উৎরাইয়ে যখন এ আওয়ায উত্থিত হয়, যখন নামাযের সময়ে এবং প্রভাতে এ শব্দ অনুরণিত হয়ে ওঠে, যখন কাফেলাসমূহ পরস্পর মিলিত হবার সময় এ শব্দই ধ্বনিত হয়ে ওঠে তখন চারদিকে এক আশ্চর্য রকম পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সে পরিবেশে মানুষ নিজেকে ভুলে যায়, এক অচিন্তনীয় ভাবধারায় সে মত্ত হয়ে পড়ে, ‘লাব্বাইকা’ ধ্বনির আকর্ষণে সে এক ভাবজগতে ছুটে যায়। অতপর কা’বায় পৌছে দুনিয়ার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে সমাগত জনসমুদ্রের একই পোশাকে নির্দিষ্ট কেন্দ্র বিন্দুর চারদিকে প্রদক্ষিণ করা , সকলের একই সাথে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝখানে দৌড়ানো, সকলের মিনায় উপস্থিত হয়ে তাবু জীবনযাপন করা এবং তথায় এক ইমামের কন্ঠে ভাষণ (খোতবা) শ্রবণ করা, তারপর মুযদালিফায় তাবুর নীচে রাত্রি যাপন করা, আবার মিনার দিকে সকলের প্রত্যাবর্তন করা, সকলে মিলে আকাবায় পাথর দ্বারা চাঁদমারী করা, তারপর সকলের কুরবানী করা , সকলের একই কেন্দ্রে একত্রিত হয়ে নামায পড়া --- এসব কাজে যে পবিত্র পরিবেশ ও আধ্যাত্মিক মনোভাবের সৃষ্টি হয়, দুনিয়ার অন্য কোন ধর্মে বা জীবন ব্যবস্থায় তার তুলনা নেই। <br />তারপর দুনিয়ার বিভিন্ন জাতির মধ্য থেকে আগত অসংখ্য মানুষের একই কেন্দ্রে সম্মিলিত হওয়া এমন নিষ্ঠা, একাগ্রতা এবং ঐক্যভাবের সাথে একত্রিত হওয়া এমন পবিত্র উদ্দেশ্য ও ভাবধারা এবং নির্মল কাজ-কর্ম সহকারে সমস্ত কাজ সম্পন্ন করা প্রকৃতপক্ষে আদম সন্তানের জন্য এটা এক বড় নিয়ামত। এ নিয়ামত ইসলাম ভিন্ন অন্য কোন ধর্মই দিতে পারে নি। দুনিয়ার বিভিন্ন জাতির পরস্পর মিলিত হওয়া কোন নুতন কথা নয় চিরকালই এরূপ হয়েছে। কিন্তু তাদের এ সম্মেলন হয় যুদ্ধের ময়দানে একে অপরের গলা কাটার জন্যে অথবা সন্ধি সম্মেলনে বিজিত দেশগুলোকে নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেবার জন্যে কিংবা বিশ্বজাতি সম্মেলনে এক একটি জাতির বিরুদ্ধে ধোঁকা ও প্রতারণার ষড়যন্ত্র, যুলুম এবং বেঈমানীর জাল ছড়াবার জন্য; অথবা পরের ক্ষতি সাধন করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করার মতলবে। সমগ্র জাতির জনসাধারণের নির্মল মন, সচ্চরিত্রতা ও পবিত্র মনোভাব নিয়ে এবং প্রেম ভালোবাসা, নিষ্ঠা, মানসিক ও আধ্যাত্মিক ঐক্যভাব সহকারে একত্রিত হওয়া। চিন্তা, কর্ম এবং উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণ একাগ্রতার সাথে মিলিত হওয়া--- তাও আবার একবার মিলিত হয়েই ক্ষান্ত না হওয়া বরং চিরকালের জন্য প্রত্যেক বছর একই কেন্দ্রে একত্রিত হওয়া বিশ্বমানবতার প্রতি এতবড় নিয়ামত দুনিয়ায় ইসলাম ভিন্ন অন্য কোন ধর্ম ব্যবস্থাই দিতে পেরেছে কি? বিশ্ব শান্তি স্থাপনে জাতিসমূহের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-কলহ মিটিয়ে দেয়া এবং লড়াই ঝগড়ার পরিবর্তে ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য এর চেয়ে উত্তম ব্যবস্থা আর কেউ পেশ করতে পেরেছে কি? ইসলাম শুধু এতটুকু করেই ক্ষান্ত হয়নি ; সে আরো অনেক কল্যাণকর ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। <br />বছরের চারটি মাস হজ্জ ও ওমরার কাজ সম্পাদনের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে । ইসলাম কা’বা যাতায়াতের এ চারটি মাস সমস্ত পথেই শান্তি অক্ষুণ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এটা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং শান্তি রক্ষা করার এক স্থায়ী ব্যবস্থা। দুনিয়ার রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ইসলামের হাতে আসলে হজ্জ ও ওমরার কারণে একটি বছরের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ সময় চিরকালের জন্য যুদ্ধ এবং রক্তারক্তির হাত থেকে দুনিয়া রক্ষা পেতে পারে। <br />ইসলাম দুনিয়ার মানুষকে একটি হেরেম দান করেছে। এ হেরেম কিয়ামত পর্যন্ত শান্তির কেন্দ্রস্থল । এখানে মানুষ মারা তো দূরের কথা, কোনো জন্তুও শিকার করা যেতে পারে না। এমনকি এখানকার ঘাসও কেটে ফেলার অনুমতি নেই। এখানকার কোনো কাঁটাও চূর্ণ করা যায় না, কারো কোন জিনিস এখানে পড়ে থাকলে তা স্পর্শ করাও নিষিদ্ধ। ইসলাম পৃথিবীর বুকে একটি শহর প্রতিষ্ঠিত করেছে। এ শহরে কারো কোন হাতিয়ার নিয়ে প্রবেশ করার অনুমতি নেই। এখানে খাদ্যশস্য বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী সঞ্চয় করে রাখা এবং তার ফলে মূল্য বৃদ্ধির কারণ সৃষ্টি করা পরিষ্কার আল্লাহদ্রোহীতা । এখানে যারা অন্যের ওপর যুলুম করে তাদেরকে অল্লাহ পাক এই বলে সাবধান করে দিয়েছেনঃ "নুযিকহুমিন আযাবুন আলিম" অর্থ --“আমরা তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেব।” <br />ইসলাম সমগ্র পৃথিবীর একটি কেন্দ্র নির্ধারিত করেছে। এ কেন্দ্রের পরিচয় প্রসংগে বলা হয়েছেঃ “যারা আল্লাহর প্রভুত্ব ও বাদশাহী এবং হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়াত ও নেতৃত্ব স্বীকার করে ইসলামী ভ্রাতৃসংঘে প্রবেশ করবে, ইসলামের এ কেন্দ্রে তাদের সকলেরই সমান অধিকার থাকবে।” আমেরিকার বাসিন্দা হোক কি আফ্রিকার , চীনের বাসিন্দা হোক কি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের , সে যদি মুসলামান হয় তবেই মক্কা শরীফে তার অধিকার মক্কার আসল বাসিন্দাদের অনুরূপ হবে। সমগ্র হারাম শরীফের এলাকা মসজিদের ন্যায়। মসজিদে গিয়ে যে মুসলমান নিজের জন্য কোনো স্থান করে নেয় , সে স্থান তারই হয়ে যায়; কেউ তাকে সেই স্থান থেকে বিতাড়িত করতে পারে না, কেউ তার কাছে ভাড়া চাইতে পারে না। কিন্তু সে যদি সারা জীবনও সেই স্থানে বসে থাকে, তবুও সেই স্থানকে নিজের মালিকানা স্বত্ব বলে দাবী করতে এবং তা বিক্রি করতে পারে না। এর জন্য সে ভাড়াও চাইতে পারে না । এভাবে সেই ব্যক্তি যখন সেই স্থান থেকে চলে যাবে তখন অন্য কেউ এসে এখানে আসন করে নিতে পারে , যেমন পূর্বের লোকটি পেরেছিল। ‘হারাম শারীফের’ অবস্থাও ঠিক এরূপ। <br />হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ “ মক্কা নগরের যে স্থানে এসে যে ব্যক্তি প্রথমে অবতরণ করবে সেই স্থান তারই হবে।” এখানকার বাড়ী-ঘরের ভাড়া আদায় করা জায়েজ নয়। হযরত উমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু এখানকার লোকদের ঘরের সম্মুখস্ত প্রাঙ্গণের দুয়ার বন্ধ করতে নিষেধ করেছিলেন, যাতে লোকেরা তাদের প্রাঙ্গনে এসে অবস্থান করতে পারে। কোন কোন ফকীহ এতদূরও বলেছেন যে, মক্কা নগরীর বাড়ীঘরের কেউ মালিক নয়, তা উত্তরাধিকার নীতি অনুসারে বন্টনও হতে পারে না। এসব সুযোগ-সুবিধা এবং আযাদীর মূল্যবান নিয়ামত দুনিয়ার মানুষ ইসলাম ভিন্ন অন্য কোথাও পেতে পারে কি? <br />এহেন হ্জ্জ সম্পর্কেই বলা হয়েছিলঃ তোমরা এটা করে দেখ এতে তোমাদের জন্য কতবড় কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তার সমস্ত কল্যাণকে গুণে গুণে বলার শক্তি আমার নেই । কিন্তু তবুও এই পর্যন্ত তার যে কিঞ্চিত বিবরণ ওপরে পেশ করেছি তা থেকে এ সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণ লাভ করা যাবে। <br />কিন্তু এসব কথা শুনার পর আমার নিজের মনের দুঃখের কথাও খানিকটা শুনুন। বংশানুক্রমিক মুসলমান হীরক খনি অভ্যন্তরে ভূমিষ্ঠ শিশুর মত। এ শিশু যখন জন্ম মুহূর্ত থেকেই চারদিকে কেবল হীরক দেখতে পায় এবং হীরক খন্ড নিয়ে খেলা করতে থাকে, তখন তার দৃষ্টিতে হীরকের ন্যায় মহামূল্যবান সম্পদও সাধারণ পাথরের মতই মূল্যহীন হয়ে যায়। বংশীয় মুসলমানদের অবস্থাও ঠিক এরূপ। সমগ্র জগত যে নিয়ামত থেকে বঞ্চিত এবং যা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণেই তারা নানা প্রকার দুঃখ-মুসিবতে নিমজ্জিত রয়েছে, আর বিশ্ব মানব যার সন্ধান করতে ব্যাকুল রয়েছে, সেই মূল্যবান নিয়ামতসমূহ বর্তমান মুসলমানরা বিনামূল্যে লাভ করেছে, এজন্য তালাশ-অনুসন্ধান এবং খোঁজাখুজির জন্য একবিন্দু পরিশ্রমও তাদের করতে হয়নি। এসব ছাড়াই তারা এটা পেয়েছে শুধু এ জন্য যে, সৌভাগ্যবশত তারা মুসলিম পরিবারে জন্মলাভ করেছে। যে কালেমায়ে তাওহীদ মানব জীবনের সমগ্র জটিল সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করে দিতে পারে শিশুকাল থেকেই তা তাদের কানে প্রবেশ করেছে, মানুষকে প্রকৃত মানুষ বানাতে এবং লোকদের পরস্পরের ভাই ও দরদী বন্ধুতে পরিণত করার জন্য নামায-রোযা স্পর্শমণি অপেক্ষাও বেশী মূল্যবান। এরা জন্মলাভ করেই বাপ-দাদার উত্তরাধিকার হিসেবে এটা লাভ করেছে। যাকাত ইসলামী সমাজের এক অতুলনীয় ব্যবস্থা, এ দ্বারা শুধু মনের নাপাকীই দূর হয় না, দুনিয়ার অর্থব্যবস্থাও সুষ্ঠুতা লাভ করে---- যা থেকে বঞ্চিত হয়ে দুনিয়ার মানুষ একে অপরের বুকের রক্ত শুষে নিচ্ছে। এটা মুসলমানগণ প্রত্যক্ষ করছে। কিন্তু মুসলমানরা তা বিনা ব্যয়ে এবং বিনা শ্রমে লাভ করেছে। এটা ঠিক তেমনিভাবে, যেমন খবু বড় চিকিৎসকের সন্তান ঘরে বসেই বড় বড় রোগের তালিকা বিনামূল্যে লাভ করে থাকে। অথচ এর জন্য অন্যান্য মানুষ অত্যন্ত ব্যস্ততার সাথে সন্ধান করে বেড়ায়। হজ্জও একটি বিরাট ব্যবস্থা, সমগ্র দুনিয়ায় এর কোনো তুলনা নেই। পৃথিবীর কোণায় কোণায় ইসলামী আন্দোলনের আওয়াজ পৌঁছাবার জন্য এবং আন্দোলনকে চিরকালের তরে জীবিত রাখার জন্য এটা অপেক্ষা শক্তিশালী উপায় আর কিছুই হতে পারে না। বস্তুত দুনিয়ার সমগ্র মানুষকে পৃথিবীর প্রতিটি কোন থেকে এক আল্লাহর নামে টেনে এনে নির্দিষ্ট একটি কেন্দ্রে একত্রিত করে দেয়া এবং অসংখ্য বংশ গোত্র ও জাতিকে এক আল্লায় বিশ্বাসী, সদুদ্দেশ্য সম্পন্ন ও সৌহার্দপূর্ণ ভ্রাতৃসংঘে সম্মিলিত করে দেবার জন্য এটা আপেক্ষা উন্নততর কোনো পন্থা আজ পর্যন্ত আবিষ্কার করা সম্ভব হয় নি। যুগ-যুগান্তর থেকে জীবন্ত ও প্রচলিত এ ব্যবস্থাও মুসলমানগণ নিজেদের সম্পদ হিসেবে লাভ করেছে বিনা চেষ্টায় এবং বিনা শ্রমে। কিন্তু বড়ই দুঃখের কথা এই যে, মুসলমান বিনাশ্রমে প্রাপ্ত এ মূল্যবান সম্পদের কোন কদর বোঝেনি, বরং তারা এটা নিয়ে ঠিক তেমনি ভাবে খেলা করছে, যেমন হীরক খন্ড নিয়ে খেলা করে হীরক খনিতে প্রসূত শিশু সন্তান। আর তাকে সে মনে করে সাধারণ পাথরের ন্যায় মূল্যহীন। মুসলমান নিজেরদের মূর্খতা এবং অজ্ঞতার কারণে এ বিরাট মূল্যবান সম্পদ ও শক্তির উৎস নিয়ে অত্যন্ত হীনভাবে খেলা করছে। এর অপচয় করছে--- এটাকে নষ্ট করছে--- এসব দেখে আমার প্রাণ জ্বলে যায়। পাথর চূর্ণকারীর হাতে মূল্যবান হীরক খন্ড বরবাদ হতে দেখে সহ্য করা বাস্তবিকই কঠিন ব্যাপার। কোনো এক কবি সাত্যিই বলেছিলেনঃ <br />“যদিও ঈসার গাধা যায় মক্কা ভূমি<br />সেথাও থাকবে গাধা জেনে রাখ তুমি।” <br />অর্থাৎ হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ন্যায় মহান পয়গম্বরের গাধা হলেও পবিত্র মক্কার দর্শন দ্বারা তার কোনো উপকার হতে পারে না। সে যদি সেখানে থেকেও যায় তথাপি সে যেমন গাধা তেমন গাধাই থেকে যাবে। <br />নামায-রোযা হোক, কিংবা হজ্জ হোক, এগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের প্রশিক্ষণ। কিন্তু যারা এগুলোর অর্থ ও উদ্দেশ্য বুঝতে চায় না এর উপকার ও কল্যাণ লাভ করার কথা এতটুকুও ভাবে না; বরং যারা এ ইবাদাত সমূহের যে কোনো মাকছুদ ও উদ্দেশ্য থাকতে পারে তৎসম্পর্কেও বিন্দুমাত্র কোনো ধারণা রাখে না। তারা যদি পূর্ববর্তী লোকদের দেখাদেখি শুধু ওগুলোর নকলই করতে থাকে, তাহলে এটা দ্বারা সেই সুফল আশা করা যেতে পারে না। কিন্তু দুঃখের বিষয় সাধারণত আজকের মুসলমানগণ এভাবেই ঐ ইবাদাত গুলো করে চলেছে। সকল ইবাদাতের বাহ্যিকরূপ তারা ঠিকই বজায় রাখছে ; কিন্তু (লক্ষ ও উদ্দেশ্যের প্রতি দৃষ্টি না থাকার কারণে) এতে কোন প্রাণ শক্তি সৃষ্টি হচ্ছে না। প্রতি বছর হাজার হাজার লোক ইসলামের কেন্দ্রে গমন করে এবং হজ্জের সৌভাগ্য লাভ করে ফিরে আসে ঠিক কিন্তু হারাম শরীফের যাত্রীর স্বভাব-চরিত্রে যে পরিবর্তন কাম্য ছিল, তা যেমন দেখা যায় না তেমনি হজ্জ থেকে ফিরে আসার পরও তার মানসিক ও নৈতিক ক্ষেত্রে কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় না। অনুরূপভাবে যে সকল এলাকা অতিক্রম করে হজ্জে গমন করা হয়, সেখানকার মুসলমান-অমুসলমান অধিবাসীদের ওপরেও তার কোন উত্তম চরিত্রের প্রভাব পতিত হয় না। বরং অনেকের অসৎ স্বভাব, বদমেজাজী, অশালীন ব্যবহার ও চারিত্রিক দুর্বলতা ইসলামের সম্মানকে বিনষ্ট করে দেয়। বস্তুত এসব কারণেই আমাদের অনেক মুসলিম যুবকও প্রশ্ন করেন যে, ‘হজ্জের উপকার আমাদেরকে বুঝিয়ে দিন।’ অথচ হজ্জ তো ছিল এমন এক জিনিস যে তাকে প্রকৃতরূপে সম্পন্ন করা হলে কাফেররাও এর উপকার প্রকাশ্যে দেখে ইসলাম গ্রহণ করতো। যদি কোনো আন্দোলনের লক্ষ লক্ষ সদস্য প্রতি বছর বিশ্বের সকল অঞ্চল থেকে এক স্থানে সমবেত হয় এবং আবার নিজ নিজ দেশে ফিরে যায় বিভিন্ন দেশে ও নগর হয়ে যাওয়ার সময়ে নিজেরদের পবিত্র জীবন, পবিত্র চিন্তাধারা ও পবিত্র নৈতিকতার বহিঃপ্রকাশ করতে করতে অগ্রসর হয়, যেখানে যেখানে অবস্থান করে কিংবা যে যে স্থান অতিক্রম করে সেখানে নিজেদের আন্দোলনের যাবতীয় মৌলিক আলোচনা নীতির শুধু মৌখিক না করে আপন আচরণ ও কর্মতৎপরতায়ও তাকে বাস্তবায়িত করতে থাকে, আর এটা শুধু দশ-বিশ বছরেই নয় বরং বছরের পর বছর ধরে শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরেই চলতে থাকে তাহলে বলুন তো, এটা কোনো নিষ্ক্রিয় জিনিস থেকে হতে পারে কি? প্রকৃতপক্ষে হজ্জ এরূপ হলে তার উপকার সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন করার প্রয়োজনই হতো না। তখন অন্ধ ব্যক্তিও এর উপকার দেখতে পেত। বধির ব্যক্তিও এর কল্যাণ শুনতে পারতো। প্রতি বছরের হজ্জ কোটি কোটি মুসলমানকে নেক বান্দায় পরিণত করতো, হাজার হাজার অমুসলমানকে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য করতো, লক্ষ লক্ষ অমুসলমানের অন্তরে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা বদ্ধমূল করে দিত। কিন্তু আফসোস! আমাদের মূর্খতার কারণে কত বড় মূল্যবান সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। <br />হজ্জের অন্তর্নিহিত এ বিরাট সার্থকতা ও উপকারিতা পুরোপুরি লাভ করার জন্য ইসলামের কেন্দ্রস্থলে কোনো বিরাট শক্তিসম্পন্ন কর্তৃত্ব বর্তমান থাকা উচিত। যা এ মহান বিশ্ব শক্তিকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম। এখানে এমন একটি হৃৎপিন্ড (দিল) থাকা উচিত ছিল যা প্রত্যেক বছর সমগ্র বিশ্ব দেহে তাজা রক্তের দ্বারা প্রবাহিত করতে সক্ষম। এমন একটি মস্তিষ্ক থাকারও দরকার ছিল যা এ হাজার হাজার আল্লাহর দূতের মারফতে দুনিয়ার কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইসলামের বিপ্লবী পয়গাম পৌঁছাতে চেষ্টা করতো। আর কিছু না হোক, অন্তত এ কেন্দ্র ভূমিতে খালেস ইসলামী জীবন ধারার বাস্তব রূপ যদি বর্তমান থাকতো, তবুও দুনিয়ার মুসলামান প্রত্যেক বছরই সেখান থেকে খালেস ইসলামী জিন্দেগী এবং দ্বীনদারীর শিক্ষা নিয়ে নিজ নিজ ঘরে প্রত্যাবর্তন করতে পারতো। কিন্তু বড়ই দুঃখের বিষয় যে, এখানে তেমন কিছুই নেই। দীর্ঘকাল পর্যন্ত আরব দেশে মূর্খতার অন্ধকার পুঞ্জিভূত হয়ে আছে, আব্বাসীয় যুগ থেকে শুরু করে ওসমানী যুগ পর্যন্ত সকল অক্ষম ও অনুপযুক্ত শাসক ইসলামের কেন্দ্রেস্থলের অধীবাসীগণকে উন্নতি লাভের সুযোগ দেয়ার পরিবর্তে কয়েক শতাব্দীকাল ধরে তাদেরকে কেবল অধঃপতনের দিকেই ঠেলে দিয়েছে। ফলে আরব দেশ জ্ঞান-বিজ্ঞান, নৈতিক চরিত্র, সভ্যতা ও সংস্কৃতি ---- সকল দিক দিয়েই অধঃপতনের চরম সীমায় উপনীত হয়েছে। এ কারণে যে ভুখন্ড থেকে একদা ইসলামের বিশ্বপ্লাবী আলোক ধারা উৎসারিত হয়ে সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল আজ তাই ইসলামের পূর্ববর্তী জাহেলী যুগের ন্যায় অন্ধ কুপে পরিণত হয়েছে। এখন সেখানে ইসলামের জ্ঞান নেই, ইসলামী জীবনধারা নেই। মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে বুকভরা আশা ও ভক্তি নিয়ে প্রত্যেক বছর পাক ‘হারামে’ আগমন করে ; কিন্তু এ এলাকায় পৌছে তার চারদিকে যখন কেবল মূর্খতা, মলিনতা, লোভ-লালসা , নির্লজ্জতা, আত্মপূজা, চরিত্রহীনতা, উচ্ছৃংখলতা এবং জনগণের নির্মম অধঃপতিত অবস্থা দেখতে পায়, তখন তাদের আশা-আকাঙ্খার স্বপ্ন জাল ছিন্ন হয়ে যায়। এখন অনেক লোক হজ্জ করে নিজের ঈমানকে শক্তিশালী করার পরিবর্তে তাকে অধিকতর দুর্বলই করে আসে। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালম ও ইসমাঈল আলাইহিস সালামের পরে জাহিলিয়াতের যুগে আরব দেশে যে পৌরোহিত্যবাদ ও ঠাকুর পূজার প্রভাব বিস্তৃত হয়েছিল এবং যা শেষ নবী হযরত রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্মূল করেছিলেন, আজ তা-ই প্রবলরূপে পুনঃপ্রবর্তিত হয়েছে। ‘হারামে কা’বার’ ব্যবস্থাপক পূর্বের ন্যায় আবার সেবায়েত হয়ে বসেছে। আল্লাহর ঘর তাদের সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। এ ঘরের প্রতি যারা ভক্তি রাখে তারা এদের শিকার বিশেষ । বিভিন্ন দেশে বড় বড় বেতনভুক্ত এজেন্ট নিযুক্ত রয়েছে, তারা ভক্তদেরকে চারদিক থেকে টেনে টেনে নিয়ে আসে। কুরআনের আয়াত আর হাদীসের নির্দেশ পড়ে শুনিয়ে তাদেরেকে হজ্জ যাত্রায় উদ্বুদ্ধ করে এজন্য নয় যে, আল্লাহ তাদের উপর হজ্জ ফরয করেছেন, তা স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে। বরং তাতে তাদের যথেষ্ট আমদানী হবে। এসব দেখে পরিষ্কার মনে হয় যে, আল্লাহ এবং তার রাসূল এ বিরাট ব্যাবস্থা করেছেন শুধু এ পুরোহিত ‘পান্ডা’ এবং দালালদের প্রতিপালনের জন্য। তারপর হজ্জ যাত্রায় বাধ্য হয়ে মানুষ যখন ঘর থেকে বের হয়, তখন সফরের শুরু থেকে হজ্জ করে বাড়ী ফিরে আসা পর্যন্ত প্রত্যেক জায়গায় ধর্মীয় মজুর এবং ধর্ম ব্যবসায়ীরা জোকের ন্যায় তাদের সামনে উপস্থিত হয়। মুয়াল্লেম, তাওয়াফ শিক্ষাদাতা , কা’বা কুঞ্জিকা বাহক এবং স্বয়ং হেজায সরকার--- সকলেই এ ধর্ম ব্যবসায়ে সমানভাবে অংশিদার। হজ্জের সমস্ত অনুষ্ঠানাদিই পয়সা দিয়ে সম্পন্ন করতে হয়। এমন কি পবিত্র কা’বা গৃহের দরজাও পয়সা ব্যতীরেকে কোনো মুসলমানদের জন্য উম্মুক্ত হতে পারে না। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক) । ইসলামের এ তথাকথিত খাদেমগণ এবং কেন্দ্রীয় উপাসনাগারের সেবায়েতগণও শেষ পর্যন্ত বেনারস ও হরিদ্বারের পন্ডিত পুরোহিতদের পেশা অবলম্বন করে নিয়েছে, অথচ এটাই একদা এ পুরোহিতবাদদের মূলোচ্ছেদ করেছিল । যেখনে ইবদাত করানোর কাজ বিশেষ ব্যবসায় এবং ইবাদাতের স্থান উপার্জনের উপায়ে পরিণত হয়েছে, সেখানে আল্লাহর আয়াত কেবল এ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় যে, লোকে তা শুনে হজ্জ করতে বাধ্য হবে এবং এ সুযোগে তার পকেট মেরে টাকা নিয়ে যাব। যেখানে ইবাদতের কাজ সম্পন্ন করার জন্য মূল্য দিতে হয় এবং দ্বীনি কর্তব্য ব্যবসায়ের পন্য হয়---- এমতস্থানের ইবাদতে ইসলামের প্রাণ শক্তি কি করে বেঁচে থাকতে পারে। হাজীগণ যে এ ইবাদাতের প্রকৃত নৈতিক আধ্যাত্মিক উপকারিতা লাভ করতে পারবে --- সমস্ত কাজ যখন একটি কেনা-বেচার মাল হয়ে রয়েছে--- তখন এমন আশা কিছুতেই করা যায় না। <br />এ আলোচনা দ্বারা কারো ওপর দোষারোপ করা আমার উদ্দেশ্য নয়, আমি শুধু বলতে চাই হজ্জের ন্যায় একটি বিরাট শক্তিকে কোন্ কোন্ জিনিস প্রায় নিষ্ক্রিয় ও অর্থহীন করে দিয়েছে। <br />ইসলাম এবং ইসলাম প্রবর্তিত নিয়মসমূহে কোনো ত্রুটি রয়েছে, এরূপ ধারণা কারোই মনে যেন না জাগে। কারণ তাতে আসলে কোনোই ত্রুটি নেই ---ত্রুটি রয়েছে তাদের মধ্যে যারা সঠিকভাবে পূর্ণ ইসলামের অনুসরণ করে চলে না। অতএব, এ অবস্থার জন্য দায়ী বর্তমান মুসলমানরাই। তাই যে ব্যবস্থা তাদেরকে মানবতার পরিপূর্ণ আদর্শে পরিচালিত করতে পারতো এবং যা অনুসরণ করে তারা নেতা হতে পারতো, তা থেকে আজ কোনো ভাল ফল লাভ করা যাচ্ছে না। এমনকি অবস্থা এতদূর খারাপ হয়ে গেছে যে, এ ব্যবস্থাই মানবতার পক্ষে সত্যই কল্যাণকর কিনা আজ সে সম্পর্কেও মানুষের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হতে শুরু করেছে ।একজন সুদক্ষ চিকিৎসক যদি কয়েকটি অব্যর্থ ওষুধের তালিকা রেখে ইহলোক ত্যাগ করেন, তখন তার অকর্মণ্য ও নির্বোধ উত্তরাধিকারীগণের হাতে তা একেবারেই ‘অকেজো’ হয়ে যায়। ফলে সেই তালিকারও যেমন কোনো মূল্য হয় না, অনুরূপভাবে স্বয়ং চিকিৎসকের দুর্নাম হয় --- আসল তালিকা যতই ভাল , সঠিক এবং অব্যর্থ হোক না কেন। এতএব এ নির্ভূল তালিকাকে কার্যকর করে তুলতে হলে চিকিৎসা বিদ্যায় পারদর্শিতা অপরিহার্য। অপটু ও অজ্ঞ লোকরা সেই তালিকা অনুযায়ী ওষুধ তৈরী করলে তা দ্বারা যেমন কোনো উপকার পাওয়া যাবে না শুধু তাই নয়, বরং তাতে ক্ষতি হওয়ার যথেষ্ট আশংকা রয়েছে। ফলে জাহেল লোকেরা যারা তালিকার যথার্থতা যাচাই করতে নিজেরা অক্ষম--- তারাই শেষ পর্যন্ত মনে করতে শুরু করবে যে, মূলত তালিকাটাই ভুল। বর্তমান মুসলমানদের সর্বাত্মক অধঃপতনের ব্যাপারে ইসলামেরও ঠিক এ অবস্থা হয়েছে।Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-65150234917140965322009-11-06T18:19:00.001+07:002020-03-30T18:05:23.422+06:00ALL HAJJI DETAILS<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
This Our <b><a href="http://zilhajjtravelsbd.com/" target="_blank">Zilhajj Group Bangladesh</a></b> Hajjis All Details : <br />
<br />
Page 1 Page 2 <br />
A T M MOZAEM HOSSAIN A T M MOZAEM HOSSAIN (60)<br />
<br />
CHOUDAR, FULBARIA, MYMENSINGH<br />
PPNo.C1932145/ PId.321174 View<br />
<br />
A. S .M DOULAT AHMED A. S .M DOULAT AHMED (49)<br />
P SERVICE<br />
MIRER BAZAR, GAZIPUR, GAZIPUR<br />
PPNo.E0409148/ PId.321201 View<br />
ABDUL BASIR MUNSHI ABDUL BASIR MUNSHI (81)<br />
<br />
ALHARI KHARHAR, TRISHAL, MYMENSINGH<br />
PPNo.C1930481/ PId.321172 View<br />
<br />
ABDUL BASIR MUNSI ABDUL BASIR MUNSI (80)<br />
CULTIVATION<br />
ALHARI KHARHAR, TRISAL, MYMENSHING<br />
PPNo.C1930481/ PId.x321172 View<br />
ABDUL GOFUR ABDUL GOFUR (71)<br />
FARMER<br />
ALOHORICHALA PARA, TRISHAL, MYMENSINGH<br />
PPNo.C1934159/ PId.321179 View<br />
<br />
ABDUL GOFUR KHAN ABDUL GOFUR KHAN (65)<br />
RETD. GOVT. SERVICE<br />
CHAKPOILANPUR, PABNA, PABNA<br />
PPNo.C1508936/ PId.321275 View<br />
ABDUL HANNAN MIAH ABDUL HANNAN MIAH (49)<br />
BUSINESS<br />
HOUSE -70,KALIGONJ WEST PARA, KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.1689485/ PId.321025 View<br />
<br />
ABDUL HASIM ABDUL HASIM (60)<br />
BUSINESS<br />
PACH KANDI, MONOHORDI, NARSINGDI<br />
PPNo.E0401195/ PId.321200 View<br />
ABDUL HOSEN DHALI ABDUL HOSEN DHALI (54)<br />
BUSINESS<br />
H#B3,WARD-3,ROAD-3, SOUTH KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1682569/ PId.321038 View<br />
<br />
ABDUL KHALEQUE KHNDOKER ABDUL KHALEQUE KHNDOKER (50)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
MALOWER, NALCHITY, JHALAKHTI<br />
PPNo.C1856989/ PId.321230 View<br />
ABDUL KRIM ABDUL KRIM (49)<br />
BUSTNESS<br />
17, AHASANULLAH ROAD, KOTWALI, DHAKA<br />
PPNo.Z0585835/ PId.321027 View<br />
<br />
ABDUL KUDDUS ABDUL KUDDUS (36)<br />
BUSINESS<br />
SARTER PARA, TRISHAL, MYMENSHING<br />
PPNo.C1934017/ PId.321177 View<br />
ABDUL KUDDUS ABDUL KUDDUS (36)<br />
BUSINESS<br />
SATERPARA, TRISAL, MYMENSHING<br />
PPNo.C1934017/ PId.X321177 View<br />
<br />
ABDUL MANNAN ABDUL MANNAN (60)<br />
BUSINESS<br />
2/ 1JOMIDARY KACMARI PAUY, NARAYAGONJ, NARAYAGONJ<br />
PPNo.E0367564/ PId.321131 View<br />
ABDUL MANNAN ABDUL MANNAN (55)<br />
BUSINESS<br />
NATESWAR, SONAMURI, NOAKHALI<br />
PPNo.W0085213/ PId.321169 View<br />
<br />
ABDUL MANNAN ABDUL MANNAN (67)<br />
<br />
CHUNKUTIA MIDDLE PARA, SOUTH KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1667630/ PId.321001 View<br />
ABDUL RAHMAN DHALI ABDUL RAHMAN DHALI (51)<br />
R.T.D. GOVT. SERVICE<br />
KAYESKORI, BHEDARGONJ, SHARIATPUR<br />
PPNo.C1741217/ PId.321104 View<br />
<br />
ABDUL RASHID SHEIKH ABDUL RASHID SHEIKH (62)<br />
AGRICULTURE<br />
CHANDER BAG, KALIGONJ, GAZIPUR<br />
PPNo.E0183210/ PId.321197 View<br />
ABDUL ZABBAR BEPARI ABDUL ZABBAR BEPARI (67)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
108, BEPARI BARI, TOILKAI, TONGIBARI, MUNSHIGONJ<br />
PPNo.C1680039/ PId.321076 View<br />
<br />
ABDULLAH AL MASUD (MANIK) ABDULLAH AL MASUD (MANIK) (28)<br />
FARMER<br />
VANNARA, KALIAKAIR, GZIPUR<br />
PPNo.E0181559/ PId.321062 View<br />
ABDUR RAHAMAN ABDUR RAHAMAN (38)<br />
FARMER<br />
BANGSHIR PUR, SHAM NAGAR, SATKIRA<br />
PPNo.C1647540/ PId.321242 View<br />
<br />
ABDUS SATTAR ABDUS SATTAR (60)<br />
BUSINESS<br />
PUBBO MANDAIL, UTTAR KHALER GHAT, KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1680724/ PId.321126 View<br />
ABDUS SATTAR ABDUS SATTAR (60)<br />
CULTIVATION<br />
SHILIMPUR, BOGRA, BOGRA<br />
PPNo.X0419860/ PId.321193 View<br />
<br />
ABU SAYED ABU SAYED (45)<br />
BUSINESS<br />
EAST MUNSIA, SREE NAGAR, MUNSHIGONJ<br />
PPNo.C1683850/ PId.321016 View<br />
ABU SAYED ABU SAYED (40)<br />
BUSINESS<br />
ABDULLAPUR, TONGIBARI, MUNSIGONG<br />
PPNo.X0080951/ PId.321082 View<br />
<br />
ABU SAYED MONDOL ABU SAYED MONDOL (38)<br />
FARMER<br />
CHAR KALI, KOTWALI, MYMENSHING<br />
PPNo.C1937921/ PId.321217 View<br />
ABUL HOSSAIN ABUL HOSSAIN (62)<br />
BUSINESS<br />
HOUSE-12,CHOR KALIGONJ, SOUTH KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1667905/ PId.321010 View<br />
<br />
ABUL HASHIM ABUL HASHIM (59)<br />
BUSTNESS<br />
SHALIHOR, GOURIPUR, MYMENSHING<br />
PPNo.C1939654/ PId.321214 View<br />
ABUL KALAM AZAD ABUL KALAM AZAD (59)<br />
FARMER<br />
MADHYABAZAR, GOURIPUR, MYMENSINGH<br />
PPNo.C1937915/ PId.321209 View<br />
<br />
AFSAR AHMED AFSAR AHMED (42)<br />
P SERVICE<br />
FULDI, KALIGONJ, GAZIPUR<br />
PPNo.C1676992/ PId.X321145 View<br />
AJIR UDDIN AJIR UDDIN (60)<br />
AGRICULTURE<br />
NENGRI, CHATMOHAR, PABNA<br />
PPNo.C1965157/ PId.321279 View<br />
<br />
ALHAJ MD AFSER ALI ALHAJ MD AFSER ALI (54)<br />
P SERVICE<br />
HANDIAL, CHATMOHAR, PABNA<br />
PPNo.C1508289/ PId.321265 View<br />
ALI AHMAD ALI AHMAD (44)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
MONUA, VEDORGONJ, SHARIATPUR<br />
PPNo.B0234005/ PId.321182 View<br />
<br />
ALI ASHRAF ALI ASHRAF (68)<br />
PRIVATE<br />
CHARVUAI, GOSHAIRHAT, SHARIATPUR<br />
PPNo.C1744893/ PId.321288 View<br />
AMAN ULLAH MONTU AMAN ULLAH MONTU (40)<br />
BUSINESS<br />
18 NO HELATULA ROAD, KHULNA, KHULNA<br />
PPNo.W0845123/ PId.X321097 View<br />
<br />
AMAN ULLAH MONTU AMAN ULLAH MONTU (40)<br />
BUSINESS<br />
18 NO HELATULA ROAD, KHULNA, KHULNA<br />
PPNo.W0845123/ PId.X321097 View<br />
AMANULLAH AMANULLAH (40)<br />
BUSINESS<br />
18, HELATULI ROAD, KHULNA, KHULNA<br />
PPNo.W0845123/ PId.321097 View<br />
<br />
ANWAR HOSSAIN BABU ANWAR HOSSAIN BABU (41)<br />
BUSINESS<br />
HOUSE-5, ROAD-01, NADIDHORA, KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.Z0317753/ PId.321026 View<br />
ARMANA MUMTAZ ARMANA MUMTAZ (46)<br />
HOUSE WIFE<br />
KHOLA MURU, KARINIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.X0553058/ PId.321154 View<br />
<br />
ARSAR AHMED ARSAR AHMED (45)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
FULDI, KALIGONJ, GAZIPUR<br />
PPNo.C1676992/ PId.321145 View<br />
ASHAD ULLAH BHUIYAN ASHAD ULLAH BHUIYAN (47)<br />
BUSINESS<br />
5 WEST RAM PURA,DIT ROAD, KHILGAON, DHAKA<br />
PPNo.V0422806/ PId.X321069 View<br />
<br />
ASHAD ULLAH BHUIYAN ASHAD ULLAH BHUIYAN (58)<br />
BUSINESS<br />
5, WEST RAMPURA, DIT ROAD, KHILHAON, DHAKA<br />
PPNo.V0422806/ PId.321069 View<br />
ATIA MOHAMMAD ATIA MOHAMMAD (33)<br />
HOUSE WIFE<br />
HOUSE-5/3, FLAT-D-3, GIRBA URDU ROOD, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.C1673097/ PId.321121 View<br />
<br />
ATM MOZZEM HOSSAIN ATM MOZZEM HOSSAIN (61)<br />
CULTIVATION<br />
CHOUAR, FULBARIA, MYMENSHING<br />
PPNo.C1932145/ PId.x321174 View<br />
AYESHA SIDDIKA AYESHA SIDDIKA (64)<br />
HOUSE WIFE<br />
KAKIPUR BAGAN BARI, GOURIPUR, MYMENSINGH<br />
PPNo.C1936285/ PId.321211 View<br />
<br />
AYUOB ALI SHEKH AYUOB ALI SHEKH (76)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
CHASI BALIGHAO, TONGI BARI, MUNSHIGANJ<br />
PPNo.E0105960/ PId.321150 View<br />
BINA BEGUM BINA BEGUM (42)<br />
HOUSE WIFE<br />
KALIGONJ EAST PARA, SOUTH KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1667904/ PId.321020 View<br />
<br />
BORHAN UDDIN TALUKDAR BORHAN UDDIN TALUKDAR (66)<br />
BUSINESS<br />
BARIWALA PARA, GORIPUR, MYMENSHING<br />
PPNo.C1939901/ PId.321208 View<br />
DHOLU MIAH DHOLU MIAH (86)<br />
FARMER<br />
BACHU MIAR BARI, OLI NAGAR, SOUTH KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1665594/ PId.321066 View<br />
<br />
EKRAM SALMA WAKER EKRAM SALMA WAKER (38)<br />
HOUSE WIFE<br />
27 ATOS KHANALANE, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.C1657751/ PId.321138 View<br />
EKRAMUL HOQUE EKRAMUL HOQUE (52)<br />
BUSINESS<br />
135/3 GIRJNATH MAJUMDER SARAK, KUSTIA, KUSTIA<br />
PPNo.C1642622/ PId.321228 View<br />
<br />
FARID AHMED KHAN FARID AHMED KHAN (46)<br />
BUSINESS<br />
3/7/2 JONSON ROAD, SUTRAPUR, DHAKA<br />
PPNo.A0851355/ PId.321040 View<br />
FARIDA BEGUM FARIDA BEGUM (48)<br />
HUSE WIFE<br />
DAMODYA, DAMODYA, SHARIATPUR<br />
PPNo.C1279464/ PId.321099 View<br />
<br />
FATEMA AKTER CHAMPA FATEMA AKTER CHAMPA (36)<br />
HOUSE WIFE<br />
NHDIDHARA ISHPALAMI AGANAGAR, KARANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1677765/ PId.321028 View<br />
HAFEZ NESSAR AHMED KHAN HAFEZ NESSAR AHMED KHAN (57)<br />
IMAM<br />
FALDI, KHLIGONJ, GAZIPUR<br />
PPNo.W0726163/ PId.321116 View<br />
<br />
HAFIZ MOHAMMAD NABIL HAFIZ MOHAMMAD NABIL (34)<br />
BUSINESS<br />
PRINCE T-2 FLAT NO-F-17, A+B, 135/A DLEPHANT ROAD, NEW MARKET, DHAKA<br />
PPNo.E0371794/ PId.321137 View<br />
HAJI AHMAD ALI HAJI AHMAD ALI (53)<br />
BUSINESS<br />
CHAR KALI GONJ, SOUTH KERANI GONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1525211/ PId.321043 View<br />
<br />
HALIMA BEGOM HALIMA BEGOM (54)<br />
HOUSE WIFE<br />
KHEJUR BAG, SOUTH KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1676933/ PId.321008 View<br />
HALIMA BEGUM HALIMA BEGUM (65)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
CHASHIBALIGAON, TONGIBARI, MUNSHIGONJ<br />
PPNo.R0937538/ PId.321157 View<br />
<br />
HALIMA BEGUM HALIMA BEGUM (60)<br />
HOUSEWIFE<br />
SIDDYA, DAMODDYA, SHARIATPUR<br />
PPNo.C1743001/ PId.321108 View<br />
HASINA AKTER HASINA AKTER (41)<br />
HOUSE WIFE<br />
MONIHER, CHANDPUR, CHANDPUR<br />
PPNo.A0260328/ PId.321130 View<br />
<br />
HAZI FARUQ HOSSAION HAZI FARUQ HOSSAION (40)<br />
BUSINESS<br />
LOSONONGONJ, KARANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.A0534643/ PId.321092 View<br />
HIRON NESSA HIRON NESSA (72)<br />
HOUSE WIFE<br />
H#57, SUTRAPUR, DHAKA<br />
PPNo.C1682571/ PId.321041 View<br />
<br />
HOSHARAF HOSSAIN HOSHARAF HOSSAIN (48)<br />
BUSINESS<br />
KALIGONJ WEST PARA, SOUTH KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1667903/ PId.321019 View<br />
IBRAHIM BEPARI IBRAHIM BEPARI (72)<br />
BUSiNESS<br />
DONGI KANDI, JAZIPA, SHARIATPUR<br />
PPNo.C1671166/ PId.321109 View<br />
<br />
JAMAL DHALI JAMAL DHALI (49)<br />
BUSINESS<br />
KOBIBORT, SOUTH KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1668082/ PId.321012 View<br />
JAMSHAD ALI JAMSHAD ALI (77)<br />
BUSINESS<br />
HOLHD BARIA, ALLARDARGA, KUSTIA<br />
PPNo.E0622997/ PId.321246 View<br />
<br />
JAYDA BEGUM JAYDA BEGUM (42)<br />
HOUSE WIFE<br />
NATAR PARA, SREENAGAR, MUNSHIGANJ<br />
PPNo.C1665396/ PId.321051 View<br />
KALA CHAN MEMBER SHEK KALA CHAN MEMBER SHEK (70)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
CHASHI BALIGOUN, TONGIBARI, MUNSHIGANJ<br />
PPNo.W0091387/ PId.321156 View<br />
<br />
KAZI MOHAMMAD MUSTAFA KAZI MOHAMMAD MUSTAFA (35)<br />
BUSINESS<br />
PAIKSHA, NABABGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1679248/ PId.321031 View<br />
KAZI MOHAMMAD MUSTAFA KAZI MOHAMMAD MUSTAFA (35)<br />
BUSINESS<br />
AGANAGAR NODIDHARA R/A, HOUSE -5, R-6, SOUTH KARANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1679248/ PId.X321031 View<br />
<br />
KHURSHID JAHAN BEGUM KHURSHID JAHAN BEGUM (60)<br />
RETD. GOVT. SERVICE<br />
77/KA SHANKIPARA, SADAR, MYMENSINGH<br />
PPNo.C1932042/ PId.321213 View<br />
KOFIL UDDIN KOFIL UDDIN (33)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
KOFILUDDIN ER BARI SUBHADDA PURBO PARA, KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1678517/ PId.321162 View<br />
<br />
KOHINOOR BEGUM KOHINOOR BEGUM (52)<br />
TEACHER<br />
1453 (H-11. L-3) PATERBAGH, SOUTH DONIA, SHAMPUR, DHAKA<br />
PPNo.C1675575/ PId.321149 View<br />
KULCHUMA BEGUM KULCHUMA BEGUM (45)<br />
P SERVICE<br />
TARASIMULIA, DAMUDYA, SHARIATPUR<br />
PPNo.C1743552/ PId.321111 View<br />
<br />
M LIAQUAT ALI M LIAQUAT ALI (47)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
PAHARDANGA, KALIA, NARAIL<br />
PPNo.R0196616/ PId.321014 View<br />
M. M KAMAL HOSSAIN M. M KAMAL HOSSAIN (55)<br />
BUSINESS<br />
65/1 BEGUM BAZAR, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.A0408940/ PId.321167 View<br />
<br />
MAHAMUDUL HOQUE MAHAMUDUL HOQUE (22)<br />
STUDENT<br />
HOUSE-1,ROAD NO-03, KAMRANGIR CHAR, DHAKA<br />
PPNo.Z0589481/ PId.321088 View<br />
MAHAMUDUR RAHAMAN KHAN MAHAMUDUR RAHAMAN KHAN (46)<br />
INDUSTRIALIST<br />
55 SIDDESHWARI LANE SUNTOWE FLAT NO:901, RAMNA, DHAKA<br />
PPNo.A0599039/ PId.321163 View<br />
<br />
MAHBUBUR RAHMAN MAHBUBUR RAHMAN (30)<br />
BUSINESS<br />
37/17 NO, WEST ISLAMBAG,, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.C1678297/ PId.321159 View<br />
MAKSUDA BEGUM MAKSUDA BEGUM (60)<br />
HOUSEWIFE<br />
HOUSE NO-45, ROAD NO-01, KOEBORTO PARA, KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1687589/ PId.321290 View<br />
<br />
MARIAM BEGUM MARIAM BEGUM (48)<br />
HOUSE WIFE<br />
DIAR SHAHAPUR, ISHWARDI, PABNA<br />
PPNo.C1965222/ PId.321189 View<br />
MAULANA MD FAYEZ UDDIN MAULANA MD FAYEZ UDDIN (39)<br />
BUSINESS<br />
BARABIL, SHAJADPUR, SIRAJ GANJ<br />
PPNo.C1810538/ PId.321248 View<br />
<br />
MAW.AFZAL HUSSAIN MAW.AFZAL HUSSAIN (38)<br />
TECHER<br />
PHILIP NAGAR, DAULATPUR, KUSHTIA<br />
PPNo.C1642598/ PId.321221 View<br />
MAWLANA MUSTAKIM MAWLANA MUSTAKIM (39)<br />
FARMER<br />
MADHYA BAZAR, GOURIPUR, MYMENSINGH<br />
PPNo.C1939177/ PId.321204 View<br />
<br />
MD A RASHID MIA MD A RASHID MIA (51)<br />
BUSINESS<br />
HATAR PARA, SREENAGAR, MUNSHIGANJ<br />
PPNo.C1665397/ PId.321050 View<br />
MD ABDUL AZIZ MD ABDUL AZIZ (67)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
1793/1 HAJI KALI SARDAR ROAD, EAST JURAIN, KODOMTOLI, DHAKA<br />
PPNo.C1662563/ PId.321052 View<br />
<br />
MD ABDUL AZIZ HOWLADER MD ABDUL AZIZ HOWLADER (59)<br />
RETIRED<br />
CHAR KAWA, BARISAL SADAR, BARISAL<br />
PPNo.C1399117/ PId.321233 View<br />
MD ABDUL CHOWKIDAR MD ABDUL CHOWKIDAR (79)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
SAJANPUR, BHEDARGONJ, SHARIATPUR<br />
PPNo.C1742333/ PId.321102 View<br />
<br />
MD ABDUL HANNAN MD ABDUL HANNAN (25)<br />
BUSINESS<br />
CHAND GRAM, BHERAMARA, KUSTIA<br />
PPNo.C1642597/ PId.321220 View<br />
MD ABDUL HAQUE MD ABDUL HAQUE (57)<br />
R.T.D. GOVT. SERVICE<br />
HOUSE 15/GA, JAGAN, NATH SHAH ROAD, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.C1677856/ PId.X321067 View<br />
<br />
MD ABDUL HOQUE MD ABDUL HOQUE (67)<br />
RETIRED<br />
H#15/GA,JAGANNATH SHAH ROAD, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.C1677856/ PId.321067 View<br />
MD ABDUL RAZZAK MD ABDUL RAZZAK (59)<br />
FARMER<br />
ANDARIA PARA, FULBARIA, MYMENSHING<br />
PPNo.C1934182/ PId.x321175 View<br />
<br />
MD ABDUL WAHAB MD ABDUL WAHAB (78)<br />
AGRICULTURE<br />
NALUA, SHAJADPUR, SIRAJ GANJ<br />
PPNo.C180629/ PId.321254 View<br />
MD ABDUL WAHAD KHAN MD ABDUL WAHAD KHAN (59)<br />
GOV SERVICE<br />
BARABIL, SHAJADPUR, SIRAJ GANJ<br />
PPNo.C1808644/ PId.321253 View<br />
<br />
MD ABDUR RAZZAK MD ABDUR RAZZAK (59)<br />
FAMRER<br />
ANORIA PARA MUKUM CHANDA, FULBARIA, MYMENSINGH<br />
PPNo.C1934182/ PId.321175 View<br />
MD ABDUS SATTAR KHAN MD ABDUS SATTAR KHAN (65)<br />
RETD. GOVT. SERVICE<br />
OVIRAMPUR, ATGHARIA, PABNA<br />
PPNo.C1964400/ PId.321277 View<br />
<br />
MD ABU BARR MD ABU BARR (58)<br />
R.GOVT SERVICE<br />
JUGNIDHO, SHAJADPUR, SIRAJ GANJ<br />
PPNo.C1808569/ PId.321259 View<br />
MD ABUL HASHEM DHLI MD ABUL HASHEM DHLI (69)<br />
AIRUNESRUICE<br />
BENOTIA, GOSHAIRHAT, SHARIATPUR<br />
PPNo.C1741209/ PId.321100 View<br />
<br />
MD ABUL KALAM AZAD MD ABUL KALAM AZAD (58)<br />
BUSINESS<br />
DIAR SHAHPUR, ISHWARDI, PABNA<br />
PPNo.C1965220/ PId.321188 View<br />
MD ABUL KASHEM MD ABUL KASHEM (58)<br />
RTD.GOT. SERVICE<br />
POSCHIM TENGRI BABLI PARA, ISHWARDI, PABNA<br />
PPNo.C1965457/ PId.321191 View<br />
<br />
MD AFSAR KHANDGIR MD AFSAR KHANDGIR (82)<br />
FARMER<br />
AGJANTIHER, FARIDPUR, PABNA<br />
PPNo.C1963860/ PId.321257 View<br />
MD ALI AKBER HOWLADER MD ALI AKBER HOWLADER (63)<br />
PRIVET SERVICE<br />
MAHISER, BHEDARGONJ, SHARIAT PUR<br />
PPNo.C1743681/ PId.321110 View<br />
<br />
MD ALI AKBER HWLADER MD ALI AKBER HWLADER (64)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
MAHISER, BHEDARGONJ, SHARIATPUR<br />
PPNo.C1743681/ PId.X321110 View<br />
MD ALI HOSSAIN MD ALI HOSSAIN (40)<br />
BUSINESS<br />
KALIGONJ BORO MOSJID ROAD, KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.Z0121083/ PId.321045 View<br />
<br />
MD ALI KHAN RIFAT MD ALI KHAN RIFAT (13)<br />
STUDENT<br />
12, NADIDHARA, ISPALANI, AGANAGAR, KARANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1677770/ PId.321029 View<br />
MD ANOWAR HOSSAIN MD ANOWAR HOSSAIN (45)<br />
GOVT SERVICE<br />
MOWRA, NARAIL, NARIAL<br />
PPNo.C1077926/ PId.321237 View<br />
<br />
MD ANSAR ALI MD ANSAR ALI (54)<br />
AGRICULTURE<br />
MASIPUR, SHAJADPUR, SIRAJ GANJ<br />
PPNo.C1812654/ PId.321249 View<br />
MD ASAK HOWLADER MD ASAK HOWLADER (62)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
KAJOL PUR, SREENAGAR, MUNSHIGANJ<br />
PPNo.E0107663/ PId.321058 View<br />
<br />
MD ASMAT ALI SARKAR MD ASMAT ALI SARKAR (73)<br />
CULTIVATION<br />
ANDARIA PARA, FULBARIA, MYMENSHING<br />
PPNo.C1933581/ PId.x321173 View<br />
MD ASMAT ALI SARKER MD ASMAT ALI SARKER (73)<br />
<br />
ANDARIA PARA, FULBARIA, MYMENSINGH<br />
PPNo.C1933581/ PId.321173 View<br />
<br />
MD ASRAF ALI MD ASRAF ALI (62)<br />
P SERVICE<br />
BEGUN BARI, SOUTH KERANI GONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1672385/ PId.321096 View<br />
MD ATIAR RAHMAN PRAMANIK MD ATIAR RAHMAN PRAMANIK (74)<br />
AGRICULTURE<br />
BARAICHARA, ISHURDI, PABNA<br />
PPNo.C1964629/ PId.321186 View<br />
<br />
MD BELLAL KHAN MD BELLAL KHAN (78)<br />
CULTIVATION<br />
BARABIL, SHAJADPUR, SIRAJ GANJ<br />
PPNo.C1809396/ PId.321256 View<br />
MD DBAID HOSSAIN MD DBAID HOSSAIN (22)<br />
BUSINESS<br />
HOUSE-36, FLAT-D-34, ROAD-3,, KHANMONDI, DHAKA<br />
PPNo.C1828607/ PId.321158 View<br />
<br />
MD DELOWAR HOSSAIN MD DELOWAR HOSSAIN (54)<br />
BUSINESS<br />
ALI PUR, MOKSUDPUR, GOPALGONJ<br />
PPNo.C1675910/ PId.321037 View<br />
MD EMAN MOLLA MD EMAN MOLLA (70)<br />
FARMER<br />
MAZGRAM, CHATMOHAR, PABNA<br />
PPNo.C1508846/ PId.X321258 View<br />
<br />
MD EMAN MOLLA MD EMAN MOLLA (70)<br />
FARMER<br />
MAZGRAM, CHATMOHAR, PABNA<br />
PPNo.C1508846/ PId.321258 View<br />
MD ESHAD ALI MD ESHAD ALI (44)<br />
BUSINESS<br />
20/0D/02, DISTLLARY ROAD, SUTRAPUR, DHAKA<br />
PPNo.C0150623/ PId.321124 View<br />
<br />
MD FARUQUE` MD FARUQUE` (49)<br />
BUSINESS<br />
KALIGONJ EAST PARA, SOUTH KARANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C0525545/ PId.321022 View<br />
MD GOLAM ROBBANI MD GOLAM ROBBANI (64)<br />
AGRICULTURE<br />
MOSHI PUR, SHAHZADPUR, SIRAJ GANJ<br />
PPNo.C1810050/ PId.321266 View<br />
<br />
MD HAMED ALI MONDOL MD HAMED ALI MONDOL (71)<br />
AGRICULTURE<br />
CHOWPA GARIA, TRISAL, MYMENSHING<br />
PPNo.C1935346/ PId.321178 View<br />
MD HARUN OR ROSHID MD HARUN OR ROSHID (28)<br />
BUSINESS<br />
MODDHO ARON KOLA, ISHURDI, PABNA<br />
PPNo.C1963004/ PId.321184 View<br />
<br />
MD HARUN UR RASHID MOLLAH MD HARUN UR RASHID MOLLAH (54)<br />
BUSINESS<br />
BAHER CHOR GOSH KATI, BABUGONJ, BARISAL<br />
PPNo.C1681029/ PId.321023 View<br />
MD HOSEN ALI SORDAR MD HOSEN ALI SORDAR (60)<br />
FARMER<br />
BESPATIATA, CHATMOHAR, PABNA<br />
PPNo.C1508291/ PId.321272 View<br />
<br />
MD IBRAHIM KHALIL MD IBRAHIM KHALIL (59)<br />
AGRICULTURE<br />
CHULDHORI, SHAJADPUR, SIRAJ GONJ<br />
PPNo.E0514329/ PId.321251 View<br />
MD IBRAHIM PK MD IBRAHIM PK (82)<br />
PABNA<br />
CHARGORGORI, ISHWARDI, PABNA<br />
PPNo.C1964888/ PId.321190 View<br />
<br />
MD ISHAQUE PK MD ISHAQUE PK (75)<br />
AGRICULTURE<br />
SUTA, ULLA PARA, SIRAJ GANJ<br />
PPNo.C1810634/ PId.321252 View<br />
MD JAMAL BASHAR MD JAMAL BASHAR (39)<br />
Business<br />
H- 13, CHUNKU, SOUTH KERANI GONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1682566/ PId.321115 View<br />
<br />
MD KALU SARDER MD KALU SARDER (60)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
CHUNKUTIA MIDDLE PARA, SOUTH KUAMIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1684100/ PId.321094 View<br />
MD MOFAZAL HOSSAIN MD MOFAZAL HOSSAIN (59)<br />
SERVICE (RETD)<br />
BAHAR MANTION, MALGRAM, BOGRA, BOGRA<br />
PPNo.C1416252/ PId.321194 View<br />
<br />
MD MOHOR ALI KHAN MD MOHOR ALI KHAN (52)<br />
FARMER<br />
SULTANPUR POSCHIM PARA, ISHURDI, PABNA<br />
PPNo.C1972411/ PId.321287 View<br />
MD MOHSIN ALI MD MOHSIN ALI (62)<br />
BUSINESS<br />
JOYGHAR, CHATMOHAR, PABNA<br />
PPNo.C1508293/ PId.321273 View<br />
<br />
MD MOKBUL HOSSAIN DHALI MD MOKBUL HOSSAIN DHALI (63)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
SAJANPUR, BHEDARGONG, SHARIATPUR<br />
PPNo.C1742553/ PId.321103 View<br />
MD MONIR HOSSAIN MD MONIR HOSSAIN (43)<br />
BUSINESS<br />
9 NO GOPIKISAN LANE,FLT-A/3, SUTRAPUR, DHAKA<br />
PPNo.C1666869/ PId.321033 View<br />
<br />
MD MOSHARRAF HOSSAIN BHUYA MD MOSHARRAF HOSSAIN BHUYA (57)<br />
BUSINESS<br />
45/D4, KALKANA GARLEN, SHAMPUR, DHAKA<br />
PPNo.C1663021/ PId.321054 View<br />
MD MOZAMMEL HAQUE MD MOZAMMEL HAQUE (68)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
CHACHKIA, BHANGOORA, PABNA<br />
PPNo.C1963006/ PId.321270 View<br />
<br />
MD MOZAMMEL HOSSAIN MD MOZAMMEL HOSSAIN (60)<br />
TEACHER<br />
TANGBARI, BERA, PABNA<br />
PPNo.C1964130/ PId.321264 View<br />
MD NABAB ALI MONDOL MD NABAB ALI MONDOL (58)<br />
R.T.D. FROM GOVT. SERVICE<br />
CHAR SAHAPUR, ISHURDI, PABNA<br />
PPNo.C1507864/ PId.321187 View<br />
<br />
MD NAMED ALI MONDOL (71)<br />
AGRICULTURE<br />
CHOWPA GARIA DHANI KHALA, TRISHAL, MYMENSINGH<br />
PPNo.C1935346/ PId.x321178 View<br />
MD NASIR UDDIN MD NASIR UDDIN (80)<br />
AGRICULTURE<br />
PARAGAON, RUPGONJ, NARAYANGONJ<br />
PPNo.C1680874/ PId.321091 View<br />
<br />
MD NAZIM UDDIN KHAN MD NAZIM UDDIN KHAN (73)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
CHURA, KALIGONJ, GAZIPUR<br />
PPNo.E0181752/ PId.321015 View<br />
MD NAZRUL ISLAM MD NAZRUL ISLAM (40)<br />
GOVT SERVICE<br />
SHAIHD ABDUR RASHID SAROK, JHENIDA SADAR, JHENIDA<br />
PPNo.C0048811/ PId.321231 View<br />
<br />
MD NIZAMUDDIN KHAN MD NIZAMUDDIN KHAN (72)<br />
GOVT.SERVICE (ARTIST)<br />
KHAN MANZIL, DAMODDYA, SHARIATPUR<br />
PPNo.V0456927/ PId.321183 View<br />
MD NUR ALI MD NUR ALI (38)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
KHEJUR BAGH, KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.Z0743711/ PId.321044 View<br />
<br />
MD NURUL ISLAM MD NURUL ISLAM (54)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
PACHASI PARA, NERTOKONA, NETROCONA<br />
PPNo.E0391683/ PId.321080 View<br />
MD NURUL ISLAM MD NURUL ISLAM (44)<br />
BUSINESS<br />
ARJUNTALA, BARURA, COMILLA<br />
PPNo.C1676644/ PId.321059 View<br />
<br />
MD NURUL ISLAM KHAN MD NURUL ISLAM KHAN (45)<br />
TEACHER (PRIVATE)<br />
JHANJHAIL, DURGAPUR, NETROKONA<br />
PPNo.E0413180/ PId.321215 View<br />
MD OMAR ALI MD OMAR ALI (56)<br />
BUSINESSS<br />
NISHI PUR, GANGNI, MEHARPUR<br />
PPNo.C1311059/ PId.321223 View<br />
<br />
MD RAFIQUL ISLAM MD RAFIQUL ISLAM (58)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
RAJENDRA PUR, KOTOWALI, COMILLA<br />
PPNo.E0422127/ PId.321013 View<br />
MD RAKIB HOSSAIN MD RAKIB HOSSAIN (31)<br />
JORNALIST<br />
10,EAST HUKKA PATTI, KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1660832/ PId.321021 View<br />
<br />
MD ROUSHON ALI MD ROUSHON ALI (75)<br />
CULTIVATION<br />
BARABIL, SHAJADPUR, SIRAJGANJ<br />
PPNo.C1809394/ PId.321267 View<br />
MD SADEQUE ALI MIAH MD SADEQUE ALI MIAH (54)<br />
TEACHER<br />
PATIATA, CHATMAHAR, PABNA<br />
PPNo.C1424998/ PId.321261 View<br />
<br />
MD SAMSUL HAQUE MD SAMSUL HAQUE (67)<br />
BUSINESS<br />
HOUSE NO-45, ROAD NO-01, KOEBORTO PARA, KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1687588/ PId.321289 View<br />
MD SHAFIQUL ISLAM MD SHAFIQUL ISLAM (58)<br />
R.T.D. GOVT. SERVICE<br />
UTTAR TRISH, MURADNAGAR, COMILLA<br />
PPNo.E0055780/ PId.321060 View<br />
<br />
MD SHAHID ALI PRAMANIK MD SHAHID ALI PRAMANIK (62)<br />
AGRICULTURE<br />
BRIANNAR, SHAHZADPUR, SIRAJGANJ<br />
PPNo.C1809854/ PId.321268 View<br />
MD SHAHIDUL ISLAM MD SHAHIDUL ISLAM (58)<br />
RETARIED GOVT SERVICE<br />
PAIK PARA MIRJA PUR, KOKSA, KUSTIA<br />
PPNo.C1642779/ PId.321083 View<br />
<br />
MD SHAHIDUL ISLAM MD SHAHIDUL ISLAM (58)<br />
R.GOVT SERVICE<br />
PAIKPARA, MIPJAPUR, KHOKSA, KUSHTIA<br />
PPNo.C1642779/ PId.321083 View<br />
MD SHAJAHAN ALI MD SHAJAHAN ALI (58)<br />
GOV SERVICE<br />
KALIAKAIR, ULLA PARA, SIRAJ GONJ<br />
PPNo.C1808304/ PId.321255 View<br />
<br />
MD SHOHIDUL ISLAM MD SHOHIDUL ISLAM (39)<br />
BUSINESS<br />
YOUSUF ALI KHAN SHOROK, KUSTIA, KUSTIA<br />
PPNo.C1642776/ PId.321236 View<br />
MD SOLAYMAN MINA MD SOLAYMAN MINA (45)<br />
GOVT SERVICE<br />
DAKATIA, KOTWALI, JESSORE<br />
PPNo.C1891950/ PId.321247 View<br />
<br />
MD SULAYMAN MD SULAYMAN (69)<br />
FARMER<br />
UZANPARA, TRISHAL, MYMENSINGH<br />
PPNo.C1945622/ PId.321278 View<br />
MD TAJER UDDIN MD TAJER UDDIN (65)<br />
CULTIVATION<br />
BARABIL, SHAHZADPUR, SIRAJGANJ<br />
PPNo.C1809392/ PId.321271 View<br />
<br />
MD UZZAL HOSSAIN MD UZZAL HOSSAIN (35)<br />
BUSINESS<br />
CHUNKUTIA ROAD, SOUTH KARANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.B1033070/ PId.321011 View<br />
MD YAKUB MD YAKUB (45)<br />
BUSINESS<br />
17 AGANOWAB, BEWARY, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.E0407499/ PId.321123 View<br />
<br />
MD YOUNUS ALI MD YOUNUS ALI (28)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
730, EAST JURAIN, SHAMPUR, DHAKA<br />
PPNo.C1648060/ PId.321063 View<br />
MD ZAMSHED ALI MD ZAMSHED ALI (51)<br />
GOV SERVICE<br />
BARABIL, SHAHZADPUR, SIRAJ GONJ<br />
PPNo.C1811740/ PId.321260 View<br />
<br />
MD ZANDAR ALI MD ZANDAR ALI (61)<br />
CULTIVATION<br />
NAGAR DALA, SHAHZADPUR, SIRAJGONG<br />
PPNo.C1809395/ PId.321263 View<br />
MD. ABDUL HAMID MD. ABDUL HAMID (80)<br />
FARMER<br />
SHALIHAR, GAAURIPUR, MYMENSINGH<br />
PPNo.C1932226/ PId.321203 View<br />
<br />
MD. IMAN ALI BEPARI MD. IMAN ALI BEPARI (74)<br />
FARMER<br />
ALOHARI (DURGA PUR), TRISHAL MYMENSINGH, MYMENSINGH<br />
PPNo.C1934018/ PId.321176 View<br />
MD. ISMAIL HOSSAIN MD. ISMAIL HOSSAIN (67)<br />
AGRICULTURE<br />
PARAGOAN, RUPGONG, NARAYANGONJ<br />
PPNo.C1680875/ PId.321090 View<br />
<br />
MD. RUHUL AMIN MD. RUHUL AMIN (54)<br />
BUSINESS<br />
SATRAPARA, TRISHAL, MYMENSINGH<br />
PPNo.C1934284/ PId.321180 View<br />
md.abdul motin md.abdul motin (55)<br />
retaired<br />
nowdea para, BHERAMARA, KUSTIA<br />
PPNo.c16642053/ PId.321222 View<br />
<br />
MD.ABDUL QUDDUS MOLLA MD.ABDUL QUDDUS MOLLA (71)<br />
AGRI LABOUR<br />
POCHA VITA, DAULATPUR, KUSTIA<br />
PPNo.C1642725/ PId.321224 View<br />
MD.ANSAR ALI MD.ANSAR ALI (65)<br />
AGRI LABOUR<br />
MOT PARA, KUSTIA, KUSTIA<br />
PPNo.C1642727/ PId.321226 View<br />
<br />
MD.ARSHAD MIAH SARKAR MD.ARSHAD MIAH SARKAR (51)<br />
BUSINESS<br />
CHUNKUTIA WEST PARA, KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1676643/ PId.321048 View<br />
MD.FAZLUL HOQUE MD.FAZLUL HOQUE (58)<br />
RETIRED<br />
DOPTIAR, NAGAR PUR, TANGAIL<br />
PPNo.E0403511/ PId.321243 View<br />
<br />
MD.HAIDAR HAWLADAR MD.HAIDAR HAWLADAR (59)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
DASOTTOR, TONGIBARI, MUNSHIGONJ<br />
PPNo.E0105621/ PId.321057 View<br />
MD.KARIM UZZAMAN MD.KARIM UZZAMAN (59)<br />
FARMER<br />
97/1 SPUTH CENTER ROAD, KHULNA, KHULNA<br />
PPNo.C1487482/ PId.321234 View<br />
<br />
MD.MOKBUL HOSSAIN DHALI MD.MOKBUL HOSSAIN DHALI (54)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
SAJAN PUR, BHEDARGONJ, SHARIATPUR<br />
PPNo.C1742553/ PId.X321102 View<br />
MD.SHAHIDUL ISLAM MD.SHAHIDUL ISLAM (57)<br />
RETIRED<br />
BAMAN PARA, BHERAMARA, KUSTIA<br />
PPNo.C1643293/ PId.321241 View<br />
<br />
MD.TOWHIDUL KARIM MD.TOWHIDUL KARIM (45)<br />
BUSINESS<br />
TATIBONDO,EKTERPUR, MIRPUR, KUSHTIA<br />
PPNo.C1642596/ PId.321225 View<br />
MISSES AYSHA KHATUN MISSES AYSHA KHATUN (52)<br />
HOUSEWIFE<br />
JOYGHAR, CHATMOHAR, PABNA<br />
PPNo.C1508296/ PId.321274 View<br />
<br />
MOHAMMAD ABDUL AUAL MOHAMMAD ABDUL AUAL (45)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
HOUSE#22,WEST BANIA KHAMAR, SONADANGA, KHULNA<br />
PPNo.C1485859/ PId.321218 View<br />
MOHAMMAD ABDUL KADER (67)<br />
BUSTNESS<br />
21/22/2 BECHARAM BEORI, KOTWALI, DHAKA<br />
PPNo.C1680623/ PId.x321166 View<br />
<br />
MOHAMMAD ABDUL KADER MOHAMMAD ABDUL KADER (67)<br />
BUSINESS<br />
21/2212 BECHARAM DEORI, KOTWULI, DHAKA<br />
PPNo.C1680623/ PId.321166 View<br />
MOHAMMAD ABU BAKAR SIDDIQUE MOHAMMAD ABU BAKAR SIDDIQUE (38)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
ULUBARIA, MATHBARIA, PIROJPUR<br />
PPNo.C1670012/ PId.321042 View<br />
<br />
MOHAMMAD ABUL KALAM MOHAMMAD ABUL KALAM (60)<br />
BUSTNESS<br />
KAYEMKHOLA, PABNA, PABNA<br />
PPNo.C1963258/ PId.321269 View<br />
MOHAMMAD ALI MOHAMMAD ALI (54)<br />
FARMER<br />
BOYARDIGHI, SHAJAHANPUR, BOGRA<br />
PPNo.C1414450/ PId.321196 View<br />
<br />
MOHAMMAD AMZAD MOHAMMAD AMZAD (59)<br />
<br />
77 KA SHANKIPARA, SADAR, MYMENSHING<br />
PPNo.C1932600/ PId.321212 View<br />
MOHAMMAD AZHAR MOHAMMAD AZHAR (43)<br />
BUSINESS<br />
HOUSE-5/3, FLAT-D-B, GIRDA URDU ROOD, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.C1673098/ PId.321120 View<br />
<br />
MOHAMMAD EAKUB ALI SARDAR MOHAMMAD EAKUB ALI SARDAR (66)<br />
BUSINESS<br />
PEPRE, PABNA, PABNA<br />
PPNo.C1963636/ PId.321276 View<br />
MOHAMMAD GOROR ULLAH MOHAMMAD GOROR ULLAH (32)<br />
BUSINESS<br />
2 HAFIJ ULLAH ROAD, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.E0473529/ PId.321165 View<br />
<br />
MOHAMMAD IDRIS HOSSIN MOHAMMAD IDRIS HOSSIN (55)<br />
BUSINESS<br />
FALDA CHANDIPUR, VOYAPUR, TANGAIL<br />
PPNo.E0461472/ PId.321199 View<br />
MOHAMMAD JAHANGIR ALAM MOHAMMAD JAHANGIR ALAM (39)<br />
BUSINESS<br />
MEMBER BARI, BEJGAON, SOTO BEJGAON, SREE NAGAR, MUNSHIGONJ<br />
PPNo.E0383330/ PId.321017 View<br />
<br />
MOHAMMAD MANNAN DHALI MOHAMMAD MANNAN DHALI (65)<br />
FARMER<br />
ADDASON, DAMUDDA, SHARIATPUR<br />
PPNo.C0719142/ PId.321101 View<br />
MOHAMMAD NADIM MOHAMMAD NADIM (34)<br />
BUSINESS<br />
RASULPUR, KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.E0394054/ PId.321125 View<br />
<br />
MOHAMMAD RAFI UDDIN MOHAMMAD RAFI UDDIN (57)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
ALINAGAR, BHOLA, BHOLA<br />
PPNo.C1859232/ PId.321009 View<br />
MOHAMMAD SAIFUL ISLAM MOHAMMAD SAIFUL ISLAM (44)<br />
BUSINESS<br />
5/2, SHEIKH SHAHEB BAZAR, AZIMPUR, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.C1678307/ PId.321146 View<br />
<br />
MOHAMMAD SHAROZ NADIM SHAMSI MOHAMMAD SHAROZ NADIM SHAMSI (28)<br />
BUSINESS<br />
40 FRIEND SHIP MARKET, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.Q0390962/ PId.321143 View<br />
MOHAMMAD TARA MIAH MOHAMMAD TARA MIAH (53)<br />
FARMER<br />
ISLAMA BAD, GORIPUR, MYMENSINGH<br />
PPNo.C1937917/ PId.321207 View<br />
<br />
MOHAMMED AMIR SHARIF MOHAMMED AMIR SHARIF (38)<br />
BUSINESS<br />
165 JAGANNATH, MAHA ROAD, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.Q0092287/ PId.321141 View<br />
MOHAMMED ASIM MOHAMMED ASIM (32)<br />
BUSINESS<br />
165 JAGANNATH DAHA POAD, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.Q0782667/ PId.321135 View<br />
<br />
MOHAMMED AZIZUL ISLAM MOHAMMED AZIZUL ISLAM (51)<br />
ELECTRICIAN<br />
KHAJUR BAGH, KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.R0629467/ PId.321003 View<br />
MOHAMMED BOKUL HOSSAIN MOHAMMED BOKUL HOSSAIN (57)<br />
GOVT SERVICE<br />
ADARSHA PARA, JHENIDA, JHENIDA<br />
PPNo.C1489997/ PId.321238 View<br />
<br />
MOHAMMED HASAN BABLU MOHAMMED HASAN BABLU (42)<br />
BUSINESS<br />
AGARBAB DEWRI MOULI BAZAR, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.P0618073/ PId.321122 View<br />
MOHAMMED HIRO MOHAMMED HIRO (44)<br />
BUSINESS<br />
HOUSE-64, JOGINAGOR, SUTRAPUR, DHAKA<br />
PPNo.C1672778/ PId.321018 View<br />
<br />
MOHAMMED HOHSIN MOHAMMED HOHSIN (60)<br />
BUSINESS<br />
1453 (h-11, L-3) PATENBAGH, SOUTH DONIA, SHAMPUR, DHAKA<br />
PPNo.C1675576/ PId.321148 View<br />
MOHAMMED KHALID MOHAMMED KHALID (35)<br />
BUSINESS<br />
218/2, J. N SHAHA ROAD, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.W0085167/ PId.321139 View<br />
<br />
MOHAMMED RAFIUDDIN MOHAMMED RAFIUDDIN (60)<br />
<br />
ALI NAGAR, BHOLA, BHOLA<br />
PPNo.C1859232/ PId.X321009 View<br />
MOHAMMED SHAHID HOSSAIN MOHAMMED SHAHID HOSSAIN (59)<br />
BUSINESS<br />
155/1 AZIMPUR ROAD, LALBAG, DHAKA<br />
PPNo.Z0124176/ PId.321170 View<br />
<br />
MOHANAD HARUNOR RASHID MOHANAD HARUNOR RASHID (41)<br />
RETIRED<br />
AMDAH, DAULATPUR, KUSTIA<br />
PPNo.C1642870/ PId.321232 View<br />
MOHD.SELIM MOHD.SELIM (57)<br />
BUSINESS<br />
DAMODYA, DAMODYA, SHARIATPUR<br />
PPNo.c0178089/ PId.321098 View<br />
<br />
MOLLAH RUHUL ALAM MOLLAH RUHUL ALAM (56)<br />
GOVT SERVICE<br />
DUMAIN, MADHUKHALI, FARIDPUR<br />
PPNo.E0401204/ PId.321244 View<br />
MOSA ROKEYA BEGUM MOSA ROKEYA BEGUM (32)<br />
HOUSE WIFE<br />
ANWAR MIAR BARI KALIGONJ EAST PARA, KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1680535/ PId.321046 View<br />
<br />
MOSAMMAT KHORSEDA BEGUM MOSAMMAT KHORSEDA BEGUM (49)<br />
HOUSE WIFE<br />
CHUNKUTIA MIDDLE PARA, SOUTH KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1667629/ PId.321002 View<br />
MOSAMMAT SUFIA KHATUN MOSAMMAT SUFIA KHATUN (47)<br />
HOUSE WIFE<br />
DUMAIN, MADHUKHALI, FARIDPUR<br />
PPNo.E0404012/ PId.321245 View<br />
<br />
MOST FAMIMA KHANOM MOST FAMIMA KHANOM (34)<br />
HOUSE WIFE<br />
FULDI, KALIGONJ, GAZIPUR<br />
PPNo.E0184092/ PId.321117 View<br />
MOST NELUFA YESMIN MOST NELUFA YESMIN (42)<br />
HOUSE WIFE<br />
POSCHIM TENGRI BABLI PARA, ISHWARDI, PABNA<br />
PPNo.C1965458/ PId.321192 View<br />
<br />
MOST RAZIA BEGUM MOST RAZIA BEGUM (50)<br />
HOUSE WIFE<br />
UTTAR TRISH, MURADNAGAR, COMILLA<br />
PPNo.E0055781/ PId.321061 View<br />
MOYEN UDDIN MOYEN UDDIN (39)<br />
AGRICULTURE<br />
SINRAIL, SINRAIL, MYMENSINGH<br />
PPNo.C1934939/ PId.321198 View<br />
<br />
MR AFRAZ MR AFRAZ (47)<br />
BUSINESS<br />
165 JAGANATH ,SAHA ROAD, LALABAGH, DHAKA<br />
PPNo.Q0390963/ PId.321133 View<br />
MRS REZINA HOSSAIN MRS REZINA HOSSAIN (48)<br />
HOUSE WIFE<br />
MALGRAM MADDHA PARA, BOGRA, BOGRA<br />
PPNo.C1416243/ PId.321195 View<br />
<br />
MRS SALEHA BEGUM MRS SALEHA BEGUM (48)<br />
HOUSE WIFE<br />
THOOIGHON, SIOEGDIKLAN, MUNSHIGANJ<br />
PPNo.Q0796246/ PId.321007 View<br />
MRS SUBRATUN MRS SUBRATUN (61)<br />
HOUSE WIFE<br />
PURBO MANDAIL, UTTAR KHALER, KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1667505/ PId.321127 View<br />
<br />
MRS.ANAR KALI MRS.ANAR KALI (46)<br />
HOUSE WIFE<br />
HOUSE-1,ROAD NO-03 EAST ROSUL PUR, KAMRANGIR CHAR, DHAKA<br />
PPNo.R0516423/ PId.321089 View<br />
MS MAKSUDA BEGUM MS MAKSUDA BEGUM (54)<br />
HOUSE WIFE<br />
KAJESKORI, BHEDARGONJ, SHARIATPUR<br />
PPNo.C1741218/ PId.321105 View<br />
<br />
MST RASULUN NESA MST RASULUN NESA (56)<br />
HOUSE WIFE<br />
PAIKSHA, NABABGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1679247/ PId.321032 View<br />
MST YASIMIN BEGUM MST YASIMIN BEGUM (38)<br />
HOUSE WIFE<br />
LOSMONGONJ CHOR RAGUNATH PUR, KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1684098/ PId.321093 View<br />
<br />
MST HASINA HAQUE MST HASINA HAQUE (47)<br />
HOUSE WIFE<br />
135/3 GIRJNATH MAJUMDER SARAK, KUSTIA, KUSTIA<br />
PPNo.C1642619/ PId.321229 View<br />
MST MAHELA KHATUN MST MAHELA KHATUN (40)<br />
HOUSE WIFE<br />
MOSHIPUR, SHAJADPUR, SIRAJ GANJ<br />
PPNo.C1812689/ PId.321250 View<br />
<br />
MST NSIMA BEGUM MST NSIMA BEGUM (43)<br />
HOUSE WIFE<br />
BAHER CHOR GOSHKATI, BABU GONJ, BARISAL<br />
PPNo.C1681024/ PId.321024 View<br />
MST SHAZEDA KHATUN MST SHAZEDA KHATUN (59)<br />
R.G. SERCICE<br />
KHOKSA, KHOKSA, KUSHTIA<br />
PPNo.C1643405/ PId.321085 View<br />
<br />
MST TAHMINA BEGUN MST TAHMINA BEGUN (62)<br />
HOUSE WIFE<br />
MODDHOARON KOLA, ISHURDI, PABNA<br />
PPNo.C1963003/ PId.321185 View<br />
MST YASIMIN BEGUM MST YASIMIN BEGUM (39)<br />
HOUSE WIFE<br />
LOSMONGONJ CHOR RAGHU NATH PUR, KUAMGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1684098/ PId.X321093 View<br />
<br />
MST ZAMELA KHATUN MST ZAMELA KHATUN (67)<br />
HOUSE WIFE<br />
PATIATA, CHATMOHAR, PABNA<br />
PPNo.C1508893/ PId.321262 View<br />
MST. SUFIA BEGUM MST. SUFIA BEGUM (48)<br />
HOUSE WIFE<br />
MUT PARA, KUSTIA, KUSTIA<br />
PPNo.C1642729/ PId.321227 View<br />
<br />
MST.RABIYA BEGUM MST.RABIYA BEGUM (72)<br />
HOUSE WIFE<br />
KALABAGAN, JHENIDHA, JHENIDHA<br />
PPNo.C1490092/ PId.321240 View<br />
MUHAMMAD ABU BAKAR SIDDIQ MUHAMMAD ABU BAKAR SIDDIQ (63)<br />
R.T.D. GOVT. SERVICE<br />
HOSPITAL GATE, GOURIPUR, MYMENSINGH<br />
PPNo.C1938273/ PId.321205 View<br />
<br />
MUJIBUR RAHMAN MUJIBUR RAHMAN (59)<br />
BUSINESS<br />
166/7 JAGANNATH SHAHA ROAD, LALABAGH, DHAKA<br />
PPNo.A0965435/ PId.321155 View<br />
NAHMED AKTER NAHMED AKTER (35)<br />
HOUSE WIFE<br />
4/1 HAFIZ ULLA ROAD, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.Q0392869/ PId.321168 View<br />
<br />
NARGIS BEGUM NARGIS BEGUM (52)<br />
HOUSE WIFE<br />
1793/1 HAJI KALI SAROAR EAST JURAIN, KODOMTOLI, DHAKA<br />
PPNo.C1662561/ PId.321053 View<br />
NAZMA BEGUM NAZMA BEGUM (62)<br />
HOUSE WIFE<br />
307/B JAGANNATH SHAHA ROAD, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.C1678808/ PId.321161 View<br />
<br />
NAZMA ISLAM NAZMA ISLAM (36)<br />
HOUSE WIFE<br />
KHAJUR BAG, SOUTH KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1676901/ PId.321006 View<br />
NUR NOHAMMED NUR NOHAMMED (80)<br />
RETIRED PERSON<br />
HOUSE-73, GOLI NO-6, RUPNAGAR CHORKALIGONJ,, SOUTH KERANI GONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1677857/ PId.321075 View<br />
<br />
QAZI ABU SOHEL QAZI ABU SOHEL (78)<br />
BUSINESS<br />
KALI GONJ WEST PARA, KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1687721/ PId.321086 View<br />
RAHIMA BEGUM RAHIMA BEGUM (62)<br />
PRIVATE SERVICE<br />
CHASI BALI GHAO, TONGIBARI, MUNSHIGANJ<br />
PPNo.E0105959/ PId.321151 View<br />
<br />
RAHIMA KHANAM KANTA RAHIMA KHANAM KANTA (13)<br />
STUDENT<br />
12, ADIDHARA ISPAHANI, AGANAGAR, KARANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1677768/ PId.321030 View<br />
RASHIDA BEGUM RASHIDA BEGUM (49)<br />
HOUSE WIFE<br />
H#B3,WARD-3,ROAD-3, SOUTH KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1682568/ PId.321039 View<br />
<br />
RAWSANARA BEGUM RAWSANARA BEGUM (54)<br />
HOUSE WIFE<br />
SIDDYA, DAMODDYA, SHARIATPUR<br />
PPNo.C1742950/ PId.321106 View<br />
REHANA BEGUM REHANA BEGUM (53)<br />
TEACHER (PRIVATE)<br />
HOSPITAL GATE, GOURIPUR, MYMENSINGH<br />
PPNo.C1938284/ PId.321206 View<br />
<br />
REHENA HOSSAIN REHENA HOSSAIN (48)<br />
HOUSE WIFE<br />
ADARSHA PARA, JHENIDHA, JHENIDHA<br />
PPNo.C490133/ PId.321239 View<br />
REJIA BEGUM REJIA BEGUM (67)<br />
HOUSE WIFE<br />
HOUSE-112, BAPARI BARI TOILKAI, TONGIBARI, MUNSHIGONJ<br />
PPNo.C1680036/ PId.321078 View<br />
<br />
REZIA BEGUM REZIA BEGUM (54)<br />
HOUSE WIFE<br />
CHUN KUTIA MIDDLE PARA, SOUTH KARIMGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1684099/ PId.321095 View<br />
ROKEYA BEGUM ROKEYA BEGUM (50)<br />
HOUSE WIFE<br />
2/1, JOMIDARI, KACMARE GOLLI, NARAYAGONJ, NARAYAGONJ<br />
PPNo.E0367565/ PId.321132 View<br />
<br />
ROKEYA BEGUM ROKEYA BEGUM (54)<br />
HOUSE WIFE<br />
H#15/GA,JAGANNATH SHAH ROAD, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.C1677859/ PId.X321068 View<br />
ROKEYA BEGUM ROKEYA BEGUM (48)<br />
HOUSE WIFE<br />
HOUSE-15/GA, JAGAN NATH SHAH ROAD, LAL BAGH, DHAKA<br />
PPNo.C1677859/ PId.321068 View<br />
<br />
RUHUL AMIN RUHUL AMIN (51)<br />
FARMER<br />
KADOMTOLI, TARAKANDI, MYMENSHING<br />
PPNo.C1945520/ PId.321202 View<br />
SADIA KHALID SADIA KHALID (28)<br />
HOUSE WIFE<br />
218/2, JAGANNAT SHAH ROAD, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.W0264226/ PId.321140 View<br />
<br />
SAFALI BEGUM SAFALI BEGUM (47)<br />
HOUSE WIFE<br />
12,SKDAS ROAD, SUTRAPUR, DHAKA<br />
PPNo.C0168493/ PId.321004 View<br />
SAIYED RAFIQUE HOSSAIN BULBAN SAIYED RAFIQUE HOSSAIN BULBAN (67)<br />
BUSINESS<br />
48, LALBAGH ROAD, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.E0387415/ PId.321147 View<br />
<br />
SAMINA BEGUM SAMINA BEGUM (52)<br />
HOUSE WIFE<br />
108, BEPARI BARI, TONGI BARI, MUNSHIGONJ<br />
PPNo.C1680038/ PId.321077 View<br />
SAMREEN NAZ SAMREEN NAZ (27)<br />
HOUSE WIFE<br />
165 JAGANNATH SAHA ROAD, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.Q0785922/ PId.321136 View<br />
<br />
SAMSUNNAHAR KHAN SAMSUNNAHAR KHAN (42)<br />
INDUSTRIALIST<br />
55 SIDDHESWARI LANE SUN TOWER, RAMNA, DHAKA<br />
PPNo.A0161578/ PId.321164 View<br />
SATARA BEGUM SATARA BEGUM (41)<br />
HOUSE WIFE<br />
HOUSE-14, MANDAIL EAST MANDAIL, KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1666098/ PId.321128 View<br />
<br />
SHABANA AFROZ SHABANA AFROZ (41)<br />
HOUSE WIFE<br />
165 J.N SAHA ROAD, LALBAG, DHAKA<br />
PPNo.C1672388/ PId.321134 View<br />
SHAH ABUL QUSSEM SHAH ABUL QUSSEM (49)<br />
R.T.D. FROM GOVT. SERVICE<br />
KALIPUR BAGAN, GOURIPUR, MYMENSHING<br />
PPNo.C1936287/ PId.321210 View<br />
<br />
SHAHIDUL ISLAM SHAHIDUL ISLAM (49)<br />
<br />
KHAJUR BAG, SOUTH KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C0841649/ PId.321005 View<br />
SHAKIBUR RAHMAN SHAKIBUR RAHMAN (28)<br />
BUSTNESS<br />
38 LALITMOHAM DASLAME, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.Q0081536/ PId.321152 View<br />
<br />
SHANAZ PARVEEN SHANAZ PARVEEN (32)<br />
HOUSE WIFE<br />
165 J. N. SHAHA ROAD, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.C1673287/ PId.321142 View<br />
SHATHI KHAN SHATHI KHAN (33)<br />
HOUSE WIFE<br />
9 NO GOPIKISAN, SUTRAPUR, DHAKA<br />
PPNo.C1667359/ PId.321034 View<br />
<br />
SHEIKH ABDUR RAHAMAN SHEIKH ABDUR RAHAMAN (64)<br />
COULTIVITATION<br />
ATTAKI, FAKIRUAT, BAGHARHAT<br />
PPNo.C1484066/ PId.321235 View<br />
SHEIKH ERFAN ALI SHEIKH ERFAN ALI (57)<br />
Business<br />
CHAR KUTUB SOUTH CHUNKUTIA, SOUTH KARANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1680591/ PId.321047 View<br />
<br />
SHEIKH MOHAMMAD ASHRAF UL ALAM SHEIKH MOHAMMAD ASHRAF UL ALAM (62)<br />
ADVOCATE<br />
KHOKSA, KHOKSA, KUSHTIA<br />
PPNo.C1643395/ PId.321084 View<br />
SHEIKH SHAMSU MIAH SHEIKH SHAMSU MIAH (59)<br />
BUSINESS<br />
HAKIM UDDIN MATUR DANGI, SADARPUR, FARIDPUR<br />
PPNo.C1684466/ PId.321079 View<br />
<br />
SIDDQUR RAHAMAN SIDDQUR RAHAMAN (54)<br />
BUSINESS<br />
H-12 KHAJUR BAGH MIRERBAGH, SOUTH KERANIGONJ, DHAKA<br />
PPNo.C1686498/ PId.321036 View<br />
SIRAJ ALI SHEKH SIRAJ ALI SHEKH (64)<br />
FARMER<br />
MESER TIKI, TRISHAL, MYMENSINGH<br />
PPNo.C1940713/ PId.321181 View<br />
<br />
SURUJ MIAH SURUJ MIAH (54)<br />
BUSINESS<br />
CHAR KALI, KOTWALI, MYMENSHING<br />
PPNo.C1937916/ PId.321216 View<br />
TAHURA BEGUM BABY TAHURA BEGUM BABY (52)<br />
GOV SERVICE<br />
PUCHASIPARA, NETROCONA, NETROCONA<br />
PPNo.X0624306/ PId.321081 View<br />
<br />
TAJUL ISLAM TAJUL ISLAM (49)<br />
BUSINESS<br />
MONEHER, CHANDPUR, CHANDPUR<br />
PPNo.X0988218/ PId.321129 View<br />
THAMINA SHAROZ THAMINA SHAROZ (27)<br />
HOUSE WIFE<br />
HOUSE-1, ROAD-10, MOHAMMADIA HOUSING SOCIETY, ADABAR, DHAKA<br />
PPNo.E0397848/ PId.321144 View<br />
<br />
TOMIGUDDIN TOMIGUDDIN (67)<br />
BUSINESS<br />
307/B JAGANNATH SAHA ROAD, LALBAGH, DHAKA<br />
PPNo.C1678809/ PId.321160 View<br />
YUSRA SHAKIB YUSRA SHAKIB (20)<br />
HOUSE WIFE<br />
HOUSE -4/3, ROAD-5, IST FLOOR, DHANMONDI, DHAKA<br />
PPNo.E0126937/ PId.321153 View<br />
<br />
ZULAKHA BEGUM ZULAKHA BEGUM (70)<br />
HOUSE WIFE<br />
EASLAMPUR, BEADARGONJ, SHARIATPUR<br />
PPNo.</div>
Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-84247490871142771932009-11-06T09:46:00.007+07:002009-11-06T09:56:16.340+07:00HAJJ 2009 ALL PHOTO<a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEheMUV0FEMisyUATAn3KfrhJGCoD8HY_wIT_2DtOtHdvlmbMjRdJwl0T8kI3qSj7U04ts_-Q-OqphDsa8L7z6FBQv3lj0ZdelZafwkFERkwakU7NEYP-vIoCLTK9JhWr5uWqJFYVLAgfYY/s1600-h/321034.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEheMUV0FEMisyUATAn3KfrhJGCoD8HY_wIT_2DtOtHdvlmbMjRdJwl0T8kI3qSj7U04ts_-Q-OqphDsa8L7z6FBQv3lj0ZdelZafwkFERkwakU7NEYP-vIoCLTK9JhWr5uWqJFYVLAgfYY/s320/321034.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400818939480802530" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhZ52aGRJYG8eAaCeUx3dB8aEYg31CPwBobrkKyvQRfEbDwjCq1KvZk_E1t3DEsGKW4Vohy_YBcSBseqxV2QqYIWkfvu-zIkZKTBw3T4B6Tx6mt5cJ2qdiiqLJAAMUnigbcmHfKrcF2oiI/s1600-h/321033.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhZ52aGRJYG8eAaCeUx3dB8aEYg31CPwBobrkKyvQRfEbDwjCq1KvZk_E1t3DEsGKW4Vohy_YBcSBseqxV2QqYIWkfvu-zIkZKTBw3T4B6Tx6mt5cJ2qdiiqLJAAMUnigbcmHfKrcF2oiI/s320/321033.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400818935027333570" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj2BRiInMQE_oIA8XQEpJSumOuwLmoCjUhLmvmJWkjXxa602XBaDcq5kEZMtHdTImkR6QGuy4bVnJYrqTBrktqRYmDDGpky_75j4qiNERCbguJVg_9CZQZ7yomjwjpeEMnvTIO5GXIznlw/s1600-h/321032.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj2BRiInMQE_oIA8XQEpJSumOuwLmoCjUhLmvmJWkjXxa602XBaDcq5kEZMtHdTImkR6QGuy4bVnJYrqTBrktqRYmDDGpky_75j4qiNERCbguJVg_9CZQZ7yomjwjpeEMnvTIO5GXIznlw/s320/321032.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400818931546491842" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgrGoQmItZ1ATAwa45_n9-KZctITkYAJVl450pYi1VIvqTicA8Fty4T_h8298prfsgZnUEtDZ6kv_N3N2Wk-sMI81WbP1-xvpAtTey7GbgrSrFcIoJBsqTO4tgaeEw_iEaygbcR3OXVaSM/s1600-h/321031.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgrGoQmItZ1ATAwa45_n9-KZctITkYAJVl450pYi1VIvqTicA8Fty4T_h8298prfsgZnUEtDZ6kv_N3N2Wk-sMI81WbP1-xvpAtTey7GbgrSrFcIoJBsqTO4tgaeEw_iEaygbcR3OXVaSM/s320/321031.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400818926871648898" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEha_WiIaVZr4GhyphenhyphenAMyO2iGRrldlG-_bspOjrAwCNuQGp_BmvjVrkqzLUJpRXg6o1sXh7qmtAoDqFb-vHdJ_jwddZxazUBc_3LBOiswaFsmE8YBVw5JZiA_T-n7YoBTB8RAi1c-V7WCs4Bo/s1600-h/321030.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEha_WiIaVZr4GhyphenhyphenAMyO2iGRrldlG-_bspOjrAwCNuQGp_BmvjVrkqzLUJpRXg6o1sXh7qmtAoDqFb-vHdJ_jwddZxazUBc_3LBOiswaFsmE8YBVw5JZiA_T-n7YoBTB8RAi1c-V7WCs4Bo/s320/321030.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400818923670402466" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhUlcWMZCKaB_VGKPViFF4EsvWghhgyebxzjOo8mOjfgPyhAMUGbMaU3-enCSwKEu_TmDyyol2HI8RG8SbNGqqjdbjj3n38t80HW3NasrEjkHcbTEm6L8RjuE_f0PXfveeJu6rTzw859n0/s1600-h/321029.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhUlcWMZCKaB_VGKPViFF4EsvWghhgyebxzjOo8mOjfgPyhAMUGbMaU3-enCSwKEu_TmDyyol2HI8RG8SbNGqqjdbjj3n38t80HW3NasrEjkHcbTEm6L8RjuE_f0PXfveeJu6rTzw859n0/s320/321029.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400818510406086642" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhGmCtbAs7t6kdvXXjpd_MakhXRPSGwYIHeJ_fYUMhAb28sEW4WQ-8WIiS0-MIIG3XNDLoLFsPTAjWrSbHHw8lylNpUgDXdEjN0dpVYH1x-HjrfSqSluBEH0uV7CZg04Wpg__C53a4I5OE/s1600-h/321028.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 165px; height: 185px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhGmCtbAs7t6kdvXXjpd_MakhXRPSGwYIHeJ_fYUMhAb28sEW4WQ-8WIiS0-MIIG3XNDLoLFsPTAjWrSbHHw8lylNpUgDXdEjN0dpVYH1x-HjrfSqSluBEH0uV7CZg04Wpg__C53a4I5OE/s320/321028.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400818509059869538" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgR-kcrlaaiOpBQwvT3qqBvJUOEzhBASUBHNrz-z6MJOvRt4_3YWwIa8GGHRk84vjejKtHmdaSWFPJiD9vqSDrV5exPZX12e2ov3r2CIsss1WDG6vjhCQI_h1mhFYgcxZ12splFJvwf298/s1600-h/321027.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgR-kcrlaaiOpBQwvT3qqBvJUOEzhBASUBHNrz-z6MJOvRt4_3YWwIa8GGHRk84vjejKtHmdaSWFPJiD9vqSDrV5exPZX12e2ov3r2CIsss1WDG6vjhCQI_h1mhFYgcxZ12splFJvwf298/s320/321027.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400818502713820994" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjV4zaN8VuglelS_YoHRFi2lnSDKT89QQdjGUrEA1-_XhtuUCLK-TM3ESsqmD78Lb1cpdyJVT-Ncxl2QNK_1xVtDOUfx5Bj41vawzpwj0FEKBX-iN_o0lsxRbM84u7YWfeRX4QoomrxogA/s1600-h/321026.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjV4zaN8VuglelS_YoHRFi2lnSDKT89QQdjGUrEA1-_XhtuUCLK-TM3ESsqmD78Lb1cpdyJVT-Ncxl2QNK_1xVtDOUfx5Bj41vawzpwj0FEKBX-iN_o0lsxRbM84u7YWfeRX4QoomrxogA/s320/321026.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400818503709104018" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj4ugnQG-aID9clb7A6SLK6tIxybrIC-NW5bsLVJfia9hppxWIGZcFWjaM9SxeRj59_R1CEpOtuzdivj6tbJBm9RmvHrcWlBJsSelY35nQ43supiXGvQARnOqyjwSbpeUUQydgNFpVQjz4/s1600-h/321025.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj4ugnQG-aID9clb7A6SLK6tIxybrIC-NW5bsLVJfia9hppxWIGZcFWjaM9SxeRj59_R1CEpOtuzdivj6tbJBm9RmvHrcWlBJsSelY35nQ43supiXGvQARnOqyjwSbpeUUQydgNFpVQjz4/s320/321025.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400818501192926130" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgdLBcfyTTekObbxwNcdHX0225YK6eRzm2rzHBrQGZ9i8yQyLSNY8_SvasBuuOeW0tqZ4pkrP77x5n7OMHMa_Vb27w_Olgn852Xm7bpWZmbUakDwrT3gXNSBwPIje3BIZC48dikQFWnOAM/s1600-h/321024.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgdLBcfyTTekObbxwNcdHX0225YK6eRzm2rzHBrQGZ9i8yQyLSNY8_SvasBuuOeW0tqZ4pkrP77x5n7OMHMa_Vb27w_Olgn852Xm7bpWZmbUakDwrT3gXNSBwPIje3BIZC48dikQFWnOAM/s320/321024.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400818153710789570" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgXTTwDhNn9v2eCSBrUgVIDnqPf9OKmoUj2TQPLNAfprxDusCm95dH6T0zJV8R8G2Br3RkJ8iMGmowJXUpOPSskh7ivQeXt495r9csDp527XEhYy_klw2VfOufQVK4mgn4F7q2yrecyfJI/s1600-h/321023.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgXTTwDhNn9v2eCSBrUgVIDnqPf9OKmoUj2TQPLNAfprxDusCm95dH6T0zJV8R8G2Br3RkJ8iMGmowJXUpOPSskh7ivQeXt495r9csDp527XEhYy_klw2VfOufQVK4mgn4F7q2yrecyfJI/s320/321023.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400818149655419890" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhUm_RZGtHgA6qz64qJDMdGFdM_hO5wzyUu4eKLOvmAAc5h4N7rBSS9dmES_GmGgMy5OkooiMfwoy7gKX3sK9YEfXPou6vwK0SRf2_ZYZRaIGJsPemWGnJRp-EkL2QMIaj1_HMm6cjbnus/s1600-h/321022.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhUm_RZGtHgA6qz64qJDMdGFdM_hO5wzyUu4eKLOvmAAc5h4N7rBSS9dmES_GmGgMy5OkooiMfwoy7gKX3sK9YEfXPou6vwK0SRf2_ZYZRaIGJsPemWGnJRp-EkL2QMIaj1_HMm6cjbnus/s320/321022.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400818146858005170" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhrTq1cnaPr2waMHxPYTqy1rAFfvpYUYdIBRfpY-pUsdlHVh0gupomZzy85Q1YyGqR1FAHhx_sSwAcCgo4Mt8PEaPv2TM-9tIx4y4scAFHU43ZqtGi0EDcDqaT1oHQWa3G4AHfFt_11sJU/s1600-h/321021.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhrTq1cnaPr2waMHxPYTqy1rAFfvpYUYdIBRfpY-pUsdlHVh0gupomZzy85Q1YyGqR1FAHhx_sSwAcCgo4Mt8PEaPv2TM-9tIx4y4scAFHU43ZqtGi0EDcDqaT1oHQWa3G4AHfFt_11sJU/s320/321021.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400818149063087570" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi2wkbhdrKaDQGcZqNxK48PvmtHnEsb3RvGKUSt8QBRdwuAZG3iXfC7xSoxWga17lVGaWutdE2OweghycDFKhoZAcn_2WJn-O12v8G60XY9EA7MqYcv_Uw7eVHI_O9uZhQR9zabf_WeW3g/s1600-h/321020.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi2wkbhdrKaDQGcZqNxK48PvmtHnEsb3RvGKUSt8QBRdwuAZG3iXfC7xSoxWga17lVGaWutdE2OweghycDFKhoZAcn_2WJn-O12v8G60XY9EA7MqYcv_Uw7eVHI_O9uZhQR9zabf_WeW3g/s320/321020.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400818142987568418" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjsxE09Oqn7tshkt4Ej4yj4p-t9ZG7SfO3glfWU6kWkKeXu3qxtmKp8-n8h3VLpjfINTJ_2kAqBYZp0hBmX7_vKqSA1OGuuvtVXyfZzNXanL7O-7G97FxL55n-toRZsTgio1wDrC5wsuqA/s1600-h/321019.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjsxE09Oqn7tshkt4Ej4yj4p-t9ZG7SfO3glfWU6kWkKeXu3qxtmKp8-n8h3VLpjfINTJ_2kAqBYZp0hBmX7_vKqSA1OGuuvtVXyfZzNXanL7O-7G97FxL55n-toRZsTgio1wDrC5wsuqA/s320/321019.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400817827834857410" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj80jUTxaEwssxEALmHbeDGJXl-rddA6cykmp4qOLH1aTWZTCHn44be2YovzQ3ztwnNLm9jHS57bp4982mxrMPW_ldVOTP70Gw6aMJmdiCjOc6KsNLRYpO9ypatspcFeIzyLq3n3TuO3Ls/s1600-h/321018.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj80jUTxaEwssxEALmHbeDGJXl-rddA6cykmp4qOLH1aTWZTCHn44be2YovzQ3ztwnNLm9jHS57bp4982mxrMPW_ldVOTP70Gw6aMJmdiCjOc6KsNLRYpO9ypatspcFeIzyLq3n3TuO3Ls/s320/321018.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400817823236444546" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh1FPvq6v9cx2xvkv5we5rzpZgYobWXLfKscZmpjvATRBnasmxz8K5LBk4idDRJktVTjfLJ5i_dn-n2KyLXGh2yqZB3eWnjxW21nv_bdF53LZG34O8V8PiVaX-aYh0VH0S06lBKsqhslF8/s1600-h/321017.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh1FPvq6v9cx2xvkv5we5rzpZgYobWXLfKscZmpjvATRBnasmxz8K5LBk4idDRJktVTjfLJ5i_dn-n2KyLXGh2yqZB3eWnjxW21nv_bdF53LZG34O8V8PiVaX-aYh0VH0S06lBKsqhslF8/s320/321017.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400817824949080370" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiMSxHvZJaChb_veEmHQgSbvhDHmLttxwj59PG9noXXhjSFtTjvcBqBEdx9Vvk7uA0jLRagOQ4JhrWm8ln9tFoiBCsDvwQ6VbDxWYtA3yxxIALT9qAA6RiIF8CmrIXxTuU0RptIBeIE9L8/s1600-h/321016.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiMSxHvZJaChb_veEmHQgSbvhDHmLttxwj59PG9noXXhjSFtTjvcBqBEdx9Vvk7uA0jLRagOQ4JhrWm8ln9tFoiBCsDvwQ6VbDxWYtA3yxxIALT9qAA6RiIF8CmrIXxTuU0RptIBeIE9L8/s320/321016.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400817821020593058" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiu80MVOHw0OIyGhMpiskDFeFaL_1HyadIiMJVYHY5_MLkzG-7oIcM5mq_WIKYWEH4N7hijH5kVdJ2N7PmujR8-MiZK44UbtWZQUTOjpBbWO_d2ntsLJlHJnVD4k60NICo508dFwmNmXlM/s1600-h/321015.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiu80MVOHw0OIyGhMpiskDFeFaL_1HyadIiMJVYHY5_MLkzG-7oIcM5mq_WIKYWEH4N7hijH5kVdJ2N7PmujR8-MiZK44UbtWZQUTOjpBbWO_d2ntsLJlHJnVD4k60NICo508dFwmNmXlM/s320/321015.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400817816960904082" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjcK80aSJUw9CIzjmQiCJPxrLX1iClT7Suzuyv2A0nKdmW67W8EU0CBHDAJdJcMDchr7WnY7AFAsubxckneJnfbSK5Kem8334Ml5nQX8X-WPIpYU_eGGUiSoRjyvuwx9hFu6ioM1qopqaU/s1600-h/321014.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjcK80aSJUw9CIzjmQiCJPxrLX1iClT7Suzuyv2A0nKdmW67W8EU0CBHDAJdJcMDchr7WnY7AFAsubxckneJnfbSK5Kem8334Ml5nQX8X-WPIpYU_eGGUiSoRjyvuwx9hFu6ioM1qopqaU/s320/321014.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400817429088967762" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhuglAJVIRU_Pd7MmFgGQmb1N5vM_mDFMykqPkpmp1pQD3npsNW_5mQai5rlMPy9XsRH5p5g9fBEBdx7UpjXokGngUABFuCgg4HA6oiCljvW0Quh4HVIvU4F_5rHF03vHRsdt3Ujnx9wpo/s1600-h/321013.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhuglAJVIRU_Pd7MmFgGQmb1N5vM_mDFMykqPkpmp1pQD3npsNW_5mQai5rlMPy9XsRH5p5g9fBEBdx7UpjXokGngUABFuCgg4HA6oiCljvW0Quh4HVIvU4F_5rHF03vHRsdt3Ujnx9wpo/s320/321013.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400817431531538786" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhypqENB8UrfShXcW8bAXVRLnEFuB7VDJaJ_3DX1DhaS9jsyo2w4RihyphenhyphenF5UvGxkIFS084ntFlak2OeGCBQ7iDiKuTSC8YvUFfi-z1ZILWgkwqRt5VajlwhG7fh6SloqUEG-sHfe3MkIKZ4/s1600-h/321012.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhypqENB8UrfShXcW8bAXVRLnEFuB7VDJaJ_3DX1DhaS9jsyo2w4RihyphenhyphenF5UvGxkIFS084ntFlak2OeGCBQ7iDiKuTSC8YvUFfi-z1ZILWgkwqRt5VajlwhG7fh6SloqUEG-sHfe3MkIKZ4/s320/321012.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400817426061661106" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhfr45_co_20Cr0B6jyvtoN2Lmi_9OHVIWv0QpRC-gkFsMEbbTHKLl7A0wqAL_jd-SAZPHrZ8xI6sYtIN1it2zg2kJAWu-HChHX0C7XoiGzYp8yq8XgDVOJnXd-qkpA4HUdkVTczfcJhig/s1600-h/321011.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhfr45_co_20Cr0B6jyvtoN2Lmi_9OHVIWv0QpRC-gkFsMEbbTHKLl7A0wqAL_jd-SAZPHrZ8xI6sYtIN1it2zg2kJAWu-HChHX0C7XoiGzYp8yq8XgDVOJnXd-qkpA4HUdkVTczfcJhig/s320/321011.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400817420335036866" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjI91-bczoV8U7kheH5XtAZOIqx4UQuO71M3MvxJUJ0C8wyD7oEqmOMGOoZZn7aYJoHKP_qybzXk-Edg2LBKY7jkUpWhH4fUoVNjIbL0syaM8EznUWQLhfcjEOS1zBZx5uNKvtGIci1DwE/s1600-h/321011.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjI91-bczoV8U7kheH5XtAZOIqx4UQuO71M3MvxJUJ0C8wyD7oEqmOMGOoZZn7aYJoHKP_qybzXk-Edg2LBKY7jkUpWhH4fUoVNjIbL0syaM8EznUWQLhfcjEOS1zBZx5uNKvtGIci1DwE/s320/321011.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400817419080266482" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgCC_KljxP840XQU98izdNPEKTiIIdBPMelCIpbsUutQ2JQEdFHoYQZOrzO1udl0E4aFCJ45r0VMN5J9aMANXZcHW1XX-1LE7lanVj3z1fgXm4vggKY521Bu1ke6kGK1scBuVVc0rjhV4g/s1600-h/321010.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgCC_KljxP840XQU98izdNPEKTiIIdBPMelCIpbsUutQ2JQEdFHoYQZOrzO1udl0E4aFCJ45r0VMN5J9aMANXZcHW1XX-1LE7lanVj3z1fgXm4vggKY521Bu1ke6kGK1scBuVVc0rjhV4g/s320/321010.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400817192781422642" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhXHXOPCfJKrhxu4H94h2uxdo-XKZ7FWtNS6zfkx76RzvQCnz58UD7HdSxZ7XIV_VU7ozfKJgO0gUQI8lT1CzOziCz1UyxM0ilJTAkSoaeDyhSgc4qhBWuK4tvJv-4cq0zGIslIjTgTw4Q/s1600-h/321009.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhXHXOPCfJKrhxu4H94h2uxdo-XKZ7FWtNS6zfkx76RzvQCnz58UD7HdSxZ7XIV_VU7ozfKJgO0gUQI8lT1CzOziCz1UyxM0ilJTAkSoaeDyhSgc4qhBWuK4tvJv-4cq0zGIslIjTgTw4Q/s320/321009.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400817191095811074" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiLxN8_dr1qyLyZEPMLK1C5mh-7Xd2B1Hx5S8VGdFGiQS-BwkmN5rMC4xh7HN_dtFIgA8cbnTglo4vJEECd-PjDqkaWSOPj81tgh7HjwB1BbTcPu0OugVa6oQJMPuWqG6926wSnHJp_XkM/s1600-h/321008.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiLxN8_dr1qyLyZEPMLK1C5mh-7Xd2B1Hx5S8VGdFGiQS-BwkmN5rMC4xh7HN_dtFIgA8cbnTglo4vJEECd-PjDqkaWSOPj81tgh7HjwB1BbTcPu0OugVa6oQJMPuWqG6926wSnHJp_XkM/s320/321008.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400817188948069058" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiiGP5-fZcCAcgtSfmidrae1kZ4jzjhTXoB6dVvGX4XUEhcgDU7k4ORRzKMu3XVMJ7UIi3tkSM3e4YGA2eEfgsJEPlUigcsXdpYgJCR6YJ53RbhhRaPJhHnNVTFYlNqFwIjc0NPqdT7jsw/s1600-h/321007.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiiGP5-fZcCAcgtSfmidrae1kZ4jzjhTXoB6dVvGX4XUEhcgDU7k4ORRzKMu3XVMJ7UIi3tkSM3e4YGA2eEfgsJEPlUigcsXdpYgJCR6YJ53RbhhRaPJhHnNVTFYlNqFwIjc0NPqdT7jsw/s320/321007.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400817184420837218" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgZUzpR3g8Chs5heV5pT6wblNLCN7ooc84wzYh8ISO0987hjP_GH87_r_7J6C0kyTqIFPNZwGJ5e-dLCx-ot9GlMbZWcqKZLNgcCYqoQ-hZi5OXesW7hwhZEsyEEVQS-IYXRVsipqmX73I/s1600-h/321006.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgZUzpR3g8Chs5heV5pT6wblNLCN7ooc84wzYh8ISO0987hjP_GH87_r_7J6C0kyTqIFPNZwGJ5e-dLCx-ot9GlMbZWcqKZLNgcCYqoQ-hZi5OXesW7hwhZEsyEEVQS-IYXRVsipqmX73I/s320/321006.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400817182329799794" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiaeDo8tZfQhhE0XL6nQHg5D5wqy2qC7P9SOQbajhmOgHqcjKEmIlXV1_qp29wXas6NKJ7o-gwM0Nhr6UmleoMQNxjLeDCdR_igt_KYDBZML4k31TSdSg-rKdzZW9tv4etY34t8mI02z-4/s1600-h/321005.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiaeDo8tZfQhhE0XL6nQHg5D5wqy2qC7P9SOQbajhmOgHqcjKEmIlXV1_qp29wXas6NKJ7o-gwM0Nhr6UmleoMQNxjLeDCdR_igt_KYDBZML4k31TSdSg-rKdzZW9tv4etY34t8mI02z-4/s320/321005.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400816913896068978" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg31uCwlVY9TRD2ipxe29yFL2X7_NeV9DEKjsy5_8YR41OGI_9of4QZlEScI4zBea4FPyJ4IeMdTG_hrD9d4fUsrixQ1MLIrCcxVAX-zARZFmBPbn97s78BPWP72Ufluc6mws98xYDo6jE/s1600-h/321004.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg31uCwlVY9TRD2ipxe29yFL2X7_NeV9DEKjsy5_8YR41OGI_9of4QZlEScI4zBea4FPyJ4IeMdTG_hrD9d4fUsrixQ1MLIrCcxVAX-zARZFmBPbn97s78BPWP72Ufluc6mws98xYDo6jE/s320/321004.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400816912441901378" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh7xGbddHQD3HsJTKzHq4h4Qw_of72fHVT9I5TUG_XUeyU6vgghqilF3KprapF-PF1dJ1De95CzXJcG2A91V-9NUnvHqDY-9A60mwuMITK794uEK-qZnajbkPq7XEDBIc3Aq_SZcaJY6oA/s1600-h/321003.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh7xGbddHQD3HsJTKzHq4h4Qw_of72fHVT9I5TUG_XUeyU6vgghqilF3KprapF-PF1dJ1De95CzXJcG2A91V-9NUnvHqDY-9A60mwuMITK794uEK-qZnajbkPq7XEDBIc3Aq_SZcaJY6oA/s320/321003.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400816909950913618" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhjVcG9yB_c3NnH49onsqLrJGT6yDLIXHDiI_r1RlA5XaqmXnfr9G3vqbu70tNKT-IYpC4Aazmm0XMYFt6dc82hqZ36D_PsLeN1fqQWegRF0dcZVR1TVKrXrR0XAMjWxjZl7O_GoL7Fwjs/s1600-h/321002.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 165px; height: 185px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhjVcG9yB_c3NnH49onsqLrJGT6yDLIXHDiI_r1RlA5XaqmXnfr9G3vqbu70tNKT-IYpC4Aazmm0XMYFt6dc82hqZ36D_PsLeN1fqQWegRF0dcZVR1TVKrXrR0XAMjWxjZl7O_GoL7Fwjs/s320/321002.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400816905788458850" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhrDpdPG3igTVKroxSgYEwa5ZO1hG8gFAEJLVPfmkqCCW0yru8digl2s7TyD7TsEc39GiMKKk6NV0nsu29MYUfrYWlNeVbXRGS7u9Pe9ABu2BRcad8XVE8_TgErCu643SmnL6V2Cmg3YU8/s1600-h/321001.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 75px; height: 100px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhrDpdPG3igTVKroxSgYEwa5ZO1hG8gFAEJLVPfmkqCCW0yru8digl2s7TyD7TsEc39GiMKKk6NV0nsu29MYUfrYWlNeVbXRGS7u9Pe9ABu2BRcad8XVE8_TgErCu643SmnL6V2Cmg3YU8/s320/321001.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5400816905763653698" /></a>Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-69765274355018733382009-05-25T12:31:00.002+06:002009-05-25T12:31:54.487+06:00saudi hajj web sitehttps://visa.mofa.gov.sa/eDefault.asp <br /><br /><br /><br /><br /> Search options <br /> <br /> Search for visa presented to MOFA <br /> Search for visa issued from The Ministry of Labor \ Recruitment Agency \ MOFA <br /> Search for "Omra" request <br /> Search for charged checks retrieve <br /> Visa services in the Kingdom <br /> <br /> Official “ Governmental ” visiting visa request <br /> Family visiting visa request <br /> Commercial visiting visa request <br /> Business visiting visa request <br /> Embassies & Organization Visit Visa Request <br /> Personal visiting visa request <br /> Tourist visa request <br /> Medical visa request <br /> Extending Re-entry visa request <br /> Hajj visa request <br /> Student visa request <br /> Residence visa request “ Eqamah ” <br /> Working visa request <br /> Overseas visa services <br /> <br /> Omra visa Request from embassies and consulates abroad (for embassies ) <br /> Hajj visa Request from embassies and consulates abroad (for embassies ) <br /> Health Certificate <br /> Enjaz Web Site link <br /><br /><br /><br /><br />--------------------------------------------------------------------------------<br />Technical Support can communicate via e-mail<br />tec_visasupport@mofa.gov.sa<br /><br />--------------------------------------------------------------------------------<br />In case you have any query or suggestion or comments can communicate via e-mail<br />visa.dep@mofa.gov.sa<br /><br />--------------------------------------------------------------------------------<br />We recommend you to upgrade your browser to Internet Explorer 6.0 and aboveUnknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-52684261330597239802009-05-24T16:48:00.001+06:002009-05-24T16:54:58.721+06:00Hajj Bangla Books & New Year Offer<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhDtCYdMGEzpfx8YmEqVIwlhZtXjcYzDWSZ4PhLuU5jO4x8x9_cX39yDGqr8CqUTwlAIGeeT0dd60o0sl9lxss5iZOiyyG3r4v4oKww0Ntpt0fvmxGxh3QbTvVhsKYf8iEB2eYW5FB4DFQ/s1600-h/page-07.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 320px; height: 35px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhDtCYdMGEzpfx8YmEqVIwlhZtXjcYzDWSZ4PhLuU5jO4x8x9_cX39yDGqr8CqUTwlAIGeeT0dd60o0sl9lxss5iZOiyyG3r4v4oKww0Ntpt0fvmxGxh3QbTvVhsKYf8iEB2eYW5FB4DFQ/s320/page-07.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5339341733494921826" /></a><br /><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj1Sdf1Dc0nwxP6iNRA59lyDJAmUXJn4eJFS2SwL4Y44iJTjLQOYN4E_rX9zLiBo7ClSkFtBsSYlPrP7IqJMcTITGdod9bw7EV7p0gPRT3y8lVorRQ2iYmW-_Jeoo80QI7MH5xr-mgZ4SI/s1600-h/02.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 254px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj1Sdf1Dc0nwxP6iNRA59lyDJAmUXJn4eJFS2SwL4Y44iJTjLQOYN4E_rX9zLiBo7ClSkFtBsSYlPrP7IqJMcTITGdod9bw7EV7p0gPRT3y8lVorRQ2iYmW-_Jeoo80QI7MH5xr-mgZ4SI/s320/02.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5339341731083166066" /></a><br /><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjHHO9wOXjNQJwgeRv9M6r-P1wIarlDXrWdKntmkd4XzlhFDA6AOeJU1eemHVQdPSTcg0W5pNQlP-0tYvfBbBlOMCyWBQXTdf908hbfjG2D0Xg-jZwhIqpnoX8Ae_X4H2gbG3GTyHZdJ1I/s1600-h/05.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 320px; height: 66px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjHHO9wOXjNQJwgeRv9M6r-P1wIarlDXrWdKntmkd4XzlhFDA6AOeJU1eemHVQdPSTcg0W5pNQlP-0tYvfBbBlOMCyWBQXTdf908hbfjG2D0Xg-jZwhIqpnoX8Ae_X4H2gbG3GTyHZdJ1I/s320/05.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5339341730840242162" /></a><br /><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjWZOoRtV7dScL7OMaZWlS8BK5lMyz3L1TBIRmiQtJfPPIMUhuzD61v3InRZjDvxF6KQPUalkDf-Eu_qu_AvnftbBfPzMOnqnhc8bsAMF_5OCs-SQzGt81leumq562qqK1DIH47QJHCqf0/s1600-h/06.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 250px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjWZOoRtV7dScL7OMaZWlS8BK5lMyz3L1TBIRmiQtJfPPIMUhuzD61v3InRZjDvxF6KQPUalkDf-Eu_qu_AvnftbBfPzMOnqnhc8bsAMF_5OCs-SQzGt81leumq562qqK1DIH47QJHCqf0/s320/06.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5339341726201657298" /></a><br /><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhxvTVleo4V1eHsl4pvXay3Kq-EGMX_Ue1nTh07OiAwGdkDWNkA5HuTFh75AkAa_6mOpGWS0u6cJlWLz6DVn6ezRm7i4RphNNSwgJEd_LehSgqhQwGeEOnR_8lXQAb1mPOWIScgjJLVZX4/s1600-h/08.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 256px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhxvTVleo4V1eHsl4pvXay3Kq-EGMX_Ue1nTh07OiAwGdkDWNkA5HuTFh75AkAa_6mOpGWS0u6cJlWLz6DVn6ezRm7i4RphNNSwgJEd_LehSgqhQwGeEOnR_8lXQAb1mPOWIScgjJLVZX4/s320/08.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5339341718592842802" /></a>Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-34492334570176336352009-05-24T16:44:00.002+06:002009-05-24T16:48:19.878+06:00Hajj Bangla Books & New Year Offer<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjAp3N9yGFra1khiEg3vddyaaZNqSwaC8B6gZeX-vSa4e3AMBPEcFgfaldw-9i5akIvzmOTB6xp_UmA0xLPbS4ckRN54F1tStRmWp87nT-P0atkV30keljKvTaEPhPJaVqirPMUnVTaD-U/s1600-h/27.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 243px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjAp3N9yGFra1khiEg3vddyaaZNqSwaC8B6gZeX-vSa4e3AMBPEcFgfaldw-9i5akIvzmOTB6xp_UmA0xLPbS4ckRN54F1tStRmWp87nT-P0atkV30keljKvTaEPhPJaVqirPMUnVTaD-U/s320/27.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5339340002719890130" /></a><br /><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhU46D5beoyu4c3iRry372anZo7JNoH47UCS0BKsqH0oBYdmyVMdBZjGxmvOwRHXKnuHwdOw33l-UzgY8QgcczUwpbwQ2n6LER_XZ76AKpAIcSUBOkw1Oc_cuKZSBVZGvBkmlSMFuOp1Nw/s1600-h/25.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 317px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhU46D5beoyu4c3iRry372anZo7JNoH47UCS0BKsqH0oBYdmyVMdBZjGxmvOwRHXKnuHwdOw33l-UzgY8QgcczUwpbwQ2n6LER_XZ76AKpAIcSUBOkw1Oc_cuKZSBVZGvBkmlSMFuOp1Nw/s320/25.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5339339999899076914" /></a><br /><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj9-lVlOKq6Mwv3mgw8Hopz2rDZpaIqkoJO6uOjgRWEfjmX4OyiOVQwWAr0kEsAjVjioH5esvgUOfTTw0dHqDRvxgAMcUXwM4017SlW86jjF8YeRHcmU7D9z_zQc_gMndlL1RYX8VzaOko/s1600-h/23.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 249px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj9-lVlOKq6Mwv3mgw8Hopz2rDZpaIqkoJO6uOjgRWEfjmX4OyiOVQwWAr0kEsAjVjioH5esvgUOfTTw0dHqDRvxgAMcUXwM4017SlW86jjF8YeRHcmU7D9z_zQc_gMndlL1RYX8VzaOko/s320/23.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5339340000482412050" /></a><br /><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjnweNMQMBwNickLXpxuxA5lx2Vlj58llO6qBBzWe0YUhij1-jrHp_Lf-HIdrYQUdUrnsFLMGoQvmbCDk4nQa9Cqs_MZ2wVEmeqHKQabad2lWA81dtCziE-WSHuzMH70ZZTS8wlgCGaBfw/s1600-h/22.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 246px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjnweNMQMBwNickLXpxuxA5lx2Vlj58llO6qBBzWe0YUhij1-jrHp_Lf-HIdrYQUdUrnsFLMGoQvmbCDk4nQa9Cqs_MZ2wVEmeqHKQabad2lWA81dtCziE-WSHuzMH70ZZTS8wlgCGaBfw/s320/22.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5339339995155760834" /></a><br /><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgPipAqsaHmr0l0BCbkBpln4s_okzz0AB5AZZnjeYlVgZsAD-73a3Y_g2yJvJOYI_aV3ADw9rilyP_355bVBG72iMAZzMtJJ093NcK6l7aznJTp3VoNwwPq7vj_siB1amqBJIVfgASd6Oo/s1600-h/21.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 254px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgPipAqsaHmr0l0BCbkBpln4s_okzz0AB5AZZnjeYlVgZsAD-73a3Y_g2yJvJOYI_aV3ADw9rilyP_355bVBG72iMAZzMtJJ093NcK6l7aznJTp3VoNwwPq7vj_siB1amqBJIVfgASd6Oo/s320/21.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5339339989325086738" /></a>Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-6468145080603975312009-05-24T16:34:00.003+06:002009-05-24T16:43:55.334+06:00Hajj Bangla Books & New Year Offer<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEghaP3RLP4bKufpZvvb2is5kr63_Q6GSGe5Cb_FkDpK1zMK5p2FetJAlfoV2B8fcLivkpLYfCY1g6kyURAvGznjd1N1eF6HuFi7mL3jqy1ZIHpDE1ZDfKNQHWbeiI1stOmVEueUZY4uzFM/s1600-h/11.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 259px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEghaP3RLP4bKufpZvvb2is5kr63_Q6GSGe5Cb_FkDpK1zMK5p2FetJAlfoV2B8fcLivkpLYfCY1g6kyURAvGznjd1N1eF6HuFi7mL3jqy1ZIHpDE1ZDfKNQHWbeiI1stOmVEueUZY4uzFM/s320/11.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5339338922529832290" /></a><br /><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjv7OROMePEFV-ms-Ucz4vYlE5kT8rP1mXq-CnoOAFVOGRt8Bv_89cdEVL_ehULDaDIAuhCYVi5DU45AK1PutK1iJRh7f63NtGR_te0HcZdjTkH0oNBHCzhHZWSudLa1KNEH7HTKYDnFjg/s1600-h/12.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 251px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjv7OROMePEFV-ms-Ucz4vYlE5kT8rP1mXq-CnoOAFVOGRt8Bv_89cdEVL_ehULDaDIAuhCYVi5DU45AK1PutK1iJRh7f63NtGR_te0HcZdjTkH0oNBHCzhHZWSudLa1KNEH7HTKYDnFjg/s320/12.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5339338918573078658" /></a><br /><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgerPDnUeDsuUYTFj962Kya4L73ixxfD_N3pCX0rBxwEf0Nv5vlGQlk8XGlUicP7tBLUPPR35IOqMEmhCBHYqhM7qh7Y-ufxKsiLhQ1s-vTNgeIKqRaKcmaNdjgq-elqPL3aypOOPnp9Ic/s1600-h/15.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 251px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgerPDnUeDsuUYTFj962Kya4L73ixxfD_N3pCX0rBxwEf0Nv5vlGQlk8XGlUicP7tBLUPPR35IOqMEmhCBHYqhM7qh7Y-ufxKsiLhQ1s-vTNgeIKqRaKcmaNdjgq-elqPL3aypOOPnp9Ic/s320/15.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5339338921267509634" /></a><br /><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgHu3uj5XYsdDeSvwNvC94-V_N_cGtfa5Sz6BWc6DCphTMX_VSi2tVuO9Qixe0JpTCUD7a-nfj7E1LQZSexk9twILtkxPSb5Itxn0bmYqpNTJEGtRGXVVVSZ5MHpHpIpdSZXltbkzAhbkI/s1600-h/18.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 251px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgHu3uj5XYsdDeSvwNvC94-V_N_cGtfa5Sz6BWc6DCphTMX_VSi2tVuO9Qixe0JpTCUD7a-nfj7E1LQZSexk9twILtkxPSb5Itxn0bmYqpNTJEGtRGXVVVSZ5MHpHpIpdSZXltbkzAhbkI/s320/18.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5339338914966147378" /></a><br /><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj4DRo9y1zD0uhw4mUGS6vO091Ep_hJ2VBOrVM6hCs93XPpgESAK2Py6B3xnBJPTgaWe2EgaYC7Z_dJNr5S6CoaEB26wrAKh8WIHzgMtKG0Zx66SFUw90GRodG_9_P77wNT6ribgoSUNCU/s1600-h/21.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 254px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj4DRo9y1zD0uhw4mUGS6vO091Ep_hJ2VBOrVM6hCs93XPpgESAK2Py6B3xnBJPTgaWe2EgaYC7Z_dJNr5S6CoaEB26wrAKh8WIHzgMtKG0Zx66SFUw90GRodG_9_P77wNT6ribgoSUNCU/s320/21.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5339338911111900962" /></a><br /><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjXFMZeCW4hVibel4cmct9Z-2oUr21P99GhjenOzXOJtVXOxEr093qBUGaBcMLmVuh3JohIKKJd2zcWnGa9NuYgE6Bptmga_8HDW8QB9ysYzj9kwDVYqa53GK-nD-23pfGy6smukZsIu8E/s1600-h/22.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 246px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjXFMZeCW4hVibel4cmct9Z-2oUr21P99GhjenOzXOJtVXOxEr093qBUGaBcMLmVuh3JohIKKJd2zcWnGa9NuYgE6Bptmga_8HDW8QB9ysYzj9kwDVYqa53GK-nD-23pfGy6smukZsIu8E/s320/22.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5339338150311056098" /></a><br /><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjyK2gDFTwkvfFLfyxpX3t583fxAl_ddpbXJYvufD0i_L5T1ngo0hboMRjj2J4LwO0H-6xoxeSaee4ftLh7G1dykevqGmZfVml8sg-4v3oPUKVmmP3_DGv_oZvyTnLVAfC9JPpDZCfQL7Y/s1600-h/23.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 249px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjyK2gDFTwkvfFLfyxpX3t583fxAl_ddpbXJYvufD0i_L5T1ngo0hboMRjj2J4LwO0H-6xoxeSaee4ftLh7G1dykevqGmZfVml8sg-4v3oPUKVmmP3_DGv_oZvyTnLVAfC9JPpDZCfQL7Y/s320/23.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5339338152092927266" /></a><br /><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjqzfXnI3cAt8x8qnqdynzu3-KwLJ69iTqSgetYU3vzb8tV7WCVu6ldaVwPkPiortBxZXw0ADJQ_PnmWHYzuYlCIoHDEAEGMFNOtWpZYkExh_S2wVjiG_gtOa4U7U_SWYi4zpCWhEEb_yQ/s1600-h/25.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 317px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjqzfXnI3cAt8x8qnqdynzu3-KwLJ69iTqSgetYU3vzb8tV7WCVu6ldaVwPkPiortBxZXw0ADJQ_PnmWHYzuYlCIoHDEAEGMFNOtWpZYkExh_S2wVjiG_gtOa4U7U_SWYi4zpCWhEEb_yQ/s320/25.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5339338145199264514" /></a><br /><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEghR423JjkIWLZbVg2Q3hGh3EpoErAE8RL7R5gqNgZdY3Ojjg9eBHiz508vOX-GfEc9Bmdl-tmeP1bp5LJ1IS8jAml5OGukRYmvGoAw5JdTvX77iUl5bvJD6wr7jZ8zH92omWgdCaAhRcg/s1600-h/26.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 250px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEghR423JjkIWLZbVg2Q3hGh3EpoErAE8RL7R5gqNgZdY3Ojjg9eBHiz508vOX-GfEc9Bmdl-tmeP1bp5LJ1IS8jAml5OGukRYmvGoAw5JdTvX77iUl5bvJD6wr7jZ8zH92omWgdCaAhRcg/s320/26.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5339338143602495234" /></a><br /><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgk6IlLb9FWai4uo06EVAmlBDhhGE_7F7tdsB42sKUgys2H6OKrAUd6HMvhfuB-Nl9ffaxZoZhh2VU0Rk4bdqm6d28D1Eu9mCXvuVLwwKQuW12gBAzq1mtW2Fe1DYVVnK1wou0AcQwkDvc/s1600-h/27.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 243px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgk6IlLb9FWai4uo06EVAmlBDhhGE_7F7tdsB42sKUgys2H6OKrAUd6HMvhfuB-Nl9ffaxZoZhh2VU0Rk4bdqm6d28D1Eu9mCXvuVLwwKQuW12gBAzq1mtW2Fe1DYVVnK1wou0AcQwkDvc/s320/27.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5339338142580171394" /></a><br /><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhTRpCrj5s308fgDRqTQYit9dTMERep_7cIY8ld8AruxA0DupnO50-8T5hnixiJLe03FtKhSGy6OuxxdW3jVm9fnkpMpvREtaiG_CVAEO1g-DEt71jzToXfNEt-wrnaaWVnGHEp2Ma8oUY/s1600-h/Poster-.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 247px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhTRpCrj5s308fgDRqTQYit9dTMERep_7cIY8ld8AruxA0DupnO50-8T5hnixiJLe03FtKhSGy6OuxxdW3jVm9fnkpMpvREtaiG_CVAEO1g-DEt71jzToXfNEt-wrnaaWVnGHEp2Ma8oUY/s320/Poster-.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5339337682929880466" /></a>Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-56677483692682885992009-04-23T14:03:00.003+06:002009-04-23T14:10:31.823+06:00HAJJ 2009<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjdX_zGEcmzsm2BRLzzuuSNVQBd2GsHTfqkd1Pp23JO2FhXdqEYUZz8TmCHW0Ds4-oyUIgCGCm5-pUGDp3mKkPq3PKKMzjLK1StJ27PXYK60kE1s259FP97F2wAbYx2y9KpWaRKoBhfhU4/s1600-h/hajj-final-poster.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 247px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjdX_zGEcmzsm2BRLzzuuSNVQBd2GsHTfqkd1Pp23JO2FhXdqEYUZz8TmCHW0Ds4-oyUIgCGCm5-pUGDp3mKkPq3PKKMzjLK1StJ27PXYK60kE1s259FP97F2wAbYx2y9KpWaRKoBhfhU4/s320/hajj-final-poster.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5327795799483933794" /></a><br /><br /><br />WE ARE OFFER SPECIAL OFFFER FOR UP CUMMING HAJJ 2009<br /><br />FOR DETAILS CALL USUnknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-55744907542903932652009-03-14T13:08:00.003+06:002009-03-14T13:13:57.850+06:00NEXT-HAJJ IN BANGLSDESHDEAR ALL VISITOR <br />NOW GOVERNMENT PREPARED TO DECLARED HAJJ PACKEGE 2009<br /><br />THIS IS FRIST TIME FOR OUR BANGLADESH PREPARITION ON HAJJ <br />MAY BE THERE ARE DICLARED NEXT HAJJ PACKEGE 2,30,000/== TAKA<br /><br />PRIVATE HAJJ COMPANY WILL BE NOT TAKEN MONEY UNDER THIS PACKEGE <br /><br />THIS IS LAST DICLARED HAJJ 2008<br />SAME AS WELLUnknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-25785882305773431472009-02-23T14:00:00.002+06:002009-02-23T14:32:41.344+06:00DAYS IN MAKKAHFor a city that cradles Majid al-Haram,that bore our beloved prophet Muhammad (pbuh) and has served as a major commercial hub since time immeorial celebration of Ramadan takes a distinct from and flavour .ramadan tastes better in Makkah.<br /><br />being one of the holiest cities , makkah keeps it self prepared for the pilgrims all the year round.but with the advent of ramadan the city undergoes a transformation that can only be compared with hajj.Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-72501877663652558072009-01-01T22:43:00.000+06:002009-01-01T23:27:06.781+06:00todays our one HAJJI will be deathDear All vewer <br />we are inform you that todays our one of hajji <br />MRUnknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-29241423791227305322008-12-30T10:35:00.001+06:002008-12-30T10:41:04.104+06:00THIS IS MY MISSOR PHOTO<a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhPpzoAaVcFT1q9Y_rU35KohbKDdm_tkasm2UKzBPa92VPAR2GwdUj_RuLTzyPfTOwcUVhPIX5vKbbwOSrnDyjT9Okk0_e1-CFOPXrlk7z4zrVU_MQJAYsjPvTjuy2xlGouk_NZvxtBVLY/s1600-h/head-10000.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 212px; height: 283px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhPpzoAaVcFT1q9Y_rU35KohbKDdm_tkasm2UKzBPa92VPAR2GwdUj_RuLTzyPfTOwcUVhPIX5vKbbwOSrnDyjT9Okk0_e1-CFOPXrlk7z4zrVU_MQJAYsjPvTjuy2xlGouk_NZvxtBVLY/s320/head-10000.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5285437981316431826" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi9IqUZp_sOA0QKhPi7KWcBOyu_mngb9KkbPL3fy5S6Xej14ks7OuLnqmodZhOqf_KQ3osjbByIM9kGhhjedFCKnaaiP5f5KqFcJZwfPoCT2Ky-ijeObrMg7_Trv18tJsygeSb0BNSSwtQ/s1600-h/door-of-misior.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 298px; height: 224px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi9IqUZp_sOA0QKhPi7KWcBOyu_mngb9KkbPL3fy5S6Xej14ks7OuLnqmodZhOqf_KQ3osjbByIM9kGhhjedFCKnaaiP5f5KqFcJZwfPoCT2Ky-ijeObrMg7_Trv18tJsygeSb0BNSSwtQ/s320/door-of-misior.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5285437982553530258" /></a><br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEipwDjtXc_cS6s8Zz3GDfRFAb5QIy826DirRkrYs3ezUoj6cCBZOI7xxbedzCW1p_6iLwxZLcke3S-3H4SbOtg3xFg9nJR_Iaag4AP176ubsdUy2dWkBLrc4xG0yKkdBCwRC5c1ROe7QlI/s1600-h/dooooooor.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 298px; height: 224px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEipwDjtXc_cS6s8Zz3GDfRFAb5QIy826DirRkrYs3ezUoj6cCBZOI7xxbedzCW1p_6iLwxZLcke3S-3H4SbOtg3xFg9nJR_Iaag4AP176ubsdUy2dWkBLrc4xG0yKkdBCwRC5c1ROe7QlI/s320/dooooooor.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5285437977342263058" /></a>Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-90259253885340978462008-12-30T10:32:00.001+06:002008-12-30T10:34:22.392+06:00this nature beuty<a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgYemz4jGhZn8IAOXOaFHMF68cLnkfe_AF5P-b-kmOj5biPjyuKxNaLn-oKiYEg60LsVWZDtw-8kDtUc4RbzPypniCCdiNl3LJb2MNyE-cdZUMmTJATkB5jEaFn1YsvL0aC53eQ5B86ZVY/s1600-h/funtsiling-rock.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 320px; height: 256px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgYemz4jGhZn8IAOXOaFHMF68cLnkfe_AF5P-b-kmOj5biPjyuKxNaLn-oKiYEg60LsVWZDtw-8kDtUc4RbzPypniCCdiNl3LJb2MNyE-cdZUMmTJATkB5jEaFn1YsvL0aC53eQ5B86ZVY/s320/funtsiling-rock.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5285436653020978754" /></a>Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-2897736131540653743.post-83844799439088415882008-12-30T10:26:00.002+06:002008-12-30T10:31:41.956+06:00tour of Bhutan<a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgfRpdELStrzRyI2ZjkgsY8Oun21FbB4SOsW5U_kw0tD6v1ujoRGDo_VityOLWHWjDnZSEpgyrGVjIb7WzeThzJdDXGmczzH0Bhcpo3_1yTuMj82xK85sgqQ6O-NKrf6v71nb6UnSSSLnQ/s1600-h/life-style-of-vhutanian-wom.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 320px; height: 256px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgfRpdELStrzRyI2ZjkgsY8Oun21FbB4SOsW5U_kw0tD6v1ujoRGDo_VityOLWHWjDnZSEpgyrGVjIb7WzeThzJdDXGmczzH0Bhcpo3_1yTuMj82xK85sgqQ6O-NKrf6v71nb6UnSSSLnQ/s320/life-style-of-vhutanian-wom.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5285435341022894930" /></a> this open sky cloud you are seen in Bhutan fortunetelling <br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi7U9XVm57B1O4pgZP-ZI9Ln_Sz9os2qkYPvZ3JZ3HgKW8vjcplLE968_-PGeDvb7XwFmjQnS5Ygv7E4H1ccm7rUa9LYsXTVY-YB4fxRiR3YYxHdeMvI4YRWmpO9ekSMI_i4hua2oPLtiI/s1600-h/fumtsiling-photo.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 320px; height: 256px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi7U9XVm57B1O4pgZP-ZI9Ln_Sz9os2qkYPvZ3JZ3HgKW8vjcplLE968_-PGeDvb7XwFmjQnS5Ygv7E4H1ccm7rUa9LYsXTVY-YB4fxRiR3YYxHdeMvI4YRWmpO9ekSMI_i4hua2oPLtiI/s320/fumtsiling-photo.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5285435338752627346" /></a>this our frist group photo in Bhutan tour <br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi6gTkj8l_Uj3jDELy1ZP4kxDFhVgieuYSPJsK75H_JzvLr_aAuOgFSLyaf2UOWxy3ki4WfteqQL9kU5mPOg63j2p2K8U3eQymDo48JbfjnMf8m1yun1JoZrst_kn46GBxiIRnJC1DX8Rw/s1600-h/cloud.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 320px; height: 256px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi6gTkj8l_Uj3jDELy1ZP4kxDFhVgieuYSPJsK75H_JzvLr_aAuOgFSLyaf2UOWxy3ki4WfteqQL9kU5mPOg63j2p2K8U3eQymDo48JbfjnMf8m1yun1JoZrst_kn46GBxiIRnJC1DX8Rw/s320/cloud.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5285435333740048962" /></a><br />this life style of Bnutan woman cultureUnknownnoreply@blogger.com0